খুলনা মহেশ্বরপাশা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগম দাবি করছেন, তিনি অপহৃত হয়েছিলেন। তবে মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষ পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, প্রাথমিক আলামতে মনে হচ্ছে এই দাবি সঠিক নয়। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
রহিমা বেগমকে শনিবার অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মায়ের নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে প্রায় এক মাস ধরে তার সন্ধান করছিলেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। মরিয়মের কান্নার ছবি ছুঁয়ে যায় সবাইকে।
বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রহিমা বেগমকে। কুদ্দুস মোল্লার স্বজনদের দাবি, রহিমা তাদের বলেছিলেন সম্পত্তি নিয়ে প্রতিবেশী ও মেয়েদের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। এ কারণেই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর থেকে নিশ্চুপ ছিলেন রহিমা বেগম। খুলনার সোনাডাঙ্গায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রোববার সকালে মরিয়ম মান্নানসহ অন্য সন্তানরা দেখা করতে গেলেও তাদের সঙ্গে কথা বলেননি তিনি।
পুলিশের অনুরোধে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের জানালার কাছে এসে দাঁড়ান রহিমা বেগম। মরিয়ম মান্নান এ সময় ‘মা’ বলে ডাক দিলে তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে হেঁটে চলে যান।
তবে দুপুরের পরে মরিয়মসহ অন্য মেয়েরা পিবিআই কার্যালয়ে এসে রহিমা বেগমকে জড়িয়ে ধরেন। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিমা।
দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক দোলা দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকা অবস্থায় তার (রহিমা) মেয়েরা দেখা করতে এসেছিল। তবে তিনি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিলেন না। পরে আমার অনুরোধে জানালার কাছে এসেছিলেন। মরিয়ম মা বলে ডাক দিলে আবার ভেতরে চলে যান। পরে তাকে আমরা পিবিআই খুলনা জেলা কার্যালয়ে হস্তান্তর করি।
‘পিবিআই কার্যালয়েও তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করা হয়। তবে প্রথম দিকে তিনি একেবারে নিশ্চুপ ছিলেন।’
খুলনা পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নানাভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে কোনোভাবেই তিনি মুখ খুলতে চাননি।
‘তবে দুপুরের পর তার মেয়ে মরিয়মসহ অন্যরা পিবিআই কার্যালয়ে এসে রহিমা বেগমকে জড়িয়ে ধরেন। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিমা বেগম।’
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘মেয়েদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর রহিমা বেগম মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবেশী কিবরিয়া ও মহিউদ্দীনসহ তিনজন তাকে অপহরণ করেছিল। তাকে কোথাও আটকে রেখে ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। পরে ১ হাজার টাকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘রহিমা বেগমের দাবি, তিনি কিছুই চিনতে পারছিলেন না। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি চট্টগ্রাম ও বান্দরবান যান। পরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে পূর্বপরিচিত ভাড়াটিয়ার ফরিদপুরের বোয়ালখালী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে যান। তার কাছে কোনো মোবাইল নাম্বার না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।’
রহিমা বেগম যাদের বিরুদ্ধে জোর করে স্ট্যাম্পে সই নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন সেই গোলাম কিবরিয়া, মহিউদ্দীনসহ চারজনকে ৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে ৩০ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় হেলাল শরীফ নামে আরেকজনকে। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর রহিমার স্বামী বিল্লাল ঘটককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা সবাই কারাগারে আছেন।
রহিমার দাবি সত্যি হলে, ২৭ আগস্ট তিনি অপহৃত হওয়ার পর ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কিবরিয়া ও মহিউদ্দীনরা তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে ছেড়ে দেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম, বান্দরবান, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালখালী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান।
অপহরণকারীদের দেয়া মাত্র ১ হাজার টাকায় অন্তত ১৩ দিন তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় কীভাবে কাটালেন সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পিবিআই।
রহিমা অপহৃত হওয়ার অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রহিমা বেগমকে উদ্ধারের সময়ে তার কাছ থেকে একটি সাদা ব্যাগ পাওয়া গেছে। তাতে ওষুধ ছিল, পোশাকসহ অন্য মালামাল ছিল। একজন ব্যক্তি অপহরণ হলে তার সঙ্গে এগুলো থাকতে পারে না। তাই এটা অপহরণ নাও হতে পারে।
‘আমরা রহিমা বেগমের বক্তব্য খতিয়ে দেখছি। অনেক রহস্য রয়ে গেছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী তদন্ত শেষে সবকিছু প্রকাশ করা হবে।’
যে বাড়ি থেকে উদ্ধার তারা যা বলছেন
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামে কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রহিমা বেগমকে।
কুদ্দুস মোল্লার ভাগনে জয়নাল ব্যাপারীর দাবি, তিনি শুক্রবার রাতেই রহিমার অবস্থানের তথ্য মরিয়ম মান্নানের পরিবারকে জানিয়েও কোনো সাড়া পাননি।
জয়নাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনে শুক্রবার বিকেলে যমুনা টিভিতে তার নিখোঁজ সংবাদ দেখি। রহিমার সঙ্গে মিল দেখে আমি বাড়িতে গিয়ে তার চেহারার সঙ্গে মেলাই, দেখি উনিই সেই জন।
“রহিমা বেগমকে ভিডিও দেখালে শুধু বলে ‘এটা তো আমি’। তখন তাকে খোঁজা হচ্ছে জানালে সে বলে ‘আমি বাড়ি ফিরে যাব না।”
জয়নাল বলেন, ‘এরপর আমি যমুনা টিভির ভিডিওতে কমেন্ট করি। সেখানে কোনো উত্তর না পেয়ে আবার সার্চ দিতে থাকি। তখন নিখোঁজ বার্তায় তার ছেলে মিরাজের নম্বর পাই। শুক্রবার রাতে মিরাজের নম্বরে কল দিলে তার স্ত্রী ফোন ধরে।
“আমি তাকে বলি রহিমা বেগম এখানে আছে। তখন অপর পাশ থেকে উত্তর আসে ‘আমি ওনাকে চিনি না। এ নম্বরে আর ফোন দেবেন না’। এই বলে সে ফোন কেটে দেয়।”
জয়নাল বলেন, ‘তার ছেলে–মেয়ে তাকে (রহিমা) কেউ পছন্দ করে না। তিনি বাড়িতে ফিরে যাবেন না। তিনি বাড়ি গেলে তাকে মেরে ফেলা হবে বলেও জানান রহিমা বেগম। তারা বাড়ি বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছিল। বাড়ি বেচার টাকা নিয়ে অন্যত্র চলে যাবে। তিনি তাতে রাজি নন।’
কুদ্দুস মোল্লার বড় মেয়ের জামাই নূর মোহাম্মদের দাবি, সম্পত্তি নিয়ে প্রতিবেশী ও মেয়েদের সঙ্গে রহিমার বিরোধ চলছিল। এ কারণেই তিনি বাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন।
নূর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রহিমা বেগম আমাদের এখানে এসে বলেছিলেন আমাকে একটা কাজ খুঁজে দেন, আমি আর বাড়ি ফিরে যাব না। যেকোনো কাজ, ইটভাটার হোক, জুট মিলের হোক বা বাসাবাড়ির হোক।
‘আমার মেয়েদের সঙ্গে আমার শত্রুতা, মেয়েরা আমাকে ভালো জানে না, তারা আমাকে চায় না, আমার সম্পত্তি চায়। প্রতিবেশীও আমার সম্পত্তি চায়।’
কুদ্দুস মোল্লার প্রতিবেশীদেরও একই কথা বলেছেন রহিমা বেগম।
নূর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে জানান, রহিমা বেগম ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের বাড়িতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘ওইদিন বিকেলে রহিমা বেগম সৈয়দপুর বাজারে আসেন। তিনি অনেক দোকানে কুদ্দুস মোল্লার বাবা মোতালেব মুসল্লির বাড়ি খুঁজছিলেন। এই বাজারেই আমার দোকান আছে। এক দোকানদার আমার দাদা শ্বশুরকে খুঁজছে দেখে আমার কাছে নিয়ে আসে।
‘আমি তাকে বাড়িতে পাঠাই। বাড়ি গিয়ে আমার শাশুড়ি প্রথমে চিনতে পারছিলেন না। মরিয়মের মা তখন বলতে থাকেন, খুলনায় আমার বাড়িতে আপনারা ভাড়া ছিলেন, আমি মিরাজের মা, হুজুরের বউ। তখন চিনতে পেরে তাকে ভেতরে নিয়ে যান। সে বলেছিল, আমি বেড়াতে আসছি, দুই-তিন দিন থাকব। আমরা অতিথি ভেবে স্বাভাবিক আচরণ করেছি।’
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘এর মধ্যে তিনি (রহিমা) দুই বার বোয়ালমারী সদর হাসপাতালে গেছেন চোখ দেখাতে। একদিন গেছেন ইউনিয়ন কার্যালয়ে। তিনি বাইরে গিয়ে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতেন কি না বা বা টাকা কোথা থেকে পেতেন সেটা বলতে পারছি না।’
প্রতিবেশী স্থানীয় মেম্বার মোশারফ হোসেন মূসা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনিবার সকালে জয়নাল আমাকে রহিমা বেগমের নিখোঁজের বিষয়টি জানায়। তখন আমি খুলনা সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামকে অবগত করি। আমি একটা সালিশে গিয়েছিলাম তার অফিসে। তিনি মিটিংয়ে ছিলেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলেন।
‘পরে বিকেল ৫টার দিকে তিনি আমাকে কল দেন। বলেন, এ রকম একটা ঘটনা আছে। কাউন্সিলর বলেন আপনি ওই নারীকে দেখে রাখেন, আমরা আসব। এর মধ্যেই রাত ১০টার দিকে আমাকে ফোন করে লোকেশন জানতে চান, সাড়ে ১০টার দিকে তারা উপস্থিত হন। পরে খুলনা পুলিশ বোয়ালমারী থানাকে ইনফর্ম করে তাকে (রহিমা) খুলনা নিয়ে যান।’
আরও পড়ুন:জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা (লিগ্যাল এইড)-এর মাধ্যমে সরকারি খরচায় ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩০১ মামলায় আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত লিগ্যাল এইড-এর মাধ্যমে আইনি সহায়তার বিস্তারিত তথ্য এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিগ্যাল এইড-এ মে-২০২৫ পর্যন্ত ১২ লাখ ২৬ হাজার ১৯ জনকে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটির অধীনে সরকারি খরচায় এই সময়ের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ২৯ হাজার ১৬৮ জন, দেশের ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিসের ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯২ জন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনি সহায়তা সেলের মাধ্যমে ২৯ হাজার ৩৩১ জনকে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্প লাইন কল সেন্টারের (টোল ফ্রি- ১৬৪৩০) মাধ্যমে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৮ জনকে সেবা দেয়া হয়।
দেশে আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের’ অধীনে সরকারি খরচায় এ সেবা দেওয়া হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
সোমবার (২৩ জুন) সকালে ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, সাবিনা আক্তার তুহিনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতায় উসকানি ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অন্যতম। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই নবাবগঞ্জের ষোল্লা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে, গতকাল (রবিবার) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেটের মনিপুরীপাড়ার একটি আবাসিক ভবন থেকে ফয়সাল বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে ডিবির আরেকটি দল।
তার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট একটি হত্যা মামলায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও হত্যার ঘটনায় তুহিন ও বিপ্লব—উভয়েই গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন। বিশেষ করে, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় ফয়সাল বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল বলে দাবি পুলিশের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক হয়রানির জন্য নয়, যথাযথ প্রমাণ ও মামলার ভিত্তিতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দুজনেরই রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে এবং তদন্তে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিবির কর্মকর্তারা।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে পুলিশকে মারধর করে পালিয়েছেন হত্যা মামলার এক আসামি।
আসামি শরিফুল ইসলাম (২২) দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হরিপুর গ্রামের মৃত শফিক আহম্মেদের ছেলে। তিনি রাজধানীর খিলগাঁও থানার জিসান হোসেন (১৪) হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার পর সংশ্লিষ্ট আদালতের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল শহিদুল্লাহকে মারধর করে ছুটে পালিয়ে যান আসামি শরিফুল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ এসআই রিপন।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশকে আঘাত করে তিনি পালিয়ে যায় আসামি শহিদুল।
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের এডিসি মাইন উদ্দিন বলেন, আসামির হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। তিনি ধাতব কিছু দিয়ে হাতকড়া ঢিলা করে কৌশলে খুলে ফেলে। পরে পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোতোয়ালি থানাকে জানানো হয়েছে আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলমান।
প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার বাজার থেকে ২৫৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন বলেন, তিনটি কোম্পানির শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগ কার্যক্রমে মার্কেট ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। মার্কেট ম্যানিপুলেশনের সঙ্গে তিনি (সাকিব) জড়িত।
এর আগে গত সোমবার সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। সাকিব ছাড়া ১৪ আসামি হলেন— সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) ও তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজী ফুয়াদ হাসান, কাজী ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ুন কবির ও তানভির নিজাম।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ অভিপ্রায়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬১ এর ১৭ ধারা) পরিকল্পিতভাবে লঙ্ঘনপূর্বক নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও অ্যাকাউন্টসমূহে অসাধু, অনৈতিক ও অবৈধ উপায়ে ফটকা ব্যবসার মতো একাধিক লেনদেন, জুয়া ও গুজবের মাধ্যমে বাজারের কারচুপি করেছেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার সংঘবদ্ধভাবে ক্রমাগত ক্রয়-বিক্রয়পূর্বক কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওই শেয়ারসমূহে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে তাদের ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎপূর্বক অস্বাভাবিক রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ বা প্রসিড অব ক্রাইম শেয়ার বাজার থেকে সংঘবদ্ধভাবে উত্তোলন করেছেন। আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ক্যাপিটাল গেইনের নামে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের ২১ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপনের অভিপ্রায়ে লেয়ারিং করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন। তিনি ১৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বমোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক এবং সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
ওই মামলায় সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে বলা হয়, আসামি মো. আবুল খায়ের (ওরফে হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইস্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করে বাজার কারসাজিতে যোগসাজশ করেন। সরাসরি সহায়তাপূর্বক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কারসাজিকৃত শেয়ারে বিনিয়োগে প্রতারণাপূর্বক প্রলুব্ধ করে তাদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে অপরাধলব্ধ আয় হিসেবে শেয়ার বাজার হতে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০বি/১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে সাকিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করবেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, কেউ বোমা মারলেও তিনি ভয় পাবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুরোনো হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারপতিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করতে গত ৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল-২ এর কার্যক্রম শুরু হয়ে গেল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পথ চলি। তার ওপর নির্ভর করে কাজ করি। কেউ বোমা মারলেও ভয় পাব না। কেউ গুলি করে মেরে ফেললে আমার সব গুনাহ নিয়ে যাবে। ফলে আমার ভয়ের কারণ নেই। আমি কবরের পাশে দাঁড়ানো, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভয়ের কিছু নেই। বিচারের এই তরি বয়ে নিয়ে যাব।’ বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, কিছু লোক গত ১৫ বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। তারা নিষ্ঠুরভাবে শাসন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস করেনি। মানুষ নিজেদের কথা বলতে পারেনি। সেই ফ্যাসিস্টরা এখনো ফিরে আসার চেষ্টা করছে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শত শত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। তাদের অনেকে এখনো যথাযথ চিকিৎসা পাননি। বিচারকেরা চেষ্টা করছেন ছাত্র-জনতার দুর্ভোগ কমাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তাদের নাম উল্লেখ করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভয়হীন ও পক্ষপাতহীনভাবে তারা কাজ করবেন। তাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করা যায়। তারা আন্তর্জাতিক নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলবেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিষয়গুলোও মেনে চলবেন বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ সময় ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারপতি মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারপতি নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই আমাদের এই বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে যেন কোন প্রশ্ন না ওঠে। আমরা দেখতে চাই এই বিচার যেন হয় আন্তর্জাতিক মানের।’
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকের সংবর্ধনায় এজলাসে বসা শুরুর মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২ এর যাত্রা শুরু হলো। ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে কিছু মামলা এখানে আসবে বলে আশা করছি। আর কিছু নতুন মামলা এখানে দাখিল করব। ইনশাআল্লাহ, বিচারের অগ্রগতি দেশবাসী দেখতে পাবে। গত ৮ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ও সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন। এছাড়া প্রজ্ঞাপনে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে শত শত অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
রাজধানীর কুখ্যাত চাঁদাবাজ লিটনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ছিনতাই ও অপহরণের মামলা ছিল।
বুধবার (২৮ মে) রাত ১০টার দিকে পুরানো পল্টনের নিউ বন্ধু হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকায় ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অপহরণ ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল লিটন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর এসব কার্যক্রম আরও বেড়ে যায়।
পুরানা পল্টন এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। এরপর সেনাবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলো লিটনের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে।
বুধবার রাতে নিউ বন্ধু হোটেলের পাশের একটি ভবনে থাকা লিটনের ব্যক্তিগত অফিসে অভিযান চালানো হয়। হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হোটেল কক্ষ, অফিস ও তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি মোবাইল ফোন, নগদ ২ লাখ টাকা ও ১ হাজার ১০০ ডলার উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।
সেনাবাহিনীর মেজর শাকিব সাংবাদিকদের জানান, লিটনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য