বছর দশেক আগেও সকালে মোড়ে মোড়ে এক বা দুই টাকার বান্ডেল বিক্রি হতো। এর ক্রেতা ছিলেন প্রধানত বাসের শ্রমিকরা। ভাড়া কাটার সুবিধার জন্য এই খুচরা কিনতেন তারা কিছু বেশি টাকা দিয়ে।
কিন্তু সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণের পর থেকে কদর হারাতে থাকে এই এক/দুই টাকার নোট। এখন সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা আর ওয়েবিল নামে যাত্রী ঠকানোর কৌশল চালু হওয়ার পর থেকে ভাড়া কাটা হতে থাকে ১০, ১৫, ২০-এভাবে।
বছরের পর বছর ধরে যাত্রীরা ঠকে যাওয়ার পর কিলোমিটারের হিসাব করে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে যে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু হয়েছে, তাতে ভাড়া ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে সেই এক বা দুই টাকার নোটের অভাবে এই ভাড়া কমার পুরো সুবিধা পাচ্ছে না নগরবাসী।
এখন দূরত্ব থেকে ভাড়া আসছে ১১ টাকা বা ১৩ টাকা বা ২১ বা ২৩ টাকাও। কিন্তু যাত্রীদেরকে দিতে হচ্ছে ১৫ বা ২৫ টাকা। কারণ, টিকিট বিক্রেতার কাছে এক/দুই টাকার নোট থাকে না। আর তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেন না, বেশিই নেন।
ভাড়া কমলেও বাকবিতণ্ডা থামেনি
ওয়েবিলে চলার সময় বসিলা ব্রিজ থেকে মিরপুর-১ নম্বর পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২৫ টাকা। ই-টিকিটিংয়ে ভাড়া এসেছে ২১ টাকা।
কিন্তু ভাড়া কমার পরও যাত্রী শাহীন মিয়ার সঙ্গে টিকিট বিক্রেতার তর্কাতর্কির অবসান হয়নি।
বসিলা থেকে মিরপুর-১ পর্যন্ত প্রজাপতি বাসের টিকিট বিক্রেতার কাছ থেকে দুটি টিকিট নেন শাহীন। ভাড়া আসে ৪২ টাকা। তিনি ৫০ টাকার নোট দিলে তাকে ফেরত দেয়া হয় ৫ টাকা।
টিকিট বিক্রেতা স্বপনের কাছে বাকি তিন টাকা ফেরত চাইলে তাকে বলা হয়, খুচরা নাই। শাহীনও ছাড়ার পাত্র নন। তিনি ৩ টাকার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। এতে শাহীন ও স্বপনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়।
শাহীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৪২ টাকার ভাড়া ৪৫ টাকা চেয়েছে। আমি ৫০ টাকার নোট দিয়েছি আমার কাছ থেকে প্রথমে ৪৫ টাকা রেখে ৫ টাকা ফেরত দিছে। বার বার বলেছি দুই টাকা খুচরা দিচ্ছি আমাকে ১০ টাকা ফেরত দিচ্ছে না। জোরাজুরি করার পরে দুই টাকা খুচরা রেখে ১০ টাকা ফেরত দিছে।’
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন যদি দুই-পাঁচ টাকা বেশি নেয় একজনের কাছ থেকে তাহলে চিন্তা করেন রাজধানীর এত যাত্রী থেকে কত কোটি টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। ন্যায্য ভাড়ার জন্য ই-টিকেটিং চালু করে সেই বেশি ভাড়াই যদি নেয়া হয়, তাহলে এটা চালু করে কী লাভ হলো?
‘তারা কেন ভাংতি টাকা রাখেন না। পাশের দেশ ভারতে টিকিট বিক্রেতারা ব্যাগ ভরে ভাংতি টাকা রাখেন। আর আমাদের দেশের এরা কীভাবে ধান্দা করা যায় সেটা খোঁজে।’
প্রজাপতি বাসের টিকিট বিক্রেতা স্বপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভাংতি ছিল না। পরে তার টাকা ফেরত দিছি।’
একই চিত্র দেখা যায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে। পরিস্থান পরিবহনে অপূর্ব রায় মিরপুর ১০ নম্বর যাবেন। ভাড়া আসে ২৫ টাকা। টিকেট কেটে ৫০ টাকার নোট দিলে প্রথমে তাকে ফেরত দেয়া হয় ২০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘ভাড়া আসে ২৫ টাকা। আমি ৫০ টাকার নোট দিয়েছি আমাকে ফেরত দিয়েছে প্রথমে ২০ টাকা। বাকি পাঁচ টাকা ফেরত চাইলে আমাকে ২ টাকা দিয়েছেন। বলতেছে ৩ টাকা খুচরা নাই।’
কেন তার পাওনা সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে পরিস্তান পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. পলাশ বলেন, ‘আমার কাছে ভাংতি নাই, তাই বেশি নিয়েছি। কোম্পানি থেকে আমাদের ভাংতি টাকা দেয় না। আমরাই ভাংতি টাকা নিয়ে আসি। ভাড়া আসে ১১ টাকা, ২১ টাকা। সবাই খুচরা দেয় না।’
প্রজাপতি পরিবহনের আসাদগেটে টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা মো. রাসেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা (যাত্রী) যদি আমাদেরকে খুচরা দেয় তাহলে তো ভালো হয়। আমি প্রতিদিন ১০ হাজার টিকিট বিক্রি করি। এখন এত টাকা তো আমার খুচরা থাকে না। আমাদেরও খুচরা রাখা উচিত। আর যাত্রীদেরও খুচরা রাখা উচিত। সবাইকে খুচরা দিতে পারি না। এত খুচরা টাকা থাকে না।’
কোম্পানি থেকে খুচরা টাকা দেয়া হয় কি না জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘যা দেয় তা তো শেষ হয়ে যায়। এর পরে কী করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অস্বীকার করব না। ভাংতি টাকার সমস্যা অবশ্যই আছে। আমি প্রত্যেক কোম্পানির কাছে এই ম্যাসেজটা পৌঁছে দেবো। যাতে সকল কাউন্টারে ভাংতি টাকা দিয়ে দেয়। আমরা দুই টাকা আর পাঁচ টাকার ভাংতি পাচ্ছি। এক টাকার কয়েন পাচ্ছি না। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ভাংতি টাকা সংগ্রহ করে কাউন্টারে দেই।’
যাত্রীদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘যাত্রীদেরও অনুরোধ করবো আপনারা ভাংতি টাকা নিয়ে কাউন্টারে আসবেন। আমি কোথায় যাব সেটা তো আমি যানি। তাই সেই পরিমাণ ভাংতি টাকা আমি নিয়ে যাব। তাহলে সমস্যাটা কমে আসবে।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পরিবহন মালিক বা যাত্রীরা চাইলেই কি খুচরা পাবেন? বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক টাকা বা দুই টাকার নতুন নোট ছাড়া হয় না বললেই চলে। বছর কয়েক আগে কয়েন ছাড়ার পর এটি জনপ্রিয় হয়নি। পকেটে ভারী হয় বলে মানুষ কয়েনে উৎসাহ দেখায়নি। এখন এটিই কাল হচ্ছে।
প্রতিদিন কেবল খুচরার অভাবে বাস যাত্রীরা কত টাকা ঠকছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠন যাত্রীকল্যাণ সমিতি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঢাকায় প্রতিদিন ৫০ লাখ বাস যাত্রী যাতায়াত করে। খুচরার অভাবে যদি প্রতিজন গড়ে ৩ টাকা করেও ঠকেন, তাতে প্রতিদিন বাড়তি যায় দেড় কোটি টাকা। এই হিসেবে মাসে ৪৫ কোটি আর বছরে ৫৪০ কোটি।
কেবল বাস ভাড়া নয়, বাজার করতে গিয়েও একই কারণে ঠকছে মানুষ। সবজির দাম এখন ১০ বা ১৫ বা ২০ এভাবে পাঁচ টাকা করে বাড়ে কমে, অথচ ৮ বা ৯ বা ১১ বা ১৩ টাকা-এভাবে বিক্রি হতো আগে।
প্যাকেজটাত খাবারের দাম ১০ টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে হয়েছে ১৫ টাকা। ৫০ শতাংশ বাড়াটা যুক্তিযুক্ত কি না, এই হিসাবও কেউ করেনি।
বাজারে ভাংতি টাকার পাওয়া যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জী এম আবুল কালাম আজাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে এক বা দুই টাকার নোট কম থাকলে পর্যাপ্ত কয়েন আছে। কিন্তু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হয়েছে। তারা আগের মতো কয়েন নিতে চায় না।’
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাহাজ ‘চিন ডুইন’ থেকে তাদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।
প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছানোর পরপরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উদ্দেশে রওনা হয়, যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্য রয়েছেন। তাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার মিয়ানমার ফেরত যাবে প্রতিনিধি দলটি।
এদিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে ১৭৩ বাংলাদেশি ঘাটে এসে পৌঁছাতে পারেন। তারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার এবং একজন করে রয়েছেন খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার। ইতোমধ্যে ফেরত আসাদের অপেক্ষায় ঘাটে ভীড় করছেন তাদের স্বজনরা।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে ফেরত আসাদের গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করবে বিজিবি। তারপর যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এদিকে ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘চিন ডুইন’ জাহাজটি ১৭৩ বাংলাদেশিকে বহন করে মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা পেয়ে বাংলাদেশে ফিরছেন।
মূলত বাংলাদেশিদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটিই বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিজিপির ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবে।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছে।
মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াদের মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল একদিনে নতুন ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নেন। এরও আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন, যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ ও সংশ্লিষ্টরা কথা বললেও এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে। সেখানেও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সংরক্ষিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য