আধুনিক দাসত্ব সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আরব দেশগুলোতে। এরপরই রয়েছে ইউরোপের অবস্থান।
জাতিসংঘের শ্রমবিষয়ক সংস্থা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি মানুষ জোরপূর্বক শ্রম বা বিয়ের মধ্যে দিয়ে আধুনিক দাসত্বের বলি হচ্ছেন।
১৯ শতকের শেষ দিকে ধারণা করা হয়েছিল দাসপ্রথা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে, তবে বাস্তবে তা হয়নি। পুঁজিবাদী ও নয়া উদারবাদ বিশ্বব্যবস্থার আড়ালে দাসপ্রথা আবারও ফিরে এসেছে নানান রূপে। এখন আফ্রিকাসহ বিভিন্ন অনুন্নত অঞ্চল থেকে জাহাজ ভরে মানুষ আনা না হলেও উন্নত বিশ্বে বসবাসে করেও নানাভাবে দাসের মতোই নিপীড়িত-নিগৃহীত হচ্ছেন অনেকে।
বাংলাদেশের অভিবাসীদের অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। কেবল সৌদি আরবেই অভিবাসীদের ৮০ শতাংশ বা ২০ লাখ কর্মরত রয়েছেন। আরব দেশগুলোতে অভিবাসীদের অধিকাংশের কাজ এবং থাকার পরিবেশ অনেক ক্ষেত্রেই অনিরাপদ।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আরব দেশগুলোতে প্রতি দুই হাজারে প্রায় ১১ জন জোরপূর্বকভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় দেশগুলোতে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ জনে। সারা বিশ্বে এর গড় প্রায় ৭ জন।
ব্যক্তিপর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে এমন নিষ্পেষণের শিকার সর্বোচ্চ ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে সরকারি পর্যায়ে নিযুক্তদের ১৪ শতাংশ এর আওতায় পড়েন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আধুনিক এই দাসপ্রথা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং টেকসই উন্নয়নের সম্পূর্ণ বিপরীত।’
আইএলওর প্রকাশ করা নতুন এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে আধুনিক দাসত্বের কবলে আটকা পড়া মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় পাঁচ কোটি।
শ্রমবিষয়ক সংস্থা আইএলওর গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছরের প্রত্যেক দিনে বিশ্বের ২ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ জোরপূর্বকভাবে বিভিন্ন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর জোরপূর্বক বিয়ের পর বাধ্য হয়ে সংসার করছেন ২ কোটি ২০ লাখ।
আরও পড়ুন:সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনসহ যা কিছু হচ্ছে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ নিয়ে ভারতের মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিবেশী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এস জয়শঙ্কর এসব কথা বলেন বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
নরেন্দ্র মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সবসময় সবকিছু নিজের অনুকূলে থাকে না। কোথাও না কোথাও থেকে কিছু কথা আসতে থাকে। কেউ না কেউ কিছু একটা বলে ফেলে বা করে ফেলে। এটা হয়, স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা হয়েছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাব। তারা তাদের অবস্থান বুঝে নিক, সম্পর্কের মহত্ব বুঝুক। তাহলে প্রতিবেশীদের মধ্যকার সম্পর্কের মান ও মাত্রা অন্যরকম হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী উভয়েই উভয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়। আমাদের অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আগে যেসব রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও অভ্যন্তরীণভাবে যা হওয়ার হবে। সেটা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
‘তবে দুই দেশের সম্পর্ক আমাদের দিক থেকে স্থিতিশীল রাখতে চাই, সামনে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের পারস্পরিক ভালো সহযোগিতা রয়েছে, আমাদের ভালো বাণিজ্য রয়েছে। জনগণের সঙ্গে জনগণের ভালো সহযোগিতা রয়েছে। আমরা সেই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই।’
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, 'ভারতের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, আমাদের কূটনীতি ও অন্যান্য আলোচনা সেটাকে কেন্দ্র করেই হয়। সেসঙ্গে এটা আমাদেরও দায়িত্ব যে পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকুক। এটা আমাদের জন্যও প্রয়োজন।'
আরও পড়ুন:শক্তিশালী টাইফুন ইয়াগির কারণে ব্যাপক বন্যায় মিয়ানমারে প্রাণহানির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে ২২৬ হয়েছে।
এর আগে প্রাণহানির সংখ্যা ১১৩ বলা হয়েছিল।
এমন বাস্তবতায় ছয় লাখ ৩০ হাজার মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।
সম্প্রতি উত্তর ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারজুড়ে ইয়াগির তাণ্ডবে প্রচণ্ড বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ কারণে এসব অঞ্চলে বন্যা ও ভূমিধস হয়।
বিভিন্ন রাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইয়াগির কারণে পাঁচ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়।
জান্তাশাসিত মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সোমবারের খবরে ২২৬ জনের প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। খবরে ৭৭ জন এখনও নিখোঁজ বলে জানানো হয়।
বন্যায় প্রায় ছয় লাখ ৪০ হাজার একর জমির ধান এবং অন্যান্য ফসল ধ্বংস হয়।
জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের (ইউএনওসিএইচএ) দুর্যোগ প্রতিরোধ সংস্থা জানায়, মিয়ানমারজুড়ে প্রায় ছয় লাখ ৩১ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সোমবার সুনির্দিষ্ট বিবরণ না দিয়ে বলেছে, এটি মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা।
এদিকে মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে, যা বিরল।
প্রতিবেশী ভারত শুধু এ আবেদনে সাড়া দিয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার ফ্লোরিডায় তার গল্ফ মাঠে গল্ফ খেলার সময় অজ্ঞাত বন্দুধারীর হত্যা প্রচেষ্টা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে যে তিনি নিরাপদ ও অক্ষত আছেন।
গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের গল্ফ কোর্স থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে ঝোপের মধ্যে থেকে এক বন্দুকধারী ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার এক বা একাধিক সদস্য বন্দুকধারীর ওপর গুলিবর্ষণ করে।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানান, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ঘটনাস্থলে একটি একে-৪৭ স্টাইলের অ্যাসল্ট রাইফেল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে কালো রংয়ের একটি গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। অবশ্য পরে তাকে আটক করা হয়েছে।
পেনসিলভেনিয়ায় একটি নির্বাচনি সমাবেশে ট্রাম্পকে গুলি করার দুই মাস পরই আবারও তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। পেনসিলভেনিয়ার ওই হামলায় ট্রাম্পের ডান কানে সামান্য আঘাত লেগেছিল।
আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এদিকে পাম বীচ কাউন্টির শেরিফ রিক ব্রাডশ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করেছি।’
ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বন্দুকধারীর হামলার পর ট্রাম্প নিরাপদে আছেন।’
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শঙ্কামুক্ত থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প নিজেই তার ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভয় নেই! আমি নিরাপদে এবং ভালো আছি, কেউ আহত হয়নি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!’
আরও পড়ুন:টাইফুন ইয়াগির প্রভাবে মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ দুর্যোগে দেশটিতে ৮৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, বন্যায় নাইপিদো, বাগো, মান্দালয় ও আইয়াওয়াদির ৬৪টি শহরতলীর ৪৬২টি গ্রাম ও ওয়ার্ড এবং মন, কায়িন ও শান প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এতে বলা হয়, বন্যা কবলিত এলাকায় ২৪টি সেতু, ৩৭৫টি স্কুল, একটি মঠ, পাঁচটি বাঁধ, চারটি প্যাগোডা, ১৪টি ট্রান্সফরমার, ৪৫৬টি ল্যাম্পপোস্ট ও ৬৫ হাজার ৭৫৯টি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্যোগ মোকাবিলায় নাইপিদোসহ বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, খাবার ও পানীয় জল সরবরাহের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তিনদিনের ভারত সফর শেষে আজ শনিবার বিকেলে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন।
কূটনৈতিক সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের পরিচালক সামিয়া ইসরাত রনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডোনাল্ড লু’কে স্বাগত জানান।
এর আগে শনিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থ বিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান ঢাকায় আসেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই ঢাকায় কোনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রথম সফর।
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে আলোচনার ফোকাস হবে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পরে প্রতিনিধি দলটি পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। ওইদিন বিকেলে প্রতিনিধি দল প্রধান নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ রয়েছেন।
আরও পড়ুন:প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসছে। বাংলাদেশ তাদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতির পাশাপাশি বহুমাত্রিক আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বর্তমানে ভারতের নয়াদিল্লি সফরে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি আজ শনিবার ঢাকায় পৌঁছবে। তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন একটি মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সফরের আগে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, (এই মেয়াদে) প্রথম প্রতিনিধি দলের আগমন তার একটি বড় উদাহরণ। এ থেকে বোঝা যায় যে এই আলোচনা হবে বহুমাত্রিক। এটি শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আলোচনায় শুধু একটি নয়, বিস্তৃত বিষয় থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র জানান, আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকারে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরকালে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।
লু ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একটি আন্তঃসংস্থা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন।
প্রতিনিধি দলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তাদের এই সফরে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে।
আলোচনার সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আলোচনা শুরুর আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যা আলোচনার স্বাভাবিকতাকে ক্ষুণ্ন করবে।’
তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের আন্তর্জাতিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সফরে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু আমাদের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।’
পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের যেকোনো সফর সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ডিফেন্স লিন্ডসে ডব্লিউ ফোর্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি/অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স ব্রেন্ট নেইম্যান প্রতিনিধি দলে থাকবেন।
এই ভূমিকায়, ফোর্ড এই অঞ্চলের জন্য প্রতিরক্ষা কৌশল এবং পরিকল্পনার বিকাশ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সমস্ত নীতিগত বিষয়গুলোর জন্য প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।
তার দায়িত্বের ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান বাদে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সুরক্ষা সম্পর্ক।
নেইম্যান যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থের ডেপুটি-আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আরও পড়ুন:ভিয়েতনামে সুপার টাইফুন ইয়াগি ও এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮০০ জনেরও বেশি। নিখোঁজ রয়েছেন ১০৩ জন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার এসব তথ্য জানায়।
রাজধানী অঞ্চল হ্যানয়ের রেড নদীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, তবে এখনও অনেক এলাকা তলিয়ে আছে।
গত শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির স্থলভাগে আঘাত হানে টাইফুন ইয়াগি। এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে বিশেষ করে ভিয়েতনামের পার্বত্য উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস হয়।
বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
দেশটির লাও কাই প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়। গত মঙ্গলবার আকস্মিক বন্যায় প্রদেশটির লাং নু গ্রাম পুরো তলিয়ে যায়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ভিএনএক্সপ্রেস শুক্রবার জানায়, লাং নু থেকে ৪৮ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। সেখানে নিখোঁজ আছেন ৩৯ জন।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, গ্রামটিতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ চালাতে ভারী সরঞ্জাম আনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫০০ উদ্ধারকর্মী গ্রামটিতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন বলেন, ‘আমরা নিখোঁজদের সন্ধানে পিছপা হব না।’
চীনের সীমান্তবর্তী আরেক উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাও বাংয়ে ভূমিধসের চার দিন পর শুক্রবার পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১০ জন।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ জানায়, টাইফুন ও এর ফলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি ভিনফাস্ট, অ্যাপলের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
টাইফুন ইয়াগিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে ২০ লাখ ডলার সহায়তার অংশ হিসেবে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ শুরু করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও ২ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস শুক্রবার জানায়, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএআইডির মাধ্যমে ১০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়া হবে।
কয়েক দশকের মধ্যে ভিয়েতনামে আঘাত হানা টাইফুনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ইয়াগি।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়তে থাকায় টাইফুন ইয়াগির মতো ঝড় আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যার প্রভাবে তীব্র বাতাস এবং ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য