অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে অব্যাহতি চান জাতীয় পার্টির নেতা ও বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর কোটিপতি স্ত্রী মোহসীনা আকতার।
মোহসীনা আকতার এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ২৪ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক অজয় কুমার সাহাকে সব নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে মতামত দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক চিঠির বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও মোহসীনা আকতারের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১১ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। এর পরপরই মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন মোহসীনা আকতার। আবেদনের সঙ্গে তিনি এর সপক্ষে কিছু কাগজপত্র সংযুক্ত করেছেন বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে জাতীয় পার্টির বগুড়া-২ আসনের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বিরুদ্ধে ২০২১ সালে মামলা হয়েছিল। ওই মামলার সূত্র ধরেই তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানে আড়াই কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদ বিবরণী নোটিশ ইস্যুর জন্য দুদকের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশে কোটি টাকার বেশি সম্পদের সন্দেহজনক তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই সম্পদ মূলত তার স্বামী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর বলে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
ওই সুপারিশকে বিবেচনায় নিয়ে মোহসীনা আকতারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করে দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি মোহসীনা আকতার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণ দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বরাবর দাখিল করেন।
মোহসীনা আকতার তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৪ লাখ ৮১ হাজার ১৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দেন। সব মিলিয়ে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়।
সম্পদ বিবরণী ও আয়কর নথি অনুসারে তার প্রদর্শিত সম্পদের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে আয় দেখানো হয় ১০ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ করবর্ষে ১৯(ই) ধারায় ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ টাকা জরিমানা আয়কর দিয়ে ৫৪ লাখ টাকা আয় প্রদর্শন করেন তিনি।
২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ টাকা আয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকার। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের প্রমাণ পায় দুদক।
প্রসঙ্গত, আয়কর অধ্যাদেশে ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, অতীতের যেকোনো বছরের আয় গোপন করা হয়ে থাকলে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে বৈধ করা যাবে। ওই করবর্ষেও তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স আয়ের কথা বলা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধান যা বলে
অনুসন্ধানকালে মোহসীনার সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাইকালে ৩০ লাখ ৯২ হাজার টাকার স্থাবর ও ২ কোটি ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যসহ মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ৩৯ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। সে হিসাবে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৪২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আসামি মোহসীনা আকতার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর তার অবৈধ আয়কে বৈধ করার জন্য ২০১৯-২০২০ করবর্ষে মোহসীনা আকতার আয়কর নথি খোলেন। ওই করবর্ষে তিনি বিবিধ ব্যবসার আয় বাবদ ১০ লাখ টাকা, ১৯ই ধারায় ৫৪ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ টাকা আয়কর দিয়েছেন।
ওই করবর্ষে তিনি তার প্রবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স পেয়েছেন। এভাবে তিনি ১ কোটি ৫২ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রদর্শন করেন। এর বিপরীতে ১ কোটি ৯ লাখ ৭২ টাকার গ্রহণযোগ্য উৎস পাওয়া গেলেও ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আয়ের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
মোহসীনা আকতার একজন গৃহিণী। তার আয়ের কোনো উৎস নেই। তার এক ভাই সৌদি আরবে থাকেন। তার নিজ ব্যাংক হিসাবে ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার টাকা রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু তিনি ওই টাকা তাদের দান করেছেন কি না তার কোনো তথ্য ও রেকর্ডপত্র প্রদর্শন করেননি তিনি। দুদক মনে করে মোহসীনা আকতার তার স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার জন্য তার সৌদি প্রবাসী ভাইয়ের টাকা আনার বিষয়টি সাজিয়েছেন।
সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায়, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বিগত তিন বার সংসদ সদস্য হিসেবে কর্মরত। মোহসীনা আকতারের নিজের কোনো গ্রহণযোগ্য ও বাস্তব আয়ের উৎস নেই। মূলত সংসদ সদস্য স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার অসৎ উদ্দেশ্যে তার নিজ নামে বিবিধ ব্যবসায়ী হিসেবে আয়কর নথি খুলেছেন।
২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ টাকা আয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকার। সব মিলিয়ে তার বিরুদ্ধে মোট ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের প্রমাণ পায় দুদক।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য