মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মধ্যে প্রথমটির জোগানের একমাত্র মাধ্যম কৃষি, কিন্তু জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকা বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে ১৩ কোটি এখনও ধুঁকছে খাদ্যের অভাবে।
দুই বছরের করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে চরম খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠে ৯ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপের প্রায় সব দেশ, চীন, কানাডাসহ সব রাষ্ট্রেই মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছেই। আরও বাড়বে বলে শঙ্কার কথা শোনাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা। দেশে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে।
২০২৩ সালে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ১৬ অক্টোবর রোববার পালন হচ্ছে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়; ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
বিশ্বব্যাপী সচেতনতা, ক্ষুধার মোকাবিলা এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করার সংকল্পকে সামনে রেখে প্রতি বছর দিনটি পালন হয়।
গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, আন্তর্জাতিক উন্নয়নের মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো; বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যস্ত হয়ে আছে বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।
কৃষিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান, দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর জন্ম নেয় জাতিসংঘের সংস্থাটি। লাতিন ভাষায় এর স্লোগান ‘ফিয়াত পানিস’ তথা ‘সবার জন্য রুটি’। বর্তমানে ১৯৮টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে পরিচালিত এফএও।
আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থা গঠনের ধারণাটি সর্বপ্রথম দেন আমেরিকান কৃষিবিদ ডেভিড লুবিন। ১৯৪৫ সালের ১৬ অক্টোবর কানাডার কুইবেক শহরে ‘আন্তর্জাতিক কৃষি ইনস্টিটিউট’ গঠন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংগঠনের ইতি ঘটে। পরে এটি খাদ্য ও কৃষি সংস্থা নামে আত্মপ্রকাশ করে।
গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের শেষ সময় থেকে এফএও জাতিসংঘের কাঠামোর মধ্যে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. প্যাল রোমানি এফএওর জন্মদিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটি (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে এবং বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে গুরুত্বের সঙ্গে পালন হয়ে আসছে।
১৯৮১ সালেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিটি দেশের সরকার ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে যুক্ত করার প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ উদযাপন শুরু হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, কৃষির উন্নতিতে মনোযোগ দেয়া, কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে উৎসাহদান, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা গ্রহণে উৎসাহদান, গ্রামীণ জনগণ, মূলত নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের অবদানে উৎসাহ দান এবং প্রযুক্তির সমৃদ্ধিকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে আধুনিক ও উন্নত কৃষি, প্রাণী, বনায়ন ও মৎস্য চাষে সহায়তা করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। তাই বিভিন্ন দেশে কৃষি ও খাদ্যের সঙ্গে জড়িত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এফএও বিশ্বের অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মিলে একসঙ্গে নানা প্রকল্প হাতে নিয়ে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দেয়, যাতে করে সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তার সুযোগ তৈরি হয়।
সংস্থাটির নিরলস প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী যে সাফল্যগুলো অর্জন হয়েছে, তার অন্যতম ৩০টিরও বেশি দেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে জনগণের জন্য খাদ্য লাভের অধিকারকে প্রধান মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি ও নিশ্চিতকরণ, সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কোডেক্স অ্যালিমেন্টারিয়াস তৈরি, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়ন, গবাদিপশুর প্লেগ নির্মূলকরণ, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা, খাদ্য ও কৃষিতে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক বিস্তৃত পরিসংখ্যানীয় ডেটাবেজ বজায় রাখা।
এ ছাড়া ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে গরিবের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে জাতিসংঘ প্রণীত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতাসহ সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর একটি।
সারা বিশ্বে ক্ষুধার সঙ্গে স্থুলতা ও অপুষ্টিজনিত সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এফএও প্রতিষ্ঠার এ দিনটিতে নতুন নতুন থিম নিয়ে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে, তবে এবার যেমন নাজুক বিশ্ব অর্থনীতি ও খাদ্য সংকটের দুঃসংবাদের মধ্যে দিবসটি পালন হচ্ছে, আগে তা কখনোই হয়নি।
বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের সংকট, মূল্যস্ফীতি, দীর্ঘ খরাও অপ্রতুল খাদ্য সরবরাহ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা। অবস্থাদৃষ্টে ধারণা করা যায়, বিশ্বের অর্থনীতি ক্রমেই সংকটের দিকে এগোচ্ছে। নিকট ভবিষ্যতে একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে অনেকে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। আবার গত অক্টোবর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, ২০২৩ সালে একটি মারাত্মক মন্দার মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে যেতে পারে ২ দশমিক ৭ শতাংশে।
‘পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরাও এ থেকে আলাদা নই, তবে এটাও বলে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। আমাদের সরকারি গুদামে এখনও ১৮ লাখ টনের মতো খাদ্য মজুত আছে। বেসরকারি পর্যায়েও প্রচুর খাদ্য মজুত আছে। চলতি আমন মৌসুমে ভালো ফলন হলে দেড়-দুই বছর সমস্যা হবে না। সমস্যা হচ্ছে দাম এবং আগামী দিনগুলোতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অসহায়-গরিব মানুষকে কম দামে খাবার পৌছে দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে যেহেতু জ্বালানি তেল, সারের দাম বাড়ায় কৃষি উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে, সে কারণে কৃষককে নগদ টাকা দিয়ে সহয়তা করতে হবে, যাতে তারা বেশি উৎপাদন করতে পারে।’
অতীতে দেশে কৃষককে সরকার নগদ টাকা দিয়ে সহায়তা করেছে বলে জানান জাহাঙ্গীর আলম।
রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২ উদযাপনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এ বছর বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়; ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় কৃষিই অন্যতম প্রধান নিয়ামক। কৃষি জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল সরবরাহের নিশ্চয়তা প্রদান করে। কৃষির গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্যস্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি কৃষির উন্নয়নে কৃষকদের মাঝে খাস জমি বিতরণ, ভর্তুকি মূল্যে সার, কীটনাশক, উন্নত বীজ, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের যুগোপযোগী নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ফসলের পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষ খাতেও ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
‘প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রভাবের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে আন্তঃসংযুক্ত হয়ে উঠছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ দরিদ্র ও খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষ তাদের জীবনযাত্রার জন্য কৃষি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভর করে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বর্তমানে মহামারি, সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খাদ্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিশ্ববাজারে রপ্তানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। একই সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
‘প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি, প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমি আশা করি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাকে টেকসই করতে ফসলের পুষ্টিসমৃদ্ধ নতুন নতুন জাত ও লাগসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং তা সম্প্রসারণে কৃষিবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব খাদ্য দিবসে দেয়া বাণীতে বলেন, “জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস- ২০২২ পালন হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়; ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’ বর্তমান সংকটাপূর্ণ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যথাযথ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
“সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে কৃষি ও পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গৃহীত কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ধারাবহিকতায় আমরা বিগত সাড়ে ১৩ বছরে কৃষিবান্ধব ও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে ‘রুপকল্প-২০৪১’ -এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, নিরাপদ খাদ্য আইন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০সহ উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘...বন্যা, খরা, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভাসমান চাষ, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন, ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন, পাটের জেনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন ও মেধাস্বত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। কৃষির উন্নয়নে আমরা কৃষকদের জন্য সার, বীজসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাস, কৃষকদের সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রধান, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগসহ তাদের নগদ সহায়তা প্রদান করছি। কৃষি, শিক্ষা-গবেষণা খাতে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে যার ধারাবাহিকতায় খোরপোশের কৃষি আজ উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের গৃহীত কৃষিবান্ধব নীতি ও কার্যক্রমে দানাদার খাদ্য, মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে। ধান, পাট, আম, পেয়ারা আলু প্রভৃতি ফসল ও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে। কৃষির উন্নয়নে এ সাফল্য সারা বিশ্বে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতসহ কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব ও আধুনিক প্যাকিং হাউজ। আমরা দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এতে কৃষিনির্ভর শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ ব্যাপক কর্মসংস্হান সৃষ্টি হবে।
‘রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এ সেতুর মাধ্যমে নদীবিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যসম্পদ আহরণ এবং সারা দেশে দ্রুত বাজারজাতকরণের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের জীবনমান আরও উন্নত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সরকারের পাশাপাশি সকলের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’
আরও পড়ুন:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকীকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ‘তোমার আলোয় উজ্জ্বল বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনায় টুকু বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধ, শহীদের সংখ্যা, সংবিধান ও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করে, তারা বাংলাদেশকে অস্বীকার করে।’
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন হবে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে লড়াই।
জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতির হাজার বছরের দর্শন ও সংস্কৃতিকে মথিত করে প্রমাণ করেছেন, এ দেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠী অসাম্প্রদায়িক।’
স্মার্ট বাঙালি আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে তার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে। নাশকতা ও হিংসাত্মক অপকর্মের মধ্য দিয়ে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক দর্শন ও সম্প্রীতির পরিবেশ ধ্বংসের অপচেষ্টা হয়েছে। তার ধারাবাহিকতা অর্ধশতক পেরিয়ে আজও মাঝেমধ্যে দেখা যায়।’
আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম তুলে ধরে আলোচনা করেন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন মতিন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. রশিদ আসকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিমান বড়ুয়া, ড. অসীম কুমার সরকার, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. আহমদ আবুল কালাম ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালযের গবেষক ড. চিন্ময় হাওলাদার।
সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবসে মেট্রো ট্রেনে চড়ার সুযোগ পেল ৭০ এতিম ও পথশিশু।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ শুক্রবার সকালে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুকে ট্রেনে চড়ার ব্যবস্থা করে।
বিভাগের উপসচিব আবু নাছের জানান, বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশুদিবসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মেট্রো ট্রেনে ভ্রমণ করানো হয়েছে। ট্রেনে চড়তে পেরে তারা বেশ আনন্দ পেয়েছে।
তিনি আরও জানান, সকালে আগারগাঁও স্টেশন থেকে উত্তরা (উত্তর) এবং উত্তরা (উত্তর) স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো ট্রেনে চড়ে শিশুরা। উত্তরা (উত্তর) স্টেশনে কাটা হয় কেক।
উপসচিব আরও জানান, ট্রেনে চড়া শিশুদের বিআরটিসির ছাদখোলা দোতলা বাসে করে জাতীয় সংসদ ভবন, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দেখানো হবে।
ছোটদের নোবেল প্রাইজখ্যাত ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান। এবার বিশ্বের লাখ লাখ শিশু ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার’ বিজয়ী নির্বাচনের জন্য বৈশ্বিক ভোটাভুটিতে অংশ নেবে।
সারা বিশ্বের শিশুদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী ইতোমধ্যে নৌকাস্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ানসহ শিশুদের কল্যাণে নিবেদিত আরও দুই কীর্তিমান ব্যক্তিকে ‘শিশু অধিকার নায়ক’ নির্বাচন করেছে। তারা হলেন- কানাডার সিন্ডি ব্ল্যাকস্টক ও ভিয়েতনামের থিচ নু মিন তু।
এবার লাখ লাখ শিশুর বৈশ্বিক ভোটাভুটির মাধ্যমে এই তিনজনের একজনকে সেরা নির্বাচনের পালা, যার হাতে উঠবে ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার (ডাব্লিউসিপি), ২০২৩’।
সুইডেনভিত্তিক এই পুরস্কারটিকে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে ‘ছোটদের নোবেল প্রাইজ’ আখ্যা দেয়া হয়।
এ পর্যন্ত যারা এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তারা গত প্রায় ১০০ বছর ধরে বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান তাদেরই একজন। গত সিকি শতাব্দী ধরে তিনি বাংলাদেশে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে ক্রমবর্ধমান বন্যা ও দারিদ্র্য সত্ত্বেও সব শিশু, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়ালেখা শেখার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন।
রেজোয়ান ও তার প্রতিষ্ঠান ‘সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা’ শিশুদের জন্য ২৬টি ভাসমান স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেগুলো দেশ-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছে রেজোয়ানের নৌকা স্কুল নামে। বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত নৌকায় ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি রয়েছে ভাসমান লাইব্রেরি ও স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক। কিশোরী-তরুণীদের জন্য রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান স্কুলের এই ধারণাটি বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে বাস্তবায়ন হয়েছে।
সিনডি গত ৩০ বছর ধরে আদিবাসী শিশুদের সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, ঘরে নিরাপদে বেড়ে ওঠা এবং নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করার অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করছেন।
আর বৌদ্ধ নান থিচ নু এতিম ও অসহায় পরিবারের শিশুদের রক্ষায় প্রায় ৪০ বছর ধরে সংগ্রাম করে চলেছেন।
২০০০ সাল থেকে এই পুরস্কারের মাধ্যমে বিশ্বের ৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু জেনে আসছে ‘শিশু অধিকার নায়ক’রা কীভাবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পরে এই শিশুরাই বৈশ্বিক ভোটাভুটিতে অংশ নিয়ে তিনজন শিশু অধিকার নায়কের মধ্য থেকে একজনকে বিশ্ব শিশু পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করে।
আগামী ৪ অক্টোবর সুইডেনের মেরিফ্রেডে গ্রিপশোলম প্রাসাদে এবারের ২০তম বিশ্ব শিশু পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মোহাম্মদ রেজোয়ানসহ তিনজন শিশু অধিকার নায়ককে সম্মাননা দেয়া হবে। অনুষ্ঠানের হোস্ট হিসেবে থাকবে ১২টি দেশের শিশুরা। পুরস্কার প্রদান করার কাজে সেখানে উপস্থিত থেকে শিশুদের সহযোগিতা করবেন সুইডেনের রানী সিলভিয়া।
এই পুরস্কারের অর্থমূল্য সুইডিশ মুদ্রায় ৫ লাখ ক্রোনা, যা প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি। এই অর্থ তিনজন শিশু অধিকার নায়ককে ভাগ করে দেয়া হবে, যা তাদের কাজে সহায়তা করবে। এভাবে এই অর্থ সেই ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের লাখ লাখ অসহায় শিশুর জীবনমান উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে।
মর্যাদাশীল এই পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে রয়েছেন মালালা ইউসুফজাই, প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলা ও ডেসমন্ড টুটু, রানী সিলভিয়াসহ সুইডেনের বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী। তাছাড়া এই ‘বিশ্ব শিশু পুরস্কার’ প্রোগ্রামে ১২০টি দেশের ৭৬ হাজার স্কুল ও ৮৪৯টি সংগঠনের সহযোগিতা রয়েছে।
বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ফারাহ জাবিন শাম্মীর বই ‘করোনাপঞ্জি’।
সোমবার বিকেলে মেলায় বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান।
বইটির মুখবন্ধও লিখেছেন ড. গোলাম রহমান। তিনি বলেন, করোনাকালীন সারাবিশ্বের ভয়াবহ যে সংকট এবং সেই সংকটকালে নতুন জীবনযাপন ব্যবস্থায় মানুষের যে বেঁচে থাকার তাগিদ, যে চাহিদা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়, মানুষ মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে যে সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এই বইতে লেখিকা তা প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন। এই বইটি একটা দীর্ঘ কর্মের ফসল। আমি এর বহুল প্রচার কামনা করি।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন করোনাপঞ্জির লেখক ফারাহ জাবিন শাম্মী, এনটিভি অনলাইনের সম্পাদক ফকরউদ্দিন জুয়েল, বইটির প্রকাশক আবু সাঈদ সুরুজসহ শুভাকাঙ্খীরা।
বইটিতে মূল্যবান মতামত রয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান এবং বিজ্ঞানী, লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহামের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাগিব হাসান। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন অঙ্কন শিল্পী মাসুক হেলাল। প্রকাশিত হয়েছে স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন থেকে।
অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানের হাতে ‘একুশে পদক-২০২৩’ তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হস্তান্তর শুরু করেন সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।
একুশে পদক প্রদান উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেন।
১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকারী ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে জাতি ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করে।
বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে একুশে পদকপ্রাপ্তদের দেয়া অর্থের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করা হয়।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সরকার নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য একুশে পদকের জন্য ১৯ বিশিষ্ট নাগরিক ও দুটি সংস্থার নাম ঘোষণা করে।
এ বছর ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে তিনজন, মুক্তিযুদ্ধে একজন, শিল্পকলায় আটজন (অভিনয়, সংগীত, আবৃত্তি, চারু ও চিত্রকলা), রাজনীতিতে দুজন, শিক্ষায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবায় এক ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকতা, গবেষণা এবং ভাষা ও সাহিত্যে একজন করে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হন।
ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের জন্য খালেদা মঞ্জুর-ই খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (মরণোত্তর) এবং হাজী মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়।
শিল্পকলা বিভাগে অভিনয় ক্যাটাগরিতে মাসুদ আলী খান ও শিমুল ইউসুফ এবং সংগীত বিভাগে মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আবদুল হাকিম ও ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর), আবৃত্তি বিভাগে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিল্পকলায় নওয়াজিশ আলী খান এবং চিত্রকলা বিভাগে কনক চাঁপা চাকমা পুরস্কার পাচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে পুরস্কার পাচ্ছেন মমতাজ উদ্দিন (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), গবেষণায় ডা. মো. আবদুল মজিদ, শিক্ষায় অধ্যাপক ডা. মাজহারুল ইসলাম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় সাইদুল হক, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর), রাজনীতিতে আখতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে ড. মনিরুজ্জামান পুরস্কার পাচ্ছেন।
শিক্ষা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং সমাজসেবায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এ পুরস্কার পাচ্ছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ‘একুশে পদক’ প্রবর্তন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ ও নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কার দেয়।
গত বছর ২৪ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মর্যাদাপূর্ণ এ পদক দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:বিশ্ব ভালোবাসার দিনে ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন জানালেন জীবনের প্রতি, মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট দিয়ে এ কথা জানান তিনি।
তসলিমা লিখেছেন, ‘আমার কাছে প্রতিটি দিনই ভালোবাসার দিন। আকাশ বাতাস ভালোবাসি, জল মাটি ভালোবাসি, বৃক্ষরাজি প্রাণীকুল ভালোবাসি। ভালোবাসি মানুষ। কালো সাদা হলুদ বাদামি মানুষ। ভালোবাসি নারী পুরুষ।’
তিনি লিখেছেন, ‘আমার কাছে প্রতিটি দিনই ভালোবাসার দিন। ভালোবাসি সততা আর সরলতা। ভালোবাসি স্বনির্ভরতা। সাহস আর সভ্যতা। আমার কাছে প্রতিটি দিনই ভালোবাসার দিন। ভালোবাসি জীবন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত।’
সুইডেনের পাসপোর্টধারী হিসেবে দিল্লিতে বসবাস করছেন তসলিমা। ১৯৯৪ সালে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে তখন আন্দোলনের মুখে পড়তে হয় তাকে।
সম্প্রতি ভারতে ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার তথ্য জানিয়ে ফেসবুকে টানা পোস্ট দেন এই লেখক। সেখানকার চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আনেন নানা অভিযোগ।
আরও পড়ুন:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে যে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল, ১০ দিন বাদে তার বার্ষিকী। এ সময়ে প্রাণ গেছে হাজারো সামরিক-বেসামরিক মানুষের। একটু নিরাপদে বাঁচার আশায় ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিদেশে গেছে ৮০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়। যুদ্ধ তবুও চলছে সমরের নিয়মে।
করোনাভাইরাস মহামারি আকারে এসে পৃথিবীকে উলট-পালট করে দিয়ে যখন একটু ক্ষান্ত দিয়েছিল, তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে এলো দৃশ্যত অন্তহীন এ যুদ্ধ। এ দুইয়ের প্রভাব ও সুনীতির অভাবে একে একে ঘায়েল হতে থাকে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। বাদ পড়েনি মোড়ল রাষ্ট্রগুলোও।
মহামারি ও যুদ্ধের মধ্যে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায় গত বছরের মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি হয়ে পড়ে ঋণখেলাপি।
এ অঞ্চলের আরেক দেশ পাকিস্তানের অবস্থাও সঙ্গিন। রিজার্ভ কমতে কমতে ৩০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সহায়তার অর্থ পেতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন রাষ্ট্রের কর্তারা।
প্রতিবেশীদের মতো রিজার্ভ ছাড়াও নানামাত্রিক সংকটে আমরা। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি পেলেও আমাদের ঘর আলোকিত করার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে; রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের মূল্য চড়া। মাছ, মাংস, তরিতরকারির দর বাড়ার প্রতিযোগিতা চলছে। শীতে কিছুটা কমে আসা লোডশেডিং গরমে ঘন ঘন হওয়ার শঙ্কাও আছে।
দুই মহাদেশ বিস্তৃত তুরস্ক ও যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রতিবেশী সিরিয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারির সর্বনাশা ভূমিকম্পে মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। জমে যাওয়া শীতে ভয়াবহ দুর্যোগে রাতারাতি ফকির হয়ে গেছেন অনেক ‘বাদশাহ’। আকস্মিক শূন্যতা সঙ্গী হয়েছে লাখ লাখ মানুষের।
চারিদিকে এত দুর্দশা আর হতাশার মধ্যে আনন্দের তীব্র সংকটে থাকা বাংলাদেশিদের কাছে নবযৌবনের বার্তা নিয়ে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। শুধু যোগ-বিয়োগের খেলাময় জীবনে এ যেন ক্ষণিকের বিরতি।
অফিস-বাসা-অফিসে নিয়মিত হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত আজ কিছু সময়ের জন্য থাকতে চাইবেন আত্মভোলা হয়ে; বর্ণিল জামা গায়ে উৎসবের রঙে রাঙাতে চাইবেন ক্রমশ বিবর্ণ হয়ে পড়া চিত্তকে। উচ্চবিত্তও পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইন’সকে জায়গা করে দেবেন রুটিনে।
নিম্নবিত্তের জীবনেও লাগবে ফাগুনের ঢেউ। তার ফেরি করা জিনিসে তৃপ্ত হবে বাকি দুই বিত্তের চিত্ত।
শীতে আড়াল হয়ে যাওয়া রূপের আগুন ফাগুনে ফিরে পাবে প্রকৃতি। পত্রময় বৃক্ষে দেখা যাবে নতুন পাতার বাহার। আপন রঙে ভুবন রাঙাবে ফুল গাছগুলো।
ফলদ গাছের মুকুলগুলো ধীরে ধীরে হতে থাকবে রসের আধার। পুষ্প, বৃক্ষের এই রূপের মুকুটে পালক যুক্ত করবে বর্ণিল পাখিরা। এককথায় দুর্যোগ আর দুর্ভাবনায় একাকার পৃথিবীকে ক্ষণিকের জন্য রূপ, রসে ভরিয়ে দেবে ফাল্গুন।
মৃত্যুর মিছিল আর পাশবিকতার উৎসবের মধ্যে যেমন বন্ধ থাকে না সন্তান জন্মদান, তেমনই দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও থেমে থাকে না বসন্তের জয়গান।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য