বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পুরোনো ভবন সংস্কার ও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। সুপার স্পেশালাইজইড হাসপাতালটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বুঝে নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এরই মধ্যে হাসপাতালের নতুন ও পুরোনো ভবন থেকে চুরি হচ্ছে অব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী। গত তিন মাসে চুরির দুটি ঘটনা ধরা পড়েছে, এ নিয়ে মামলাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ উঠেছে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে চলছে চুরির ঘটনা। অব্যবহৃত সরঞ্জাম দেখভালের সব দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকায় চুরির পরিমাণ কতটা, সে বিষয়েও অন্ধকারে কর্তৃপক্ষ।
ভাঙারির নামে অব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রী বিক্রি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হুনদাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (এইচডিসি)। হাসপাতালের নির্মাণ শেষ হরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও দায়িত্ব বুঝে না নেয়ায় ভবন তদারক করছে এইচডিসি। এ জন্য রয়েছে তাদের নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হাসপাতালের বেজমেন্টে অব্যবহৃত নির্মাণ সরঞ্জাম মজুত করা হয়েছে, এগুলো পরবর্তী সময়ে কাজে লাগবে। এসব সরঞ্জামের মধ্যে আছে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও লোহার বিপুল পরিমাণ অ্যাঙ্গেল। এর বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ক্র্যাপ (ভাঙারি) অপসারণের জন্য ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে একটি ট্রাক প্রবেশ করে। ট্রাকটির সঙ্গে ১০-১৫ জন যুবক হাসপাতালের বেজমেন্টে যান। সেখানে তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরপত্তাকর্মীদের উপস্থিতিতে ট্রাকে কিছু ভাঙারি তোলার পর মজুত করে রাখা অ্যালুমিনিয়াম ও লোহার সামগ্রী লোড করতে থাকেন।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে যুবকরা পালিয়ে যান। এ সময় ট্রাকচালক ও সহকারীকে আটক করা হয়। পরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এইচডিসি এর নিরাপত্তাকর্মী নূরুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, সেদিন চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে অফিস থেকে বলা হয়েছিল স্ক্র্যাপ নিতে ট্রাক আসবে। ট্রাক আসার পর আমাদের ইনচার্জ উপস্থিত ছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছেন মাপে ঠিক আছে কিনা। এর মধ্যেই আনসাররা এসে সবাইকে ধাওয়া দেয়। যারা মাল নিতে এসেছিল তারা ভয়ে পালিয়ে যায়।
‘এটাকে এখন চুরির ঘটনা কেন বলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। চুরির ঘটনা হলে আমাদের খাতায় এন্ট্রি থাকবে কেন? আমাদের এখান থেকে একটা স্ক্রু পার করতে গেলেও গেট পাস লাগে।’
নিরাপত্তাকর্মীদের রেজিস্টারে দেখা যায় প্রায় প্রতিদিনই একাধিক ট্রাকের হাসপাতাল ভবনে ঢোকার তথ্য সংরক্ষণ করা আছে। প্রতিটিতেই কারণ হিসেবে লেখা আছে স্ক্যাপ বা ভাঙারি অপসারণ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার দিন ক্রেতাদের ‘ভাঙারি’ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্টোর কিপার অনুকূল নামের এক ব্যক্তি। ১২ অক্টোবরের পর থেকে আর তিনি হাসপাতালে নিয়মিত আসছেন না। তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ করেননি।
ওই দিনের ঘটনার একাধিক ছবি ও ভিডিও পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে দেখা যায় প্রথমে সামান্য কিছু অ্যালুমিনিয়ামের ভাঙারি ট্রাকে তোলার পর হাসপাতালে মজুত নতুন অ্যালুমিনিয়ামের পাত লোড করা হচ্ছিল। এইচডিসির কর্মী অনুকূল দাঁড়িয়ে থেকে এর তদারক করছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এইচডিসির মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণকাজের পাশাপাশি আবর্জনা ও নির্মাণ উচ্ছিষ্ট অপসারণের কথা রয়েছে। আমরা নিয়ম মেনে স্ক্র্যাপ অপসারণ করেছি।
‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝেছে। আমাদের সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক স্যারের কথা হয়েছে। তিনিও বুঝতে পেরেছেন এটা ভুল-বোঝাবুঝি।’
ভুল-বোঝাবুঝি হলে মামলা কেন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিচালক স্যার বলেছেন এটা মিউচ্যুয়াল হয়ে যাবে।’
নতুন নির্মাণসামগ্রী স্ক্র্যাপ হয় কীভাবে প্রশ্ন করা হলে তিনি সুস্পষ্ট কোনো জবাব দেননি।
সেদিন ক্যারাভ্যান নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে স্ক্র্যাপ অপসারণের অনুমতি দিয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচডিসি। এইচডিসির নামে কম্পিউটার কম্পোজ করা অনুমতিপত্রের অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যারাভ্যানের কর্ণধার হলেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী।
মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই চুরির ঘটনা নয়। পুরো বিষয়টি আমার জানা আছে। আমাদেরই একজন কর্মী মোয়াজ্জেমের ভাঙারির ব্যবসা আছে। এই হাসপাতাল থেকে গত কয়েক মাস ধরে স্ক্র্যাপ বিক্রি হচ্ছে। হাসপাতালের গেটের সামনেই আমার অফিস হওয়ায় আমাদের ছেলেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি হয়েছে এখান থেকে।
‘তখন মোয়াজ্জেম আমাকে জানায় সে স্ক্র্যাপ কিনতে আগ্রহী, আমি যেন একটু সহযোগিতা করি। আমি ভাবলাম আমার নিজের সমর্থক যদি স্ক্র্যাপ নিয়ে দুই টাকা ব্যবসা করতে পারে, তাহলে খারাপ কী? এরপর আমি এইচডিসির সঙ্গে কথা বলি। মোয়াজ্জেম এরপর অন্য নিলামকারীদের চেয়েও ৫০ পয়সা বেশি দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার পায়।’
কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে যেদিন প্রথম মাল আনতে যাবে সেদিনই এই ঘটনা। এইচডিসির স্টোর কিপার অনুকূল সাহেব আমার লোকদের যা যা স্ক্যাপ হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলোই ট্রাকে লোড করা হচ্ছিল। এখন হাসপাতালের অন্যান্য অপরাধ ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অন্যায়ভাবে এ ঘটনায় ট্রাকচালক আর হেলপারকে আটক করে মামলা দেয়া হয়েছে।
‘হাসপাতালের পরিচালক হারুন স্যারকে আমি ঘটনার পরপরই বিষয়টা জানালে স্যার নিজেও বলেছিলেন এটা ভুল-বোঝাবুঝি। তিনি আমাকে বলেছিলেন মামলা যেন না হয় সেটা তিনি দেখবেন, তবে ততক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করে দিয়েছে।’
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবদুল্লাহ আল হারুন বলছেন, ঘটনাটি পরিষ্কার চুরির চেষ্টা ছিল।
তিনি বলেন, ‘আইন ভঙ্গ করে কিছু লোক হাসপাতালের মালামাল নিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমাদের আনসার সদস্যরা তাদের ধরে ফেলে। এটা নিয়ে মামলা হয়েছে, এখন এটা তদন্তাধীন বিষয়।’
এইচডিসির ব্যবস্থাপক ও কাউন্সিলর ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ হিসেবে যে দাবি করছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘প্রথমে আমাকে বলা হয়েছিল, গাড়িচালক গেটপাস আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই তখন এমনটা বলেছিলাম। তবে পরে আমি নিজেই মামলা করতে বলি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, ঘটনার দিন কাউন্সিলরের পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন যুবক হাসপাতালে ঢুকেছিলেন। এর মধ্যে একজন একটি মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো ল- ৩৩-৮২৬৯) নিয়ে এসেছিলেন। আনসার আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যদের সঙ্গে মোটরসাইকেলচালক তার মোটরসাইকেলটি ফেলে পালিয়ে যান।
ওই কর্মকর্তা জানান, ট্রাকের চালক ও সহকারীর সঙ্গে কাউন্সিলরের অনুসারী দুইজনও আটক হয়েছিলেন। তবে ওই দুই ব্যক্তি ও মোটরসাইকেলটি রহস্যজনক কারণে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্টোর কিপার অনুকূল বা নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়েও মামলায় কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে যাদের পেয়েছি তাদের নামেই মামলা দিয়েছি। আসামিরা অবৈধভাবে মালামাল নিয়ে যাচ্ছিল বলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্যদের কেন আসামি করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এগুলো পুলিশ তদন্ত করে বের করুক। অন্য কেউ জড়িত থাকলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
বিএসএমএমইউতেও চুরির চেষ্টা
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের চুরির ঘটনার আগের মাসে নির্মাণসামগ্রী চুরির আরেকটি চেষ্টা ধরা পড়ে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগ-২-এর বেজমেন্টে গত ২২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে তিনটি পিকআপ নিয়ে প্রবেশ করেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তারা পিকআপ বোঝাই করে থাই অ্যালুমিনিয়াম, লোহার অ্যাঙ্গেল, বার ও তামা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গাড়িচালক ও আনসার সদস্যরা গেটপাস দেখতে চাইলে তারা অনেক পুরোনো একটি পাস দেখান। সেই পাসটি হাসপাতালের সংস্কারকাজের জন্য নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড সন্সের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছিল।
পুরোনো গেটপাসের বিষয়টি ধরা পড়ে গেলে চালকের পক্ষ থেকে আরও দুটি গেটপাস দেখানো হয়। তবে যাচাই করে দেখা যায় তাতে যুক্ত একজন পরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারীর সিল ও স্বাক্ষর জাল। পরে তাদের আটক করে পুলিশে দেয়া হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাহবাগ থানায় মামলা করে।
ওই ঘটনায় মুচলেকা নিয়ে সরঞ্জামের ক্রেতা ফারুক হোসেনকে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা-পুলিশ। ঘটনায় সম্পৃক্ততার কারণে গ্রেপ্তার করা হয় হাসান অ্যান্ড সন্সের কর্ণধার ও স্টোর কিপারকে।
নির্মাণসামগ্রীর ক্রেতা ফারুক হোসেন তার বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এর অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।
ফারুক হোসেন লিখেছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান অ্যান্ড সন্সের কাছ থেকে সামগ্রীগুলো কেনার আলোচনায় মধ্যস্থতা করেন ২১ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শওকত শেখ এবং হাসপাতালের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম।
ফারুক হোসেনের অভিযোগ, '২০ লাখ টাকায় এসব সরঞ্জাম কেনার জন্য শওকতকে ১২ লাখ টাকা পরিশোধের পর তিনি হাসান অ্যান্ড সন্সের দুই কর্মকর্তার নামে ইস্যু করা দুটি গেটপাস দেন। চুক্তি অনুযায়ী ওই দিন রাতে হাসপাতালের কর্মচারী নেতা নজরুলের দায়িত্ব ছিল ট্রাক তিনটি হাসপাতাল থেকে বের হতে সাহায্য করা। তবে এর আগেই ধরা পড়ায় তা আর সম্ভব হয়নি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইদ্রিস আলম জাল গেটপাস তৈরিতে জড়িত। এর জন্য নজরুল আগাম ১ লাখ টাকা ও ইদ্রিস ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা শওকত শেখের নম্বরে একাধিকবার ফোন করে ও খুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
হাসপাতাল কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইদ্রিস তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না, এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
আর কোনো প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে ব্যস্ততার কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অন্যদিকে ইদ্রিস আলমের দাবি, তিনি হাসপাতালের চুরির ঘটনা অন্যদের কাছ থেকে শুনেছেন। এর সঙ্গে তিনি কোনোভাবে জড়িত নন।
ইদ্রিস বলেন, ‘কেউ আমার নাম জড়িয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগও মিথ্যা।‘
মামলা দুটির অগ্রগতি জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, 'এখনও তদন্ত চলছে। দুটি মামলাতেই আমরা বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর ও বাইরের অনেকেই আছেন। তদন্ত শেষে অতি দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।'
আরও পড়ুন:রাজধানীতে ই-টিকেটিং চালুর উদ্দেশ্য ছিল দূরত্ব অনুযায়ী বাস ভাড়া নিশ্চিত, নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠানামা এবং এক বাসের সঙ্গে আরেকটির রেষারেষি বন্ধ করা।
ই-টিকেটিংয়ের আওতাধীন বিভিন্ন রুটে বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য কিছুটা কমেছে, তবে বাকি দুই সমস্যা থেকেই গেছে।
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বাসে ই-টিকেটিং চালু করে। এর আওতায় চলাচল করা রুটে প্রথমে কাউন্টারে টিকিটের ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তী সময়ে কাউন্টার উঠিয়ে বাসে টিকিট কাটার ব্যবস্থা করা হয়, তবে টিকিটের গায়ে দূরত্ব লেখা না থাকায় ন্যায্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে অনেক যাত্রীর।
কাউন্টার উঠিয়ে দেয়ার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জানায়, কাউন্টার থেকে পাওয়া টাকা ব্যানার মালিকরা বাসমালিকদের ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেন না। তাদের দুর্নীতির কারণে বাসমালিকরা লাভ পেতেন না। তাই বাসের মধ্যে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়।
রাজধানীতে ৯৬টি বাস রুটের মধ্যে ৪৬টিতে চলছে ই-টিকেটিং। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে আরও ১৭ রুটকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে বাসমালিক সমিতি।
ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ঢাকার ৯৬ রুটকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
ই-টিকেটিংয়ের আওতায় চলাচল করা বেশ কয়েকটি রুটে ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের ই-টিকিট দিতে অনীহা কনডাক্টরদের। অনেক যাত্রীদের মধ্যেও উদাসীনতা আছে টিকিট নিয়ে। আবার অনেক যাত্রীকে চেয়ে চেয়ে টিকিট নিতে হয়েছে।
একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, না চাইলে কনডাক্টররা টিকিট দেন না। বাসের রেষারেষি রয়েই গেছে। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হয়। এমনকি চলন্ত রাস্তার মাঝখানে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী তোলা হয়।
মিরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, ‘আলিফ এবং শিকড় পরিবহনে আমি নিয়মিত চলাচল করি। ই-টিকেটিং চালু হওয়ার পরে এই দুই বাসের ভাড়া কমেছে, কিন্তু তারা টিকিট দিতে উদাসীন। অনেক সময় কনডাক্টর ইচ্ছা করে বাসের দরজা থেকে ভেতরে আসেন না। নামার সময় তাড়াহুড়ো করে টাকা রেখে দেন, কিন্তু টিকিট দেন না।’
‘শুধু ভাড়াই কমেছে, কিন্তু বাসে সেই আগের বিশৃঙ্খলা রয়েই গেছে।’
কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে উত্তরা রুটে চলাচল করা প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহনেও একই চিত্র দেখা যায়।
এ রুটে চলাচলকারী ইয়াসিন মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম থেকেই এই রুটে ই-টিকেটিং চালু হয়। প্রথম দিকে যখন কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে বাসে উঠতাম, তখন একটা শৃঙ্খলা ছিল। পরে ই-টিকিট বাসের ভেতরে কাটা শুরু হলে সেই আগের মতোই রেষারেষি শুরু হয়।’
তিনি বলেন, ‘এখন তো ড্রাইভারের সঙ্গে চিল্লাপাল্লা করতে হয় নিয়মিত। তারা বাস থামিয়ে মিনিটের পর মিনিট বসে থাকে। যখন একই রুটে পেছনে আরেকটা বাস আসে, তখন শুরু হয় রেষারেষি।
‘মাঝে মাঝে এক বাসের চালক আরেক বাসকে ধাক্কাও দেয়। যে কারণে ই-টিকেটিং চালু করা, সেটা ফলপ্রসূ হয়নি।’
এই রেষারেষির কারণ অবশ্য বাসের মালিকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। অনেক রুটের বাসমালিক চুরি ঠেকাতে এখন চুক্তিতে গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহনের অন্তত সাতজন বাসমালিকের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। এই দুই পরিবহনের বাস চলে চুক্তিতে। এ ছাড়া অন্য রুটের অনেক বাসই চলে চুক্তিতে।
তাদের একজন বলেন, ‘যখন কাউন্টারে ই-টিকিট দেয়া হতো, তখন ব্যানার মালিকরা দুর্নীতি করে টাকা মেরে দিত। পরে বাসের ভেতরে টিকিট দেয়া শুরু হলে কনডাক্টর ভাড়ার টাকা নিয়ে টিকিট দিত না। আর টিকিট না দিলে মেশিনে টাকার পরিমাণ উঠত না। বেলা শেষে আমরা টাকা পেতাম না।
‘এখন প্রতিদিন আড়াই হাজার টাকার বিনিময়ে চুক্তিতে তাদের গাড়ি ভাড়া দিই। আমাদের বাসপ্রতি আড়াই হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে সব খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে, সেটা ড্রাইভার ও কনডাক্টরের লাভ।’
অর্থাৎ বাস মালিকদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, টিকিট নামে মাত্র। বাকি সব আগের নিয়মেই চলছে।
সব বাস চুক্তিতে না চললেও চুরি ও নৈরাজ্য রয়েই গেছে। বিকাশ পরিবহনের তিনটি বাসের মালিক মো. কাওসার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাস চুক্তিতে চলে না। আমাদের কোম্পানি থেকে বলা আছে সবাইকে টিকিট দিতে হবে, তবে তারা মাঝে মাঝে টিকিট দেয় না, এটা আমরা জানি। কয়েক দিন ই-টিকেটিং চালু হয়েছে। আশা করছি কয়েক দিন গেলে ঝামেলা দূর হবে।’
যাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের দায়িত্ব নিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিদিন দেড় শ টাকা মেশিন ভাড়া দিই। এটা তো আর এমনি এমনি দেব না।’
ভাড়ার বিষয়টা কিছুটা সমাধান হলেও বাকি দুই বিষয়ে এখনও বিশৃঙ্খলা রয়ে গেছে বলে স্বীকার করে নেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগে যাত্রীদের থেকে অধিক ভাড়া আদায় করা হতো। ই-টিকেটিং চালু করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকানো। শতভাগ ভাড়ার নৈরাজ্য ঠেকানো না গেলেও ম্যাক্সিমাম নৈরাজ্য বন্ধ হয়েছে।’
বাসের রেষারেষি এখনও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো হচ্ছে। এই ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ৯৭ রুটে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনার কাজ শেষ হবে। পরবর্তী সময়ে এই দুই বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করব। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো চলাচল বন্ধ করব।’
কিছু কিছু রুটে চুক্তিতে বাস চলছে স্বীকার করে তিনি যাত্রীদের টিকিট নেয়ার বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
এসব বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণের যে শর্ত আছে, সেই শর্তে না চলে যদি বাস চুক্তিতে চলে, তাহলে পরিবহনের শৃঙ্খলা, রেষারেষি এবং ভাড়ার নৈরাজ্য কোনোভাবেই বন্ধ হবে না। তার আগে চালকের স্বচ্ছ নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে।
‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যেন তৃতীয় পক্ষের হাতে টাকা না যায়। ই-টিকেটিং তার অন্যতম একটা হাতিয়ার ছিল।’
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে যদি নগদ লেনদেন বন্ধ না থাকে, ভাড়ার নৈরাজ্য কমবে না। দেশ উন্নত হচ্ছে, কিন্তু পরিবহন খাত উন্নত হচ্ছে না। ভাড়া আদায়ের পরে মালিকের পকেটে পৌঁছাবে কি না, এটা নিয়ে যদি চিন্তা করা লাগে, তাহলে র্যাপিড পাসের প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবহনে নগদ লেনদেন বন্ধ করা গেলে এ খাতের মানোন্নয়ন হবে।’
আরও পড়ুন:দিনে রাজধানীর মিরপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন মাদারীপুর শিবচরের বেলদারহাট গ্রামের বাসিন্দা মো. জসিম। রাতে চুরি করতেন মোটরসাইকেল। এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকায় তার নাম হয় বাইক জসিম। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, জসিমের ২০ সদস্যের একটি দল রয়েছে। এ দল জসিমের নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। গত দশ বছরে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছেন জসিম।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জানান, গত ডিসেম্বরে মিরপুর মডেল থানাধীন একটি বাসা থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তদন্তে নেমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের মূলহোতা মো.জসিম ওরফে বাইক জসিমের সন্ধান পায় পুলিশ। পরে গত ১৪ জানুয়ারি তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর মোটরসাইকেল চোর চক্রের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চারটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছ ।
মিরপুর থানার ওসি বলেন, ‘জসিমের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ১২ টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সে ১০ বার জেল খেটেছেন। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। ’
দেশের বিদ্যুৎ খাত ডিজিটালাইজেশনে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার সংযোজনে কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে বেশ আগেই। এই মিটার তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানিকে (বেসিকো)। কিন্তু সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি সে পথে হাঁটেনি। তারা মিটার তৈরি না করে চীন ধেকে আমদানি করে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ চালিয়ে দিয়েছে।
আর রেডিমেইড মিটার আমদানির জন্য ব্যাংকে যে অংকের এলসি খোলা হয়েছে, সেই সংখ্যক মিটার বা যন্ত্রাংশ দেশে আসেনি। মিটার ক্রয়ের জন্য চুক্তিবহির্ভূত ও মিথ্যা ডিক্লারেশনে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে কোম্পানিটি।
বেসিকোর অনিয়ম-দুর্নীতির ডালপালা ছড়িয়েছে চারপাশে। ভিত্তিহীন বাজেট তৈরি, মালামাল ক্রয়ে সরকারি নিয়ম অমান্য, স্বাক্ষর স্ক্যান করে বোর্ড সভার ভুয়া কার্যবিবরণী তৈরি, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকি, সার্কুলার ছাড়া নিয়োগ, ফ্যাক্টরি ও আবাসিক ভবনের ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ, জাল স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে টাকা হন্তান্তরসহ লাগামহীন দুর্নীতির কারণে গত দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে কোম্পানিটি।
তবে কোম্পানি বন্ধ থাকলেও দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিদ্যুৎ খাতকে ডিজিটালাইজেশনের জন্য স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার সংযোজনে ব্যয় সাশ্রয় করতে ২০১৮ সালে দেশেই মিটার তৈরির নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) পক্ষ থেকে খুলনায় মিটার তৈরির কারখানা তৈরির প্রস্তাব করা হয়।
২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নিবন্ধিত হয় কোম্পানি। এর ৫১ শতাংশ মালিকানা ওজোপাডিকো এবং ৪৯ শতাংশ চায়না হেক্সিংয়ের। শুরুতে কোম্পানির নাম ছিল বাংলাদেশ স্মার্ট প্রিপেইড কোম্পানি। পরে নামকরণ হয় বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি। ২০২০ সালে শুরু হয় বাণিজ্যক কার্যক্রম। এক বছরের মাথায় ধারাবাহিক অনিয়মের কারণে কোম্পানি বন্ধ রাখে পরিচালনা পর্ষদ।
শর্ত ভঙ্গ করে রেডিমেইড মিটার আমদানি
বেসিকোর মিটার তৈরির ব্যাপারে ২০১৯ সালের ৩০ মে তৎকালীন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, ‘মিটার অবশ্যই বাংলাদেশে অ্যাসেম্বল করে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।‘
২০২০ সালে ওজোপাডিকোর আওতাধীন যশোর এলাকায় ৬৯ হাজার ১৬০টি মিটার সরবরাহের অর্ডার পায় বেসিকো। এর বিপরীতে ওই বছরের ৫ ও ১৪ মে দুটি এলসি খুলে ২০ লাখ ১১ হাজার ৬৬০ ডালারের বিনিময়ে চীন থেকে রেডিমেইড মিটার আমদানি করা হয়। সরবরাহের সময় সেই মিটারে ‘সার্টিফিকেট অফ কান্ট্রি অফ অরিজিন’-এ বলা হয়, ‘ম্যানুফ্যাকচার্ড বা আস ইন বাংলাদেশ’। এর মাধ্যমে সরাসরি শর্ত ভঙ্গ করা হয়।
দেশে স্মার্ট মিটারের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১০ শতাংশ ও রেডিমেইড মিটার আমদানিতে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। বেসিকোর আমদানি করা রেডিমেইড মিটারের জন্য ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়েছে, যাতে আর্থিকভাবে লোকসান হয় বেসিকোর।
২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর বেসিকো থেকে ওজোপাডিকোতে পাঠানো পত্রে দেখা যায়, শর্ত ভঙ্গ করে তারা চীন থেকে সরাসরি মিটার আমদানি করেছে।
ওজোপাডিকো সূত্র জানায়, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) ওইসংখ্যক মিটার কিনলে তাদের প্রায় ১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো।
সেবা খাতের ক্রয়ে কোটি কোটি টাকা পাচার
২০২০ সালের ২৫ অক্টোবরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখায় একটি এলসি খোলে বেসিকো। ওজোপাডিকোর সঙ্গে মিটার বিক্রির চুক্তিতে বিভিন্ন সেবা খাতের জন্য এই এলসি খোলা হয়।
ওই এলসির এক নম্বর ছিল এমডিএম ও হেস (এইচইএস) সিস্টেম সফটওয়্যার বাবদ ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। তবে ওই সফট্যাওয়ারটি ওজোপাডিকোর কাছে বিক্রির জন্য বেসিকো চুক্তি করেছিল ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা এলসি করে চীনে পাচার করা হয়েছে।
হেস সিস্টেম হলো বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের ডাটা মূল সার্ভারে পাঠানোর একটি সফটওয়্যার। যদিও ইতোপূর্বে এ ধরনের সফটওয়্যার আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোকে মাত্র ৫৮ লাখ ৬২ হাজার টাকায় সরবরাহ করেছিল। এই সফট্যাওয়ারটি পুনরায় কেনার জন্য ওজোপাডিকোর বোর্ড সভায় কখনও অনুমোদন করা হয়নি। তারপরও বেসিকোর সঙ্গে সফটওয়্যারটি কেনার জন্য চুক্তি করে ওজোপাডিকো।
বেসিকো’র পক্ষ থেকে ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় হেস সিস্টেম আমদানি দেখানোতে ঢাকা কাস্টমস অথরিটি ভ্যাট বাবদ ৬ কোটি ২০ লাখ টাকার চাহিদা ইস্যু করে। এর ফলে মাত্র ৫৮ লাখ ৬২ হাজার টাকার একটি হেস সিস্টেম কিনতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
শুধু তাই নয়, বেসিকো থেকে ওই হেস সিস্টেমটি ওজোপাডিকোকে সরবরাহ করার পর সোর্স কোডসহ যাবতীয় ডাটাবেজ হস্তান্তর করা হয়নি। এ কারণে হেস সিস্টেমে কোনো ত্রুটি হলে ওজোপাডিকোর কিছুই করার থাকবে না। তবে আইডিয়াল ইলেক্ট্রনিক এন্টারপ্রাইজ থেকে যে হেস সিস্টেমটি ওজোপাডিকোকে সরবরাহ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে সোর্স কোড ও ডাটাবেজ হস্তান্তর করা হয়েছিল।
২০২১ সালের ২৪ অক্টোবরে ওজোপাডিকোর প্রি-পেইড মিটারিং প্রকল্পের পরিচালকের এক পত্রে বলা হয়েছে, বেসিকোর হেস সিস্টেমের সোর্স কোড, ডাটা ফ্লো ডায়াগ্রাম, ডাটাবেজসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি।
ওই এলসির দুই নম্বরে রয়েছে হেস সিস্টেম স্টেস্টিং ও ইনস্টলিং বাবদ ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যদিও হেস সিস্টেমের সঙ্গে স্টেস্টিং ও ইনস্টলিং যুক্ত থাকে। আলাদা করে এই খাতে অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ টাকার পুরো অংশই পাচার হয়েছে।
এলসির তিন নম্বরে রয়েছে প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট সার্ভিস বাবদ ৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। যদিও ওজোপাডিকোর সঙ্গে বেসিকোর চুক্তিতে এ বাবদ কোনো অর্থের উল্লেখ নেই। বেসিকো তার নিজস্ব টেকনিক্যাল লোকবল দিয়ে মিটার স্থাপন ও ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনের কথা ছিল। যারা টেকনিকাল পার্সন হিসেবে চীন থেকে এসেছেন তারা বেসিকো থেকে বেতন নিয়ে কাজ করেছেন। ফলে এ ক্ষেত্রে আলাদা কোনো অর্থ দেয়ার সুযোগ নেই। এভাবে পুরো টাকাটাই পাচার হয়েছে।
এলসির চার নম্বরে রয়েছে বিদেশ প্রশিক্ষণ বাবদ ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যদিও এ খাতে ওজোপাডিকোর সঙ্গে বেসিকোর চুক্তি ছিল ৪২ লাখ টাকা। তবে বাস্তবে ওজোপাডিকোর কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়নি। এভাবে প্রশিক্ষণের নামেও বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে।
এলসির পাঁচ নম্বরে রয়েছে মিটারের তিন বছর ওয়ারেন্টি বাবদ ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। ভুল অজুহাতে এ খাতের টাকাটাও বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
এলসির ছয় নম্বরে রয়েছে হেস সিস্টেম তিন বছরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। তবে এই বাবদ ওজোপাডিকোর সঙ্গে বেসিকোর চুক্তি ছিল ৩২ লাখ টাকা। সে হিসাবে অতিরিক্ত ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকে এই এলসি খোলা হয়েছিল বেসিকোর অর্থ পরিচালক আব্দুল মোতালেব ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ে ওয়েনজুনের যৌথ স্বাক্ষরে। তবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছেড়ে যান ওয়েনজুন। বাংলাদেশে তার অনুপস্থিতিতেই ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি এলসিগুলোর বিল দেয়া হয় তার জাল স্বাক্ষরে।
এছাড়াও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) সঙ্গে ২০২০ সালের ১১ জুন বেসিকোর ২০ হাজার মিটার বিক্রির চুক্তি হয়। এ চুক্তির বিভিন্ন সেবা খাত দেখিয়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খুলনা শাখা থেকে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর ৩ কোটি ২২ লাখ টাকার এলসি খোলা হয়। তার মধ্যে ছিল মিটার ইন্টিগ্রেশন, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, মিটার ওয়ারেন্টি ও ট্রেনিং; যাতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল না। এমনকি মিটার ক্রয়ের জন্য এসব খাতে অর্থ প্রদানের সুযোগ নেই।
এসব টাকা পাচার না হলে বেসিকোর ৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বেশি লাভ হতো।
ওজোপাডিকোর এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এই অর্থ পাচারের সঙ্গে বেসিকোর অর্থ পরিচালক আব্দুল মোতালেব এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ে ওয়েনজুন ও রুলং ওয়াংয়ের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসব অর্থ পাচার করে তারা মানি লডারিং-এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আমদানির পরিবহন খাতেও অর্থ পাচার
বেসিকোর পক্ষ থেকে মোট এক লাখ ৯০ হাজার মিটার বা তার যন্ত্রাংশ আমদানির পরিবহন খরচ বাবদ বিভিন্ন সময়ে প্রিমিয়ার ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে এলসি খোলা হয়েছে। এ বাবদ মোট টাকা ব্যায় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তবে ওজোপাডিকোর নীরিক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংখ্যক মিটার আমদানিতে পরিবহন বাবদ ৩৭ লাখ টাকার বেশি কোনোভাবেই খরচ হতে পারে না। এখান থেকেও কমপক্ষে এক কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।
দুই প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন দামে মিটার বিক্রি
ওজোপাডিকো ও ডিপিডিসি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) বেসিকো’র কাছ থেকে মিটার কিনেছে। তবে বেসিকো প্রতিটি সিঙ্গেল ফেজ মিটার ডিপিডিসিকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় ও ওজোপাডিকোকে ৫ হাজার ৮৮৯ টাকায় বিক্রি করেছে। সে হিসাবে ডিপিডিসি থেকে ওজোপাডিকো’র কাছে মিটার প্রতি এক হাজার ৩৮৯ টাকা করে বেশি নিয়েছে।
সূত্র জানায়, ওজোপাডিকো বেসিকোর কাছ থেকে এক লাখ ৬৬ হাজার প্রি-পেইড মিটার ক্রয় করেছে। এই হিসাবে বেসিকো অতিরিক্ত লাভ করেছে ২৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। যদিও বেসিকো লাভ বাবদ তাদের বাজেট দেখিয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
ওজোপাডিকোর নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই লাভের টাকার একটি বড় অংশই চীনে পাচার করা হয়েছে।
ভিত্তিহীন বাজেট প্রণয়ন
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বেসিকোর ৭তম বোর্ড সভায় যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছিল তার বাস্তবসম্মত ভিত্তি নাই। যথাযথভাবে বাজেট প্রণয়ন করলে বেসিকোর ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা টাকা লাভ হতো। অথচ তাদের লাভ দেখানো হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বাজেটে তারা মালামাল ক্রয়ে যথাযথ অনুমোদন নেয়নি। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থ পাচার।
মালামাল ক্রয়ে সরকারি নিয়ম অমান্য
বেসিকো সরকারি কোম্পানি হিসেবে ওজোপাডিকো ও ডিপিডিসিকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) মিটার সরবরাহ করেছে। তবে এসব মিটার বা যন্ত্রাংশ ক্রয়ে বেসিকো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম) অনুসরণ করেনি। বরং বেসিকোর শেয়ারের অংশীদার হেক্সিং থেকে বিভিন্ন মালামাল বেশি দামে কেনা হয়েছে।
বেসিকোর ৫১ শতাংশ মালিক ওজোপাডিকো। আর বেসিকোর ব্যবস্থাপনায় ওজোপাডিকো’র কর্মকর্তারা থাকা সত্ত্বেও হেক্সিংয়ের স্বার্থ সুরক্ষা হয়েছে।
নিয়োগে অনিয়ম
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোন ধরনের নিয়ম নীতি না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেসিকোতে। এক্ষেত্রে নিয়োগের কোনো সার্কুলার দেয়া হয়নি। নিজেদের পছন্দের লোকবল নিয়োগের জন্য জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হলেও তার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অনেকে মেধা তালিকা প্রস্তুতের পরীক্ষায় হাজির না হয়েও নিয়োগ পেয়েছেন। এছাড়া এই নিয়োগের ব্যাপারে বোর্ডের কোনো অনুমোদন নেই।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
খুলনার রূপসা সেতুর বাইপাস সড়কের মোহাম্মদনগর এলাকার মৃধা কমপ্লেক্সে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল কোম্পানির (বেসিকো) একমাত্র ফ্যাক্টির ও মূল কার্যালয়। সম্প্রতি ফ্যাক্টির ঘুরে দেখা গেছে পিনপতন নীরবতা। মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মী ছাড়া সেখানে কেউ নেই।
বেসিকোর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিক উদ্দিন ২০২২ সালের ২ মে অবসরে যান।
বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুল বারী বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি হলো অর্ডার বেইজড কোম্পানি। কিছুদিন আগে ডেসকো থেকে কিছু অর্ডার পেয়েছিলাম। তা সরবরাহ হয়ে গেছে। সামনে কিছু অর্ডার পেতে পারি। সেই প্রস্তুতি চলছে।’
কোম্পানিটির আগের কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি নিয়ে তিনি কথা বলতে চাননি। প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দেখুন সে সময়ে আমি ছিলাম না। আর সে সম্পর্কে কিছু জানলেও বলতে চাই না।’
ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্বের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আমি অবগত আছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থার কার্যাবলী প্রক্রিয়াধীন।’
বেসিকো’র বর্তমান কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, ‘কোম্পানিটি সচল রাখতে আমরা কিছু অর্ডার দেয়ার পরিকল্পনা করেছি। ওই অর্ডারগুলো পেলে তাদের কর্মকাণ্ড সচল হবে।’
জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকীর মতো দিনগুলো কেক কেটে উদ্যাপন শহুরে জীবনে এখন খুব সাধারণ ঘটনা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কেক দেদার বিক্রি হয় এসব উপলক্ষ ঘিরে। পরিচিত ব্র্যান্ড ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় রয়েছে অনেক দোকান, সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে বাহারি নানান কেক।
সুপরিচিত পেস্ট্রিশপে মান ভেদে প্রতি পাউন্ড ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় কেক বিক্রি হয়। পাড়ার বেকারি ও দোকানে এসব কেক মেলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পাউন্ড হিসেবে। অপেক্ষাকৃত কম দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষই এসব কেকের প্রধান ক্রেতা।
এত কম দামে কেক কীভাবে তৈরি হচ্ছে তা অনুসন্ধান করেছে নিউজবাংলা। এই অনুসন্ধানে রাজধানীর একটি কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে ভড়কে যাওয়ার মতো পরিবেশ। ভয়ংকর অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশের মাঝে ক্ষতিকর উপকরণ ও রং দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব কেক।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকার হাসেম খান রোডের একটি দোতলা ভবন। সামনের অংশ মার্কেট আর পেছনে দিকটি ভাড়া দেয়া হয়েছে বিভিন্ন কারখানা হিসেবে।
গেট দিয়ে ঢুকে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতেই দেখা যায় শত শত কেকের বাক্স। নানান আকৃতির বাক্সগুলোর ডিজাইন মনকাড়া। পাশেই তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে চলছে মর্নিং ফুড নামের কেক তৈরির কারখানা।
কারখানার কর্মীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। কেউ কেকের ডেকোরেশন করছেন, কেউ ক্রিম তৈরি করছেন, আবার কেউ ব্যস্ত প্যাকিং নিয়ে। বিভিন্ন রঙের কেক দেখলেই জিভে পানি এসে যায়।
তবে চারদিকে অবিশ্বাস্য নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ। কারখানার তিনটি কক্ষই নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে। কেকের খামির তৈরির জায়গাটির পাশেই আবর্জনার স্তূপ। পুরো কারখানা চষে বেড়াচ্ছে তেলাপোকা, মাছি ও পিঁপড়া।
ভেতরের দিকের একটি কক্ষ কেক তৈরির মূল জায়গা। সেখানে আছে একটি গ্যাস ওভেন, চুলা ও খামির তৈরির মেশিন। মাটিতে একটির ওপর আরেকটি করে অনেকগুলো ট্রেতে রাখা আছে তৈরি করা কেক। এগুলোর ওপর হামলে পড়ছে মাছি। খামির তৈরির মেশিনের সঙ্গে রাখা ডাস্টবিনে ডিমের খোসাসহ অন্য আবর্জনা উপচে পড়ছে।
এর পাশেই একটি পাত্রে দেখা গেল ‘চকলেট ক্রিম’। ডালডার সঙ্গে রং মিশিয়ে কয়েক দিন আগে তৈরি করা হয়েছে এই কথিত চকলেট ক্রিম। ওই কক্ষেই ডালডার মজুত ও বালতি ভর্তি লাল, হলুদ, সবুজ নানা রঙের বিভিন্ন ক্রিমও রয়েছে। এগুলো দিয়ে ময়দার তৈরি কেকের ওপর বাহারি নকশা করা হয়।
যে কক্ষে ডেকোরেশনের কাজ চলে সেখানে ফুড কালার, কোকো পাউডার থাকলেও একটি বাক্সে দেখা গেল মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার। এই রং মিশিয়েই বালতিতে নানা রঙের ক্রিম তৈরি করছেন কারখানার কর্মীরা।
পেছনের এই ভয়ংকর ধাপগুলো পেরিয়ে সুসজ্জিত কেকগুলো জায়গা পাচ্ছে আকর্ষণীয় বাক্সে।
এসব কেক সংরক্ষণের রেফ্রিজারেটরের দরজা খুলতেই আরও আতঙ্ক জাগে। কেকগুলোর সঙ্গেই রাখা হয়েছে কাঁচা মাছ-মাংস ও মসলা।
কারখানাটির মালিক কে সে বিষয়ে কর্মীদের কেউ কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। এমনকি নিজের নামও জানাননি কোনো কর্মচারী।
তারা জানান, ছয় মাস ধরে চলছে এই কারখানা। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ পিস কেক সরবরাহ করা হয় আশপাশের বিভিন্ন দোকানে। রায়েরবাজার ও বেড়িবাঁধ এলাকার বিভিন্ন কনফেশনারি ও বেকারি দোকানিরাই তাদের প্রধান ক্রেতা। কারখানা থেকে প্রতি পাউন্ড কেক ১০০ টাকা করে বিক্রি হয়। আর সেগুলো বেকারি ও কনফেকশনারিতে বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পাউন্ড হিসাবে।
কেক তৈরির প্রক্রিয়া জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক কর্মী নিউজবাংলাকে জানান, ময়দার সঙ্গে চিনি, ডিম ও তেল মিশিয়ে খামির তেরি করে ওভেনের মাধ্যমে মূল কেক তৈরি করা হয়। এরপর সেগুলো নানা আকৃতিতে কেটে তার ওপরে ক্রিম দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়।
এই কারখানায় ভ্যানিলা ও চকলেট ফ্লেভারের দুই ধরনের বেসিক ক্রিম রয়েছে। ডালডার সঙ্গে রং, ফ্লেভার ও কোকো পাউডার মিশিয়ে এই ক্রিম তৈরি হয়। আকর্ষণ বাড়াতে লাল, সবুজ, হলুদসহ নানা রঙের ক্রিম তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার।
এক কর্মী স্বীকার করেন, কারখানা চালাতে মালিকের কোনো ট্রেড লাইসেন্স বা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই।
কোথায় যাচ্ছে এসব কেক
অত্যন্ত নিম্নমানের এসব কেকের গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিষ্কার কোনো তথ্য দেননি মর্নিং ফুড কারখানার কর্মীরা। তারা জানান, বিভিন্ন দোকান থেকে লোক এসে অর্ডার দিয়ে নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যান। তারা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দোকানে কেক সরবরাহ করেন না।
তবে পরদিন কারখানার ওপর নজর রেখে নিউজবাংলা দেখতে পায় সকাল ১০টার কিছু পরে দুই ব্যক্তি সেখান থেকে দুটি সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে যান। ঘণ্টাখানেক পর তারা সাইকেলের পেছনে কয়েকটি কেকের বাক্স নিয়ে কারখানায় ফিরে আসেন।
এক সাইকেল আরোহী বুলবুলকে প্রশ্ন করলে স্বীকার করেন তিনি কারখানার ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে খণ্ডকালীন কেক তৈরি করেন।
তার কাজ হলো প্রতিদিন দুপুরের পর বিভিন্ন দোকানে অর্ডার অনুযায়ী কেক পৌঁছে দেয়া। আর পরদিন সকালে তিন দিনের বেশি পুরোনো কেক কারখানায় ফিরিয়ে আনা।
ঘটনার দিন সকালে তিনি দুই দোকান থেকে তিনটি পুরোনো কেক ফেরত এনেছেন।
কারখানার এক কর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, দোকান থেকে ফিরিয়ে আনা বাসী কেকে আবার নতুন ক্রিম মাখিয়ে পরদিন ফের দোকানে সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘পাউন্ড ১০০ টাকা দরে কেক বিক্রি করে খুব সীমিত লাভ হয়। এর মধ্যে যদি আবার কেক ফেরত আসে তাহলে ব্যবসা চলবে না। তাই আমরা পুরোনো কেকে আবার ক্রিম মাখিয়ে বিক্রি করি।’
দুপুরের পর কারখানা থেকে নতুন কেক নিয়ে সাইকেলে চড়ে বেরিয়ে যান ওই দুই ডেলিভারি ম্যান। একজনের পিছু নিয়ে দেখা যায় কারখানা থেকে কিছুটা দূরে হাসেম খান রোড বাজারের হৃদয় কনফেকশনারি ও ভাগ্যকুল মিষ্টিমুখ নামে দুটি দোকানে তিনি কেক পৌঁছে দিলেন। দোকানের কর্মচারীরা বেশ যত্ন নিয়ে এই কেক সাজিয়ে রাখেন।
দাম জানতে চাইলে ভাগ্যকুল মিষ্টিমুখ নামের দোকানের কর্মচারী ১ পাউন্ড কেকের দাম চান সাড়ে ৩০০ টাকা, আর দুই পাউন্ডের দাম ৬০০ টাকা। তবে দামাদামির পর ১ পাউন্ড কেক ২৫০ টাকায় দিতে রাজি হন তিনি।
দোকান মালিক আরাফাত রহমান লিংকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাশের একটি কারখানা থেকে এই কেকগুলো দিয়ে যায়। দুই ধরনের কেক হয়। হাই কোয়ালিটি আর লো কোয়ালিটি। হাই কোয়ালিটির কেক বাটার দিয়ে তৈরি হয় আর লো কোয়ালিটির কেক ডালডা দিয়ে।
‘তবে এই এলাকায় হাই কোয়ালিটি কেক খুব একটা চলে না। মাঝে মাঝে কেউ অর্ডার করলে আমরা কারখানাকে হাই কোয়ালিটি কেক দিতে বলি। এ ধরনের কেক প্রতি পাউন্ড ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।’
লিংকন জানান, সাধারণত তিনি লো কোয়ালিটির কেক অর্ডার করেন, কারণ এই কেক সস্তা হওয়ায় চাহিদা বেশি।
বাসী কেক ফেরত দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারখানার সঙ্গে আমার কনট্রাক্ট হলো বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে নতুন কেক দেবে। এটাই হয় সব জায়গায়।’
বাসী কেকের ওপর ক্রিমের নতুন প্রলেপ দেয়া এবং কারখানায় নোংরা পরিবেশের তথ্য জানেন কি না, এমন প্রশ্নে লিংকনের দায়সারা জবাব, ‘এত কিছু আমাদের জানতে হয় না, এত কিছু জানলে ব্যবসা করা যাবে না।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর কাপ্তানবাজারের ঠাটারী বাজারে ১৯৯টি মাছ ও তরকারির আড়ত থেকে দুই বছরে ২ কোটি টাকার বেশি চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই টাকা জমা পড়েনি সরকারি কোষাগারে।
আড়তের ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশন থেকে দোকান বরাদ্দ পেলেও সম্প্রতি নিয়োগ করা হয়েছে ইজারাদার। দুই বছর চাদাঁবাজি চলার পর ইজারাদার নিয়োগের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ।
বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন ব্যবসায়ীরা। আদালত এ বিষয়ে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইজারা কার্যক্রমে স্থিতাবস্থা দিলেও তা লঙ্ঘনের চেষ্টা চলার অভিযোগ উঠেছে।
ঠাটারী বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফীর ছত্রচ্ছায়ায় তার চাচাতো ভাই ইয়াছির দৈনিক ভিত্তিতে দুই বছর চাঁদা তুলেছেন। ইয়াছির চাঁদা টাকা তুলতেন জামাল নামে একজন ব্যবসায়ীকে দিয়ে। এরপর গত অক্টোবরে ইজারাদার নিয়োগ দেয় দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশন। তিনিও স্থানীয় কাউন্সিলরের অনুসারী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর ইমতিয়াজের দাবি, সরকারিভাবে রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ নেয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯৬ সালে মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় ঠাটারী বাজারে একতলা একটি ভবনে ১৯৯ ব্যক্তিকে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন তাদের চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র দেন। দোকানপ্রতি মাসিক ভাড়া ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে করোনার সময় ঝামেলা শুরু হয়। ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে ভবনটি ভেঙে ফেলে সিটি করপোরেশন। তখন কথা ছিল নতুন ভবন নির্মাণ করে আগের চুক্তি অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে।
‘তবে এখনও সেই ভবন নির্মাণ করা হয়নি। আর ওই জায়গায় ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী দোকানে শুরু হয় কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফীর চাচাতো ভাই ইয়াছিরের চাঁদাবাজি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘কাউন্সিলর শুরুতে টিনের ঘের দিয়ে বাজারের জায়গাটি আটকে দিতে চেয়েছিলেন। আমরা জায়গাটি উন্মুক্ত রাখার অনুরোধ করলে তিনি জানান, ব্যবসা করতে হলে রাজস্ব দিতে হবে। তবে এই রাজস্ব সরকারকে নয়, দিতে হবে তার চাচাতো ভাই ইয়াছিরকে। এরপর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত একটানা চলে চাঁদাবাজি।’
ঠাটারী বাজারের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুরুতে দিনে প্রতি দোকান থেকে ২০০ টাকা করে দিতে বলেছিলেন ইয়াছির। পরে তা একটু কমানো হয়। ওই বছর প্রথম ছয় মাস প্রতিদিন এই ১৯৯ দোকান থেকে দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা করে। পরের ছয় মাস কাউন্সিলরের লোকজন দিনপ্রতি নেন ২৮ হাজার করে টাকা। গত বছরের অক্টোবর থেকে দিনে ৩১ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে মেয়রকেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।’
দুই বছর ধরে নীরবে চাঁদা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভবন ভাঙার পর তো ব্যবসা করারই সুযোগ ছিল না। ফলে ব্যবসা করার জন্য কমিশনার ও তার লোকদের টাকা দেয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।’
সম্প্রতি জায়গাটি মো. কামরুজ্জামান নামে একজনকে বছরে ৩৮ লাখ টাকায় ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। এর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা হাইকোর্টে রিট করলে আদালত স্থিতাবস্থা দেয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২৮ নভেম্বর ইজারাদার কামরুজ্জামানের পক্ষে ঠাটারী বাজারে মাইকিং করে একটি পক্ষ। বলা হয়, ১ ডিসেম্বর থেকে ইজারাদারকে অর্থ দিতে হবে। এর প্রতিবাদে ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করেন দোকান মালিকরা।
উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৩০ নভেম্বর রাতে ডিএমপির ওয়ারী থানায় ব্যবসায়ীরা সাধারণ ডায়েরিও করেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জিডি করার পর থানা থেকে ঠাটারী বাজার ফেরার পথে স্থানীয় কাউন্সিলরের লোকজনের হামলায় অন্তত ২০ জন আহত হন। এর প্রতিবাদে ১ ডিসেম্বর সকাল থেকে ঠাটারী বাজারের মৎস্য ও তরকারি আড়তের ১৯৯টি দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়। অবশ্য পুলিশের আশ্বাসে শুক্রবার দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
আদালতের আদেশ না মেনে টোল আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করছেন ইজারাদার মো. কামরুজ্জামান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এখনও আমাকে বাজার বুঝিয়ে দেয়নি। আমি এখনও বাজারে যাইনি। সিটি করপোরেশন বুঝিয়ে দেয়ার পর যাব।’
তবে ডিএসসিসি বলছে, ইজাদারকে অনেক আগেই বাজার বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. রাসেল সাবরিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ইজারাদারকে বাজার বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে জায়গার মাপ নিয়ে একটু সমস্যা আছে, যেটা কয়েক দিনের মধ্যে সমাধান করে দেয়া হবে।’
আদালতের স্থিতাবস্থা জারির বিষয়ে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যা করছি, সবই আদালতের নির্দেশনার মধ্যে থেকেই করছি।’
বাজার থেকে দুই বছরে ২ কোটি টাকার বেশি চাঁদা তোলার সঙ্গে নিজের স্বজন বা অনুসারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছেন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী। তার দাবি, চাঁদাবাজির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি অংশই জড়িত।
ইমতিয়াজ মন্নাফী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এত বছর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটা শ্রেণি চাঁদা নিত। এবারই প্রথম ইজারার মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের তহবিলে টাকা জমার বিষয়টি এসেছে। এতে ওই চাঁদাবাজ লোকজন লসে পড়েছে।
‘তাই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তারা এখন আমার নামে বদনাম করছে। আমি বা আমার কাছের লোকজনের নামে যে তথ্য ছড়াচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা য়ায়, কাপ্তানবাজারসংলগ্ন অংশে ঠাটারী বাজারের অবস্থান। ৩৮ নং কাউন্সিলরের অফিস থেকে অদূরে সেদিন বাজারের সব দোকান বন্ধ ছিল। ইজারা বাতিল ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি নিয়ে সোচ্চার ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের এই অবস্থান চলার সময় দুপুর দেড়টার দিকে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রহমান ২০-২৫ জনকে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ঘটনাস্থলে আসেন।
বাহাউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দিতে দেখা যায় আব্দুর রহমানকে। তিনি উচ্চকণ্ঠে বলছিলেন ‘দোকান বন্ধ রাখা যাবে না। আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করতে আইসেন না। আমরা এলাকাতেই থাকমু। দোকান খোলেন।’
আব্দুর রহমান সম্পর্কে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি কাউন্সিলরের লোক। এখানে মাস্তানি করতে আসছেন। জোর করে ওরা সব আদায় করতে চায়।’
ঠাটারী বাজার মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. বাহাউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারের ব্যবসায়ীদের গ্রাস করার জন্য ওরা আমাদের ওপর হামলা করছে। আমরা জিডি করে আসার সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মারছে। দোকানের শাটার ভাঙার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাঁদা দেব না। ইজারাদারের বিষয়টা নিয়ে আদালতের স্থিতাবস্থা আছে। আমরা আর চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি থাকতে চাই না।’
ইজারাদার কামরুজ্জামানও কাউন্সিলরের লোক বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, এলাকায় অপরিচিত কামরুজ্জামানের নাম ব্যবহার করে কাউন্সিলরই ইজারা নিয়েছেন।
কামরুজ্জামানের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করছেন না কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ঠিক আছে। কার লোক কী বিষয়, এটা তো সরকার দিয়েছে। সরকার এটার জন্য রাজস্ব পেয়েছে। এই টাকা বাজারের যারা আছে তারা কখনও সরকারকে দেয়নি।’
ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যারা এখন বাজারে আছে তাদের কাছে কি মালিকানার কোনো ডকুমেন্ট আছে? তাদের কাগজ দেখাতে বলেন। আমি তো আমার কাগজ (ইজারা) দেখাইছি। দেশে তো আইন আছে। আইনের বাইরে তো যাব না। আমি একজন জনপ্রতিনিধি।
‘ল্যান্ডের মালিক সিটি করপোরেশন। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিটি করপোরেশনকে সার্ভ করি। এ জন্য আমার নাম আসবে, এটা ন্যাচারাল। এই বাজারে এক্স ওয়াই জেডরা তাদের বেনিফিট হারাচ্ছে, এখন গর্ভমেন্ট রাজস্ব পাবে। এটা তারা মানতে পারছে না।‘
বাজারে চাঁদাবাজির ঘটনায় চাচাতো ভাইসহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের নাম আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলরের যারা পলিটিক্যাল লোক থাকে, তাদের সবারই নাম আসবে। আমি কাপ্তানবাজার মালিক সমিতির সভাপতি। অন্যদিকে ময়না ও বাহাউদ্দিন দুজনই আমার এলাকার বাসিন্দা না। তারাই মাছ বাজার থেকে টাকা ওঠাত। আমি যখন এটাকে গর্ভমেন্ট রাজস্বে ফালাইছি তখন থেকেই তারা মানতে পারছে না।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে দিনে মালিককে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, প্যাডেলচালিত রিকশার ক্ষেত্রে যা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা।
এই বাড়তি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা নেয়ার কারণ, এ থেকে ৮০ টাকা নিতে হয় একটি টোকেনের জন্য, যে টোকেন থাকলে অবৈধ জেনেও পুলিশ ধরবে না।
অর্থাৎ একটি ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য মাসে দিতে হয় ২ হাজার ৪০০ টাকা, বছরে ২৮ হাজার ৮০০ টাকা।
সরকার না নিলেও এই টাকা দেয়া ছাড়া সড়কে রিকশা নামানোর সুযোগ নেই।
সরকারও গাড়ি থেকে টাকা নেয়। আর তেজগাঁওয়ে যে হারে টাকা আদায় করা হয়, প্রাইভেটকারের ক্ষেত্রে অনেকটা সেই হারেই সরকার টাকা নিয়ে থাকে।
১ হাজার ৩০০ সিসির প্রাইভেট সেডান কারের জন্য বছরে ফিটনেস ট্যাক্স দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা আর বিআরটিএ ট্যাক্স দিতে হয় ৬ হাজার টাকা, সব মিলিয়ে ৩১ হাজার টাকা, অর্থাৎ ব্যাটারিচালিত রিকশার প্রায় সমান।
রিকশায় ব্যাটারি লাগালেই তা সড়কে চলার অনুমতি হারায়। তবে তেজগাঁওয়ের মতো নিত্যদিন বা মাসিক অথবা পাক্ষিক চাঁদা দিলে তা সড়কে চলতে পারে। তখন পুলিশ বাধা দেয় না।
আর এই চাঁদার টাকার বিনিময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার পেছনে লাগানো হয় একটি স্টিকার, যেটি টোকেন নামে পরিচিত। প্রধানত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতার হাত দিয়ে এই টোকেন দেয়া হয় রিকশার মালিকদের। আর সেই টাকার অংশ পায় পুলিশও, যারা থাকে দৃষ্টির আড়ালে।
যারা টাকা তোলেন, তাদের মধ্যে বিরোধে সম্প্রতি মিরপুর এলাকায় এই টোকেন দেয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেই এলাকার রিকশাচালকরা নিয়মিত ভুগছেন। পুলিশ রিকশা আটক করে দুই হাজার বা আড়াই হাজার টাকা করে আদায় করে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা।
সম্প্রতি রিকশা আটক করার পর বেশ কয়েকটি পুলিশ বক্সে হামলা করে ভাঙচুর করেছেন রিকশাচালকরা। একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবলকে মারধরের ভিডিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
রিকশার স্টিকার বিআরটিএ স্টিকারের আদলেই
প্রাইভেটকারের স্টিকারের মতোই ব্যাটারিচালিত রিকশার স্টিকারেও এর ‘বৈধতার’ তারিখ উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ ওই তারিখের পরে আবার টাকা দিয়ে নতুন তারিখের স্টিকার নিতে হবে। অন্যথায় পুলিশের মাধ্যমে রিকশা আটক করে ডাম্পিংয়ে দেয়া হয়।
উচ্চ আদালতে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অবৈধ ঘোষণা দেয়ার পর তা অপসারণের কথা বললেও কার্যত কোনো ফলাফল দেখা যায় না এসব স্টিকারের কারণেই।
পুলিশ বলছে, তারা প্রধান সড়কে এই রিকশা চালাতে দেয় না। তবে রাত ৯টার পরে প্রধান সড়কেও এই রিকশা দেখা যায়। এ ছাড়া পুলিশ রিকশা ধরে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া যায়।
রাজধানীর যে এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেশি চোখে পড়ে এই এলাকাগুলো হচ্ছে, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, খিলগাঁও, মোহাম্মদপুর, মাণ্ডা, বাসাবো, মানিকনগর, রামপুরা, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, কদমতলী, সবুজবাগ, শ্যামপুর, ডেমরা, ধানমন্ডি, রায়েরবাজার, উত্তরা, ভাটারা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, ময়নারটেক, মিরপুর, পল্লবী, জিগাতলা ইত্যাদি এলাকা।
তেজগাঁও শিল্প এলাকার রিকশাচালক মো. মিরাজ নিউজবাংলাকে জানান, এক মাসের জন্য স্টিকার বাবদ প্রতি রিকশায় দেয়া লাগে ২ হাজার ৪০০ টাকা। তেজকুনিপাড়া ও নাখালপাড়ায় নেয়া হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা।
চালকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, তেজগাঁও শিল্প এলাকায় স্টিকার দিয়ে টাকা ওঠান মো. বেলাল নামে একজন। তিনি তেজগাঁও শিল্প এলাকার ৬ নম্বর ইউনিট আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি।
এই স্টিকার না নিলে কী সমস্যা হয়, জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, ‘এই স্টিকার না নিলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে আনে।’
আরেক চালক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘মাঝে মাঝে তাও পুলিশে ধরে। তখন র্যাকার বিল দেড় হাজার টাকা দিয়ে রিকশা ছাড়িয়ে আনতে হয়। আর ডাম্পিংয়ে দিলে ৫ হাজার লাগে।’
ডাম্পিংয়ে নিলে পুলিশ ব্যাটারি খুলে রেখে দেয় বলেও জানালেন তিনি।
আরেক চালক মো. আনোয়ার বলেন, ‘প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ টাকা মালিককে ভাড়া দিয়ে রিকশা চালাই। দুই লাইনম্যানকে ২০ টাকা করে ৪০ টাকা দেয়া লাগে। এই লাইনম্যানও তাদের (বেলাল) লোক। সাতরাস্তা থেকে শান্তা টাওয়ার পুরাটা বেলাল কার্ড দিয়ে চাঁদা ওঠায়। কারওয়ান বাজার থেকে মেট্রোপলিটন আরেক গ্রুপ টাকা তোলে।’
বেলাল বললেন, টাকা দেন পুলিশকে
টোকেনের বিনিময়ে কেন অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা নিচ্ছেন প্রশ্ন করা হলে মো. বেলাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাস্তায় যারা ট্রাফিক সার্জেন্ট আছে তাদের দিই।’
টাকা কি আপনি তুলে ট্রাফিক সার্জেন্টদের দেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি না লোক আছে। তারাই তোলে। টাকা তুলে ট্রাফিক সার্জেন্টদের দেন।’
কোন ট্রাফিক সার্জেন্টদের টাকা দেন চাঁদা তুলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম বলা সম্ভব না যে কাকে দিই।’
-আপনি তো নাম জানেন তাহলে সমস্যা কী?
জবাবে বেলাল বলেন, ‘আমি আপনাকে এক ঘণ্টার মধ্যে ফোন দিচ্ছি।’
তবে পরে তিনি ফোন দেননি। আর কল দিলেও ধরেননি।
সার্বিক বিষয় জানানোর পর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার শাহেদ আল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ তো টাকা নিয়ে বলবে না নিজের জন্য নিই? কোনো কোন পুলিশকে টাকা দিয়েছে এমন প্রমাণ থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা প্রধান সড়কে ঢুকতে পারবে না। প্রধান সড়কে এলে আমরা ধরি। তারপরও রিকশাওয়ালারা কেন টাকা দেয়, সেটা আমি বলতে পারব না।’
কেন মিরপুরের হামলা?
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে মিরপুর ও পল্লবী এলাকার ট্রাফিক পুলিশের পাঁচটি বক্সে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকদের হামলা হয়। এ ঘটনায় একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
হামলার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ বলছে, তাদের নিয়মিত অভিযানে দুটি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করার পর এ হামলা হয়। এ সময় রিকশাচালকেরা ভ্যান ও রিকশায় করে ইটপাটকেল নিয়ে আসেন।
৫ পুলিশ বক্সে হামলা ও ভাঙচুর এবং দুই ট্রাফিক সদস্যকে মারধরের ঘটনায় পল্লবী থানায় শুক্রবার রাতেই মামলা হয়। এরপর ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আর মিরপুর মডেল থানা ও পল্লবী থানা পুলিশ ধরে ২১ জনকে।
শনিবার মিরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে দুই-একজনকে পাওয়া যায়, যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া গলির ভেতরে মাঝে মাঝে দুই-একটা ব্যাটারিচালিত রিকশা চোখে পড়েছে।
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার এই ধরনের রিকশার চালক মো. সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুইটা রিকশা আটকাই ছিল পুলিশ। আর চালকদের মারধর করছে। পুলিশ রিকশা ধরলে ২ থেকে ৩ হাজার ট্যাকা নিয়া ছাইড়া দেয়। এই জরিমানার টাকার অর্ধেক মহাজন দেয়, আর বাকি অর্ধেক আমাগো দিতে অয়।’
তিনি জানান, কিছুদিন আগে মাসিক এক থেকে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে টোকেন পদ্ধতিতে এই রিকশাগুলো চলত মিরপুর ১২ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত। যারা টোকেন দিয়ে টাকা আদায় করত, তারা ওই টাকার ভাগ পুলিশকেও দিত।
সুমনের তথ্য বলছে, পরে টোকেন নিয়ে কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হওয়ায় এই পদ্ধতি বাতিল হয়। এরপর থেকেই পুলিশ ঝামেলা করে।
মিরপুর-১২ এলাকায় পাওয়া যায় শারীরিক প্রতিবন্ধী চালক মাসুম বিল্লাহকে। তিনি বলেন, ‘সার্জেন্টের ডিউটি ৮টা থেকে। ফজরের আজানের পরেই চলে আসে কিছু ঘুষখোর পুলিশ। সকাল ৭টা না বাজতেই অটোরিকশা ধরে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। এই অত্যাচার ওরা সহ্য করতে পারে নাই।’
তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ওপর থেকে নির্দেশ এলে ৫০ রিকশা ধরে ১০টা ডাম্পিংয়ে দেয়। বাকি ৪০ রিকশা থেকে কমিশন খেয়ে ছেড়ে দেয়।’
পল্লবী এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মজিদ মিয়া বলেন, ‘আগে যে নেতারা টোকেন দিয়ে টাকা তুলত, এদের পকেটে এখন টাকা যায় না। উপরের হাত না থাকলে রিকশাওয়ালারা আধা ঘণ্টার মধ্যে এতগুলো জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করতে পারে? এটাও বোঝার বিষয়। আমার সাহস হবে একটা পুলিশের গায়ে হাত দেয়া? এলাকার নেতারাই এই হামলা করিয়েছে। না হলে এই হামলা চালাতে পারত না। আর এই হামলার সঙ্গে বহিরাগত বিহারি ও স্থানীয় নেতাদের লোকরাও জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘নেতারা চাচ্ছে ঝামেলা হয়ে রিকশা বন্ধ হয়ে যাক। পরে তারা আবার টোকেন দিয়ে রিকশা চালাবে। কয়েক মাস আগেও টোকেনপদ্ধতি ছিল এই এলাকায়। তখন পুলিশ ঝামেলা করত না। মিরপুর ভাসানটেক এলাকায় এখনও টোকেন সিস্টেম আছে।’
স্বীকার করে না পুলিশ
২ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে রিকশা ধরে ছেড়ে দেয়া হয় এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাফিক পুলিশের পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার ইলিয়াস হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ কর্তৃক টাকা নিয়ে রিকশা ছেড়ে দেয়া এটা একধরনের মুখস্থ কথা। কিছু হলেই পুলিশের দোষ এই আর কী।’
৫০টা রিকশা ধরে ১০টা ডাম্পিংয়ে দেয়। বাকি ৪০টা রিকশা থেকে কমিশন খেয়ে ছেড়ে দেয়া হয় এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো এলাকায় ঘোরেন দেখেন। এ ধরনের কি কিছু দেখেছেন কখনও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে? মাঝে মাঝে দুই-একটা রিকশা ধরার পর তদবিরে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া সব রিকশা আইনগত পদ্ধতিতে ডাম্পিংয়ে দেয়া হয়।’
পুলিশ বক্সে কারও উসকানি ছাড়া রিকশাচালকদের হামলা করার কথা তো না, এমন মন্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে যে তথ্য আছে, এই হামলাটা মূলত ব্যাটারিচালিত রিকশার সঙ্গে যারা বিভিন্নভাবে জড়িত (কেউ ব্যাটারি ব্যবসা, কেউ পার্টসের ব্যবসা, কারও চার্জিং স্টেশন ইত্যাদি) তারাই এর সঙ্গে যুক্ত।’
তিনি বলেন, ‘মানবিক ইস্যু তৈরি করার জন্য অনেক সময় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর জন্য নারীচালক, পঙ্গু লোক ও তৃতীয় লিঙ্গের লোক ব্যবহার করা হচ্ছে। যাতে আমরা কিছু না বলি। আমরা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনেই কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি মাদ্রাসায় হাফেজিয়ায় পড়ে ১২ বছর বয়সী তানভীর হাসান। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষকদের দৈনিক গৃহকর্মের কাজগুলোও করতে হয় তাকে।
যারা এভাবে শিক্ষকের হয়ে খাটে, তাদের বলা হয় খাদেম। সম্প্রতি মাদ্রাসায় নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এনে প্রতিরোধের আহ্বান জানানো ধর্মীয় বক্তা রফিকউল্লাহ আফসারী শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কাজ করাতে খাদেম তৈরিরও সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, এটা ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না।
তানভীরকে শিক্ষকদের জন্য আসলে কী কী করতে হয়?
নিউজবাংলাকে সে বলে, ‘সকালে হুজুরের বিছানা কইর্যা দেই, চা আইন্যা দেই। প্রতি সপ্তাহেই হুজুরের কাপড়ও ধুয়ে দেই। এ ছাড়া নানা কাজ করি।’
কী কারণে এসব তোমাকে করতে হয়- এমন প্রশ্নে সে বলে, ‘ওস্তাদের (মাদ্রাসায় শিক্ষককে ওস্তাদ বলেই সম্বোধন করা হয়) সম্মানে এই ধরনের কাজ করি।’
শিক্ষকরা জোর করে করায় না বলেই ভাষ্য তানভীরের।
নারায়ণগঞ্জে একটি মাদ্রাসার সামনে খেলা করছে শিক্ষার্থীরা। ছবি : নিউজবাংলা
মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষকের ব্যক্তিগত কাজ করাতে খাদেম বানানোর এই প্রক্রিয়া নতুন নয়। সেখানে এটি একটি রীতি হয়ে গেছে। শিশুরা ভর্তি হওয়ার পর বিষয়টি দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, যে কারণে তাদের কাছে এটি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা মনে হয় না। ফলে তানভীরের কাছেও মনে হয় এটা স্বাভাবিক একটি বিষয়।
আবার আবাসিক কওমি মাদ্রাসায় খাদেম রাখা হলেও অনাবাসিক মাদ্রাসায় এই বিষয়টি দেখা যায় না। আলিয়া মাদ্রাসাতেও বিষয়টি নেই। সুন্নি মাদ্রাসাতেও এটি নেই।
তানভীর জানায়, সে ভোর সাড়ে ৩টার দিকে ঘুম থেকে ওঠে। এরপর তালিম নিয়ে নামাজ পড়ে। পরে হুজুরের কাজ করে দেয়।
ছাত্রদের শেখানো হয়, এগুলো সওয়াবের কাজ
শিক্ষকরা ছাত্রদের খাদেম হতে উৎসাহ দেয়। তাদের ভাষ্য খাদেম হওয়াটা ছাত্রের সৌভাগ্য। এই সৌভাগ্যের বিপরীতে তাকে জামা কাপড় ধুয়ে দেয়া থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, তরকারি কাটা, বাজার করে দেয়া, এমনকি গা ম্যাসাজ করার কাজও করতে হয়।
শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কাজে ছাত্রদের মনোনিবেশে উদ্বুদ্ধ করতে যে কথাগুলো তাদের বলা হয়, তা হলো এগুলো সওয়াবের কাজ। শিক্ষকদের দোয়া পরে জীবনে কাজে আসবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। শিশু মনে এই কথাগুলো গেঁথে যায়, আর তারাও তা বিশ্বাস করে কাজ করতে থাকে।
পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষকদের দৈনিক গৃহকর্মের কাজগুলোও করতে হয় মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীদের। তাদের বলা হয় খাদেম। রাজধানীর একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে তোলা। ছবি: নিউজবাংলা
নারায়ণগঞ্জের জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম দেওভোগ মাদ্রাসার নাজেরা শাখার ছাত্র নাইম বলে, ‘মাদ্রাসার প্রতিটি শাখায় হুজুরদের প্রিয় ও অপ্রিয় ছাত্র থাকে। অনেক সময় তাদের দিয়ে ঘাড় টেপানো হয়। মাথার চুল টানানো হয়। আর এটা না করার কী আছে? একজন না করলে আরেকজন করবে। কারণ, হুজুরদের খেদমত করা তো সোয়াব।’
হাফেজ শাখার ছাত্র মাহাবুব মীর বলে, যে শিক্ষক ছাত্রকে সন্তানের মতো আদর করে, তার সেবা করা যায়। তাছাড়া হুজুর যখন বলে না করার তো কোনো উপায় থাকে না।’
কী কী কাজ করে দাও তোমরা- জানতে চাইলে মিজান বিভাগের ছাত্র ইব্রাহিম বলে, ‘আমরা হুজুরদের যে খেদমত করি, তা হলো- খানা তুলে দেয়া, পানি এগিয়ে দেই, মশারি টানিয়ে দেই। হুজুররা সব সময় মাথা মালিশ করায় না, যখন মাথাব্যথা করে, তখন চুল টেনে দিতে হয়।’
কুমিল্লা গাংচর এলাকার তাহমিদুল কোরআন হিফজ মাদ্রাসার খাদেম আবদুল জলিল। হেফজ পাস করা এই যুবক বলেন, ‘ছোট শিক্ষার্থীদের দিয়ে হুজুর বা খাদেমের কাপড় ধোয়া ঠিক না। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হলে করতে পারবে।’
কেন হুজুরের কাপড় ধোয়া বা ব্যক্তিগত কাজগুলো করে দিতে হবে? এমন প্রশ্ন- তিনি বলেন, ‘আমরাও করে এসেছি। দোয়ার ব্যাপার আছে।’
এটা কি ইসলাম সমর্থন করে- এমন প্রশ্নে জবাব এলো, ‘এটা অন্যায় না।’
‘কোনো শিক্ষার্থী যদি হুজুরের প্রতি শ্রদ্ধা থেকে করে দেয় সেটাকে আপনি কীভাবে দেখবেন?’ বলে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।
রাজধানীর একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে আবাসিকের এক খুদে শিক্ষার্থী। ছবি: নিউজবাংলা।
দাবি, ছাত্ররাই আগ্রহ নিয়ে খাদেম হয়
মাদ্রাসার এ বিষয়টি যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে সে বিষয়টি খোলাশা করলেন রাজধানীর আদাবরের জামিয়া আরাবিয়া আহসানুল উলুম মাদ্রাসার শহিদুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্ররা মন থেকেই শিক্ষকদের খেমদত করে। আমিও একসময় করেছি। আসলে ছাত্ররা সবাই চায় হুজুরের কাজ করার জন্য। এটা আমাদের আনন্দ দেয়।’
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় তো এমনটা দেখা যায় না। এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্ররা তো শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু আমাদের এখানে কখনও দেখবেন না। সেদিন দেখলাম, এক ছাত্রের চুল কেটে দিয়েছে বলে তারা অনেক আন্দোলন করেছে। কিন্তু আমরা যদি বলি, তোমরা কাল চুল কেটে আসবে, কেউ এটা নিয়ে কিছু বলবে না। পরের দিন চুল কেটে আসবে। আমরা এখানে এমন আদব-কায়দা শেখাই। এখানে ছাত্ররা কখনও তাদের ওস্তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না।
তার দাবি, এই খাদেম পদ্ধতি নবী মোহাম্মদ (সা.) শিক্ষা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নবী যে আদর্শ দিয়ে গেছেন সেটাই তো উত্তম আদর্শ। আমাদের নবীর খাদেম ছিলেন হজরত আনাস (র.)। তিনি মন থেকেই তার জন্য কাজ করতেন। তাকে তো টাকা দিয়ে রাসুল (সা.) কাজ করাতেন না।’
নারায়ণগঞ্জের জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম দেওভোগ মাদ্রাসার হাফেজ খানার মোয়াদ্দিস (শিক্ষক) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্ররা শুধু শিক্ষক নয়, নানা সময় নানা দুর্যোগে মানুষের খেতমতে এগিয়ে যায়। এটা করলেও সোয়াব আছে।’
তার দাবি, চুলটানা, ঘাড় টেপানো এখন কম হয়, আগে অনেক হতো।
‘আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন এগুলো বেশি হতো, এখন তো এগুলো কমে আসছে’- বলেন তিনি।
কওমি অঙ্গনেই সমালোচনা, কোথাও কোথাও কঠোর নিষেধ
হাফিজি মাদ্রাসায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে সোচ্চার ধর্মীয় বক্তার নাম রফিক উল্লাহ আফসারীও এই বিষয়টির সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ওয়াজে তিনি বলেছেন, ‘ল্যাংটা পোলা (শিশু), হুজুরে হ্যাতেরে দি কুরতা (পরিধান) ধওয়ায়। হ্যাতের কুরতা ধুয়ে দেয়, … হ্যাতেরে বানাইছে খাদেম। হ্যাতেরে গা টিপবার লাই কয়। গা টেপে, হুজুরের কুরতা ধোয়। এইডার নামনি ইসলাম ব্যাটা? আল্লাহ-রসুল এইগুলা শিখায়নি।’
নারায়ণগঞ্জের জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম দেওভোগ মাদ্রাসায় খাদেম পদ্ধতি চালু থাকলেও এর পক্ষে নন খোদ মোহতামিম (অধ্যক্ষ আবু তাহের জিহাদি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসায় শুধু শিক্ষকের খেদমত করে বিষয়টি এমন নয়। একজন জুনিয়র লোক সিনিয়রের খেদমত করতে পারে। তার মানে হলো, যদি বৃদ্ধ হলে তার লাঠিটা এগিয়ে দেয়া, অজুর পানি দেয়া, জুতাটা এগিয়ে দেয়া। যদি মুরব্বি হয় এ ধরনের খেদমত করা যায়। তবে ব্যক্তিগত শারীরিক কোনো খেদমত ইসলামে নেই। এগুলো করানো ইসলামপরিপন্থি কাজ। যারা করে থাকেন তারা ভুল করছেন।’
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের দারুল উলুম উম্মুল কোরআন অনাবাসিক কওমি মাদ্রাসায় কাউকে খাদেম না বানানোর নির্দেশ আছে। এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক নাছের উল্লাহ বলেন, ‘এখানে অনাবাসিক ছাত্ররা পড়ে। ছাত্রদের দিয়ে এখানে সেবা নেয়া নিষেধ। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিষেধ করে দিয়েছে।’
কুমিল্লার পুরাতন চৌধুরীপাড়ার উম্মুল কোরআন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা নাজমুস সাকিব এই খাদেম বানানোর বিরোধী।
তিনি বলেন, ‘হুজুরদের বড় বড় জোব্বা, পাঞ্জাবি ধোয়া শিক্ষার্থীদের কাজ না। তাদের দিয়ে জোর করে এই কাজগুলো করা ইসলামসম্মত নয়।
‘এখানে যেসব শিক্ষক নৈতিকভাবে স্খলিত হয়েছে তারাই এমন কাজ করবে। কখনও একটা শিশুকে ধরে মেরে কাজ আদায় করা যাবে না। লেখাপড়া তো আর জোর করে করা যাবে না।’
হুজুরদের জোব্বা ধুয়ে না দিলে শিক্ষার্থীরা মারধরের শিকার হচ্ছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা করছে, বলাৎকারের ঘটনাও ঘটছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাইলে এই কওমি আলেম বলেন, ‘এসব ঘটনার জন্য সিস্টেম দায়ী। যদি মাদ্রাসাগুলোতে একজন শিক্ষক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ পেত, পরিপূর্ণভাবে ইসলাম চর্চা করত, ইসলামী শিক্ষার সঙ্গে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতো, তাহলে কখনও এসব অনিয়ম হতো না।’
তিনি বলেন, ‘এখন যে কেউ হাফেজ হয়ে নূরানী শিক্ষার প্রশিক্ষণ নিয়ে মাদ্রাসায় চাকরি করছে। ফলে ওই শিক্ষক জানে না তার কাজ কী, কী করলে তার নৈতিক স্খলন হবে না। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। কোথায় তার শিশুকে ভর্তি করাবেন- এগুলো জানতে হবে।
‘আমি এখানে কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা রুটিন করে বাংলা ও ইংরেজি শেখে। যেন একজন শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশ ঘটে। অভিভাবকদের বলেছি, যখন শিশু পড়তে চাইবে না তখন জোর করবেন না।
‘অনেক সময় অনেক হুজুররা ডমিনেট করে মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা করে, যা মোটেও ইসলামসম্মত নয়। ইসলাম কখনও এসব শিখায় না।’
কওমি মাদ্রাসায় খাদেম থাকলেও আলিয়া মাদ্রাসায় এটি নেই বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি এলাকার কাদিরিয়া তায়্যেবিয়া তাহেরিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুকাদ্দিস বিল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এটি সুন্নি মাদ্রাসা। এখানে ছাত্রদের দিয়ে হুজুররা ব্যক্তিগত কাজ করায় না। তবে কেউ যদি করিয়ে থাকে তাহলে আমার জানা নেই। তবে আমরা যারা তরুণ শিক্ষক আমরা এগুলো করাই না।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য