খুলনা ওয়াসা নতুন মূল্য নির্ধারণ করায় প্রতি ইউনিট পানির দাম বিদ্যুতের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। ফলে শহরের অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে ওয়াসার পানি ব্যবহারে অনীহা দেখা দিয়েছে। ওয়াসার বিরুদ্ধে লবণাক্ত ও ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগেরও কোনো সুরাহা হয়নি।
খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ১৪ টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে সার্ভিজ চার্জ, ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট।
খুলনা শহরে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। ২০২০ সালের নির্ধারিত দামে তারা গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে।
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, আবাসিকের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের সর্বনিম্ন মূল্য ৩ টাকা ৭৫ পয়সা, কৃষিকাজের জন্য ৪ টাকা ১৬ পয়সা, শিক্ষা-ধর্মীয়-দাতব্য প্রতিষ্ঠান-হাসপাতালের জন্য ৬ টাকা ২ পয়সা, রাস্তার বাতি-পানির পাম্পের জন্য ৭ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা আছে।
বাণিজ্যিকভাবে ক্ষুদ্রশিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৫৩ পয়সা, নির্মাণশিল্পের জন্য ১২ টাকা, ব্যাটারি চার্জিং স্টেশনের জন্য ৭ টাকা ৬৪ পয়সা ও অফিসের জন্য ১০ টাকা ৩০ পয়সা।
খুলনা ওয়াসা ও ওজোপাডিকোর মূল্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আবাসিকের জন্য প্রতি ইউনিট পানির দাম বিদ্যুতের থেকে ৫ টাকা ২৩ পয়সা বেশি। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রতি ইউনিট পানির দাম বিদ্যুতের থেকে ৪ টাকা ৩০ পয়সা বেশি।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, ‘একদিকে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে বৈদ্যুটিক পাম্প ছাড়া বহুতল ভবনের ট্যাংকিতে ওয়াসার পানি ওঠানো সম্ভব হয় না। ফলে পানি তুলতে ওয়াসাকে একদিকে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিল আসছে। যে কারণে ওয়াসার পানিতে মানুষ সন্তুষ্ট নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বছরে ৩ মাস ওয়াসার পানি লবণাক্ত থাকে। কারণ তারা মধুমতী নদীর পানি এনে শহরে সরবরাহ করে। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মধুমতীতে লবণ পানি থাকে। ওয়াসা অন্য সময়ের রিজার্ভ করা পানির সঙ্গে ওই তিন মাস লবণ পানি মিশিয়ে বিক্রি করে, যা গ্রাহকের সঙ্গে এক রকম প্রতারণা। এই পানি মানুষের ব্যবহারের যোগ্য নয়। এমনকি ছাদের গাছপালাকেও দেওয়া যায় না।’
এ প্রসঙ্গে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্ বলেন, ‘পানির দাম আমরা ইচ্ছা করে বাড়াইনি। ওয়াসার পানি আনা হয় শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূর থেকে। সেই পানি রিফাইন করতে প্রতি ইউনিটের জন্য ১৬ টাকা করে খরচ হয়। সম্প্রতি মূল্য বাড়ানো হলেও সরকার এখনো পানির দামে ভর্তুকি দিচ্ছে।’
পানির লবণাক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বছরের কিছু সময়ে পানি লবণাক্ত ছিল। তবে এখন আমরা পুকুরে পানি রিজার্ভ রেখে দিচ্ছি। যখন মধুমতীর পানি লবণ হয়ে যাবে, তখন রিজার্ভ পানি সরবরাহ করা হবে।’
পানিতে ময়লা বা দুর্গন্ধ থাকে– এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুলনা শহরে ড্রেন, রাস্তা ও টিএনটি লাইন সংস্কারের জন্য বারবার খনন করা হয়। ফলে অনেক সময়ে ওয়াসার পাইপ ফেটে যায়। তখন পানিতে ময়লা মিশতে পারে। তবে তা আমরা দ্রুত মেরামত করে সমস্যা সমাধান করে থাকি।’
পানির দাম বাড়ে গ্রাহকের মতামত ছাড়া
খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ বছরে ৫ দফা পানির দাম বাড়িয়েছে সংস্থাটি। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি ৪ টাকা ইউনিট ধরে পানির নতুন মূল্য তালিকা অনুমোদন করে ওয়াসা বোর্ড।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে পানির দাম দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮০ পয়সা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পানির দাম আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ইউনিটপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় ৫ টাকা ৭৬ পয়সা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আরও ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে ওয়াসা। এতে প্রতি ইউনিট পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬ টাকা ৯১ পয়সা।
গত আড়াই বছর এই মূল্যই কার্যকর ছিল। সর্বশেষ চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর পানির দাম বাড়ানো হয়।
কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পানির মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় ক্ষুব্ধ খুলনার নাগরিক নেতারা। তাদের দাবি, আইন অনুযায়ী সেবার দাম বৃদ্ধির আগে অবশ্যই গণশুনানি করতে হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নামক সংগঠনের খুলনা জেলা শাখার সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, ‘গ্রাহকদের মতামত ছাড়া ওয়াসা এভাবে পানির দাম বৃদ্ধি করতে পারে না। আয় বাড়ানোর জন্য পানির দাম না বাড়িয়ে ওয়াসার উচিত নিজেদের খরচ কমানো।’
ক্যাবের খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আজম ডেবিড বলেন, ‘পাঁচ দফা দাম বাড়ানো হলেও ওয়াসা কখনও গ্রাহকের মতামত নিয়েছে বলে আমার জানা নেই। এটা স্পষ্ট ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন।’
এ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘অন্যান্য শহরের তুলনায় খুলনা ওয়াসার পানির দাম কম। এই দাম দিয়ে কর্মকর্ত-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যায় না। এ জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতি বছরই এই ভর্তুকি কমছে।
‘সর্বশেষ পানির মূল্যবৃদ্ধি ও নিজস্ব আয় না বাড়ালে ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য ওয়াসার বোর্ড সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।’
পানি পান না হতদরিদ্ররা
খুলনা শহরের ৫ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বস্তি একালায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাসবাস। তবে তাদের পানির চাহিদা পূরণ করতে অনীহা ওয়াসার।
কেসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত বছর বস্তির একটি টিউবওয়েলের পাইপ ফেটে গিয়েছিল। প্রথমে ওয়াসার কর্মকর্তাদের কাছে যাই। তারা আশ্বাস দিয়েও কাজ করেনি। পরে আমি নিজে ওয়াসার এমডির কাছেও গেলাম, তিনি অভিযোগ শুনলেন, সমস্যার সমাধান করলেন না। একবার মেয়রকে দিয়েও তাকে বলিয়েছি, তবুও কাজ হয়নি। পরে নিজের টাকায় সেই টিউবওয়েল ঠিক করে দিছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াসার এমডি আমাকে বলেছেন ওয়াসা সেবা দেয় না, ব্যবসা করে। ওয়াসা নাকি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাদের এই ব্যবসার দরকার নেই। আমরা আগে সেবা চাই।’
কেসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সামছুউদ্দীন আহমেদ প্রিন্স বলেন, ‘প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে খুলনা ওয়াসা পানি সরবরাহে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু এতে পর্যাপ্ত সেবা মিলছে না। আমি কাউন্সিলর হয়েও আবেদন করে বাড়িতে পানির সংযোগ পাইনি। আমার বাড়ির দলিলসহ সব কাগজপত্র জমা দিয়েছি। তারা সেই করোনা কালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমাকে ঘোরাচ্ছেন। আজ দিব, কাল দিব এভাবেই দুই বছর চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজে সিটি করপোরেশনের পানি ব্যবস্থাপনার স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি। ওয়াসা যখন পানির লাইনের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছিল, তখন খুব আশায় ছিলাম, পানির সমস্যা লাঘব হবে। তাদের কাছ থেকে আমি নিজেই সেবা পাচ্ছি না, বস্তির মানুষ কীভাবে পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াসা মিটার বসিয়েছে। যাদের এক ইঞ্চি মোটা পাইপ দিয়ে পানির সংযোগ দেয়া হয়েছে, তাদের দেড় ইঞ্চি পাইপের বিল করে দিচ্ছে। কোথাও দেখা যায় পরিবারে তিনজন সদস্যের জন্য পানির বিল ২ হাজার টাকার বেশি হয়েছে। এমন অসংখ্য অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ‘বস্তি এলাকায় আমরা পাইপলাইনের মধ্যে পানি না দিলেও সেখানে টিউবওয়েল রয়েছে। সেখান থেকে বস্তিবাসীর পানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়াসা এখনও শহরের শতভাগ মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়নি। এ ছাড়া যেসব বাড়ির কেসিসির হোল্ডিং নম্বর নেই, তাদের আমরা পানির সংযোগ দিই না।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
২০২০ সালের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ময়ূর নদ হতে পারে খুলনা শহরের পানির চাহিদা পূরণের সেরা মাধ্যম।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ময়ূর নদটি খুলনার আলুতলা থেকে শুরু হয়ে শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে বিলপাবলা এলাকা পর্যন্ত বয়ে গেছে। সেখানে প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার জায়গা রয়েছে। খুলনা শহরে প্রতি বছর ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
এই গবেষণা দলের নেতৃত্বে ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলিপ কুমার দত্ত।
তিনি বলেন,‘এই নদটি সংস্কার করে বর্ষা মৌসুমে স্বাদু পানি ধরে রাখা যেতে পারে। সেই পানি দিয়ে শহরের মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো যাবে। এটা ওয়াসাকে বারবার বলা হলেও তারা কখন আমলে নেইনি।’
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘একসময়ে খুলনা শহরের মানুষের জন্য সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করত কেসিসি। তখন কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগের অভাব নেই। কী কাজে তারা ৫২ কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে যাবে? শহরের পাশের নদী থেকে পানি রিফাইন করলেই তো লবণ পানিকে মিষ্টি করা যায়। তাদের সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি পৌর এলাকার পুরাতন কলেজ ও পৌরসভা খেয়াঘাটের উন্মুক্ত ইজারায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী তরিকুল ইসলাম শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
উন্মুক্ত ইজারা স্থগিত করায় মাঝিমাল্লা সম্প্রদায়ের ইজারা পেতে আর কোনো বাধা থাকল না।
মাঝিমাল্লা বহুমুখী সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর শতকরা ১০ ভাগ মূল্য বৃদ্ধিতে এ সমিতি ইজারা নিয়ে ঘাট পরিচালনা করে আসছে। এ বছর উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে মাঝিমাল্লা বহুমুখী সমবায় সমিতি। পিটিশনের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের আদেশের অ্যাডভোকেট প্রত্যয়ন কপিসহ ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ঝালকাঠি পৌর মেয়র বরাবরে আবেদন করেন মাঝিমাল্লা সমিতির নেতারা। পরে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার।
রিটকারী আইনজীবী তরিকুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠির খেয়াঘাট সমূহের জন্য ঝালকাঠি পৌরসভা একটি উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী মাঝিমাল্লা (পাটনি) সম্প্রদায়ের পাওয়ার কথা। উন্মুক্ত ইজারাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়। পিটিশনের শুনানি শেষে আদালত উন্মুক্ত ইজারা স্থগিত করেছে।
তিনি আরও জানান, এখন থেকে প্রথমে মাঝিমাল্লা সমিতি ইজারা নেবে। যদি কোনো কারণে সমিতির পক্ষ থেকে ইজারা নিতে অস্বীকার বা অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে উন্মুক্ত ইজারা আহ্বান করতে পারবে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের মাধ্যমে মাঝিমাল্লা সম্প্রদায় তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেয়েছে।
পৌর সচিব শাহিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা শুধু আবেদিত দরপত্রসমূহ উন্মুক্ত করে প্রকাশ করছি। বাছাই করে গুছিয়ে রাখছি। আমরা এর বেশি কিছুই করতে পারব না।’
নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমদ্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝালকাঠির পুরাতন কলেজ ও পৌর খেয়াঘাটের ইজারা বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে। এ মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। দরপত্র আহ্বানের পরে টেক কমিটি আছে তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমদ্দার, পৌর সচিব শাহিন সুলতানাসহ পৌর কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ দুপুরে এসব ঘাট ইজারার দরপত্র বাক্স উন্মুক্ত করা হয়।
আরও পড়ুন:নাটোরের নলডাঙ্গায় এক স্কুলছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো হিমেল হোসেন (১৫) উপজেলার পিপরুল গ্রামের ফারুক সরদারের ছেলে। সে পাটুল-হাপানিয়া স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মো. মনোয়ারুজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হিমেলকে তার সহপাঠী ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর থেকে হিমেলের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পান তার স্বজনরা। পরে রাত হলেও বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন এবং বিষয়টি পুলিশকে জানান।
ওসি বলেন, পুলিশ হিমেলকে উদ্ধারে অভিযানে নামে। অভিযানে হিমেলের বন্ধু পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পার্থের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় হিমেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হিমেলের মাথায় আঘাত, গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মেহেদি, শিমুল ও সুজন নামে আরও তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী সীমান্তে পায়ুপথে স্বর্ণের বার পাচারের ঘটনায় একজনকে আটক করেছে খুলনা-২১ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।
মসজিদবাড়ী এলাকার বিজিবি চেকপোস্টের সামনে থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আটক করা হয়।
আটক হওয়া মনোর উদ্দিনের বাড়ি বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী গ্রামে।
খুলনা-২১ বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘খুলনা-২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পুটখালী ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে সীমান্তের মেইন পিলার ১৭ এর ৭ এস এর ১৬৮ আর পিলার হতে ৫০০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে মসজিদবাড়ী বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় গোপন অবস্থান করে।
‘স্বর্ণ পাচারকারী মনোর উদ্দিন একটি ইজিবাইকে করে স্বর্ণের চালানটি ভারতে পাচারের উদ্দেশে সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল। তখন মনোর উদ্দিনকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রথমে তার শরীর তল্লাশি করে কোনো স্বর্ণ পাওয়া যায়নি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে স্বীকার করে তার পায়ুপথে স্বর্ণের বারগুলো আছে।
‘এ সময় তাকে আটক করে বেনাপোল বাজারে রজনী ক্লিনিকে শরীর স্ক্যানিং করে পায়ুপথে ছয় পিস স্বর্ণের বারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারপর তার কাছ থেকে স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়, যার ওজন ৭০০ গ্রাম।’
খুলনা-২১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খুরশিদ আনোয়ার স্বর্ণসহ এক পাচারকারী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উদ্ধারকৃত স্বর্ণের চালানটি যশোর ট্রেজারিতে আছে। আটক ব্যক্তিকে বেনাপোল পোর্ট থানায় পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:আগামী জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করবে সরকার। সে জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেউ যেন প্রতারিত না হয় কিংবা কেউ যেন প্রতারণা না করতে পারে সে জন্য সরকার সব ব্যবস্থা নেবে। আগামী জুনের মধ্যেই ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শন করেছি। সেখানে খুব ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, তবে এ বছর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।’
এ সময় প্রতিমন্ত্রী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ও শেষ ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় আজ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা।
এ ধাপে কুমিল্লা জেলায় ৩২ হাজার ১৯৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে নারী ১৪ হাজার ৭৬৭ জন এবং পুরুষ ১৭ হাজার ৪৩২ জন।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বরুড়ায় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই, বোন ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
উপজেলার শালুকিয়া গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বুধবার সকালে নিজ বসতঘর থেকে শরিফ হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শরিফের ছোট ভাই আরিফ হোসেন, বড় বোন খুকি আক্তার ও ভগ্নিপতি নাছির উদ্দিন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর বুধবার নিহত শরীফের মা বরুড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, ‘শরীফ মাদকাসক্ত ছিল। কিছুদিন আগে শরীফ মাদকের টাকা যোগাড়ের জন্য ভাই আরিফের অটোরিকশা বিক্রি করে দেয়। মাদকের টাকার জন্য মাকেও মারধর করত সে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে শরিফের ছোট ভাই আরিফ ও তার বোন খুকি মিলে পরিকল্পনা করে শরীফকে পঙ্গু করে ঘরে রেখে দেবে। বাকি জীবন তাকে ঘরে বসিয়ে খাওয়াবে। পরিকল্পনা মোতাবেক ২৬ মার্চ রাত ১ টার দিকে পুকুরপাড়ে শরীফকে হাত পা বেঁধে পেটানো হয়। বাড়িতে এনে আরেক দফা পেটানো শেষে হাত পা বেঁধে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় শরীফ মারা যায়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল জানান, তথ্য প্রযুক্তিসহ নিজস্ব গোয়েন্দা ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাদের আদালতে প্রেরণ করলে সেখানে তারা ১৬৪ ধারায় খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজার শহরে বুধবার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভেতরে গ্রাহককে অজ্ঞান করে ৮১ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তানভীর হাবিব চৌধুরী রুমেল নামের ওই গ্রাহক মৌলভীবাজার মডেল থানায় অভিযোগটি করেন।
ব্যাংকের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা সাত মিনিটে ঘটনাটি ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘মৌলভীবাজারের শহরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসিতে বুধবার সকালে ১১টার দিকে প্রবাস থেকে আসা টাকা তুলতে যান ব্যবসায়ী তানভীর। দুই লাখ টাকা তুলে তানভীর এক হাজার টাকার নোট দেয়ার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। এ সময় ব্যাংক কর্মকর্তা এক হাজার টাকার বান্ডিল দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তাকে ৫০০ টাকা নোটের বান্ডেল প্রদান করেন।
‘তখন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রুমেলকে বলেন, তিনি এক হাজার টাকার বান্ডেল এক্সচেঞ্জ করবেন। তখন রুমেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি গুনতে থাকেন। টাকা হাতে নেয়ার পর রুমেল কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান অনুভব করেন। তখন ওই চক্র ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগকারী রুমেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির হাতে থাকা টাকার বান্ডেল আমাকে গুনতে দিয়ে আমাকে একটি চেয়ারে নিয়ে বসান। আমি টাকা হাতে নেয়ার পর নিস্তেজ অনুভব করি। সবকিছু আমার কাছে কিছু সময়ের মধ্যে এলোমেলো মনে হয়। প্রায় পাঁচ মিনিট পরে একটু স্বাভাবিক হলে গুনে দেখি, তারা আমার কাছ থেকে ৮১ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়।
‘পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, তারা ১১টা সাত মিনিটে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ওই চক্রের ছবি শনাক্ত করা হয়।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির মৌলভীবাজার শাখা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখলাম, ব্যাংকের একজন গ্ৰাহকের সঙ্গে কয়েকজন লোক গল্পগুজব করে উনার সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, উনার টাকা নিয়ে চলে গেছে। তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন।’
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি কে এম নজরুল বলেন, ‘একজন ব্যাংক গ্ৰাহক অভিযোগ করেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় নদীতে গোসল করতে নেমে বজ্রপাতে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার চর বাউশিয়া বড়কান্দি গ্রাম সংলগ্ন গোমতী নদীতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারানো শাহেদ (১৪) ওই গ্রামের মোশারফ মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলে গোমতী নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে যায় শাহেদ। ওই সময় হঠাৎ করে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতে মারা যায় সে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠালে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের হাসপাতালে শাহেদকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আজাদ রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি, নিহতের লাশ গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।’
নিহতের পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য