রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের (রি-অ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) কাজ শুরু হচ্ছে বুধবার।
গণভবনপ্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে দেশে এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রকল্পটির দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস মহামারি ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও নির্ধারিত সময়ে এ কাজ শুরু হওয়া নিয়ে স্বস্তি জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণকাজ শুরুর আগে মঙ্গলবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘কাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্বোধন করবেন। এটা এই কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর পঞ্চমতম ইভেন্ট। এটা থেকে বোঝা যায় কেন্দ্রটি আমাদের দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’
রূপপুরে গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হয়।
প্রতিটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে এই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। প্রকল্পে অর্থায়ন ও নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে রাশিয়া।
কর্তৃপক্ষের আশা, ২০২৩ সালের মধ্যে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরনের কাজে কত শতাংশ অগ্রগতি হলো সেটা ওইভাবে হিসাব করে বলা যায় না। কারণ অনেক কাজ আছে যেটা শেষ হওয়ার পর একটি রিপোর্ট দিতে হয়। সেই রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত আমরা পেমেন্ট করতে পারি না।’
পুরো কাজটি দুইভাবে হিসাব করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘একটা ফিনানসিয়াল আর একটা ফিজিক্যাল। আমাদের ফিজিক্যাল প্রোগ্রেস ফিনানসিয়াল থেকে অনেক এগিয়ে গেছে।’
রূপপুর প্রকল্পের পরিচালক শৌকত আকবর আগেই নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল জ্বালানি ইউরেনিয়াম আমদানি শুরু হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। রাশিয়া থেকে আমদানি করা হবে সেই জ্বালানি। এর নিরাপত্তা, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নানা অবকাঠামো তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। যার পুরোটাই হবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা মেনে।
আরও পড়ুন:দুই ছাত্রীর মাকে অপদস্ত করার অভিযোগ ওঠার পর বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাকে বদলি করে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বদলি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বগুড়ার অতিরিক্তি জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে বদলি করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়াকে কেন্দ্র করে বিচারকের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সহপাঠীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত।
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, “এই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বগুড়ার জজ আদালতের এক বিচারকের মেয়ে। বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সোমবার ওই বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে নিজেকে বিচারকের মেয়ে পরিচয় দিয়ে সে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দিতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
“ওই রাতেই বিচারকের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মাধ্যমে মেসেঞ্জারে তার সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়। সে পোস্টে উল্লেখ করে, ‘তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।’
“ওই পোস্টে বিচারকের মেয়ের চার সহপাঠী পাল্টা উত্তর দেয়। এ নিয়ে ওই বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুনকে মঙ্গলবার অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষকের ডাকে ওই ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। সে সময় ওই বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জেলে দেয়ার হুমকি দেন। এ সময় দুই অভিভাবককে ওই বিচারকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।”
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষিকা বলেন, ‘বিচারকের মেয়ে ও কিছু শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে বিচার বসানো হয়। এ সময় বিচারক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জেলে দেয়ার হুমকি দিলে দুইজন অভিভাবক নিজে থেকেই পা ধরে ক্ষমা চান। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি বা পা ধরতে বলেনি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কাজ করে।
‘যতটুকু জেনেছি সোমবার বিচারকের মেয়ের ঝাড়ু দেয়ার কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগেই স্কুলে আসায় এই পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি সম্পন্ন করে। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে ক্রিটিসাইজ করে। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু অভিভাবকদের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকেরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি।’
এদিকে অভিভাবকদের লাঞ্ছনা ও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার বিদ্যালয়ে আসেন। তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
একইসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন:অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এলো মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মূল কারণ। সেখানে বলা হয়েছে, ইমাদ পরিবহনটি মেয়াদোত্তীর্ণ, চালকের মধ্যম যান চলাচলের লাইসেন্স থাকলেও চালিয়েছে ভারী যানবাহন। বৃষ্টিভেজা সড়কে বেপারোয়া গতিতে গাড়ি চালানোই দুর্ঘটনার কারণ।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এসব তথ্য তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির প্রধান পল্লব কুমার হাজরা। এ সময় ওই এক্সপ্রেসওয়ে দুঘর্টনা রোধে ১৪টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়।
তবে কাগজে-কলমেই তদন্ত প্রতিবেদন না রেখে বাস্তবায়নের দাবি যাত্রী-চালকদের। আর প্রশাসনও দুঘর্টনারোধে কঠোর ভূমিকার আশ্বাস দিচ্ছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পল্লব কুমার হাজরা বলেন, ‘বেপরোয়া গতির কারণে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ইমাদ পরিবহনটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেন গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। শুধু তাই নয়, পরিবহনটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয় এ বছরের ১৮ জানুয়ারি। তারপরেও সদর্পে চলছিল ইমাদ পরিবহন। এ কারণে গত ১৯ মার্চ সকাল ৮টায় মাদারীপুরের কুতুবপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘটে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা।
‘এ ছাড়া চালকের পেশাদার লাইসেন্স মধ্যম থাকলেও চালিয়েছেন ভারী যান। অন্যদিকে দুঘর্টনার দিন বৃষ্টিভেজা রাস্তা থাকার কারণে চালকের অসচেতনার কারণে দুঘর্টনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমাতে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪টি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, চালক ও সংশ্লিষ্ট সকলের লাইসেন্স এবং একটি গাড়ির সকল বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করে মহাসড়কে গাড়ি চালানো নিশ্চিত করতে হবে, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী দ্রুতগতিসম্পূর্ণ গাড়ির চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট পরিধান করতে হবে, গাড়ির ইন্টেরিয়র নরম বস্তু দিয়ে করা, এক্সপ্রেসওয়ের উভয় পাশে গার্ড রেইল স্থাপন করতে হবে। এই রাস্তায় কমপক্ষে তিন লেন ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ছাড়াও মহাসড়কে চলাচলকারী সকল পরিবহনের হালনাগাদ তথ্য সম্বলিত ডেটাবেইজ রাখতে হবে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্যে লোকবল ও টহল গাড়ি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ করে রাতে, ভোরে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাড়ির গতি অপেক্ষাকৃত কম রাখতে হবে। দুঘর্টনা কমাতে সড়ক ও মহাসড়কের সিটি টিভি, ট্র্যাকার, অনলইন মনিটরিং জোরদার করতে হবে।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হলেন মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) পল্লব কুমার হাজরা, কমিটির সদস্য মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মনিরুজ্জামান ফকির, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ হাসানাত-ই-রাব্বি, মাদারীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল হোসেন।
গত রোববার ভোর ৪টার দিকে খুলনার ফুলতলা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। পরে ভোর ৫টা ৫ মিনিটে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বাসটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা হয়। বাসটির চালক সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারায়। এতে বাসটি ছিটকে পড়ে যায়।
এরপর এক্সপ্রেসওয়ের আন্ডারপাসের দেয়ালের সঙ্গে সজোড়ে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চালক জাহিদ হাসান, তার সহকারী ইউসূফসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসার জন্য ১২ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে বাসটির সুপারভাইজার মিনহাজসহ আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় শিবচর হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে ইমাদ পরিবহন লিমিটেড কোম্পানির মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের নামে একটি মামলাটি করেছেন।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ নগরীর নিরালা রেস্ট হাউজ নামের আবাসিক হোটেল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় তরুণীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যার রহস্য উদঘাটন করা করেছে।
২৩ বছর বয়সী গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানাধীন নতুন চরচাষী গ্রামের বাসিন্দা।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহম্মদ ভূঞা।
তিনি জানান, গত ১৮ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেস্ট হাউজের এক কর্মী ওই কক্ষটি পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখে বাথরুমে গলাকাটা অবস্থায় এক তরুণীর মরদেহ পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেস্ট হাউজ মালিক মো. মুসাকে আটক করে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে পুলিশ একটি হত্যা মামলা করেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রোববার সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানা এলাকা থেকে হত্যাকারী রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে আসামি রাকিব। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি সমাজসেবা কার্যালয়ে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করতেন।
গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকার আগারগাঁও অফিস থেকে মিরপুর সেহড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে আসার সময় এক যৌনকর্মী তরুণীর সঙ্গে কথা হয় রাকিবের। তখন তিনি ওই তরুণীকে পাঁচ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে ময়মনসিংহ নিয়ে এসে নিরালা রেস্ট হাউজে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে থাকেন।
শর্তের টাকা নিয়ে ১৫ মার্চ ওই তরুণীর সঙ্গে রাকিবের ঝগড়া হয়। ওইদিন সকাল ১০টার দিকে বাইরে থেকে চাকু কিনে এনে তরুণীর গলাকেটে হোটেলের শৌচাগারে ফেলে পালিয়ে যায় রাকিব।
পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভূঞা বলেন, ‘সোমবার গ্রেপ্তার রাকিবকে আদালতে তোলা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে রোববার সকালে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহী খাদে পড়ে ১৯ জন নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশ।
হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস রোববার রাত ২টার দিকে মামলাটি করেন, যাতে আসামি করা হয় বাসমালিককে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাইম মোফাজ্জেল জানান, ইমাদ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হোসেনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বেপরোয়া গতি ও এর ফিটনেসের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করা হয়।
তিনি জানান, দুর্ঘটনায় চালক ও হেলপার নিহত হওয়ায় তাদের নামে মামলা করা হয়নি। সার্জেন্ট জয়ন্ত দাস মামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা থেকে যাত্রী বোঝাই করে ইমাদ পরিবহনের বাসটি রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এটি পদ্মা সেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় এলে সামনের চাকা ফেটে যায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি নিচে পড়ে যায়।
ওই সময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। পরে হাসপাতালে আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের শিবচরে রোববার সকালে পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ার ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বাসটির ১০ জনের বেশি যাত্রী।
নিহত আটজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, যারা হলেন গোপালগঞ্জের মাসুদ হোসেনের মেয়ে সুইটি আক্তার (২৫), একই জেলার বনগ্রামের শামসুল শেখের ছেলে মোসতাক আহমেদ (৪০), ইসমাইল হোসেন (৫৫), তৈয়ব আলীর ছেলে মো. হেমায়েত হোসেন (৩০), নড়াইলের বকুল শিকদারের ছেলে ফরহাদ শিকদার (৪০), গোপালগঞ্জের নওশের আলী শেখের ছেলে সমীর শেখ (২০), একই জায়গার কাঞ্চন শেখের ছেলে কাদির শেখ (৪০) ও একই জেলার অনাথি নাথ মন্ডল (২৫)।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে প্রাণ হারানো দুজনের একজন ৬০ বছর বয়সী পুরুষ, অন্যজন ২৫ বছরের যুবক।
আহত যাত্রীদের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় একাধিক হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাতজন হলেন ফয়সাল আহমেদ, আবদুল হামিম, বদরুদ্দোজা, পঙ্কজ কান্তি ঘোষ, ঝুমা, বুলবুল ও এনামুল।
শিবচর উপজেলা প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মরদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, রোববার সকালে খুলনা থেকে যাত্রীবোঝাই করে ইমাদ পরিবহনের বাসটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পদ্মা সেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়েতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সীমানা এলাকায় যানটির সামনের চাকা ফেটে যায। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে বাসটি খাদে পড়ে যায়।
পুলিশ আরও জানায়, বাসটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই ১৪ জনের প্রাণহানি হয়। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, এ দুর্ঘটনায় মাদারীপুরে ১৭ জন নিহত হয়। বাসটি খুলনা থেকে ছেড়ে আসে। আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে শনিবার একটি দোতলা ভবনে বিস্ফোরণের পর আগুনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত ও দগ্ধ হয়েছেন আটজন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনের গুদামে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির পেছনের অংশ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে। যা আশেপাশের বসতিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
নিতাইগঞ্জের ডাইলপট্টিতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ আগুনের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট।
বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো ব্যক্তির নাম আউলাদ হোসেন। তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
আহত ব্যক্তিরা হলেন সরকার হোসেন, জাহাঙ্গীর, সেন্টু, রাজু, বিশু, জাকির হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও জগদীশ সরকার। তারা শ্রমিক, ট্রাকচালক ও দোকান মালিক। তারা শ্রমিক, ট্রাকচালক ও দোকান মালিক।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর আগুন বেশিদূর ছড়াতে পারেনি। তবে ভবনের পেছনের অংশে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ধসে পড়েছে ভবনের এক পাশ। নিচ তলার দোকানে ও গুদামে থাকা মালপত্র পুড়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর পাশে একটি সচল গ্যাস সংযোগ পাওয়া গেছে। সেটি গুদামের পাশ হয়ে দুই তলায় রান্নাঘরে সংযোগ ছিল। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও গ্যাস লাইন সচল অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস লাইনের পাইপ থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে গুদামে জমে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর বাইরে আরও যেসব বিষয় রয়েছে তা নিয়ে কাজ চলছে। বিস্ফোরণের কারণ শনাক্ত করতে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে সিআইডি।’
স্থানীয়রা জানান, ভবনটি প্রায় শত বছরের পুরোনো। ১০ বছর আগেই এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবুও ভবনের নিচ তলায় ডাল, চাল, ভূষি, লবণ ও কাগজ গুদামে রেখে ব্যবসা করা হতো। দুই তলায় শ্রমিক, ট্রাকচালকরা থাকতেন। নিচে চলতো বেচাকেনা। প্রায় সময় ভবন থেকে ইট খসে পড়ত। শনিবার সকালে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তারপর ছড়িয়ে পড়ে আগুন।
নিতাইগঞ্জ বহুমুখী ব্যবসায় সমিতির সাবেক সভাপতি শংকর সাহা জানান, গত বছরেও এখানে এমন আরও একটি ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় পুলিশকে লিখিতভাবে জানানো হয়। তবে তারা উদ্যোগ না নেয়ায় এবার বড় ধরনের ঘটনা ঘটলো।
নারায়ণগঞ্জে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস জানান, গত কয়েক বছরে একাধিকবার এই ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভবনের মালিককে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তবে তিনি ভবনটি অপসারণ করেননি।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, বিস্ফোরণের আগুনে দগ্ধ ও আহত আটজনকে স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশও ঘটনার তদন্ত করছে। অভিযোগ পেলে মামলা নেয়া হবে।
পরিত্যক্ত ভবন থেকে কেন গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি জানতে চাইলে তিতাসের নারায়ণগঞ্জের প্রকৌশলী ইমরান হোসেন বলেন, ‘ভবনের পাশে গ্যাস রাইজার আছে। এটি গ্যাসের লাইন থেকে হয়েছি কি না আমরা এখনও নিশ্চিত নই।’
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক বাসচালককে মারধর করার ঘটনায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে জেলা মটর মালিক সমিতি ও জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ভূইয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে সবার সিদ্ধান্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরআগে বুধবার সকালে নান্দাইলের চৌরাস্তা এলাকায় সড়ক পার হচ্ছিলেন মেয়র রফিক উদ্দিন ভূইয়া। এ সময় বাসের ভেতর থেকে এক যাত্রী বলেন, ‘আপনি সমাজের গণমান্য ব্যক্তি হয়েও অসচেতনভাবে রাস্তা পারাপার হলেন।’ এতে চালকও সায় দিলে মেয়র ক্ষিপ্ত হয়ে চালককে মারধর করেন। এ ঘটনায় ওই চালক জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে জানালে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।’’
বাসের চালককে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল পৌরসভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভূইয়া শুক্রবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কাওকে মারধর করিনি। এসব মিথ্যা অভিযোগ।’
তাহলে পরিবহন ধর্মঘট থাকার কারণ কি এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘আমি একটি মিটিংয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর বিস্তারিত জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য