দেশের প্রচলিত আইনে তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোকে নিবন্ধন দেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আর তারকা মানের নয় এমন হোটেলগুলো নিবন্ধনের ক্ষমতা দেয়া আছে জেলা প্রশাসনকে।
দেশে বর্তমানে তারকা মানের হোটেল-রিসোর্ট রয়েছে ৪১টি। এর বাইরে তারকা মানের নয় এমন হোটেলের সংখ্যা হাজারখানেক।
আইন অনুযায়ী, এসব হোটেল রিসোর্টে পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্বও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের। কিন্তু লোকবলের অভাবে এসব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে হোটেল রিসোর্টগুলোর স্বেচ্ছাচারি আচরণের কারণে ঠকতে হচ্ছে পর্যটকদের।
পর্যটকদের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে হোটেলের ভাড়া অনেক বেশি। সেবার মানও মানসম্পন্ন নয়। কিন্তু এসব বিষয়ে কেউ যদি অভিযোগ করতে চান, সে সুযোগ খুব একটা নেই।
পর্যটন মৌসুমে হোটেলগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া নির্ধারণ করে বলে অভিযোগ পর্যটকদের। দেশে একটি তারকা মানের হোটেলের ন্যূনতম ভাড়া শুরু হয় প্রতিরাতের জন্য ৫ হাজার টাকা থেকে। কক্ষের রকম বা সুযোগ-সুবিধা ভেদে ৫০ হাজার টাকা প্রতি রাত ভাড়া এমন কক্ষও রয়েছে হোটেলগুলোতে।
পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করতে এবং মনিটরিং বাড়াতে হোটেল-রিসোর্টের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার কর্তৃপক্ষ হিসেবে ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি)।
বিটিবির প্রধান নির্বাহী আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শুনেছি হোটেল-মোটেল যেহেতু মনিটর হচ্ছে না, তাই এ দায়িত্ব বিটিবিকে দেয়া হতে পারে। যদি এ দায়িত্ব আমাদের হাতে থাকে, তাহলে আমরা এগুলো মনিটর করতে পারব।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হোটেল-রিসোর্ট নিবন্ধনের ক্ষমতা বিটিবির হাতে গেলে এ ধরনের দুরাচার রোধ করা সম্ভব হবে।
পর্যটনবিষয়ক পাক্ষিক দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহেদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন যে যার মতো করে ভাড়া ঠিক করছে। এটার কোনো মার্কেট এনালাইসিস নেই। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে যদি এটা ঠিক করে দেয়া হয় যেকোনো ধরনের হোটেলে কী ধরনের রেট হবে, সেটা হলে সবাই উপকৃত হতে পারে। এটা এখন প্রয়োজন।
‘বিদেশি যারা আসেন, তারাও ভাড়া নিয়ে সমালোচনা করে থাকেন। একেক হোটেলে ডলারের রেটও একেক রকম। একটি কন্ট্রোলিং অথরিটি থাকলে মনিটরিংয়ের মধ্যে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘এ ক্ষমতা বিটিবিকে দেয়াটাই সঠিক সিদ্ধান্ত, এটাই হওয়া উচিত। পৃথিবীর সব দেশে পর্যটন বোর্ডই এটা করে থাকে। মন্ত্রণালয় এটার সঠিক অথরিটি নয়। এ রকম ক্ষেত্রে সর্বজনীন অথরিটি থাকা প্রয়োজন, তারাই নিবন্ধন, রেটিং এবং মনিটরিংয়ের কাজটি করবে।
‘পর্যটন বোর্ড একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে কোন হোটেল কীভাবে রেটিং হবে, এগুলো ঠিক করবে। এখানে এই সেক্টরের যারা আছে, তাদেরও রাখতে হবে। আরেকটি বিষয়: আমাদের এখানে হোটেলগুলোর কোনো ডেটাবেইস নাই। কেন্দ্রীয়ভাবে এ কাজগুলো হলে ডেটাবেইস তৈরি হবে। কোন এলাকায় কতগুলো হোটেল প্রয়োজন, সেটা নিশ্চিত করা যাবে।’
বিটিবির প্রধান নির্বাহী আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘আমরা দুভাবে কাজ করছি। আমাদের পুরো নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা হবে অনলাইনে। আমাদের তখন লোকবল লাগবে, আমরা এখন সেটা নিয়ে কাজ করছি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিষয় পর্যটন বোর্ডে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো এলে লোকবল অনেক লাগবে।
‘হোটেলগুলো এখনও আমাদের দায়িত্বে যেহেতু পড়ে না, এ জন্য আমরা তাদের এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমরা শুধু মটিভেশনাল কাজ করছি। হোটেল-মোটেলের কর্মীদের কিন্তু আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে করে তারা পর্যটকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে এবং সেবা ভালোভাবে দেয়।’
এরই মধ্যে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডদের নিবন্ধনের ক্ষমতা হাতে পেয়েছে বিটিবি। খুব শিগগিরই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
তিনি বলেন ‘ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের মনিটর করার জন্য আমরা ২০২১ সালে একটি আইন করেছি। সেটা সংসদে পাস হয়েছে। এর ভিত্তিতে আমরা দুটি বিধিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এটা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত এটা অনুমোদন হবে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় বিটিবিকে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে অথরিটি দিয়েছে ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের নিবন্ধন দেয়ার জন্য।
‘ট্যুর অপারেটর ও গাইডদের নিবন্ধন যখন আমরা করব, তাদের আমরা একটি ইউনিক আইডি নম্বর ও আইডি কার্ড দেব। তাকে আমরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও দেব। তখন তার বিরুদ্ধে যখন কেউ কোনো অভিযোগ করবে, আমরা সে ব্যবস্থা নিতে পারব।’
হোটেল নিবন্ধনের ক্ষমতা পাওয়ার আগে পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করার কথা জানান তিনি। আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছি, সেটা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা একটি এমওইউ করেছি, যাতে করে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা যায়।
‘আমরা প্রাথমিকভাবে পর্যটন এলাকায় যে রেস্টুরেন্টগুলো আছে, সেখানে যারা কাজ করেন বা মালিক, তাদের আমরা মটিভেট করার চেষ্টা করব। আইন প্রয়োগ বা মোবাইল কোর্ট বাদ দিয়ে প্রথমে আমরা বিশেষ করে পর্যটন এলাকায় এটা শুরু করব, যাতে করে তারা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করে। এরপর যদি কাজ না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:গণহত্যার সঙ্গে জড়িত কিংবা মামলার পলাতক আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের দোসরদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মামলার অনুসন্ধানে যে দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য পাওয়া মাত্র ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার রাজধানীর উত্তরায় এপিবিএন সদর দপ্তরে শহীদ মীর মুগ্ধ স্মরণে সভা, মিলাদ মাহফিল, মীর মুগ্ধ ভবন ও এপিবিএন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রবেশ তোরণ উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনেকে আগেই পালিয়ে গেছেন। এরপর আবার ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট অনেকে পালিয়ে গেছেন। ওই তিনদিন সবকিছু ঢিলেঢালা ছিলো। এখন বর্ডার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তারা কোথায় আছেন এবং কেন গ্রেপ্তার হচ্ছেন না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) আমাদের তথ্য দিন। আমাদের দায়িত্ব তাদের গ্রেপ্তার করা। আপনাদের দায়িত্ব আমাদের তথ্য দেয়া।
‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। আপনারাও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করুন। পলাতকদের তথ্য পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তথ্য প্রদানের জন্য প্রয়োজনে খরচের ব্যয়-ভাড়া বহন করা হবে।’
রাজধানীসহ সারাদেশে যেসব মামলা হচ্ছে তাতে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন অনেককেই আসামি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন কোনো মামলা পুলিশ বাদী হয়ে করছে না। এই মামলাগুলো করছে সাধারণ জনগণ। তারা (জনগণ) ১০ জনের নাম দিচ্ছে। হয়ে যাচ্ছে ১০০ জনের নামে মামলা। অনুসন্ধানে, যে দোষী সাব্যস্ত হবে তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের চিকিৎসা সরকার করবে। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হবে।
আরও পড়ুন:সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নির্ভয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, এই উৎসবে নিরাপত্তা বিধানে সেনাবাহিনী মাঠে আছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শনিবার দুর্গাপূজা উদযাপনে গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এসব কথা বলেন সেনাবাহিনী প্রধান। তিনি সেখানে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
সেনাপ্রধান এ সময় উপস্থিত মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জেলায় জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন থেকে পূজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সদা তৎপর রয়েছে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রত্যেক বাংলাদেশি অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন। পাশাপাশি তিনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, টিকিট জটিলতায় মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা প্রায় ১৮ হাজার কর্মীকে সে দেশে পাঠানোর বিষয়ে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেছেন, দেশটিতে বন্ধ শ্রমবাজার চালু ও বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে কাজ চলছে।
প্রবাসী কল্যাণ ভবনের বিজয়-৭১ মিলনায়তনে শনিবার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সমঝোতা সইকে সে দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেশের আর্সামাজিক উন্নয়নে প্রবাসী কর্মীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রবাসীরা বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের একেকটি পতাকা হয়ে কাজ করেন।
‘প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন, প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের কল্যাণমূলক সুরক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ড এ কাজটি নিরলসভাবে করে চলেছে।’
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিনের উপস্থিতিতে চুক্তিতে ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান এবং মালয়েশিয়ার পারকেসোর মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজমান আজিজ মোহাম্মদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, জাতি একজন বিশিষ্ট জনসেবক ও একজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদকে হারালো।
প্রধান উপদেষ্টা এক শোক বার্তায় বলেন, ‘আমি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে সুন্দর স্থান দান করুন।’
বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসক ও জনসেবক হিসেবে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দীর্ঘ ও বহুল সম্মানিত কর্মজীবনের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক হিসেবে কল্যাণ ও সুস্বাস্থ্যের বার্তা ছড়িয়েছেন। এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) তার উপস্থাপনায় প্রচারিত ‘আপনার ডাক্তার’ অনুষ্ঠানটি লাখ লাখ দর্শকের প্রিয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানটি তাকে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি একই স্তরের একনিষ্ঠতা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। পাঁচবারের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ৯০-এর দশকে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংসদে তার বক্তৃতা সব মতের রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল।’
প্রধান উপদেষ্টা আশা করেন তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব এই ক্ষতি বহন করার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবেন।
তিনি জনগণকে তার জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার এবং ‘জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার’ আহ্বান জানান।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আজ শনিবার ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকার উত্তরা উইমেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ সম্পর্কে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছি। এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়া বিষয়ক আইন এবং সব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানিয়েছি।
‘ভুয়া নির্বাচনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি। প্রশাসনে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনও রয়ে গেছে। তাদেরকে সরিয়ে দিতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণহত্যায় জড়িতদের বিচার করার কথা বলেছি। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার কথা বলেছি। বিচার বিভাগে ২০ জন বিচারপতি এখনও কাজ করছেন যারা আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত। তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছি।
‘এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের যেন জামিন দেয়া না হয়। গায়েবি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে বসে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভারত সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।’
সংলাপে অংশ নেয়ার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
আরও পড়ুন:নির্বাচন বিলম্ব হলে দেশ গভীর সংকটে পড়বে মন্তব্য করে মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।
রাজধানীর এফডিসিতে শনিবার গণতন্ত্র সুরক্ষায় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অনুষ্ঠানে মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘সংবিধান পুনর্লিখন নয়, সংস্কার করা যেতে পারে। পুনর্লিখন করলে বিপদ হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।’
বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক বলেন, ‘এখনকার যুগে সেনা শাসন সম্ভব নয়। সেনা শাসন হলে উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা বন্ধ করে দিবে।
‘আমেরিকা, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেনা শাসনের বিপক্ষে, তবে বিপ্লব ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। আর বাংলাদেশ ব্যর্থ হলে আমরা অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হব।’
মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস একজন বিশ্বনন্দিত ভালো লোক, তবে প্রশাসন পরিচালনা করার জন্য আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। সংস্কারের জন্য অনন্তকাল সময় দেওয়া যায় না।’
মানবজমিন সম্পাদক বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্টরা আবার ফিরে আসার ঝুঁকি রয়েছে। একই সাথে হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রাপ্তিতেও সংশয় সৃষ্টি হবে।’
ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের সময় তাদের মতামত জানতে শনিবার থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নতুন করে সংলাপ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বেলা আড়াইটার দিকে শুরু হওয়া সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও কয়েকজন উপদেষ্টা অংশ নিয়েছেন।
বিএনপিকে দিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রথম দিনের সংলাপ শুরু হয়েছে।
আজকের সংলাপ রাত আটটা পর্যন্ত চলতে পারে বলে রাজনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররে নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দল সংলাপে যোগ দিয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা আছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংলাপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের পরামর্শ নেয়া।’
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সংলাপ এটি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য