মোহাম্মদ ইসমাঈল। পেশায় কৃষক। বসবাস মিয়ানমার সীমান্তের ৩৩ নম্বর পিলার থেকে ২০০ গজ ভেতরে বাংলাদেশের তুমব্রুর মাঝেরপাড়া এলাকায়।
মর্টার শেল বিস্ফোরণের খবরে আতঙ্কে থাকলেও বসতবাড়ি না ছাড়তে অনড় ইসমাঈল। তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে প্রাণ দেব, তবুও তুমব্রুর মাটি, বসতবাড়ি ছেড়ে কোথাও যাব না।
‘গোলার শব্দ, সে তো নিত্যসঙ্গী। তাহলে কেন বাড়ি ছাড়ব? বিভিন্ন সময় চলাচলে সতর্ক করছে বিজিবি।’
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, তার তিন সন্তান আছে। তাদের একজন ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তারাও মাঝে মাঝে এসে গোলার শব্দ শুনে ভয়ের কথা জানাত, কিন্তু এখন সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলে শুক্রবার রাতে সীমান্তের শূন্যরেখায় এক রোহিঙ্গা নিহতের পর শনি ও রোববার সকালেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে দফায় দফায় বিকট গোলার শব্দ শোনা গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে, তবে সীমান্তের ৫ গ্রামে গিয়ে এর সত্যতা মেলেনি।
সীমান্ত লাগোয়া নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর উত্তরপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, বাইশফাঁড়ির একাংশ ও তুমব্রুর বাজার এলাকার কেউই ইসমাঈলের মতো বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে নন।
উত্তরপাড়ার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভাগ্যে যা আছে, তা-ই হবে, তবুও পরিবার নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছি না সহজেই। যতই কঠিন পরিস্থিতি হোক না কেন, আমার এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে নই।
‘আমাদের জন্ম এখানে, বেড়ে ওঠাও এখানে। কীভাবে এত সহজে ছেড়ে যাই?’
ইজিবাইকচালক হামিদুল হক বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তান নিয়েই থাকছি শেকড় থেকে। এখানে আমাদের সবকিছু। গোলার শব্দ তো আগেও হয়েছে। কই, আমরা তো বাড়ি ছেড়ে যাইনি।
‘পরিস্থিতি থাকবে, সমাধানও হবে। তাহলে ছেড়ে যাব কেন?’
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার সকালেও দুই দফা গোলার শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয়রা ভয়, আতঙ্কে আছে।
‘কেউ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পক্ষে নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কাউকে সরিয়ে আনার কথা বলা হয়নি। নিজ উদ্যোগেও কেউ সরেনি।’
তিনি আরও বলেন, রোববার উপজেলা পরিষদেও বৈঠক হয়েছে। সেখানে স্থানীয় জনগণকে সরিয়ে আনার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। চলাচলে সতর্ক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াসমিন পারভিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সীমান্ত পরিস্থিতি আমরা পর্যাবেক্ষণ করছি। কোনো স্থানীয় বাসিন্দাকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়নি।
‘কোনো রোহিঙ্গা যাতে ওপার থেকে দালালদের হাত ধরে এপারে আসতে না পারে, সেদিকেও প্রশাসন নজরদারি রেখেছে। এ ছাড়াও কোনো দালালকে চিহ্নিত করা গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সীমান্তে উত্তেজনা
প্রায় এক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে।
বেশ কয়েকবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়েছে।
সবশেষ শুক্রবার রাতে তুমব্রুর কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হন। আহত হয় রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন।
এর আগে একই দিন দুপুরে এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন বাংলাদেশি এক যুবক।
আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম।
গত ২৮ আগস্ট তুমব্রু উত্তরপাড়ায় একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর তিন দিন পর ফের ওই সীমান্তে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ ভেসে আসে।
রাষ্ট্রদূতকে তলব
সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থবারের মতো তলবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়েছিলেন ঢাকায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দূত অং কিয়াউ মো।
সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার পর হাজির হন দূত। সেখানে আধাঘণ্টা ছিলেন তিনি।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মহাপরিচালক নাজমুল হুদা।
আরও পড়ুন:দুই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায়। তাদের অনেকে বিভিন্ন কাজে উপস্থিত হন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে।
বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, চিকিৎসা সহায়তাসহ সরকারি বিভিন্ন সহায়তা আবেদন করার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই উপজেলার অনেক মানুষের ভিড় করেন সমাজসেবা কার্যালয়ে, কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খুলে পড়ছে মাঝেমধ্যেই।
যেকোনো সময়ই রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এ ঝুঁকি নিয়েই কর্মকর্তরা রোজ আসছেন কার্যালয়ের ভবনে, সেবাগ্রহীতারাও সেবা নিতে আসছেন প্রতিদিন।
নাচোল উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় নাজুক হয়ে পড়েছে ভবনটি।
সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম জানান, তিনি যেখানটায় বসেন, সেখানে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছিল কিছুদিন আগে। অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন সেদিন। পরে তার বসার টেবিল ও চেয়ার কিছুটা সরিয়ে নিয়ে বসছেন ঠিকই, তবুও সব সময়ই ভয় কাজ করে তার।
ইউনিয়ন সমাজকর্মী সুকাম আলী যেখানে বসেন, সেই কক্ষটির অবস্থাও কম বাজে নয়। দেয়ালের প্লাস্টার ফেটে গেছে; খসে খসে পড়ছে।
সমাজসেবা কার্যলয়ের অফিস ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন উল্লেখ করে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। ঝুঁকি নিয়েই আমরা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
‘কাজের চাপে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের ঝুঁকির বিষয়টি জানানো হয়ে ওঠেনি এখনও। দ্রুতই সমস্যাগুলো উল্লেখ করে, নতুন ভবন নির্মাণ অথবা এই ভবনের সংস্কার করার আবেদন পাঠাব আমি।’
এ বিষয়ে সমাজসেবা কার্যালয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক উম্মে কুলসুম বলেন, ‘নাচোলের ভবনের সমস্যার বিষয়টি আমি কথা বলে দেখব, জানব কী অবস্থা। যদি একেবারেই ওই ভবনে কার্যক্রম চালানো না যায়, তবে প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠতে হবে।’
এদিকে সমাজসেবা কার্যালয়ে যারা সেবা নিতে আসেন, তারা অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকেন। তার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সেবা গ্রহণের সময় সারাক্ষণ থাকেন ভয়ে।
মনিরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘এত ঝুঁকি নিয়ে অফিসারই কীভাবে অফিস করছেন, ভাবতেও ভয় লাগে।’
আরও পড়ুন:শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত হলো সিসিমপুরের বিশেষ কিছু পর্ব।
উদ্যোগের অংশ হিসেবে সিসিমপুরের জনপ্রিয় ১৩টি পর্বে শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের উপযোগী করে সাইন ল্যাঙ্গুগুয়েজ তথা ইশারা ভাষা যুক্ত করে নতুনভাবে তৈরি করেছে সিসিমপুরের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ (এসডব্লিউবি)।
সিসিমপুরের পর্বগুলোকে ইশারা ভাষায় রূপান্তরে সহযোগিতা করেছে শ্রবণপ্রতিবন্ধী মানুষের উন্নয়নে কাজ করা সংগঠন সোসাইটি অব দ্য ডেফ অ্যান্ড সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজার্স (এসডিএসএল)।
২৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডে। এই দিন থেকে সাইন ল্যাঙ্গুগুয়েজে নির্মিত সিসিমপুরের বিশেষ পর্বগুলো সিসিমপুরের সোশ্যাল ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে ধারাবাহিকভাবে প্রচার শুরু হবে, যা পরবর্তী পর্যায়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও প্রচার হবে।
বিশেষ এই উদ্যোগ সম্পর্কে সিসিমপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সিসিমপুরের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছানো। তারই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সিসিমপুরের ১০টি গল্পের বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছি ও শিশুদের মাঝে বিতরণ করেছি। এবার শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নিয়ে আসছি ১৩ পর্বের বিশেষ সিসিমপুর।
‘ধারাবাহিকভাবে পর্বের সংখ্যা বাড়ানোর ইচ্ছে আছে আমাদের। আমাদের টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ও অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য ইউএসএআইডি বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তার কাজের ইট বাড়িতে নেয়ার অভিযোগে এক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে গ্রামবাসী।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সংস্কারকৃত রাস্তার সলিং দেয়া ইট উঠিয়ে নিজ বাড়িতে নেয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে গ্রামবাসী এ অভিযোগ দেন।
ইউএনও ইরফান উদ্দিন আহমেদ লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে সাতগাঁও গুচ্ছগ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মাটির রাস্তাটি ইটের সলিং ছিল। এরই মধ্যে ১৩০০ মিটার রাস্তা এলজিইডির মাধ্যমে কার্পেটিং করা হয়েছে। রাস্তার বাকি ৭০০ মিটার ইট সলিংয়ের ইটগুলো উঠিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরী নিজ বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে রাস্তা কার্পেটিং করার সময় পুরোনো লক্ষাধিক ইটও তারই বাড়িতে মেশিনের মাধ্যমে কংক্রিট করে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করেন।
চেয়ারম্যানের কাছ থেকে পুরোনো ইটের সেই খোয়াগুলো কিনে স্থানীয় ঠিকাদাররা গ্রামের ভেতরে সরু রাস্তার ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করেছেন, তবে চেয়ারম্যান এ এম শামিউল হক চৌধুরী প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা এ ব্যাপারে ভয়ে কিছুই করতে পারেননি।
চেয়ারম্যানের দাবি, ইটগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে বাড়িতে এনেছেন।
তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিককে দোষারোপ করে বলেন, ‘এক সাংবাদিক ইচ্ছাকৃত আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সাতগাঁও গুচ্ছগ্রামটি হাওরবেষ্টিত। ২০২০ সালের বন্যায় রাস্তাটি ডুবে গিয়েছিল। তখন বন্যার পানিতে ইটগুলো ভেসে গিয়েছিল। বাকি ছিলো সাত হাজার ইট।
‘সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিক্রমে ইটগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি, তবে এগুলো বিক্রি বা নিজ স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য আনা হয়নি।’
এ বিষয়ে ইউএনও ইরফান উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে দেখার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশিকুর রহমান ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বাড়িতে ইটগুলো আমরা পেয়েছি। ইটগুলো যথাস্থানে রাখার জন্য জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অনিয়মে বহিষ্কারের আইনটি যেন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃত হলেও ক্যাম্পাসেই দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় তাদের।
বহিষ্কৃত হয়েও তারা থাকছেন হলে, করছেন নিয়মিত ক্লাস, দিচ্ছেন পরীক্ষা। আবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তাদের নিয়মিত অংশ নিতে দেখা যায়।
চবি ক্যাম্পাসে এক সাংবাদিককে মারধর করে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন শাখা ছাত্রলীগের ওই দুই নেতা। অথচ বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন দিতে দেখা যায় তাদের।
ওই দুই নেতা হলেন শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ ও উপদপ্তর সম্পাদক আরাফাত হোসেন রায়হান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বহিষ্কারের মেয়াদের মধ্যে বহিষ্কৃত কেউ ক্যাম্পাসে কিংবা হলে অবস্থান করতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারবেন না।
এ নিয়ে গত ১৪ আগস্ট প্রক্টরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ, তবে চিঠি দিয়েও মেলেনি প্রতিকার।
আক্ষেপ করে ভুক্তভোগী এ সাংবাদিক বলেন, ‘বহিষ্কার হওয়ার পরও দোষীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে অংশগ্রহণ ও হলে অবস্থানসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বহিষ্কারাদেশ শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
‘বহিষ্কৃতরা আমাকে দেখে উপহাসমূলক আচরণ এবং আমার দিকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। তাদের এমন আচরণে আমি খুবই শঙ্কিত। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় আমি অনিরাপদ বোধ করছি।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালেদ মাসুদ ও আরাফাত হোসেনসহ শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা-কর্মীরা পুরো ক্যাম্পাসে বাইক শোডাউন দিচ্ছেন। ওই সময় খালেদ মাসুদের বাইকের পেছনে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদাফ খানকে দেখা যায়। আলাদা বাইকে আরাফাত রায়হানসহ সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা-কর্মীদের দেখা গেছে।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা সাদাফ খান বলেন, ‘সে (খালেদ মাসুদ) ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়টা প্রশাসন দেখবে, আমরা তো প্রশাসন নই। সে আমাদের ছোট ভাই, ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে থাকতেই পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যাদের বহিষ্কার করা হবে, তারা কেউ ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না। এটা নিশ্চিতের দায়িত্ব প্রক্টরিয়াল বডির।’
চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের বহিষ্কার কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুধুই লোক দেখানো। বহিষ্কৃত কিংবা শাস্তিপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে হলে অবস্থান করছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছে। প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গেও বৈঠক করছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। প্রশাসনের এরূপ নির্লিপ্ততার নিন্দা জানাই।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি তাদের দেখলে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:উদ্বোধনের অপেক্ষায় রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। অবকাঠামো নির্মাণ কাজের বেশিরভাগই শেষ হয়ে এসেছে। দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন ও কার পার্কিং ভবন। বাকি কাজ সমাপ্ত করতে দিন-রাত নিরলস কাজ করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও বিপুলসংখ্যক শ্রমিক।
নবনির্মিত থার্ড টার্মিনালে ইতোমধ্যে লিফট, এসকেলেটর, ইমিগ্রেশন বুথ, দৃষ্টিনন্দন সিলিং, গ্লাস ও টাইলস ফিটিংয়ের কাজও প্রায় শেষ। এখন চলছে টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার ফ্লাইওভার এবং সোন্দর্য বোর্ধনের কাজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ অক্টোবর থার্ড টার্মিনাল আংশিকভাবে উদ্বোধন করবেন। ওইদিন এই টার্মিনাল ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।
তবে বড় পরিসর ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই তৃতীয় টার্মিনাল থেকে পুরোপুরি সুবিধা পেতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত। তখন এই টার্মিনাল দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে- এমন প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দেয়া তথ্যমতে, টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার রোহানি বাহারিন। তিনি চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩ ছাড়াও চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেছেন এই স্থপতি।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ৩ তলাবিশিষ্ট এই টার্মিনালে থাকবে মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। তবে অক্টোবরে উদ্বোধনের সময় ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। এর মধ্যে ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার।
এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আর আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে।
শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদ্যমান দুই টার্মিনাল মিলে লাগেজ বেল্ট আছে মোট ৮টি। সেখানে তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য থাকছে ১৬টি লাগেজ বেল্ট। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট।
তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এছাড়া থাকছে এক হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে (টার্মিনাল-১ ও ২) বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হয়। সেখানে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। সব মিলিয়ে তখন বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া পুরনো টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি বিমান রাখা যায়। ৭ তারিখ সফট ওপেনিং হলে তৃতীয় টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে আরও ১০টি বিমান পার্ক করা যাবে।
তৃতীয় টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যান্টিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। তৃতীয় তলায় রাখা হচ্ছে আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, চেক-ইন কাউন্টার ও সিকিউরিটি সিস্টেম।
তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে। ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে নতুন ও পুরনো টার্মিনালের মধ্যে করিডোর নির্মাণ হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের ৮৬ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করছি উদ্বোধনের আগে ৯০ শতাংশ কাজ আমরা শেষ করতে পারব।’
তিনি জানান, কিছু কিছু কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। রানওয়ের সঙ্গে অ্যাপ্রোনের সংযোগ হয়ে গেছে। এক্সপোর্ট এবং কার্গো টার্মিনালও হয়ে গেছে। প্রধান ভবনের ফিজিক্যাল স্ট্রাকচারের কাজগুলোও শেষ। ৭ অক্টোবর উদ্বোধনের আগে আরও অনেকটা কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিছুদিনের মধ্যে বোর্ডিং ব্রিজের সংযোগসহ বাকি সংযোগের কাজগুলো শেষ করা হবে।
মফিদুর রহমান বলেন, ‘এই সফট ওপেনিংয়ের পর আরও কিছু কাজ বাকি থাকবে। এই যেমন ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, ফায়ার সিস্টেম ও বিভিন্ন প্রযুক্তির সিস্টেম ইনস্টল করা। এখানে যারা কাজ করবেন তাদের ট্রেনিংসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে। এসব কিছু শেষ করে আশা করছি ২০২৪ সালের শেষের দিকে তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে।
‘এটি হবে একটি আধুনিক টার্মিনাল। এখানে যাত্রীরা উন্নত বিশ্বের সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে। এখানে সব কিছুতে আধুনিক অটোমেটেড সিস্টেম থাকবে।’
রাজধানীর মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, হাইওয়ে, রেল স্টেশন- সব মাধ্যমে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সংযোগ থাকছে এই তৃতীয় টার্মিনালে। যাত্রীরা এসব মাধ্যম ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারবেন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় ২০১৭ সালে। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরও ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়।
তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি।
এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি। চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ৪৮ মাস। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকার যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
অডিট আপত্তি সমন্বয়ে ঢাকায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের ঘুষ দিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীর নামে চেক ইস্যু করা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
ওই সূত্রটি জানায়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে ঘুষ দিতে চট্টগ্রাম বোর্ডের হিসাব শাখা থেকে উত্তোলনের জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে দেড় লাখ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে।
চেকটি নগদায়নের পর তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি দল গত রোববার ঢাকায় গেছে জানিয়ে সূত্রটি নিউজবাংলাকে বলে, রাজধানীতে অডিট আপত্তি সমন্বয়ের নামে বোর্ডের ফান্ড থেকে উত্তোলন করা টাকার কিছু অংশ ঘুষ হিসেবে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তান্তরের কথা ছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড হিসেবে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত নিয়োগ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বোর্ডের বিষয়ে জ্ঞাত ৯০টি অডিট আপত্তি রয়েছে, তবে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড নিয়ে অডিট আপত্তি রয়েছে ১২৫টি।
বিষয়টি সমন্বয় করতেই চট্টগ্রাম বোর্ড কর্মকর্তারা নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উৎকোচের মাধ্যমে খুশি করার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানায় সূত্রটি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. আশরাফুল আলমের নামে চেকটি ইস্যু করা হয়। ৬৯৪৪৭৮৯ নম্বরের ওই চেকে ‘রিকনসিলিয়েশন’ খাত দেখানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, চেক নগদায়নের পর গত রোববার বোর্ডের উপপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন, সহ-হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান গনি, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আশরাফুল আলম ও অডিট কর্মকর্তা লোকমান হোসেনের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল, তবে বিষয়টি সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত চলে আসায় বোর্ডের উপপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন ঢাকা যাওয়া স্থগিত করে বাকি তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাঠান।
অডিটকে ঘিরে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই চাঁদার কিছু অংশ অডিটরদের আপ্যায়ন, কিছু অংশ উৎকোচ হিসেবে খরচ ও বাকি অংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে, তবে অডিটরদের উৎকোচ দিতে সরাসরি বোর্ডের হিসাব বিভাগ থেকে টাকা উত্তোলনের ঘটনা এবারই প্রথম বলে জানায় সূত্রটি।
বোর্ডের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে চেক ইস্যু হওয়ার বিষয়ে হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ এমদাদ হোসাইন বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য যথাযথ ব্যক্তি না। এটা নিয়ে চেয়ারম্যান স্যার বা সচিব স্যারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আশরাফুল আলমের নামে ইস্যু করা চেকের অর্থ নিয়ে রোববার ঢাকা যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
নিজের নামে চেক ইস্যু, তা নগদায়ন ও ঢাকায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেন কর্মচারী আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, ‘চেক কার নামে হলো তা কোনো বিষয় না। মূলত দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করতে হয়। সবকিছু চেয়ারম্যান আর সচিব স্যারের নির্দেশে হয়।
‘আমরা শুধু দায়িত্ব পালন করি। আমরা ঢাকায় এসেছি, সেটাও স্যারদের নির্দেশে।’
অডিট কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, ‘আমরা মূলত একটা মিটিংয়ে এসেছি। বোর্ডের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু অডিট আপত্তি রয়েছে। অধিদপ্তরে কী আছে আর বোর্ডে কী আছে, তা সমন্বয়ের জন্যই আমরা ঢাকায় এসেছি। এগুলো এখন ডিজিটাইজ হবে।
‘আমাদের সঙ্গে ডিডি স্যার (উপপরিচালক এমদাদ) আসার কথা, কিন্তু উনি আসেননি। এতগুলো কাজ একা করা আমার পক্ষে কঠিন। তাই আমার সঙ্গে সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ওসমান সাহেব এসেছেন। তা ছাড়া কাগজপত্র বেশি হওয়ায় তা বহনের জন্য আশরাফুল আলমকে আনা হয়েছে।’
বোর্ডের হিসাব শাখা থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আশরাফুল আলমের নামে চেক ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থ মিটিংয়ে অ্যালাউন্স (ভাতা) হিসেবে খরচ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক রেজাউল করিম শুরুতে রিকনসিলিয়েশন বাবদ চেক ইস্যুর বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতারের সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং ও ভিওআইপি সার্ভিস হোয়াটসঅ্যাপে খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নামে চেক ইস্যুর মাধ্যমে এডিটরকে উৎকোচ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘কোনো যথাযথ খাত থাকলে কারও না কারও নামে তো টাকাটা তুলতে হবে, সেটা বিষয় না, কিন্তু অডিটরকে দেয়ার তো এ রকম কোনো টাকা তুলতে পারবে না।
‘চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কেন, কারও নামেই চেক ইস্যু করা যাবে না। এটা তো শোভনীয় না।’
আরও পড়ুন:পটুয়াখালীতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার তিতকাটা পুলের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ২০২১ সালে ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন অভিযোগকারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে তিতকাটা পুলের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মো. ফারুক হোসেনকে। তার ইনডেক্স নাম্বার (৫১৭০৪৩)। পরে ২০১৪ সালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে গোপন কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি জাল সনদে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন ফারুক হোসেন।
ওই সময় যেসব সনদ তিনি দিয়েছেন, সেগুলোতে দেখা যায়, এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ, এইচএসসিতে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ, বি.এ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ এবং বি.এডে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
এসব সনদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের সঙ্গে কথা হয়। ওই সূত্র জানায়, মো. ফারুক হোসেন বিএ পাস করেছেন তৃতীয় বিভাগে। আর বি.এড পাস করেননি। তার বি.এ রোল নম্বর-৪৪৪১২, রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ১১০৩৩৪, শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৩-১৯৯৪, পাসের সন ১৯৯৫।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। বি.এড পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ১৩৯৮৮, রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১২৩৪৮৯, শিক্ষাবর্ষ ২০০৩-২০০৪, তবে পরীক্ষা দিয়ে তিনি পাস করতে পারেননি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট শিটে তার বিএডের রেজাল্টে তিন সাবজেক্টে ফেল দেখানো হয়েছে।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ৪ নম্বর নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকতায় স্নাতকসহ বিএড পাস হতে হবে। সমগ্র শিক্ষাজীবনে একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ (তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি/সমমানের জিপিএ) গ্রহণযোগ্য হবে না।
অভিযোগকারী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন জাল সনদ দিয়ে ৯ বছর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় একটা সনদে তৃতীয় বিভাগ থাকতে পারবে, তবে ফারুক হোসেনের (এইচএসসি ও বি.এ) দুইটি সনদে তৃতীয় বিভাগ রয়েছে এবং বি.এড পাসের জাল সনদ দিয়ে ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন।
‘এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনেক দুর্নীতি ও কুকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে আমরা ২০২১ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি। অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ হলে এভাবে অভিযোগ উঠবেই। আমার সার্টিফিকেট ঠিক আছে। আর যদি জাল হয়েই থাকে, তবে সেটি বোর্ডের বিষয়। তখন বোর্ড বুঝবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাই চাকরি করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব সমস্যা ফেস করব নাকি চাকরি করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
‘ইনডেক্সধারী কীভাবে একাধিক তৃতীয় বিভাগ পেয়ে চাকরি করতে পারেন আর আপনি এ তথ্য কোথায় পেয়েছেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি শহরে আসতেছি। আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। মোবাইলে এগুলো বলা যাবে না।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মরিয়ম বেগম বলেন, ‘জাল সনদে চাকরি করে থাকলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছু অভিযোগের তদন্ত চলছে, তবে (তিতকাটা পুলের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের) এ বিষয়টির আপডেট এই মুহূর্তে জানা নেই।’
অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘হয়তো এ অভিযোগের তদন্ত চলছে। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য