রাঙ্গামাটির সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার ছয় সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে যে মামলা করেছেন, তাতে ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই সাংবাদিকরা কী করেছেন, সেটির খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, একজন লিখেছেন, ‘চিনু বেগম কি আইনমন্ত্রীর চেয়ে শক্তিশালী’।
গত জুনে যে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তার জামিনের পর অন্য একজন লেখেন- ‘পাহাড়ের ডন চিনু বেগমের কী হবে।'
চিনুকন্যার দাবি, তিনি ও তার মা এসব ফেসবুক পোস্টে মারাত্মক মানসিক আঘাত পেয়েছেন। তাই মামলা করেছেন।
১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রাজধানীকেন্দ্রিক দুটি টেলিভিশনের দুজন রিপোর্টার ও রাঙ্গামাটির চারজন সাংবাদিকের নাম রয়েছে।
বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে আগামী ১৩ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা
যাদের এই মামলায় আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক। তারা হলেন দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ ও সংবাদভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার অনির্বাণ শাহরিয়ার।
বাকি যে চারজনের নাম আছে তারা হলেন দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক ফজলে এলাহী, জাগো নিউজের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি সাইফুল হাসান, টিবিএসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দিদারুল আলম ও বণিক বার্তার রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি প্রান্ত রনি।
অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়।
গত জুনেও ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন চিনুকন্যা নাজনীন আনোয়ার। এই মামলার কারণ ছিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের একটি প্রতিবেদন, যেটি ছিল রাঙ্গামাটির ডিসি বাংলো পার্ক অবৈধভাবে দখল করে রাখার বিষয়ে।
দুই বছরের জন্য অন্য একজনের নামে পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরও তা দখলে রেখেছিলেন নাজনীন আনোয়ার নিপুণ।
সেই মামলার প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা ফেসবুকে যে লেখালেখি করেন, সেটিই নতুন মামলার উপজীব্য।
যে ফেসবুক পোস্টের কারণে মামলা
নাজনীন আনোয়ার নিপুণের নতুন মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার কারণে মামলার বাদী এবং তার মা ফিরোজা বেগম চিনু সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ হয়ে মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আসামিরা কী লিখেছিলেন
বায়েজিদ আহমেদ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘কে বেশি ক্ষমতাবান, আইনমন্ত্রী নাকি রাঙ্গামাটির আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি চিনু?’
আইনমন্ত্রী একাধিক আলোচনায় জানিয়েছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই সেই মামলা নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন রায়েজিদ।
আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেত্রী ও সাবেক এমপি চিনু করা আইসিটি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক ফজলে এলাহীর অনতিবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি চাই।’
অনির্বাণ শাহারিয়ারের পোস্টটি ছিল এমন, ‘জামিন হয়েছে, মিথ্যা মামলা দেয়ার। লেডি ডন চিনুর বিচার কে করবে?’
ফজলে এলাহী গত জুনে গ্রেপ্তারের পর জামিন পাওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া ছিল অনির্বাণের।
জামিন হওয়ার আগে তিনি লিখেছিলেন, ‘ফজলে এলাহীর মুক্তি কেন হবে না। লেডি ডন চিনু কেন মিথ্যা মামলার শাস্তি পাবে না?’
আরেক পোস্টে লেখেন, ‘মগের মুল্লুক…! স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাদানে মামলা হওয়া উচিত…! চিনু দ্য লেডি ডন…!’
প্রথম মামলাটি যার বিরুদ্ধে হয়েছিল, সেই ফজলে এলাহী তাকে গ্রেপ্তারের সময় লিখেছিলেন, ‘ফিরোজা বেগম চিনু ও তার মেয়ের মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্ট দেখিয়ে আমায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সাংবাদিকতার এই প্রতিদান? আমার মৃত্যুর জন্য চিনু ও তার মেয়েকে দায়ী করে গেলাম। রাঙ্গামাটিবাসী এদের বিচার করিও।’
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তরে এসে চিনুকন্যা দাবি করেছেন, ফেসবুকে এমন লেখার কারণে তার ও তার মায়ের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। যে কেউ যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন, কিন্তু এই ঘটনা ঘটলে এখন তার মাকেই দায়ী করা হবে।
সাংবাদিক সাইফুল হাসানের পোস্টে কারও নাম উল্লেখ ছিল না। ফজলে এলাহীকে গ্রেপ্তারের পর তিনি লেখেন, ‘এলাহীকে নিয়ে চিন্তা করছি না, চিন্তা করছি ভাই তোদের নিয়ে… কী যে হবে তোদের! এটা এলাহী, ওরে নিয়ে বড্ড ভয়। সে বের হয়ে যে কী করবে! আজ রাতে সেসব ছক আঁকবে আমার যা অভিজ্ঞতা। সাধু সাবধান।’
এক পোস্টে সাইফুল লেখেন, ‘খুশি হইও না মনু, খেলা আবি বাকি হে।’ অর্থাৎ এই গণমাধ্যমকর্মীর কোনো লেখাতেই চিনু বা তার মেয়ের নাম উল্লেখ নেই।’
আরেক গণমাধ্যমকর্মী দিদারুল আলম লেখেন, ‘‘ফজলে এলাহী কিন্তু বেশ সুবিধার না। এই লোকটাকে যত তাড়াতাড়ি কারাগার থেকে মুক্তি করা যায় ততই ভালো, নইলে আবার দেখবেন যে, কারাগার থেকে বেরিয়ে ‘অচলায়তনের ফিরিস্তি’ লেখা শুরু করে দিয়েছে।’’
পরে আরও এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এই প্রতিবেদনটি সম্পাদনা করার দায়ে যদি ফজলে এলাহী ভাইকে কারাভোগ করতে হয়, তবে আমাকেও কারাগারে নেয়া হোক।’ অর্থাৎ তিনিও কারও নাম উল্লেখ করেননি।
একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে অমার্জনীয় ভুল’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনের লিংক শেয়ার করে দিদারুল আরেক পোস্টে লেখেন, ‘পড়েছি ২০১৪ সালে। দুর্বল মেধার হলেও মনে রেখেছি চিনু ও এলাহীর নাম দুটো।’
গণমাধ্যমকর্মী প্রান্ত রনি পোস্ট দিয়েছেন, ‘সাংবাদিক ফজলে এলাহীর প্রতিবেদন ১০০ ভাগ সত্য। পুলিশের গোপন প্রতিবেদন ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন তার প্রমাণ। ১০০ ভাগ সত্য সংবাদ করার পরও সাংবাদিককে জেলে যেতে হবে?’
তিনিও কারও নাম উল্লেখ করে পোস্ট দেননি।
কেন মামলা করেছেন
মামলা করার মূল কারণ হিসেবে নাজনীন আনোয়ার দাবি করছেন, আসামিরা ফেসবুকে কটাক্ষ করেছেন।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করাটার কি যুক্তি আছে- জানতে চাইলে নাজনীন আনোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কাছে এটা আমার এবং আমার পরিবারের আত্মসম্মানের জায়গা মনে হয়েছে। আমার মায়ের প্রভাব খাটানোর বিষয়ে বলা হয়েছে যেটা আমার আত্মসম্মানের বিষয়।
‘আমার আত্মসম্মানের যে জায়গাটা খর্ব হয়েছে সেই আবেদনের সর্বোচ্চ যে জায়গাটা সেখানে দিয়েছি। আমার জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে বলেই আমি মামলা করেছি।’
কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও দিদারুল আলমের একটি পোস্টে তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে ভেবেছেন চিনুকন্যা। বলেন, ‘আমি এলাহীকে চিনি। সে বের হলে খবর আছে। হ্যান করবে, ত্যান করবে ইত্যাদি।’
দিদারুলের স্ট্যাটাসে কারও নাম উল্লেখ নেই, তাহলে মামলা কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই পোস্টে সমস্যা আমি বলিনি। এটা আদালত বিশ্লেষণ করবে। আমি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
‘এই স্ট্যাটাসে মামলা!’
ফেসবুকে এই সাধারণ একটি পোস্টের কারণে মামলা খেতে হবে জেনে বিস্মিত দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে সাংবাদিক ফজলে এলাহী ফিরোজা বেগম চিনুর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছেন। এই কারণে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। একজন সংবাদকর্মী দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা খান, আমার নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে এর প্রতিবাদ করা। তাই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
আইনমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রী বলেছেন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার আগে অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এই ভদ্র মহিলা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফজলে এলাহীকে জেলে নিয়েছেন। এ কারণে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি যে, ‘কে বেশি ক্ষমতাবান, আইনমন্ত্রী নাকি রাঙ্গামাটির আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি চিনু’।”
তিনি বলেন, ‘এর কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আটটি ধারায় আমিসহ ছয়জন সাংবাদিককে আসামি করে মামলা করেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে উনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছেন।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের মামলা নিন্দনীয়। আমরা চাই যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা প্রত্যাহার করা হোক।’
নাম উল্লেখ না করে এসব পোস্টের কারণে মামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি এখনও আদালত আমলে নেয়নি। তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে বলেছে। পিবিআই যদি তদন্ত করে কিছু না পায় তাহলে মামলা বাতিলও করে দিতে পারে।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য