রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে অক্সিজেন সরবরাহ না করা, অক্সিজেন ফিল্টার না থাকা ও ডিউটিরত নার্স এবং চিকিৎসকের অবহেলায় ফিরোজ রওশন আলম নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন তার ছেলে।
হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সিসিইউ (করনারি কেয়ার ইউনিট) ওয়ার্ডে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার পশ্চিম পেয়ারা পাড়া গ্রামে।
ফিরোজের ছেলে সোয়াত রাব্বানি সোমবার মধ্যরাতে হাসপাতালেই বাবার লাশ নিয়ে ফেসবুকে লাইভে এসে হাসপাতালের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসক-নার্সের অবহেলার অভিযোগ তোলেন।
সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, সেই রোগী ছাড়পত্র নিয়েছিলেন। তার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। এরপরও তিনি হাসপাতালে সে রাতে ছিলেন। অসুস্থ বোধ করার পর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাকে বাঁচানো যায়নি।
হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা আর রোগীর প্রতি অবহেলার অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। এ কারণে এই লাইভ করার পর ফেসবুকে তা ভাইরাল হয়ে যায়। লাইভের কমেন্টে লোকজন হাসপাতাল ও চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানায়।
ফেসবুক লাইভে কী অভিযোগ
ফিরোজের ছেলে সোয়াত ফেসবুক লাইভে বলেন, ‘ওরা আমার বাবাকে খুন করছে।
‘বাবা যখন অসুস্থ হয়ে ছটফট করতেছিলেন তখন কোনো নার্স ও ডাক্তার বাবার পাশে ছিলেন না। আমি তখন আমার বোনের বাসায় ছিলাম। বাবার পাশের একজন রোগী আমার বোনকে ফোন করলে আমি অন্য একজনের মোটরসাইকেলে চলে আসি।’
সোয়াত বলেন, “এসে দেখি বাবা ছটফট করতেছে, আর বলতেছিল, ‘আমি আর বাঁচব না’। এরপর আমি ডক্টরের কাছে গেছি। ডক্টর আসছিলেন কিন্তু আশপাশে কোনো অক্সিজেন ছিল না। অক্সিজেনের স্টকে ছিল কিন্তু ফিল্টার ছিল না।”
সোয়াত অভিযোগ করেন, ‘দুইজন ডক্টর এসে অক্সিজেন নিতে হবে বলে জানান। কিন্তু অক্সিজেন বেড নাই। হুইল চেয়ার আনতে গেছি, সেটাও নাই। শেষে আমি কোলে নিয়েছি। কোলে করে সিসিউতে নেই। সেখানে নার্সরা জানায়, অক্সিজেনের পাইপ লাগবে। পাইপ কেনা ছিল সেটা দিতে দিতে আব্বুর মুখ থেকে ফেনা বের হয়ে গিয়েছিল। শেষে অক্সিজেন দিয়ে বলেছিল, ৪৫ হাজার টাকার ইনজেকশন দিতে হবে। আমি বলেছি যা করার আমি করব। পরে আব্বু মারা গেছে।’
অন্য রোগী, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য মেলে না
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে রওশন আলম যে কক্ষে মারা গেছেন, তার পাশের রোগীদের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তবে সেই ছেলের অভিযোগের পক্ষে বলেননি তারা।
ওই ওয়ার্ডের অন্য রোগীর স্বজনরা জানান, মৃত্যুর আগে ফিরোজ ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত ধুমপান করেছিলেন। কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ওই ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডের রোগীর স্বজন মো. ফিরোজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি যখন রাতে মারা যান তখন অক্সিজেনের ফিল্টার ছিল না, এটা ঠিক। কিন্তু উনি সুস্থ ছিলেন।
‘রাত ১১টার পরে বার বার তার স্ত্রীকে বলেছেন যে সিগারেট খাবেন। কিন্তু তার স্ত্রীর তাকে বাধা দিয়েছে সিগারেট না খেতে। ডাক্তার এবং তার ছেলেও বারণ করেছেন। এরপরেও তিনি ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে অনেকক্ষণ সিগারেট খেয়েছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই এই দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তার ছেলে এসে তো লাইভ করল।’
ফিরোজ বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে অক্সিজেনের সেন্ট্রাল লাইন। অক্সিজেনের কোনো সমস্যা নাই।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী বলছে
সেদিন সকালে হৃদরোগ বিভাগে নার্সের দায়িত্বে ছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফিরোজ হৃদরোগ বিভাগে ভর্তি হন ১০ সেপ্টেম্বর। তার ট্রিটমেন্ট চলছিল ১৬ নম্বর বেডে। তিনি সোমবার অনেকটাই সুস্থ বোধ করছিলেন।
‘সোমবার সকালের রাউন্ডে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান হরিপদ সরকার, রবীন্দ্রনাথ সেন, মাহবুবুর রহমানসহ অনেক স্যারই রাউন্ড দিয়েছেন। ওই সময় রোগীর অবস্থা ভালো দেখে স্বজনদের স্যাররা বলেছিলেন, তারা ছাড়পত্র নিবেন কি না। তখন রোগীর স্বজনরা জানান, তারা ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় যাবেন। এজন্য সব প্রস্তুত করা হয়।’
শহিদুল বলেন, ‘ওই ব্যক্তির ছেলে (লাইভ করা ব্যক্তি) এখন নিচ্ছে, একটু পর নিচ্ছে করতে করতে বিকাল ৩টার দিকে ছাড়পত্র রেডি করে নেয়। কিন্তু এরপর আমার কাছেই রেখে দিয়ে বলে, আপনার কাছে ছাড়পত্র থাক, আমি যখন যাব তখন নেব। সেই অনুযায়ী ছাড়পত্রটি আমার কাছেই রাখি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাড়পত্র দেয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী কোনো রোগী বেডে থাকবে না, ওষুধ পাবে না। কিন্তু তারপরেও আমরা রেখেছি। কারণ, তাদের আজ (মঙ্গলবার) ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কখন যাবে সেটা আমাদের বলেনি। শুধু বলেছে যাব। এটা তো গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড। বেড ফাঁকা না থাকায় আরেক গুরুতর অসুস্থ রোগী আসতে পারে না।’
ছাড়পত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান, ফিরোজের স্বজনরা সেটি নিয়ে গেছেন। তবে হাসপাতালের রেজিস্ট্রি খাতা এনে ফিরোজের ডিসচার্জের তথ্য দেখান তিনি। সেখানে সোমবার ডিসচার্জের সময় লেখা দেখা গেছে।
ওই ওয়ার্ডের এক নার্স নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি বিকালের শিফটে ছিলাম। যখন ওই রোগীকে ওষুধ দিতে গিয়েছি তখন তিনি ওষুধ নেননি। বলেছেন, তিনি ছাড়পত্র নিয়েছেন, কাল চলে যাবেন। এরপর আমরা আর মেডিসিন দেইনি।
‘তিনি পুরোপুরি সুস্থ হওয়ায় তার বেডে যে অক্সিজেন ফিল্টার ছিল সেটি অন্য রোগীকে দেয়া হয়েছে। তিনি ওয়ার্ডে হাঁটাহাটি করছিলেন, খাবার খাচ্ছিলেন, অন্য রোগীর সঙ্গে হাসাহাসিও করছিলেন। রাতে হঠাৎ শুনি তিনি ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে পরপর কয়েকটা সিগারেট খেয়ে বেডে এসে পড়ে গেছেন।’
সোহেলা পারভীন শিল্পী নামে আরেক নার্সও ওই ওয়ার্ডে ছিলেন ঘটনার সময়।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, সে সময় সেখানে ৭ জন চিকিৎসক এবং তিনিসহ ৩ জন নার্স ছিলেন। ফিরোজের অসুস্থতা বোধ করার তথ্য জানার সঙ্গে সঙ্গে তারা ট্রলি নিয়ে যাচ্ছিলেন। ততক্ষণে ফিরোজকে কোলে তুলে নিয়ে বের হয়ে গেছিলেন তার ছেলে সোয়াত। এরপর ট্রলিতে করেই ফিরোজকে সিসিইউতে নিয়ে অক্সিজেন দেয়া হয়। প্রয়োজনী সব চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে তাকে বাঁচানো যায়নি।
সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নেয়া রোগী হঠাৎ কেন অসুস্থ হয়ে পড়লেন? জানতে চাইলে সোহেলা জানান, হৃদরোগের চিকিৎসা নেয়ার পরপরই ধুমপান করা ঝুঁকিপূর্ণ। ফিরোজের স্ত্রী ও স্বজনরা তাকে ধুমপান করতে বাধা দিয়েছিলেন। তবে রাতে তিনি ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে গিয়ে ধুমপান করেছিলেন। এতে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
ওই ওয়ার্ডে সে সময় ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক মো. রোকন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর আমরা সর্বোচ্চ ট্রিটমেন্ট দিয়েছি। কোনো অবহেলা ছিল না।’
হাসপাতালের উপ-পরিচালক আব্দুল মোকাদ্দেম বলেন, ‘কেউ মারা গেলেই একটা কমন অভিযোগ তোলা হয়। আসলে সেটা ঠিক না।
‘ওই ওয়ার্ড স্পর্শকাতর। সেখানে দিনের বেলায় ৬ জন নার্স সার্বক্ষণিক থাকেন। এছাড়াও ইন্টার্ন থাকেন কমপক্ষে ১৫ জন। রাতের বেলায় থাকেন ৩ জন। সুতরাং তার অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের চিকিৎসক নার্সরা সব সময়ই এ বিষয়ে সচেতন থাকেন।’
এসব বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রি খাতা থেকে নেয়া ফিরোজের স্ত্রীর ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফিরোজের ছেলে সোয়াতের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ম্যাসেজ দেয়া হলেও সাড়া মেলেনি। অবশ্য সোয়াতের ফেসবুকে দেয়া আপডেট থেকে জানা গেছে, ফিরোজের জানাজা ও দাফনে ব্যস্ত আছে পরিবারটি।
আরও পড়ুন:কোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতি করব না। কোনো দুর্নীতি প্রশ্রয়ও দেব না। আমি মানুষ হিসেবে ভুল করতেই পারি, তবে ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। আমার কাজের গতি যেন ত্বরান্বিত হয়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য।
দায়িত্ব নিয়েই সবার প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হয়ে ধরিয়ে দেবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি কারও অন্যায় আবদার শুনব না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখাতে নয়, আমি আপনাদের বন্ধু হয়ে কাজ করতে চাই। আমি আপনাদের পাশে থেকে সব সমস্যা সমাধান করব।’
চিকিৎসকদের উদ্দেশে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হব। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই।’
ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।’
উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপাচার্য বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদের নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আশা করি, সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা উপাচার্য হিসেবে তার একমাত্র অ্যাজেন্ডা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
দীর্ঘদিন ধরে ১০ জন চিকিৎসক ছাড়াই চলছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটিতে ১৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজ করছেন সাতজন।
দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে আলোচিত কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্স। এটি ২০২০ সালে জাতীয় পুরস্কার পায়।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটি থেকে জেলার বিভিন্ন কারাগারে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ডেপুটেশনে নেয়া হয় চিকিৎসকদের, যার ফলে এ প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ জন রোগী আসে। সব শয্যায় সারা বছরই রোগী থাকে। এমন বাস্তবতায় মেডিক্যাল অফিসার ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট সংকটে কমে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান।
অনেক দিন ধরে এ স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ছয়জন চিকিৎসক গাজীপুরের বিভিন্ন কারাগারে পেষণে কর্মরত রয়েছেন। অন্যদিকে একজন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হাসপাতালে পেষণে কর্মরত।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সটিতে নেই অর্থোপেডিক্স ও ইএনটি কনসালট্যান্ট।
কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম মানসম্মত রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোতে অর্থোপেডিক্স কনসালট্যান্ট ও ইএনটি কনসালট্যান্ট পদায়ন জরুরি। প্রেষণে কর্মরত ছয়জন মেডিক্যাল অফিসারের পেষণাদেশ বাতিল করা খুব প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি মাসেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও তিনজন ডাক্তার কোর্সের জন্য পেষণে চলে যাবেন। তখন সংকট আরও তীব্র হবে।
‘এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুণগত মান ধরে রাখতে চিকিৎসক সংকট দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জেলার সিভিল সার্জন মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আখতার বলেন, ‘আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ডাক্তার সংকট দূর করা যায়। এ বিষয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই ডাক্তার সংকট দূর হবে।’
আরও পড়ুন:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ১৯৯৩ সালে যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণার পর থেকেই রোগটি নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ সরকার। এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও।
সারা দেশের মতো গাইবান্ধাতেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত কার্যক্রম চলছে। এসবের পরও উত্তরের জেলাটিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে যক্ষ্মা ও মাল্টিড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকুলোসিস (এমডিআর) তথা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা।
পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, জেলায় ২০১৯ সালে এমডিআর আক্রান্ত রোগী ছিল পাঁচজন, যেটি পরের বছর ২০২০ সালে কমে হয় চারজন, তবে পরের বছর থেকে গাইবান্ধায় বাড়তে থাকে এমডিআর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
গাইবান্ধায় ২০২১ সালে এমডিআর আক্রান্ত রোগী ছিল ২৪ জন। জেলায় ২০২২ সালেও সমসংখ্যক মানুষ যক্ষ্মার এ ধরনের আক্রান্ত হন। এর পরের বছর ২০২৩ সালে এমডিআরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ জনে।
এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী ৩৭ জন, যা রংপুর বিভাগের আট জেলার সর্বোচ্চ। এ সময়ে জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত গাইবান্ধায় যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী ৬৮১ জন।
বক্ষব্যাধি নিয়ে কাজ করা রাজশাহী চেস্ট ডিজিজ হসপিটালের (সিডিএইচ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত রংপুর বিভাগে এমডিআরে আক্রান্ত রোগী ১২৫ জন। এ সময়ে এমডিআর আক্রান্ত বিভাগের সর্বোচ্চ রোগী ছিল গাইবান্ধায়, যেখানে সর্বনিম্ন পাঁচজন রোগী পাওয়া যায় কুড়িগ্রামে।
এনটিপি গাইবান্ধার ডেটা বলছে, ২০২৩ সালে গাইবান্ধায় যক্ষ্মার সব ধরনে আক্রান্ত রোগী তিন হাজার ৬০৩ জন।
পরীক্ষায় অবহেলা
গাইবান্ধায় সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী শনাক্তে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও আইসিডিডিআরবির অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তারা জানান, যক্ষ্মার সব লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চান না, যার মূলে রয়েছে সামাজিক কুসংস্কার, লোকলজ্জা ও রোগের ব্যাপারে অজ্ঞতা, অবহেলা ও অসচেতনতা।
তারা বলেন, একজন সম্ভাব্য রোগীকে নানাভাবে বোঝানোর পরও কাশি পরীক্ষার জন্য কফ দিতে চান না এবং এক্সরে করতে চান না। কফ পট নিলেও অবহেলা ও নানা অজুহাতে তা ফেরত দেন।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, যক্ষ্মা পজিটিভ রোগীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যক্ষ্মার পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে টিপিটি (টিবি প্রিভেনটিভ থেরাপি) দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের আরও বেশি জটিলতায় পড়তে হয়। কেননা রোগীর স্বজনরা সুস্থতা দাবি করে কোনোভাবেই টিপিটির আওতায় আসতে চান না।
যক্ষ্মার লক্ষণ
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি তথা এনটিপির রংপুর বিভাগীয় বিশেষজ্ঞ ডা. রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি, যেটা মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে, যা হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে থাকে। যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ এক নাগাড়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি। সে ক্ষেত্রে কাশির সাথে রক্ত আসতেও পারে, নাও আসতে পারে।
‘এ ছাড়া রোগীর ওজন কমে যাওয়া, আস্তে আস্তে শরীর দুর্বল হতে থাকা, ক্ষুধামান্দ্য, বিকেল-সন্ধ্যায় জ্বর হওয়া, ঘামের সঙ্গে ভোররাতে জ্বর ছেড়ে যাওয়া ও বুকে-পিঠে ব্যথা হওয়া যক্ষ্মার লক্ষণ।’
তিনি বলেন, ‘এসব লক্ষণ যদি কোনো ব্যক্তির মাঝে থাকে তাহলে সম্ভাব্য যক্ষ্মা রোগী হিসেবে তাকে পরীক্ষা করাতে হবে। শনাক্ত হলে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদে ওষুধ খেলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়।’
এ চিকিৎসক জানান, যক্ষ্মা হাত-পায়ের নখ, দাঁত ও চুলের বাইরে অনেক স্থানকে আক্রান্ত করতে পারে। এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে শরীরের অস্বাভাবিক গুটি, ফোঁড়া, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়, জরায়ু, অস্ত্রোপচারস্থলসহ শরীরে রক্ত সঞ্চালন হয় এমন যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে, সেই অংশটি ফুলে উঠবে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘রোগটি সাধারণত ঘনবসতিপূর্ণ ও দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, এ জীবাণু থেকে তাদেরই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
‘এ ছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, মাদকে আসক্তি ব্যক্তি, অপুষ্টি, দারিদ্র্য, পরিবেশ দূষণ এবং সঠিক সময়ে সকল রোগী শনাক্ত না হওয়া যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।’
একজন মানুষ এমডিআরে কীভাবে আক্রান্ত হন
এমডিআরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে রাজশাহী চেস্ট ডিজিজ হসপিটালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শোভন পাল মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমডিআর যক্ষ্মা রোগী প্রধানত দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. সরাসরি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর জীবাণু দ্বারা। দুই. যক্ষ্মা পজিটিভ রোগী যদি অনিয়মিত ওষুধ খায় কিংবা অনেকেই সেরে উঠেছেন ভেবে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে এসব রোগী এমডিআরের রোগী হিসেবে চিহ্নিত হন। এসব রোগীর যক্ষ্মার স্বাভাবিক ওষুধে আর কোনো কাজ হয় না।’
যক্ষ্মার নিরাময় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ চিকিৎসক বলেন, ‘যক্ষ্মা দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ায় এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগের ধরন, মাত্রা এবং রোগীর বয়স অনুসারে ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করতে ছয় থেকে ৯ মাস পর্যন্ত, এমনকি রোগীর কন্ডিশন অনুযায়ী আরও দীর্ঘ সময় হতে পারে। এসবের ব্যত্যয় হলে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হয়।
‘এমন অবস্থায় যক্ষ্মা রোগীদের ধৈর্যের সাথে নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী পুরো মেয়াদে ওষুধ খেতে হবে। সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে এই জীবাণু শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে এবং একজনের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ জনের মধ্যে জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
শোভন পালের মতে, যক্ষ্মা এবং এমডিআর রোগী কমাতে আক্রান্তদের প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যক্ষা রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনের আরও সজাগ হওয়া, অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা মানুষগুলোকে নিয়মিত পরীক্ষার আওতায় নেয়ার পাশাপাশি জীবাণুবাহী রোগী হাসপাতালে আসার আগেই রোগ শনাক্ত করতে। এ ছাড়া কেউ যাতে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে না দেন, সে বিষয়ে নজরদারি করা, শনাক্ত রোগীদের চিকিৎসার দুই, তিন ও পাঁচ মাসের নিয়মিত ফলোআপ এবং যক্ষ্মায় আক্রান্ত গরিব মানুষদের চিকিৎসার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।
এনটিপি কতটা সফল
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বর্তমান সফলতা প্রসঙ্গে ডা. রানা বলেন, ‘রোগী চিহ্নিত ও চিকিৎসায় করার ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আর ৯৬ ভাগ রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা যাচ্ছে। এনটিপি এবং সহযোগী সংস্থাগুলো গত কয়েক দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে যেখানে প্রতি এক লাখে প্রায় ৪৫ জন লোকের মৃত্যু হতো, বর্তমানে তা ২২ জনে নেমে এসেছে।’
যক্ষ্মা রোগীর নিবন্ধন ও পরামর্শসহ সব কার্যক্রম সরকারিভাবে করা হলেও রোগী শনাক্তের চ্যালেঞ্জিং কাজটি করে থাকে ব্র্যাক, আইসিডিডিআরবির মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে ব্র্যাক যক্ষ্মা কর্মসূচির (বিএইচপি টিবি) গাইবান্ধার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার (ডিএম) নাজমুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও ব্র্যাক যৌথভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গাইবান্ধায় এই রোগ নির্মূলে শ্রেণিভেদে মাঠ পর্যায়ে ব্র্যাকের ৫৬ জন কর্মী সরাসরি কাজ করছে এবং তাদের সহযোগিতায় জেলায় ৩২০০ স্বাস্থ্য সেবিকা কাজ করছে। আমরা সরাসরি রোগীর কাছ থেকে কফ কালেকশন করে হসপিটালে পরীক্ষার জন্য জমা দিচ্ছি।
‘পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা রোগীদের ওষুধ খাওয়ানো এবং নিয়মিত ফলোআপ এবং টিপিটির ব্যবস্থা করছি। অতি দরিদ্র রোগী, পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক, ইটভাটা শ্রমিকসহ এই ক্যাটাগরির পরিবারের রোগীদের পরীক্ষার জন্য যাতায়াত খরচ এবং পুষ্টিকর খাবারের জন্য অর্থ সহায়তা করা হচ্ছে। শিশুদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা এবং ডেটা প্রোভাইডারদের ভাতা প্রদান করে রোগীদের ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে চলেছে ব্র্যাক।’
২০৩৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটি কতটা সহজ হবে, এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে যক্ষ্মা নিয়ে অনেক কাজ হলেও ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি নির্মূল করা অত্যন্ত কঠিন। কেননা একদিকে মানুষ যেমন সচেতন নয়, অপরদিকে রোগী শনাক্তও অত্যন্ত কঠিন, তবে ওই সময়ের মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আবু হানিফ মোবাইল ফোনে নিউজবাংলকে বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগ নির্মূলে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিসহ সব পরিকল্পনাই রয়েছে আমাদের। যক্ষা নির্মূলে জেলার সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, এমনকি জেলখানা ও গার্মেন্ট কর্মীদের চিকিৎসা কেন্দ্র ছাড়াও ব্র্যাকসহ বেসরকারি আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বহুসংখ্যক ল্যাবরেটরিতে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় হচ্ছে। এ জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সংযুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও।
‘এর পরও যক্ষ্মা নির্মূলে যতটুকু সংকট আর চ্যালেঞ্জ রয়েছে, আমরা তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করা সম্ভব হবে।’
আরও পড়ুন:জামালপুরে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার দাবিতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছে।
রোববার সকাল ৮টা থেকে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এই কর্মবিরতি শুরু করেন যা চলবে ২৬ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত।
দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দুপুরে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মানববন্ধনের আয়োজন করে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের মূখপাত্র ডা. মনজুরুল হাসান জীবন, ডা. এমএ কাভী সেকান্দর আলম, ডা. হৃদয় রঞ্জন দাস, ডা. সাদিয়া তাসনিমসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, সমসাময়িক অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাতা প্রদান ও চিকিৎসকদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়নের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন। ইন্টার্ন ভাতা ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ভাতা ৫০ হাজার টাকায় উত্তীর্ণ করা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান বক্তারা।
পরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহানের কাছে এসব দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন:বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার এ কর্মবিরতি চলবে সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।
এদিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীরা। কম জনবল দিয়ে প্রায় তিন গুণ ভর্তি থাকা রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। রোগী ও তাদের স্বজনদেরও অভিযোগ, শনিবার রাত থেকে তারা ভালো সেবা পাচ্ছেন না।
খুমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. দিবাকর চাকমা জানান, গত বছর ইন্টার্ন চিকিৎসক ও পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেন। ওই সময় বেতন-ভাতা বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোল স্থগিত করা হয়। পরে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হলেও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এখনও বঞ্চিত রয়েছেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক পরিশ্রম করলেও সেই তুলনায় তাদের বেতন-ভাতা অনেক কম। তাদের দাবি, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে অন্তত ৩০ হাজার টাকা করা হোক।’
খুমেক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার, কিন্তু রোগী ভর্তি আছে প্রায় এক হাজার ৫০০ মতো। এত রোগী সামাল দিতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা থাকলে রোগী সামাল দেয়া অনেকটা সহজ হয়।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কর্মবিরতিতে নিয়মিত চিকিৎসকদের রোস্টার করে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য বলা হয়েছে। যে দুই দিন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করবেন, ওই দুই দিন রোগী ও চিকিৎসকদের কিছুটা বাড়তি কষ্ট সইতে হবে।’
আরও পড়ুন:সিঙ্গাপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩ মার্চ সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে যান মির্জা ফখরুল। শনিবার দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সালাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।’
প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাগারে থাকার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। মুক্তির পর তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রফেসর শামসুল আরেফীনকে দেখান এবং বাসায় থেকে তার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন।
৭৭ বছর বয়সী মির্জা ফখরুল এর আগেও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট তিনি সিঙ্গাপুরে যান। ২০১৫ সালে কারাবন্দি অবস্থায় বিএনপি মহাসচিবের ঘাড়ের ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়লে মুক্তির পর সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করান তিনি। এরপর প্রতি বছরই ফলোআপ চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে যেতে হয়।
মন্তব্য