ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে উদ্ধারের পর খুলনার দৌলতপুরে নেয়া পর্যন্ত রহিমা বেগম মুখ খোলেননি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রায় এক মাস ধরে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা থেকে মা নিখোঁজের অভিযোগ করে মরিয়ম মান্নানের পোস্টগুলো ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার মধ্যে শনিবার রাতে রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের একটি ঘর থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীকে। সেখান থেকে পৌনে ১১টার দিকে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয় পুলিশ। রাত ২টা ১০ মিনিটে মরিয়মের মাকে দৌলতপুর থানায় নেয়া হয়।
রহিমাকে যে বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, তার ছেলে এবং কুদ্দুসের ভাইয়ের স্ত্রী।
ব্রিফিংয়ে কী জানাল পুলিশ
ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনায় আসা মরিয়ম মান্নানের মাকে উদ্ধার নিয়ে শনিবার গভীর রাতে খুলনার দৌলতপুর থানায় ব্রিফিং করেন মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম, রহিমা বেগম ফরিদপুরে আছেন। পরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের নির্দেশে আমাদের দক্ষ কিছু কর্মকর্তা সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।’
রহিমার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছিল না জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার সকল ডিজিটাল ডিভাইস বন্ধ করে রেখেছিল। তাকে আমরা কোনোভাবেই ট্র্যাক করতে পারছিলাম না।
‘গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে যে বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই বাড়ির দুই নারীর সঙ্গে তিনি বসে গল্প করছিলেন, তবে আমাদের অফিসাররা তাকে উদ্ধারের পর কোনো কথার জবাব দেননি। সেই থেকে তিনি নির্বাক রয়েছেন।’
পুলিশের ভাষ্য, ফরিদপুরের সেই বাড়ি আটক কুদ্দুস মোল্লার, যিনি রহিমাদের খুলনার বাসায় ভাড়া থাকতেন। খুলনা শহরে পাটকলের শ্রমিক ছিলেন কুদ্দুস।
পুলিশ আরও জানায়, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে রহিমার ছেলে মিরাজ একবার কুদ্দুসের বোয়ালমারীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। রহিমাদের সঙ্গে কুদ্দুসের তেমন সম্পর্ক ছিল না।
কুদ্দুসের বাড়ি থেকে তিনজনকে আটকের কথা জানিয়ে কেএমপির কর্মকর্তা মোল্লা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ওই বাড়ি থেকে আমরা তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে এসেছি। তারা হলেন কুদ্দুস মোল্লার স্ত্রী, ছেলে ও তার (কুদ্দুস) ভাইয়ের স্ত্রী। এই তিনজনের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, গত ১৭ আগস্ট ওই বাড়িতে রহিমা বেগম গিয়েছিলেন। প্রথমে তারা রহিমাকে চিনতে পারেনি। পরে একপর্যায়ে তাকে চিনতে পারে।
‘তখন তাকে সাবেক বাড়িওয়ালা হিসেবে বেশ সেবাযত্ন করেন (কুদ্দুস ও তার বাড়ির লোকজন)। পরবর্তী সময়ে তাদের কাছে (রহিমা) জানান, এর আগে তিনি গোপালগঞ্জের মকছেদপুর ও চট্টগ্রামে ছিলেন।’
উদ্ধার হওয়া রহিমাকে শুরুতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হবে। নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে সেখান থেকে তাকে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হবে।
রহিমার প্রতিবেশীর অভিযোগ
রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় থানায় আনার পরে মহেশ্বরপাশা থেকে ছুটে আসেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘মরিয়মের বাবা মান্নান হুজুরের তিনটি বিবাহ ছিল। রহিমা বেগমদের পক্ষ ও আগের একটি পক্ষ স্বামীর মৃত্যুর সূত্রে একই জমি পেয়েছিলেন, তবে রহিমা বেগম অন্য পক্ষকে জমি ভোগ দখল করতে দিতেন না। তাই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে নিজেদের অংশের জমি প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করে দেন। তারপর থেকে কখনোই প্রতিবেশীরা সেই জমি দখলে নিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘জমি দখল করতে গেলে তারাই (রহিমা বেগমরা) মারামারি শুরু করে। থানা পুলিশ বা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক বছর আগে এ নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাদের মারামারি হয়েছিল। সেই থেকে স্থানীয় মানুষ তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না।
‘ওই দখলে রাখতে তারাই নাটক সাজিয়েছে। আমরা আগেও থানা পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কারণ অন্যদের কেনা জমি তারা দখল করে রাখলেও আদালত একদিন রহিমা বেগমের বিপক্ষে রায় দেবে। সেদিন জমি ছেড়ে দিতে হবে। শুধু জমি দখলছাড়া না করতে তারা এই নাটক সাজিয়েছেন।’
রবিউল আরও বলেন, ‘স্থানীয় মানুষ হিসেবে আমরা যতদূর জানি, রহিমা বেগমকে তার মেয়েরা তেমন ভালোবাসত না। মেয়েরা মায়ের কথাও তেমন শুনত না। তার মা মেয়েদের বিয়ের জন্য বেল্লাল হাওলাদার ওরফে বেল্লাল ঘটককে নিয়মিত বাড়িতে ডাকতেন।
‘মেয়েদের ওপর বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে তিনি সেই বেল্লাল ঘটককেই বিয়ে করেন। মেয়েরা তাকে দেখত না বলেই তিনি নতুন করে আরেকটি বিয়ে করেন।’
অপহরণের জিডি, মামলা ও সংবাদ সম্মেলন
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। রাত সোয়া ২টার দৌলতপুর থানায় অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমার ছেলে মিরাজ আল সাদী।
সে জিডি থেকে জানা যায়, নিখোঁজের সময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বেল্লাল হাওলাদার বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। দীর্ঘ সময় পরও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মাকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে ২৮ আগস্টে দৌলতপুর থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরী।
রহিমা নিখোঁজ হয়েছেন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোচ্চার হন মরিয়ম মান্নানসহ তার অন্য মেয়েরা।
গত ১ সেপ্টেম্বর খুলনায় সংবাদ সম্মেলন করেন রহিমার বাড়ির লোকজন। সে সময় জানানো হয়, রহিমার সঙ্গে জমি নিয়ে স্থানীয়দের মামলা চলছে। রহিমার করা সেই মামলায় আসামিরা হলেন প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মোহাম্মাদ জুয়েল ও হেলাল শরীফ।
আদালত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই।
দৌলতপুরে যে বাড়ি থেকে রহিমা নিখোঁজ হয়েছেন সেখানে শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির দ্বিতীয় তলা (যেখানে রহিমা থাকতেন) তালাবদ্ধ। নিচ তলায় ভাড়াটিয়ারা রয়েছেন।
ভাড়াটিয়ারা জানান, ওই বাড়িতে রহিমা ও তার স্বামী বেল্লাল নিয়মিত থাকতেন না।
ভাড়াটিয়া আকলিমা বেগম বলেন, ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে রহিমার জমি সংক্রান্ত বিরোধ হয়। তারপর থেকে রহিমা ও তার স্বামী খুলনা শহরের দিকে কোথাও ভাড়া থাকতেন। দেড় থেকে ২ মাস পরপর একবার এই বাড়িতে আসতেন। এক-দুই দিন থেকে আবারও চলে যেতেন।’
তিনি বলেন, ‘নিখোঁজের আগের দিন তিনি এখানে এসেছিলেন। রাতে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার স্বামীর সঙ্গে ছিলেন।
‘পরে রাত ১১টার দিকে শুনি, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি দ্বিতীয় তলা থেকে একটি বালতি নিয়ে নিচে এসেছিলেন পানি নিতে। পরে তার স্বামী কিছু দূরে এগিয়ে গিয়ে জানান, রহিমার এক জোড়া স্যান্ডেল ও ওড়না পাওয়া গেছে।’
অন্য নারীকে মা দাবি
২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে ১২ দিন আগে উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহকে রহিমা বেগমের বলে দাবি করেন তার মেয়েরা। ওই রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক এক পোস্টে বলেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এইমাত্র।’
২৩ সেপ্টেম্বর সকালে রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান, মাহফুজা আক্তার ও আদুরী আক্তার ফুলপুর থানায় পৌঁছান।
ওই সময় পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় ওই নারীর ছবিসহ পরনে থাকা আলামতগুলো মেয়েদের দেখান। মরিয়ম মান্নান ছবিসহ সালোয়ার-কামিজ দেখে দাবি করেন, এটিই তার মায়ের মরদেহ।
মরিয়ম মান্নান সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘২৭ দিন ধরে আমার মা নিখোঁজ। আমরা প্রতিনিয়ত মাকে খুঁজছি। এরই মধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় নারীর মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। সালোয়ার-কামিজ ছাড়াও ছবিতে আমার মায়ের শরীর, কপাল ও হাত দেখে মনে হয়েছে, এটাই আমার মা।’
সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে মরিয়মকে জানানো হয়, ডিএনএ টেস্ট ছাড়া মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ফুলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মোতালেব চৌধুরী শুক্রবার নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘মরিয়মের মায়ের বয়স ৫৫ বছর। আমরা যে গলিত মরদেহটি উদ্ধার করেছি, তার আনুমানিক বয়স ২৮ থেকে ৩২ বছর মনে হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় মরদেহটি তার মায়ের নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: বস্তাবন্দি মরদেহ মরিয়ম মান্নানের মায়ের কি না সংশয়
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘গত ১০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বওলা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহটির পরনে তখন গোলাপি রঙের সালোয়ার, গায়ে সুতির ছাপা গোলাপি, কালো-বেগুনি ও কমলা রঙের কামিজ এবং গলায় গোলাপি রঙের ওড়না প্যাঁচানো ছিল।
‘পরে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ১২ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয়। ডিএনএ টেস্ট করতে প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করা হয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘মরিয়ম মান্নান ওই মরদেহটি তার মা রহিমার দাবি করলেও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি। চূড়ান্তভাবে মরদেহ শনাক্তে মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করা প্রয়োজন।’
এখন কী বলছেন মরিয়ম মান্নান
মা রহিমা বেগমকে উদ্ধার নিয়ে ফেসবুকে কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মরিয়ম মান্নান। শনিবার রাত ১১টা ৩৭ মিনিটে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! এখন আমার থেকে খুশি আর কেউ নেই! খুলনার মহেশ্বরপাশায় নিখোঁজ আমার মাকে অক্ষত অবস্থায় ফরিদপুর থেকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
‘এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার এসআই লুৎফুল হায়দার। কেএমপি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে নিশ্চিত করেছেন।’
রোববার ভোর ৪টা ২৮ মিনিটে দেয়া আরেক স্ট্যাটাসে মরিয়ম তাকে ভুল না বোঝার আকুতি জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘সন্তান মাকে খুঁজবে খুব স্বাভাবিক। আপনার মা হারিয়ে গেলে আপনিও খুঁজতেন। ফুলপুরের লা* পর্যন্ত গিয়েছি মাকেই খুঁজতে। ফুলপুর থানার ওসিকে আমি তাদের দেয়া একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই কল দেই। ওখানে যাই, ডিএনএ টেস্টের জন্য আবেদন করি।
‘আমার মাকে আমি খুঁজেছি। সব জায়গায় যেয়ে একটা কথাই বলেছি, আমার মাকে চাই। মা যদি আত্নগো** করেন, তাকে এনে শাস্তি দিন। তাও আমার মা আমার চোখের সামনে এনে দিন দয়া করে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে মাকে পাওয়া গিয়েছে। আমি মায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। মায়ের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। মায়ের কোনো ভিডিও অথবা অডিও পাইনি যেখানে মা বলেছেন তিনি আত্মগোপন করেছেন।
‘সকলের কাছে কাছে গিয়েছি মাকে খুঁজে পেতে। যাদের কাছে গিয়েছি তারা জানেন কী চেয়েছি আমি। মাকে চাওয়া ছাড়া আর কিছু চাওয়া আমার ছিল নাহ; এখনও নেই। দয়া করে আমার মাকে আমার মায়ের সঙ্গে আমার দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি মাকে খুঁজেছি; সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব তাকে খোঁজা।’
মরিয়ম লেখেন, ‘মা এই তিরিশ দিন কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল, সেটা আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন। আমার মায়ের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দিন। আমার মায়ের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত আমাকে সহযোগিতা করুন। মা যদি আত্মগোপন করেও থাকেন, তবুও তাকে খোঁজার দায়িত্ব আমার। আমি মাকে খুঁজতেছি বলে আমাকে বলা হচ্ছে মায়ের আত্মগোপনে আমি জড়িত? তাহলে আমার কী করা উচিত ছিল? যখন শুনেছি আমার মা নিখোঁজ, তখন চুপ করে বসে থাকা উচিত ছিল? যারা প্রথম দিন থেকে বলছিলেন মা আত্মগোপন করেছেন তাদের কথা শুনে মাকে আর খুঁজতাম না? মাকে খুঁজেছি বলে আমাকে দোষী করা হবে?’
‘আপনারা আমাকে যে যাই দোষ দিন না কেন, প্রথম দিন থেকে আমি ছুটতেছি মায়ের জন্য। আজকে পেয়েও গিয়েছি। বারবার বলেছি মা আত্মগোপন করলে সামনে আনুন, শাস্তি দিন। আমার কলিজা জুড়াক। আমার কলিজা শান্ত হইছে। মায়ের চেহারাটা দেখেই আমার শান্তি। আপনারা যে যাই বলেন, এখন আমার মা আমার সামনে।’
মাকে পেতে ‘সহায়তা করায়’ অনেককে ধন্যবাদ জানিয়ে মরিয়ম মান্নান লেখেন, ‘মাকে খুঁজে পাওয়ার লড়াই ছিল আমার। আপনারা সহোযোগিতা করেছেন। আপনাদের সহযোগিতায় আজকে আমার মাকে খুঁজে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ! প্রথম দিনের মতোই আজকেও আমার একটাই চাওয়া, মাকে ছাড়া কিছুই চাই না। মাকে নিয়ে এই খুলনা শহর ছেড়ে দিব, মাকে নিয়ে দূরে চলে যাব। মাকে চাওয়া ছাড়া কিছুই চাওয়ার নাই।
‘যে জায়গা নিয়ে মামলা, সেই জায়গাও চাই না। শুধু মাকে চাই। মাকে আমার কাছে ন পাওয়া পর্যন্ত আপনাদের সকলের সহোযোগিতা কামনা করছি এবং আমি জানি একজন মাকে তার সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পৃথিবীর সকল মানুষ আমার পাশে থাকবেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমি খুশি, এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত নই। মাকে খুঁজতে যেয়ে যদি আমাকে দোষী হতে হয়, আমি সেই দোষ মাথা পেতে নেয়ার শক্তি এবং সাহস রাখি, ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন:গাইবান্ধার সাঘাটায় ১৭ বছরী বয়সী কিশোর সম্রাট হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। অনলাইন জুয়া খেলতে ক্যামেরা বন্ধক নেয়ার জেরে তাকে খুন করে তারই বন্ধু রিফাত। পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত কোমলপানীয় পান করে অজ্ঞান হয়ে গেলে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় সম্রাটকে।
শুক্রবার রাত ১টার দিকে উপজেলার পশ্চিতবাড়ি গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সাঘাটা থানা পুলিশ। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল ওই বন্ধুর বাড়িতে ক্যামেরা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সম্রাট।
সম্রাট উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের আফজাল হোসেনের ছেলে। অন্যদিকে অভিযুক্ত ১৭ বছরের রিফাত সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম বাটি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, সম্রাট ও রিফাত একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুজনে একই বিদ্যালয়ের একই ক্লাসের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি অনলাইন জুয়া খেলে টাকা খোয়ায় সম্রাট। জুয়ায় হেরে সে তার ক্যামেরাটি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধু রিফাতের কাছে বন্ধক রাখে। কয়েকদিন পর রিফাতের কাছে ক্যামেরা ফেরত নিতে যায় সে। সেখানে গিয়ে সম্রাট জানতে পারে, রিফাতও জুয়ায় হেরে বন্ধক নেয়া ক্যামেরা বগুড়ায় কারও কাছে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। পরে এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
পরবর্তীতে গত ১৭ এপ্রিল পরিকল্পিতভাবে সম্রাটকে ক্যামেরা নিতে নিজ বাড়িতে ডাকেন রিফাত। ওইদিন বিকেলেই সম্রাট বন্ধু রিফাতের বাড়িতে ক্যামেরা নিতে গিয়ে সেদিন থেকেই নিখোঁজ হয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্তানকে না পেয়ে পরের দিন নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চেয়ে সাঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে সম্রাটের পরিবার। রিফাতের ডাকে সম্রাট বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
জিডির পর শুক্রবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্রাটকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে সাঘাটা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বন্ধু সম্রাটকে খুন করে সেপটিক ট্যাংকে গুম করে রাখার কথা স্বীকার করে সে।
পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১টার দিকে পশ্চিতবাড়ি গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বসতঘরের পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধক রাখা ক্যামেরা বিক্রি করা নিয়ে দুই বন্ধুর দ্বন্দ্বের জেরে এক বন্ধু অপরজনকে হত্যা করে। অভিযুক্ত রিফাত পরিকল্পিতভাবে তার বন্ধু সম্রাটকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ৭/৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করায়, যা খেয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে সম্রাট। পরে ঘুমন্ত সম্রাটকে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত রিফাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সম্রাটের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুচরে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রবাসীকে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
উপজেলার চরপানিয়া এলাকায় শনিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ শতাধিক মানুষ।
পরিবারের এক সদস্যের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় সৌদি আরব প্রবাসী মুজিবুরকে (৪৫)। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও ঘটনায় জড়িত খাসকান্দি এলাকার জহির হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জহির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।
চরপানিয়া এলাকার একটি ক্ষেত থেকে গত ১০ মার্চ প্রবাসী মুজিবুরের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় অভিযুক্ত জহির হোসেন।
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে দৈনিক যুগান্তরের এক সাংবাদিকের ওপর ঝাঁঝালো রাসায়নিক নিক্ষেপ করেছে দুর্বৃত্তরা।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কলমা এলাকায় শুক্রবার রাত আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ইকবাল হাসান ফরিদ দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক।
ঘটনার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ফরিদকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাংবাদিক ইকবাল হাসান ফরিদ বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে ঢাকা থেকে সাভারের বাসায় ফিরছিলাম। আনুমানিক পৌনে ১২টার দিকে বাসার অদূরে অন্ধকার গলিতে পৌঁছালে পেছন থেকে একজন মুখোশধারী যুবক আমাকে নাম ধরে ডাক দেয়। ডাক শুনে দাঁড়ানোর পর মুখোশধারী দুই যুবক স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে আগামী এক মাসের মধ্যে সাভার এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এলাকা ছেড়ে না গেলে সপরিবারে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
‘এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগে পেছন থেকে তাদের একজন মরিচের গুঁড়াসদৃশ এক প্রকার ঝাঁঝালো কেমিক্যাল আমার মাথায় ও চোখে-মুখে ছিটিয়ে দেয় এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে চলে যায়। ঝাঁঝালো কেমিক্যাল ছিটিয়ে দেয়ার পর চোখে-মুখে ও শরীরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা সাভারের যে দুইজন জনপ্রতিনিধির নাম উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দিয়েছে, তাদের কারও সঙ্গে আমার পরিচয়, যোগাযোগ কিংবা কোনো ধরনের বিরোধ নেই। তৃতীয় কোনো পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে তাদের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পাশাপাশি হাসপাতালে অসুস্থ সাংবাদিক ফরিদকে দেখতে যায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
সাভার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘তদন্ত করে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেলকে কারণ দর্শোনোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১৫ এপ্রিল নাটোর জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশার মনোনয়নপত্র জমাদানে বাধা প্রদান, মারপিট ও অপহরণের ঘটনা যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হয় এবং উক্ত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি সুমনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, যা দলীয় আচরণবিধি পরিপন্থির সামিল।
‘এমতাবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার জবাব আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
ওই সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দলীয় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাবের প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন সোমবার বিকেলে সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা অনলাইনে আবেদনের পর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের প্রতিলিপি জমা দিতে আসেন। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মারধর করে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে আবারও বেধড়ক মারধর করে বাড়ির সামনে ফেলে যায়। সেখান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের পরিবার লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। ইতোমধ্যে তাদের করা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সুমন নামের এক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, লুৎফুল হাবীব রুবেলের পক্ষ নিয়েই সুমনসহ অন্য আসামিরা দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধর করেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় রুবেলকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
লুৎফুল হাবীব রুবেল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তার। তিনি প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক।
আরও পড়ুন:জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খাইরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ৪০ বছর বয়সী খাইরুল ইসলাম চরগড়গড়ী আলহাজ মোড় পশ্চিমপাড়ার মৃত নসিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে।
আহতদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, ৫০ বছর বয়সী সাজু হুদী, জামাত ফকির ও নুর বেগম, ৫৫ বছর বয়সী মানু প্রামানিক, ৬০ বছর বয়সী মোসলেম উদ্দিন, ৩৫ বছর বয়সী খোকন প্রামাণিক, জিল্লুর, ওলিউর রহমান, মজিদ, ইছাই প্রামানিক ও মো. মিঠুন এবং ৩০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে জমিজমা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই গ্রুপের লোকজনদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে গত দুই দিনে দুই গ্রুপের মধ্যে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও ঘটে। এইসব ঘটনার জের ধরে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তারা ফের সংঘর্ষে জড়ায়।
সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলেই খাইরুল নিহত হন। আর আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান স্থানীয়রা। তাদদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঈশ্বরদী থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন মারা গেছেন। আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত বলতে পারব।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় টাকা না পেয়ে আব্দুল কাদের নামে এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই ছেলের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর পলাতক রয়েছে আরিফ হোসেন নামের ওই যুবক।
উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া পাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রাশেদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘টাকার জন্য প্রায়ই বাবাকে চাপ দিত ২০ বছর বয়সী আরিফ। সম্প্রতি বাবার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল কেনে সে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে আবারও ১০ হাজার টাকা চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান আব্দুল কাদের। এতে আরিফ ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করার হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আব্দুল কাদের পাশে বড় ছেলের বাড়িতে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে পেছন থেকে বাবার পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় আরিফ। এ সময় স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আরিফ পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা চলছে।’
মন্তব্য