নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে থানায়। এর জেরে বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ পুরো নগর অবরুদ্ধ করে ফেলেন পরিবহন শ্রমিকরা। প্রায় ৪ ঘণ্টার জন্য অচল হয়ে পড়ে সিলেট।
নগরের অন্তত ২৫টি স্থানে এলোপাতাড়িভাবে গাড়ি রেখে সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে রিকশা, এমনকি বাইক চলাচলেও বাধা দেয়া হয়। জরুরি কাজে কেউ বাইক নিয়ে যেতে চাইলে তাদের হেনস্তা, এমনকি মারধরের অভিযোগও উঠেছে।
এর আগে পাঁচ দফা দাবিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিনভর কর্মবিরতি পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে বন্ধ করে দেয়া হয় সব ধরনের যান চলাচল। এমনকি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও বাধা দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবারের অবরোধ কেন?
পরিবহন শ্রমিকদের দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। এই বিরোধের জেরে সম্প্রতি লেগুনা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. শাহাব উদ্দিনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এর জের ধরে ১৪ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুরমা থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়।
শাহাবউদ্দিনের করা মামলায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মইনুল ইসলাম, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি জাকারিয়া আহমদ, হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি রুনু মিয়া মইন ও আওলাদ মিয়াসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় মারপিট ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়।
বৃহস্পতিবার এই মামলার ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করতে যান পরিবহন শ্রমিক নেতারা। এরপর সন্ধ্যা থেকে আচমকা সিলেট নগরের সবগুলো সড়ক অবরোধ করে দেন শ্রমিকরা। মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবিতে বন্ধ করে দেন যান চলাচল। মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে রিকশা, বাইক চলাচলেও বাধা দেন শ্রমিকরা। চালক এবং যাত্রীদের মারধরও করা হয়।
অবরোধে প্রায় অচল হয়ে পড়ে সিলেট নগর। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। অবরোধের কারণে কোনো গাড়ি নগরে প্রবেশ করতে বা বের হতে পারেনি।
মামলার আট দিন পর আন্দোলনে নামার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমরা আজই জানতে পেরেছি। আজ কয়েকজন শ্রমিক পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে এ ব্যাপারে দেখা করতে যান। তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।’
দুর্ভোগ-ক্ষোভ
অফিস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য রাত সাড়ে ৭টার দিকে বাইক নিয়ে বের হন বেসরকারি চাকুরে তমজিদ হোসেন। প্রায় ৩ ঘণ্টা কিন ব্রিজের ওপর আটকে ছিলেন তিনি।
তিনি বৃহস্পতিবার রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকরা সড়কে এলাপাতাড়িভাবে গাড়ি ফেলে রেখেছে। ফলে কোনো যানবাহনই যেতে পারছে না। বাইক দিয়ে যেতেও তারা বাধা দিচ্ছে। ফলে ৩ ঘণ্টা ধরে ব্রিজের ওপর আটকে আছি।’
শ্রীমঙ্গল থেকে বাসে করে সিলেট রওনা দিয়েছিলেন কল্লোল চক্রবর্তী। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মৌলভীবাজারের শেরপুরে আসার পর যানজটে আটকা পড়েন তিনি। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থেকে আবার শ্রীমঙ্গলে ফিরে যেতে হয় তাকে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে যান বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল। তিনি বলেন, ‘সব বাস বন্ধ রয়েছে। কেউ টিকিট বিক্রি করছে না। আচমকা এমন কর্মসূচিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।’
পরিবহন শ্রমিকদের এই অবরোধে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ফেসবুকে তুলে ধরেছেন অনেকেই।
সিলেট জেলা পুলিশের পরিদর্শক শ্যামল বণিক ফেসবুকে একটি ছবি যুক্ত করে লিখেছেন, ‘হাইওয়ে রাস্তায় দাউদাউ আগুন জ্বলতে দেখে ভয়ে সব গাড়ি থেকে নেমে যাত্রীরা যখন ছোটাছুটি করছে, তখন অসহায় অন্ধ ব্যক্তিটি তার শিশুসন্তানকে নিয়ে কান্না শুরু করেছে। তাদের অনেক কষ্টে নিরাপদে বাসস্ট্যান্ড পৌঁছিয়ে দিলাম।’
নগরের চৌহাট্টায় এমন দুর্ভোগের প্রত্যক্ষদর্শী আলমগীর কবির। তিনি বলেন, ‘রাতে চৌহাট্টা পয়েন্টে একটা মোটরসাইকেলে বাবা তার দুই শিশুকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের আটকে পরিবহন শ্রমিকরা লাঞ্ছিত করে। ব্যাপক অত্যাচারের শিকার হতে হয় তাদের।’
ফেসবুকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুডপান্ডার খাবার বিতরণকারী এক তরুণের আর্তনাদের ভিডিও। যাতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি অভিযোগ করছেন, বৃহস্পতিবার রাতে নগরের খাবারের অর্ডার নিয়ে বাইকে করে আসছিলেন। শাহী ঈদগাহ এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা তাকে আটকে মারধর করে।
সিলেটের নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম কিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা দিনের পর দিন তাণ্ডব চালাচ্ছে। মানুষকে জিম্মি করে ফেলছে। তবু আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে একটা মামলাও হয়নি। কোথাও তাদের তাণ্ডবে বাধা দিতেও দেখা যায়নি।’
কী বলছেন শ্রমিক নেতারা
পুলিশের কারণেই সিলেটের মানুষকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে দাবি করছেন সিলেট জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি মইনুল ইসলাম। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘১৩ সেপ্টেম্বরের ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনারের অন্যায় কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে, তার অপসারণ দাবিতে। আর বৃহস্পতিবারের দুর্ভোগের দায় মহানগর পুলিশ কমিশনারের।’
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মামলার খবর শুনে আমাদের নেতা-কর্মীরা পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের আশ্বাস দেয়া তো দূরের কথা, উল্টো দুর্ব্যবহার করেছেন। আরও মামলার হুমকি দিয়েছেন। এই দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা অবরোধ করেছে। ক্ষোভ থেকেই আমরা মানুষকে কষ্ট দিয়েছি, নিজেরাও কষ্ট করেছি।’
মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফের অপসারণ দাবিতে করে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘এই পুলিশ কমিশনার আমাদের জনগণ ও সরকারের মুখোমুখি করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি সরকারবিরোধী।’
এ ব্যাপারে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি জাকারিয়া আহমদ বলেন, ‘আমাদের নামে ছিনতাইয়ের মামলা করা হয়েছে। আমরা কী ছিনতাইকারী? পুলিশ এই মামলা নেয় কী করে? এই পরিস্থিতির জন্য পুলিশই দায়ী।’
জাকারিয়া আরও বলেন, ‘লেগুনা শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে শাহাবউদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আমাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন। সেই বিচার না করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন নিয়ে এসে আমাদের সভা পণ্ড করেন। আমাদের নেতাকে আটকিয়ে লাঞ্ছিত করেন। আমাদের নামে মিথ্যে মামলা করেন। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদেই আমরা বৃহস্পতিবার রাস্তায় নেমেছিলাম।’
পুলিশ এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের ভাষ্য
মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটে বৈধ অটোরিকশার চেয়ে অবৈধ অটোরিকশা বেশি। অনেক বাস চালকের রেজিস্ট্রেশন নেই, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই পরিবহন শ্রমিকরা একজোট হয়ে আন্দোলনে নেমে যায়। তারা কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা চায়। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে তাদের ব্যাপারে পুলিশকেও অনেক সময় পিছু হটতে হয়।’
পরিবহন শ্রমিকরা নিজেদের স্বার্থে ‘মানুষকে ব্ল্যাকমেইলিং’ করছে উল্লেখ করে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘কিছু ঘটলেই তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। মানুষজনকে চলাচলে বাধা দেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা দুই ধরনের পন্থা অবলম্বন করি। একটা হচ্ছে বুঝিয়ে আন্দোলনকারীদের সরানো। আরেকটা হচ্ছে শক্তি প্রয়োগ ও আইনি পদক্ষেপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আমরা প্রথম পন্থাই অবলম্বন করছি। তারা বারবার জনদুর্ভোগ তৈরি করছেন, তবু পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা শক্তি প্রয়োগ বা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছি না। কারণ এখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে, সামনে দুর্গাপুজা, এরপর সিলেটে নারী এশিয়া কাপ। এসব কারণে আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছি। ফলে আমরা অনেকটা নমনীয় আচরণ করছি।’
তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে মামলা তো পুলিশ করেনি। তাদেরই একজন করেছে। পুলিশের কাজ তদন্ত করা। এটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা বোঝেননি। তারা মামলা প্রত্যাহার চান। কিন্তু এটা তো বাদী বা আদালত ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়।’
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের এসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে আরও কাহিনি আছে। শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা চলমান আছে। সেই মামলায় তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা হতে পারে। এটার জন্যও চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছেন তারা।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য