হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলে রাখা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ মিয়াকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
ওয়াহিদ মিয়া ছিলেন বানিয়াচং ২ নম্বর উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
নিউজবাংলায় গত সোমবার প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনে আলবদর বাহিনীর সঙ্গে ওয়াহেদের পরিবারের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে আসে। এরপর বুধবার রাতে তাকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমীর হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর মিয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগ জানতে পারে, ওয়াহেদ মিয়া ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী আলবদর বাহিনীর পরিবারের সদস্য। তাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে আবদুল ওয়াহেদ মিয়াকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. ময়না মিয়াকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি, তিনি (ওয়াহেদ) ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী পরিবারের সদস্য। তার বড়ভাই আবু ছালেক মিয়া ছিলেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম সদস্য। তাই তাকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
‘ওয়াহেদ বানিয়াচংয়ের বিখ্যাত রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটিও দখল করে রেখেছেন। এছাড়া তিনি সাংবাদিকের ওপরও হামলা করেছেন। আমরা চাই এই বাড়িটি ওয়াহেদের কবল থেকে উদ্ধার হোক।’
বাইসাইকেলে কয়েকবার বিশ্বভ্রমণকারী ও ভ্রমণ কাহিনির লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি বেদখলের বিষয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার ওয়াহেদ ও লোকজনের হামলার শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা।
সবশেষ হামলার মুখে পড়েন বিডিনিউজের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর, বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজা।
যেভাবে বেদখল রামনাথের বাড়ি
হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় ১৮৯৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন রামনাথ বিশ্বাস। তিনি ছিলেন চিরকুমার।
রামনাথ বিশ্বাস বাইসাইকেলে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরেছেন তিনবার। সেসব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণবিষয়ক ৪০টি বই। ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় তিনি মারা যান।
বানিয়াচং গ্রামের বিদ্যাভূষণপাড়ায় অনেক বড় এলাকা নিয়ে রামনাথের বসতভিটা। ৪ একর ৪৮ শতাংশ জমিতে বসতঘরের পাশাপাশি ছিল দৃষ্টিনন্দন মন্দির ও পুকুর। বর্তমানে পুরোনো সব ভবন ভেঙে ফেলেছে দখলদার ওয়াহেদ মিয়ার পরিবার। শুধু মন্দিরের একটি অংশ এখনও টিকে আছে। সেটিও ধীরে ধীরে ভাঙা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর সবুজ লতাপাতা। পুকুরে দখলদাররা চাষ করছেন মাছ।
স্থানীয়রা জানান, রামনাথ ভারতে স্থায়ীভাবে চলে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল বাড়িটি। ১৯৮০-এর দশকে ওয়াহাব উল্লাহ নামে প্রভাবশালী একজন এই সম্পত্তি দখল করে নেন। ২০০০ সালের পর তিনি আবদুল ওয়াহেদের কাছে জায়গাটির দখল বিক্রি করেন।
আবদুল ওয়াহেদ ও তার বড় ভাই আবু ছালেকের দখলে সেই থেকে রয়েছে বাড়িটি। আবু ছালেকের বিরুদ্ধে একাত্তরে আলবদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আর বাড়ির দখল নেয়ার সময় আবদুল ওয়াহেদ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে আবু ছালেক এলাকা ছাড়েন। অন্যদিকে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলে রাখতে আবদুল ওয়াহেদ নিজের নামে ভুয়া নামজারি করে নেন। তবে স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও রামনাথ স্মৃতি সংসদের নেতাকর্মীরা বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনলে সেই নামজারি বাতিল হয়।
বাড়ির দখল রাখতে রাতারাতি আওয়ামী লীগ নেতা
স্থানীয় বিদ্যাভূষণপাড়ার কাউছার আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবদুল ওয়াহেদ একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ির দখল ছাড়তে চাপ শুরু হলে স্থানীয় দুজন প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধির হাত ধরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।’
২ নম্বর বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া বলেন, ‘ওয়াহেদ একজন দখলদার। রামনাথ বিশ্বাসের বাড়িটি তিনি দখল করে রেখেছেন। সরকারি খাতায় এটি অর্পিত সম্পত্তি। অনেক চেষ্টা করেও আমরা বাড়িটিকে দখলমুক্ত করতে পারিনি। তিনি (ওয়াহেদ) কিছুদিন পর পরই বাড়িকে নিজের নামে নামজারি করে ফেলেন, কিন্তু আমরা সেটাকে বাতিল করি।’
স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের গেরিলা দল ‘দাস পার্টির’ অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দারুজ্জামান খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আবদুল ওয়াহেদের বড় ভাই আবু ছালেক এই এলাকার আলবদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি পলাতক।’
রামনাথ স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও লোক গবেষক আবু সালেহ আহমেদ বলেন, ‘দখলদার আবদুল ওয়াহেদ খুবই প্রভাবশালী। এ কারণে এলাকার কেউ বাড়িটি উদ্ধারের বিষয়ে কোনো কথা বলে না। আমি রামনাথের স্মৃতিটুকু বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছি। সাংস্কৃতিক কর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েকবার তার ভুয়া নামজারি বাতিল করেছি। সর্বশেষ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়েও একবার নামজারি বাতিল করেছি। এটা যে রামনাথের বাড়ি, সে বিষয়ে অনেক কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে।’
তিনি বলেন, ‘বছরখানেক আগে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হাইকোর্টে রিট করব। তবে যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন তাদের আবদুল ওয়াহেদ ভয়ভীতি দেখিয়ে থামিয়ে দেন।’
প্রায়ই আক্রান্ত সাংবাদিক-পর্যটক
বাড়িটি দখলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। সর্বশেষ হবিগঞ্জের স্থানীয় চারজন সাংবাদিক ৬ সেপ্টেম্বর ওই বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার হন। এর চার দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর দখলদারদের হামলার শিকার হয়েছেন। এ সময় স্থানীয় আরও তিনজন সাংবাদিককেও মারপিট করেন আবদুল ওয়াহেদ ও তার ছেলেরা।
বানিয়াচং প্রেস ক্লাব সভাপতি মোশাহেদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রামনাথের বাড়িতে গেলেই সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করেন ওয়াহেদ মিয়া ও পরিবারের সদস্যরা। বিভিন্ন সময় বাড়িটিকে দেখতে যাওয়া পর্যটকরাও লাঞ্ছিত হয়েছেন।’
তবে হামলার অভিযোগ এবং বাড়ি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করছেন আবদুল ওয়াহেদ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বাড়ি রামনাথ বিশ্বাসের না। এই এলাকার কেউ এটিকে রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি বলে প্রমাণ করতে পারবে না। সাংবাদিকরা এখানে এসে আমাকে শুধু শুধু বিরক্ত করে। আপনারা আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। না হলে খারাপ হবে।’
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। কেউ আমাদের এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ ও আবেদন দিলে বাড়িটির বিষয়ে খোঁজখবর নেব। যেহেতু এটি সরকারি সম্পত্তি নয়, তাই আমরা নিজেরা ওইখানে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না।’
আরও পড়ুন:নওগাঁর ধামইরহাটে রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল নামে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও তিনি আসলে তা নন, প্রতারণার স্বার্থে ভুয়া পরিচয় ধারণ করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রুপনারায়নপুর গ্রাম থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন।
২৫ বছর বয়সী রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের বাসিন্দা।
ভুক্তভোগী ম্যানুয়েল তপন জানান, ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে তিনি (পিয়াল) তার কাছ থেকে ২৯ হাজার ৫৩৮ টাকা গ্রহণ করেন এবং আরও টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাকে চ্যালেঞ্জ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ গিয়ে প্রতারক পিয়ালকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
তপন বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে আমার মতো এলাকার অন্য লোকজনের কাছেও বিভিন্ন ফন্দি এঁটে প্রতারণা করে আসছে এই প্রতারক।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধামইরহাট থানার ওসি মো. বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, ‘প্রতারক রেজওয়ানুল আহমেদ পিয়াল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। ইতোমধ্যে একজনের কাছে থেকে ২৯ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাও নিতেন তিনি।
‘এদিনও প্রতারণা করতে গেলে জনগণ তাকে আটক করে রাখে। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ মামলা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হবে।’
আরও পড়ুন:নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মো. সুলতান নামে এক রোহিঙ্গা নাগরিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক এই হত্যাকাণ্ডের কারণ জানাতে পারেনি পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১১৬ নম্বর ক্লাস্টার থেকে পুলিশ সুলতানের মরদেহ উদ্ধার করে। তিনি ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা ছিলেন।
ভাসানচর থানার ওসি কাওসার আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি বলেন, সুলতান ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭৮ নম্বর ক্লাস্টারে বসবাস করতেন। ১১৬ নম্বর ক্লাস্টারের খালি জায়গায় তিনি সবজি চাষ করতেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছেলে তার জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে বাবাকে দেখতে না পেয়ে তার ছেলে ওই ক্লাস্টারে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তার বাবার গলা কাটা মরতেজ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় অন্য ক্লাস্টারের লোকজন এগিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওসি কাওসার আহমেদ জানান, পেছনের দিক থেকে গলা কেটে এই রোহিঙ্গা নাগরিককে হত্যা করা হয়। শুক্রবার সকালে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুন:নাটোরের সিংড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের অভিযোগে অপর প্রার্থী মো. লুৎফুল হাবিবকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান বৃহস্পাতবার অভিযুক্তকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের ৮ মে অনুষ্ঠেয় নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনায় আপনি লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বর্ণিত বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এছাড়া সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচিত্র বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখিত প্রতিবেদন ও পত্রিকান্তে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণ হয়েছে। এরূপ ঘটনার জন্য কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল অথবা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাবসহ নির্বাচন কমিশনে ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসে গেলে দেলোয়ার হোসেনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আহত অবস্থায় তাকে তার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।
ভুক্তভোগী প্রার্থীর পরিবার এ ঘটনার জন্য আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেল ও তার সমর্থকদের দায়ী করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক। দেলোয়ার হোসেন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে লুৎফুল হাবীব ছিলেন একক প্রার্থী।
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে টিউবওয়েল বসানোর জন্য স্থাপন করা পাইপে পানির পরিবর্তে উঠে আসছে এক ধরনের তরল। অনেকটা ডিজেলের মতো গন্ধযুক্ত এই তরল নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে কৌতূহল।
উপজেলার ভোলামোড় এলাকায় এক বাড়িতে ঘটেছে এই ঘটনা। বাড়ির মালিক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘পানীয় জলের জন্য তিন বছর আগে এখানে মোটর বসানো হয়। এটি উপজেলা পরিষদ থেকেই বসানো হয়েছিল। কয়েক মাস থেকে মোটরটি দিয়ে পানি উঠছে না। কারণ জানার জন্য বুধবার সকালে মিস্ত্রি ডেকে আনা হয়।
‘মিস্ত্রি কাজ করার সময় মোটরের সঙ্গে যুক্ত পাইপ দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানির পরিবর্তে তেলের মতো এক ধরনের তরল উঠে আসে। তা দেখে মনে হয়েছে ডিজেলের মতো। বিষয়টি আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, যাতে তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় সংবাদকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এ সময় পাইপ দিয়ে উঠে আসা তরলে তিনি কাগজ চুবিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করলে তাতে আগুন ধরে যায়। তার প্রশ্ন- পানি হলে তো ভেজা কাগজে আগুন ধরতো না। তাহলে এই তরল কি খনিজ তেল?
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা সরকার জানান, তিনিও বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছেন। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর করবেন বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধায় ভাঙারির দোকানে চুরি করা রেলপাত (রেললাইন) বিক্রির সময় এক অটোচালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ব্রিজ রোড এলাকার আশা ভাঙারি দোকানে সরকারি এসব রেলপাত বিক্রির সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে গাইবান্ধার রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।
এ সময় চুরি করে বিক্রি করতে নিয়ে আসা রেলপাত এবং সেসব পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত একটি অটোরিকশাও জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- সদর উপজেলার পশ্চিম দুর্গাপুর এলাকার ৩০ বছর বয়সী সাগর মিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর কঞ্চিপাড়া এলাকার ৪০ বছর বয়সী ওয়াহেদ মিয়া ও আশা ভাঙারি দোকানের শ্রমিক সদর উপজেলার বালুয়া বাজারের পাকারখুটি এলাকার ৩৩ বছর বয়সী মোকলেছুর রহমান। এদের মধ্যে ওয়াহেদ মিয়ার অটোরিকশায় এসব মালামাল পরিবহন করা হয়েছিল।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বোনারপাড়া রেলওয়ে পুলিশের ওসি খাইরুল ইসলাম তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের ব্রিজ রোডের একটি ভাঙারির দোকানে সরকারি রেলপাত অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয়কালে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় দোকান মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ সময় তাদের কাছ থেকে খণ্ড খণ্ড তিন ফুট দৈর্ঘ্যের ৯ টুকরা রেললাইনের পাত উদ্ধার করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেয়া হবে।’
রেলপাতগুলো বালাসিঘাটের পরিত্যক্ত রেলপথ থেকে খুলে আনা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আটককৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া এদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
অপহরণের ৬ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জ থেকে তামিম হোসেন নামের ৭ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় এ মামলার আসামি আল-আমিন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে বেলকুচি উপজেলার চন্দনগাতী গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র্যাব ১২-এর একটি দল। বুধবার দুপুর তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার হানুরবাড়াদি গ্রাম থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহৃত তামিম হোসেন চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদি গ্রামের মো. সুন্নত আলীর ছেলে। অপরদিকে গ্রেপ্তার হওয়া ২৯ বছর বয়সী আল-আমিন কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানায় মেষতলী বাজারের বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব ১২-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মারুফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, অপহরণের পর শিশুটির বাবা সুন্নত আলী চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি র্যাবকে জানালে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, তামিমের বাবার সঙ্গে আল আমিনের দুই মাস আগে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়েই সুকৌশলে তামিমকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিপণের জন্যই শিশুটিকে অপহরণ করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হস্তান্তর করার আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
মন্তব্য