রাজধানীতে যানজট কোনো নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু কোনো কোনো দিন পরিস্থিতি ছাড়িয়ে যায় সহ্যের সীমাকে, যেটি দেখা গেল মঙ্গলবার।
এক কিলোমিটার যেতে দেড় ঘণ্টা, দুই কিলোমিটার যেতে দুই ঘণ্টা- এমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে নগরবাসীর। যানজট দেখে সড়ক পাল্টে চলতে হয়েছে। কাউকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে, কেউ কেউ নিজেই হেঁটে যেতে বাধ্য হয়েছেন গন্তব্যস্থলে।
এটি কোনো একক সড়কের চিত্র নয়। প্রায় সব কটি প্রধান সড়কই স্থবির হয়ে আছে সকাল থেকে।
মোশাররফ হোসেন নামের একজন ফেসবুকে রসিকতা অথবা আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘এক ঘণ্টা ২০ মিনিটে বিজয় সরণি থেকে বিজয় সরণি আসলাম।’
অর্থাৎ এক কিলোমিটারেরও কম রাস্তা পাড়ি দিতে লেগেছে এই দীর্ঘ সময়।
রাজধানীজুড়ে যানজটের যে দুঃসহ পরিস্থিতি, তা ফুটে উটেছে মোশাররফের কথায়।
এদিন সকাল থেকেই উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, তেজগাঁও রামপুরাসহ প্রধান প্রধান সড়কে গাড়ির এমন অস্বাভাবিক প্যাঁচ লেগে যায়, যার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন।
ঢাকায় একটি কর্মশালায় যোগ দিতে রাজশাহী থেকে হাওয়াই জাহাজে করে এসে ভুগেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদ সবুজ।
তার ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে। সেখান থেকে বের হয়ে উবারে গাড়িভাড়া করার পর লেগে যায় আরও মিনিট তিরিশেক। যাবেন ফার্মগেট।
বেলা দেড়টায় নিউজবাংলাকে তিনি জানান, তখনও গাড়ি হোটেল র্যাডিসন ব্লুর সামনে। অর্থাৎ পৌনে দুই ঘণ্টায় তিনি পাড়ি দিয়েছেন কেবল পাঁচ কিলোমিটার। তখনও তার পথের বাকি ৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার।
এরই মধ্যে একজনের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছে বকুলকে। এখন বিকেলে ইউনিসেফের মিটিং ধরা নিয়ে দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তার।
বকুল পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। চাকরি জীবনের প্রথম কয়েক বছর কাটিয়েছেন রাজধানীতেই। ফলে এখানকার সড়কের পরিস্থিতি তার অজানা নয়। কিন্তু তিনি বুঝতেও পারছেন না, এত যানজট কেন।
তার মানে, ঢাকায় এত যানজট কখনও দেখেননি?
বকুল বলেন, ‘না, না, না, না। এত জ্যাম কেন, বুঝতে পারলাম না। গত সপ্তাহেও তো এসেছি। বিমানবন্দর থেকে এক ঘণ্টাতেই পৌঁছে গিয়েছি। আজকে খুবই অস্বাভাবিক, গাড়ি একেবারে নড়ছেই না।’
একই পথ ধরে বাসে করে আসতে গিয়ে ভুগেছেন সংবাদকর্মী হাফসা হোসেন। তার বাসা উত্তরার জসিমউদ্দীন রোডের কাছে। কাজ করেন চ্যানেল আইয়ে।
তিনি বাসে ওঠেন সকাল সাড়ে ১০টায়। তিন ঘণ্টা পর দেড়টা পার হওয়ার পর অবস্থান ছিল মহাখালীর আমতলীর কাছে। অফিস তেজগাঁওয়ের নাবিস্কোতে।
হাফসা জানান, এমনিতে বাসে করে বাসা থেকে অফিসে আসতে এক ঘণ্টা, কখনও দেড় ঘণ্টা লাগে তার। বলেন, ‘আজ যে ভয়াবহ অবস্থা, তা কখনও হয়নি।’
হাফসার শিফট ছিল সকাল ১১টা থেকে। তাতে যোগ দেয়া হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক (উত্তরা) বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল নিউজবাংলাকে জানান, গাজীপুরে মুন্নু গেট থেকে মিল গেট এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ভাঙা। তার মধ্যে পানি জমে যাওয়ায় গাড়ি পাস হচ্ছিল না। যে কারণে যানজট হয়েছে, সেটার জের রাজধানীতে ছড়িয়েছে।
কিন্তু এই পথ যদি যানজটের কারণ হবে, তাহলে উত্তরা থেকে মহাখালীগামী গাড়ি কেন এভাবে স্থির হয়ে বসে থাকবে, তার কোনো ব্যাখ্যা তার কাছ থেকে পাওয়া গেল না।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ফেসবুক পেজের ট্রাফিক বুলেটিনে বলা হয়, ‘ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মিলগেট এলাকায় ফ্লাইওভার এর পিয়ার ক্যাপ এর জন্য খুঁড়ে রাখা উন্মুক্ত গর্ত, গর্তের চারপাশে টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাস্তা সংকুচিত হওয়া এবং খানাখন্দগুলো দীর্ঘ মেয়াদে মেরামত না করার কারণে উভয়মুখী এক লেনে গাড়ি চলাচল করছে।
‘অবকাঠামোগত এ দুর্বলতার কারণে মহাসড়কটির এ অংশে উভয়মুখী রাস্তায় যান চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখার প্রয়াসে প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত ট্রাফিক সদস্য মোতায়েন করা হয়। কিন্তু জিএমপি এরিয়ার অন্যান্য এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হলেও ডিএমপিসহ টঙ্গী-মিলগেট এলাকায় বিআরটি প্রজেক্টের অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
‘এর সঙ্গে গত রাত থেকে ভারি বর্ষণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে ট্রাফিক বিভাগ বিআরটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’
ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার রেফাতুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের প্রভাব পুরো শহরে পড়েছে। আর রাত থেকে বৃষ্টির কারণে রমনার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে সকাল থেকে যানজট লেগে আছে।’
তবে দুপুরের পর গাজীপুরের পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়। যে কারণে সেই পথে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। কিন্তু রাজধানীতে এর প্রভাব থেকেই যায়।
ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর একটি সম্মেলন হচ্ছে। অতিথিরা হোটেল সোনারগাঁওয়ে অবস্থান করছেন। তাদের কয়েকটি বাস চলাচল করেছে, খুব কম সময়ের মধ্যে। এর পাশাপাশি রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ।’
আরেক সংবাদকর্মী জান্নাতুল ফেরদাউস তানভীর বাসা মিরপুরের পল্লবীতে। কর্মস্থল তেজগাঁওয়ে। সিএনজি অটোরিকশায় ওঠার পর গন্তব্যে যেতে পারেননি। তীব্র যানজট দেখে চালক তাকে নামিয়ে দেন ইসিবি চত্বরে। পরে ওঠেন বাসে। সেখান থেকে নামেন আমতলী সেতু ভবনে। এরপর বাস থেকে নেমে মহাখালী মোড় পার হয়ে রিকশায় করে যান তেজগাঁওয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কার্যালয়ে। সব মিলিয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা লেগেছে।
নিউজবাংলাকে তানভীর বলেন, ‘এর আগে তিন ঘণ্টা লেগেছে, এমন অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু সাড়ে চার ঘণ্টা লাগেনি কখনও। মেজাজ ভীষণ খারাপ।
নগরীর দক্ষিণ অংশে মোহাম্মদপুরের আদাবরে থাকেন আল হেলাল শুভ। তারও কর্মস্থল তেজগাঁওয়ে। তিনি নিজেই বাস থেকে নেমে পড়েছেন যানজট দেখে।
আগারগাঁওয়ে আসার পর যখন দেখেন গাড়ি আর আগাচ্ছে না, তখন নেমে নিলেন বাইক।
শুভ বলেন, ‘আগারগাঁও পর্যন্ত বাসে। দেখি পুরো রাস্তা জ্যাম। বাস থেকে নেমে পরে নিলাম বাইক। সেই বাইক প্রথমে লিংক রোড ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে আসতে চাইল। কিন্তু একটু এগিয়ে চালক দেখেন, পুরো রাস্তা ব্লক। এ দেখে আবার বাইক ঘুরিয়ে বিজয় সরণির দিকে যান। বিজয় সরণিও পুরো ব্লক দেখে পরে যান ফার্মগেট হয়ে। এরপর সাত রাস্তা হয়ে হাতিরঝিল দিয়ে এসেছি অফিসে।’
আরও পড়ুন:সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শাহবাগ থানার মামলায় আজ সোমবার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আবু আলম শহীদ খান ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৬৭টি মামলা করেছে ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩২০টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৩৫টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
এতে আরও বলা হয়, রোববার ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
দূষিত বায়ুদূষণ বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫ বছর ৫ মাস কমিয়ে দিচ্ছে। বিষাক্ত বায়ুর এই প্রভাব রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে তীব্র। বায়ুদূষণ এই শহরের মানুষের গড় আয়ু ৬ বছর ৯ মাস কমিয়ে দেয়।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের গত সপ্তাহের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশকে বায়ুদূষণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ু দূষণ হলো আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বহিরাগত হুমকি। বাংলাদেশে, যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশের ১৬ কোটির বেশি মানুষের সবাই এমন এলাকায় বাস করে, যেখানে বাতাসে ফাইন পার্টিকুলেট দূষণের বার্ষিক গড় মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা (৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) এবং দেশের জাতীয় সীমা (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) উভয়ই ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার মতো জায়গায় এই মাত্রা ৭৬ মাইক্রোগ্রামের ওপরে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা মেনে চললে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু ৫.৫ বছর বেশি হতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সরকার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়ুর মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে।
ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। আমার সন্দেহ আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশ এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সাক্ষী আছে কিনা।’
তিনি বলেন, ‘এখানে বায়ু দূষণ এতটাই মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটি শনাক্ত করার জন্য কোনো গবেষণার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি খালি চোখেই দেখা যায়।’
বাংলাদেশের শহরগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ‘ধোঁয়াশা’ একটি নিত্যদিনের বাস্তবতা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তাদের ঢেকে রাখে এই ‘ধোঁয়াশা’। কিন্তু আরও বিপজ্জনক হলো, দূষণ যেগুলো চোখ দেখতে পায় না: কণা পদার্থ, PM2.5 — ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম প্রশস্ত বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণা- এগুলো ফুসফুস এবং রক্তপ্রবাহের গভীরে প্রবেশ করে মারত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে PM2.5-এর মাত্রা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির সময়ই কেবল এই মাত্রা কমেছিল। কিন্তু সেই প্রবণতা স্থায়ী হয়নি।
ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘গত বছরের AQLI রিপোর্টে, আমাদের গড় আয়ু ৪.৮ বছর কমেছে, এবং এই বছর তা ৫.৫ বছর হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। এটি দেখায় যে, রাষ্ট্র তার জনগণের সুরক্ষার জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেনি, যার অর্থ বাংলাদেশ সরকারও এই প্রতিবেদনের ফলাফলের সঙ্গে একমত। রাষ্ট্র এখানে দায়িত্ব এড়াতে পারে না।’
দূষণের প্রধান উৎস হিসেবে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকে তালিকাভুক্ত করেন, বিশেষত ইটের জন্য কয়লা বা কাঠ পোড়ানো।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার রাস্তায় অতিরিক্ত ১ লাখ যানবাহন চলাচল করে। এই যানবাহনগুলোর অনেকগুলো যথাযথ ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই চলে। এটি বায়ু দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলছে। খোলা জায়গায় পোড়ানোসহ সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবও একটি বড় কারণ।’
সর্বশেষ বায়ুদূষণ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার বছরের শেষ নাগাদ তার প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও কাজটি সহজ নয়, তবুও পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ু মান ব্যবস্থাপনার পরিচালক ড. জিয়াউল হক স্বীকার করেছেন, ‘বায়ু দূষণের প্রতিটি উৎস’ বাংলাদেশের পরিবেশে বিদ্যমান।
তিনি আরব নিউজকে বলেন, ‘আমরা রাস্তা থেকে ফিটনেস পরীক্ষা ছাড়াই যানবাহনগুলো সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই খাতে আমরা এখনো কোনো সাফল্য দেখতে পাচ্ছি না।’
ড. জিয়াউল হক বলেন, ‘যেসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, আমরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনব। তাদের কারখানার চুল্লিতে একটি যন্ত্র স্থাপন করা হবে এবং আমাদের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্গমনের ফলাফল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কোনো বিচ্যুতি পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করব। ‘বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু’ প্রকল্পের আওতায় আগামী দুই মাসের মধ্যে এই কাজ শুরু হবে।’
যদিও দূষণের সমস্ত উৎস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবুও কিছু উৎস এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘ঢাকার ক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত দূষণ ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকার ৩৫ শতাংশ বায়ু দূষণ দেশের বাইরে থেকে আসে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকার বায়ু দূষণের ২৯ শতাংশই বর্জ্য এবং জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কারণে হয়। আমরা এই সমস্যাটি সঠিকভাবে সমাধান করতে পারিনি। আমাদের প্রচেষ্টা সেখানেই আছে।’
সূত্র: আরব নিউজ
রাজধানীর শাহবাগে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
ব্যারিকেড ভেঙে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে অগ্রসর হতে চাইলে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)- সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে সড়কে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ পানি ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় পুলিশ সদস্যদের সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। পরে বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ের মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘মার্চ টু ঢাকা’ অনুযায়ী আজ (বুধবার) সকাল ১০টা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে জড়ো হন। এর ফলে সড়কটির যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিসম্পন্ন হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না।
টেকনিক্যাল দশম গ্রেড বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদের নিয়োগ পরীক্ষা ন্যূনতম ডিপ্লোমা এবং একই ডিসিপ্লিনে উচ্চতর ডিগ্রিসম্পন্ন বিএসসিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি ব্যতীত প্রকৌশলী পদবি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। নন-অ্যাক্রিডেট বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইইবি-বিএইটিই অ্যাক্রিডেশনের আওতায় আনতে হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুল হক বলেন, আমাদের স্পষ্ট দাবি, প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের ৩ দফা বাস্তবায়নের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এ ছাড়া প্রকৌশলী রোকনুজ্জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া ডিপ্লোমা সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৩৪৪টি মামলা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়াও অভিযানকালে ৩১৩টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১১৪টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
ডিএমপি’র মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মামলা করা হয়।
ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
রাজধানীর মুগদায় মায়ের সঙ্গে অভিমানে ইঁদুর মারার বিষ পান করে সামিয়া আক্তার (১৫) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সামিয়া মুগদা মাল্টিমিডিয়া স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও উত্তর মান্ডার এলাকার আজিজুল হকের মেয়ে।
সামিয়ার ভাই সাহিম জানান, সামিয়া একটু রাগী স্বভাবের ছিল। রাতে মায়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে অভিমানে বাসায় রাখা ইঁদুর মারার বিষ পান করে। পরে দ্রুত ঢামেকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি মুগদা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
মন্তব্য