খুলনার মহেশ্বরপাশার বাড়ি থেকে অপহরণ হয়েছিলেন বলে দাবি করলেও ঘটনার পর বান্দরবানের একটি ভাতের হোটেলে গিয়ে কাজ চেয়েছিলেন মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম। এ তথ্য জানিয়েছে খুলনার পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নিউজবাংলাকে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানিয়েছেন, উদ্ধারের পর পুলিশকে দেয়া তথ্যের সঙ্গে আদালতে রহিমার দেয়া জবানবন্দিতে আছে বেশ কিছু গরমিল। এ কারণে ঘটনাটি অপহরণ নয় বলে অনেকটাই নিশ্চিত তিনি।
মাকে খুঁজে পেতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সংবাদমাধ্যমে নানা সাক্ষাৎকার ও ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে আলোচনায় মরিয়ম মান্নান। মায়ের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে বরাবরই তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমির বিরোধের বিষয়টিকে দায়ী করে আসছিলেন। গত ২৭ আগস্ট রাতে রহিমা নিখোঁজ হন। ফরিদপুরের বোয়ালমারীর একটি গ্রাম থেকে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে।
এসপি মুশফিকুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রহিমা বেগম আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, সেই তথ্য আমরা ক্রস ম্যাচিং করে দেখেছি। ইতোমধ্যে তাকে অপহরণের বিষয়টি আমাদের কাছে ভুয়া প্রমাণ হয়েছে।
‘তদন্তের অগ্রগতিতে মনে হচ্ছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত তাদের যে বিরোধ আছে, তাতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্যই তারা এই নাটক করে থাকতে পারেন।’
রহিমার নিখোঁজের পুরো ঘটনাটি তদন্ত করছেন পিবিআই খুলনার পরিদর্শক আবদুল মান্নান।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, আদালতে দেয়া রহিমার জবানবন্দির সত্যতা যাচাইয়ে মঙ্গলবার দিনভর ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বোয়ালমারীতে রহিমা যে কথা বলেছেন, আদালতে সেইভাবে জবানবন্দি দেননি। সেখানে স্বামী ও মেয়েদের সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছেন বলে জানিয়েছেন, যা জবানবন্দির সঙ্গে মিল নেই।’
আদালতে দেয়া জবানবন্দির নথিতে দেখা গেছে, রহিমা বলেছেন, ‘গত ২৭ আগস্ট পানি নেয়ার জন্য আমি বাসার নিচে আসি। এক বালতি নেয়ার পরে অন্য বালতি নিতে আসলে আসামিদের সঙ্গে আরও অনেক লোক আমার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। তখন রাত ১০টা বাজে।
‘আসামি পলাশ ও মহিউদ্দিন কাপড় দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে। তখন আমার সঙ্গে থাকা মোবাইলও আসামিরা নিয়ে যায়। আসামিরা আমাকে কোলে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার হুঁশ ফিরে আসলে তাকিয়ে দেখি সাইনবোর্ডে পার্বত্য চট্টগ্রাম লেখা। তারপর আমি রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে ঢাকা আসি।
‘ঢাকা থেকে মুকসেদপুর আসি। সেখান থেকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে আমার ভাড়াটিয়ার বাড়ি তথা কুদ্দুসদের বাড়ি যাই। তাদেরকে ঘটনা খুলে বলি। তাদের বাড়ি আমি ৮-৯ দিন ছিলাম। সেখান থেকে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে আসে। এই আমার জবানবন্দি।’
এ বিষয়ে পিবিআই পরিদর্শক আবদুল মান্নান বলেন, ‘জবনাবন্দিতে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বলতে বান্দরবানকে বুঝিয়েছেন। আমরা জানি বান্দরবানে কোনো ট্রেনলাইন নেই।’
পিবিআইয়ের এসপি মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘রহিমা পুলিশকে বলেছেন যে হুঁশ ফিরে সাইনবোর্ড পড়ে তিনি দেখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম লেখা। ওই স্থানটি হলো বান্দরবান সদরের ইসলামপুর।
‘সেখানে তিনি মণি বেগমের ভাতের হোটেলে কাজ করেছেন। মণি বেগম তাকে স্থানীয় একটি ক্যাম্পে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। সে জন্য তার কাছে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড চাওয়া হয়েছিল। এগুলোর জন্য তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামে তার পূর্বপরিচিত কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান।
‘সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হকের কাছে গিয়ে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি দাবি করেন। তবে সেখান থেকে তাকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি দেয়া হয়নি। পিবিআই বোয়ালমারী থেকে তদন্ত করে এসেছে। শিগগিরই বান্দরবানেও যাওয়া হবে।’
রহিমার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে কারও ইন্ধন আছে কি না জানতে চাইলে পিবিআই পরিদর্শক আবদুল মান্নান বলেন, ‘রহিমাদের সবই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। বিষয়টি তার স্বামী ও সন্তানরাও জানতেন। তদন্ত শেষে মামলাটি ভুয়া প্রমাণ হলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা মুক্তি পাবেন। তখন তারা চাইলে রহিমা ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন।’
রহিমা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তাকে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেছিলেন তার আরেক মেয়ে আদুরী আক্তার। তাতে আসামি করা হয়েছিল অজ্ঞাতনামাদের। তবে এজাহারে রহিমার সঙ্গে প্রতিবেশীদের জমির বিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। মরিয়মও মা নিখোঁজের পেছনে প্রতিবেশীদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে।
এরপর তাদের পাঁচজন প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করে। রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদারকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে পরিদর্শক মান্নান বলেন, ‘পিবিআই প্রতিবেশী পাঁচজনকে সাতদিনের ও রহিমার স্বামী বেল্লালকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করেছে। এখনও শুনানি হয়নি। বেল্লালকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়তো কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে রহিমা আত্মগোপনের নেপথ্যে কারা জড়িত।’
পিবিআইয়ের এসপি মুশফিকুর বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। পূর্ণাঙ্গ তদন্তে যদি মরিয়ম ও তার পরিবার দোষী হয়, তবে আইন মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া মরিয়মদের মামলায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তদন্তে যদি তারা নির্দোষ হন, তবে তারাও আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।’
এসব বিষয়ে জানতে মরিয়ম, তার বোন আদুরী ও ভাই মিরাজ আল সাদীকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।
তবে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মরিয়ম জানান, মায়ের অপহরণের বিষয়টি নিয়ে তারও এখন সন্দেহ হচ্ছে।
তিনি সেখানে বলেন, ‘কীভাবে বুঝব মা একা একা চলে গেছেন, আমাদের ছেড়ে, আর ফিরবেন না! জানলে কোনোদিন জিডি মামলায় যেতাম না। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আমার প্রথম মনে হয়েছে মা অপহরণ হননি। কারণ যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করছিলেন কী হয়েছে, তিনি বলেছেন তাকে মেরেছে। এক বছর আগে তাকে যারা যেভাবে মেরেছিল সেই ব্যাখ্যা করছেন মা। মাকে দেখে ভয় পাচ্ছি। মা আমাকে অবিশ্বাস করছেন। এখন মিডিয়া বা কারও সামনে আসতে চান না। মায়ের যত্ন নেওয়াটা জরুরি।’
আরও পড়ুন:পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও জামালপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিএমপি ডিবি প্রধান বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আবুল কালাম আজাদকে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। রিমান্ড চেয়ে আগামীকাল রোববার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
মো. আবুল কালাম আজাদ ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি একই কার্যালয়ে সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারও আগে তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন।
সবশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জামালপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাবেক আমলা আবুল কালাম আজদ। গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি এই পদ হারান।
আরও পড়ুন:ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়কে ক্ষতিগ্রস্তদের আস্থার জায়গা হিসেবে পরিণত করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। এখানে কোনো ‘আয়না ঘর’ ও ‘ভাতের হোটেল’ সংস্কৃতি থাকবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে শনিবার আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক ডিবি অফিস এক সময় তারকাদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠার বিষয়টিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘ডিবি অফিস নায়ক-নায়িকাদের আড্ডাখানা নয়। এটা ক্ষতিগ্রস্তদের আস্থার জায়গা হবে, ন্যায়বিচার পাওয়ার জায়গা হবে।’
জবাবদিহি ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ডিবি একটি জনবান্ধব সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘আমরা ডিবি অফিসকে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অসহায় ও ভুক্তভোগীদের সমস্যার কথা শোনা হবে, তারা আইনি সহায়তা পাবেন।’
রেজাউল করিম আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমার নজরদারিতে কেউ নির্যাতনের শিকার হবেন না। ডিবি অফিসের কথা শুনলে মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শুধু অপরাধীরাই আমাদের ভয় পাবে। আমি যতদিন এই পদে আছি ততদিন সততা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাব।’
অতীতের পুলিশি ব্যর্থতা তুলে ধরতে গিয়ে রেজাউল করিম মল্লিক আগের ঘটনার কথা তুলে ধরেন যেখানে ‘উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার’ কর্মকর্তারা পুরো পুলিশ বাহিনীর অবস্থানের সঙ্গে আপস করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়া এবং পূর্ববর্তী সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ছিল নজিরবিহীন। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা আগে কখনও হইনি।
‘আমার নেতৃত্বে এ ধরনের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি হবে না। ডিবি অফিসে অন্যায় সহ্য করা হবে না।’
বাহিনীর কলঙ্কিত ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে মল্লিক বলেন, ‘ডিবিতে দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যারা সংগঠন পুনর্গঠনে সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।
‘ডিবির হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং সাধারণ মানুষ যাতে অন্যায় নিপীড়ন থেকে মুক্ত হতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে কাজ করছি।’
স্বচ্ছতার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি আইনের ঊর্ধ্বে নই। ডিবির কোনো সদস্য অনৈতিক বা অপেশাদার কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাদের জবাবদিহি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) দুইটি অয়েল ট্যাংকারে আগুন জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অপচেষ্টা বলে আশঙ্কা করছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেক।
বিএসসির সম্মেলনকক্ষে শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান।
মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টায় জাহাজে কোনো কাজ ছিল না। জাহাজে চারটা পয়েন্টে আগুন দেখা যায়। তাই আমাদের আশঙ্কা নাশকতা।
‘কেননা কয়েক দিন আগে বাংলার জ্যোতিতে আগুন লেগেছিল। এবার আগুন লাগল বাংলার সৌরভে। তাই আমরা ধারণা করছি, এ ঘটনা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলার অপচেষ্টা। এই ঘটনায় কারা জড়িত, তা শনাক্ত করা উচিত।’
মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘এটি লাস্ট সার্ভিস হওয়ার কথা ছিল বাংলার সৌরভের। নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বন্দরের সাতটি টাগ একযোগে কাজ করে। আগুন নেভানোর দেড় ঘণ্টা পর আবার আগুন ধরে যায়।’
বিএসসির এমডি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে নাশকতার বিষয় নিশ্চিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, বাংলার সৌরভে ১১ হাজার ৫৫ টন অপরিশোধিত তেল ছিল। ৪৮ জন ক্রু ও ওয়াচম্যান ছিল। তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিএসসির স্টুয়ার্ট সাদেক মিয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
তিনি জানান, বিএসসির টেকনিক্যাল ডিরেক্টরকে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩০ হাজার টনের একটি বিদেশি জাহাজ চার্টারিং করা হয়েছে। এসপিএম চালু হলে লাইটারিং বন্ধ হবে।
এর আগে শুক্রবার রাত পৌনে ১টার দিকে ‘বাংলার সৌরভ’ নামের জাহাজে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বন্দরের সাতটি টাগবোট একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, কিন্তু আগুন নেভানোর দেড় ঘণ্টা পর আবার আগুন ধরে যায়।
পরে প্রায় চার ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। একইভাবে গত সোমবার বিএসসির আরেক জাহাজ বাংলার জ্যোতিতেও বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। তখন তিনজনের প্রাণহানি হয়।
বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ১২ থেকে ১৪ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিবহন করে বিএসসি। বড় জাহাজে বিদেশ থেকে এসব তেল আমদানি করে বহির্নোঙরে আনা হয়। এরপর সাগরে বিএসসির বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভে লাইরারিং করে কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারিকে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:মোটর সাইকেলটি বিক্রি হবে ৬৫ হাজার টাকায়। দরদাম ঠিক হওয়ার পর ক্রেতার আবদার- ‘বদ্দা, এক্কানা চালাই চাই (একটু চালিয়ে দেখতে চাই)। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চোখের সামনে দিয়েই শাঁ করে চালিয়ে পালিয়ে যায় ক্রেতারূপী চোর।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জার টেক এলাকায়। শুক্রবার সেই প্রতারককে বন্দর নগরীর লালখান বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী পোশাক কারখানার নিরাপত্তা রক্ষী পটিয়ার কোলাগাঁও এলাকার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘২৬ সেপ্টেম্বর পটিয়া উপজেলা থেকে একজন ক্রেতা আসেন আমার ১০০ সিসি চট্ট-মেট্রো হ-১৮-০১৭৮ মোটর বাইকটি কেনার জন্য। দরদামের পর ৬৫ হাজার টাকায় মোটরসাইকেলটি বিক্রি করতে রাজি হই।
‘এরপর দুই-এক চক্কর চালিয়ে দেখতে চাইলে আমি তাকে চাবি দেই। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বাইক নিয়ে উধাও! চারদিকে খোঁজ করে পরে থানায় মামলা করি। আজ পুলিশ সেই প্রতারককে গ্রেপ্তার ও আমার বাইক উদ্ধার করতে সমর্থ হয়।’
প্রতারক যেভাবে পুলিশের জালে
মোবাইল ফোন থেকে কল করাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোটর সাইকেল নিয়ে হাওয়া হয়ে যাওয়া প্রতারকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বন্ধুর মাধ্যমে ক্রেতা সেজে ওই প্রতারকের সঙ্গে যোগাযোগ করে চট্টগ্রামের লালখান বাজারে দেখা করার দিনক্ষণ ঠিক হয়। শুক্রবার পুলিশের সাহায্য নিয়ে হাতেনাতে ধরা হয় প্রতারক সাইফুল ইসলামকে।
জানা যায়, প্রতারক সাইফুল ইসলাম প্রকাশ মানিক নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন ধনিয়াপাড়া মাজার গলির আবু জাফরের বাড়িতে থেকে এভাবে প্রতারণা করে বেড়ায়। তবে তার বাড়ি ফেনী জেলায় বলে জানায়। নিজেকে কখনও পটিয়া শান্তির হাট এলাকার ব্যবসায়ী পরিচিয় দেয়, কখনও নগরীতে চাকরি করে বলে জানায়।
পুলিশ জানায়, ৩ অক্টোবর দায়ের হওয়া মামলার সূত্র ধরে বাদীর সহযোগিতায় প্রতারককে নগরীর লালখান বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো হয়।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আমলে নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়। পরে প্রতারককে গ্রেপ্তার ও গাড়িটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমকে (৪২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ ভোরে (৪ অক্টোবর, ২০২৪) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
‘তার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া পল্লবী ও খিলগাঁও থানার আরও দুটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি সে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখ্য, তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তাকে বিজ্ঞ আদালতে হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
ডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, সাধন চন্দ্র মজুমদারকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে তা পরে জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সবশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে নওগাঁ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ সংসদীয় আসন।
সুনামগঞ্জের ছাতকে আশি বছরের বেশি বয়সী এক পীর খুন হয়েছেন। সকালে নিজ গ্রাম সৈদেরগাঁওয়ের (ধারণ) বাড়িতে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ওই পীরের নাম সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ওরফে আব্দুল হান্নান পীর।
গ্রামের লোকজন জানান, বয়োজ্যেষ্ঠ এই পীর বাড়ির সামনের দিকের একটি ঘরে প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে এসে বসতেন। অনেকে তার কাছ থেকে এসে পানিপড়াও নিতেন।
আব্দুল হান্নান পীর প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবারও ফজরের নামাজের পর ওই ঘরে এসে বসেছিলেন। ওই সময় দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেটে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
আব্দুল হান্নান পীরের মৃত্যুর খবর শুনে ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীরা তার বাড়ির সামনে ভিড় জমান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন জানান, ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আব্দুল হান্নান পীর। কারা, কেন তাকে হত্যা করলো এ বিষয়ে জানার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য