অস্থায়ী শ্রমিকদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এর বিরোধিতা করে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা।
তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি সরকারি সিদ্ধান্ত। সে অনুসারেই কাজ করা হবে। তবে অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে অভিজ্ঞদের কাজে নেয়ার জন্য আগামীতে যারা আউটসোর্সিংয়ের টেন্ডার পাবে তাদেরকে অনুরোধ করবে রেলওয়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিক পরিষদের নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রেলওয়ের বিভিন্ন সেক্টরে মোট ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত। আমাদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া। বেতন পরিশোধ না করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’
রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকরা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন পদে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করে তারা ৩৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক নিরাপত্তা নিরসনকল্পে সংশোধিত এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা অনুসারে আউটসোর্সিং খাত বাতিল করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রমিক মোহাম্মদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেলওয়েতে ব্রিটিশ আমল থেকেই অস্থায়ী শ্রমিক ছিল। যারা অস্থায়ীভাবে রেলওয়েতে কাজ করতো তাদেরকে শ্রম আইনের ভিত্তিতে স্থায়ীকরণ করে নেয়া হত। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না।
‘ধীরে ধীরে সব অস্থায়ী শ্রমিককে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। রেলের মহাপরিচালক বলেছেন-আগামী ডিসেম্বরের পর তোমাদের চাকরি নেই।’
পাকশী ডিভিশনের অস্থায়ী শ্রমিক রুবেল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ চার-পাঁচ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ রেলওয়েতে কাজ করছি। হঠাৎ করে আমাদের নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে যে আমাদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নেয়া হবে।
‘গত জুলাই থেকে আমাদের বেতন বন্ধ। এরপর চার মাস ধরে আমাদের বেতন হচ্ছে না। আমরা বিনা বেতনে কাজ করে যাচ্ছি। চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে যে ছয় মাস পরে আমাদের বেতন হবে।’
রেলওয়ের পাকশী বিভাগের অস্থায়ী শ্রমিক সৈকত ইসলাম বলেন, ‘আমরা রেলওয়ের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের বলেছেন- তোমাদের এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি আছে। এরপর তোমাদের বাদ দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। শুধু মৌখিকভাবে কনট্রোল অর্ডার দিয়েছে।’
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। বিষয়টি আমাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে এই পদ্ধতিতেই আগামীতে শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আসতে হবে।’
অস্থায়ী শ্রমিকদের সবাইকে বাদ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক বাদ যাবে। কারণ অস্থায়ী শ্রমিকের বিষয়টি সরকার আর মানছে না। সরকার থেকে নির্দেশনা এসেছে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ দিতে হবে।
‘স্বাভাবিকভাবেই সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ডিসেম্বর থেকে অস্থায়ী শ্রমিকরা বাদ পড়ে যাবে। তবে আউটসোর্সিংয়ে যারা টেন্ডার পাবে আমরা তাদের অনুরোধ করব অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যারা অভিজ্ঞ তাদের কাজে রাখার জন্য। তবে এটা অনুরোধ, কোনো শর্ত নয়। আউটসোর্সিংয়ে ওপেন টেন্ডার হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নেয়ার বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত জারি হয়েছে বেশ আগেই। তবে আমরা অর্থাৎ রেল মন্ত্রণালয় কিছুদিন সময় বাড়িয়ে নিয়েছি। কারণ অস্থায়ী শ্রমিকরা রেলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে।’
অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেলের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি অর্ডারের কারণে তাদের বেতন আটকে রয়েছে। তবে তারা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে তার প্রেস উইং।
গণমাধ্যমে বৃহস্পতিবার পাঠানো বিবৃতিতে প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, “‘রিসেট বাটন’ চাপার কথাটি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি, যা বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে এবং কোটি মানুষের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ করেছে, সেটি থেকে বের হয়ে এসে নতুনভাবে শুরু করার কথা বুঝিয়েছেন। তিনি কখনোই বাংলাদেশের গর্বিত ইতিহাস মুছে ফেলার কথা বলেননি।
“এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ যখন কোনো ডিভাইসে রিসেট বোতাম চাপেন, তখন তিনি নতুন করে ডিভাইসটি চালু করতে সফটওয়্যার সেট করেন। এতে হার্ডওয়্যার পরিবর্তন হয় না।”
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার। সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎকার ঘিরে কেউ কেউ ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে ঢাকায় আসার পর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে জনগণ নেতৃত্ব দিয়েছে। এটি আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। প্রথম স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ।’”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে অধ্যাপক ইউনূস মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই তিনি বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন সরকারকে রাজি করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী প্রচারণা শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করার জন্য তিনি বাংলাদেশ নিউজলেটার প্রকাশ করেছিলেন।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত রমজান মিয়া জীবন মারা গেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল ৩টার দিকে মারা যান তিনি।
জীবন পুরান ঢাকার বংশালের আলুবাজার এলাকায় স্যান্ডেল তৈরির একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
জীবনের চাচা মোহাম্মদ রোমান মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের পাঠানহাটি গ্রামে। ওর বাবার নাম মোহাম্মদ জামাল মিয়া। ভাই-ভাবী পরিবার নিয়ে মিরপুরের লালমাটি এলাকায় থাকেন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে জীবন ছিল তৃতীয়। ওর স্ত্রী সাহারা খাতুন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ওর বাবা নর্দা এলাকার একটি বাসার নিরাপত্তা কর্মী।’
তিনি আরও বলেন, ‘জীবন বিএনপির কর্মী ছিল। ৫ আগস্ট মিরপুরের বাসায় যাওয়ার কথা বলে সকালে সে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসে। পরে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের আশপাশের এলাকায় বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে আহত হয় সে। পরে লোকজন তাকে রিকশায় ঢামেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
‘সংবাদ শুনে ঢামেক হাসপাতালে এসে শতাধিক আহতের মাঝে ওকে খুঁজে পাই। শুনেছি ওর মাথায় গুলি লেগেছে। জ্ঞান ছিল না। আর জ্ঞান ফেরেনি। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে আজ ছেলেটা একেবারে চলেই গেল।’
সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের সরকারকে এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সোমবার (৭ অক্টোবর) ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কামাল হোসেন। এ ঘটনার পর বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সীমান্ত হত্যা ‘শূন্যের কোঠায়’ নামিয়ে আনতে বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার জোর দিয়ে বলেছে, সীমান্ত হত্যার এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ১৯৭৫ সালের যৌথ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকার শর্তাবলীর লঙ্ঘন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৩১ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। তাদের মধ্যে ২৮ জনই বিএসএফের গুলিতে নিহত হন।
এতে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ জন।
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করেছে সরকার। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই পরামর্শক কমিটির সদস্যরা হলেন- আব্দুল মজিদ, নাসিরউদ্দিন আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন (কর), ফরিদ উদ্দিন (শুল্ক) ও আমিনুর রহমান (কর)।
তাদের মধ্যে আব্দুল মজিদ ও নাসিরউদ্দিন আহমেদ এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান। বাকিরাও সাবেক কর্মকর্তা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- রাজস্ব নীতি, রাজস্ব প্রশাসন, এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ও আধুনিকায়ন, শুদ্ধাচার ও সুশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়ন, নাগরিক যোগাযোগ ও অংশীজন সম্পৃক্ততার কার্যক্রম ও রাজস্ব সংস্কার সংশ্লিষ্ট যেকোনো নীতিগত পরামর্শ দেবে এই কমিটি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় এনবিআর সংস্কারে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হলো।
এদিকে চলতি মাসে আয়কর আইন পর্যালোচনা করতে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ মামুন এই টাস্কফোর্সের প্রধান।
এই টাস্কফোর্স আয়কর আইন, বিধি ও প্রজ্ঞাপনগুলোর খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। রাজস্ব আদায়ে নতুন আইনের প্রভাবও বিশ্লেষণ করবে টাস্কফোর্স। এছাড়া বিভিন্ন খাতে যে কর ছাড় দেয়া হয়েছে, এসব কর ছাড়ের প্রভাব ও যৌক্তিকতা নিয়েও কাজ করবে তারা। করছাড়ের বিষয়ে সুপারিশ থাকবে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুন:ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মানসুর হোসেন বুধবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে মন্ত্রণালয়।
চেয়ারম্যানের পাশাপাশি পিএসসিতে চার সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন ড. নুরুল কাদির, ড. আমিনুল ইসলাম, ড. নাজমুল আমিন মজুমদার ও সুজায়েত উল্লাহ।
এর আগে মঙ্গলবার পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনসহ কমিশনের ১২ জন সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন। পিএসসির সচিবের কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও বুধবার দুপুর পর্যন্ত পিএসসির দুই সদস্য হেলালুদ্দিন আহমদ ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম পদত্যাগ করেননি।
এর আগে এ সপ্তাহের মধ্যেই পিএসসির সংস্কার দাবি করে চাকরির পরীক্ষাগুলো শুরু করার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
গত শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে এ দাবি করেন তিনি।
সারজিস বলেন, এ সপ্তাহের মধ্যে পিএসসি সংস্কার করে চাকরিপ্রত্যাশীদের চাকরির পরীক্ষাগুলো শুরু করতে হবে। যে তরুণ প্রজন্ম এই অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক, তাদের প্রায়োরিটির কথা ভুলে গেলে চলবে না।
আরও পড়ুন:রাজধানীর খাল দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রাজধানীর পানি ভবনে বুধবার আয়োজিত ‘ব্লু নেটওয়ার্ক অ্যারাউন্ড ঢাকা সিটি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘খাল দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় হতে হবে। ঢাকা শহরের খাল নিয়ে ভাবে এমন অনেক সংস্থা আছে। তাদেরকে এ কাজে যুক্ত করতে হবে।’
ঢাকা মহানগরের চারদিকে নদী, খালগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সৃষ্টি করতে অংশীজনদের নিয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা ওয়ার্কশপ করতে হবে। সেখানে ঢাকার প্রতিটি খালের বাস্তবচিত্র নিয়ে কথা হবে। কীভাবে খালগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হতে হবে। কোন খালগুলো ইমিডিয়েট উচ্ছেদ করতে হবে আর কোনগুলো একটু বেশি সময় নিয়ে করতে হবে, সেই বিষয়ে ওয়ার্কশপে আলোচনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সামনে আমাদের যুব দিবসে কয়েকটা খাল পরিষ্কার করা যেতে পারে, যেখানে যুবকরা সরাসরি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই প্রজন্ম পরিষ্কার কোনো খাল দেখেনি।
‘এখনও হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নাকে রুমাল দিয়ে যেতে হয়। যুব দিবসে যখন দেখবে যুবকেরা উদ্যোগ নিয়ে খাল পরিষ্কার করছে, তখন তারা বাকি খালগুলো পরিষ্কারেও উদ্যোগ নেবে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘আমাদের একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে কোন বছর আমরা কী কাজ করব, তবে এখানে দুই থেকে তিন বছরের বেশি সময় লাগার কথা না।
‘দুই-তিন মাস পর পর পরিষ্কার কার্যক্রমে নামতে হবে। আমাদের একটা খাল দূষণমুক্ত ও দখলমুক্ত করতে ৩৫০ কোটি টাকা নেয়া হয়, কিন্তু এত টাকা দিয়ে নতুন একটি খাল বানানো যায়। তাই এই কার্যক্রমে ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে।’
আরও পড়ুন:সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর তথা ১৪ বছরে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
ধানমন্ডিতে বুধবার টিআইবির কার্যালয়ে ‘সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণার ফল উপস্থাপনের সময় এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সওজের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়।
এতে দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এক হাজার কোটি টাকার নিচের প্রকল্পগুলো নির্বাচন করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সওজের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ প্রাপ্তি ও ঠিকাদারের বিল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘুষ, দুর্নীতির হার ১১ থেকে ১৪ শতাংশ এবং নির্মাণকাজে রাজনীতিক, ঠিকাদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ। দরপত্র লাইসেন্স ভাড়া, কার্যাদেশ বিক্রয়, সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুর্নীতির হার ২ থেকে ৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে একদিকে অতি উচ্চ ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্মিত সড়ক ও সেতুর মান খারাপ হচ্ছে ও টেকসই হচ্ছে না, যা প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনকে ব্যাহত করছে এবং জাতীয় সম্পদের বিপুল পরিমাণ অপব্যবহার ও অপচয় হচ্ছে।’
তিনি বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক খাতে রাজনীতিবিদ, সংশ্লিষ্ট আমলা ও ঠিকাদারের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রমের নীতি নির্ধারণ, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে করায়ত্ত করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে আইনের লঙ্ঘন ও অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সুশাসনের সব সূচকে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশের মাধ্যমে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে এবং কিছু দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অবাধ সুযোগ তৈরি করা হয়েছে।
টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন সভায় দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তাব উত্থাপন এবং গোপনে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে সওজের কোনো কোনো কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কর্মচারীকে দুই থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়। প্রকল্প প্রণয়নের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে অতিরিক্ত প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলন। এ ক্ষেত্রে কখনও কখনও প্রাক্কলিত বাজেটের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য