রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২৯ প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৫ ধারা অনুসারে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার।
ফলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে কেউ বেআইনি প্রবেশ করলে অনধিক সাত বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট অথবা অকার্যকর করা বা করার চেষ্টার শাস্তি হবে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।
এই ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণার ফলে দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য প্রকাশে সাংবাদিককেরা নতুন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়বেন- এমন উদ্বেগ জানাচ্ছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা।
বিষয়টি নিয়ে দুই ধরনের অবস্থান রয়েছে আইনজ্ঞদের মধ্যে। একটি অংশ বলছে, সরকারের এই গেজেট দুর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নতুন কোনো বাধা তৈরি করবে না। তবে অন্য অংশের আশঙ্কা, সরাসরি না হলেও এটি সংবাদকর্মীদের মনে পরোক্ষ ভীতির জন্ম দেবে।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের ‘কারণ নেই’ বলে দাবি করছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। তিনি বলছেন, সাইবার স্পেসে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নিরাপদ রাখা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্যই ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করা হয়েছে।
‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ কী?
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২(ছ) ধারায় ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’র সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (Critical Information Infrastructure)’ অর্থ সরকার ঘোষিত এমন কোনো বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল তথ্য পরিকাঠামো যা কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কোনো ইলেকট্রনিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চারণ বা সংরক্ষণ করে এবং যা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংকটাপন্ন হলে জননিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্য, জাতীয় নিরাপত্তা বা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বা সার্বভৌমত্বের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
আইনজ্ঞরা বলছেন, এই সংজ্ঞা অনুযায়ী অপরাধ বিবেচনায় নিতে হলে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষিত প্রতিষ্ঠানের বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল তথ্য পরিকাঠামোতে ‘বেআইনি প্রবেশ বা ক্ষতিসাধন’-এর ঘটনা ঘটতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ অবকাঠামো এর আওতাভুক্ত নয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-এর ২(থ) ধারায় ‘বেআইনি প্রবেশ’-এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘বেআইনি প্রবেশ’ অর্থ কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বা অনুমতির শর্ত লঙ্ঘন করে কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা ডিজিটাল তথ্যব্যবস্থায় প্রবেশ, বা প্রবেশের মাধ্যমে তথ্যব্যবস্থার কোনো তথ্য-উপাত্তের আদান-প্রদানে বাধা প্রদান বা এর প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত বা ব্যাহত করা বা বন্ধ করা, বা ওই তথ্য-উপাত্তের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন বা সংযোজন বা বিয়োজন করা অথবা কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বেআইনি প্রবেশ’ সংজ্ঞা অনুযায়ী, অপরাধের বিষয়টি সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল তথ্য পরিকাঠামোসংশ্লিষ্ট।
সাংবাদিকতায় বাধা কতটা
ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের অধীনে ২৯ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসায় এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বা অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশে বিশেষ কোনো বাধা তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এগুলো হলো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডেটাবেজ-সংক্রান্ত। ধরুন কেউ একজন এনআইডি ডেটাবেজে ঢুকে আপনার নাম বদলিয়ে দিল বা জন্মতারিখ বদলে দিল। অথবা কেউ ব্যাংকে ঢুকে ডেটাবেজ থেকে আমাদের ডাটা মুছে দিল, এটা কি ভালো হবে?
‘অথবা কেউ ব্যাংকের ডেটাবেজে ঢুকে আমার অ্যাকাউন্টের টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে দেখিয়ে দিল, এতে আপনি খুশি হলেও আমি কিন্তু হব না। এ জন্যই সরকার ২৯টি প্রতিষ্ঠানের বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে।’
ড. শাহদীন মালিক মনে করছেন, আইনের বিষয়গুলো যথেষ্ট পর্যালোচনা না করেই অনেকে ‘তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন’।
তিনি বলেন, ‘এই যে চার বছর ধরে ডিজিটাল আইন বলে অনেকে চিৎকার করছেন। অথচ কতজন সাংবাদিককে দেখাতে পারবেন যারা আইনটি ভালো করে পড়েছেন? চিলে কান নিয়ে গেছে শুনে অনেকেই দৌড়াচ্ছেন।’
সুপ্রিমকোর্টের আরেক আইনজীবী তানজীব উল আলমও মনে করছেন সরকারি গেজেটে সাংবাদিকদের উদ্বেগের বিশেষ কোনো কারণ নেই।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি এই তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের জন্য কোনো বাধা নেই। কারণ এখানে তথ্য সংগ্রহে কোনো বাধা প্রদান করা হয়নি। যেটা করা হচ্ছে সেটা হলো প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
‘এখানে যদি সেটি নাও থাকত তাহলেও ডিজিটাল নিরাপত্তার অন্য বিধানে বেআইনি প্রবেশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের ফলে এখন একটাই পার্থক্য হলো, বিষয়টি এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭ ধারায় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর ফলে সাজার মাত্রা বেশি হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছেন ব্যারিস্টার তানজীব।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি একটা গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন বলা যায়, সেটা হলো এসব প্রতিষ্ঠানের যেসব তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হয় তা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য পরিকাঠামোতে কেউ যদি অ্যাকসেস করে তাহলে তা ১৭ ধারার অধীনে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।’
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর আওতায় আরও প্রতিষ্ঠানের নাম আসা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তিনি।
ব্যারিস্টার তানজীব বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় বাদ পড়েছে, সেটা হলো মানুষের স্বাস্থ্যগত যে বিষয়গুলো আছে, সেটারও সুরক্ষা থাকার দরকার ছিল। তালিকায় কোনো সরকারি হাসপাতালের নাম আসেনি। তাছাড়া এখানে শুধু সরকারি ব্যাংকগুলোর কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি টেলিকম প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকও আনা দরকার ছিল। সব মিলিয়ে তালিকাটি অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে।’
তবে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার আশংকা এই প্রজ্ঞাপন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধতা বাড়াবে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো যে ২৯ প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণার কিছু নেই।
‘ধরুন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি ব্যাংকগুলোতে কত ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম হয় আমরা দেখেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনেক টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এটা নিয়ে তেমন কিছু বের করতে পারেননি। অথচ একই বিষয়ে ফিলিপাইনে কী হয়েছে সেটা কিন্তু সবাই দেখতে পেয়েছি, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। আর আমাদের দেশের ব্যাংকে কী হয়েছে তা জানা গেল না।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বলেন, ‘এমনিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণার আগেই কোনো রকম সাংবাদিকতার সুযোগ ছিল না। সেখানে এ রকম একটা ঘোষণা আসার পর তো সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে আর কেনো সাহস করবে না।’
আরও উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরুন এখন যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে, এটা তো একটা বড় সমস্যা। এখানে বড় কোনো দুর্নীতি থাকলে সেখানে অ্যাকসেস করতে গেলে তো আপনাকে তথ্য পরিকাঠামোয় ঢুকতে হচ্ছে, তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
‘এখন তথ্য পরিকাঠামো বলতে এই ওয়েবসাইট অ্যাকসেসকেও বোঝাবে, সেটি কিন্তু ঘোষণা বা আইনে পরিষ্কার করা নেই। এখন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও আপনাকে এই আইনের মধ্যে ফেলে মামলায় জড়ানো সম্ভব।’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বলেন, ‘এই আইনে (ডিজিটাল নিরাপত্তা) এত কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, কিন্তু আইনটাকে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করা হয়নি। এতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পরিকাঠামোর মধ্যে আনলে সেখানে তেমন কিছু বলার ছিল না। তবে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রাখা হয়েছে যেগুলোর প্রয়োজন ছিল না।’
‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ হিসেবে ঘোষণা করা ২৯টি প্রতিষ্ঠান হলো রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড, সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডেটা সেন্টার (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (নির্বাচন কমিশন সচিবালয়), সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক।
এছাড়া তালিকায় রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি বাংলাদেশ, রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির মনে করছেন, এই তালিকায় এমন প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে যেগুলো রাখার কোনো যুক্তি নেই।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ২৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সোনালী, রূপালী, অগ্রণীর মতো ব্যাংকগুলোতে জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গ হওয়ার কী আছে! তবে হ্যা মহামান্য রাষ্ট্রপতির দপ্তর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এনআইডি বা ডেটা সংরক্ষণ সেটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে সরকারি ব্যাংকগুলোকে কেন এর আওতায় আনা হলো তা বুঝতে পারছি না।’
শিশির মনির বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকতে পারে। তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি থাকতে পারে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। এগুলো সুরক্ষার বিধান থাকা উচিত।
‘তবে এখানে কথা হলো এই যে ২৯ প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হলো এর মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বা অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সুযোগ থাকতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অনিয়ম বা বেআইনি কাজ প্রকাশের সুযোগ না থাকলে সংবিধানের ২৯ ধারা অনুযায়ী স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।’
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের সুযোগ রাষ্ট্রকেই করে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পর্ক নেই, দাবি প্রতিমন্ত্রীর
সরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো’ ঘোষণা করে ২১ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ। আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করা হয় ২৬ সেপ্টেম্বর।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের কারণ নেই বলে দাবি করছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহ্মেদ পলক।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু অবকাঠামো আছে যেগুলো আইসিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এগুলো সাইবার হামলার শিকার হলে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বেশিসংখ্যক তথ্য ও অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হতে পারে।
‘এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আমরা এই ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে আইডেন্টিফাই করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার হবে, যাতে করে আমাদের যে ইনফরমেশন সিকিউরিটি ম্যানুয়াল আছে, তাতে হাই প্রায়োরিটি দিয়ে, আমরা এগুলোর দেখাশোনা করতে পারি। আবার প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নিয়মিত আইটি অডিট প্রস্তুতি ও যেসব সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন সেটা করতে পারবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার স্পেসে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নিরাপদ রাখা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। যেমন ধরুন সরকারের কোনো একটি ওয়েবসাইট আছে, সেখানে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের শুধু তথ্য আছে, সেটি হ্যাকড হলে আমরা যাতে এক ঘণ্টার মধ্যে সেটি রেস্টোর করতে পারি।
‘সাইবার ক্রিমিনালরা বাংলাদেশ ব্যাংক বা সিভিল এভিয়েশন বা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি হামলা চালায় বা তথ্য চুরি করতে পারে তাহলে ক্ষতির পরিমাণটা অনেক বেশি ও মারাত্মক হবে। এসব গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই আমি সাংবাদিকদের সামনে পুরো ব্যাখ্যাটি তুলে ধরব।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য