চট্টগ্রামে মাহমুদ খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারকে জড়িয়ে যে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হয়েছে, তাতে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ হিসেবে বাবুলের বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গায়ত্রী অমর সিং নামের এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ঘটনাচক্রে মিতু এটা জেনে যান। এ কারণে মিতুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন বাবুল।
গায়ত্রীকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি। তাকে সাক্ষী করা হয়েছে কি না, সে বিষয়েও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
পিবিআই বলছে, চেষ্টা করেও গায়ত্রীর সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি বাংলাদেশে নেই।
মিতু হত্যার দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বুধবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিমের আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছে পিবিআই।
অভিযোগপত্রে ২১ ধরনের আলামত, দুই হাজার ৮৪ পাতার কেস ডকেট আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। মামলায় ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
এই অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে আগামী ১০ অক্টোবর শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় সন্তানের সামনেই খুন করা হয় মিতুকে।
এর আগে বাবুল জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এ কারণে এটি জঙ্গিদের কাজ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। বাবুল তখন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহানুভূতিও পান। পরে এই হত্যায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে নানা তথ্য আসতে থাকলে একপর্যায়ে তিনি চাকরিচ্যুত হন।
শুরুতে মিতুর বাবা বাবুলের পাশে থাকলেও পরে তিনি সন্তান হত্যায় জামাতার দিকে আঙুল তুলতে থাকেন। পরে মামলাও করেন।
এই হত্যার পর ২০১৬ সালে বাবুলই প্রথমে মামলা করেন। এর পাঁচ বছর পর ২০২১ সালে মামলা করেন বাবুলের শ্বশুর। দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে পিবিআই।
এই মামলায় বাবুল ছাড়াও যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে মুসা ও খাইরুল ছাড়া বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে।
মামলায় আরও যে চারজনের নাম ছিল, তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নুরুন্নবী। সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাক্কু ও আবু নাছেরকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে।
বাবুল-মিতুর ঝগড়ার শুরু বই নিয়ে
২০২১ সালের ১২ মে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেন, তাতে বলা হয়, গায়ত্রীর সঙ্গে প্রেমের বাধা হিসেবে মিতুকে হত্যা করিয়েছেন বাবুল।
পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাবুল আক্তার ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। এই সময়ে সেখানে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তিনি।
গায়ত্রী অমর সিং নামের ওই উন্নয়নকর্মীর নিরাপত্তাকর্মী সরওয়ার আলম ও গৃহকর্মী পম্পি বড়ুয়ার জবানবন্দিতে বিষয়টি উঠে এসেছে।
গায়ত্রী ছিলেন ভারতের নাগরিক। তিনি কবে দেশ ছেড়েছেন, সে তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি কাজ করতেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরে।
গায়ত্রীর বিষয়ে তথ্য জানতে সংস্থাটিকে চিঠিও দেয় পিবিআই, কিন্তু তারা কিছু জানায়নি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গায়ত্রী বাবুলকে উপহার হিসেবে যে বই দিয়েছিলেন, সেটি মিতু দেখে ফেলার পর সংসারে কলহের সৃষ্টি হয়। এরপর মিতুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন বাবুল।
সে সময় বাবুল চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন মিতুকে হত্যার দুই দিন আগে বাবুল বদলি হয়ে ঢাকায় যান।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের এজাহারে বলা হয়, গায়ত্রীর দেয়া সেই বইয়ের শেষ দিকে নিজেদের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় বাবুল নিজ হাতে লেখেন। এটা নিয়েই ঝগড়ার শুরু। বইটি পিবিআইয়ের জব্দের তালিকায় আছে।
অভিযোগপত্রের বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক এবং পিবিআই পুলিশ সুপার (মেট্রো) নাইমা সুলতানা।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি পিবিআইকে একটা নয়, দুটো বই দিয়েছিলাম। এসব বইয়ে বাবুল ও গায়ত্রীর হাতের লেখা ছিল। এই লেখাগুলো যাচাই করলে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যেত।’
বই দুটি কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো পেয়েছি; আমার কাছে ছিল; ঘটনার আগে মিতুই দিয়েছিল আরও কাগজপত্রসহ।’
হত্যার পর বাবুলের কথা কেন বলেননি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন ঘটনা অন্যদিকে ছিল। সে (বাবুল) আমার বাসায় ছিল। আমার বাসায় প্রশাসনের এত বড় বড় লোকেরা আসছে, তার সঙ্গে কথা বলছে। তখন ভাবলাম যে, না অন্তত তাদের সম্মানে এখন কিছু বলা ঠিক হবে না।’
গায়ত্রী কোথায়
অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, গায়ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি পিবিআই।
এই বিষয়ে পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে গায়ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের সের্বাচ্চ চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তার কোনো সাড়া পাইনি।’
যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় গায়ত্রীকে আসামি বা সাক্ষী করা যায়নি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘গায়ত্রীর বিষয়ে অভিযোগপত্রে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। এটা বিচারাধীন বিষয় হওয়ায় কোনো মন্তব্য করা বা বক্তব্য দেয়া সমীচীন হবে না।’
সিআইডির মাধ্যমে ওই বইয়ের শেষের দিকে থাকা লেখাগুলো বাবুলের হাতের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
‘গায়ত্রী কেন আসামি বা সাক্ষী নয়?’
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গায়ত্রী মেইন। গায়ত্রী নাই, না থাক। তার যে রেকর্ড, দুটা বই, হাতের লেখা, অফিশিয়াল হাতের লেখা, অফিসে সে কবে জয়েন করছে, কবে চলে গেছে, এসব ডকুমেন্টসই তো প্রমাণ করবে যে, তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। গায়ত্রীর কারণেই মিতুর মৃত্যু। তার কারণেই মিতু হত্যাকাণ্ড; অন্য কোনো কারণ না।’
গায়ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গায়ত্রী এখন কোনোটাতে (সাক্ষী বা আসামি) আছে কি না, সন্দেহ আছে। আমরা মামলা করেছি, বাবুল ও গায়ত্রীর হাতের লেখা সংবলিত দুটা বই উপস্থাপন করছি।
‘সে আসামি না হলে সাক্ষী হবে, সোজা হিসাব। তার নাম তো আমার এজাহারে আছে। সে তো আর অজ্ঞাত না। আর সে যদি হাজির না হয়, তার অফিশিয়াল রেকর্ড, হাতের লেখা এসব উপস্থাপন করতে হবে। মানুষ মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেয় না? তার সাক্ষী তো লাগে না। সে রকম তার অনুপস্থিতিতে এসব উপস্থাপন করতে হবে।’
গায়ত্রীকে না পাওয়ার বিষয়ে পিবিআইয়ের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন মিতুর বাবা। তিনি বলেন, ‘গায়ত্রী এক দেশ থেকে আরেক দেশে আসছে হাওয়ার উপর নাকি? তার ভিসা আছে, পাসপোর্ট আছে। এখনও সেই অফিসটা আছে। তাকে না পেলে তাকেও তো পলাতক দেখিয়ে আসামি করা যায়।’
বাবুল আক্তারের ভাই আইনজীবী হাবীবুর রহমান লাভুও গায়ত্রীকে আসামি না করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি বাবুল আক্তারের বিয়ে-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকেই থাকে, যাকে নিয়ে এত বড় ঘটনা, সেই গায়ত্রীকে কেন আসামি করা হলো না? আমরা পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।’
যেভাবে খুলল রহস্যের জট
আলোচিত মামলাটির তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে অভিযোগপত্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, মিতু হত্যার আগে ও পরের কয়েক দিন বাবুলের আর্থিক লেনদেন যাচাই করে দেখা যায়, ঘটনার তিন দিনের মাথায় ৩ লাখ টাকা খরচ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা।
এর সূত্র ধরে পিবিআই সন্ধান পায় বাবুলের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল ইসলামের। সাইফুলের কাছ থেকে মুনাফার এই ৩ লাখ টাকা চেয়ে নিয়ে নড়াইলে গাজী আল মামুন নামের এক ব্যক্তির কাছে পাঠান বাবুল। মামুন এসব টাকা মামলার আসামি মুসা, ওয়াসিমসহ অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেন।
২০২১ সালের ১১ মে আদালতে সাক্ষী হিসেবে বাবুলের দুই বন্ধু গাজী আল মামুন ও সাইফুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিতুর বাবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার সময় মামলাটি আমার হাতে আসে। তখন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুল আক্তারকে নিজের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তখনই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমি বুঝতে পারি যে, হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তার জড়িত।’
বাবুল আক্তারের এই টাকা লেনদেনের বিষয়ে পুলিশের দেয়া বর্ণনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার ভাই হাবীবুর রহমান লাভু। তিনি বলেন, ‘আর আমার ভাইয়ের ব্যবসা ছিল, সে তার লাভের টাকা নিতেই পারে। এটা অপরাধ নাকি? তার পার্টনার ছিল সাইফুল, মামুন নামের কাউকে আমরা চিনি না।
‘এরা যদি ঘটনার পর খুনের কাজে টাকা দেয়, তাহলে এরাও তো পরোক্ষভাবে জড়িত; এরাও তো আসামি, কিন্তু তাদের আসামি করা হয়েছে? আর যার কথা বলা হচ্ছে, মুসা, সেই মুসা কই? সবাই তার কথা বলছে, তাকে হাজির করা হোক। তাকে হাজির করলে সব সমাধান হয়ে যাবে।’
যেভাবে হত্যা
অভিযোগপত্রের বর্ণনা অনুযায়ী, বাবুল মিতুকে হত্যার দায়িত্ব দেন তার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল শিকদার মুসাকে। ঘটনার তিন দিন পর মুসাসহ অন্য আসামিদের কাছে ৩ লাখ টাকা পৌঁছে দেয়ার কথাটি আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন মামুন।
২০১৬ সালে গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে মুসার নির্দেশে মিতুকে হত্যার কথা জানান ওয়াসিম ও আনোয়ার। গত বছরের ২৩ অক্টোবর এহতেশামুল হক ওরফে ভোলার দেয়া জবানবন্দিতেও মুসার কথা উঠে এসেছে।
ভোলা জানান, ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সোর্স ছিলেন মুসা। তার সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল ভোলার। তিনিই ভোলাকে বাবুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে ভোলা বাবুলকে বিভিন্ন তথ্য দিতেন।
ভোলার দেয়া তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা এলাকায় গুলি করতে যাওয়া এক আসামিকে ধরে বাবুল বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। এরপর থেকে তাদের সখ্য আরও বাড়ে।
ভোলা আদালতে বলেন, ‘২০১৬ সালের মে মাসে মুসা আমাকে জানায়, বাবুল পারিবারিক সমস্যায় আছেন। তার স্ত্রীকে খুন করতে হবে। এ জন্য আমি যেন অস্ত্র সংগ্রহ করে দিই।
‘আমি অস্ত্র সংগ্রহ করে মুসাকে দিই। এরপর মিতু হত্যার দিন ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে মুসা আমাকে বারবার ফোন দিতে থাকে। আমি ফোন ধরিনি।
‘বেলা ১১টার দিকে ব্যবসায়িক কাজে খাতুনগঞ্জের শাহজালাল ব্যাংকে গিয়ে টেলিভিশনে দেখি, বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। তখন মুসাকে ফোন দিই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিল। বিকেলে আমার অফিসে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে মুসা। সে আমাকে বলে, তার কোনো উপায় ছিল না। সে যদি মিতু ভাবিকে না মারত, তাহলে বাবুল আক্তার তাকে ক্রসফায়ারে দিত।’
ভোলা বলেন, ‘তখন আমি মুসাকে বলি, এ কাজটা না করলে বাবুল স্যার হয়তো একবার ক্রসফায়ারে দিত, এখন পুলিশ তো তোকে ১০ বার মারবে।’
এরপর মুসা ভোলার অফিসে একটি কাপড়ের ব্যাগ রেখে চলে যান বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে রাতে মুসার ঘরের কেয়ারটেকার মনির এসে ব্যাগটি নিয়ে যান। পরে ভোলার তথ্যে ডিবি মনিরের বাসা থেকে ব্যাগটি উদ্ধার করে। সেখানে একটি অস্ত্র ছিল, যা মিতু হত্যায় ব্যবহার হয়েছিল।
ঘটনার কয়েক দিন পর কামরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে পুলিশে ধরে নেয়ার কথা বললেও পুলিশ বলছে, তিনি নিখোঁজ।
বাবুলের বিরুদ্ধে শ্বশুরের মামলা
মিতুকে হত্যার পর পর বাবুল যে মামলা করেন, তাতে সন্দেহভাজন হিসেবে জঙ্গিদের কথা বলা হয়। পরের বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সে সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কাছে ৪ পৃষ্ঠার অভিযোগ জমা দেন মিতুর বাবা।
এর মধ্যে জড়িত সন্দেহে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন অনেকে। ঘটনার পরের সপ্তাহে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রাশেদ ও নুরুন্নবী নামে দুজন।
এরপর কেটে যায় ৫ বছর। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআাই। ২০২১ সালের ১০ মে বাবুলকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ডেকে নিয়ে আটক করে সংস্থাটি।
পরদিন আদালতে বাবুলের করা মামলায় তাকেই দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। একই দিন হত্যায় ‘বাবুল জড়িত’ দাবি করে মিতুর বাবা আরেকটি মামলা করেন। মামলায় মোট আটজনকে আসামি করা হয়। ওই দিনই পুলিশ এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখায়।
বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি দেন আইনজীবী। আদালত ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে আদালত বাবুলকে নিজের করা মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়।
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিপাহী মো. বিল্লাল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিল্লাল শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি সীমান্ত চৌকির অধীনে সিপাহী ছিলেন। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কাজিরতলা গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্রে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে জীবত উদ্ধার করে। সে সময় বিজিবির সদস্যের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পরের দিন শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘নিখোঁজ থাকার দুই দিন পর সাগর থেকে বিজিবি সদস্যের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর আগে সমুদ্রে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাড়ায় বহনকারী নৌকায় উদ্ধার অভিযানে যায় বিজিবি সদস্য। ওই সময় নৌকাডুবির ঘটনায় সমুদ্রে নিখোঁজ হন তিনি। অবশেষে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ঘটনার দিন খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় উদ্ধার অভিযানে যান এবং শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। আমাদের উদ্ধার অভিযান চলছে।’
এদিকে নিহত বিজিবি সদস্যের ভাই আবু বকর বলেন, ‘ভাইকে খোঁজার জন্য টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। এর মধ্য খবর আসে সাগরে চরের মধ্য ভাইয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
‘গত শুক্রবার সাগরে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকা উদ্ধার অভিযানে গেলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছিল ভাই। ওই সময় আমাদের জানানো হয়েছিল তিনিসহ ৩৩ জন নিখোঁজ ছিল। এ নিয়ে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’
নিখোঁজ বিজিবি সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘এর আগে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভাসমান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও বেশ কিছু রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্থানীয়রা জানান, গত ২২ মার্চ রাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া এলাকায় সাগরে ভাসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। তারা স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিনের মালিকাধীন মাছ ধরার নৌকায় শাকের মাঝির নেতৃত্বে রোহিঙ্গা বহনকারী নৌকাটি থামানোর সংকেত দেন সমুদ্রে। পরে ওই নৌকাতে ওঠেন বিজিবি সদস্য।
ওই সময় উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। সেখানে চিৎকারে নারী-শিশুসহ ২৫ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলে ও বিজিবি। পরে নিখোঁজ বিজিবি সদস্যসহ রোহিঙ্গাদের সন্ধানে সাগরে তল্লাশি চালানো হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকায় অর্ধশতাধিক লোকজন ছিল বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা।
মানব পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য ঈমান হোসাইন ও আবুল মনছুর মিলে মিয়ানমারের থেকে রোহিঙ্গা পারাপার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন:সিলেটের কানাইঘাট সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত শাহেদ আহমদের মরদেহ ফেরত দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে শনিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া এলাকায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর ভারতের মেঘালয় রাজ্য পুলিশের হেফাজতে থাকা গুলিবিদ্ধ শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ।
পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন জকিগঞ্জ বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার গোলাম কবির, কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম এবং ভারতের পক্ষে বিএসএফ ও সেখানকার পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
কানাইঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবু সায়েম জানান, পতাকা বৈঠক শেষে শাহেদ আহমদের মরদেহ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ থানায় নিয়ে আসার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে নিহত হন শাহেদ আহমদ। তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর আলুবাড়ি গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র।
তার মরদেহ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। খবর পেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করে পরিবার। পরে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ আনার উদ্যোগ নেয় বিজিবি।
আরও পড়ুন:টানা তিন দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানির সংকটে ছিল কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল। তবে সোমবার রাতে নতুন মোটর লাগানোর পর পানির সংকট কেটেছে।
গত তিন দিন পানি না থাকায় ভোগান্তিতে ছিলেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে ভর্তি থাকেন হাসপাতালে। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনসহ সহস্রাধিক মানুষ অবস্থান করেন।
প্রতিদিন এখানে ২০ হাজার লিটার পানি প্রয়োজন। হাসপাতালে পানির সংকটের কারণে অন্তত ৩০ জন রোগী অন্যত্র চলে গেছে বলেও খবর পাওয়া যায়।
পানির মোটর বিকল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালটিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শৌচাগারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানি সংকটে শৌচাগার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে।
টানা দুই দিন বিকল হয়ে যাওয়া মোটরটি সচল করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে পানি সরবরাহের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রয়োজন মেটেনি।
কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) তত্ত্বাবধায়ক ডা. নূর মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, ‘বিগত তিন দিনে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে, এটা সত্য। তবে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছি।
‘গতকাল রাতে একটি নতুন মোটর লাগানোর পর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলাধীন মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
প্রাণ হারানো চারজন হলেন গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী বেপারীর ছেলে ওদুদ বেপারী (৩৬), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা চরঝাপ্টা রমজানবেগ গ্রামের বাচ্চু সরকারের ছেলে বাবুল সরকার (৪৮), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাকিব (২৬) ও একই এলাকার নয়াকান্দি বড়ইচর গ্রামের মোহন ভান্ডারের ছেলে নাঈম (২৫)।
মেঘনা নদীর কালীপুরা ঘাট সংলগ্ন এলাকায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, হতাহত সবাই নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সক্রিয় সদস্য। তারা সবাই অবৈধ বালুমহাল পরিচালনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ওদুদ বেপারি নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর সেকেন্ড ইন কামান্ড পিয়াসের বড় ভাই।
স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামসংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধ একটি বালুমহাল পরিচালনা করতেন নৌ ডাকাত নয়ন বাহিনীর লোকজন। দিনের আলোতে নদীর ওই অংশে বালুমহালের অস্তিত্ব না থাকলেও সন্ধ্যা হলেই সেখানে চালু করা হতো বালুমহাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসংখ্যবার অভিযান চালিয়েও অবৈধ বালুমহালটি বন্ধ করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অবৈধ বালুমহাল চালুর পর আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তিন থেকে চারটি স্পিডবোট ও ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দেয় নয়ন বাহিনীর লোকজন। এ বাহিনীর সাথে বিগত কয়েক মাসে কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রতিপক্ষের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাতে অবৈধ বালুমহালের জন্য বাল্কহেড আটক করতে একটি স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল নয়ন বাহিনীর লোকজন। ওই সময় নৌযান দুটিতে ১০ থেকে ১১ জন আরোহী ছিল। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে দ্রুতগতির স্পিডবোটটি দিক ভুলে ট্রলারে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে তিনজনের লাশ উদ্ধার হলেও নাঈম (২৫) নামে একজন নিখোঁজ হন।
তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ। পরবর্তী সময়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নাঈমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার ইউনিট প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক ওবায়দুল করিম খান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমরা শুনেছিলাম বাল্কহেডের সাথে স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে আসার পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, স্পিডবোটের সাথে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের সংঘর্ষ হয়েছে। দুর্ঘটনায় ট্রলারটি তলিয়ে যায় এবং স্পিডবোটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার ধারণা, যারা মারা গেছে, তারা সবাই ট্রলারের যাত্রী ছিল।
‘এ ঘটনায় একজন নিখোঁজ ছিল। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে শনিবার দুপুর দুইটার দিকে দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ নাঈমের লাশ উদ্ধার করি আমরা।’
নিহত ওদুদ বেপারীর স্ত্রী ফেরদৌসীর দাবি, অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা নয়, পার্শ্ববর্তী মতলব উত্তর উপজেলার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। এ ঘটনায় চারজন নিহত হন। আহত হন পাঁচ থেকে ছয়জন।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে একটি ট্রলারের সঙ্গে দ্রুতগতির স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছে। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।’
আরও পড়ুন:ঝালকাঠি সদর উপজেলার রামপুর জোড়াপোল এলাকায় ৬ জানুয়ারি সুদেব হালদার (২৮) নামের ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
সুদের হত্যার দিনই ঝালকাঠি সদর থানায় একটি মামলা করেন তার বাবা সুব্রত হালদার। কিন্তু ঘটনার তৃতীয় দিনেও হত্যায় জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার, স্বজন ও এলকাবাসী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ করতে বৃহস্পতিবার দোকান বন্ধ রেখে রাস্তায় নামেন।
সকালে ঝালকাঠির বাউকাঠি বাজারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরা।
সকাল ১০টার দিকে সুদেব হালদারের বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোনের দোকানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ব্যবসায়ীরা।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী সরদার মো. শহিদুল্লাহ, বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ী রাহুল রাড়ী, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন মোল্লা, আলী হায়দার রাড়ী, মো. আবু বক্কর, সৈয়দ রুহুল আমিন, মো. বেল্লাল খান, মো. আনিস সিকদার এবং নিহতের সহোদর সাগর হালদার সুকেশসহ অনেকে।
বক্তাদের একজন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সুদেব হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে শতাধিক ব্যবসায়ী অংশ নেন।
গত ৬ জানুয়ারি রাতে সুদেব হালদার দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা হলে দুর্বৃত্তরা তার গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সকালে স্থানীয়রা মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
আরও পড়ুন:বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে সচিবালয়ে আগুন ধরেছিল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
নাসিমুল গণি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে যেটা উঠে এসেছে, এটা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণেই আগুন লেগেছে। প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
গত ২৬ ডিসেম্বর সচিবালয়ের একটি ভবনের চারটি ফ্লোর পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ৭ নম্বর ভবনের এসব ফ্লোরে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আংশিক কার্যালয় এবং একটি বিভাগের পুরো কার্যালয়ের অবকাঠামোর সঙ্গে সব নথিপত্রও পুড়ে যায়।
তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী জানান, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করা হয়েছে। তার সঙ্গে প্রাথমিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞ দলের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি জেনে নিয়ে ভবিষ্যতে করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া নমুনাতেও কোনো বিস্ফোরক ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি। ডগ স্কোয়াডের সার্চেও মেলেনি বিস্ফোরকের আলামত।
আরও পড়ুন:পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় এক কিশোরের মৃত্যুর জেরে একাধিক বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবারও ওই সড়কটিতে বাস চলাচল করেনি।
বাস বন্ধের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারগামী যাত্রীরা।
জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ এলাকায় বাসের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রের নিহতের ঘটনার জেরে বাস ভাঙচুরের ঘটনায় সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতির ডাক দেয়। এর আগে সোমবার বিকেলে মঙ্গলবার থেকে সিলেটজুড়ে কর্মবিরতির ডাক দিলে রাতে ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন শ্রমিকরা। কেবল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
কদমতলী বাস টার্মিনালে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস জকিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। একইভাবে জকিগঞ্জ থেকেও সিলেটের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে আসেনি। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েন মারাত্মক দুর্ভোগে।
টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, অনেক যাত্রী সেখানে বসে আছেন বাসের অপেক্ষায়। বাস ছেড়ে যাবে না জানার পরও তারা অপেক্ষা করছেন ধর্মঘট প্রত্যাহারের।
জকিগঞ্জ যাওয়ার জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন কালিগঞ্জের যাত্রী বদরুল ইসলাম। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে তিনি সকালে কদমতলী টার্মিনালে এসেছেন, কিন্তু কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন।
তিনি আরও জানান, বিকেল নাগাদ ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে তাকে বাড়ি ফিরতে হবে।
গত রোববার সকালে জকিগঞ্জের কামালগঞ্জ আব্দুল মতিন কমিউনিটি সেন্টারের নিকটে সড়কের পাশে শিশু-কিশোররা ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বল সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে চলে গেলে সেটি আনতে আবির আহমদ (১৪) নামের এক কিশোর দৌড় দেয়। সে সময় দ্রুতগামী একটি গেটলক বাসের ধাক্কায় সে গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্তত তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয় ওই সময়। এর প্রতিবাদে সোমবার পরিবহন শ্রমিকরা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবারও এ সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন তারা।
জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিত বলেন, ‘আমাদের বাসের চালক অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে, কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে বাস ভাঙচুর করা ও পোড়ানো সন্ত্রাসী কাজ।
‘আমরা এর বিচার চাই। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসের চালক বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, ‘বাস ভাঙচুরের দাবি করে রোববার রাতে হেলাল মিয়া নামের একজন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে এখন বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য