পুলিশের চাকরিতে অবসরে যাওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না, শেষ কর্মদিবসে এমন প্রশ্নে বেনজীর আহমেদ সুস্পষ্ট বক্তব্য দিলেন না।
রাজনীতিতে যোগ দেয়ার গুঞ্জন নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তো এমন কথা কখনও বলিনি। অন্যের বক্তব্যের বিষয়ে আমি কোনো উত্তর দিতে আগ্রহী না।’
নিজের ৩৪ বছরের চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় তার নেতৃত্বে পুলিশ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।
বেনজীর বলেন, তিনি কারও পক্ষে-বিপক্ষে ছিলেন না। তাও কেউ কেউ এটা আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন, যেটাকে ‘নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শুক্রবার থেকে অবসরে যাচ্ছেন বেনজীর। তবে সেদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অফিস করা হবে না। ফলে কার্যত শেষ কর্মদিবস পার করছেন তিনি।
সপ্তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তার ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকার তাকে অবসরে পাঠাচ্ছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
২০২০ সালের এপ্রিলে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক (আইজি) হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।
র্যাবের সাবেক প্রধান হিসেবে মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিষেধাজ্ঞায় পড়েন বেনজীর। গত ডিসেম্বরে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অবশ্য তিনি দেশটিতে জাতিসংঘের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসেছেন।
অবসরে কী করবেন?
এই প্রশ্নে বেনজীর বলেন, ‘আজ পর্যন্ত দায়িত্বে আছি। অবসর নিব আগামীকাল। আগামীকালের পরে অবসর নিয়ে ভাবব। তবে অবসরের পর এই সমাজের অংশ হিসেবে মানুষের সঙ্গে বসবাস করব বাকি সারাটা জীবন।
‘মানুষের অনেক অবদান রয়েছে আমার প্রতি। আমি চেষ্টা করব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াতে।’
তিনি বলেন, ‘চাকরির শেষ দিন মানে আগামীকাল থেকে জীবনের একটি পাতা উল্টিয়ে নতুন পাতা পড়ার চেষ্টা। তার মানে আগামীকাল থেকে দেখা হবে না-কথা হবে না এমনটি নয়। সামাজিক জীব হিসেবে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে, যেখানেই সুযোগ পাব একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।’
নিজের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে বেনজীর বলেন, ‘‘আমার ৩৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিন কর্মজীবনের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ১২ বছর পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ডিএমপি কমিশনার, র্যাব ডিজি ও সর্বশেষ আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনারা সমর্থন জুগিয়েছেন, দেশবাসীও সমর্থন জুগিয়েছেন। তাই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
‘আমাকে আপনারা যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, একইভাবে পরবর্তী দায়িত্বে যারা আসবেন, তাদেরকেও সহযোগিতা করবেন।’
‘নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা’ নিয়ে আক্ষেপ
বেনজীর বলেন, ‘বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে যে আমাদের দেশে নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চা ছিল, এখনও আছে। একশ্রেণির মানুষের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট চর্চায় যারা আমাকে অন্যায়ভাবে, অযৌক্তিকভাবে তাদের বিপক্ষে আবিষ্কার করেছেন কিছু লোক।’
তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারাও ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা করি। কারণ সবাইকে নিয়েই বাংলাদেশ। আমার এই ভালোবাসার বাংলাদেশ। সবাইকে নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।’
বিক্ষোভে গুলি, মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন
মতবিনিময়ে নানা সময় বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন বেনজীর।
বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে অনেক সময় মানুষ মারা যায় কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এগুলো অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমাদের প্রাথমিক এবং প্রধান লক্ষ্য থাকে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। এর জন্য আমাদের হাতে অস্ত্র থাকে। এ ছাড়া এসব ঘটনার বিষয় নির্বাহী ও বিভাগীয় তদন্ত হয়।’
কক্সবাজারের কথিত বন্দুকযুদ্ধে কাউন্সিলর একরামুল হকের মৃত্যুর ঘটনায় অনুতপ্ত করেন কি না- এমন প্রশ্নে র্যাবের সাবেক প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়টি একটি লিগ্যাল বিষয়। যে পর্যন্ত বিষয়টি অন্যায্য বা অনৈতিক প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ নেই।
‘বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ক্যাপাসিটিতে ঘটেনি, ঘটনাটি ঘটেছে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার ফিল্ড লেভেলের লোকজনের মাধ্যমে। যেই ভদ্রলোক নিহত হয়েছেন তার সঙ্গে ওই মাঠ পর্যায়ে লোকজনের ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। তাই বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
‘তবে আমরা একটি বিষয় দেখি আমাদের কোনো সহকর্মী ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়েছে কি না। কেউ যদি ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে কাজ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। একরামের বিষয়ে একাধিক তদন্ত হয়েছে।’
পুলিশের মানবাধিকার উন্নয়নের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না- জানতে চাইলে বেনজীর বলেন, ‘পুলিশকে মানবাধিকার প্রশিক্ষণ দেবে বলে এ দেশের এনজিওগুলো শত শত কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। এখন এ হিসাব বের করলে দেখা যাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা হবে।
‘এসব টাকা আমরা আনিনি এনেছে এনজিওগুলো পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। এনজিও কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, তবে যখনই তারা ডেকেছে পুলিশ গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। পুলিশের মানবাধিকার প্রশিক্ষণ সব সময় দেয়া হয়। এ ছাড়া সরকার থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশের জবাবদিহিতা আছে।’
‘পুলিশ অনেক গণমুখী’
চাকরি জীবন শেষের আগের দিন পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ দাবি করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি এখন অনেক বেশি গণমুখী। তিনি এও বলেছেন যে, করোনা সংকট মোকাবিলা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশের সাফল্যের বিষয়টি নিয়ে জানতে চায় সবাই।
বেনজীর বলেন, ‘বর্তমান পুলিশ আগের থেকে অনেক বেশি গণমুখী। …ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালনকালে চেষ্টা করেছি মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।’
তার মতে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ পুলিশের দুটি বিষয় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়। তিনি বলেন, ‘কীভাবে আমরা সফলভাবে করোনা ক্রাইসিস অতিক্রম করেছি এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্যের বিষয়ে সবাই জানতে চায়।
‘কিছুদিন আগে জাতিসংঘে কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, আমরা কীভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সফল হয়েছি।’
নিজের ব্যর্থতা কী?
দায়িত্ব পালনে আপনার ব্যর্থতা কতটুকু- এমন প্রশ্নে বেনজীর বলেন, ‘এটাকে আসলে সফলতা-ব্যর্থতার মাপকাঠি হিসেবে না দেখি। আমি দেখতে চাই অর্জন কতটা হয়েছে। আমরা এভাবে দেখি যে, কী অর্জিত হয়েছে, আর অর্জনের কী বাকি আছে।
‘অর্জনের বিষয়টা হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া কখনও শেষ হওয়ার নয়। আমি দৌড়িয়েছি। এখন আমার সহকর্মীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। তিনি দৌড়াবেন। থিউরি অফ পারফেকশন বলে, পৃথিবীতে কোনো কিছুই পারফেক্ট না। মানুষের মানবিক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের যা কিছু করতে হয় মানবিক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই করতে হয়।’
আইজিপির জীবনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ। যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম না করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জটাই নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জ।’
তিনি বলেন, ‘ফরমালিনের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতা নিয়ে শত শত পাউন্ড ফরমালিন ধ্বংস করে জাতিকে ফরমালিন মুক্ত খাবার উপহার দিয়েছি। ওই সময়ে দেশে ৭০০ টন ফরমালিন আমদানি হতো। এখন আমদানি হয় ১০০ টন প্লাস-মাইনাস।’
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করাকেও একটি সাফল্য হিসেবে দেখান বেনজীর। বলেন, ‘এই সমস্যা প্রায় ৪০০ বছরের সমস্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছর পর্যন্ত দস্যুরা সুন্দরবনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সুন্দরবনে যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তারা দস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলেন। মৌসুমের সময় নিয়মিত অপহরণ হতো সাধারণ মানুষ। আমরা তিন ডজন ডাকাতকে স্যারেন্ডার করিয়েছি। এই ১২ বছরে যা কিছু ভালো হয়েছে তার ক্রেডিট সরকারের এবং বাংলাদেশের মানুষের। ব্যর্থতাগুলো আমার।’
আরও পড়ুন:দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বিচার ব্যবস্থার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি পৃথক বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
গতকাল রোববার সিলেটের দ্য গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বাণিজ্যিক আদালত শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোনো পৃথক বিচারিক ফোরাম নেই। এখন কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধগুলো ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে হওয়ায় দ্রুত, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি আমাদের বিচারকদের প্রতি কোনো সমালোচনা নয়। তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নাতীত। বরং এটি একটি কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট যেমন বাড়ছে, তেমনি ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু অর্থঋণ আদালতে প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি কারও একক কোনো দাবি নয় বরং বাণিজ্যিক মামলাগুলো বিশেষায়িত আদালতে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও কার্যকর রায়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী সবাই দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রধান বিচারপতি বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো বাণিজ্যিক আদালত গড়ে তুলে একটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, এসব দেশের অভিজ্ঞতাগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রধান বিচারপতি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালত ব্যবস্থার সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো- স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন, ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহি ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাণিজ্যিক আদালতের কার্যক্রম হবে পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক এবং বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফান লিলার।
বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল আবার পেছানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত গতকাল সোমবার আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা মোট ১২০ বার পিছিয়ে এসেছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। ঘটনার সময় বাসায় তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন। সাগর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামিরা হলেন — রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তা রক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ এবং তাদের ‘বন্ধু’ তানভীর রহমান খান।
এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ জামিনে রয়েছেন, বাকিরা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে আসায় এ মামলার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাঝে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের সদস্যসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি আজ।
সোমবার (২৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (২৫ জুলাই) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ছয় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এই ছয় আসামি হলেন— সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলাম, রাফিউল, আনোয়ার পারভেজ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী আশেক।
গত ১০ জুলাই পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে, ৩০ জুন আবু সাঈদ হত্যায় পুলিশের সদস্যসহ মোট ৩০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই বিকালে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, তথ্য এলে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীসহ বহু হতাহতের ঘটনায় আজ বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছে দেশের সকল আদালত।
আজ সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতি আপিল বিভাগ তাদের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করেন। এদিকে আজ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আগেও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত অধস্তন আদালতে নীরবতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে হৃদয়বিদারক এই দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২২ জুলাই সারা দেশে শোক দিবস ঘোষণা করেছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করছেন। বিচার বিভাগীয় পর্যায়েও বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা আবশ্যক। এমতাবস্থায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২২ জুলাই দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। সেই সাথে দেশের সকল অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এছাড়া ২২ জুলাই হতে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সকল জেলা জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সারাদেশে মুজিব শতবর্ষ পালন ও শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল নির্মাণের আর্থিক হিসাব চেয়ে ৬৪ জেলায় চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানে উপপরিচালকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের উপপরিজালক আকতারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক জানায়, ৬৪ জেলা পরিষদ বরাবর পাঠানো চিঠিতে মুজিবর্ষ পালনে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, ব্যয় করা মন্ত্রণালয়ের নাম, ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার নাম পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, জেলায় কতগুলো এবং কোথায় ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, ম্যুরাল নির্মাণে কত টাকা খরচ হয়েছে, ব্যয়ের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ পালন ও শেখ মুজিবের ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে ওই অর্থ অপচয় ও ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। তাই রেকর্ডপত্র দ্রুত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় ম্যুরাল ও ভাস্কর্য তৈরিতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, পুরো প্রকল্পই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্র জানায়, জেলা পরিষদে পাঠানোর আগে একই চিঠি বাংলাদেশ বেতার, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলেও পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিববর্ষ পালনে অর্থ অপচয় ও এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছিল দুদক।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য