বঙ্গোপসাগরে এখনও কোনো লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এ মাসেই সাগর উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনামুর রহমান বলেন, ‘গ্লোবাল ফোরকাস্ট সেন্টার (জিএফএস) এই বার্তাটি দিয়েছে। বার্তাটি আমরা পেয়েছি। তারা বলছে ১৭ অক্টোবর একটি লঘুচাপ তৈরি হবে। পরে সেটি ঝড় হবে।
‘বাংলাদেশ ঠিক বলেনি, অন্ধ্রপ্রদেশ হয়ে পশ্চিম বাংলা এবং সুন্দরবনের কিছু অংশে এটি আঘাত হানতে পারে।’
তিনি বলেন,‘তারা বলছে, এটি আম্ফানের মতো সুপার সাইক্লোন তৈরি হতে পরে। আমাদের আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি, তারা এটি নজর রাখছে, তবে সে ধরনের কোনো সম্ভাবনা তারা এখন পর্যন্ত আমাদের জানায়নি।
‘তারা বলছে, এটি আরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো নিম্নচাপ, লঘুচাপ সৃষ্টি হয়নি। আমরা নজরদারিতে রেখেছি। প্রধানমন্ত্রীও এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন, নজরদারিতে রাখতে বলেছেন।’
দূর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নামকরণটা আগেই হয়ে থাকে। যদি এই অঞ্চলে ঝড় আসে তাহলে এটার নাম ‘সিত্রাং’ হবে। এখনও নামকরণ করা হয়নি। এটা থাইল্যান্ডের দেয়া নাম।
“প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন অ্যালার্ট থাকার জন্য। আমরা অ্যালার্ট আছি। আমদের আবহাওয়া দপ্তরের পাশাপাশি জাপান ও ভারতের আবহাওয়া দপ্তর যৌথভাবে কাজ করি। আমরা সিদ্ধান্তে আসলে আমাদের যে প্রস্তুতি সেগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেব। আজকের দিন পর্যন্ত কোনো নিম্নচাপ বা লঘুচাপের তথ্য আমরা পাইনি।”
আগাম তথ্য না থাকলেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি আছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মাঠ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক সবার কাছে আমাদের এ বার্তাটি পৌঁছে গেছে। তারা প্রস্তুত আছে। সাধারণত নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার পরে আমরা প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো করা শুরু করি।
‘নিম্নচাপ তৈরি হলেই আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের মাঠে নামিয়ে দেব। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংবাদটি পৌঁছে দেবে। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে সেটার মাত্রা বুঝে আমরা তাদের শেল্টারে নিয়ে যাব। এর আগে আমাদের কাজ হলো স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত করা এবং শেল্টার প্রস্তুত রাখা। শেল্টারে খাদ্য সহায়তার জন্য আমরা চাল, শুকনা খাবার, পানি এগুলো পৌঁছে দেব নগদ টাকাসহ।’
বঙ্গোপসাগরে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে সৃষ্ট লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এরপর সেটি সুপার সাইক্লোন হিসেবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২১০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এমন একটি পোস্ট ছড়িয়েছে ফেসবুকে।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, চলতি মাসে সাগরে লঘুচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না তা সুনির্দিষ্ট করে এখনও বলা সম্ভব নয়।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ রোববার বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফেসবুকে 'ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে একটি পোস্টে প্রথম সুপার সাইক্লোনের আঘাতের সম্ভাবনা জানান।
আরও পড়ুন: এ মাসের মাঝামাঝিতেই কি সুপার সাইক্লোন ‘সিত্রাং’?
ওই পোস্টের বরাতে দেশের মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেসব প্রতিবেদনের লিংকও নিজের ওয়ালে দিয়েছেন পলাশ। এরপর বিষয়টি নিয়ে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন তিনি। এগুলো শেয়ার করেছেন অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারী।
‘আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল’ হিসেবে পলাশ যে ওয়েবসাইটের তথ্য দিয়েছেন তার নাম ট্রপিকালটিডবিটস ডটকম। ড. লেভি কাওয়ান নামের একজন ‘স্বাধীন আবহাওয়াবিদ’ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ওয়েবসাইটটি পরিচালনা করছেন।
ওয়েবসাইটে ড. লেভি সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ২০০২ সাল থেকে ট্রপিক্যাল সাইক্লোন পর্যবেক্ষণ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আবহাওয়াবিদ্যা নিয়ে পিএইচডি করেছেন তিনি।
ওয়েবসাইটের ল্যান্ডিংপেজে বলা হয়েছে গত এক সপ্তাহে কোনো ব্লগ পোস্ট করা হয়নি। আটলান্টিক অঞ্চলে ট্রপিকাল সাইক্লোন সক্রিয় থাকার সময়ে সাধারণত নিয়মিত পোস্ট করা হয়।
তবে সাইটের ফোরকাস্ট মডেলস সেকশনে গিয়ে ‘সুপার সাইক্লোন সিত্রাং’ এর সম্ভাব্য গতিপথের অ্যানিমেশন দেখা গেছে।
এতে ২০ থেকে ২১ অক্টোবর সুপার সাইক্লোনটির উপকূলে আঘাতের সম্ভাবনা দেখানো হয়েছে।
ড. লেভি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ২০১২ সালে নিজের হোস্টেল কক্ষ থেকে ব্যক্তিগত ব্লগ হিসেবে সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেই লিখেছেন, তার সাইক্লোন পূর্বাভাস মডেল কোনো আনুষ্ঠানিক বা সরকারি সংস্থার পূর্বাভাস নয়। পুরো সাইটটি নিছক শখের বশে করা এবং ক্রাউডফান্ডিং-এ চলছে।
আমেরিকান টেকজায়ান্ট আইবিএম-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েদার চ্যানেলের ওয়েদার ডটকমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ঘূর্ণিঝড় তৈরির আগেই এভাবে পূর্বাভাস দেয়ার মডেলের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
এই নিবন্ধে বলা হয়, সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানের দেয়া আবহাওয়া পূর্বাভাসের মডেলের তথ্য এখন ইন্টারনেটে ব্যাপক সহজলভ্য। তার মানে এই নয় যে, এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় আগেই কোনো হারিকেনের উপকূলে আঘাতের পূর্বাভাস মডেল আপনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভালো ধারণা৷
এই নিবন্ধে এ ধরনের পূর্বাভাসের ত্রুটি তুলে ধরতে ড. লেভির ওয়েবসাইটেরই একটি বিভ্রান্তিকর মডেল জিআইএফ আকারে দেয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘নিচের অ্যানিমেশনটিতে আলাদা করে মডেলটি আটবার চালানোর ফল দেখা যাচ্ছে। এটি মূলত গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেমের (জিএফএস) মডেল যেটিকে ২২ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট সকাল পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা পরপর চালানো হয়েছে। প্রতিটি পূর্বাভাসই ৩১ আগস্ট রাত ২টার সময়কার।
এতে বলা হয়, ‘অ্যানিমেশনে গাঢ় লালকে ঘিরে থাকা কালো বৃত্তগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় যে মডেলটি ক্রমশ তৈরি হতে থাকা পূর্ণাঙ্গ উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়গুলো কোথায় তৈরি সেগুলো দেখাচ্ছে।’
তবে প্রতিবারই মডেলটি চালানোর সময় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থানে ভিন্নতা দেয়া যায়।
ওয়েদার ডটকম বলছে, প্রতিদিন সুপারকম্পিউটারে জটিল অ্যালগরিদমের মাধ্যমে একাধিকবার পূর্বাভাসের মডেলগুলো চালানো হয়। তাপমাত্রা, চাপ, বাতাসের গতি ও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বিচার করে অ্যালগরিদমে একেকবার একেক সূচকে পরিবর্তন ঘটে।
আরও পড়ুন:লুকানো নয়, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নির্বাচন উপহার দিতে চান উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই, রাতের অন্ধকারে গোপন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। আমরা চাই এমন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নির্বাচন, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভোটারদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভোট দিতে পারে। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের জন্যও আমরা ভোটের ব্যালটের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই ভোট দিতে পারেন না— এটা কেমন কথা ? তিনি ভোট সংগ্রহ করবেন, কিন্তু দিতে পারবেন না, এটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। এবার আমরা তাদেরও ভোট দেওয়ার সেই ব্যবস্থা করছি।’
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগের প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশাসন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সিইসি এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেন, একটি জিনিস ধরে রাখেন—আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। আমরা অতি স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করতে চাই না। বরং আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই, পার্টনার হিসেবে পাশে পেতে চাই। সিইসি হিসেবে যেমন আমার দায়িত্ব আছে, আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, এখানেও আপনাদেরও অবদান রাখতে হবে। আমি যেমন সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের সবার একটি দায়িত্ব আছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি এবং পাশে পেতে চাই।
এনসিপির শাপলা প্রতীক প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, শাপলা প্রতীক যেহেতু আমাদের নির্ধারিত তালিকায় নেই, তাই দিতে পারিনি। দেখেন, ২০২৪-এর আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যারা ছিল, তারাই কিন্তু এনসিপির নেতৃত্বে রয়েছেন। তারা গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন এটা আমি মনে করি না। কোনো অংশে তাদেরকে আমরা কম দেশপ্রেমিক ভাবতে চাই না। এনসিপিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২৪-এর অভ্যুত্থানে যোগদান করেছিল। সুতরাং তারাও দেশের মঙ্গল চান, গণতন্ত্র চান, ভালো চান। আমার বিশ্বাস, গণতন্ত্র উত্তরণের পথটা যাতে সুন্দর হয় সেরকম একটা পরিবেশের তারা সম্মতি দেবে।
চট্টগ্রামের ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আমরা চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস বদলাতে চাই। আগের মতো যেন না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমি এখানে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগের মতো হবে না। আমি সাংবাদিকদের পূর্ণ সহযোগিতা চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই, যাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সুন্দরভাবে নিজের ভোট দিতে পারে নিরাপদ পরিবেশে। যাতে নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হতে না পারে সেই লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে নাসির উদ্দিন বলেন, যখন আপনারা আমাদের সম্পর্কে প্রচার বা অপপ্রচার যা শুনবেন, দয়া করে আগে ফ্যাক্ট চেক করে নেবেন। আমরা এজন্য একটি ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করছি। যাতে তথ্য পেলে আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়। সত্য হলে প্রচার করবেন।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সমস্যা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই-এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি অংশ নেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। সভায় বিভাগের নির্বাচন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস
মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের চুক্তিতে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের শতকোটি টাকার ক্ষতি সাধনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক ছয় মন্ত্রী ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বাসসকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আজকে তাদের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড (সিএনএস)-কে একক উৎসভিত্তিক দরপত্রের মাধ্যমে টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পূর্বের বৈধ টেন্ডার বাতিল করে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই চুক্তিটি সম্পাদন করা হয়।
দুদক জানায়, সিএনএস লিমিটেডকে টাকার অংকে নয় বরং মোট আদায়কৃত টোলের ১৭.৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জে (ভ্যাট ও আইটি ব্যতীত) কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৪৮৯ কোটি টাকার বেশি বিল গ্রহণ করে। অথচ ২০১০-২০১৫ মেয়াদে একই সেতুতে যৌথভাবে এমবিইএল-এটিটি কোম্পানিকে টোল আদায়ের দায়িত্ব দিতে খরচ হয়েছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
২০২২-২০২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড একই ধরনের প্রযুক্তিতে তিন বছরের জন্য ৬৭ কোটি টাকায় চুক্তি পায়, যা পাঁচ বছরে রূপান্তর করলে প্রায় ১১২ কোটি টাকা হয়। ফলে সিএনএস লিমিটেডকে একক উৎসভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়ায় সরকারের ৩০৯ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক জলিল, উপ-সচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল, ইবনে আলম হাসান, মো. আফতাব হোসেন খান, মো. আব্দুস সালাম, এবং সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল।
অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের বা অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও আত্মসাৎমূলক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র: বাসস
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটরের তথ্য উদ্ধৃত করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কোনো পরিকল্পনা নেই।
শনিবার বাসসকে প্রেস সচিব বলেন, দআমরা আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে জানতে পেরেছি যে এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই।’
শতাধিক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে শফিকুল আলম বলেন, ‘এই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া গুজব।’
তিনি জনগণকে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের অপপ্রচার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যেই এসব অসৎ গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
প্রেস সচিব স্পষ্ট করে জানান, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) বিলুপ্ত করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্থাটির সীমান্তবর্তী ও বহিঃদেশীয় গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে সরকার সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।’ সূত্র: বাসস
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ১৫ অক্টোবরের (বুধবার) পরিবর্তে ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আগ্রহী জনগণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানটি ১৭ অক্টোবর, শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এর আগে কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে ১৫ অক্টোবর বুধবার বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধিদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সূত্র: বাসস
অন্তবর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ ফ ম খালিদ হোসাইন বলেছেন, আমরা সেইফ এক্সিট চাইনা, স্বাভাবিক এক্সিট নিয়ে নির্বাচন পরবর্তী এদেশেই থাকতে চাই। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন যথাসময়ে হবে এবং সুষ্ঠুভাবেই হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে আমরা চলে যাবো। তিনি বলেন, সেইফ একজিট বলতে আমি কিছু জানিনা। আমার কোন সেকেন্ড হোম নেই। এমনকি ঢাকায় আমার থাকার কোন বাড়ীও নেই। বর্তমানে আমি সরকারী বাড়ীতে থাকি আর চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় থাকি। আমি এই দেশেরই মানুষ,এই দেশ আমার আপনার, এখানেই আমি থাকব। তিনি আরো বলেছেন আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে থাকতে চাই এবং সম্প্রীতিই একমাত্র মৌলিক বিষয়। এটা নিয়েই পার্বত্য এলাকাসহ পুরো দেশে আমরা সকলে একসাথে থাকতে পারব বলে আমি আশাবাদি।
তিনি শনিবার রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সম্প্রীতি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড, আ ফ ম খালিদ হোসাইন আরো বলেন, ‘কাউকে ধর্মীয়, সামাজিক বা অন্য কোনোভাবে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমাদের সকলের মাঝে সম্প্রীতি থাকা দরকার, কারণ এটিই আসল।’ দেশের উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। আমি সকল সম্প্রদায়ের উপদেষ্টা। আমাদের দেশের সকল সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকল ধর্মের জন্য বরাদ্ধ আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ওলামা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাওলানা হাজী শরীয়ত উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি সমাবেশে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাদেক হোসেন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো: হাবিব উল্লাহ মারুফ, জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন প্রমুখ। সম্প্রীতির এসভায় জেলা উপজেলার মসজিদ, মন্দির, বিহারসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে আমরা আইনের শাসন কাকে বলে, সেটা দেখাতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ভোট গ্রহণকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারই হবেন সেই কেন্দ্রের ‘চিফ ইলেকশন অফিসার’। আইন অনুযায়ী সব ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগের দায়িত্ব তার ওপরই থাকবে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রামে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিইসি একথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্র স্থগিত করুন, আইন প্রয়োগ করুন। তবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
সিইসি নাসির উদ্দিন আরো বলেন, আজকের এই কর্মশালা থেকে আমাদের বিভিন্ন ক্যাপসগুলো উঠে আসবে। আমরা তো সব জানি না, তাই আমরা অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি। যারা এর আগে নির্বাচনে কাজ করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখছি। যেখানে যেখানে ঘাটতি আছে, আমরা সেই ঘাটতি পূরণ করে নেব। আমাদের এখানে খুব দ্রুত কাজ করতে হচ্ছে, অনেক চ্যালেঞ্জও আছে।
তিনি বলেন, যাই হোক, আমাদেরকে সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আমরা চাই, একটি এমপাওয়ার্ড (ক্ষমতাসম্পন্ন) প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার তৈরি করতে। আমরা একটি বিশ্বমানের ও সম্পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রিজাইডিং অফিসার গড়ে তুলতে চাই।
সিইসি আরো বলেন, আপনাদের হাতে আমরা সমস্ত ক্ষমতা দিচ্ছি। আপনি যদি সেই ক্ষমতা ব্যবহার না করেন, তাহলে সেটাকে আমরা অপরাধ হিসেবে গণ্য করব। আপনি যদি যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেন, সেটাও আমরা ভালোভাবে নেব না।
তিনি বলেন, ক্ষমতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার সঠিক ব্যবহারও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, যেই পর্যায়ের ক্ষমতা আপনাদের দেওয়া হয়েছে, আপনারা সেটি দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করবেন।
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্বাচন কমিশন আপনাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবে— এই নিশ্চয়তা আমি দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে বিভিন্ন পেশার মানুষ যাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে কখনো ভোটগ্রহণের অভিজ্ঞতা পাননি, তারাও দায়িত্ব পালনে দক্ষ হয়ে ওঠেন। ‘ওয়ান সাইজ ফিটস অল’ পদ্ধতিতে নয়, বরং অংশগ্রহণকারীদের পটভূমি বিবেচনায় প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা। প্রশাসনিক, আইনগত ও প্রযুক্তিগত নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়।
এজন্য তিনি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন কমিশন একটি ‘সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন সেল’ ও ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স ইউনিট’ গঠন করছে, যাতে দেশের যে কোনো স্থান থেকে দ্রুত যোগাযোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
তিনি বলেন, একটি সফল নির্বাচন আয়োজনের মূল চাবিকাঠি হলো সমন্বয়। প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ই নির্বাচনের সাফল্য নিশ্চিত করবে।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্য ও এআই-ভিত্তিক অপপ্রচার মোকাবিলায় একটি সেল গঠন করেছে। সূত্র: বাসস
এমেরিটাস অধ্যাপক, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনসাধারণের ঢল নামে।
তিনি গতকাল বিকেল ৫টায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মুষল বৃষ্টির মধ্যেও সরকারি কর্মকর্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা অনুরাগীরা তাঁর প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর মধ্যে ছিল— প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, কপিরাইট অফিস, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কালি ও কলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক পরিবার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব), শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশের জাসদ, বাসদ, ছায়ানট, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এবং বাংলা একাডেমি।
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর প্রাক্তন ছাত্র ও পরবর্তী সময়ের সহকর্মী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে স্মরণ করে বলেন, 'মনজুর শুধু মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসাধারণ শিক্ষকও। তাঁর পিতা ছিলেন শিক্ষক, আর সেই উত্তরাধিকার তিনি গৌরবের সঙ্গে বহন করেছেন। তাঁর সব ছাত্র-ছাত্রী তাঁকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন।'
তিনি আরও বলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাহিত্যিক হিসেবেও উজ্জ্বল ছিলেন, বিশেষত কথাসাহিত্যে। এজন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন।
কথাসাহিত্যের পাশাপাশি তিনি শিল্পসমালোচক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চারু ও নন্দনকলার গভীর জ্ঞান ছিল তাঁর। তিনি শেক্সপিয়ারের নাটক অনুবাদ এবং ইংরেজিতেও মৌলিক সাহিত্য রচনা করেছেন।
প্রফেসর চৌধুরী বলেন, 'তিনি ছিলেন বিনয়ী, প্রাণবন্ত ও ইতিবাচক মনোভাবের মানুষ। আমি কখনো তাঁকে দুঃখিত, হতাশ বা অসুস্থ দেখিনি। তাঁর মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। তবে শিক্ষক, লেখক, সমালোচক এবং সর্বোপরি একজন অসাধারণ মানুষ হিসেবে তাঁর কাজ আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।'
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক আছেন, কিন্তু অল্প কয়েকজনই পুরো জাতির কাছে বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রফেসর মনজুরুল ইসলাম তাঁদের একজন।'
তিনি বলেন, প্রফেসর ইসলাম শুধু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছাত্রদেরই গড়ে তোলেননি, তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে অসংখ্য তরুণ মনকেও অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর কথাসাহিত্য নাগরিক জীবনের সংকটকে এমনভাবে ধারণ করেছে, যা খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন।
'তাঁর প্রয়াণে আমরা জাতি হিসেবে এক অমূল্য সম্পদ হারালাম। তবে আমি বিশ্বাস করি, তিনি আজীবন আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন,’ বলেন বাসস-এর প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সূত্র: বাসস
মন্তব্য