জুলাই থেকে ঘটা করে শুরু হওয়া বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতি সেপ্টেম্বরের শেষে কিছুটা উন্নতির আভাস দিয়ে মঙ্গলবারের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর থেকে যাচ্ছে-তাই হয়ে গেছে। ভোর, সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত, গভীর রাত- বিদ্যুৎ যাচ্ছে যখন তখন। বিশেষ করে মধ্যরাতের লোডশেডিং বেশি বিরক্তির কারণ হচ্ছে।
এক যুগ ধরে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র, চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদনক্ষমতা, দেশের শতভাগ এলাকাকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার পর উৎসবের মধ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে।
জুলাইয়ে যখন সংবাদ সম্মেলন করে লোডশেডিংয়ের কথাটি জানানো হয়, তখন এতটা ভোগান্তির বিন্দুমাত্র আভাসও দেয়া হয়নি। বরং একেক এলাকায় সূচি করে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হলে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন কেন করতে হবে, এ নিয়েও কথা হচ্ছিল। তবে প্রথম দিন থেকেই দেখা যায়, এই সূচির বাইরেও বিদ্যুৎ যাচ্ছে যখন-তখন।
সে সময় তীব্র গরমে জীবন ছিল উষ্ঠাগত। ভরা বর্ষায় দেখা মিলছিল না বৃষ্টির। আবহাওয়ার এই উত্তপ্ত হয়ে উঠার মধ্যে বিদ্যুতের যাওয়া আশায় তীব্র ভোগান্তির মধ্যে প্রথমে জানানো হয় সেপ্টেম্বরের শেষে এবং পরে জানানো হয় অক্টোবর থেকে লোডশেডিং সহনীয় হয়ে আসবে।
আবহাওয়া এখন আর আগের মতো অতটা গরম নয়, ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে কিছুটা। লোডশেডিং কিছুটা কমেও আসছিল। এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করে বিদ্যুৎহীন হয়ে যায় দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা। সেদিন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড ফেল করার পর ঘণ্টা আটেক সময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় কাটায় দেশের কোটি কোটি মানুষ।
সেদিন রাত ১০টার মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হলেও পরদিন থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিপর্যয়ের আগে যেখানে দিনে এক বা দুইবার বিদ্যুৎ যাচ্ছিল, সেখানে এই সংখ্যাটি চার বা পাঁচ বা ছয়ে গিয়ে ঠেকছে। কখনও আধা ঘণ্টা, কখনও এক ঘণ্টা, কখনও তার চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটছে সময়। এমনকি রাত আড়াইটা, সাড়ে তিনটা-এমন সময়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈদ্যতিক পাখা। যাদের বাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থা করা নেই, তাদের ঘুম উধাও হয়ে যাচ্ছে লোডশেডিংয়ে।
এই পরিস্থিতি থেকে কবে উত্তরণ হবে, তা জানেন না বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, যদিও গত ৭ আগস্ট তিনি বলেছিলেন, অক্টোবর থেকে আবার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে।
চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাব মিলছে না
জ্বালানি সাশ্রয়ে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ২২ জুলাই দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চাহিদাও ছিল সমান।
এরপর দিনে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হতে থাকে। গরম কমে আসার পর ধীরে ধীরে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যবধানও কমতে থাকে।
গ্রিড বিপর্যয়ের আগের দিন ৩ অক্টোবর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৭৩৬ মেগাওয়াট, উৎপাদন ছিল ১১ হাজার ৮১২ মেগাওয়াট। অর্থাৎ লোডশেডিং ছিল ৯২৪ মেগাওয়াট।
কিন্তু গ্রিড বিপর্যয়ের পরদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৫৩৫ মেগাওয়াট আর উৎপাদন হয়েছিল ৮ হাজার ১০৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করতে হয় ছিল ৪ হাজার ৩৯৫ মেগাওয়াট।
সেখান থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উত্তরণর কথা জানা যায় বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে। গত শুক্রবার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৯৫০ মেগাওয়াট, আর উৎপাদন ১১ হাজার ৯০৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ৯৬৬ মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ব্যবধান বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আগের পর্যায়ে নেমে এসেছে।
তাহলে কেন বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা- এমন প্রশ্নে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রিড বিপর্যয়ের পর লোডশেডিং একটু বেড়েছে। কারণ, বিপর্যয়ের পরে ৯৯ শতাংশ ঠিক হলেও কিছু কিছু জায়গায় এখনও পাওয়ার প্ল্যান্ট স্টার্ট করতে সময় নেবে। এজন্য পরিস্থিতি আরও একটু খারাপ হয়ে গেছে।’
আবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সারা দেশে এক হাজার মেগাওয়াটের কম ঘাটতির তথ্য দিলেও রাজধানীতে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার একটি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ডিপিডিসির ব্যবস্থাপক বিকাশ দেওয়ান জানিয়েছেন, কেবল তাদের আওতাধীন এলাকাতেই ঘাটতি চার শ মেগাওয়াট।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যদি আজকের দিনের কথা বলি, তবে বন্ধের দিনে আমার চাহিদা ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু আমি পাচ্ছি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। তার মানে ৩৫০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট ঘাটতি রয়েছে।
‘১০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হলে আমরা বলে দিতাম এই এলাকায় লোডশেডিং হবে, ২০০ মেগাওয়াট হলেও আগে-ভাগে বলতে পারতাম কোথায় লোডশেডিং হবে। তবে যখন ৪০০ বা ৪৫০ মেগাওয়াট হয়, তখন কঠিন হয়ে যায়। কারণ, আমাদের বলা হয়েছে এমন লোড বেশি হলে আবার একটা ব্লাক আউট হয়ে যেতে পারে।’
ডিপিডিসে ছাড়াও ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে আরও একটি সংস্থা আছে, সেটি হলো ডেসকো। এর আওতাধীন এলাকাতেও লোডশেডিং পরিস্থিতি একই রকম। সেখানেও কয়েক শ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকে।
গ্রাহকেরা বিরক্ত
সংবাদকর্মী রাজু আহমেদ তার এলাকায় কতবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে তার একটি হিসাব রাখছেন। বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘গভীর রাত থেকে বিদ্যুৎ খালি আসি-যাই করতেছে। রাত তিনটায় গেল প্রথম, ছিল না একঘণ্টা। এরপর গেল সকাল নয়টায়, এলো ১০টা সাতে; তৃতীয়বার গেল ১টা তিনে, এলো ২টা পাঁচে; তারপর ২টা আট চল্লিশে, এলো ২টা ছাপ্পান্নতে; শেষবারের মতো গেল ৪টা পঁয়ত্রিশে, এলো ৫টা পাঁচে!
‘তাইলে দাঁড়ালো কি! …লোড শেডিং হইলো গিয়া ৩ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট। দিনের বাকি এখনো সাড়ে ৬ ঘণ্টা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থাকে না এক ঘণ্টা। তার মানে কী? এখন থেকে লোডশেডিং হইব ৫ ঘণ্টা!
‘গ্রামের অবস্থা কে জানে!’
শুক্রবার তার এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যুৎ গেছে পাঁচবার। সেদিন তিনি লেখেন, ‘পঞ্চমবারের মতো সন্ধ্যা ৭টায় তিনি আবারও গেলেন! আগে ছিলেন না ৩ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট!’
সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা মৌসুমী রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন কারেন্ট চলে গেছে প্রতিবার এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় থাকছে না। এটা আগে দিনে একবার হলেও এখন সেটা কয়েকবার হয়েছে।’
শান্তিনগরের বাসিন্দা রাফিকা আক্তার বলেন, ‘দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার বার যাচ্ছে। রাতে সন্ধ্যার পর একবার চলে যায়। মাঝে মধ্যরাতে না গেলেও গত দুই তিন ধরে মধ্যরাতেও বিদ্যুৎ থাকে না।’
নাখালপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে দিনে একবার করে যেত। এখন দুইবার করে যাচ্ছে। প্রতিবার গেলে কমপক্ষে এক ঘণ্টা পর আসে।’
বনশ্রীর বাসিন্দা ফাওমিদা আক্তার বলেন, ‘খুব সকালে কারেন্ট থাকে না। এরপর দুপুরের পর আবার লোডশেডিং থাকে। তবে মধ্যরাতে গেলে এক ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং থাকে। এটাই কষ্টকর বেশি।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এস এম আল মামুন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় চারবার লোডশেডিং হয়। আর প্রতিবার এক ঘণ্টা। দিনেই তিনবার থাকে না। রাতে তো একবার যাবেই।’
মিরপুরের আনসার ক্যাম্পের সিরাজুল আরেফীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করে যায় দিনের বেলা। একবার গেলে এক ঘণ্টা। রাত ১২টার পর একবার করে যাবেই। এটা সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর।’
উত্তরণ কবে, জানেন না বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
লোডশেডিংয়ের উন্নতি হবে হবে- এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্যাস নেই আমাদের, এজন্য কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে দিয়েছি। জানি না কবে ঠিক হবে। গ্যাস যখন পাব তখন ঠিক হবে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য