গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়ার পর ভুঁড়ি ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয় একজন পোলিং কর্মকর্তাকে। এরপর তিনি ভয়ে আর কিছু বলেননি। আর কেন্দ্র ছেড়ে বাইরে চলে আসেন।
কেন্দ্রের বাইরে সেই পোলিং অফিসার বীথি বেগমের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি জানান, তার কেন্দ্রে শুরুতে আওয়ামী লীগের নৌকার মার্কার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার এজেন্টও ছিলেন। কিন্তু পরে লাঙ্গলের এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়।
এরপর কোনো ভোটার এলে আঙ্গুলের ছাপে তার পরিচয় নিশ্চিত করার পর তার ভোট গোপন কক্ষে গিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
বীথি বলেন, ‘ভোট শুরুর আগে দুইজন নৌকার এজেন্ট আসল। তার পর লাঙলের এজেন্টও আসল। এর পর কয়েকজন এসে লাঙলের এজেন্টের পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এরপর কয়েকজন ভোটারের আঙুলের ছাপ দেয়ার পর তাদের ভোট জোর করে নৌকায় মারেন তারা।’
আপনি কিছু বলেননি কেন- এমন প্রশ্নে এই পোলিং অফিসার বলেন, “আমি তাদের কক্ষ থেকে বের হতে বললে তারা আমাকেও হুমকি দিয়ে বলে, ‘চুপচাপ বসে থাকেন; নইলে খবর আছে। আর একটাও কথা বললে, ভুঁড়ি ফেলে দেব।’ এ কথা শোনার পর আমি ভয়ে কক্ষ থেকে বাহিরে চলে আসি।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর একাধিক নির্বাচন কমিশনার গোপন কক্ষে অবস্থান নেয়া এই ব্যক্তিদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে বলেছেন, গোপন কক্ষের ডাকাত প্রতিরোধই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
কমিশন ব্যালটের চেয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নিতে আগ্রহী এ কারণে যে, এখানে আঙ্গুলের ছাপে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে। কারও পক্ষে জাল ভোট বা অন্যের ভোট দিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
তবে ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে ভোট পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে, যেন ভেতরে অননুমোদিত কেউ থাকতে না পারে।
গাইবান্ধা-৫ আসনে ১৪৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই স্থাপন করা হয় এক হাজারের বেশি ক্যামেরা। আর ঢাকা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণও করা হয়। এই পর্যবেক্ষণেই দেখা যায়, ‘গোপন কক্ষের ডাকাতরা’ ভোটারের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন।
এই অনিয়ম দেখে একের পর এক কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করতে থাকে নির্বাচন কমিশন। দুপুরের আগেই সংখ্যাটি গিয়ে ঠেকে ৫১তে। পরে আড়াইটার সময় সব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেয়ার কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সকাল থেকে নিউজবাংলা বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটারদের মধ্যে ভয়ের ছাপ দেখতে পেয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল অননুমোদিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি।
প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন করে ভোট দিতে আসেন।
তবে প্রায় কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। নৌকা মার্কার টিশাট পরে তারা কেন্দ্রের ভেতরেও অবাধ চলাচলও করেন।
কেন্দ্রের বাইরের রাস্তাতেও অবস্থা নেয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। তারা জাতীয় পার্টির কর্মীদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাঘাটার একটি কেন্দ্রে আদিপত্য বিস্তার করায় ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়। এর পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে প্রায় সব কেন্দ্রেই।
প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই এসব অনিয়মের ঘটনা ঘটে। তবে কেউ ব্যবস্থা নেননি।
কঞ্চিপাড়া এম ইউ একাডেমি কেন্দ্রের ইনচার্জ এএসআই অজয় রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে বলেন, 'এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি, কোনো জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেনি। কঠোর নিরাপত্তা জোরদার ছিল।'
তবে অনিয়মের অভিযোগে যেসব কেন্দ্রগুলোর ভোট প্রথমেই স্থগিত করা হয়, তার মধ্যে ছিল এই কেন্দ্রটি।
এই পুলিশ কর্মকর্তার মতোই ভোট বন্ধ করে দেয়া হয় এমন কেন্দ্রগুলোর অনিয়মের বিষয়ে স্বীকার করতে চান না নির্বাচন কর্মকর্তারা।
কঞ্চিপাড়া এম ইউ একাডেমি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাজল মিয়া বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছিলেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দুপুর পর্যন্ত ভোট নেয়া হয় সুষ্ঠুভাবে। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ ভোট নেয়া বন্ধ করতে নির্দেশ পাই।'
এই কেন্দ্রটিতে আওয়ামী লীগের লোকজন ও বহিরাগতরা আতিপত্য বিস্তার ও আঙুলের ছাপ নিয়ে ভোটারকে বের করে দিয়ে নৌকায় ভোট দেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রনজু।
দলদলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সামান্য ঝামেলা হয়েছিল। কয়েকজন লোক বুথে ঢুকে ভোট দেয়ার চেষ্টা করে। আমরা দ্রুত তা সমাধান করি। তার পর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোট বন্ধ করতে বলেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ অভিযোগ করে বলেন, 'একটি কেন্দ্রেও আমার এজেন্টে ঢুকতে দেয়নি। আপেল মার্কার ভোটারের আঙুলের ছাপ নেয়ার পর ভোট মারা হয় নৌকায়। এসব অভিযোগে আমি ভোট বর্জন করেছি।'
ভোটে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কেন পালন করা যায়নি, সে বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আর রির্টানিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি বক্তব্য নিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তার কাছে যেতে বলেন।
তার দেয়া সময় অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সে সময় জানানো হয়, তিনি সাঘাটা উপজেলায় গেছেন। আসলে পরে বক্তব্য দেবেন। এই প্রতিবেদন লেখার সময় তিনি কার্যালয়ে ফেরেননি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন দাবি করেছেন, ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি। নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিল করে দেয়ার পর নির্বাচনি এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো ঝামেলা নেই। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সব অভিযোগ মিথ্যা বরং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নৌকার এজেন্টদের তাড়িয়ে দেয়া হয়।’
কেন তাহলে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন এমন প্রশ্নে রিপন বলেন, ‘ভোট বন্ধের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার রয়েছে। তবে কেন বা কী অভিযোগে এমনটা হলো, তা আমার জানা নেই।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য