গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়ার পর ভুঁড়ি ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয় একজন পোলিং কর্মকর্তাকে। এরপর তিনি ভয়ে আর কিছু বলেননি। আর কেন্দ্র ছেড়ে বাইরে চলে আসেন।
কেন্দ্রের বাইরে সেই পোলিং অফিসার বীথি বেগমের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি জানান, তার কেন্দ্রে শুরুতে আওয়ামী লীগের নৌকার মার্কার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল মার্কার এজেন্টও ছিলেন। কিন্তু পরে লাঙ্গলের এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়।
এরপর কোনো ভোটার এলে আঙ্গুলের ছাপে তার পরিচয় নিশ্চিত করার পর তার ভোট গোপন কক্ষে গিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
বীথি বলেন, ‘ভোট শুরুর আগে দুইজন নৌকার এজেন্ট আসল। তার পর লাঙলের এজেন্টও আসল। এর পর কয়েকজন এসে লাঙলের এজেন্টের পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে তাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এরপর কয়েকজন ভোটারের আঙুলের ছাপ দেয়ার পর তাদের ভোট জোর করে নৌকায় মারেন তারা।’
আপনি কিছু বলেননি কেন- এমন প্রশ্নে এই পোলিং অফিসার বলেন, “আমি তাদের কক্ষ থেকে বের হতে বললে তারা আমাকেও হুমকি দিয়ে বলে, ‘চুপচাপ বসে থাকেন; নইলে খবর আছে। আর একটাও কথা বললে, ভুঁড়ি ফেলে দেব।’ এ কথা শোনার পর আমি ভয়ে কক্ষ থেকে বাহিরে চলে আসি।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর একাধিক নির্বাচন কমিশনার গোপন কক্ষে অবস্থান নেয়া এই ব্যক্তিদের ডাকাত আখ্যা দিয়ে বলেছেন, গোপন কক্ষের ডাকাত প্রতিরোধই তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
কমিশন ব্যালটের চেয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নিতে আগ্রহী এ কারণে যে, এখানে আঙ্গুলের ছাপে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল ভোট দেয়ার সুযোগ থাকে। কারও পক্ষে জাল ভোট বা অন্যের ভোট দিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
তবে ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে ভোট পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে, যেন ভেতরে অননুমোদিত কেউ থাকতে না পারে।
গাইবান্ধা-৫ আসনে ১৪৫টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই স্থাপন করা হয় এক হাজারের বেশি ক্যামেরা। আর ঢাকা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণও করা হয়। এই পর্যবেক্ষণেই দেখা যায়, ‘গোপন কক্ষের ডাকাতরা’ ভোটারের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন।
এই অনিয়ম দেখে একের পর এক কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করতে থাকে নির্বাচন কমিশন। দুপুরের আগেই সংখ্যাটি গিয়ে ঠেকে ৫১তে। পরে আড়াইটার সময় সব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে দেয়ার কথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সকাল থেকে নিউজবাংলা বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে ভোটারদের মধ্যে ভয়ের ছাপ দেখতে পেয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিল অননুমোদিত ব্যক্তিদের উপস্থিতি।
প্রায় সব কেন্দ্রেই ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন করে ভোট দিতে আসেন।
তবে প্রায় কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। নৌকা মার্কার টিশাট পরে তারা কেন্দ্রের ভেতরেও অবাধ চলাচলও করেন।
কেন্দ্রের বাইরের রাস্তাতেও অবস্থা নেয় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা। তারা জাতীয় পার্টির কর্মীদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাঘাটার একটি কেন্দ্রে আদিপত্য বিস্তার করায় ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়। এর পরেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে প্রায় সব কেন্দ্রেই।
প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে র্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই এসব অনিয়মের ঘটনা ঘটে। তবে কেউ ব্যবস্থা নেননি।
কঞ্চিপাড়া এম ইউ একাডেমি কেন্দ্রের ইনচার্জ এএসআই অজয় রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে বলেন, 'এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি, কোনো জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেনি। কঠোর নিরাপত্তা জোরদার ছিল।'
তবে অনিয়মের অভিযোগে যেসব কেন্দ্রগুলোর ভোট প্রথমেই স্থগিত করা হয়, তার মধ্যে ছিল এই কেন্দ্রটি।
এই পুলিশ কর্মকর্তার মতোই ভোট বন্ধ করে দেয়া হয় এমন কেন্দ্রগুলোর অনিয়মের বিষয়ে স্বীকার করতে চান না নির্বাচন কর্মকর্তারা।
কঞ্চিপাড়া এম ইউ একাডেমি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাজল মিয়া বলেন, 'সকাল ৮টা থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিচ্ছিলেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দুপুর পর্যন্ত ভোট নেয়া হয় সুষ্ঠুভাবে। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ ভোট নেয়া বন্ধ করতে নির্দেশ পাই।'
এই কেন্দ্রটিতে আওয়ামী লীগের লোকজন ও বহিরাগতরা আতিপত্য বিস্তার ও আঙুলের ছাপ নিয়ে ভোটারকে বের করে দিয়ে নৌকায় ভোট দেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রনজু।
দলদলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সামান্য ঝামেলা হয়েছিল। কয়েকজন লোক বুথে ঢুকে ভোট দেয়ার চেষ্টা করে। আমরা দ্রুত তা সমাধান করি। তার পর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোট বন্ধ করতে বলেন।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ অভিযোগ করে বলেন, 'একটি কেন্দ্রেও আমার এজেন্টে ঢুকতে দেয়নি। আপেল মার্কার ভোটারের আঙুলের ছাপ নেয়ার পর ভোট মারা হয় নৌকায়। এসব অভিযোগে আমি ভোট বর্জন করেছি।'
ভোটে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ কেন পালন করা যায়নি, সে বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে চাননি। আর রির্টানিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি বক্তব্য নিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তার কাছে যেতে বলেন।
তার দেয়া সময় অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সে সময় জানানো হয়, তিনি সাঘাটা উপজেলায় গেছেন। আসলে পরে বক্তব্য দেবেন। এই প্রতিবেদন লেখার সময় তিনি কার্যালয়ে ফেরেননি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন দাবি করেছেন, ভোটে কোনো অনিয়ম হয়নি। নির্বাচন কমিশন ভোট বাতিল করে দেয়ার পর নির্বাচনি এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো ঝামেলা নেই। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সব অভিযোগ মিথ্যা বরং বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে নৌকার এজেন্টদের তাড়িয়ে দেয়া হয়।’
কেন তাহলে ভোটগ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন এমন প্রশ্নে রিপন বলেন, ‘ভোট বন্ধের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার রয়েছে। তবে কেন বা কী অভিযোগে এমনটা হলো, তা আমার জানা নেই।’
আরও পড়ুন:ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
বৃহষ্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর রেল ভবনে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্যোগে এক বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে ধূমপান ও তামাকমুক্ত রেল পরিষেবা গড়ে তুলতে রেল স্টেশনে তামাক সচেতনতা ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য আরএনবি ও জিআরপি (পুলিশ) এবং রেলওয়ের ২২ কর্মকর্তা/কর্মচারীকে সম্মাননা পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে রেলওয়ে কর্মীদের উৎসাহিত করে দেশের সকল স্টেশন ও ট্রেনকে ধূমপান ও তামাকমুক্ত করার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন-
মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার, উপসচিব (বাজেট অধিশাখা), রেলপথ মন্ত্রণালয়; মোঃ জাকির হোসেন, পরিচালক ট্রাফিক (পরিবহণ), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আনসার আলী, উপ-পরিচালক (টিসি), বাংলাদেশ রেলওয়ে; গৌতম কুমার কুণ্ডু, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (লালমনিরহাট), বাংলাদেশ রেলওয়ে; ফারহান মাহমুদ, এডিসিও (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ রেলওয়ে; মোহাম্মদ আমিনুল হক, এসিও-১ (ঢাকা), বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশ রেলওয়েকে তামাকমুক্ত করার উদ্যোগ” শীর্ষক প্রকল্পের বেজলাইন ও এন্ডলাইন সার্ভের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও এর বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ আফজাল হোসেন। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা/কর্মচারীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার যাত্রীসেবার মানের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অনুষ্ঠানে তার বিস্তারিত আলোচনা করেন তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের অপব্যবহার রোধে ভূমিকা পালনকারী সাবেক ও বর্তমান সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা। তাঁরা রেলওয়ের প্রতিটি স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যাত্রী ও কর্মীদের মধ্যে ইতিবাচক আচরণ গড়ে তোলার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “রেলপথ জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। তাই ধূমপানমুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাবো না।”
অনুষ্ঠানে সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ধূমপান ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা পরিষদের সভা আজ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন।
দেশের শতকরা ৯০ ভাগ বিরোধের উৎস্য ভূমি। এটা কিন্তু খুব কমই প্রতিকার নিতে পারছি আমরা। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণেরও সচেতনতা প্রয়োজন। ফেনীতে অনুষ্ঠিত অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি ফেনী থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি, বাংলাদেশ এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার।
ফেনী জেলা প্রশাসন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো: এমদাদুল হক চৌধুরী, ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প এর প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মো: পারভেজ হাসান বিপিএএ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেব, সাংবাদিক আবু তাহের, ফেনী আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট নুরুল আমিন খান, ফেনী সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজিব তালুকদার, ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা নাসরিন কান্তা, ফেনী জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি আব্দুল হান্নান, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, বৃহত্তর নোয়াখালীর ভূমি বিষয়ক সার্চ অফিসার সরোয়ার উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফাহমিদা হক প্রমূখ।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জেলার ভূমি বিভাগ, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে রয়েছে, কিন্তু এই পদক্ষেপটি আমরা গত সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, গত সরকারের সময়ে প্রকাশিত জিডিপি, ব্যক্তিগত আয়, মাতৃস্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সূচকগুলো বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বাস্তবিক অর্থে,স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
উপদেষ্টা আজ বুধবার (১৩ আগষ্ট) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) কনফারেন্স রুমে নাগরিক উদ্যোগ ও পিপলস হেলথ মুভমেন্ট আয়োজিত "বাংলাদেশের ভবিষ্যত নির্ধারণী উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণ ও দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে সতর্ক পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন"- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরিসংখ্যান বহন করলেও তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে আমাদের দেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা গ্রহণের সময় আসবে, এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তা অনুযায়ী নিয়ম মেনে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে শুল্ক ও জিএসপি সুবিধার প্রভাব কোথায় বৃদ্ধি পাবে এবং কোথায় হ্রাস পাবে, তা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিদেশ থেকে স্বল্পমূল্যে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় গবাদিপশুর বাজারে প্রভাব পড়বে এবং লাখ লাখ খামারি, বিশেষ করে গরীব মহিলারা যারা গরু লালন-পালন করে উদ্যোক্তা হিসেবে অবদান রাখছেন, তাদের ক্ষতি হবে।
উপদেষ্টা বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে মাংস আমদানি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। কারণ, আমদানি করা মাংসের মাধ্যমে জুনোটিক রোগ প্রবেশের ঝুঁকি রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, সাগরের সি উইড ও কুচিয়া রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি হ্রাস করতে হবে এবং দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
এসময় আরো বক্তৃতা করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জেনেভা ভিত্তিক লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ও সিনিয়র রিসার্চার সানিয়া রিড স্মিথ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জাহেদ মাসুদ, অ্যাডভোকেট তাসলিমা জাহান প্রমুখ। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের কো-অর্ডিনেটর বারাকাত উল্লাহ মারুফ।
তথ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও সক্রিয় হয়ে অপতথ্য ও গুজবের বিরুদ্ধে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের নীতি, উন্নয়ন কর্মসূচি ও সাফল্যের প্রচারে তথ্য অধিদপ্তর প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই দায়িত্ব নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করতে হবে।
বুধবার তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘তথ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম অধিকতর দৃশ্যমান করার লক্ষ্যে’ আয়োজিত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর।
তথ্য সচিব বলেন, সরকার যেসব জনমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করছে, সেগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য অধিদপ্তরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা সরকারের বার্তা জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেন, তারাই প্রথম চালিকাশক্তি। এখন ডিজিটাল মাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা সময়ের দাবী।
বর্তমানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অপতথ্য ও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ করেন মাহবুবা ফারজানা। তিনি বলেন, অপতথ্যের বিরুদ্ধে আপনাদেরই দক্ষ শক্তি হিসেবে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ, সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত প্রচার করতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আপনারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, শিক্ষিত ও দক্ষ। অপতথ্য ছড়ানো গোষ্ঠী ছোট এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা অশিক্ষিত বা সরকারের কাজ সম্পর্কে অবগত নয়। সে তুলনায় আপনারা অনেক বেশি যোগ্য।
তথ্য সচিব বলেন, নিউজ ও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তনের দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে। এজন্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট, ছোট ভিডিও, লাইভ কভারেজ এবং সময়োপযোগী গল্প বলার কৌশল প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ।
তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে মাহবুবা ফারজানা বলেন, আপনারা ইয়াং স্টার। আপনারা অবশ্যই পারবেন। প্রচার-প্রচারণার মান উন্নয়ন করুন। লেখার মান, বলার মান উন্নত করুন। প্রতিটি সংবাদ যেন সরকারের সাফল্যের জীবন্ত চিত্র হয়।
তথ্য সচিব আরও বলেন, সংবাদ শুধু নয়, তথ্য হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি। সত্যনিষ্ঠ খবর প্রচার করতে হবে। তথ্যের মাধ্যমে আস্থা গড়ে তুলেই বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চাই।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ৬৩.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানি হবে বাংলাদেশ থেকে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এ ঘোষণা দেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫ এ বাংলাদেশ পণ্য খাতে ৫০.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭% এবং পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮% বেশী।
সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫০ বিলিয়নের বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৫.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.১৩% বেশী।
অর্থবছরে রপ্তানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অংশীজনদের মতামত, বিগত অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হার ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি পর্যালোচনাপূর্বক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ১৯ টাকা কমালো সরকার। এতে করে এখন থেকে প্রতিলিটার পামঅয়েল বিক্রি হবে ১৫০ ঢাকায়, যা আগে ছিল ১৬৯ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় স্থানীয় বাজারেও এই দাম সমন্বয় করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পামঅয়েলের নতুন দাম ঘোষণা করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের সরবরাহ ও চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে থাকে।সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে পামঅয়েলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কমিশনের সুপারিশে প্রতি লিটার খোলা পামঅয়েলের দাম ১৬৯ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভোক্তারা লিটারে ১৯ টাকা কমে পামওয়েল কিনতে পারবেন। তবে সয়াবিনতেল পূর্বের মতো লিটার ১৮৯ টাকা (বোতল) অপরিবর্তিত থাকবে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ভোজ্য তেলের বাজারে ৬০ ভাগ দখল হচ্ছে পাম অয়েলের। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম কমায় এই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সয়াবিনের মূল্য অপরিবর্তিত থাকায় স্থানীয় বাজারে দাম আগের মতই রয়েছে।
সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয়।
মন্তব্য