গ্রিড বিপর্যয়ের পর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে যখন তখন লোডশেডিংয়ে তীব্র দুর্ভোগের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের চার বিভাগের পরিস্থিতি বেশ ভালো।
রাজশাহী, রংপুর এবং খুলনা বিভাগে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। আর গত জুলাইয়ে সারা দেশে ঘটা করে লোডশেডিং শুরুর পরও উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে থাকা রবিশাল বিভাগের পরিস্থিতি অতটা খারাপ ছিল না।
গত ৪ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করে বিদ্যুৎহীন হয়ে যায় দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা। সেদিন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করার পর ঘণ্টা আটেক সময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটায় দেশের কোটি কোটি মানুষ।
সেদিন রাত ১০টার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও পরদিন থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিপর্যয়ের আগে যেখানে দিনে এক বা দুইবার বিদ্যুৎ যাচ্ছিল, সেখানে এই সংখ্যাটি চার বা পাঁচ বা ছয়ে গিয়ে ঠেকছে। কখনও আধাঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা, কখনও তার চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটছে সময়। এমনকি রাত আড়াইটা, সাড়ে তিনটা- এমন সময়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈদ্যুতিক পাখা। যাদের বাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থা করা নেই, তাদের ঘুম উধাও হয়ে যাচ্ছে লোডশেডিংয়ে।
তবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে শহর এলাকায় চাহিদার সমান সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। বরিশাল বিভাগ নিজেদের চাহিদার কয়েক গুণ বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে জাতীয় গ্রিডে।
খুলনা বিভাগের কোনো কোনো জেলার গ্রাহকরা জানিয়েছেন, গত দুই দিনে একবারের জন্যও বিদ্যুৎ যায়নি। কোথাও এক ঘণ্টা কোথাও এর চেয়ে কিছু কমবেশি সময় বিদ্যুৎহীন থাকছে এলাকা।
বিদ্যুতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দেশে লোডশেডিং এখন এক হাজার মেগাওয়াটের মতো, যা চাহিদার ৮ শতাংশের মতো। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিডভুক্ত জেলাগুলোতে এত বেশি লোডশেডিংয়ের একটি কারণ হতে পারে পশ্চিমাঞ্চল গ্রিডভুক্ত জেলাগুলোর পরিস্থিতি।
অবশ্য পাওয়ার সেলের পরিচালক (অপারেশনাল পারফরম্যান্স) মো. সাজিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে চারটি বিভাগে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম বা অন্য চার বিভাগে বেশি। দেশের সব জায়গায় সমহারে লোডশেডিং হচ্ছে, সেটাই আমরা জানি।’
উত্তরের শহরগুলোতে বিভাগে চাহিদার সমান সরবরাহ
ঠিক বিপরীত চিত্র রাজশাহী বিভাগে। গত সপ্তাহে এমনকি শুক্রবার বিভাগীয় শহরে বিদ্যুৎ গেছে যখন তখন। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক সরবরাহ।
রাজশাহী বিভাগে বিদ্যুতের যে চাহিদা তার সবটাই পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ।
জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতি দিন এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার ঘোষণা দেয়ার আগে থেকেই রাজশাহীতে বিদ্যুৎ যাচ্ছিল দুই থেকে তিনবার। আর ঘোষণার পর কোনো সময়সীমা আর থাকেনি।
আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দুটি মাস তীব্র গরমে এই বিভাগের মানুষের জীবন হয়ে উঠে দুর্বিষহ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতির দিকটিও সামনে আনতে থাকে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়া মানুষ। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী জানান, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলে বেশ কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে। চলতি মাসেও বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে চাহিদাও কমেছে ৩০ থেকে ৪০ মেগাওয়াট।
তিনি জানান, শনিবার রাত ১২টায় রাজশাহী বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩৪০ মেগাওয়াট আর রোববার দুপুর ১২টায় চাহিদা ছিল ৩৬৯ মেগাওয়াট। চাহিদার সবটুকুই সরবরাহ পাওয়া গেছে। এ কারণে কোনো লোডশেডিং ছিল না। তবে কোথাও কোথায় রক্ষণাবেক্ষণ বা কারিগরি দুর্বলতায় ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ গেছে।
সর্ব উত্তরের রংপুর বিভাগের চিত্রও একই। নেসকোর এই বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আশরাফুল আলম মণ্ডল বলেন, ‘শনিবার আমাদের প্রয়োজন ছিল ২৫৯ মেগাওয়াট, আমরা পুরোটাই পেয়েছি। রোববার সকাল ৮টা থেকে ২০৯ মেগাওয়াট প্রয়োজন ছিল, এখন পর্যন্ত তাই পাচ্ছি।’
রংপুর সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার পাশেই হোটেল ব্যবসা করেন বাবু রায়। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের তেমন কোনো সমস্যা নেই। দিনে কখনো এক বা দুবার গেলে দ্রুত চলে আসে। ঠিক একই অবস্থা রাতেও। কোনো কোনো রাতে একবার গেলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসে।’
নগরীর মাছুয়া টারী এলাকার বাসিন্দা নূর আলম বলেন, ‘এখন তেমন কোনো বিদ্যুতের সমস্যা নেই। আমাদের এই দিকে বিদ্যুৎ যায় না বলেই বলা চলে।’
একই কথা বলেন ধাপ কাকলী লেনের বাসিন্দা আজম আলী পারভেজ। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে তেমন কোনো সমস্যা নেই বিদ্যুতের।’
গ্রামের চিত্র ঢাকার মতোই
অবশ্য গ্রাম এলাকার পরিস্থিতি অতটা ভালো নয়। ঢাকা-চট্টগ্রামের শহরগুলোর মতো সেখানেও দিনে-রাতে চার থেকে পাঁচ বার বিদ্যুতের আসা-যাওয়া চলে।
গংগাচড়া মহিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক স্বপন বলেন, ‘দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ যায়। রাতেও এমন অত্যাচার।’
ওই এলাকার বাসিন্দা সাজু মিয়া বলেন, ‘কাকে কই কস্টের কথা। যেমন করি বিদ্যুৎ যায় তাতে তো ফ্রিজ টিভি টিকপের নয়। কারেন্ট আসতে আসতে ফিরে যায়। যেভাবে কারেন্ট যায় আর আইসে তাতে গরমের দিন হলে খবর আছিল। একনা গরম কম হওয়ায় সহ্য করা যাওছে। নইলে খবর আছিল আমাদের।’
রংপুরের উত্তম চাঁদের হাট এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, ‘কারেন্ট এই আছে এই নাই। সন্ধ্যায় তো ছৈলপৈল পড়তে পারে না। ধরেন, খাবার বসলাম অমনি কারেন্ট গেল। ওই যে গেল আর আসার নাম নাই। এমন করি চলোছে।’
পল্লী বিদ্যুতের জিএম, এজিএমসহ শীর্ষ অনেক কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত বরিশাল বিভাগ স্থানীয় চাহিদার চার গুণ জোগান দিচ্ছে জাতীয় গ্রিডে
বরিশাল বিভাগের দিনে একবার করে লোডশেডিং হচ্ছে, তবে সেটি খুব বেশি সময়ের জন্য না।
বরিশাল নগরী ছাড়াও জেলার অন্যান্য এলাকা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলাতেও বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি নেই।
বিদ্যুতের বিতরণ সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান পলাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বরিশাল বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৪০ মেগাওয়াটের মতো চাহিদা রয়েছে। এর চেয়ে চারগুণেরও বেশি উৎপাদন করে এখানকার পাঁচটি কেন্দ্র।’
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শেখর চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বরিশালে বিদ্যুতের যে উৎপাদন, তার চেয়ে চাহিদা অনেক কম। যে কারণে লোডশেডিং কম এই অঞ্চলে।’
বিভাগে পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২ হাজার ৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে পায়রায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, ভোলায় গ্যাসভিত্তিক দুটি কেন্দ্রে ৪৫০ মেগাওয়াট, ফার্নেস ওয়েলভিত্তিক পটুয়াখালীর ইউনাইটেড পায়রায় ১৫০ মেগাওয়াট ও বরিশালের রূপাতলির সামিটের কেন্দ্রে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাকি ১ হাজার ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
যে সংকটে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে, সে সমস্যা এই বিভাগে নেই। প্রধান কেন্দ্রটি কয়লাভিত্তিক আর ভোলার ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুটি কেন্দ্রে। সেখানে ডিজেলের কোনো কেন্দ্রও নেই।
বরিশাল নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে তেমন লোডশেডিং নেই। হলেও দিনে ১৫ মিনিটের বেশি হয় না। নির্বিঘ্নেই বিদ্যুৎ পাচ্ছি।
ঝালকাঠির নলছিটির বিনয়কাঠি এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া আলম বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো ঝামেলায় আমরা নেই আপাতত। দিনে দু-একবার লোডশেডিং হয়, কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবার চলেও আসে। রাজধানীর তুলনায় আমরা ভালো আছি।’
এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকোর পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি জানান, জেলা সদরে ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে তেমন কোনো লোডশেডিং নেই।’
তেমন সমস্যা নেই খুলনায়ও
বরিশালের পাশাপাশি খুলনা বিভাগে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড বা ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে জাতীয় গ্রিডে সমস্যার কারণে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিলেও খুলনা বিভাগে কোনো সমস্যা হয়নি। বিভাগের অধিকাংশ জেলায় নিয়মিত এক ঘণ্টার লোডশেডিং রয়েছে।’
তবে কোথাও কোথাও লোডশেডিং এক ঘণ্টার কম, কোথাও এক ঘণ্টার বেশি।
খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙা থানাধীন বয়রা ক্রস রোড এলাকা বশির হোসেন বলেন, ‘আমার বাসায় প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।’
নগরীর সদর থানাধীন মিস্ত্রিপাড়া এলাকার বাসিন্দা শান্ত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমার বাসায় প্রতিদিন দুইবার লোডশেডিং হচ্ছে। একবার দিনে ও একবার রাতে। এতে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বিনা বিদ্যুতে থাকতে হচ্ছে।’
বাগেরহাটের পৌরসভা এলাকার নাগের বাজারের চন্দন সাহা বলেন, ‘আমাদের এখানে বর্তমানে তেমন কোনো লোডশেডিং নেই। কখনও বিদ্যুৎ গেলে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে আমার চলে আসছে। আগে রেগুলার এক ঘণ্টা লোডশেডিং থাকত।’
যশোর সদর এলাকার বাসিন্দা নিয়াজ আলী বলেন, ‘কোনো দিন এক ঘণ্টার বেশি, আবার কোনোদিন ১০ বা ২০ মিনিট। এটাতে বর্তমানে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না।’
মেহরপুরের বানন্দি এলাকার সুইট ফ্লাওয়ারের মালিক মতিউর রহমান বলেন, ‘গত ২ দিনে আমাদের এলাকায় এক সেকেন্ডের জন্যেও লোডশেডিং হয়নি। এটা একটা ভালো দিক।’
ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘দৈনিক যে পরিমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা থাকে সেই পরিমাণ পাওয়া যায় না। তার জন্য কোথাও কম বা বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে এটার পরিমাণ খুবই কম।’
ওজোপাডিকো সূত্রে জানা গেছে, রোববার দক্ষিণের ২১ জেলায় দিনে বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ৫৫৫ মেগাওয়াট। রাতে ৫৩১। ফুল লোড পাওয়া যায়। ফলে সারা দিন কোনো লোডশেডিং হয়নি।
গত ৫ অক্টোবর থেকে এই ২১ জেলায় ফুল লোড পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানায় ওজোপাডিকো।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে বিগত ২০২৩ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: ইউএনবি
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস মঙ্গলবার বলেছে, ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে (এইচআরআর) থাকা দেশভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো আইনি সিদ্ধান্ত, দেশগুলোর ক্রমবিন্যাস বা তুলনা করে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট প্রকাশিত ২০২৩ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার পরিস্থিতির একটি বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ দলিল। প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
হিউম্যান রাইটস রিপোর্ট (এইচআরআর) সদ্য গত ২০২৩ সালে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলকে নিয়ে কাজ করেছে। মানবাধিকার প্রতিবেদনে পৃথকভাবে মানবাধিকার অবমাননা ও লঙ্ঘনের ওপর বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এটা সরকার, মানবাধিকারের সমর্থনে কাজ করা ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং নির্দিষ্ট দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের ব্যবহারযোগ্য একটি হাতিয়ার সরবরাহ করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন ও বিভিন্ন দেশের মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটে তাদের সহকর্মীদের বেশ কিছু মাসের কাজের প্রতিনিধিত্ব করে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করে এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে সঠিক তথ্যের প্রয়োজন হলে কংগ্রেস, এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ ও অভিবাসন আদালতকে সহায়তা করে।
মানবাধিকার প্রতিবেদন সুশীল সমাজের কাজ সম্পর্কেও জানায়, যার মাঝে অন্তর্ভুক্ত আছে মানবাধিকার রক্ষাকারীসহ বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা, স্কলার, অভিবাসন বিচারক, আশ্রয় কর্মকর্তা, বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সরকার।
অন্যান্য দেশের প্রতিবেদনের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি state.gov এ পাওয়া যাবে।
পাহাড়ে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ বিরোধী যৌথ অভিযানের কারণে বান্দরবানের থানচি, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, আমাদের পার্বত্য তিনটি উপজেলাতে বিশেষ করে বান্দরবানের থানচি, রুমা এবং রোয়াংছড়িতে যৌথ বাহিনীর অপারেশন চলমান রয়েছে। আপাতত এই তিনটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। পরে সুবিধাজনক সময়ে আয়োজনের চেষ্টা করব।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। থানচি, রোয়াংছড়িতে আগামী ৮ মে ও রুমায় ২১ মে ভোট হওয়ার কথা ছিল।
গত ২ এপ্রিল রুমার সোনালি ব্যাংকে ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুট করা হয়। এছাড়া ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করা হলেও পরে ছাড়া পান তিনি। পর দিন রুমায় সোনালি ও কৃষি ব্যাংকে দিন দুপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
এ সব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। এরপর যৌথ বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ২১ নারীসহ ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেএনএফ-এর সদস্য অভিযানে নিহতও হয়েছেন।
নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সভায় নির্বাচন কমিশন সদস্য, সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন দপ্তর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি এবং পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
সফররত কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মঙ্গলবার এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হয়।
পাঁচ চুক্তির মধ্যে রয়েছে- উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দ্বৈতকর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি এবং দু দেশের ব্যবসা সংগঠনের মধ্যে যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি।
পাঁচ সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে- কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, শ্রমশক্তির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং বন্দর ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
চুক্তিগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে কাতারের পক্ষে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি ও বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, দ্বিতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, তৃতীয়টিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, চতুর্থটিতে কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি ও বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং পঞ্চমটিতে কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি ও বাংলাদেশের ফেডারেশন অব চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম সই করেন।
সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে সব কটিতে কাতারের পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সই করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠক হয় শেখ হাসিনা ও শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পৌঁছালে মঙ্গলবার সকালে কাতারের আমিরকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কদিন ধরেই দাবদাহে পুড়ছে জনজীবন। গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। দিনভর তীব্র তাপপ্রবাহ, তবে রাতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। এই অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তি মিলছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ যেভাবে বয়ে যাচ্ছে, আরও কটা দিন এভাবেই তা চলবে। কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এতে গরম তেমন একটা কমবে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ ঢাকা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এতে বলা হয়, সিলেট বিভাগে দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংম পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়াও প্রায় একই থাকতে পারে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে সোমবার চলমান তাপপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশজুড়ের রেড অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তার আগেও গত ১৯ এপ্রিল তিন দিনের হিট অ্যালার্ট দেয়া হয়। অ্যালার্ট থাকবে ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত।
টানা কদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, পাবনা, বরিশালেও প্রচণ্ড গরম। সোমবার খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার।
এদিন রাত ৯টায় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে পোস্টে এ কথা জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার রাত ৯টায়। এ সময় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
পোস্টে জানানো হয়, বর্তমানে দেশব্যাপী চলছে তীব্র তাপদাহ। এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ বিভাগ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে জনজীবনে স্বস্তি বজায় রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর আগে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল রোববার ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট।
দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতির কারণে দেশে বিদ্যুতের প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। সূত্র: ইউএনবি
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বিকেল ৩টায় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ২২০ মেগাওয়াট। সে সময় দেশ জুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল ৯৯৬ মেগাওয়াট।
এদিন সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৫ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎহীনতায় গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। শেষ মুহূর্তের সেচ কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার তথ্যে দেখা যায়, দৈনিক তিন হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে দেশে এই সময়কালে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে তিন হাজার ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
এ অবস্থায় বেশ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে থাকে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দু’হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে এক হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:ট্রেনে ভ্রমণের ভাড়া বাড়ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে রেয়াত সুবিধা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে ৪ মে থেকে। ২৪ এপ্রিল থেকে বর্ধিত ভাড়ায় আগাম টিকিট বিক্রি করা হবে। তবে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়ছে না।
বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বাদে অন্যান্য রুটের যাত্রীরা ১০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে ভাড়ায় ২০ শতাংশ রেয়াত পান। ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে রেয়াত পান ২৫ শতাংশ। আর ৪০০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে ৩০ শতাংশ রেয়াত পান। রেলওয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দূরত্বভিত্তিক এই রেয়াত সুবিধা আর থাকছে না।
রেল ভ্রমণে রেয়াত প্রত্যাহারের প্রস্তাব গত মাসে অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে- এমন খবর প্রচার হয়। অবশ্য সে সময়ে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম ভাড়া বৃদ্ধির সেই খবরকে গুজব বলে দাবি করেন।
রেল সূত্র জানিয়েছে, ঈদযাত্রার কারণে এতদিন ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। ২৪ এপ্রিল থেকে বর্ধিত ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করা হবে। আর ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে ৪ মে থেকে।
যাত্রীর আবেদনে সংযোজন করা অতিরিক্ত বগির ভাড়াও বাড়বে। সংযোজিত বগির শোভন শ্রেণিতে ২০ শতাংশ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (স্নিগ্ধা) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ রিজার্ভেশন সার্ভিস চার্জ যোগ করা হবে ভাড়ার সঙ্গে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার। ১০০ কিলোমিটারের পর ২০ শতাংশ এবং ২৫০ কিলোমিটারের পর ২৫ শতাংশ ছাড় পান যাত্রীরা। এই রুটে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা। বিরতিহীন সোনার বাংলা ট্রেনে এই শ্রেণিতে ভাড়া ৪০৫ টাকা। কিন্তু রেয়াত সুবিধাবিহীন এবং বিরতিহীন পর্যটক এক্সপ্রেসে ভাড়া ৪৫০ টাকা। রেয়াত সুবিধা উঠে গেলে সাধারণ ট্রেনেও শোভন চেয়ার শ্রেণিতে ভাড়া হবে ৪০৫ টাকা।
লোকসান কমাতে এমন সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৯৯২ সালে ট্রেনের ভাড়ায় রেয়াত সুবিধা দেয়া শুরু করে। এবার লোকসান কমাতে সেই রেয়াত সুবিধা বাতিল করছে রেলওয়ে। আয় বাড়াতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রেলকে বাড়তি গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত এই পরিবহন সংস্থার উন্নয়নে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। বিপরীতে রেল আয় করেছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। ১ টাকা আয় করতে ২ টাকা ৭৮ পয়সা খরচ করছে রেলওয়ে। আয়-ব্যয়ের এই ব্যবধান কমিয়ে আনতেই ভাড়া বাড়াতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
সবশেষ ২০১২ ও ২০১৬ সালে ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়েছিল রেল। ২০১৬ সালে ভাড়া বাড়ানো হয় ৭ থেকে ৯ শতাংশ। নতুন নির্মিত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে পন্টেজ চার্জ যোগ করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রেল সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার এবং ভায়াডাক্ট বা রেল ফ্লাইওভারের প্রতি কিলোমিটারকে পাঁচ কিলোমিটার হিসাব করে বাণিজ্যিক দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়। এতে বাণিজ্যিক দূরত্ব বেড়েছে। রেয়াত সুবিধা না থাকায় বাণিজ্যিক দূরত্বের কারণে ভাড়া বাড়বে।
পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাড়ছে না
যাত্রী ভাড়ায় রেয়াত সুবিধা বাতিল হলেও পণ্য পরিবহনে তা অব্যাহত থাকবে। কারণ পরিবহন করার মতো পণ্যের সংকট রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের আগ্রহ ধরে রাখতে পণ্য পরিবহনে বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখা হবে।
মন্তব্য