× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Millions of people in the trap of Switchbank loans
google_news print-icon

সুইস ব্যাংকের ঋণের টোপে লক্ষাধিক মানুষ

সুইস-ব্যাংকের-ঋণের-টোপে-লক্ষাধিক-মানুষ
সুইস ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার আশায় আইডি কার্ডের ফটোকপি ও বিপুল পরিমাণ টাকা একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিয়েছে কিশোরগঞ্জের লক্ষাধিক মানুষ।
সুইস ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ঋণ এনে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে লক্ষাধিক জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি কার্ড) তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। শহর থেকে এই চক্রটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে বিভিন্ন উপজেলার পাড়া-মহল্লায়।

গ্রামের মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে আইডি কার্ডের তথ্যের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে গ্রামের নারী ও তরুণীদের ব্যবহার করছে চক্রটি।

স্থানীয় লোকজন জানান, বেশ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো করা হচ্ছে নারীদের। পরে সেখান থেকে শিক্ষিত ও কর্মক্ষম দেখে উপজেলাভিক্তিক নারী এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, বাংলাদেশের যেসব কালোটাকা সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে আছে সেগুলো কিছু দিনের মধ্যেই উদ্ধার করে গরিব-অসহায় ও কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিনা সুদে ঋণ দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদের জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। আর যারা মোটামুটি স্বাবলম্বী, সচ্ছল ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের ১ লাখ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা দেয়া হবে। পরে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে কিস্তি দিলেই চলবে।

আইডি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহের সময় কার্ডপ্রতি ২০ থেকে শুরু করে হাজার টাকাও হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

করিমগঞ্জ উপজেলার দরগাভিটা গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া আক্তার বলেন, ‘বাবুল নামে এক দারোগা আর কয়েকজন মহিলা এসে বলেছেন, কিছুদিন পরে বিনা সুদে ১ লাখ টাকা দেবে। এখন শুধু আইডি কার্ড আর জনপ্রতি ১ হাজার করে টাকা জমা দিলেই চলবে। শুনলাম, অনেকেই দিতেছে। পরে আমিও আমাদের বাড়ির তিনজনের আইডি কার্ড আর ৩ হাজার টাকা জমা দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবুল দারোগা বলছে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যদি না হয় তবে টাকা ফেরত দেবে।’

উপজেলার জাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। বিভিন্ন এনজিওর ঋণ নিয়ে চলি। পরে পরিবারের সদস্যরা রোজগার করে কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধ করে। কিন্তু কিছুদিন আগে পাশের বাড়ির একজন এসে বলল নতুন একটি সংগঠন বিনা সুদে ঋণ দেবে। এখন শুধু আইডি কার্ড আর কাগজপত্র ফটোকপির জন্য ২০ টাকা করে জমা দিলেই চলবে। তখন আমিসহ বাড়ির পাঁচজনের আইডি কার্ড আর ১০০ টাকা জমা দিয়েছি।’

একই এলাকার কৃষক ফাইজ উদ্দিন জানান, ‘পুরো এলাকায় দেখলাম মানুষ খালি আইডি কার্ড নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতেছে। পরে শুনলাম, বাবুল দারোগা নাকি সুইস ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ঋণ এনে দেবে। এ কথা শুনে সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কার আগে কে দেবে। পরে আমিও আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিয়েছি।’

কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছ চাষ করেন বাবুল মিয়া। করিমগঞ্জের জাঙ্গাল এলাকায় গিয়ে দেখা হয় তার সঙ্গে।

বাবুল বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই। তবে কয়েক দিন আগে পিঠুয়া গ্রামের বাবুল দারোগা এসে আমাদের এখানে মিটিং করে গেছে। এই মিটিংয়ের বিষয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করে। তখন আমি মসজিদের হুজুরকে বলে মাইকে ঘোষণার ব্যবস্থা করি। ঘোষণা শুনে অনেক মানুষ তাদের আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিয়েছে। আমি নিজেও দিয়েছি।’

মিটিংয়ে কী আলোচনা হয়েছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তিনি (বাবুল) বলে গেছেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের যে কালোটাকা জমা পড়েছে, তা দেশে এনে গরিব, অসহায় ও কর্মমুখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করে অবৈধ টাকা বৈধ করা হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের এক বাসিন্দা ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ফেরুনা আক্তার নামে একজনের নাম বলেন। তিনি ঢাকায় বাস করেন।

তিনি বলেন, ‘ফেরুনা আর বাবুল দারোগা মোবাইলে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডি কার্ডের ফটোকপি সংগ্রহ করছেন। যাদের কাছ থেকে আইডি কার্ডের কপি নেন, তাদের মধ্যে শিক্ষিত এবং স্মার্ট দেখে প্রতিনিধি নিয়োগও দিচ্ছেন। পরে সেই কর্মীর মাধ্যমে কার্ড সংগ্রহ করেন তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বাস অর্জনের জন্য আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয়ার সময় কারও সাথে আর্থিক লেনদেন করা হয় না। আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দেয়ার পরে দ্রুত ঋণ পেতে যারা আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের কাছ থেকেই কৌশলে হাতে হাতে কিংবা বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আদায় করছেন তারা।’

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িও যে বাবুল দারোগার কথা বলা হচ্ছে, তার আসল নাম এ এম ফজলুল কাদের বাবুল। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ বছর আগেই তিনি পুলিশের কনস্টেবল পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে তিনি দারোগা বাবুল নামেই পরিচিত। অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে ওই প্রতিষ্ঠানটির তাড়াইল ও করিমগঞ্জের দায়িত্বে আছেন তিনি।

টানা দুই দিন বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর পরিচয় গোপন করে আইডি কার্ড জমা দেয়ার কথা বললে সাক্ষাতে রাজি হন তিনি। পরে সামনাসামনি সংবাদকর্মী পরিচয় শুনে সুর পাল্টে যায় তার।

বাবুল বলেন, ‘আমরা জনস্বার্থে কাজ করছি। এখানে আমাদের কোনো স্বার্থ নেই। ঢাকা অফিস থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এলাকা থেকে এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ফরম পূরণ আকারে পাঠাতে। সুইস ব্যাংকের কালোটাকা দেশে এনে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেয়া হবে। তাই আমরা এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি।

‘আমি ইতোমধ্যেই করিমগঞ্জ উপজেলা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার এনআইডির ফটোকপি ঢাকা অফিসে জমা দিয়েছি। অফিস থেকে বলা হয়েছে প্রতিজনকে ১ লাখ থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকাও দেয়া হতে পারে। এ ঋণ সুদমুক্ত হবে। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।’

সুইস ব্যাংকের টাকা দেশে আনবেন কীভাবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই দায়িত্ব আমাদের অফিসপ্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার সাহেবের। আমাদের সংগঠনের নাম অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ। এ নামে ইউটিউবে আমাদের একটা বড় চ্যানেলও আছে। আপনি চাইলে দেখতে পারেন।’

পরে তিনি জেলাপ্রধানের ফোন নাম্বার দেন।

সুইস ব্যাংকের ঋণের টোপে লক্ষাধিক মানুষ
‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামক প্রতিষ্ঠানটির তাড়াইল ও করিমগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বে আছেন এ এম ফজলুল কাদের বাবুল ওরফে বাবুল দারোগা

কথিত অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠানটির জেলাপ্রধান তথা কিশোরগঞ্জের দায়িত্বে আছেন ফেরুনা আক্তার। তিনি থাকেন রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায়। বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নে। তার সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে।

ফেরুনা জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ধানমন্ডি এলাকায় সিটি কলেজের পাশে। প্রতি শনিবার সেখানে বসেন তিনি। সংগঠনের চেয়ারম্যান তাকে কিশোরগঞ্জের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে মহিলাদের মাধ্যমে আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এখন আর নিজে মাঠপর্যায়ে যান না। তার মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্তরাই কাজ করছেন। এ পর্যন্ত জেলা থেকে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক আইডি কার্ডের ফটোকপি তিনি কেন্দ্রীয় অফিসে জমা দিয়েছেন। তারা সবাই কিছুদিনের মধ্যেই বিনা সুদে ঋণ পাবেন।

ফেরুনা বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় কিশোরগঞ্জ থেকে লক্ষাধিক আইডি কার্ড সংগ্রহ করে দেয়ায় অফিস খুশি হয়ে সুনামগঞ্জের দায়িত্বটাও আমাকেই দিয়েছে।’

তবে আইডি কার্ডের ফটোকপি নেয়ার সময় টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাসে কারও জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নেয়া প্রতারণার শামিল। এনআইডি কার্ড ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সম্পদ। এনআইডি কার্ডের তথ্য প্রতারক চক্রের হাতে চলে গেলে ব্যক্তির ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ইতোমধ্যেই বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। তিনি এ নিয়ে কাজ করছেন। শিগগিরই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন:
পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, ৪ জন গ্রেপ্তার
ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ইউএনওর অফিস সহকারীর প্রতারণা
শান্তি মিশনে স্বামী নিহত হওয়ার গল্প ফেঁদে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ৭
দ্বিগুণ মুনাফার ফাঁদে পড়ে গেল পুরো টাকা
অর্ধ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ভুইফোঁড় এনজিও

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Kumargaon power station is the reason for repeated fire

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কারণে বার বার অগ্নিকাণ্ড

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কারণে বার বার অগ্নিকাণ্ড সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সোমবার সকালে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতা। ছবি: নিউজবাংলা
কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় এ নিয়ে চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। আগেরবার অগ্নিকাণ্ডেরর পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি আজও। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও দূর হয়নি।

আবার‌ও আগুনে পুড়লো সিলেটের কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত বিদ্যুতের ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র। সোমবার সকালে লাগা এই আগুনে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক গ্রাহককে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ নিয়ে গত চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় কেন বার বার আগুনের ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে এই উপকেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় সিলেট নগরীসহ আশপাশের এলাকায় টানা ৩১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তারও আগে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

প্রথমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ১৯৬৭ সালে স্থাপিত উপকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন না করা এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করা হয়। একইসঙ্গে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ্ মো. দস্তগীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম (ডিসি সোর্স ব্যাটারি, চার্জার ও ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল) এবং বিউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩ কেভি বাস ও ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সম্পূর্ণ পৃথক করা প্রয়োজন।

এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, জরুরিভিত্তিতে গ্রাউন্ডিং সিস্টেম বৃদ্ধিপূর্বক যথাযথ মানে উন্নয়ন/সম্প্রসারণ করা, ভূগর্ভস্থ কন্ট্রোল ক্যাবলিং সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা, ফল্ট লেভেল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভিতে প্যারালালে সংযুক্ত পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলো জরুরিভিত্তিতে পৃথক করা এবং পাওয়ার ট্রান্সফরমার, কারেন্ট ট্রান্সফরমার, পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।

ওই কমিটি আরও সুপারিশ করে- তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দক্ষ কারিগরি জনবল দ্বারা দেশের সব গ্রিড উপকেন্দ্র ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করা, উপকেন্দ্রের সংরক্ষণ কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তদারকি আরও জোরদার করা, উপকেন্দ্রের পরিচালন ও সংরক্ষণ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পিজিসিবি ও বিউবোর আলাদাভাবে জনবল পদায়ন করা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টির ব্যবস্থা করা দরকার।

এছাড়া গ্রিড উপকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো নিয়মিত পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এসব যন্ত্রপাতির জন্য হিস্ট্রি বুক সংরক্ষণ করা, জরুরিভিত্তিতে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের বিকল্প সোর্স তৈরির সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘প্রতিটি গ্রিড বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইবার সিকিউরিটি ও ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। লোকবল স্বল্পতার দোহাই দেয়া হয়। কিন্তু নিজেদের আপগ্রেড করার বিষয়ে কাউকেই ততটা আন্তরিক মনে হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দায়িত্বহীনতা এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ী। সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য জনগণের যে অবর্ণনীয় কষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার দায়ও এরা এড়াতে পারে না।’

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।

সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা প্রসঙ্গে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। জেআইএস নির্মাণের কাজ চলমান। এটি বাজেটের অভাবে কিছুদিন বন্ধ ছিলো। এখন আবার শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নিরাপত্তা অবস্থা আরও জোরদার হবে।’

তিনি বলেন, মূল সমস্যা হলো সমন্বয়হীনতা। এখানে পিজিসিবি ও পিডিবিসহ বেসরকারি আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির যন্ত্রপাতি রয়েছে। সবার মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন। আমরা সবাইকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দিচ্ছি।

‘এটি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে গেছে। নতুন গ্রিড সাবস্টেশন হচ্ছে। কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।’

প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ৯টার দিকে কুমারগাঁও উপকেন্দ্রের ভেতরের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনের নিচে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজের তার ছিঁড়ে স্পার্কিং হয়। ওই সময় নিচে ডাম্পিং করে রাখা পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্টারে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এসে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘এয়ার ফিল্টারগুলো সেখানে রাখা ঠিক হয়নি। সেগুলো দাহ্য হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’

কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পর দুটি ফিডারের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে অন্য ফিডার থেকে কিছু এলাকায় ওই সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করার পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

আরও পড়ুন:
সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড, সরবরাহ বিঘ্নিত

মন্তব্য

বাংলাদেশ
6 fugitive accused in Jhenaidah murder case arrested

ঝিনাইদহে হত্যা মামলার ৬ পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

ঝিনাইদহে হত্যা মামলার ৬ পলাতক আসামি গ্রেপ্তার শৈলকুপায় হত্যা মামলার ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত
স্থানীয়রা জানায়, রোববার বিকেলে কাদা খেলা নিয়ে ওই গ্রামের মাতব্বর সুনিল বিশ্বাসের সঙ্গে অধির বিশ্বাস নামের এক চৈত্র সন্ন্যাসীর কথা কাটাকাটি হয়। দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে সন্ন্যাসীকে থাপ্পড় দেন সুনিল বিশ্বাস। এরই জের ধরে রাতে বাড়ির পেছনে গেলে সুনিল বিশ্বাস ও তার ছেলে স্বাধীনকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন সন্ন্যাসীরা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় স্বাধীন বিশ্বাস হত্যা মামলার ছয়জন পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৬।

উপজেলার ভাটই বাজার এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানায় র‍্যাব।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন ভগবাননগর গ্রামের সজীব বিশ্বাস (২০), বিজয় বিশ্বাস (১৮), সুশান্ত বিশ্বাস (৩৫), সুভাষ বিশ্বাস (৪০), প্রশনজিৎ বিশ্বাস (২৬) ও পলাশ বিশ্বাস (১৬)।

এর আগে রোববার রাতে উপজেলার ভগবান নগর গ্রামের আদিবাসী পাড়ার সুনিল বিশ্বাসের ছেলে স্বাধীন বিশ্বাসকে (২২) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন আরও একজন।

স্থানীয়রা জানায়, ভগবান নগর গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নীলপূজার অংশ হিসেবে কাদা খেলার আয়োজন করে স্থানীয় বাগদি সম্প্রদায়। রোববার বিকেলে এ নিয়ে ওই গ্রামের মাতব্বর সুনিল বিশ্বাসের সঙ্গে অধির বিশ্বাস নামের এক চৈত্র সন্ন্যাসীর কথা কাটাকাটি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে সন্ন্যাসীকে থাপ্পড় দেন সুনিল বিশ্বাস। এরই জের ধরে রাতে বাড়ির পেছনে গেলে সুনিল বিশ্বাস ও তার ছেলে স্বাধীনকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন সন্ন্যাসীরা। রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওই দিন রাত ২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাধীনের মৃত্যু হয় স্বাধীনের।

এ ঘটনায় স্বাধীন বিশ্বাসের বাবা বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‍্যাব জানায়, সোমবার বিকেলে র‌্যাব-৬ (ঝিনাইদহ ক্যাম্প)-এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জন পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের মঙ্গলবার সকালে শৈলকুপা থানায় হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন:
রূপপুরে পড়ে গিয়ে আহত শ্রমিকের মৃত্যু
ময়মনসিংহে দুই বাসের সংঘর্ষে নারীসহ ২ জন নিহত
কাদা খেলা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ‘সন্ন্যাসীদের’ পিটুনিতে যুবক নিহত
ঝরে গেল হাসনাহেনা, মা শুধুই কাঁদছেন
গাছে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ২ যুবক নিহত

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Two people including a woman were killed in a collision between two buses in Mymensingh

ময়মনসিংহে দুই বাসের সংঘর্ষে নারীসহ ২ জন নিহত

ময়মনসিংহে দুই বাসের সংঘর্ষে নারীসহ ২ জন নিহত ময়মনসিংহে মঙ্গলবার সকালে দুটি বাসের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। ছবি: নিউজবাংলা
তারাকান্দা থানার ওসি ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘যাত্রীবাহী শেরপুরগামী বাসটি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কোদলধর এলাকার হিমালয় পেট্রল পাম্প পর্যন্ত আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস দুটি খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই নারীসহ দুই যাত্রী নিহত হন।’

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় দুই বাসের সংঘর্ষে নারীসহ দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন।

শেরপুর-ময়মনসিংহ সড়কে উপজেলার কোদলধর এলাকার হিমালয় পেট্রল পাম্পের পাশে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের পরিচয় এখনও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

তারাকান্দা থানার ওসি ওয়াজেদ আলী নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘যাত্রীবাহী শেরপুরগামী বাসটি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কোদলধর এলাকার হিমালয় পেট্রল পাম্প পর্যন্ত আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস দুটি খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই নারীসহ দুই যাত্রী নিহত হন।

‘এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৫ জন। স্থানীয়রা তাদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।’

ওসি জানান, বাসের নিচে আরও মরদেহ চাপা পড়ে থাকতে পারে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রেকার দিয়ে খাদে পড়া বাস দুটি উদ্ধারের কাজ করছেন। নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন:
গাছে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ২ যুবক নিহত
মুন্সীগঞ্জে আ.লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে যুবক নিহত
দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৩ বন্ধু নিহত
ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে এক নারীর মৃত্যু
পাত্রীকে পছন্দ হয়নি পাত্রের, দুলাভাইকে তাই ‘পিটিয়ে হত্যা’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The sound of mortar shells is coming intermittently in Teknaf

টেকনাফে থেমে থেমে আসছে মর্টার শেলের শব্দ

টেকনাফে থেমে থেমে আসছে মর্টার শেলের শব্দ কক্সবাজারের টেকনাফের একটি এলাকা। ছবি: নিউজবাংলা
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, ‘মনে হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং দেশটির সরকারি বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে। এ কারণে সীমান্তে আগের তুলনায় এখন বিস্ফোরণের শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে।’

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের চলমান লড়াইয়ের মধ্যে থেমে থেমে মর্টার শেলের শব্দ ভেসে আসছে সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের টেকনাফে।

ঈদের দিন বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত উপজেলাটিতে মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের ভাষ্য, সীমান্তে বসবাসকারীদের জন্য নাফ নদী দিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া এবং টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। তখন মিয়ানমারের ওপার থেকে ভারি বিস্ফোরণের শব্দ এপারে ভেসে আসে। এতে সীমান্তের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে।

‘সারা দিন থেমে থেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেলেও রাতে তা তীব্র হয়ে উঠে আরও। এখনও এ রকম চলতেছে। এপারের ভূখণ্ডে গোলা না পড়লেও ভূখণ্ড কাঁপছে ঠিকই।’

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, ‘মনে হচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং দেশটির সরকারি বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হচ্ছে। এ কারণে সীমান্তে আগের তুলনায় এখন বিস্ফোরণের শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে।

‘ঈদের দিন ও মধ্যরাতসহ এখনও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ওপার থেকে টেকনাফ সীমান্তে ভেসে আসছে।’

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তবর্তী রাখাইনে তাদের অভ্যন্তরের অনেক দূরে গোলাগুলি চলছে। এ কারণে এপারে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের সীমান্তবর্তী লোকজনের ভয়ের কোনো কারণ নেই। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
মিয়ানমারের ১৮০ সেনা ফিরে যাবে, তবে এখনই নয়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
তিন সপ্তাহ পর উদ্ধার টেকনাফে অপহৃত মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ
৮০০ টাকার জন্য যুবককে গুলি করে হত্যা, দাবি পরিবারের
নওগাঁ সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর
টেকনাফের অপহৃত চারজন ফিরেছেন ‘মুক্তিপণ দিয়ে’, এক কৃষকের খোঁজ নেই

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Dutch Bengal agent bank is accused of looting money by making the employee unconscious

কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা লুটের অভিযোগ

কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে টাকা লুটের অভিযোগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ব‍্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ। ছবি: নিউজবাংলা
ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।

মেহেরপুরের মুজিবনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারীকে অজ্ঞান করে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার শিবপুরে সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় কর্মচারী সাগর শেখকে অজ্ঞান করে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাত দুইজন।

ঘটনার বেশ কিছু সময় পরে স্থানীয়রা অসুস্থ অবস্থায় সাগর শেখকে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিবপুর গলাকাটা বাজারে বিপ্লব হোসেন এজেন্ট হিসেবে ব্যাংক পরিচালনা করে আসছেন। সোমবার দুপুরে ব্যাংক কর্মচারী সাগর শেখ কাজ করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতরা ব্যাংকে প্রবেশ করে তাকে অজ্ঞান করে। আশপাশের লোকজন টের পাওয়ার আগেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা আরও জানায়, ঘটনার আগে তারা ব্যাংকে অজ্ঞাত দুজনকে প্রবেশ করতে দেখেছিলেন, তবে তারাই যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। তাদের প্রবেশের কিছুক্ষণ পরে সাগরকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা।

ব্যাংক এজেন্ট বিপ্লব হোসেন জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। অজ্ঞাতরা এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে ডাকাতি করেছে বলে ধারণা তার।

বিপ্লব হোসেন আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাংকে অনেক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রতিদিনের লেনদেনের আরও টাকা থাকে। তাই কত টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে তা সঠিক হিসাব না করে বলা যাচ্ছে না।

মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মচারীর শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। চোখ খুলে তাকাচ্ছে, কিন্তু তার চেতনা ফেরেনি। তাকে কিছু খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছে না চোখে চেতনানাশক স্প্রে করা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে সময় লাগবে।’

মুজিবনগর থানার ওসি উজ্জ্বল দত্ত জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে ভর্তি কর্মচারী সুস্থ হলে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, তবে পুলিশের তদন্ত শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন:
ভল্ট ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ: র‌্যাব
রুমার সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে কুকি চিন জড়িত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রুমার পর এবার থানচিতে দিনদুপুরে দুই ব্যাংকে ডাকাতি, লুট
১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ১১ হাজার মানুষকে অর্থসহায়তা দিল এনআরবিসি ব্যাংক

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Injured laborer died after falling in Rooppur

রূপপুরে পড়ে গিয়ে আহত শ্রমিকের মৃত্যু

রূপপুরে পড়ে গিয়ে আহত শ্রমিকের মৃত্যু প্রাণ হারানো আব্দুল হালিম। ছবি: সংগৃহীত
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রকল্পের রোসেম কোম্পানির চুল্লিতে কাজ করার সময় অসাবধানবশত অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়ে গেলে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান আব্দুল হালিম।

দীর্ঘ ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মরত এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আব্দুল হালিমের (৩০) মৃত্যু হয়। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচড়া পশ্চিম পাড়ার শহিদ মণ্ডলের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রকল্পের রোসেম কোম্পানির চুল্লিতে কাজ করার সময় অসাবধানবশত অনেক উঁচু থেকে নিচে পড়ে গেলে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পান আব্দুল হালিম। এ সময় আহত হালিমকে উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। ১০ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা অবস্থায় সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান তিনি।

ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা মৃত্যুর খবর শুনেছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’

আরও পড়ুন:
দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ৩ বন্ধু নিহত
ভাষানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে এক নারীর মৃত্যু
পাত্রীকে পছন্দ হয়নি পাত্রের, দুলাভাইকে তাই ‘পিটিয়ে হত্যা’
মুন্সীগঞ্জে আধিপত্য নিয়ে আ.লীগের দু পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
সপরিবারে সদরঘাটে নিহত মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
No one remembered the artisans behind the oath
বাংলাদেশের প্রথম সরকার

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি। বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল। রাত মেহেরপুরের বৈদ‍্যনাথতলার আম্রকাননে ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের নেপথ্য কারিগরদের ভাগ্যে আজও জোটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি।

বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল ঘেরাওয়ের কাজে। আগের দিনের অর্ধেক সময় আর রাত জেগে পাহারা দেয়া হলো মেহেরপুরের তৎকালীন বৈদ‍্যনাথতলার আম্রকানন।

শুরুটা শপথের অনুষ্ঠান থেকে হলেও মুক্তিকামী মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে কেটে গেল যুদ্ধের পুরোটা সময়।

সময় গড়িয়েছে, মত-পথ পাল্টেছে। তবে একাত্তরের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি। খোঁজ নেয়নি কেউ।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তো দূরে থাক, স্থানীয়ভাবেও তারা পাননি যথাযথ সম্মান। এই আক্ষেপ নিয়ে কেউ পাড়ি দিয়েছেন পরপারে, কেউবা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণরত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ছবি: নিউজবাংলা

কথাগুলো বঙ্গবন্ধুর ডাকে গঠিত বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম কমিটি নিয়ে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন কয়েক যুবক।

সে সময়ের এমএনএ ছহি উদ্দীন বিশ্বাস এবং এসডিও তৌহিক-এলাহি চৌধুরীর পরামর্শে তারা ঐতিহাসিক শপথের সব আয়োজন করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, বাইবেল পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনসহ বিভিন্ন কাজে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদেরকে আম্রকাননে নিয়ে এসেছিলেন সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা।

প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পর গোটা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারপরও জীবনের পরোয়া না করে সংগ্রাম কমিটির অকুতোভয় সদস্যরা ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। তাদের অনেকে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুই-একজন যারা বেঁচে আছেন তারা মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রের স্বীকৃতিটুকু পেতে চান।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স। ছবি: নিউজবাংলা

সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য বল্লভপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থিওফিল মণ্ডল বলেন, ‘প্রাণের টানে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে ছুটে আসি। পঁচাত্তর-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ১৯৭৬ সালে কেউ মুজিবনগর দিবস পালন করতে আসেনি। আমরা মাত্র ১৯ জন লোক বাগানে গিয়ে মুজিবনগর দিবস পালন করেছিলাম।’

রাষ্ট্রীয় সম্মান-স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ করে এই বীর মুক্তিযাদ্ধা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুনেছিলাম হাতেগোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। পরবর্তীতে দেখি শতাধিক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছে। তারপরও সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা অবহেলিত।’

একই কথা জানালেন মানিকনগর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ দোয়াজ উদ্দীন মাস্টার। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা সব আয়োজন করেছিল। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করার জন্য আমার ছাত্র দারিয়াপুর গ্রামের বাকের আলীকে ডেকে নিয়ে আসি। সে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও সংগ্রাম কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মোমিন চৌধুরী স্বীকৃতি পেয়েছেন।’

সংগ্রাম কমিটির সদস্যসহ যারা সেদিন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের সবার স্বীকৃতি দাবি করেন তিনি।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ছবি: নিউজবাংলা

বাংলা একাডেমী প্রণীত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: মেহেরপুর জেলা’ গ্রন্থের মাধ্যমে মূলত সংগ্রাম কমিটির বিষয়টি সবার নজরে আসে। এই গ্রন্থের লেখক মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশিদ বলেন, ‘অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়ানো এসব মানুষের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়াটা খুবই প্রয়োজন। তারা শুধু শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনই করেননি, কুষ্টিয়া অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে সব রসদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জীবন বাজি রেখে।

বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনও সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন।

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তে ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

p
উপরে