দিল মোহাম্মদ। কয়েক বছর আগেও মিয়ানমারের দোভাষী হয়ে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া ছিল তার। সীমান্তে নানা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও বাংলাদেশের বিজিবির বৈঠকগুলোতে বড় ভূমিকা ছিল দিল মোহাম্মদের। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হলে সেই বিশ্বস্ত বন্ধুকেও বিতাড়িত করে মিয়ানমার। সেই থেকে তিনি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রুর জিরোলাইনে পরিবার নিয়ে অবস্থান নিয়ে আছেন। সেই ক্যাম্পের প্রতিনিধিত্বও করছেন।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহী মিয়ানমারের জান্তা সরকার। সে খবর পৌঁছানোর পর নিউজবাংলাকে দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমারের যে এলাকায় রোহিঙ্গাদের নেয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেসব এলাকায় এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যে সংঘাত পরিস্থিতি, তাতে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। এমনও হতে পারে, যে কোনো হামলার দায় চাপিয়ে আবারও তাদের বিতাড়িত করার আশঙ্কা রয়েছে।’
যদি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরবেন জানিয়ে দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি মিললে যেতে আগ্রহী বেশিরভাগ রোহিঙ্গা।’
তার দৃষ্টিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান পরিস্থিতির কারণে অনেকে আগ্রহ হারাবে। তাতে গত দুইবারের মতো এবারও প্রত্যাবাসনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার বিষয়ে মিয়ানমারকে জোরালো চাপ প্রয়োগ করে তা নিশ্চিত করা উচিত হবে বলে মনে করেন দিল মোহাম্মদ।
মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন নেতা মাস্টার মোহাম্মদ জুবাইয়ের। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের দায়িত্বও এখন তার কাঁধে।
ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ঢেকে যায় রাতের ক্যাম্প। দিনের বেলাতেও আমাদের জীবনটা অন্ধকারের মতোই। মিয়ানামার থেকে জীবন বাঁচাতে এসে, আমাদের ক্যাম্প জীবনও হুমকির মধ্যে। ক্যাম্প জীবন থেকে আমরা মুক্তি চাই। মিয়ানমার আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। তারপরও একটু শান্তির আশ্বাস পেলেই আমরা ফিরে যাব নিজ দেশে।’
তিনি বলেন, ‘একজন দুজন করে নয়, পরিবার নিয়ে স্বদেশে ফিরতে চাই আমরা, যেখানে নাগরিক হিসেবে সব অধিকার থাকবে, থাকবে না কোনো বাধা বা নির্যাতন। এটা মিয়ানমারকে অক্ষরে অক্ষরে লিখিত দিতে হবে। হঠাৎ করে কী উদ্দেশে তারা আমাদের ফেরত নিতে এতো আগ্রহ দেখাল, তা নিয়ে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের নেতা আব্দুল মোনাফ ফোনে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠাতে চীনের উদ্যোগ আশা জাগানিয়া। ২০১৭ সালে আমিও বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো দেখায় আবার ফেরত এসেছি। এখনও অনেক স্বজন সেখানে আছে। অধিকার নিশ্চিত হলে দেশে ফিরতে প্রস্তুত আমরা।’
কুতুপালং ক্যাম্প-২ ইস্টের রোহিঙ্গা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘মিয়ানমারের সীমাহীন নির্যাতন ও জুলুমের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি পাঁচ বছরের বেশি হবে। এটা তো আমাদের দেশ নয়, আমরা তো অবশ্যই আমাদের দেশে ফিরে যাব।’
আরেক রোহিঙ্গা মৌলবি আজিজ বলেন, ‘জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা এসে আমাদের নিজেদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে বলেছিল। এখন পাঁচ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অধিকার নিয়ে নিজ দেশে পাঠানোর কোনো চেষ্টা কেউ করছে না। সবাই ভুলে গেছে, তাই দীর্ঘদিন ধরে আমরা ক্যাম্পে পড়ে আছি। তবে মিয়ানমারের যে আগ্রহ তা বাস্তবায়ন করা হোক।’
এরই মধ্যে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের জনগোষ্ঠীর জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া খুবই জরুরি বলছে জনপ্রতিনিধিরা।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের কুতুপালং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত যাওয়া খুব জরুরি। নয়তো বড় বিপদে পড়বে এই অঞ্চল। পাহাড় ও নদী দূষণ ঘটছে। নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হচ্ছে। সামাজিকভাবে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে আমাদের।’
টেকনাফেন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘বর্তমানে টেকনাফে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অবস্থান। তাদের কাছে এখন স্থানীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বেড়েছে নানা অপরাধ। এখন প্রয়োজন দ্রুত প্রত্যাবাসন।’
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মানিবকতা দেখাতে গিয়ে আমরা নিজের ঘাড়ে বোঝা তুলে নিয়েছি। তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হোক। না হয় উখিয়া-টেকনাফের মানুষ চরম কষ্টে পড়বে।’
শরণার্থীবিষয়ক কমিশন বলছে, ৮ লাখেরও বেশি তালিকা থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে নিজ দেশের বাসিন্দা হিসেবে বাছাই করেছে মিয়ানমার, যাদের ক্যাম্পগুলোতে শনাক্তও করা হয়েছে। যাচাই-বাচাই শেষ। নিবন্ধনও করা হয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী।
প্রায় দুই মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংর্ঘষ চলছে।
এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশের মাটিতেও এসে পড়েছিল। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়।
সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি এখন বিভিন্ন সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে। আশ্রয় নেয় ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। পাঁচ বছর পেরিয়ে তাদের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ১১ লাখে।
জাতিসংঘসহ অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও কোনো ভূমিকাই রাখছেন না বলে অভিযোগ ছিল রোহিঙ্গাদের।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুদেশের মধ্যে চুক্তি হলেও মিয়ানমারের অনীহা এবং রাখাইনে পরিবেশ তৈরি না হওয়াসহ নানা অজুহাতে দুই দফা সব প্রস্তুতি নিয়ে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। আশ্বাসের মধ্যেই পাঁচ বছর ধরে আটকে আছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য