৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এর মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার না হলে আগামী শনিবার থেকে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রাজশাহী মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা এই সিদ্ধান্ত জানান।
এর আগে ইন্টার্নদের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এসব নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (ইন্টার্ন) বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এখনও তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তারা আজকে হয়তো কাজে ফিরবে বা জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। তবে, আগামী শনিবারের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়েছে।’
বিকেলে আলোচনা শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘বুধবার রাতে হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এ সময় ডাক্তারদের খুঁজে খুঁজে মারারও চেষ্টা চলে। এতে নিরাপত্তাহীতায় কর্মবিরতিতে চলে যান চিকিৎসকরা।
‘চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাসে ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার স্বার্থে জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে। তবে বিবেকহীন কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। তাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা হলে শনিবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশসহ কঠোর আন্দোলনে যাব।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনার জেরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রাবি ক্যাম্পাসের আবাসিক হলের বারান্দা থেকে পড়ে আহত অবস্থায় বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহরিয়ারকে রাজশাহী মেডিক্যালে নেয়া হয়।
জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পরই সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার মৃত্যুর খবর শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষের সামনে গিয়ে ভাঙচুর চালান।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নরাও হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবস্থান নেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আর মেডিক্যালের ছাত্ররা অবস্থান নেন হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তরের সামনে।
বিপুল পুলিশ অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি সামলে রাখে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, রাত ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে। আলোচনা শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলীকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর আন্দোলন স্থগিত করে রাত ২টার দিকে হাসপাতাল ছাড়েন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
হাসপাতালে নিজেদের নিরাপত্তা ও বুধবার রাতে হাসপাতালে হামলায় জড়িত রাবি ছাত্রদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেন ইন্টার্নরা। এতে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা, দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে আগের তদন্ত কমিটি বাতিল করে নতুন ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে রামেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিনের প্রধান কফিল উদ্দিনকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী।
তিনি বলেন, ‘রাতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেখানে আমাকে আহ্বায়াক করা হয়েছিল। কিন্তু আমি একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান। আমাকে অহ্বায়ক বা তদন্ত কমিটিতে রাখতে হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসন বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেই কমিটি গঠন করতে হবে। তাই রাতের কমিটি বাতিল করে নতুন ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
‘যেহেতেু মাথায় আঘাতের বিষয় তাই নিউরো মেডিসিনের প্রধানকে এখানে অহ্বায়ক করা হয়েছে। এই কমিটি তদন্ত করবে; কোথায় চিকিৎসার অবহেলা ছিল, ভাঙচুরের জন্য কে দায়ী, কারা কারা জড়িত এসব চিহ্নিত করবে।’
হাসপাতাল পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘রাবির সেই ছাত্র কীভাবে ছাদ বা বারান্দা থেকে পড়েছে সেটি জানা যায়নি। হামলা ও ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এই মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।’
এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা ব্যহতের খবর পাওয়া গেছে। একজন ডাক্তার দিয়েই চলছে পুরো ওয়ার্ডের চিকিৎসা।
হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে প্রচুর রোগী আছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছাড়া আমরা হাসপাতাল চিন্তাও করতে পারি না। যারা কোনো দোষ করে তারা একটু দুর্বল থাকে। কিন্তু তারা তো প্রপার চিকিৎসা দিয়েছে। এটা ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর কাল রাতের মিটিংয়ে স্বীকারও করেছেন।
‘ছাত্রদের যে ক্ষোভ সেটি হাসপাতালে উপরে কেন? এটি তো রাবির উপরে আসার কথা। কেন ছাত্রটি সেখান থেকে পড়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্ররা শুধুমাত্র আন্দোলনই করেননি। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ডাক্তারদের খুঁজে বের করেছে। এই ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পালিয়ে যায়। হাসপাতালে ২৮০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক আছে। এগুলো আর এখন নেই। তাহলেই বুঝতে পারেন কী অবস্থা হচ্ছে। তারা আমাদের ব্যকবোন। এখন আমাদের সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়েই চিকিৎসা চলছে।’
আরও পড়ুন:গুচ্ছভুক্ত দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের ‘এ’ ইউনিটের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। পরীক্ষায় পাসের হার ৪৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার রাতে ফল প্রকাশের পর গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং জিএসটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ২০২২-২৩ এর টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহবায়ক চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানান।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ওয়েবাসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে ফল দেখতে পারবেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক জানান, ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৩ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৯ জন। পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩০ ও এর বেশি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৮ হাজার ৩২২ জন। এটা মোট পরীক্ষার্থীর ৪৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৮৬ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছেন শাহরিয়ার আলম পাটোয়ারী। তিনি সিলেটের স্কলারহোমের শিক্ষার্থী। তার পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ভর্তি পরীক্ষায় ৮৮ জনের খাতা বাতিল হয়েছ। তাদের মধ্যে ৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ভুল রোল নম্বর লেখায় ২৯ জনের খাতা বাতিল, ডুপ্লিকেট রোল লেখায় ১১ জনের খাতা বাতিল ও সেট নম্বর ভুল লেখায় ৪৩ জনের খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি।
উপাচার্য অধ্যাপক নাছিম আখতার জানান, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮৫ নম্বরের উপরে পেয়েছেন মাত্র একজন। ৮০ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ৫ জন, ৭৫ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ৪০ জন, ৭০ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ৫৬১ জন, ৬৫ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ১৪৭৭, ৬০ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ৩ হাজার ৭২৯, ৫৫ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ৭ হাজার ৯১০, ৫০ নম্বরের উপরে পেয়েছেন ১৪ হাজার ৬৭১ জন শিক্ষার্থী। এবার সর্বনিম্ন নম্বর মাইনাস ১৩ দশমিক ২৫।
শনিবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের ১৯টি কেন্দ্রে একযোগে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞান ইউনিটে ৯ হাজার ৮৭৫টি আসনের বিপরীতে সারাদেশে মোট পরিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৩ জন।
আরও পড়ুন:রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষামেলা ‘এডুকেশন এক্সপো -২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (সিইউবি)।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী চলা এ এক্সপোর আয়োজন করে এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)। সকলের জন্য উন্মুক্ত এ অনুষ্ঠান সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে সিইউবিসহ ৬০টির বেশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণা, প্রকাশনা ও উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। এক্সপোতে একাডেমি-ইন্ডাস্ট্রিজ লিংকেজ সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইউবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক।
অনুষ্ঠানে আগত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সিইউবি’র মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘গুডউইল অ্যাম্বাসেডর কার্ড’। এই কার্ডের মাধ্যমে যে কোনো শিক্ষার্থী কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ভর্তি হতে পারবে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য পদে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে উপসচিব ড. মো. ফরহাদ হোসেনের সই রয়েছে।
এতে বলা হয়, অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনকে ইউজিসির পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হলো।
চার বছর তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে তাকে যে কোনো সময় অব্যাহতি দিতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়।
হাবিবুর রহমান। জন্মগতভাবেই নেই দুই হাত। তবুও দমে যাননি তিনি। ছোট বেলা থেকে পা দিয়ে লিখেই চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এবার অংশ নিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভর্তিযুদ্ধে। এ বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েই বড় আলেম হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
সোমবার ইবি’র ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি।
হাবিবুরের বাবা আব্দুস সামাদ পেশায় কৃষক ও মা হেলেনা খাতুন গৃহিনী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট হাবিবুর।
২০২০ সালে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ ও ২০২৩ সালে আলিম পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৭ নিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দেশ সেবায় নিয়োজিত হতে চান হাবিবুর। সেই স্বপ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তিনি।
এর আগে হাবিবুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আলিম পরীক্ষার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন জাগে। পরিবারের অনুপ্রেরণা পেয়েই আমি আজ এতদূর আসতে পেরেছি। তবে কখনো প্রতিবন্ধকতার কারণে হেয় শিকার হতে হয়নি। সবাই ভালোভাবে নিয়েছে। আমি জীবনে ভালো মানুষ হতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবকিছু সম্ভব। চেষ্টা করলেই আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিবেন। চেষ্টা না করলে আসলে কোনো কিছু সম্ভব না।
‘সবাইকে চেষ্টা করা উচিত। কষ্ট হবে, বিপদ আসবে। এর মাধ্যমে জয় করতে হবে। চেষ্টা না করলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়।’
হাবিবুরের প্রতিবেশী আজমল হোসেন বলেন, ‘সে সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। শারীরিক গঠনে অন্য দশজনের মতো না হলেও কোন দিক দিয়ে সে পিছিয়ে নেই। হাবিবুর ছোট থেকেই অনেক মেধাবী।’
আরও পড়ুন:তীব্র তাপদাহের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। তবে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম পরিচালনায় ৬টি শর্ত মানার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
সোমবার মাউশির এক অফিস আদেশে যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শাখা রয়েছে, সেই স্কুলগুলোর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির কার্যক্রমও আগামী ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ছাড়াও পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত ও রোদের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
তবে ৭ জুন থেকে অর্ধবার্ষিকী মূল্যায়ন ও পরীক্ষা থাকায় মাধ্যমিক স্তর বন্ধ হচ্ছে না বলে জানায় মাউশি।
মাউশির অফিস আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা অনুসারে, আগামী ৫ থেকে ৬ দিন দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু, মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এর আলোকে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে ছয়টি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো-
#যেসব স্কুলে প্রাথমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির কার্যক্রম আগামী ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
#পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত থাকবে।
#শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রোদের মধ্যে খেলাধুলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে।
#শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে নিজ বাসা থেকে পর্যাপ্ত পানি সাথে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবে।
#শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল জানালা ও দরজা সম্পূর্ণ খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
#শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও কর্মচারীদের কক্ষে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পাখা সক্রিয় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর নিম্ন মাধ্যমিক স্তর বন্ধ ঘোষণা করা হলেও অর্ধবার্ষিকী মূল্যায়ন ও পরীক্ষার কারণে মাধ্যমিক স্তর বন্ধ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
তিনি জানান, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকবে। কারণ, ৭ জুন থেকে অর্ধবার্ষিকী মূল্যায়ন ও পরীক্ষা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তরের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর আগে গরমের কারণে গতকাল রোববার দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত মোট চার দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে জৈনসার ইউনিয়নের ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলা পুলিশের বিশেষ কর্মসূচিতে যোগ দি ৩০ শিক্ষার্থী অতিরিক্তি গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, জেলা পুলিশের সচেতনতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার বেলা ১১টার দিকে তীব্র গরমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খোলা মাঠে দীর্ঘ সময় অ্যাসেম্বলি করানো হয়। কর্মসূচিতে সিরাজদিখান থানার এএসআই কামরুল ইসলাম যৌন হয়রানি ও মাদকবিরোধী বক্তব্য দেয়ার সময় ওই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দুই মাস আগেই আমাদের স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে শ্রেণিকক্ষে প্রার্থনা ও শপথ করানো হয়।
‘কামরুল ইসলাম নামে সিরাজদিখান থানার একজন অফিসার আমাদের বিদ্যালয়ে এসে সচেতনতামূলক কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের মাঠে বের করেছিলেন। ওই সময় শিক্ষার্থীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘ভবানীপুর বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ হয়ে আমার এখানে চিকিৎসা নিয়েছে।’
মুন্সীগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সিরাজদিখান সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান রিফাত জানান, বিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত এসেম্বলিতে অল্প সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি ও মাদক বিষয়ক সচেতনতামূলক বার্তা দেয়া হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী গরমে অসুস্থ পড়ে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাবদাহের কারণে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার দিন ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘দেশব্যাপী বিদ্যমান তীব্র তাপদাহের কারণে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম আগামী ৫ জুন ২০২৩ সোমবার থেকে ০৮ জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’
দাবদাহ বা তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে গরম। ঘরে কিংবা বাইরে অসহনীয় হয়ে উঠেছে তাপমাত্রা। এ থেকে কবে নিষ্কৃতি মিলতে পারে, তা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নিউজবাংলাকে জানান, দাবদাহের কারণে দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হলেও সামগ্রিক তাপমাত্রা কমছে না। তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে ১২ জুনের পর।
তিনি আরও জানান, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিক থেকে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। শেষ সপ্তাহ থেকে সহনীয় হতে পারে তাপমাত্রা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য