উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁতে জানান দিচ্ছে শীতের আগামনী বার্তা। এ জেলায় দিনের বেলায় তেমন একটা ঠান্ডা অনুভব না হলেও গভীর রাত এবং সকালে সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে শীতের আমেজ।
বাংলার ঘরে ঘরে শীতকাল মানেই অনেকটা পিঠাপুলির উৎসব। শীতের মৌসুমের সময়গুলোতে তৈরি হয় নানা রকম পিঠা। আর সেই পিঠার মধ্যে অন্যতম উপাদান হচ্ছে খেজুর রসের লালি ও গুড়।
শুধু কি তাই? খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড়ের রসগোল্লা, পায়েস, মোয়া ও সন্দেশ যেন অন্য রকম তৃপ্তি এনে দেয় মুখে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। চলছে গাছ তৈরি ও নলি বসানোর কাজ। খেজুরের রস সংগ্রহে গাছ তৈরিতে তাই শীতের শুরুতে দম ফেলার মত যেন সময় নেই গাছিদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে খেজুরগাছ রয়েছে। চলতি বছর এসব গাছ থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৬০ টন।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমির আইল, রাস্তার পাশে এমনকি পুকুর পাড়ে সারিসারি খেজুর গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করছেন। হাতে দা, কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ তৈরি করছেন গাছিরা। এরই মধ্যে অনেকে রস সংগ্রহের জন্য গাছে নলি গাঁথাও শুরু করেছেন।
গাছিরা বলছেন, আর মাত্র ১০-১৫ দিন পরই রস পাওয়া শুরু হবে। খেজুরগাছ থেকে রস পাওয়ার জন্য তৈরি করাকে তারা আঞ্চলিকভাবে ‘গাছ তোলা’ বলে থাকেন।
প্রথমবার গাছ তোলার সাতদিন পরই হালকা কেটে নলি লাগানো হয়। পরে সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের গাছি তোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এবার ১৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করব। খেজুর গাছগুলো আমার নিজের। সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা রস সংগ্রহের।’
রাণীনগর উপজেলার নওদুলি গ্রামের গাছি সুসান্ত কুমার বলেন, ‘২০টি গাছ থেকে এবার রস সংগ্রহ করব। নিজের ১০টি গাছ আর ১০টি গাছ চুক্তি করে নিয়েছি একজন গাছ মালিকের কাছে থেকে। প্রতি গাছ থেকে মালিককে দিতে হবে সাত কেজি করে লালি।
‘একটি খেজুরগাছ থেকে প্রতিদিন চার কেজির মতো রস পাওয়া যায়। আর ছয় কেজি রস থেকে এক কেজি গুড় পাওয়া যায়। লালির ক্ষেত্রে তিন কেজি রসে মেলে এক কেজি।’
বদলগাছী উপজেলার ভাণ্ডারপুর গ্রামের গাছি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৩০টি গাছ একজন মালিকের কাছ থেকে নিয়েছি। মালিককে এক সিজনের জন্য দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা। জ্বালানিসহ আমার প্রতিদিন খরচ হবে প্রায় ৪০০ টাকার মতো।
‘গত বছর গুড় বিক্রি করেছিলাম ৮০ টাকা কেজিতে। আর লালি ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে। এবার যদি সেই রকম দাম থাকে তবে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকার মতো করে লাভ করতে পারব সব খরচ বাদ দিয়ে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, জেলায় ১৭০ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। সেই হিসাবে গাছের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ হাজারের মতো। চলতি বছর ৮৭০ টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে গত বছরের চেয়ে এবার গাছের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। কৃষি অফিস থেকে গাছিদের মাঠপর্যায়ে খেজুরগাছ থেকে রস লামানের লালি বা গুড় উৎপাদনের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নাভাবে গাছিদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:
বন্য খেজুর থেকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ভিনেগার উৎপাদনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার ও তার গবেষক দল।
বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার তৈরি বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এ অধ্যাপক।
গবেষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘বন্য খেজুর থেকে ভিনেগার উৎপাদনে প্রক্রিয়াকরণের জন্য গাজন প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব। স্থানীয় কৃষিসম্পদ কাজে লাগিয়ে এবং অপচয় কমিয়ে এ পদ্ধতি খাদ্য উৎপাদনের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেও সহায়ক হতে পারে। গবেষণাটি বাংলাদেশের বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
উৎপাদিত ভিনেগারটির দেশের বাজারে প্রভাব সম্পর্কে অধ্যাপক আনিছুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এই গবেষণার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভিনেগার উৎপাদন কেবল খাদ্য ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি প্যাকেজিং, কসমেটিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পেও ব্যবহৃত হতে পারে।
‘বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিকর ভিনেগারের চাহিদা বাড়ছে, যা বাজারে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।’
বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য স্থানীয় কৃষি সম্পদের টেকসই ব্যবহারের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিছুর বলেন, ‘বাংলাদেশে বন্য খেজুর ইদানীং ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এটি বেশ সস্তা ও স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য।
‘এই খেজুর গাছ সাধারণত গ্রামীণ এলাকায় এবং রাস্তার পাশের জমিতে পাওয়া যায়, তবে নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ার পরও এই বন্য খেজুর দেশের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অব্যবহৃত একটি সম্পদ।’
গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনিছুর বলেন, ‘বন্য খেজুরের রস ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া মাধ্যমে ভিনেগারে পরিণত করা হয়েছে। এ গবেষণায় এক ধরনের ইস্ট ব্যবহার করে ওই রসে অ্যালকোহল তৈরি করা হয় এবং পরে অ্যাসিটোব্যাক্টর প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া দিয়ে অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তর করা হয়।’
গবেষক আরও বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসের ঘনত্ব যত বেশি হয়, তত বেশি অ্যালকোহল ও অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়। বেশি ঘনত্বের রসটি সবচেয়ে ভালো পুষ্টিগুণ, অ্যাসিডিটি ও ম্যাক্রো মিনারেলস (পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম) সমৃদ্ধ হয়। তাই এটি স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি আকর্ষণীয় পণ্যও বটে।’
গবেষণাটি বিশ্ববিখ্যাত প্রকাশনা এলসভিয়ারের নামী সাময়িকী অ্যাপ্লায়েড ফুড রিসার্চে সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।
ভিনেগার তৈরির এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও মাঠ পর্যায়ে সফলতা সম্পর্কে এ অধ্যাপক বলেন, ‘এই গবেষণা স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি নতুন আয় সৃষ্টির পথ খুলতে পারে। একদিকে খেজুর থেকে তৈরি ভিনেগারের উচ্চমান এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের স্থানীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করবে।’
অধ্যাপক আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে বাকৃবি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) আরও ছয় জন গবেষক এই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। বাকৃবি থেকে গবেষক দলে রয়েছেন ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলিম, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. পলি কর্মকার এবং ওই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা ও আ ন ম ইফতেখার আলম।
এ ছাড়া সিকৃবির খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফাহাদ জুবায়ের এবং ডুয়েটের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লোপা আনসারী গবেষক দলে যুক্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিজেদের মধ্যে পলিটিকাল ইস্যু থাকতে পারে, কিন্তু নদীর পানির হিস্যা নীতি ছিল। ভারতের কোনো যুক্তিই নেই আমাদের পানি না দেয়ার। এটা নিয়ে ভারতকে চাপ দিতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘উজানে যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহার: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, বাংলাদেশ।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতে যখন পানির চাপ থাকে তখন আমাদের এদিকে স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়। আবার ওখানে যখন পানির স্বল্পতা থাকে তখন গেটগুলো বন্ধ করে দেয়।
‘তারা ইচ্ছেমতো এটা করছে। আর সেজন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। এতে করে আমাদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। দিন দিন মরুভূমির মতো হয়ে হচ্ছে। গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল নেমে যাচ্ছে। আমরা আর কত সহ্য করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। এগুলোতে জনগণের সাপোর্ট প্রয়োজন। শুধু ফারাক্কা নয়; অভিন্ন আরও যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো থেকে যাতে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায় সেজন্য আমরা কাজ করব।’
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
আরও পড়ুন:বিনা মূল্যে বাংলাদেশকে ৩০ হাজার টন পটাশ সার দেবে রাশিয়া।
দেশটির উরাচেম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী দিমিত্রি কনিয়েভ স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, উরাচেম গ্রুপ বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় বন্ধুত্ব ও গভীর আন্তরিকতার নিদর্শন হিসেবে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বাংলাদেশকে এ সার দেবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ঢাকায় রুশ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত একেতেরিনা সেমেনোভা বুধবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন।
ওই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাশিয়ার পিজেএসসি ইউরালকালি বিশ্বের মধ্যে অন্যতম পটাশ সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সাল থেকে পিজেএসসি ইউরালকালি জিটুজি ভিত্তিতে জেএসসি বৈদেশিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এক মিলিয়ন টনেরও বেশি এমওপি সার সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন:নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষিপণ্য কম খরচে ঢাকায় পরিবহনের লক্ষ্যে চালু করা বিশেষ ট্রেন স্থগিত করা হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, শুক্রবার রাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করে।
গত ২৬ অক্টোবর থেকে কৃষিপণ্য নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
ট্রেনটির প্রতি শনিবার কৃষিপণ্য পরিবহন করার কথা ছিল। ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছানোর আগে নাচোল ও আমনুরা জংশনসহ ১৩টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করার কথা ছিল।
প্রথম দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে কোনো ধরনের কৃষিপণ্য ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় বিশেষ ট্রেনটি।
বিশেষ ট্রেন চালুর পর চাষিদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি জানিয়ে সুজিত বলেন, ‘তারা ট্রেনে করে কৃষিপণ্য পরিবহনে আগ্রহী নয়। কর্তৃপক্ষ এটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ডিমকে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য হিসেবে ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ডিম সহজলভ্যতার দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ডিম প্রাপ্যতার কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব শ্রেণি-বর্ণ নির্বিশেষে যাদের ডিম বেশি দরকার, তাদের জন্য তা সরবরাহ করতে হবে।
তিনি জানান, ডিমের মূল্য কমাতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) শুক্রবার দুপুরে বিশ্ব ডিম দিবস-২০২৪ আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ডিমের উৎপাদন বাড়াতে গ্রামের নারীদের হাঁস-মুরগি পালনে উৎসাহিত করতে আহ্বান জানিয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আগে গ্রামীণ নারীরা হাঁস-মুরগি পালন করতেন। গ্রামেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতেন। এতে তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারতেন। ‘সেই অবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বছরের আশ্বিন-কার্তিক মাসে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় ডিমের চাহিদা বাড়ে। ডিম সাধারণ খামারি থেকে কয়েক দফা হাত বদল হয়ে ভোক্তার কাছে যায়। এ কারণেই ডিমের দাম বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এ জন্য উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরাসরি কীভাবে ডিম পৌঁছানো যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। এ ছাড়া রমজানে ডিমের ব্যবহার কমে যায়।
‘তাই মজুত নয়, চাহিদার আলোকে আমাদের কোল্ডস্টোরেজ করার চিন্তা করতে হবে। বন্যার কারণে দেশের অনেক খামার নষ্ট হয়েছে। এসব খামার উৎপাদনে যেতে কিছুটা সময় লাগছে। সব মিলিয়ে সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।’
সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের মূল্য বাড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে সরকার। বাজারে নিয়মিত অভিযান চলছে। পাইকারিতে কিছুটা দাম কমেছে। দ্রুতই দাম নাগালে আসবে।’
আরও পড়ুন:স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকরা। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রতি বছর শেরপুর জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত হলেও এবার খাদ্য ঘাটতি হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শেরপুরের মানুষ। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক, বাড়িঘর, প্রাণিসম্পদ ও ফসলি জমি, তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছে নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার।
জেলায় দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষজন। খাদ্য উদ্বৃত্তের এ জেলার কৃষকরা এবার অর্ধেক ফসলও উৎপাদন করতে পারবে না।
অনেক কৃষকের দাবি, তার ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। এখন সে ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইগাতীর কৃষক আমনচাষি কবির বলেন, ‘ঋণ নিয়ে আবাদ করছি। এহন তো সব শেষ। ঋণই বা কেমনে দিমু আর এ বছর পোলাপান নিয়া চলমু কেমনে।’
ঝুলগাঁওয়ের আমিনুল বলেন, ‘আবাদ তো করছি কর্জ কইরা। এহন পানির বিল কেমনে দিমু? ধান বেইচ্চা দেয়ার কথা আছিল।’
দড়িকালীনগর গ্রামের রমিজ মিয়া বলেন, ‘চড়া সুদে ঋণ নিয়া ৫০ বিঘা জমিতে আবাদ করছিলাম। ৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা আমরা কখনো দেহি নাই।
‘সব ধান শেষ আমার। এক ছটাক ধান বাড়ি নিয়া যাবার পামু না। আর ঋণ তো এহন বোঝা। কেমনে কী করি, আল্লাহ জানে।’
জেলার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গরজরিপাড়ের হামিদুল বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়া শিম লাগাইছিলাম। বানের পানি সব শেষ করে দিছে।’
ধার-কর্জের মূলধন সব হারিয়ে দিশেহারা বলে জানান তিনি।
ঝুলগাঁওয়ের সামাদ মিয়া বলেন, ‘লাউ লাগাইছিলাম ৪ কাঠা জমিনে। সব পানির নিচে। আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই। তা না হলে আর বাঁচন নাই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছিল। বন্যায় রোপা-আমন, সবজি ও আধা চাষে ৩২ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এবার ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬ টন চাল। ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১০ টন ধানক্ষেতের। জেলায় সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বন্যায় প্রায় দুই লাখ কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেয়া হবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।’
আরও পড়ুন:মেহেরপুরে টানা চার দিন বৃষ্টি শেষে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহওয়ায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া মাঠের ফসল।
জেলায় অনেক ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। পানি কমে যাওয়ায় বতর্মানে দেখা মিলেছে জমিতে থাকা ফসলের, যার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।
বৃষ্টিতে জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উঠতি সবজির।
কৃষকরা জমি থেকে পানি বের করে, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে ফসল রক্ষার্থে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তেমন একটা সুফল মিলছে না।
মেহেরপুরের তিনটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পানিতে নুয়ে পড়েছে ধানক্ষেত, ভেঙে পড়েছে কলা, পেঁপে, করলা, চিচিঙ্গা, শসা, ওল, লাউয়ের গাছ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কাঁচামরিচ, মাসকলাই ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের।
কৃষকদের ভাষ্য, উঠতি বাঁধাকপি, ফুলকপি, মরিচের ক্ষেত থেকে পানি নেমে গেলেও রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। এ সবজিগুলো আর ঘরে উত্তোলন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
জমি থেকে পানি বের করে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন অধিকাংশ কৃষক। তারপরও চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে।
কৃষকরা ফসল বাঁচাতে কতটুকু সফল হবেন, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আবার রয়েছে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা।
জেলা কৃষি বিভাগের প্রাথমিক ধারণা, মেহেরপুর জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে চার হাজার ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাংনী উপজেলার কৃষক মামুন আলী বলেন, ‘আমার চার বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ ছিল। গাছগুলো থেকে কেবল সপ্তাহখানেক হবে মরিচ সংগ্রহ করা শুরু করেছি। এমন সময় টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে গাছের গোড়া সব ডুবে গেছে।
‘আর গত দুই দিন বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে জমির অধিকাংশ গাছ মরে যেতে শুরু করেছে। এখন যে অবস্থা জমির তিন ভাগ গাছ মরে যাবে।’
আরেক কৃষক আবদুস সালাম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছিলাম। সপ্তাহ দেড়েকের মধ্যেই কপি বাজারে তুলতে পারতাম। অথচ টানা বৃষ্টিতে কপির জমিতে পানি জমে যাওয়ায় সব গাছ নিস্তেজ হয়ে মরতে শুরু করেছে।’
কলাচাষি কামাল হোসেন বলেন, ‘আমার চাষিদের কাছ থেকে ২০ বিঘা কলার বাগান কেনা আছে। টানা চার দিনের বৃষ্টির সাথে বাতাস থাকায় গাছের গোড়া নরম হয়ে বাতাসে সব গাছ নুয়ে পড়েছে মাটিতে। ফলে এ বছর লোকসানে পড়তে হবে।’
ধানচাষি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি ধান কেটে জমিতেই সারিবদ্ধ করে রাখছিলাম। জমির অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। এমন সময় শুরু হয় বৃষ্টি, যা চলে টানা চার দিন।
‘জমিতে পানি জমায় সব ধান তলিয়ে যায়। এখন পানি নামলেও ধানের সব গাছ বের হয়ে গেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুর জেলার উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, দুই-তিন দিন পর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে।
জমি থেকে পানি বের করে দেয়ার পরামর্শের পাশাপাশি এ সময়ে ক্ষেতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ না করার পরামর্শ এ কর্মকর্তার।
এ অঞ্চলের আবহওয়ার তথ্য নির্ণয়কারী চুয়াডাঙ্গা আবহওয়া অফিসের কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ অঞ্চলে বিগত চার দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩৮ মিলিমিটার, তবে আগামী দুই-এক দিনে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য