রাজধানীর উত্তরায় কিংফিশার রেস্টুরেন্ট ও লেকভিউ বারে বৃহস্পতিবার অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। জব্দ করা হয় ৫০০ বোতল বিদেশি মদ ও প্রায় ছয় হাজার ক্যান বিয়ার। গ্রেপ্তার করা হয় ৩৫ জনকে।
অভিযানের পর ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই রেস্টুরেন্ট ও বারে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করে ডিবি পুলিশ, যার ১ নম্বর আসামি বার মালিক মোক্তার হোসেন। কে এই মোক্তার হোসেন তা জানতে অনুসন্ধানে নামে নিউজবাংলা। আর তাতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
জানা যায়, নেহায়েত দরিদ্র পরিবারের সন্তান গাজী মোক্তার হোসেন চাকরির খোঁজে ঢাকায় আসেন। একটি কোরিয়ান ক্লাবে চাকরির সুবাদে পরিচিত হন বার ব্যবসার সঙ্গে। একই সঙ্গে জড়িত হন গ্রামের স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে। আর সে সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়। হয়ে ওঠেন স্থানীয় বালু ব্যবসার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য।
রেস্টুরেন্ট ও বারে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এমন অভিযোগে উত্তরায় কিংফিশার রেস্টুরেন্ট ও লেকভিউ বারে চালানো অভিযানের ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় করা ডিবির মামলায় ১ নম্বর আসামি বার মালিক মোক্তার হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ঢাকায় মোক্তারের জন্য বড় ‘আশীর্বাদ’ হয়ে আসে সাবেক এক আমলার ছত্রছায়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই আমলার ছত্রছায়ায় এসে মোক্তার রাজধানীতে একে একে পাঁচটি বারের মালিক বনে যান। দেশের বার জগতে তিনি হয়ে ওঠেন বেপরোয়া।
মোক্তারের উত্থান
মোক্তারের বারে অভিযান চালানোর পর ডিবির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। তবে এই অভিযানকে যৌক্তিক ও বৈধ দাবি করা হয় ডিবির পক্ষ থেকে।
মোক্তারের বারে অনুমোদনবিহীন মদ ও অসামাজিক কাজ চলার অভিযোগ করেন ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তাৎপর্যের বিষয় হলো, মোক্তারের বিষয়ে এখন আর আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন ডিবির কোনো কর্মকর্তা। মোক্তারের উত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবির একাধিক কর্মকর্তা কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে নাম প্রাকাশ না করার শর্তে ডিবির এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, মুক্তার চাঁদপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মোক্তার প্রথমে ঢাকায় এসে একটি কোরিয়ান বারে চাকরি পান। এই চাকরির সুবাদে অবৈধভাবে মদ বেচাকেনার সঙ্গে জড়ান।
অবৈধভাবে মদের কারবার করে কিছু অর্থকড়ি কামিয়ে নেন মোক্তার। একপর্যায়ে স্থানীয় রাজনৈতিক যোগাযোগের সূত্র ধরে সাবেক এক মন্ত্রীর মাধ্যমে তার পরিচয় হয় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে। এরপর বিভিন্নজনকে ব্যবহার করে একে একে বাগিয়ে নেন বার পরিচালনার পাঁচটি লাইসেন্স। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
ক্ষমতার বলয় বাড়ানোর জন্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন মোক্তার হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
বিদেশে মোক্তারের সম্পদ রয়েছে কি না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কোনো তথ্য পাইনি। তবে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় থাকেন।‘
ডিবির দায়ের করা মামলায় মোক্তারকে ১ নম্বর আসামি করা হলেও তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত চলছে। একই সঙ্গে তাকে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন মনে করলে তাকে গ্রেপ্তার করবে।’
মোক্তারের বিষয়ে খোঁজ জানতে তার গ্রামের বাড়িতেও অনুসন্ধান চালায় নিউজবাংলা। জানা যায়, তার পুরো নাম গাজী মোক্তার হোসেন। চাঁদপুরের মতলব উপজেলার জহিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।
মোক্তারকে বাল্যকাল থেকে চেনেন এমন স্থানীয় দুজনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, মতলব উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের নিশানখোলা গ্রামে ছিল মোক্তারের বাবার ভিটা। তার জন্মও সেখানেই। অভাবতাড়িত পরিবারটি পরবর্তী সময়ে একই উপজেলার জহিরাবাদ ইউনিয়নে চলে আসে। এখনও সেখানেই বাস করছে পরিবারটি। সেখানে তাদের একটি টিনের বাড়ি আছে।
মোক্তারের বাবা পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। মোক্তার শুরু থেকেই স্থানীয় ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে চাকরির খোঁজে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এর বেশ কয়েক বছর পর গ্রামের সবাই জানতে পারেন ঢাকায় মোক্তারের একাধিক হোটেল ও বার আছে।
টাকার মালিক হওয়ার পর ১০ বছর ধরে মোক্তার আবার স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি বর্তমানে জহিরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
সবশেষ চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন।
রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি চাঁদপুরের কুখ্যাত বালু ব্যবসায়ী সেলিম খানের সিন্ডিকেটের সদস্য বনে যান এই মোক্তার।
তার পূর্বপরিচিত ওই দুই ব্যক্তি আরও জানান, মোক্তার স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একজন এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তার মাধ্যমেই বিভিন্ন রাজনীতিক ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে মোক্তারের পরিচয় এবং সম্পর্ক তৈরি হয়। মোক্তারের ছোট দুই ভাইয়ের একজন গাজী সেলিম জহিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আরেক ভাই গাজী সম্রাট চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য।
ঢাকায় মোক্তারের খুঁটির জোর সাবেক আমলা
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোক্তার প্রথম ঢাকায় আসেন ১৯৯৭ সালে। কোরিয়ান একটি বারে চাকরি করেন বেশ কিছুদিন। এ সময় তার মদের কারবার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হয়। অবৈধ মদ বিক্রি করে রাতারাতি কিছু টাকার মালিক বনে যান।
পরবর্তী সময়ে নিজে আবাসিক হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে মোক্তারের ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই অতিরিক্ত সচিবকে ধরেই হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি প্রথম বারের লাইসেন্স পান।
এরপর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভালো যোগাযোগ তৈরি হয় তার। একে একে আরও চারটি বারের লাইসেন্স পান মোক্তার। এরপর রাজনৈতিক প্রভাবে দেশের বার জগতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
নিজের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজ থাকলেও আড়ালে অনুমোদনহীন মদও বিক্রি করতেন নিয়মিত। এমনকি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোক্তারের বারগুলোর সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যা ছিল অন্য জায়গায়। সে একজন মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটিয়ে চলত। আমাদের সঙ্গেও এক ধরনের ড্যাম কেয়ার ভাব দেখাত।
‘মোক্তার অনেকবার বেয়াদবিও করেছে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কাগজ ঠিক থাকায় আর তার রাজনৈতিক প্রভাবের কথা ভেবে হয়তো কর্মকর্তারা তাকে কড়া জবাব দেননি। তবে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও বার ব্যবসায়ীদের অনেকেই তাকে পছন্দ করে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনৈতিক যোগাযোগ আর সাবেক ওই আমলার ছত্রছায়ায় আবাসিক হোটেল ব্যবসাসহ লেকভিউ রিক্রিয়েশন ক্লাব, উত্তরার লেকভিউ বার, গুলশানের কিংফিশার বার, নারায়ণগঞ্জে ব্লুফিয়ার নামে আরো একটি বারসহ উত্তরার কিংফিশার রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছেন মোক্তার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় গাজী মোক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৯৯৭ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আবাসিক হোটেলে ম্যানেজার পদে চাকরি নেন। এরপর পরিবার থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে আবাসিক হোটেল ব্যবসা শুরু করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কোরিয়া-বাংলাদেশ ক্লাবে যুক্ত হয়ে বারের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিজেই বারের অনুমোদন নেন। পরে শুরু করেন বার ব্যবসা। পরবর্তী সময়ে আরো চারটি বারের মালিক হন। এর মধ্যে হেফাজত নেতাদের বাধায় নারায়ণগঞ্জের বারটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি।
কোনো অবৈধ উপায়ে তার ব্যবসায় বিনিয়োগ হয়নি দাবি করে মোক্তার জানান, তার পরিবার সচ্ছল ছিল। বাবা অটোরিকশাচালক ছিলেন- এ তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। ব্যবসা শুরু করতে তার বাবাই তাকে টাকা দিয়েছিলেন।
লাইসেন্স নিয়ে বৈধভাবে এতদিন ব্যবসা করে আসছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার সম্মান ক্ষুণ্ন করতে এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে। আমি যদি অবৈধ মদের ব্যবসা করে থাকি তাহলে ডিবি সদস্যরা প্রমাণ করুক।
‘অনেক পত্রিকায় দেখলাম লিখেছে যে আমি পলাতক। অথচ আমি আজও আমার মায়ের মৃত্যুর তিন দিনের মিলাদ শেষ করলাম। আমি গ্রামের বাড়িতে আছি। মোবাইল ফোন সেটও খোলা রেখেছি। তারা যদি আমাকে ডাকে আমি নিজে গিয়ে হাজির হব৷’
বিদেশে সম্পদ আছে কি না এবং স্ত্রী-সন্তানরা কোথায় থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। আমার স্ত্রী-সন্তানরা সেখানেই আছে। আমার বিদেশে সম্পদ থাকলে আপনারা বের করে দেখান।’
একাধিক আমলা ও সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য এবং চাঁদপুরের কুখ্যাত বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য হওয়ার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেন এই বার ব্যবসায়ী।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বরখাস্ত হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জ্যেষ্ঠতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো কর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ-সংক্রান্ত দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪(২) বিধির বৈধতা নিয়ে ও চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে একই বছরের ১৩ মার্চ শরীফ রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক পদ থেকে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির আদেশ কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বেতন, সব সুবিধাসহ তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুদকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রুলের ওপর গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আদালত আজ রায়ের জন্য দিন রেখেছিলেন। রুল যথাযথ (অ্যাবসোলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হলো।
রায়ের সময় শরীফ উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে শরীফ উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দীন দোলন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দীন দোলন বলেন, শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। জ্যেষ্ঠতা ও সব সুযোগ-সুবিধাসহ তাঁকে চাকরিতে ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, রায়ের বিষয়টি দুদককে জানানো হবে। আপিল করবে কি না, সে বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
নিজেদের রাজকীয় জীবনযাপন আর মাদকের অর্থ যোগাতে অনলাইনে প্রতারণায় নামেন তারা। লোভনীয় প্রতারণার জাল ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে করেন শত শত পরিবারকে নিঃস্ব। অবশেষে ধরা পড়লেন নড়াইল জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। কেবল বিলাসী জীবনই না, তাদের রয়েছে অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মও।
সোমবার (৭ জুলাই) কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ও যাদবপুরে আটঘণ্টা অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ৬টি মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া আসামিরা হলেন, উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শুকুর আলী মুন্সির ছেলে মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যা (২৮), যাদবপুর গ্রামের শেখ বাহার উদ্দিনের দুই ছেলে নাজমুল হুসাইন (৩১) ও বাপ্পি হাসান অভি (২৭) এবং একই গ্রামের আফসার মীনার ছেলে রনি মীনা (৪১)।
ডিবি জানায়, অনলাইনে চমকপ্রদসব বিজ্ঞাপনের পরতে পরতে বুনে রাখা হয় প্রতারণার জাল। আর সেই জালে পা দিলেই নিঃস্ব হয় মানুষ। এমনই অনলাইন প্রতারক চক্রের সুচতুর সদস্যদের ধরতে অভিযানে নামে তারা।
দুটি মামলার সূত্র ধরে সোমবার দিনের আলো ফুটে ওঠার আগেই কালিয়া উপজেলার রঘুনাথপুরে হানা দেয় পুলিশ। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় মুসাব্বির মুন্সি ছিপাতুল্যাকে।
‘পরের গন্তব্য ছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম যাদবপুরে। নবনির্মিত একতলা ভবনে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দুই ভাই নাজমুল হুসাইন ও বাপ্পি হাসান অভি। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সব প্রমাণ সরিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন তাদের স্ত্রীরা। প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিমসহ গ্রেফতার করা হয় দুই ভাইকে। একই এলাকা থেকে রনি মীনা নামে আরও এক অনলাইন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়,’ জানিয়েছে ডিবি।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের আশায় অনলাইন প্রতারণাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে কালিয়া উপজেলার যাদবপুর, রঘুনাথপুর, চাঁদপুর, মহিষখোলাসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো পরিবার।
তারা আরও জানান, প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া অর্থ পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসী জীবন, মাদক ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মে খরচ করেন তারা।
প্রতারণার শিকার মাদারীপুরের নয়ন ঠিকাদার বলেন, ‘মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে ৩০০ টাকা দিই। পরে তাদের ফাঁদে পড়ে ৩ হাজার টাকার ফোনের জন্য ২১ হাজার টাকা দিছি। আমার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য জমানো টাকা ছিল ওটা। কান্নাকাটি করছি, অনেকবার কল দিছি তাদের; আমার ফোন, টাকা–কোনোটাই দেইনি তারা।’
আরেক ভুক্তভোগী আহাদ বলেন, ‘একটা মোটরসাইকেলের জন্য কয়েক দফায় ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তাদের দিছি। গাড়ি দেয়ার কথা বলে আমাকে এক মাস ধরে হয়রানি করছে। বাংলাদেশের আইনের বাইরেও যদি কোনো বিচার থাকে–প্রতারক চক্রের যেন কঠোর শাস্তি হয়।’
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পুলিশের অভিযানে অনলাইন প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও প্রতারণা সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রথমে ফেসবুক পেজে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়। পরে পেজগুলো বুস্টিংয়ের মাধ্যমে বেশি মানুষের কাছে তাদের বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোম্পানির এজেন্টদের মাধ্যমে চড়া দামে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম কিনে সেগুলো দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করে।
নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব অনলাইন প্রতারক চক্র নির্মূলের আশ্বাসের পাশাপাশি অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) দুই শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলাম।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। এর আগে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমসহ বর্তমান প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অবশেষে বিস্ফোরক মামলাসহ ছয়টি মামলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি মিললো দুই শিক্ষার্থী অনিক ও মোজাহিদুলের।
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে করা মামলায় এই দুই শিক্ষার্থীর ৩০ বছরের সাজা হয়েছিল। তবে ছাত-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার পর কারা অভ্যন্তরে তারা অনশন শুরু করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া শুরু করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু। মামলা পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেল।
সহপাঠীরা জানান, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি ওই দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১৭ দিন অজানা স্থানে রেখে তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি তাদের বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সেদিনই তাদের খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করে পুলিশ। সেই থেকে গত পাঁচ বছর তারা কারাবন্দি ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পরে তাদের মুক্তির দাবিতে খুবি ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের সময় অনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং রাফি পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাদের গ্রেপ্তারের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্যাম্পাসে একাধিকবার মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন সহপাঠী, শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আকতার জাহান রুকু বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় খালাস, দুটিতে জামিন এবং সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন চাওয়া হলে হাইকোর্ট সেটি মঞ্জুর করেন।’
তিনি আরও জানান, জামিন আদেশ আশুরার ছুটির কারণে কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হয়। সোমবার আদেশ পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম জানান, তাদের অনশনের বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরবর্তীতে কারাবন্দি দুই শিক্ষার্থীর জামিনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল সেলের পরিচালক এস এম শাকিল রহমানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
রাজধানীর বনানী থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ তাকে কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অপর দিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুল ইসলাম তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ২৫ আগস্ট জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ তারিখের মধ্যে কোন অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় জমা না দেওয়া হলে, তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
তবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসামি আনিসুল হক তার একটি আগ্নেয়াস্ত্র নিজে অথবা অন্য কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে বনানী থানায় বা অন্য কোন থানায় জমা দিয়েছেন কি-না, সে বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তিনি থানাকে অবহিতও করেন নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সে উল্লেখিত ঠিকানায় উপস্থিত হয়ে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গত ২৪ মে অস্ত্র আইনের ১৯(১) ধারায় আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বনানী থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. জানে আলম দুলাল।
উল্লেখ, গত ১৩ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নৌপথে পলায়নরত অবস্থায় রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয় জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আসামি পক্ষে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় গ্রেফতার চার আসামি হাজির রয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত প্রথম কোন শুনানি শুরু হওয়ায়, সে দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে, এই মামলার পলাতক চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেয়া হয়।
তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক আসামীরা হাজির না হওয়ায়, তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. কুতুবউদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয় এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো ইয়াকুব, শহীদ মো রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এ সব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আদালত অবমাননার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার অপসারণের পর এটাই প্রথম কোনো আদালতের রায়, যাতে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) আইসিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
একই মামলায় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মামলায় পলাতক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগের পূর্ব নজির না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন।
সেই অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘২২৬ জনকে মারার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—যা বিচারব্যবস্থার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে আদালত। পরে এই ঘটনায় আইসিটিতে মামলা করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
গত ৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি। কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি। সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন।
পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে গত ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়। সেদিনও তারা হাজির হননি। পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৯ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯ জুন এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করা হয় ২৫ জুন।
২৫ জুন মামলায় প্রস্তুতি নিতে অ্যামিকাস কিউরি মশিউজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এক সপ্তাহ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয় ২ জুলাই। আজ দুই আসামিকে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দিলেন ট্রাইব্যুনাল।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার দুদকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকার পরও এই মামলা পরিসমাপ্তি করা হয়। গেল জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গায়ের জোরেই পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দাবি, বেশকিছু দুর্নীতির তথ্য মিলেছে। এই মামলায় আসামির অব্যাহতির পেছনে তৎকালীন কমিশনের দায় আছে কি না তাও খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।
আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন তদন্তে কারো সংশ্লিষ্টতা মিললে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে করা মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘ একযুগ পর; গত জানুয়ারি মাসে সেই মামলা পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ে কমিটি।
জানা যায়, ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক। তবে ২০১৪ সালে অদৃশ্য কারণে মামলাটি পরিসমাপ্তি করে তৎকালীন বদিউজ্জামান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশন।
মন্তব্য