‘দিনে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। রাতে ঘুমানোর আগে বিদ্যুৎ যাবেই যাবে’- বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে বলছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরের আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা পার্থ প্রতিম নন্দী।
গত ৪ অক্টোবর দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করার পর আট ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও এর পর দিন থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার যে সমস্যা, তা থেকে বাইরে নয় চট্টগ্রামও। ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের মতো এই বিভাগের জেলাগুলোতেও বিদ্যুতের যখন-তখন চলে যাওয়া এক সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে।
সরকারি হিসেবে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন হাজার মেগাওয়াটের কম। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রামে বিদ্যুতের যে যাওয়া আসা, তাতে এই হিসাব মেলানো কঠিন। তবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যাখ্যা। তবে কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে কিছুই বলা হচ্ছে না।
এর মধ্যে নিউজবাংলা খোঁজ নিয়ে জেনেছে পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড দিয়ে যে চার বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সেই রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বেশ ভালো। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বরিশাল অঞ্চলে।
চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলে ধরে পার্থ প্রতীম বলেন, ‘সকাল-দুপুরেও নিয়ম করে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে করে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাচ্চা বয়স্কদের কষ্ট হচ্ছে। সংকটটা কোথায় সেটা জানা জরুরি।’
তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, উৎপাদন কমায় সরাবারহ কমেছে। লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্ল্যাক আউটের সম্পর্ক নেই।
তবে শহরবাসী বলছে, জুলাই থেকে ঘটা করে শুরু হওয়া লোডশেডিং পরিস্থিতি উন্নতির মধ্যে গত মঙ্গলবারের সেই বিপর্যয়ের পর কেন উৎপাদন কমবে।
রোববার সারাদিন আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিল বিদ্যুৎ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিং হয়েছে পাঁচ থেকে সাতবার।
নগরীর অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা মো. ফাহিম হাসান বলেন, ‘আগে যে লোডশেডিংয়ের শিডিউল ছিল, তখনের চেয়েও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে এখন। ব্ল্যাক আউটের আগে মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল।’
‘দিনে তো লোডশেডিং হয়ই। মধ্যরাতের পরও একাধিকবার বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে’- বললেন এই এলাকার আরেক বাসিন্দা আব্দুল জলীল।
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতের কথাই যদি বলি, রাত সাড়ে ১১টার দিকে একবার গেছে বিদ্যুৎ। পরে সাড়ে ১২টা-১টার দিকে আসছে। কিন্তু এরমধ্যেই আড়াইটা ৩টার দিকে চলে গেছে। সকালেও গেছে কয়েকবার।’
জুলাইয়ের শুরুর দিকে সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যাহতের কথা জানানো হয়। তাই নিজস্ব জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সত্ত্বে ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের কথা বলা হয়।
গত ১৯ জুলাই এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তালিকা তৈরি করা হয়। পরে বলা হয় দুই ঘণ্টার কথা। তবে আদতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল খুব বেশি। শহরাঞ্চলেরর চেয়ে গ্রামের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
তবে সেপ্টেম্বর থেকে উন্নতি হতে থাকে পরিস্থিতির। কমতে থাকে লোডশেডিং। এর মধ্যে ৪ অক্টোবর বিদ্যুতের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড অচল হয়ে পড়লে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ ৩০টির বেশি জেলা ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
তবে গ্রিড বিপর্যয়ের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের সম্পর্ক নেই বলে দাবি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। সংস্থাটির বিতরণ-দক্ষিণাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়াতেই লোডশেডিং বেড়েছে। ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আগামীকাল কিছুটা ইম্প্রুভ হবে।’
আরও পড়ুন:মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে সে দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১৩ সদস্য।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিব) সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এক বার্তায় শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শুক্রবার নতুন করে আরও ১১ জন (জীম্বংখালী -৩ জন এবং হাতিমারাঝিরি-৮ জন) বিজিপি সদস্য আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ২৮৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বিজিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঢোকা বিজিপি সদস্যদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় হত্যা মামলার আসামি মোহন আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চকমহাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহন ওই গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহন তার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি মেরামতের জন্য পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া বাজারে যান। ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে বাগাতিপাড়ার চকমহাপুর এলাকায় পৌঁছালে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকা নেয়ার পথে ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, ২০২১ সালে ১১ জুলাই বাগাতিপাড়ার সীমান্তবর্তী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হরিপুরে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র জাকির হোসেন ছুরিকাঘাতে হত্যার শিকার হন। মোহন আলী ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
নিহতের মা হনুফা বেগম জানান, হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তার ছেলে মোহন কারাগারে ছিল। প্রায় চার মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়ে সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে আসার পর থেকেই মোহনকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন জাকিরের স্বজনরা।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাকিরের স্বজনরা মোহনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন হনুফা বেগম। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত মোহনের মামা আয়নাল আলী বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানায় শুক্রবার সকালে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
তীব্র তাপদাহ চলমান থাকা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাটিতে।
অতি তাপে অতিষ্ঠ চুয়াডাঙ্গার লোকজন। জেলার হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
প্রচণ্ড গরমে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্যানচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকি যে তাপ পড়চি মনে হচ্চি যেনে সূর্য মাতার ওপর চলি এসিচে। আজ যেনে সব থেকি বেশি তাপ পড়চি। গা দিয়ি তরতর করি ঘাম ঝরচি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আরও কয়েক দিন এমন দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে, তবে এখনই এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো সম্ভবনা নেই।’
হিট অ্যালার্ট
তীব্র দাবদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে হিট এলার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে।
সতর্কতার অংশ হিসেবে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকার একটি হাসপাতালে শুক্রবার সকালে শিবনারায়ণের মৃত্যু হয়, যার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ মোবাইল ফোনে ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করা শিবনারায়ণ দাশের বাবা সতীশচন্দ্র দাশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী ও তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ।
ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন শিবনারায়ণ দাশ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন তিনি।
ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৯৭০ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এ বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।
সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারির দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে নিয়ে আসেন। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হয় পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র।
শিবনারায়ণ দাশ পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকেন লাল বৃত্তের মাঝে। এমনি করে রচিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনীর পতাকা, যা কিছুদিন পর স্বীকৃত হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে।
নাটোরের লালপুরে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে র্যাব।
উপজেলার মোহরকয়া ভাঙ্গাপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তির নাম মিরন ইসলাম।
নাটোর র্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ মওদুদ বলেন, ‘মোহরকয়া গ্রামের বুদু মণ্ডলের চাকরিপ্রত্যাশী ছেলেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে মিরন ইসলাম কৌশলে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। তার কথায় বিশ্বাস করে শফিকুল বিভিন্ন সময়ে মিরনকে ১০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা ও অবশিষ্ট চার লাখ ৮০ হাজার টাকার জন্য তার ছেলের নামে নাটোরের লালপুরের উত্তরা ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাবের তিনটি ফাঁকা চেক প্রদান করেন।
‘এর পরে মিরন ভুক্তভোগীর ছেলের নামে একটি সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ভর্তির নিয়োগপত্র প্রদান করেন। ভুক্তভোগী সেই নিয়োগপত্র নিয়ে বুদু মন্ডল ছেলেসহ ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই চট্টগ্রামের বায়েজিদ ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে নিয়োগপত্রটি সেখানে একজন সেনাবাহিনীর সদস্যকে দেখান। তখন সেনাবাহিনীর সেই সদস্য জানান, নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এরপর বুদু মন্ডল বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত চেয়ে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী সময়ে র্যাবের কাছে অভিযোগ করলে র্যাব তাকে (মিরন) আটক করে।’
আটককৃত মিরন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি চাকরিপ্রত্যাশী যুবকদের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে কৌশলে প্রতারণা করি। আমি সেনাবাহিনীর মনোগ্রামসহ সিলমোহর ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করি। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে এইভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিই।’
মন্তব্য