আলোচিত মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পেছনে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের জয়নাল খান। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই রহিমাকে উদ্ধারে সক্ষম হয় দৌলতপুর থানা পুলিশের একটি দল।
এর মাধ্যমে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা কথিত অপহরণের অভিযোগের সুরাহা হয়েছে। পুলিশ বলছে, স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা। তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানও এখন বলছেন, মায়ের অপহরণের যে অভিযোগ তিনি তুলেছিলেন, সেটি সঠিক ছিল না।
মরিয়মের মা রহিমা গত ২৭ আগস্ট খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বাড়ি থেকে গত ২৭ আগস্ট রাতে নিখোঁজ হন। মাকে খুঁজে পেতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সংবাদমাধ্যমে নানা সাক্ষাৎকার ও ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আলোচনায় মরিয়ম মান্নান।
মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে বরাবরই তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমির বিরোধের বিষয়টিকে দায়ী করে আসছিলেন। রহিমা নিখোঁজের পরদিন দৌলতপুর থানায় অপহরণের মামলা করেন তার আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহকে রহিমা বেগমের বলে দাবি করেন মরিয়ম। পরদিন শুক্রবার সকালে বোনদের নিয়ে ফুলপুর থানায় লাশ শনাক্ত করতে যান তিনি। তবে এর পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমাকে স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
আত্মগোপনে যাওয়ার পর মরিয়মের মা কখন কোথায় ছিলেন তার সম্পূর্ণ বিবরণ এখনও অস্পষ্ট। তবে তাকে কীভাবে খুঁজে পেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তা স্পষ্ট হয়েছে।
রহিমা বেগমের ফরিদপুর অবস্থানের তথ্য কুদ্দুস মোল্লার ভাগনে জয়নাল খানের মাধ্যমে পেয়েছিল খুলনা পুলিশ।
জয়নাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রহিমা বেগম ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে আমার মামাদের বাড়িতে আসেন। এরপর শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আমার মোবাইলে ফেসবুক চালানোর সময় তার নিখোঁজ সংবাদ দেখি। ফেসবুকে এক ভিডিওতে থাকা ছবির সঙ্গে তার (রহিমা) চেহারার মিল দেখে আমি বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে ছবিটি মিলাই, দেখি উনিই সেই নারী।
‘রহিমা বেগমকে ভিডিও দেখালে তিনি বলেন, এটা তো আমি, কিন্তু আমি বাড়ি ফিরে যাব না।’
এরপর জয়নাল ফেসবুক ভিডিওতে রহিমার ফরিপুরে অবস্থানের তথ্য জানিয়ে কমেন্ট করেন। তবে সেই কমেন্টের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জয়নাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর আমি ইন্টারনেটে সার্চ দিতে থাকি। একপর্যায়ে একটি নিখোঁজ বার্তায় রহিমার ছেলে মিরাজের ফোন নম্বর পাই। মিরাজের নম্বরে কল দিলে তার স্ত্রী ফোন ধরেন।
‘ফোনে রহিমা বেগমের বিষয়ে জানালে অপর পাশ থেকে উত্তর আসে, আমি ওনাকে চিনি না। এ নম্বরে আর ফোন দেবেন না। এই বলে ফোন কেটে দেয়া হয়। এরপর আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’
তবে মরিয়মের ভাই মিরাজ এর আগে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ফরিদপুর থেকে যখন কল এসেছিল, তখন তার দুটি ফোনই মরিয়মের কাছে ছিল।
স্থানীয় মেম্বার মোশারফ হোসেন মূসার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জয়নাল খান।
মোশারফ হোসেন বলেন, ‘শনিবার সকালে জয়নাল আমাকে রহিমা বেগমের নিখোঁজের বিষয়টি জানায়। আমি এরপর খুলনা সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামকে অবগত করি।
‘বিকেল ৫টার দিকে সাইফুল ইসলাম আমাকে কল দেন। তিনি বলেন, ওই নারীকে দেখে রাখেন, আমরা আসব। রাত ১০টা দিকে আমাকে ফোন করে লোকেশন জানতে চান। এরপর সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা পুলিশ বোয়ালমারী থানাকে ইনফর্ম করে তাকে খুলনা নিয়ে যায়।’
জয়নালের কাছ থেকে রহিমার বিষয়ে তথ্য পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন খুলনার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানার পর পুলিশকে অবহিত করি। পরে তারা বোয়ালমারীতে যায়।’
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘থানা থেকে আমাকে জানানো হয়, রহিমা বেগম ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আছেন। এরপর তাৎক্ষণিক সেখানে অভিযান চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়।’
এই অভিযানে অন্যতম সদস্য ছিলেন দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক দোলা দে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় থানা থেকে আমাকে ফোন করে জানায় একটি উদ্ধার অভিযানে যেতে হবে। আমরা রেডি হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রওনা হই। কোথায় কী অভিযানের যেতে হচ্ছে, তা থানা থেকে আগে আমাকে জানানো হয়নি। ’
‘মাঝপথে গিয়ে জানতে পারি, আমরা মহেশ্বরপাশা থেকে নিখোঁজ গৃহবধূ রহিমা বেগমকে উদ্ধার করতে ফরিদপুরে যাচ্ছি।
‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমরা ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে পৌঁছাই। সেখান থেকে সোজা চলে যাই কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে। ‘সেখানে রহিমা বেগম আরও তিনজন নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলামকে আগে থেকেই রহিমা বেগম চিনতেন। হঠাৎ ওসিকে দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।’
‘রাত ১১টার দিকে আমরা ফরিদপুর থেকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হই। গাড়িতে আমার ডান সাইডে বসে ছিলেন রহিমা বেগম। সিনিয়র স্যাররা রহিমা বেগমকে নানান জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। তবে কোনো প্রশ্নেরই তিনি উত্তর দেননি।’
দোলা দে বলেন, ‘রাত সোয়া ২টার দিকে আমরা দৌলতপুর থানায় পৌঁছাই। সেখানে ডিসি স্যার সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পর থানায় রহিমা বেগমকে আমার সঙ্গে রেখে দেয়া হয়।’
পরদিন সকালে রহিমা বেগমকে সোনাডাঙ্গার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে নিজেদের জিম্মায় নেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের কর্মকর্তারা।
পরে আদালত মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় রহিমা বেগমকে মুক্তি দেয় আদালত।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আগের দিন একই আদালত তাকে এক দিনের রিমান্ড দিয়েছিল।
একই মামলায় অবন্তিকার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী দু দিনের রিমান্ডে আছেন।
কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ হোসেন রিমান্ডের আদেশের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুজনকে গ্রেপ্তারের পর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কুমিল্লা জেলা পুলিশের একটি দল ডিএমপির কাছ থেকে দুজনকে রোববার রাতে কুমিল্লায় নিয়ে আসে।
গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাসায় অবন্তিকার ফ্যানের সঙ্গে গলায় রশি প্যাঁচানো ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়।
মৃত্যুর আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি, যাতে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
পাবনা বেড়া উপজেলায় রাতের অন্ধকারে কবরস্থান থেকে ১৫টি কঙ্কাল চুরির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার আমিনপুরে সোমবার রাতে নতুন বাজার গোরস্থানে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা।
চুরি হওয়া এক মরদেহের স্বজন মাসুদ রানা বলেন, ‘এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। মহাসড়কের পাশে এই কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। আমাদের দাবি পুলিশ দ্রুত এই ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।’
আরেক স্বজন জাহিদ হাসান বলেন, ‘এতো দিন আমরা দেখে আসছি আমাদের দেশে বেঁচে থাকা অবস্থায় মানুষের নিরাপত্তা নেই। এখন দেখছি মরে গেলেও মানুষের লাশেরও নিরাপত্তা নেই।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে আমিনপুর থানার ওসি হারুন-উর-রশীদ বলেন, রাতের কোনো এক সময় কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আজকে সকালে স্বজনরা কবরস্থানে দোয়া করতে গেলে সেখানে কবর খোঁড়া অবস্থায় দেখতে পান।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে ও তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ এবং তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ওই দম্পতিকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছে আদালত। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।
তানভীর ও জেসমিন ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিযা, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক, আবদুল মতিন ও তসলিম হাসান।
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে লুটে নিয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, যা সোনালী ব্যাংকের মোট ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক।
২০১০-১২ সালের মধ্যে ঋণের নামে এই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়ে এখন কারাগারে আছেন জেসমিন ইসলাম ও তানভীর মাহমুদসহ আটজন।
এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কুমিল্লায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মেয়াদোত্তীর্ণ সফট ড্রিংকস পাউডার তৈরি ও বিক্রির অপরাধে মেসার্স সিয়াম ফুড প্রোডাক্টসকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিএসটিআই।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ অভিযানে অবৈধভাবে তৈরিকৃত মালামাল ধ্বংস এবং সিলগালা করা হয় কারখানা।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও বিএসটিআইর যৌথ অভিযানে সোমবার কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর এলাকায় ওই কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়।
এ সময় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে মেয়াদোত্তীর্ণ সফট ড্রিংকস পাউডার উৎপাদন ও বিক্রির অপরাধে মেসার্স সিয়াম ফুড প্রোডাক্টসকে বিএসটিআই আইন-২০১৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় ৬০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মালামাল ধ্বংস করা হয় এবং কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসন কুমিল্লার সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এ মোবাইল কোর্টে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএসটিআই কুমিল্লার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম শাকিল।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ডাকাত সন্দেহে মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহতদের পরিচয় মিলেছে। তাদের মরদেহগুলো মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে নিহতের কোনো স্বজন এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজে আসেননি।
নিহতরা হলেন- আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ঝাউকান্দী নিতাইটেক গ্রামের ৪৮ বছর বয়সী আব্দুল রহিম, একই উপজেলার জালাকান্দি গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী নবী হোসেন ও সোনারগাঁ উপজেলার মুছারচর গ্রামের ৪০ বছর বয়সী জাকির হোসেন।
আরও এক জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশের তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এছাড়া আহত অবস্থায় রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্ত্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছে আড়াইহাজার উপজেলা জাঙ্গালিয়া গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলীকে।
পুলিশ জানায়, রোববার রাত একটার দিকে বাঘারী গ্রামের বিলের পাড়ে ৭/৮ জনের একটি দল ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান নেয়। এ সময় স্থানীয়দের কয়েকজন তাদের দেখতে পেয়ে অন্যদের খবর দেন। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাদের ধরে পিটুনি দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। অন্যরা বিলে ঝাঁপ দেন। পরে বিল থেকে উঠিয়ে আরও দুজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে। আহত দুজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর আরও একজন মারা যান।
সংঘবদ্ধ পিটুনিতে নিহত চারজন ডাকাত দলের সদস্য বলে জানিয়েছেন সোনারগাঁ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘নিহত তিনজনের পরিচয় মিলেছে, আরও একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে সিআইডি কাজ করছে। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তাদের সবার নামেই মামলা আছে।’
মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন পাওয়া গেলে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল।
ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আর জাকিরের মরদেহ ঢামেকের মর্গে আছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া নিহতের ঘটনায় থানায় মামলার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এদিকে, বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিহতদের কোনো স্বজন যোগাযোগ করেছে বলে জানা যায়নি। নিহত তিনজনের কোনো আত্মীয়-স্বজন তাদের খোঁজে বা মরদেহ বুঝে নিতে আসেননি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ।
নানা অব্যবস্থাপনা ও সনদের মেয়াদ নবায়ন না করায় মেহেরপুরের গাংনীর হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
সোমবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম ও গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীমের আদালত এ দণ্ড প্রদান করে। পরে দণ্ডিতকে পুলিশি প্রহরায় মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় দেবীপুর গ্রামের সেলিম রেজার স্ত্রী পান্না খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে গাংনীর হাসিনা প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড সনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।
স্বাভাবিক প্রক্রীয়ায় সন্তান প্রসব না হওয়ায় অপারেশনের সিন্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ। সেখানে ডাক্তার আবু সালেহ মো. ইমরান তার অপারেশন করেন। তবে অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই প্রসুতির মৃত্যু হয়।
প্রসুতির মৃত্যুর পর ঘটনাটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানায় তার পরিবার।
এরপর সোমবার দুপুরে গাংনী ইউএনও প্রীতম সাহা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম, মেহেরপুর সিভিল সার্জন মহিউদ্দীন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণী, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আব্দুল আল মারুফ ওই হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিদর্শনে যান।
সেখানে নানা অনিয়ম ও লাইসেন্স নবায়ন না করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫২ ধারায় হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী হাফিজুর রহমানকে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করা হয়।
পরবর্তীতের দণ্ডিত হাফিজুর রহমানকে পুলিশের সহায়তায় মেহেরপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশ বাতিল করেছে হাইকোর্ট।
তবে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূস ও অন্য তিনজনের করা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাজা ও জরিমানা স্থগিত করা হয়েছে।
ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিলগুলো বিচারাধীন রয়েছে।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ওই আদেশ সংশোধন করে চারটি নির্দেশনা দিয়ে সোমবার রায় ঘোষণা করেছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চ।
এর ফলে ইউনূসসহ চার আসামির ৬ মাসের দণ্ড বহাল থাকবে। তবে সাজাভোগ, জরিমানা ও কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা স্থগিত থাকবে।
ইউনূসের পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।
খুরশীদ আলম খান পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রম আদালতের দেয়া দণ্ডের রায় ও আদেশ স্থগিত করেছিল শ্রম আপিলের ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু রায়ে সাজা ও দণ্ড দুটি বিষয়। সাজা স্থগিত করা যায়, দণ্ড স্থগিত করা যায় না।
‘রায়ে চারটি বিষয় আছে- দণ্ড স্থগিত হবে না, বহাল থাকবে এবং সাজাভোগ, জরিমানা ও কয়েকটি বিষয়ে নির্দেশনা। হাইকোর্ট দণ্ড স্থগিতের অংশ বাতিল করে বাকি তিনটি বিষয় স্থগিত করেছে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) করা ফৌজদারি রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
হাইকোর্ট বলে, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ইউনূস ও এর পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহান জামিনে থাকায় তাদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাজা স্থগিত থাকবে।
এতে আরও বলা হয়, শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় অভিযুক্ত ড. ইউনূসসহ তিনজন বিদেশে গেলে তাদের অবশ্যই শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে জানাতে হবে।
একইসঙ্গে এ মামলায় ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার দণ্ড ও সাজা স্থগিত করে ট্রাইব্যুনালের আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করে আদালত।
রুলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য