ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর কেন্দ্র বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। ভোলার পাশ দিয়ে রাত ৯টার দিকে ঝড়ের কেন্দ্র উপকূলে প্রবেশ করে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দ্রুতগতির ঝড়। এ রকমটি সাধারণত দেখা যায় না। খুব দ্রুতগতিতে এটি উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে। রাত ৯টার দিকে ঝড়ের কেন্দ্র ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে। কেন্দ্রটি স্থলভাগে উঠে যাওয়ার পর ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়টি (ঝড়ের পুরো ব্যাস) বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে ফেলবে।’
সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপকূলে আঘাত করে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৭৪ কিলোমিটার ছিল কক্সবাজারে। এর বেশি এখনও আমরা পাইনি। উপকূলের অন্যান্য অংশে গতিবেগ এর চেয়েও কম।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি আবারও স্থিতিশীলতার নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী ডিজিটাল লেনদেন, বৈদেশিক খাতে ভারসাম্যের উন্নতি ও রপ্তানি বৃদ্ধি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু সূচকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারের চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আগের বছরের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায়ী লেনদেন ও বেতন প্রদানের মতো খাতে লেনদেন বেড়েছে।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। উৎসব-সংক্রান্ত ব্যয়ের কারণে এ সময় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৭৯.৮ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ২৭৯.২ মিলিয়ন টাকার মধ্যে। একইভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ই-কমার্স লেনদেন আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে মাসিক লেনদেন ছিল ১৪ হাজার ৪৮৭.৯ মিলিয়ন টাকা, যা ২০২৫ সালের মে মাসে ২৩ হাজার ৬৫৪.২ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। এটি ডিজিটাল বাণিজ্যে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের মে মাসে কৃষিঋণ বিতরণ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় পৌঁছায়, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়েও বেশি। শিল্পোৎপাদনে অস্থিরতা সত্ত্বেও স্থিতিশীলতা দেখা গেছে, যেখানে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালের আগস্টের নিম্নগতি কাটিয়ে ওই বছরের অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ১১.৩৯ শতাংশে পৌঁছায়।
জিইডি জানায়, বৈদেশিক খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে প্রথম ইতিবাচক অঙ্ক। সামগ্রিক ভারসাম্যেও ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড উদ্বৃত্ত হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে চলমান ঘাটতির বিপরীত প্রবণতা। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সেবা খাতের স্থিতিশীল আয়ের ফলে এ পরিবর্তন এসেছে।
রপ্তানিও নতুন গতি পেয়েছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪,৭৭০.৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। মে ও ডিসেম্বর মাসেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
আমদানি খাতেও ইতিবাচক পুনরুদ্ধার হয়েছে। মূলধনী পণ্যের আমদানি স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগে আগ্রহের প্রতিফলন ঘটেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ অর্থনীতিতে আরেকটি বড় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে মাসিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই মাসের তুলনায় ২৯.৫ শতাংশ বেশি। মার্চ, মে ও ডিসেম্বরে মৌসুমি প্রবাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও গৃহস্থালি আয় আরও বাড়িয়ে দেয়, যা নীতিগত প্রণোদনা এবং অর্থ প্রেরণের উন্নত চ্যানেলের কারণে সম্ভব হয়েছে।
জিইডি জানায়, এসব ইতিবাচক প্রবণতা এবং বিচক্ষণ নীতি ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় আস্থার বার্তা দিচ্ছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, চালের দাম খাদ্য ও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর এখনও উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করছে। মে মাসে যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪০ শতাংশ, জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১.৫৫ শতাংশে। এর মধ্যে মাঝারি ও মোটা চালের অবদান সবচেয়ে বেশি, যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ১৮.৩৯ শতাংশ। চিকন, মাঝারি ও মোটা—সব ধরনের চালেই জুলাই মাসে প্রায় ১৫ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।
সরবরাহ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। তবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে চাল বিতরণ হয় ৬২ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ কম।
বাজার স্থিতিশীল করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২৩ জুলাই বেসরকারি খাতকে চাল আমদানির আবেদন করার আহ্বান জানায়, যার সময়সীমা শেষ হয় ৭ আগস্ট। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব আমদানির প্রভাব বাজারে পড়তে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
জিইডি সতর্ক করেছে, আগামী মাসগুলোতে অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরন দেখা দিতে পারে, যা চালের দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে। এজন্য স্বল্পমেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে আমদানি ত্বরান্বিত করা, সংগ্রহ কার্যক্রম বাড়ানো এবং ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণ বিস্তৃত করার পরামর্শ দিয়েছে জিইডি।
তবে জিইডি বলেছে, সামান্য ঊর্ধ্বগতি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ নয়। কারণ ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কে, তখন অনুমান করা কঠিন ছিল যে অর্থবছর শেষে তা প্রায় ৮.৫ শতাংশে নেমে আসবে।
হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সামষ্টিক অর্থনীতির বহুমুখী চ্যালেঞ্জগুলো ‘ভারসম্যাপূর্ণ উপায়ে’ মোকাবিলা করা হয়েছে। এটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর টানা দ্বিতীয় মাস সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে ছিল।
সরবরাহ-সংক্রান্ত চাপ থাকা সত্ত্বেও জিইডি জানায়, রাজস্ব ও আর্থিক নীতির সমন্বিত পদক্ষেপ কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে একটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামানো এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্য বহির্ভূত খাতে গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল ছিল। খাদ্যপণ্যের মধ্যে শাকসবজি ও কন্দজাত ফসলের অবদান যথাক্রমে ৬.৪৮ শতাংশ এবং ১০.৩৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করেছে।
আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইলিশ, বেগুন, টমেটো, সয়াবিন তেল ও পাঙ্গাসও মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে আলু ও পেঁয়াজের অবদান যথাক্রমে ১৫.৭১ শতাংশ এবং ৭.৯৩ শতাংশ কমেছে।
আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি উপকরণের সময়মতো সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দিয়েছে জিইডি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
দেশের মৎস্যসম্পদের সম্প্রসারণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং টেকসই ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ১৮ থেকে ২৪ আগস্ট জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ দেশব্যাপী উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ১৮ আগস্ট সোমবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে সভাপতিত্ব করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৬ জন ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হবে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জের পদক বিতরণ করা হবে।
২০২৫ সালের মৎস্য সপ্তাহের কর্মসূচিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী র্যালি, সেমিনার, প্রযুক্তি প্রদর্শন, আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মতবিনিময় সভা, সমাপনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর আনু্ষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ও মৎস্য পদক বিতরণ অনুষ্ঠান। ১৯ আগস্ট সকাল ৮:৩০টায় মানিক মিয়া এভিনিউ-এ সড়ক র্যালি, সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রযুক্তি প্রদর্শন ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা। ২০ আগস্ট সকাল ১০টায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-এ মৎস্য অভয়াশ্রমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ক সেমিনার। ২১ আগস্ট সকাল ১০টায় কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়তে মৎস্য বিষয়ক আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। ২২ আগস্ট সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে মৎস্য ও মৎস্যপন্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে সম্ভাবনা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা। ২৩ আগস্ট সকাল ১০টায় মৎস্যভবনে মৎস্যজীবী, মৎস্যচাষী, জেলে এবং আড়ৎদারদের সাথে মতবিনিময় সভা ও ভ্রাম্যমাণ প্রচার প্রচারণা। ২৪ আগস্ট বিকাল ৪টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি)-এ জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মসূচি হিসেবে থাকছে: প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় র্যালি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সফল মৎস্য উদ্যোক্তাদের পুরস্কার প্রদান, পোনা অবমুক্তকরণ, মতবিনিময় সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, নিরাপদ মাছ চাষ ক্যাম্পেইন, তরুণদের অংশগ্রহণে কর্মশালা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং মৎস্যজীবীদের নিয়ে ক্রীড়া আয়োজনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সপ্তাহের শেষ দিনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর মূল্যায়ন, সমাপনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপ্তি হবে।
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ সফলভাবে উদ্যাপনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন, মৎস্যজীবী, উদ্যোক্তা ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সংঘটিত মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার কারণে ২২ জুলাই জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনায় নিহতদের প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ ৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১ টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
অনুমোদিত প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ ২ হাজার ৪২৮ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৫টি, সংশোধিত প্রকল্প ২টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির ৩টি প্রকল্প রয়েছে।
একনেক চেয়ারপার্সন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র এবং কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
আজকের সভায় অনুমোদিত ১১ প্রকল্পসমূহ হলো: কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ প্রকল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বাপবিবোর বিদ্যমান শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার ৩৩/১১ কেভি আউটডোর উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতা বর্ধন’ প্রকল্প, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লি. (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ স্থাপন’ প্রকল্প, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘৫টি নির্ধারিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকাস্থ আজিমপুর সরকারি কলোনির ভেতরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (জোন-সি)’ প্রকল্প, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ২টি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টাল সাসটেনেবল ওয়াটার সাপ্লাই (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প ও ‘বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার ৩টি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ‘চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন’ প্রকল্প, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ‘উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
সভায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা কর্তৃক ইতোমধ্যে অনুমোদিত ৯টি প্রকল্প সর্ম্পকে একনেক সদস্যদের অবহিত করা হয়। সেগুলো হলো ১. হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন (২য় সংশোধিত), ২. রাজশাহী এবং রংপুর বিভাগে নেসকোর আওতাধীন এলাকায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্বাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ৩. বরগুনা জেলার ২টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪. তিন পার্বত্য জেলায় দুর্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৫. লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত), ৬. তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি (২য় সংশোধিত), ৭. সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প, ৮. কপোতাক্ষ নদ ও তৎসংলগ্ন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (২য় পর্যায়) (১ম সংশোধিত), ৯. বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতা কেন্দ্রিক সাক্ষরতা (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ছয় কোটি ডিম উৎপাদন হলেও তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
পুষ্টি নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মাথাপিছু গড় মাংস খেতে পারে মাত্র ২০০ গ্রাম। এখনো বহু পরিবার আছে যারা সপ্তাহে বা মাসে একদিন মাংস খায়।”
গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুলে নবনির্মিত ছয় তলা একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন ও এসএসসি-২০২৫ সালের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে
বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম আমাদের পুষ্টির উৎস। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টির দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বহু তরুণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ শহীদ হয়েছেন। অনেকে হাত-পা-চোখ হারিয়ে আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তাদের ত্যাগকে স্মরণ রেখে এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার কখনো ক্ষুণ্ণ হবে না।'
তিনি বলেন, “বেগম রোকেয়া মুসলিম মেয়েদের জন্য স্বাধীন পরিবেশ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হতো। কেবল বই পড়া দিয়ে সবকিছু জানা সম্ভব নয়, কারণ ইতিহাস বারবার বিকৃত হয়েছে। তাই শিক্ষকদের দায়িত্ব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা।”
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, 'স্কুলের ভেতরে ও বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে। ইভটিজিংয়ের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—নতুন বাংলাদেশে এটা হতে দেওয়া যাবে না।
পরিবেশ সুরক্ষায় শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'সপ্তাহে অন্তত একদিন স্কুল ও এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ এগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।'
নারী শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'নারী নির্যাতন আইন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজকে একসঙ্গে সচেতন হতে হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আজ পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নে গোয়ালখালি এলাকায় বিসিকের অধিগ্রহণকৃত ৪০ একর জমির উপর নির্মিত হবে 'ভ্যাকসিন প্লান্ট'। যেখানে ঔষধের পাশাপাশি তৈরি হবে অ্যান্টিভেনম।
প্রকল্পটি গোপালগঞ্জে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
শনিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
এসময় তিনি জমি রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, গোপালগঞ্জে ভ্যাকসিন প্লান্ট একদম একপাশে হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনটা যখন তৈরি হবে তখন এটা ফ্রিজিং করে সারা বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমার এমন একটা জায়গা দরকার যেখান থেকে সহজে যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে আমরা পাঠাতে পারবো। সেক্ষেত্রে গোপালগঞ্জটা সেজন্য আমাদের জন্য উপযুক্ত হয় না।
আর এখানে যে সমস্ত টেকনোলজিস্ট, বিশেষজ্ঞ লাগবে এটা সবসময় সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই এটা আমরা এখানে করার চেষ্টা করছি। এবং এখানে ৪০ একর জমি বিসিকের কাছ থেকে নিয়েছি। সে অনুযায়ী আমাদের একটা প্ল্যান্ট- এটা এখানেই হবে যাতে করে আমাদের সমস্ত ঔষধ তৈরি করতে পারি, ভ্যাকসিন আমরা এখানে তৈরি করতে পারি এবং একইসাথে আমরা চিন্তা করছি- অ্যান্টিভেনম যেটা হয়, যেটা আমাদেরকে পাশের দেশগুলো থেকে আনতে হয়। অনেক সময় সাপের ভ্যারাইটি একরকম না, কোন কোন সময় সাপের কারণে যে ভ্যাকসিনটা দেয়া হয় ওটা কখনো কাজ করে, কখনো করে না। কাজেই আমরা এখন চেষ্টা করছি- আমাদের যেহেতু অনেক সাপ আছে, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাপের বিষ এনে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এন্টিভেনম তৈরি করা হবে। আমাদের দেশের সাপ দিয়ে দেশেই ভ্যাকসিন-অ্যান্টিভেনম তৈরি হবে।
ভ্যাকসিন প্লান্ট নির্মাণে সময় প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা সিস্টেমের ব্যাপার। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে দেশের মধ্যে উৎপাদিত প্রায় ৭০ শতাংশ ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। কোয়ালিটিতে দেশের বাইরের তুলনায় এটি কোন অংশেই কম না। এটাকে ১০০ শতাংশে উন্নিত করতে হলে আমাদের আরও কিছু মেশিনারিজ আনতে হবে। মেশিনারিজগুলো আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত আনা যায়। সবকিছু মিলিয়ে এগুলো আনতে প্রায় ৬ মাসের মত লেগে যাবে।
তিনি বলেন, জমি আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হবে, পাশের নদী শাসন করতে হবে। এরপরে মেশিনারিজ, প্ল্যান এগুলো পাশ করাতে হবে। ধরে নেন আগামী আড়াই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। পরে উপদেষ্টা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইডিসিল এর গোপালগঞ্জ প্লান্টের ভ্যাকসিন ইউনিট এবং মানিকগঞ্জ প্ল্যান্ট স্থানান্তর করে এখানে আনা হবে। এজন্য ৪০ একর জায়গার সংস্থান করা হয়েছে। এসময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াধীন এন্টি ভেনম প্ল্যান্টও এখানে স্থানান্তরের নির্দেশনা প্রদান করেন। এটি সামগ্রিক বিবেচনায় লাভজনক হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
এসময় ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামাদ মৃধাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, ৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাকসিন প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কারখানায় ১৫ ধরনের টিকা উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্লান্টটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ছয় ধরনের ও ২০২৯ সালে আরও ৯ ধরনের টিকা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০৩০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বাংলাদেশে ধর্ম, জাতি ও গোত্রের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বক্তব্যে উৎসবে আমন্ত্রণের জন্য সেনাপ্রধান আয়োজনকারীদের ধন্যবাদ জানান।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। শত বছর ধরে এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পাহাড়ি, বাঙালি, উপজাতি সবাই মিলে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এই দেশ সবার। আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। এখানে কোনো ধর্ম, জাতি বা গোত্রের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না। এই দেশের প্রতিটি বিষয়ে আমাদের সমান অধিকার। সেইভাবেই আমরা সামনের সোনালি দিনগুলো দেখতে চাই।’
অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘আজকের এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হবে— আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখব এবং সবাই মিলে শান্তিতে বসবাস করব। সারা বাংলাদেশে স্বশস্ত্র বাহিনী মোতায়েত রয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকব এবং এক হয়ে আপনাদের সাথে কাজ করে যাব।’
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে বসবাস করবেন এবং আপনারা আপনারা ধর্মীয় উৎসব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবেন। আমরা একসঙ্গে এই আনন্দ ভাগাভাগি করব।’
সেনাপ্রধান আশাপ্রকাশ করেন, ‘জন্মাষ্টমীর এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। এই আদর্শের ভিত্তিতেই আমরা একসঙ্গে সুন্দরভাবে বসবাস করব।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কামরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র স্থলভাগের আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসবে। রাত ৩টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের দেশের উপকূল পুরোপুরি অতিক্রম করে ফেলার কথা রয়েছে। তবে এর প্রভাব আরও কিছু সময় ধরে থাকবে।’
তিনি জানান, উপকূলে কেন্দ্রটি আঘাত হানার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কক্সবাজারে সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছি ৭৪ কিলোমিটার।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় নিজে যখন এগিয়ে আসে সেটাকে বলা হয় বডি মুভমেন্ট। বডি মুভমেন্টের দিক থেকে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিন্তু এর সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ কেমন হবে তা নির্ভর করে না।’
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে জোয়ারের পানি ৭ ফুট উচ্চতায় আছড়ে পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুই হাজার মানুষকে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এসব নিশ্চিত করেছেন।
জোয়ারে তলিয়েছে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক ও পধনার ডেইল এলাকা। পানিবন্দি আছে অর্ধলাখ মানুষ। তাদের উদ্ধারে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল এসব তথ্য নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জোয়ারের পানি বেঁড়িবাধের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই শতাধিক পরিবারকে মাঝের পাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান।
এখন পর্যন্ত জেলায় দেড় লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভোলার দিকে এগিয়ে গেছে। এ কারণে খুলনায় বাতাসের গতিবেগ একেবারেই কমে গেছে। এখন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে। থেমে গেছে বৃষ্টিও।
পটুয়াখালীতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর থাকায় লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টির পানি জমে নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে নিমজ্জিত পটুয়াখালী পৌর এলাকার জুবিলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, লতিফ স্কুল রোড, পুরাতন হাসপাতাল রোড, পুরান বাজার, কাঠপট্টি, স্বর্ণকার পট্টি এলাকা ও নিউমার্কেটসহ বেশ কিছু রাস্তাঘাট।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝূঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০ হাজার জিও ব্যাগ ও লোকবল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা খুলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, পর্যাপ্ত ওষুধসহ শতাধিক মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর এবং নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সোমবার বিকেল থেকেই দমকা হওয়া। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটার মধ্যেও প্রবল ঢেউ দেখা যায়।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ারের সময় অমাবস্যার প্রভাবে পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেশি থাকার কথা ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে সেটা ৮ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।
এসব তথ্য জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনর রশীদ।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা সজিব চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ৫ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৫১১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। সেগুলো পূর্ণ হলেই শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ শুরু হবে।’
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সেবা চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। জেলায় ২৯০টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা (সিত্রাং) সন্ধ্যার পরেই আঘাত হানবে। ইতিমধ্যে ক্লাউড ছেড়ে দিয়েছে।
‘সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮টার মধ্যে এটি উপকূল অতিক্রম শুরু করবে। তবে ঝড়ের কেন্দ্রটি রাত ১১ থেকে ১২টার মধ্যে আসবে।’
তিনি জানান, সিত্রাং আঘাতের সময় গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। গতি কোনোভাবেই ১০০ কিলোমিটার অতিক্রম করবে না।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, জেলায় বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দমকা হওয়া ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দমকা হওয়ার সঙ্গে খুলনায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খুলনায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৭৭ মিলিমিটার।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার জানান, খুলনার ৫৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার ১৩০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগকালে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছেন।
বরিশালে সিত্রাংয়ের প্রভাবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য জানিয়েছে।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহসিন আলম সুপ্ত জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
বরিশাল নগরের বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে বরিশালের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চল থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র, গঠন করা হয়েছে ৬৬টি মেডিক্যাল টিম। চরাঞ্চল থেকে মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝােড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর রয়েছে উত্তাল।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৭ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৬ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চর ৬ নম্বর বিপদসংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরে ৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝােড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেই সঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
মন্তব্য