ময়মনসিংহের ফুলপুরের বস্তাবন্দি মরদেহটি নিয়ে হঠাৎ করেই আলোচনা এলাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে গোটা দেশেই।
মরদেহটি কার, কে তাকে খুন করেছে- এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। গত ১৫ দিনে মেয়েটির পরিচয়ই শনাক্ত করা যায়নি।
পুলিশ পরিচয় শনাক্তে ফেসবুকে মেয়েটির বিষয়ে তথ্য দেয়া ছাড়াও থানায় থানায় নিখোঁজের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেছে কি না জানতে চেয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরোপুরি অন্ধকারে তারা।
আঙুলের ছাপ নিয়ে মরদেহ শনাক্তের কৌশলও কাজে লাগানো যায়নি। কারণ গলে যাওয়া হাতের ছাপ যন্ত্রের পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব ছিল না।
খুলনার আলোচিত তরুণী মরিয়ম মান্নানের মা নিখোঁজ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর এই মরদেহটি পায় পুলিশ। এ নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিল এমন নয়। কিন্তু মরিয়ম হঠাৎ থানায় গিয়ে দাবি করেন, এটি তার মায়ের লাশ।
পুলিশ শুরু থেকেই বলছিল, সেই মরদেহটি ছিল ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সী কোনো তরুণীর, আর মরিয়মের মা পঞ্চাশোর্ধ্ব।
তবে মরিয়ম জোরালোভাবে বলতে থাকেন, তিনি তার মায়ের কাপড়, হাত, পা, কপাল চেনেন। তখন পুলিশ ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।
এর মধ্যে মরিয়মের মা উদ্ধার হন ফরিদপুর থেকে। তাকে অপহরণের যে অভিযোগ করা হচ্ছিল, সেই অভিযোগ এবং অভিযোগকারীরাই এখন বড় প্রশ্নের মুখে।
এদিকে মরিয়মের মাকে জীবিত উদ্ধারের পর অজ্ঞাত ওই মরদেহটির পরিচয় নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। কোনো ক্লুই মিলছে না এ বিষয়ে। কর্মকর্তারা বলছেন, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত স্পষ্ট বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে বস্তাবন্দি মরদেহটি পাওয়া যায়। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর সমাহিত করা হয়।
ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, মরদেহটি উদ্ধারের পরই গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ছবিসহ জামাকাপড় ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় মরদেহের বয়সসহ সব আলামতের বর্ণনা দিয়ে খোঁজ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই নারীর খোঁজ পেতে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ওসি বলেন, ‘ওই নারীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এমন হলে কোনো থানায় পরিবার কিংবা স্বজনরা অভিযোগ দেয়ার কথা ছিল। এসব কারণে পরিচয় শনাক্তসহ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তবে আশা করছি, দ্রুতই পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হবে।’
তরুণীর আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের সঙ্গে কেন মেলানো হয়নি- এই প্রশ্নে ফুলপুর থানার ওসি মামুন বলেন, ‘ওই নারীর গলিত মরদেহ উদ্ধার করেছি। এরপর মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের সাহায্য নেয়া হয়। তারা আঙুলের ছাপ নিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু গলিত হওয়ার কারণে ভালোভাবে নেয়া সম্ভব হয়নি। সেই ছাপ মেলেওনি কোনোটির সঙ্গে।’
ডিএনএ পরীক্ষাও হবে না
মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করার যে কথা হয়েছিল, সেটিও এখন বাতিল করা হয়েছে। এটি মরিয়ম মান্নানের মা কি না, তা শনাক্ত করতেই পরীক্ষা করার কথা ছিল। কিন্তু মরিয়মের মায়ের খোঁজ মেলায় ওই মরদেহটির ডিএনএ পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ নামের ট্রেনের বেশ কিছু বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ১৫ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল।
লাইনচ্যুত হওয়া পাঁচটি বগির উদ্ধারকাজ চলছে। একই সঙ্গে চলছে রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মেরামত।
নাঙ্গলকোটে রোববার বেলা দুইটার দিকে বিজয় এক্সপ্রেসের ১৮টি বগির মধ্যে আটটি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে, যার ফলে সারা দেশের সঙ্গে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ৫০০ মিটার রেললাইন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সোমবার ভোররাত পাঁচটার দিকে ট্রেন চলাচলের জন্য ডাউন লাইনকে উপযুক্ত ঘোষণা করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর পৌনে পাঁচটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে দুর্ঘটনা কবলিত রেললাইন সাময়িক মেরামতের পর চট্টগ্রামমুখী ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করে। লাইন মেরামতের পরপরই লাকসাম রেলওয়ে জংশনে আটকে থাকা ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে।’
আরও পড়ুন:শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ওই শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে রোববার দুপুর ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করছি। শুরু থেকেই এই ঘটনায় যারা যারা সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের সবাইকে আমরা ধারাবাহিকভাবে ডাকার চেষ্টা করব।’
তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় সভা সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘প্রথম সভায় ঘটনা-সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নিজেরা বিশ্লেষণ করেছি। সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। আরও তিন/চারটি সভার পর তদন্ত কোন দিক দিয়ে এগিয়ে নেয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রঞ্জন কুমার দাস।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় অবন্তিকা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যার ১০ মিনিট আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন শাসনগাছায় জামিল হাসান অর্ণব নামে এক ছাত্রদল নেতা দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ২৫ অস্ত্রধারীকে শনাক্তের পর নজরদারিতে রেখেছে। কুমিল্লা নগরী সংলগ্ন ভারত সীমান্তেও নজরদারি করা হচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গুলি, গুলির খোসা ও অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। রোববার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে শনিবার জোহর নামাজের পর শাসনগাছা ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় জানাজা শেষে অর্ণবকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শাসনগাছা বাস টার্মিনালে লেগুনার স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে স্থানীয় দফাদার বাড়ি ও মোল্লা বাড়ির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে শুক্রবার টার্মিনালের পাশে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় মধ্যমপাড়া দফাদার বাড়ির মো. আজহার মিয়ার বড় ছেলে জামিল হাসান অর্ণব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অর্ণব ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হন আরও তিনজন।
অপরদিকে ওই সংঘর্ষের ঘটনার তিন মিনিট ২৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, এক পক্ষের লোকজন অন্য পক্ষের ওপর গুলি, ককটেল ও ইট ছুড়ছে। তাদের মধ্যে তিন-চারজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ১০-১২জনের হাতে রামদা। কয়েকজন মাস্ক পরা ছিলেন। অন্য পক্ষকে ভিডিওতে দেখা যায়নি। তবে গুলির শব্দ শোনা যায়। এছাড়া ওই পক্ষ থেকেও ককটেল এবং ইট ছুড়ে মারা হয়।
জামিলের বাবা আজহার মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে পড়ত। শাসনগাছা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সড়কে লার্নিং হোম নামের একটি কোচিং সেন্টার চালাত সে। এ ছাড়া শাসনগাছা বাস টার্মিনালে সততা পরিবহনের বাস কাউন্টারেও কাজ করত।
‘বাস টার্মিনালের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ চলছিল। তবে আমার ছেলে এতে জড়িত ছিল না। অর্ণব জুমার নামাজ পড়ে ঘরে ফিরছিল। দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে সে মাঝখানে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়। ওর বুকে গুলি লাগে। অর্ণবের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না।’
জামিল হাসানের মা ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে অর্ণব সবার বড়। ছেলেটা সংসারের জন্য পরিশ্রম করত। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘শাসনগাছা এলাকার মোল্লাবাড়ি ও মধ্যমপাড়া এলাকার লোকজন বাস টার্মিনালের লেগুনা স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে একজন মারা যান। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ সংঘর্ষে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের বাংলাদেশি জাহাজকে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূল থেকে শুক্রবার অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে জাহাজটির নোঙর তোলা হয় বলে জানান কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রুপের কমকর্তারা। জাহাজটিতে ২৩ জন ক্রু আছেন।
সোমালিয়ার গারাকাদ বন্দরের কাছে বৃহস্পতিবার জাহাজটিকে নোঙর করা হয়েছিল। পরের দিন কবির গ্রুপের কর্মকর্তা মিজানুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি জাহাজটি আগের অবস্থানে নেই। বিকেলে নোঙর তুলে সরিয়ে নিয়েছে জলদস্যুরা।
‘সোমালিয়ার গারাকাদ বন্দরের কাছে জাহাজটি বৃহস্পতিবার নোঙর করে। এক দিনের মাথায় শুক্রবার জাহাজটির নোঙর তুলে ফেলা হয় এবং বিকেলে জাহাজটিকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হয়।’
মিজানুল আরও বলেন, ‘জলদস্যুরা সবসময় নিরাপদ জায়গা খোঁজে। হয়তো সে কারণে জাহাজটি অন্য কোথাও সরিয়ে নিয়েছে তারা।’
এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে সহায়তা করতে কাছাকাছি এলাকায় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও একটি দূরপাল্লার সামুদ্রিক টহল উড়োজাহাজ অবস্থান করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বৃহস্পতিবার জানায়, এমভি আবদুল্লাহর ওপর নজর রাখতে ইইউর একটি জাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে প্রাইভেট কার চাপায় কানিহাটি চা বাগানের এক নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় চা শ্রমিকরা সাড়ে ৩ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন।
উপজেলার চাতলাপুর সড়কের ক্যামেলিয়া হাসপাতালের সামনে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকরা।
প্রাণ হারানো ৫০ বছর বয়সী চা শ্রমিক কুঞ্জ বালা মৃর্ধা শমশেরনগর ইউনিয়নের কানিহাটি চা বাগানে কাজ করতেন। তিনি বাগানের অফিস লাইনের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। ওইদিন বিকেলে মৃর্ধা কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
স্থানীয় চা শ্রমিকরা জানান, বেপরোয়া গাড়ির আঘাতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঘাতক গাড়ি আটক এবং ড্রাইভারকে আইনের আওতায় শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাতলাপুর এবং শমশেরনগর রাস্তা অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ চা শ্রমিকরা।
খবর পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়ে পরিস্তিতি শান্ত করেন।
এ সময় শ্রমিকরা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘাতক গাড়ি ও ড্রাইভারকে আটক, রাস্তায় স্পিড ব্রেকার ও মৃত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিলে অবরোধ স্থগিত করা হয়।
চা ছাত্র যুবক পরিষদ কানিহাটি চা বাগানের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ বিন বলেন, কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক কুঞ্জ বালা মৃর্ধা সেকশনে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছেন। বিকাল ৫টার দিকে ক্যামেলিয়া হাসপাতালের সামনের পাকা রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী একটি প্রাইভেট কার তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে বাগানের ক্যামেলিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘পরে আমরা প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখি। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা অবরোধ স্থগিত করি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৎকারের জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়েছে।’
শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার পরই আমরা সেখানে যাই। তাদের গিয়ে সান্ত্বনা দেই। উপস্থিত সময়ে তাদের কিছুটা সহযোগিতা করা হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও করা হবে। তারা কিছু দাবি তুলেছেন অবরোধ করে। সেটা প্রশাসন আশ্বস্ত দিয়েছে।’
কমলগঞ্জ থানার শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক (তদন্ত) শামীম আকনজী জানান, ‘নিহত ও রাস্তা অবরোধের খবর জানার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। রাস্তা অবরোধ করে চা শ্রমিক এখন কিছু দাবি তুলছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি দাবি পূরণ করে দিব। আমরা সিসি ফুটেজ দেখে গাড়ি ও ড্রাইভারকে আটক করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, মৃত ব্যক্তির সৎকারের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। গাড়ি ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। তারা কিছু দাবি তুলেছেন সেটা প্রশাসন দেখবে।
আরও পড়ুন:ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া ‘এমভি আবদুল্লাহ’র জিম্মি ২৩ নাবিক-ক্রু’র পাশাপাশি জলদস্যুরাও এখন জাহাজের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে। ফলে জাহাজের সংরক্ষিত খাদ্য ও পানীয় রসদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় জাহাজটিতে আপাতত খাদ্য ও পানীয় রসদ পাঠানোর চেষ্টা করছে জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ।
এদিকে জলদস্যুদের নতুন আরেকটি দল জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে আবার জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
জাহাজটির মালিকপক্ষ বলেছে, জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের পাশাপাশি জলদস্যুরাও সংরক্ষিত পানি ও খাবার খাচ্ছে। কোনোভাবে জিম্মিদের কাছে খাবার ও পানি পৌঁছানো যায় কিনা সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, জাহাজটিতে এর নাবিক ও ক্রুদের জন্য ২৫ থেকে ২৭ দিনের খাবার ও পানি মজুত ছিল। কিন্তু বর্তমানে জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি জলদস্যুরা জাহাজে অবস্থান করছে। ফলে খাবার ও পানির চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া জাহাজে রান্না, গোসল ও পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি মজুত রাখা হয়। লোক বেশি থাকায় পানিও কমে আসছে।
কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘জাহাজে যে খাবার ও পানি মজুত আছে সেগুলো জলদস্যুরাও ব্যবহার করছে। এ কারণে খাবার ও পানি কমে আসতে পারে বলে ধারণা করছি। খাবার সংকট যাতে তীব্র না হয় সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে।
‘আমরা, জলদস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগের অপেক্ষা করছি। ওদের সঙ্গে যোগাযোগ হলেই কীভাবে জাহাজে খাবার ও পানি পাঠানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। এখন যত দ্রুত দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে ততই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাবে।’
মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূল থেকে দুই নটিকেল মাইল দূরে নোঙর করেছিল দস্যুরা। এরপর ওদের নতুন আরেকটি দল জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাহাজটি আবার অবস্থান পাল্টাতে থাকে।
‘জলদস্যুদের কেউ আমাদের সঙ্গে এখনও মুক্তিপণের ব্যাপারে যোগাযোগ করেনি। তবে জিম্মি নাবিকরা সবাই ভালো আছেন। সুস্থ আছেন।’
প্রসঙ্গত, সোমালিয়ার একদল জলদস্যু মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন। গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেড এই জাহাজ পরিচালনা করছিল।
আরও পড়ুন:ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিক-ক্রুসহ পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করার দু’দিনেও জলদস্যুরা জাহাজ মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এদিক থেকে মালিক পক্ষ নানাভাবে চেষ্টা করেও জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এ অবস্থায় তারা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জাহাজের মালিক কবির গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় এই মুহূর্তের করণীয় ঠিক করতে পারেনি তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, তারা জলদস্যুদের কাছ থেকে যোগাযোগের অপেক্ষায় আছেন।
সূত্র জানায়, জলদস্যুরা জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সেটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সেটি সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের ২০ মাইল দূরে সাগরে নোঙর ফেলেছে বলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেখানেই জাহাজটি জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কেএসআরএম-এর মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাদের গ্রুপের পক্ষ থেকে নাবিকদের উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। কিন্তু কোনোভাবেই জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
‘সরকারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ-মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে। জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গারাকাদ উপকূলের ২০ মাইল দূরে সাগরে নোঙর ফেলে অবস্থান করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজের মালিক পক্ষের কাছে কেউ কোনো মুক্তিপণ চায়নি।’
মঙ্গলবার দুপুরে মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরের সোমালি উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে জলদস্যুরা এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একইসঙ্গে জিম্মি করে জাহাজের ২৩ নাবিক-ক্রুকে।
জিম্মি হওয়ার আগেই জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান এবং নাবিকরা জাহাজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে মালিক পক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপ মাধ্যমে বার্তা ও ভয়েস মেইল পাঠান। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
তবে জলদস্যুরা নাবিকদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নতুন করে জাহাজের কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বুধবার রাতে এক নাবিকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন। কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করছে না এবং খাবার ও পানি দিচ্ছে।’
এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির আরেকটি জাহাজ এভাবে নিয়ে গিয়েছিল সোমালীয় জলদস্যুরা। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এই জাহাজটি উদ্ধারে আত্মবিশ্বাসী কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘আগেরবার আমাদের যে জাহাজটি জলদস্যুর কবলে পড়েছিল, সেটিও যোগাযোগের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল। সাধারণত তারা (জলদস্যুরা) কোনো জাহাজ ছিনতাই করলে সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করে না। পরে তারা অবস্থা বুঝে যোগাযোগ করে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য