গত জুনে একবার মামলা করে তুমুল সমালোচনার শিকার হওয়া রাঙ্গামাটির সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার আবার সেই একই ইস্যুতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আবার মামলা করেছেন। এবার তিনি আসামি করেছেন ছয়জন সাংবাদিককে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রাজধানীকেন্দ্রিক দুটি টেলিভিশনের দুজন রিপোর্টার ও রাঙ্গামাটির চারজন সাংবাদিকের নাম রয়েছে।
বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে আগামী ১৩ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে আছেন দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ এবং সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনির্বাণ শাহরিয়ার।
রাঙ্গামাটির দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক ফজলে এলাহী, রাজধানীকেন্দ্রিক অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি সাইফুল হাসান, ইংরেজি জাতীয় দৈনিক টিবিএসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দিদারুল আলম ও বাণিজ্যবিষয়ক দৈনিক বণিক বার্তার রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি প্রান্ত রনির নাম রয়েছে এজাহারে। আরও রাখা হয়েছে অজ্ঞাত আসামি।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার কারণে বাদিনী এবং তার মা (সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু) সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ হয়ে মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৩, ২৫, ২৬, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৫ ও ৩৭ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
চিনুর মেয়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ৭ জুন গ্রেপ্তার হন রাঙ্গামাটির দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক ফজলে এলাহী। তুমুল সমালোচনার মুখে পরদিন রাঙ্গামাটির আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান ফজলে এলাহী। এরপর ১৪ জুন চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান তিনি।
সাংবাদিক ফজলে এলাহী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বর্তমানে অনেক অসহায়বোধ করছি। বুঝতেছি না কেন এসব হচ্ছে। আগের মামলায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দিতে গেছি। তখনও জানতাম না নতুন করে মামলা হয়েছে। আজ জানতে পারছি আমিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলার বিষয়ে নাজনীন আনোয়ার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যা কিছু জানার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো কিছু কোড করার মতো বলতে চাচ্ছি না। নিউজ করতে চাইলে পিটিশন দেখে সাজিয়ে নিয়েন।’
দৈনিক পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের ডিসি বাংলো পার্কে অবস্থিত ‘পাইরেটস্’ রেস্টুরেন্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ২০২০ সালে মামলাটি করা হয়।
যে ইস্যুতে চার মাস আগে একটি মামলা হয়েছে, সেই একই ইস্যুতে আবার অন্য সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা কেন, জানতে চাইলে চিনুকন্যার মোবাইল নাম্বারে কল করলে জানান, তিনি ব্যস্ত, বাজার করছেন।
যে ঘটনায় মামলা
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনটিতে ছিল রাঙ্গামাটির ডিসি বাংলো পার্ক অবৈধভাবে দখল করে রাখার বিষয়ে।
দুই বছরের জন্য অন্য একজনের নামে পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরও তা দখলে রেখেছিলেন নাজনীন আনোয়ার নিপুণ। তিনি রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মোহাম্মদ হোসেন নামে একজনকে বার্ষিক ৩৬ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। ১৩টি শর্তে দুই বছরের জন্য এই অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।
আরেকজনের নামে বরাদ্দ নিয়ে প্রকারান্তরে পার্কটির দখলদার হয়ে বসেন নাজনীন আনোয়ার নিপুণ। নাজনীন ও তার সঙ্গীরা পার্কটি ব্যবহারে প্রায় সব শর্ত ভঙ্গ করেন। পুলিশের বিশেষ শাখা ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের আলাদা দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে এর প্রমাণ মেলে।
প্রতিবেদন দুটির কপি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, ২০২০ সালের ৯ আগস্ট রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন একই জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বোরহান উদ্দিন মিঠু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকারি সম্পত্তি রক্ষা, মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং পার্কটি সাধারণ জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে উন্মুক্ত রাখার নিমিত্ত অবৈধ পাইরেটস দোকানটি অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’
এর প্রায় এক মাস পর ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ডিআইজি (রাজনৈতিক) বরাবর একটি প্রতিবেদন জমা দেন রাঙ্গামাটি জেলার বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর।
তাতে বলা হয়, ‘সার্বিক বিবেচনায় বলা চলে যে, পার্কটি আবাসিক এলাকায় ও জেলা প্রশাসকের বাংলোর সৌন্দর্যের অংশ হওয়ায় রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার কোনোভাবে সমীচীন হবে না।’
জেলা প্রশাসন ও এসবির পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার প্রায় তিন মাস পর ৩ ডিসেম্বর ডিসি বাংলো পার্কে অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টালে।
ফজলে এলাহী সম্পাদিত পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম নামের ওই পোর্টালে ‘রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পাইরেটস বিড়ম্বনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে এই ডিসি বাংলো পার্কের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর কন্যা নাজনীন আনোয়ার নিপুণ নিয়ম লঙ্ঘন করে ডিসি বাংলোর পার্ক এলাকায় ‘পাইরেটস’ নামে একটি রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন। জেলা প্রশাসন পরে উচ্ছেদের নোটিশ দিলে খোদ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধেই মামলা করেন নিপুণ।
নিপুণের অনিয়মের পেছনে তার মা ফিরোজা বেগম চিনুর প্রভাব রয়েছে বলেও দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানায় ১২ ডিসেম্বর সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন চিনুর কন্যা নিপুণ। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর চিনু আরেকটি অভিযোগ করেন।
সেই মামলায় বাদী হিসেবে চিনুর কন্যার নাম থাকলেও নিউজবাংলাকে চিনু জানান, অভিযোগকারী তিনি নিজেই। মেয়ের নাম কীভাবে এলো সেটি তিনি জানেন না।
যা আছে এসবির প্রতিবেদনে
২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি এসবির পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর ডিসি বাংলো পার্ক নিয়ে এসবির ডিআইজি (রাজনৈতিক) বরাবর একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
এসবির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়:
‘অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮/১২/২০১৭ তারিখে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার সাহিদা আক্তার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ১৩টি শর্তে রাঙ্গামাটির কোতোয়ালি থানার দেবাশীষ নগরের মো. হোসেনকে বার্ষিক ৩৬ হাজার টাকা ভাড়ায় দুই বছরের জন্য পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।
পার্কটি মো. হোসেনের নামে অনুমোদন নিয়ে পক্ষান্তরে নাজনীন আনোয়ার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছেন। করোনা মহামারির কারণে ডিসি বাংলো পার্কটি বর্তমানে বন্ধ আছে।
পার্কটি বন্ধ হওয়ার আগে এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কয়েকটি ঘটনা ঘটে। যেমন-
১. গভীর রাত পর্যন্ত পার্কটি খোলা রাখা হতো। সে কারণে সেখানে মাদক বিক্রি ও সেবনের মতো ঘটনা ঘটে এবং উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা সেখানে রাত অবধি ভিড় করত। ১৪/০৮/২০১৯ তারিখ রাতে ১০-১২ জন উচ্ছৃঙ্খল বখাটে যুবক সেখানে আইনশৃঙ্খলাবহির্ভূত ঘটনা ঘটায়।
২. গভীর রাত পর্যন্ত যুবক ছেলেরা মোটরসাইকেলসহ এখানে অবস্থান করত এবং লেকসংলগ্ন কুঁড়েঘরে মাদক সেবন করে মাতলামি ও হুল্লোড় করত।
৩. গোপন সূত্রে জানা যায় যে, পার্কের পাইরেটস রেস্টুরেন্টের ভেতরে নারীসহ অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ সংঘটিত হতো।
৪. অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বরাদ্দের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও জেলা প্রশাসক পার্কটি ব্যবহারের অনুমতি বিভিন্ন কারণে বাতিল করতে পারছেন না। যেমন- রাজনৈতিক প্রভাব, জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা।
৫. পার্কটি জেলা প্রশাসক ও পর্যটকদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কিন্তু সেটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্টসহ জেলা প্রশাসকের বাংলোর ঐতিহ্য ও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
৬. উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা গভীর রাত পর্যন্ত পার্কে উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করায় আশপাশের বাসিন্দাদের শান্তির ব্যাঘাত ঘটত।
৭. পার্ক ব্যবহারের মেয়াদ পার হওয়ার পরও ব্যবহারকারীরা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে অন্যায় ও বেআইনিভাবে পার্কটি দখলে রাখায় উল্লিখিত কার্যকলাপের কারণে প্রশাসনের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জেলা পুলিশও বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
৮. সার্বিক বিবেচনায় বলা চলে যে, পার্কটি আবাসিক এলাকায় ও জেলা প্রশাসকের বাংলোর সৌন্দর্যের অংশ হওয়ায় রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার কোনোভাবে সমীচীন হবে না।
পার্ক এখন কার দখলে?
ডিসি বাংলো পার্কটি বর্তমানে জেলা প্রশাসনের দখলে রয়েছে বলে গত জুনে নিউজবাংলাকে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সে সময় তিনি বলেন, ‘পার্কটি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান। তবে পার্কটি এখন জেলা প্রশাসনের দখলে রয়েছে এবং পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত আছে।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য