বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার স্বীকৃতি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে।
প্রভাবশালী দুই আইনপ্রণেতা স্টিভ চ্যাবট এবং রো খান্না ১৪ অক্টোবর এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।
এই প্রস্তাবে কী রয়েছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা। স্টিভ চ্যাবট এবং রো খান্নার উত্থাপন করা প্রস্তাবের শিরোনাম- ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার স্বীকৃতি।‘
৮ পৃষ্ঠার প্রস্তাবটি ভাষান্তর করা হলো নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে, জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের। পাকিস্তান দেশটি দুটি আলাদা ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয়; পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলটি পূর্ব বাংলা নামেও পরিচিত।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর শীর্ষ পদে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আধিক্য ও আধিপত্য ছিল। পূর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা নানা তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বাঙালিবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন, বাঙালিরা এমন একটি নিচু জনগোষ্ঠী যারা অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড ও আচরণে দুষ্ট।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবি নিয়ে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নতুন সরকার গঠনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের আলোচনা ব্যর্থ হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লাখ মানুষ হত্যায় শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ইয়াহিয়া খান। তিনি বলেন, ‘তাদের ৩০ লাখকে মেরে ফেললে বাকিরা আমাদের পোষ্য হয়ে যাবে।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দি করে পাকিস্তান সরকার। সেই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামি উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহযোগিতায় নির্বিচারে হত্যা চালায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সাংকেতিক নাম ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসে বাঙালি জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিধন অব্যাহত রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এ সময় আওয়ামী লীগের সমর্থক, বাঙালি সেনা ও পুলিশ সদস্য, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র এবং পেশাজীবীদের বেছে বেছে নিপীড়ন ও হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম ও সংখ্যালঘিষ্ঠ অমুসলিম জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, জাতিগত বাঙালি এবং হিন্দুদের ওপর চালানো নিপীড়ন বিংশ শতাব্দীতে হওয়া গণহত্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গণহত্যার স্বীকৃতি না পাওয়ার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ, যারা নৃশংসতার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নৃশংসতায় নিহতদের সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকারের হিসাবে সংখ্যাটি ৩০ লাখ।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ২ লাখের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। সামাজিক ট্যাবুর কারণে প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত কখনোই জানা যাবে না। মনে থাকবে না ভুক্তভোগীদের কথা।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, নৃশংসতা এবং যুদ্ধের কারণে প্রায় ১ কোটি উদ্বাস্তু ভারতে পালিয়ে যান। ৫০ শতাংশ বা তার চেয়েও মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে দেখভাল করেছিল।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ১৩ জুন দ্য সানডে টাইমসে ‘গণহত্যা’ শিরোনামে এক কলামে সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লেখেন, “এটা পরিষ্কার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব বাংলার গভর্নরশিপ গ্রহণ সময় থেকেই পরিকল্পনামাফিক ‘তালিকা’ করা শুরু হয়। এটা চলমান ছিল।
সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকায় যখন ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন প্রাথমিকভাবে পরদিন সকাল পর্যন্ত একটি প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। ওই সময়ে সেনা ইউনিটগুলোর হাতে ছিল ওই তালিকা; যাতে হিন্দুদের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মুসলমান, ছাত্র, আওয়ামী লীগার, অধ্যাপক, সাংবাদিক এবং শেখ মুজিবের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় থাকা রাজনীতিকদের নাম ছিল।”
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড ওয়াশিংটনে ‘বেছে বেছে গণহত্যা’ শিরোনামে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সেনাদের সমর্থনে অবাঙালি মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে দরিদ্র জনগণের বাড়িঘরে হামলা এবং বাঙালি ও হিন্দুদের হত্যা করছে। ঢাকা ছাড়তে মরিয়া হিন্দু জনগোষ্ঠীসহ অন্যদের স্রোতে রাস্তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অনেক বাঙালি আমেরিকানদের বাড়িতে আশ্রয়প্রার্থনা করেছিলেন, যাদের অধিকাংশ দীর্ঘদিন ওই আশ্রয়েই ছিলেন।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরব অবস্থানের বিরোধিতা করে ২০ জন আমেরিকান কূটনীতিকের সইসহ একটি বার্তা স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠান কনসাল জেনারেল ব্লাড, যা ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে পরিচিতি পায়। কূটনৈতিক কনস্যুলেট জেনারেল ঢাকার কর্মীরা লেখেন, ‘আমরা হস্তক্ষেপ না করার উপায় বেছে নিয়েছি, নৈতিকভাবেও। এ কারণে আওয়ামী সংঘাত, যেখানে দুর্ভাগ্যবশত অত্যধিক শক্ত শব্দ গণহত্যা প্রযোজ্য, এটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে সাধারণ আমেরিকানরা বিরক্তি প্রকাশ করেছে।’ এই আপত্তিতে ব্লাড একমত হয়ে বলেন, ‘আমি এই কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারছি। তারা পূর্ব পাকিস্তানের সেরা আমেরিকান কর্মকর্তা। আমেরিকান সম্প্রদায়ের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা তাদের মাধ্যমে প্রতিধ্বনিত হয়। তাদের মতামতগুলো গ্রহণ করলেও, যতদিন আমি এই পদে প্রিন্সিপাল অফিসার আছি ততদিন তাদের বিবৃতিতে সই করা আমার পক্ষে উপযুক্ত মনে হয় না।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল কনসাল জেনারেল ব্লাড আরেকটি টেলিগ্রাম পাঠান যেটায় লেখা হয়, নগ্নভাবে ‘গণহত্যা’ চলছে। বাছাই করে হিন্দুদের বিশেষভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। শুরু থেকেই হিন্দু গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া, ঢাকায় হিন্দু ছিটমহল এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে হিন্দুদের গুলি করার প্রত্যক্ষদর্শী আমেরিকান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সদস্যরা। অনেকে আবার পরবর্তী প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছেন, যা আজ সারা ঢাকায় দৃশ্যমান।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, শরণার্থী ও পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্যাগুলো তদন্ত করার জন্য সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটির উপকমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যেখানে বলা হয়েছে “এর চেয়ে পরিষ্কার কোনো কিছুই নয় বা এর চেয়ে সহজে নথিভুক্ত করা সম্ভবও নয় যে, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পদ্ধতিগত আতঙ্কের এক অভিযান চালিয়েছিল যার ফল ছিল গণহত্যা। আমেরিকান সরকারের কাছে ফিল্ড রিপোর্ট, অগণিত প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের ভাষ্য, বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট ও অতিরিক্ত তথ্য উপলব্ধ উপকমিটির নথিতে আতঙ্কের ক্রমাগত রাজত্ব যা পূর্ব বাংলাকে গ্রাস করে তার বর্ণনা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের। তাদের জমি ও দোকান লুট করা হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় হলুদ ছোপ দিয়ে ‘এইচ’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সবই ইসলামাবাদ থেকে সামরিক আইনের অধীনে সরকারিভাবে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৭২ সালে “দ্য ইভেন্টস ইন ইস্ট পাকিস্তান” শিরোনামে প্রকাশিত একটি আইনি সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক আইন কমিশনের সচিবালয় বলেছে, ‘হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছিল এবং তারা হিন্দু বলে তাদের বাড়িঘর এবং গ্রামগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৯৪ সালে যুদ্ধ কভার করার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক সিডনি শ্যামবার্গ লিখেছেন, “পরবর্তী সময়ে আমি পাকিস্তানের কীর্তিকলাপ সরাসরি দেখার জন্য সড়কপথে দেশটি ভ্রমণ করি। শহরের পর শহরে আমি এমন সব জায়গা দেখেছি যেখানে মৃত্য কার্যকর করার জন্য এলাকা নির্দিষ্ট ছিল। যেখানে লোকজনকে বেয়নেট ও বুলেট দিয়ে বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কয়েকটি শহরে প্রতিদিন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক মাস পরেও (১৯৭২ সালের জানুয়ারি) মানুষের হাড়গোড় রাস্তার ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। রক্তের দাগযুক্ত পোশাক এবং মানুষের চুলের অংশগুলো মৃত্যুর এ উপত্যকায় হত্যাকাণ্ডের স্বাক্ষী হয়ে পড়েছিল। অল্পবয়সী শিশুরা মাথার খুলি নিয়ে ভীতিকর খেলায় মেতেছিল। অন্যান্য অনুস্মারকের মধ্যে পাকিস্তানি মুসলিম সেনাবাহিনীর বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়া হিন্দুদের বাড়িতে হলুদ রঙের ‘এইচ’ আঁকা ছিল।”
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ ‘বাংলাদেশ গণহত্যার ৫০তম বার্ষিকী স্মরণে ঘোষণাপত্রে’ বলেছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানে তাদের স্বাধীনতাবিরোধী দখলদারত্বের ৯ মাসে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালি সংস্কৃতি ও পরিচয়বাহক কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও তাদের প্রতিনিধিদের নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যা করেছে।’
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর প্যারিসে স্বাক্ষরিত গণহত্যার অপরাধের প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশন এ ঘোষণা দেয় যে, গণহত্যার অর্থ হলো, সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে, একটি জাতি, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠী ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সংঘটিত নিম্নোক্ত যেকোনো কাজ; ক) গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা; (খ) গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা; (গ) ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে শারীরিক ধ্বংস ঘটাতে গণনা করা জীবনের গোষ্ঠীগত অবস্থার উপর আঘাত করা; (ঘ) গোষ্ঠীর মধ্যে জন্ম রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা আরোপ করা; (ঙ) গোষ্ঠীর শিশুদের জোর করে অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর করা।
এবং নিম্নলিখিত কাজগুলো শাস্তিযোগ্য হবে: (ক) গণহত্যা; (খ) গণহত্যার ষড়যন্ত্র; (গ) গণহত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও জনসাধারণকে প্ররোচনাদান; (ঘ) গণহত্যা করার চেষ্টা; (ঙ) গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা।
এই বিবেচনা সাপেক্ষে যে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ ও লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছে; এবং
যেহেতু ভবিষ্যত প্রজন্ম প্রয়োজনে, নিহতদের স্মৃতি রক্ষার্থে ও আগামীতে নৃশংসতা রোধের স্বার্থে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার ইতিহাস স্মরণ ও সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; সেহেতু এটি সমাধানকল্পে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস:
১। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতার নিন্দা জানায়।
২। বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের নৃশংসতাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৩। এ ধরনের নৃশংসতায় অগণিত মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করে ও তাদের কষ্টের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।
৪। স্বীকার করে যে, নিজেদের সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য সমগ্র জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সম্প্রদায় দায়ী নয়৷
৫। ১৯৭১ সালে জাতিগত বাঙালি ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সংঘটিত নৃশংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানায়।
৬। ব্যাপক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাকিস্তান সরকারকে এ ধরনের গণহত্যায় তার ভূমিকা স্বীকার করে নিতে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো অপরাধী যারা এখনও জীবিত আছেন তাদের বিচারের আহ্বান জানায়; এবং
৭। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য এবং জাতীয়, জাতিগত বা ধর্মীয় পটভূমি নির্বিশেষে এ অঞ্চলে বসবাসকারী সব মানুষের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, ধর্মের স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।
আরও পড়ুন:The Bangladesh Genocide of 1971 must not be forgotten. With help from my Hindu constituents in Ohio’s First District, @RepRoKhanna and I introduced legislation to recognize that the mass atrocities committed against Bengalis and Hindus, in particular, were indeed a genocide.
— Rep. Steve Chabot (@RepSteveChabot) October 14, 2022
গত বছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। তার ইচ্ছা ছিল এলাকায় বিচারক হয়ে ফেরার; ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার। সে ইচ্ছা অপূর্ণ রেখে সোমবার লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এ ছাত্রী।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি ছাত্রীনিবাস থেকে রবিবার রাতে ঝুলন্ত অবস্থায় আনিকাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
আনিকার বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামে। সেখানে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, তার শতবর্ষী দাদা আলহাজ সোলাইমান আলী মণ্ডল হতভম্ব হয়ে এদিক-সেদিক দেখছেন। কান্না থামছিল না ফুফু আক্তার বানুর।
আনিকার এমন মৃত্যুতে বিস্মিত পরিবারের সদস্য ছাড়াও প্রতিবেশীরা চেয়েছেন ঘটনার রহস্য উদঘাটন।
পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেনের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন আনিকা মেহেরুন্নেসা শাহি। ২৪ বছরের এ তরুণী ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হন ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও স্থিতিস্থাপকতা বিভাগে।
এ বিভাগের পড়াশোনা শেষ করে আইনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বিচারক হতে চেয়েছিলেন আনিকা।
গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নওগাঁয় সম্মুখসারিতে ছিলেন আনিকা। পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলায় মাইক হাতে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সড়কে দাঁড়ান তিনি।
সুষ্ঠু তদন্ত দাবি
পরিবারসহ এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আনিকার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক।
বকুল নামের একজন মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখি আনিকার মরদেহ ফ্যানের সাথে ঝুলছিল, কিন্তু অর্ধেক মেঝেতে লেগে ছিল। আমার জানা মতে একটা ছেলের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।
‘আমরা ঢাকায় আছি। তার বাবা পাগল হয়ে গেছে। তবে আমরা যখন যাই, তখন দেখি লক ভাঙা ছিল। মনে হয় তাকে কেউ নামানোর চেষ্টা করেছিল।’
বুটেক্স ছাত্র আটক
আনিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) এক ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বাহিনীর ধারণা, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ঢাবির এ ছাত্রী। তবে এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় অনিয়ম করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিইসি) বীজ ও সারের ডিলারশিপ নিয়েছেন সরকারি কলেজের প্রভাষক ও কৃষি কর্মকর্তা। তাদের স্বজনদেরও একই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন তারা।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ অনুসারে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়ে অন্য কোথাও থেকে কোনো ধরনের সুযোগ- সুবিধা নেওয়ার বিধান নেই। একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি একের অধিক ডিলারশিপ নিতে পারবেন না।
অন্যদিকে আচরণ বিধিমালার ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনো কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’
অনিয়মে যুক্তদের ভাষ্য
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ী নওগাঁতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ফজলে রাব্বি। তিনি তার স্ত্রী সম্পা বেগমের নামে বিএডিসির বীজের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়ে কৌশলে ডিলারশিপ বিক্রি করে খাচ্ছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনই নওগাঁ শহরে বসবাস করলেও তারা পোরশা উপজেলায় ‘সাইফ ট্রেডার্স’ নামের ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়ে রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্পা বেগম তার নামে লাইসেন্স স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নওগাঁ বসবাস করলেও পোরশায় আমার দোকান রয়েছে। ওখানে একটি ছেলে আছে। সে দোকান চালায়।’
দোকানের ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী রাব্বি নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চাকরি করেন। তিনি সব বলতে পারবেন।’
সাইফ ট্রেডার্স নামের কোনো দোকান পোরশা বাজারে পাওয়া যায়নি। দোকানের সঠিক ঠিকানা কোথায় জানতে চাইলে সম্পা কোনো সদুত্তর না দিয়ে কথা না শোনার ভান করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফজলে রাব্বির কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই লাইসেন্সটা আমার স্ত্রী সম্পার নামে করা আছে।’
নিয়মিত বীজ তোলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভাই অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। আপনাদের অনেক সাংবাদিক আসে; চা খেয়ে যায়।
‘সবার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। আপনি অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান।’
ওই বক্তব্যের পর সংযোগটি কেটে দেন তিনি।
এদিকে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মেসার্স জিমান ট্রডার্স নামে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন নিয়ে রেখেছেন বিএডিসির সার লাইসেন্সের ডিলারশিপ। প্রোপাইটারে জায়গায় রয়েছে তার নিজের নাম।
তার ছেলে জিমানের নামে নিয়ামতপুর বাজারে রয়েছে দোকান। নিয়মিত বিএডিসির সার ও বীজ তুলে বিক্রি করেন তিনি।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, ‘লাইসেন্সটা অনেক আগে করা ছিল। তখন আমার কলেজ সরকারি হয়নি। ২০১৮ সালে আমার কলেজ সরকারি হয়েছে।’
‘তাহলে দীর্ঘ সাত বছর ধরে সরকারি ডাবল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। এটার সুযোগ রয়েছে কী?’
উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একাধিক জায়গা হতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। এটা আমার অন্যায় হয়েছে। আমি তিন মাস আগে ডিসি অফিসে লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানিয়েছি।’
এদিকে ধারাবাহিকভাবে গত মাসেও সরকারি গুদাম থেকে সার তুলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাইসেন্সটা আমার ছেলের নামে হস্তান্তর করা হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে।’
অপরদিকে ধামইরহাট উপজেলার ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলাম তার নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন বিসিআইসির সার ডিলারশিপ। সরকারি গুদাম থেকে নিয়মিত সার তুলে উপজেলার আমাইতাড়া বাজারে বিক্রি করছেন তিনি।
এ বিষষে জানতে ধামইরহাট সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক তৌহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওটা অনেক আগে করা হয়েছিল। পরে আমার কলেজ সরকারীকরণ হয়।
‘সরকারি একাধিক জায়গা হতে সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি হয়েছে। আমি লাইসেন্সটা ট্রান্সফার করে দেব।’
‘আপনি তো এখনও নিয়মিত সার তোলেন।’ এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ইরি-বোরো মৌসুম চলছে তো। তাই একটু তুলতেছি।’
যা বলছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা
ডিলারশিপের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা এটা করতে পারে না।’
‘আপনার অধিদপ্তরে এমন অনেকে রয়েছে। তাহলে তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’
এমন প্রশ্নে প্রোগ্রামের ব্যস্ততার কথা বলে ফোন লাইন কেটে দেন এ কর্মকর্তা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ইউএনও, কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটিকে প্রস্তাব পাঠাই। তারপর অনুমোদন দেওয়া হয়।
‘সরকারি চাকরি করে বিএডিসি কিংবা বিসিআইসির ডিলারশিপ লাইসেন্স নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পূর্ব অনুমতিও নিতে পারত এ ক্ষেত্রে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িতে ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অজ্ঞাত মুখোশধারীরা গত রবিবার রাতের বেলায় জমিদার বাড়ির পুরোহিতকে ধরে নিয়ে জঙ্গলে বেঁধে রাখে। টাকা-পয়সা এবং জমিদারেরও খোঁজ করে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে ডাকাত আতঙ্কে রয়েছেন বাড়ির লোকজন।
মুখোশধারীরা ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশে তল্লাশি চালানোর কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
এতে দেখা যায়, রবিবার রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী নেলী চক্রবর্তী ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে দুজন মুখোশধারী ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে গাছের সঙ্গে পুরোহিতকে বেঁধে ফেলে।
জমিদার বাড়ির পুরোহিত বাদল ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে ঘুমানোর আগে স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। এর মধ্যেই দুজন মুখোশধারী আমাদেরকে ধরে বাড়ির পাশে জঙ্গলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় মুখোশধারীরা জমিদার কোন ঘরে জানতে চায়। সিন্দুকের খোঁজও চায় তারা।
‘বাড়ির তিন তলায় ওঠার চেষ্টাও করে। ঘণ্টা তিনেক ধরে বাড়িটির বিভিন্ন কক্ষ ও আশেপাশে তল্লাশি চালায়।’
বাড়ির কেয়ারটেকার স্বপন সাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত জমিদার বাড়িতে চাকরি করছি। দেশের বিভিন্ন জায়গার লোকজন এখানে ঘুরতে আসেন। পুরো বাড়ি তাদের ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করি।
‘কিন্তু অতীতে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এই ঘটনার পর থেকে বাড়ির লোকজন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটিতে জমিদারের একমাত্র শেষ বংশধর মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বসবাস করছেন। নিঃসন্তান ব্যক্তিটির স্ত্রী কিছুদিন আগে লোকান্তরিত হন। বাড়িটিতে বর্তমানে তিনি ছাড়া কয়েকজন কর্মচারী ও পুরোহিত অবস্থান করছেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িটিতে অজ্ঞাত কয়েকজন মুখোশধারী হানা দেয়। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে চারজনকে দেখা যায়।
বাড়ির মালিক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, ‘মুখোশধারীরা হয়তো ধনদৌলত নিতে কিংবা আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করতে চেয়েছিল। তবে বাড়ির লোকজন সজাগ হয়ে যাওয়ার মুখোশধারীরা সেটা করতে পারেনি।’
জানতে চাইলে হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন:বিনা নোটিশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, বগুড়ার আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছে।
এ ধর্মঘটে বুধবার সকাল ৮টা থেকে নওগাঁর সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রয়েছে, যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চালকরা।
কী বলছেন ভুক্তভোগীরা
যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী লোকজনও। তাদের একজন বেসরকারি সিম কোম্পানির কর্মী আল-আমিন।
তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে সকাল সাড়ে আটটায় মোটরসাইকেল নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে তেল শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে আধা কিলোমিটার ঠেলে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় পেট্রল পাম্পে নিয়ে আসি।
‘পাম্প বন্ধ থাকায় আবার ঠেলে নিয়ে চলে যেতে হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
আবদুল মান্নান নামের এক বাইকচালক বলেন, ‘আমি জানতাম না পেট্রল পাম্প মালিকদের ধর্মঘট চলছে। পেট্রল পাম্পে এসে দেখি পাম্প বন্ধ। তেল দেওয়া হচ্ছে না।
‘এখন তেল ছাড়া আমরা কীভাবে চলি? আগে জানানো হলে তাও সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে অবস্থিত মেসার্স সাকিব ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অনেকেই অফিসগামী মোটরসাইকেল আরোহী ও জ্বালানিচালিত বিভিন্ন যানবাহনগুলো পাম্পে এসে বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যানবাহন চালকদের। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান যানবাহন চালকরাও।
‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদেরও বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
প্রেক্ষাপট
পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ বগুড়া। ওই সময় সান্তাহারের হামিম ফিলিং স্টেশন ও আনিকা ফিলিং স্টেশনে তেলের মিটার উচ্ছেদ করা হয়।
তারা জানান, পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে এ উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এবং পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, রাজশাহী বিভাগ’ সব পেট্রল পাম্প বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ ট্রেন ব্যবহার করেন। হঠাৎ করে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে বাসের ওপর বাড়তি যাত্রীর চাপ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাসের টিকিটের মূল্য বেড়ে গেছে।
খুলনা থেকে নওগাঁ যাওয়ার জন্য সকালে রেলওয়ে স্টেশনে এসেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক।
তারা জানান, খুলনা থেকে নওগাঁ যেতে তারা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো টিকিট পাননি। বাসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তাতে ভাড়া গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পথে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকার বেশি নয়।
শ্রমিকদের একজন সান্তনু বলেন, ‘সকাল থেকে আমরা কয়েকজন এখানে এসে বসে আছি। কয়েকজন গিয়ে বাসের খোঁজ নিয়েছে; কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
‘অতিরিক্ত ভাড়ায় আমরা যেতে পারছি না। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখি ট্রেন চালু হয় কি না। না হলে সন্ধ্যার দিকে বাসে করে রওনা দেব।’
সান্তনুর মতো অনেক দূরপাল্লার যাত্রীকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যে চলে যাচ্ছেন।
খুলনা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক একাধিক ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস খুলনা থেকে রাজশাহী, রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চিলাহাটি, মহানন্দা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রকেট এক্সপ্রেস খুলনা থেকে পার্বতীপুর, নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, বেনাপোল ও মোংলা কমিউটার খুলনা থেকে বেনাপোল যাতায়াত করে।
এ ছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ঢাকাতে যাতায়াত করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এর মধ্যে কোনো ট্রেন স্টেশন ছেড়ে যায়নি। ফলে হাজার হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে এসে ফিরেছেন।
রেলওয়ের রানিং স্টাফরা মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এ সুবিধা সীমিত করা হয়।
ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।
খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘সোমবার রাত ১২টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। আজ কোনো ট্রেন চলেনি। টিকিট বুকিং দেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’
এ সমস্যার সমাধান কবে হবে, তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন:দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে নির্মিত ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি।
এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালতে কর্মরতদের।
সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থদের অবহিত করে গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি অফিস ২০১৯ সালে চিঠি চালাচালি করলেও বিষয়টি এখনও ফাইলবন্দি।
ভবনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের দাবি আদালত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
ঝালকাঠি গণপূর্ত বিভাগ ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর জরাজীর্ণ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ৫ নভেম্বর বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরাবর পরিদর্শন প্রতিবেদন পাঠান।
ভবন পরিদর্শনকালে তিনজন উপসহকারী প্রকৌশলী, গণপূর্তের ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনের একটি কপি সংগ্রহ করেছে নিউজবাংলা।
কী ছিল পরিদর্শন কপিতে
ঝালকাঠি গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী অনিরুদ্ধ মন্ডল, মো. বদরুজ্জামান, মো. ইমরান বিন কালাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল-মাসুম স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন কপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ভবনটির দুই তলায় করিডোরের বেশ কিছু স্থানে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়ছে। এ ছাড়াও নলছিটি কোর্ট রুমের পরিদর্শনকারীদের বসার ওপরের ছাদের অংশ খসে পড়েছে। এ সমস্ত স্থানে মরিচা পড়ে রড উন্মুক্ত হয়ে আছে। দ্বিতীয় তলা এবং নিচ তলার করিডোরের বেশ কিছু বিম ও কলামে ফাটল লক্ষ করা গেছে।
‘ভবনটির নিচ তলায় হাজতখানার ছাদের বেশ কিছু অংশসহ করিডোরের বিভিন্ন অংশে ছাদের কনক্রিট স্প্যানিং হয়ে খসে পড়েছে। এসব স্থানেও মরিচা পড়ে রড বের হয়ে আছে। নিচ তলার বিভিন্ন কলাম এবং বিমের ফাটল লক্ষ করা গেছে। কিছু স্থানে কলাম ফেটে রড বের হয়ে গেছে।’
পরিদর্শন প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ১৯৮৯-৯০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। পরবর্তীকালে ২০০৪-০৫ সালে তৃতীয় তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানে বিম কলামে ফাটল থাকায় এবং ছাদের কনক্রিট খসে পড়ায় বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
‘এমতাবস্থায়, উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত ডিজাইন বিভাগের মতামতসহ পরবর্তী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।’
প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ
সম্প্রতি জজ আদালত ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনের ছাদের ওপর থেকে খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ফাটল ধরেছে অনেক পিলারেও। ভারি বৃষ্টি এলেই ছাদ ও দেয়াল চুষে পানি পড়ে মেঝেতে। নষ্ট হয়ে যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র।
দীর্ঘদিনেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় তিন তলা ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিচারকের এজলাস, খাসকামরা, পেশকার, সেরেস্তাদারের কক্ষ, নকল কক্ষ, হাজতখানাসহ প্রতিটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যেই চলছে আদালতের কার্যক্রম। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
যা বলছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা
আদালতের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়ে কথা হয় আবদুর রহমান, তৈয়ব আলী, কামরুল ইসলাম, মুরাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে।
তাদের একজন বলেন, ‘আদালত ভবনের ভিতরে প্রবেশের পর কার্যসম্পাদন করে বের হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকি আতঙ্কে। প্রায় সময়ই ছাদের পলেস্তারা খসে নিচে পড়ে।
‘বর্ষায় তো বারান্দায় পানি জমে যায়। দেয়ালে পানি চুষে অনেক ফাইল নষ্ট হয়ে যায়।’
আইনজীবী মানিক আচার্য্য বলেন, ‘ভবনটি ধীরে ধীরে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার সংস্কার করছে না কর্তৃপক্ষ। বিচারকরা যদি ভালো পরিবেশে বিচারকার্য পরিচালনা করতে না পারে, তাহলে বিচারকার্যে মনোনিবেশও করতে পারেন না।
‘ঝালকাঠির বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সকলেই আমরা এ ভোগান্তিতে রয়েছি। বিভিন্ন সময়ে উচ্চপদস্থদের বিষয়টি অবগত করলেও এখনও কোনো ভূমিকা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’
আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট ফয়সাল বলেন, ‘ড্যামেজড ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বিচারিক কার্যক্রম। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।
‘আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা এবং নতুন ভবন নির্মাণ অথবা টেকসই সংস্কারের জন্য গণপূর্তের চিঠি চালাচালি হলেও দীর্ঘদিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাইনি। জনস্বার্থে দ্রুত নতুন আদালত ভবন নির্মাণ জরুরি।’
আইনজীবী আক্কাস সিকদার বলেন, ‘বর্তমানে এ আদালতে ১৬ হাজার দেওয়ানি মামলা এবং দেড় হাজার ফৌজদারি মামলা চলমান। ইতোপূর্বে জরাজীর্ণ আদালত ভবনের ছাদের ও দেয়ালের আস্তর খসে অনেকের ওপর পড়েছে।
‘আদালত ভবনের নিচ তলায় হাজতখানার পশ্চিম দিকে মসজিদের সামনে একাধিকবার ধসে পড়েছে ছাদের অংশ। এখন এই ভবন অস্থায়ী সংস্কার না করে এটি ভেঙে এখানে নতুন ভবন করা উচিত।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নব্বই দশকে দোতলা জজ আদালত ভবনটি নির্মাণের পর ২০০৬ সালে এর ওপর আরও এক তলা বর্ধিত করে তৃতীয় তলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে নিচ তলার অনেক পিলারে ফাটল ধরেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আদালতের স্টাফ, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা রয়েছেন আতঙ্কে।
‘হাজতখানা সরিয়ে পার্শ্ববর্তী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে নেওয়া হয়েছে। ভবনে আগতদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দ্রুত এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’
জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ ঝালকাঠির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম ও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার একই ধরনের বক্তব্য দেন।
তাদের একজন বলেন, ‘ভবন পরিদর্শনের রিপোর্ট ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে নতুন ভবনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে।
‘সেখান থেকে অর্ডার হলেই গণপূর্ত বিভাগ টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কার্যসম্পাদন করবে।’
ক্যাপশন: ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ভেতরের জরাজীর্ণ অংশ। ছবি: নিউজবাংলা
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগের পলাতক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানকে কৌশলে পুনর্বাসনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীসহ স্থানীয় একাধিক রাজনীতিক ও কিছু ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট এ ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
জনসেবা অব্যাহত রাখতে নিয়ম অনুসারে ইউপি সদস্য সুমন রানাকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ করে বাকি প্যানেল গঠন করা হয়।
বর্তমানে ইউপিতে নাগরিক সেবা অব্যাহত থাকলেও প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কৌশলে অনাস্থা এনে এরশাদ আলীসহ অন্যরা পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের চেষ্টায় আছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তাদের ভাষ্য, সম্প্রতি কৌশল জানাজানি হলে ইউনিয়নবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমন বাস্তবতায় যেকোনো সময় ওই ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
পলাতক চেয়ারম্যানকে পুনর্বাসনের ‘কৌশল’
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রথমে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর শুকানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তাব এনে একটি আবেদন জমা দেওয়া হয়। সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন ৯ জন ইউপি সদস্য।
পরে সেই আবেদনের জের ধরে ১৩ জানুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডের পাতায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ মো. এরশাদ আলী স্বাক্ষরিত এক পাতার একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের রেজুলেশন ও অপর একটি পাতায় আটজন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর সংবলিত পাতা সংযুক্ত করা হয়। এ পাতায় সভার স্থান দেখানো হয় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে।
ওই রেজুলেশনে বলা হয়, ‘অদ্যকার অত্র আলোচনায় শুকানপুকুরী ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে ইউপির সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সভায় বিস্তর আলোচনা করা হয়। এরপর সভার সভাপতি প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলীর উপস্থিতিতে সদস্যদের জানান, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন, যা জেলা প্রশাসকের বরাবরে অনাস্থার প্রস্তাব আনয়ন করি।
‘তাই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিছুর রহমানের (পলাতক) মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখা একান্ত জরুরি মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
রেজুলুশনে উল্লেখ করা হয়, সর্বসম্মতিক্রমে পলাতক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা তথা জনসেবা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে দুই ইউপি সদস্যের ভাষ্য
কারণ জানতে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করা দুজন ইউপি সদস্যের সঙ্গে। তারা হলেন মো. আমজাদ ও ধর্ম নারায়ণ রায়।
ইউপি সদস্য আমজাদ বলেন, ‘৪ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে আমার বাড়ির সামনে স্থানীয় সাবেক দুজন সদস্য মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তারা আমাকে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অন্যান্য ইউপি সদস্যরাসহ বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত। রাতের খাবারের বিশাল আয়োজনও করা হয়েছে। আমি কোন কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
‘পরে জানানো হলো, আমাকে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে স্বাক্ষর করতে হবে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা মিথ্যা। তিনি খুব ভালোভাবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এসবই আলোচনা হচ্ছে। এরপর এক প্রকার জোর করেই আমাকে রাতের খাবার খাওয়ানো হলো এবং পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে স্বাক্ষর করতে হলো। কিন্তু আমি সিলমোহর দিইনি।’
ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘একই তারিখে স্থানীয় বাসিন্দা তোষর এবং রফিকুল আমাকে একটা জায়গায় সমস্যার কথা বলে কৌশলে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিএনপির অন্যান্য রাজনীতিক নেতাসহ অন্যান্য ইউপি সদস্যরা রয়েছেন। আমাকে রাতের খাবারের জন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এত আদর-আপ্যায়ন, বুঝতে পারছিনা। জিজ্ঞাসা করলেও কোনো উত্তর পাই না।
‘সমাজ রক্ষার্থে সকলের সাথে রাতের খাবার খেলাম। এরপর আমাকে এক প্রকার চাপ দেওয়া হয় প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার বিরুদ্ধে অনাস্থা কাগজে স্বাক্ষর করতে। কিন্তু আমি তার সমর্থক। তিনি ভালো মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাক্ষর দিতে প্রথমে রাজি না হলেও পরে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাক্ষর করেছে। আমি কেন করব না, এ কথা তোলে। অনেকক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পর সই করে সেখান থেকে আসতে হয়েছে। পরে আমি লিখিত চিঠি দিয়ে বিষয়টি প্যানেল চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ভবেষ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘প্যানেল চেয়ারম্যান-১ সুমন রানার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে অনাস্থা আনা হয়েছে, তা আমার কাছে ভিত্তিহীন মনে হয়েছে।’
সচিব আরও বলেন, ‘পরিষদে তিনি (সুমন রানা) সবার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন এবং নাগরিক সেবা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিরুদ্ধে আমাকেও কেউ কোনো দিন কোনো মৌখিক অভিযোগ দেননি।’
সভার বিষয়ে যা বললেন ইউপি সচিব ও সদস্য
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব বলেন, ‘৪ জানুয়ারি, ৭ জানুয়ারি ও ১৩ জানুয়ারি কোনো সভা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমসহ পরিষদের কোনো স্থানে অনুষ্ঠিত হয়নি। যেসব সভার কথা বলা হচ্ছে, তা গোপনে বা প্রকাশ্যে অন্য কোথাও হয়ে থাকতে পারে। তা আমার জানা নাই।’
ইউপি সদস্য ধর্ম নারায়ণ রায় বলেন, ‘১৩ তারিখ সকাল ১১টায় প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সভা ডেকেছিল। আমি সময়মতো পরিষদে আসলেও সভা হয়নি।
‘আমি জানতে চাইলে তিনি গোপনে স্থানীয় দুলাল নামের এক লোকের বাসায় মিটিং হবে বলে জানান। কিন্তু আমি সেখানে যাইনি। পরিষদের কাজ শেষে বাড়ি চলে আসি।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যানের ভাষ্য
স্থানীয় বাসিন্দা জিলানি হোসেন বলেন, ‘যে চেয়ারম্যান জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি, তিনি জনগণের কথা ভাববেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি আমাদের দুর্ভোগে ফেলে আজও পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। আমরা নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা তার পুনর্বাসন চাই না।
‘পরিষদ তাকে ছাড়া বেশ ভালো চলছে। আমরা সুন্দর সেবা পাচ্ছি। শুনছি অনেকে পলাতক চেয়ারম্যানের টাকার কাছে বিক্রি হয়েছে। আমরা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেব না।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ এরশাদ আলী ইউনিয়ন পরিষদে সভা না করা এবং কোনো ব্যক্তির বাসায় বসে সভা করার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিষদে সভা করতে পারেননি।
তিনি কেন পলাতক ও বিতর্কিত চেয়ারম্যানকেই পুনর্বাসন করতে চান, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বর্তমান দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তোলেন।
অভিযুক্ত প্যানেল চেয়ারম্যান সুমন রানার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পরিষদে নাগরিক সেবা অব্যাহত আছে কি না, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানান।
ইউনিয়ন বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে পরিষদের কোনো বৈঠক হয়নি; সিদ্ধান্তও হয়নি। আমার হাত ভেঙে যাওয়ায় আমি অসুস্থ। তাই রাজনীতিক নেতা ও পরিষদের সদস্যরা দেখতে এসেছিল। এর বেশি কিছু না।’
তবে চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পলাতক থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘আবেদনসহ অন্যান্য কাগজ আমি পেয়েছি। উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি করা হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘কোনো কৌশলগত বিষয় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তবে নিয়ম-বহির্ভূত কাউকে পুনর্বাসন করার সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য