প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছেন।
তিনি দাবি করেছেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ভারত সফরে গেলে তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
মির্জা আব্বাস প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এর আগে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত গিয়েছিলেন, সেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এবার আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী গেলেন তাকে একজন প্রতিমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন, এটা লজ্জা। বাংলাদেশের জন্য লজ্জা।’
তবে মির্জা আব্বাসের দেয়া তথ্যটি ভুল। ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া যখন ভারত সফরে যান, তখন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান সেই সময় ভারতের পররাষ্ট্র রাজ্যমন্ত্রী ই আহমেদ। পরে তাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেয়া হয় সংবর্ধনা। সেখানেই তাকে স্বাগত জানান মনমোহন সিং।
বিষয়টি নিয়ে একটি ফ্যাক্ট চেক করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম বাংলা আজতাক।
ভারতীয় প্রটোকল অনুযায়ী, অন্য কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে সফরে গেলে তাকে বিমানবন্দরে একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পর্যায়ের কেউ স্বাগত জানান। পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে বড় আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাকে বরণ করে নেয়া হয়।
তবে কখনও কখনও দেশটির প্রধানমন্ত্রীরা প্রটোকল ভেঙে সরাসরি বিমানবন্দরে গিয়ে অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীদের স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও ২০১৭ সালে এমনটি হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।
সদ্য ভারত সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে দেশটির একজন প্রতিমন্ত্রী স্বাগত জানানোকে নিয়ে আবারও বিষয়টি সামনে আসে।
সেটি নিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেছেন, বিষয়টি লজ্জার।
সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিএনপি নেতা বলেন, সফর লোক দেখানো। প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সব দিয়ে এসেছেন, কিছুই নিয়ে আসেননি।
তিনি বলেন, ‘এই সরকারের চামচারা বলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর করে আসার পর বিএনপি বেজার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পকেট ভরে নিয়ে গেলেন, খালি পকেটে ফিরলেন, বেজার তো হওয়ারই কথা খুশি হব কেন?
‘তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। কুশিয়ারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আসলে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য? মোমেন সাহেব তো আগেই গোপন কথা ফাঁস করে দিয়েছেন। ভারতের সহায়তায় আওয়ামী লীগ সরকারে থাকতে চায়। আমরা বলতে চাই, এ দেশের জনগণ ছাড়া কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না, এ জন্য তারা ইভিএমের চিন্তা করছে।’
বুক পেতে দেব, গুলি খাব তবু রাজপথ ছাড়ব না
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার কথা বলেছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় সোমবার বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রমনা-শাহবাগ বিএনপি আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নূরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা শাওন নিহতের প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিএনপির মিছিল শুরু হয়েছে। এটা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত শেষ হবে না। আগে আমরা পল্টনে কর্মসূচি পালন করতাম, পরে মুক্তাঙ্গনে আনা হলো, সেখানেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা তারপর প্রেস ক্লাবের সামনে করেছি, সেখানেও আজকে কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি।
‘আমরা এখন অলিগলিতে মিছিল করব। সরকারের ঠেকানোর ক্ষমতা থাকবে না। কেউ গুলি করলে আমরা তাকে ছাড় দেব না, আমরা আত্মাহুতির জন্য প্রস্তুত। আমাদের আন্দোলনে গোলাগুলি হলে আমাদের আন্দোলনও ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হবে, আন্দোলনের ভিন্ন রূপ হবে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে।’
সরকার সাপের মতো ভয় পেয়ে ছোবল মারছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার মনে মনে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে, রাস্তাঘাটে পুলিশ। সাপ কখন ছোবল দেয়? যখন ভয় পায়। আওয়ামী লীগের অবস্থাও সাপের মতো হয়েছে। তারা ভয় পেয়ে ছোবল দিচ্ছে।’
বিএনপি নেতা লিটন মাহমুদের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফাত আলী অপু, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
আরও পড়ুন:জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদদের জাতীয় বীর আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শহীদদের স্বপ্ন পূরণে জামায়াত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
খুলনা নগরীর ইস্টার্ন জুট মিল শ্রমিক মাঠে জামায়াতের খানজাহান আলী থানা ইউনিটের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহীদরা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা তাদের স্বপ্ন পূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেছে এবং স্বৈরাচারের অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই- যেখানে জাতি, দল, ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এদেশের নাগরিক হিসেবে সব মানুষ মর্যাদার সঙ্গে তাদের ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে।’
তিনি বলেন, ‘শত শত ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। বাংলার মাটিতে স্বৈরাচারীরা যাতে আর ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর বলেন, ‘দেশের মানুষ গত ১৭ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ‘লগি-বৈঠা’র মাধ্যমে তাদের হত্যা যাত্রা শুরু করে।
‘ফ্যাসিবাদী এই শাসক বিডিআর বিদ্রোহের সময় ৫৭ জন প্রতিভাবান সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে এবং তাদের অনেককে গুম করে- যা এ বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা এই অঞ্চলের সব পাটকল ও কৃষি জমি ধ্বংস করেছে। সব বন্ধ পাটকল পুনরায় চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানাচ্ছি।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি গাজী মোরশেদ মামুনের পরিচালনায় এবং থানা আমির সাঈদ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
জামায়াতের আমির এর আগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে মহিলা জামায়াত খুলনা সিটি ইউনিটের মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
আরও পড়ুন:গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি হাইকোর্ট থেকে খালাস পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা সব মামলাই ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক।
দেশের উচ্চ আদালতে রোববার রায় ঘোষণার পর লন্ডন থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করায় মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এই রায়ে প্রমাণ হলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলাতে তারেক রহমানকে অভিযুক্ত করেছিলো।
‘তারেক রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত মামলার অভিযোগ আইনগতভাবে মোকাবিলা করে উচ্চ আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ঐতিহাসিক এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলাই ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিএনপি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে- এমন প্রচার সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘এ বিষয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানো দুঃখজনক।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বিএনপি প্রতিবন্ধক বলে প্রচার করছেন, যা সঠিক নয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা-না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার সরকারের।’
তিনি বলেন, ‘পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা আশা করব অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের এমন কোনো বক্তব্য দেয়া উচিত হবে না যাতে গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হয় বা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের আস্থা অর্জন করুন। তাদের আস্থায় থাকুন। হাজার হাজার ছাত্রের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে।’
আরও পড়ুন:বর্ষীয়াণ আইনজীবী ও রাজনীতিক ড. কামাল হোসেনকে ইমেরিটাস সভাপতি করে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটিতে মোস্তফা মোহসীন মন্টু সভাপতি ও ডা. মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার গণফোরামের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন শেষে কমিটি ঘোষণা করা হয়।
‘জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের চেতনায় বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ স্লোগান সামনে রেখে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়ার বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া।
সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে বিকেল ৩টায় মোস্তফা মোহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে উত্থাপিত সাংগঠনিক প্রস্তাব, রাজনৈতিক প্রস্তাব ও অর্থবিষয়ক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি নির্বাচনের জন্য বিষয় নির্বাচনি কমিটি গঠিত হয়। নির্বাচনি কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে ড. কামাল হোসেনকে ইমেরিটাস সভাপতি, মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি ও ডা. মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট গণফোরামের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে।
নবনির্বাচিত কমিটির অন্যরা হলেন- সভাপতি পরিষদ সদস্য এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, এ. কে. এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, মোশতাক আহমেদ, ফজলুল হক সরকার, সেলিম আকবর, সুরাইয়া বেগম, হারুনুর রশিদ তালুকদার, রতন ব্যানার্জি, আব্দুল হাসিব চৌধুরী, আবুল হাসনাত, নিলেন্দু দেব, গোলাম হোসেন আবাব, কাজী মেজবাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী বাদল, কোষাধ্যক্ষ শাহ নূরুজ্জামান, সম্পাদক পরিষদ আয়ুব খান ফারুক, অধ্যক্ষ মো. ইয়াছিন, লতিফুল বারী হামিম, রফিকুল ইসলাম পথিক, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী, এ কে এম রায়হান উদ্দিন, আলীনূর খান বাবুল, শরীফুল ইসলাম সজল, মো. নাজমুল ইসলাম সাগর, মামুনূর রশিদ মামুন, মির্জা হাসান, মুহাম্মদ উল্লাহ মধু, আব্দুল হামিদ মিয়া, বিশ্বজিৎ গাঙ্গুলী, মোশারফ হোসেন তালুকদার, তাজুল ইসলাম, রনজিদ সিকদার, আজিজুর রহমান ভূঁইয়া মজনু, সানজিদ রহমান শুভ, আজাদ হোসেন, প্রভাষক বকুল ইমাম, মোমেনা আহমেদ মুমু, খনিয়া খানম ববি, মো. আশরাফুল ইসলাম, তৌফিকুল ইসলাম পলাশ, মো.আলী লাল, মো. সাইফুল ইসলাম, মো মজিবুর রহমান শিবলু, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও ফারুক হোসেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় ঐকমত্য ধরে রাখতে গণতন্ত্রমনা সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে সংলাপ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শনিবার গণফোরামের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের ফলে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে সহযোগিতা করা সব রাজনৈতিক দল ও দেশের জনগণের নৈতিক দায়িত্ব, যাতে সংস্কার সুষ্ঠুভাবে করতে সক্ষম হয়।
‘এ ক্ষেত্রে যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে, তা ধরে রাখা প্রয়োজন। এ জন্য গণতন্ত্রমনা সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও নাগরিক সমাজের মধ্যে সংলাপ জরুরি বলে আমি মনে করি।’
গণফোরামের নেতাদের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, ‘আজকের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে ঐক্যকে আরও সুসংহত করবেন। সেই ঐক্যের মধ্য দিয়েই যা কিছু অর্জন আমরা করতে পারি। এই ঐক্য না হওয়াটায় অতীতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
‘এইবার যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, সেটাকে সুসংহত করে ঘোষিত লক্ষ্যগুলো আমরা যেন অর্জন করতে পারি।’
আরও পড়ুন:বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে শনিবার সকাল আটটা ২৫ মিনিটে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।
বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।
ইসকনের সাম্প্রতিক আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ইসকনের সঙ্গে পতিত স্বৈরাচারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুক্রবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের নামও বলতে চাই না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের (ইসকন) শাখা রয়েছে। তাদের জিজ্ঞেস করুন, বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দেশে তারা সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে মিছিল করে লংমার্চ ঘোষণা করে?’
শেখ হাসিনার শাসনামলের পতনের পর ইসকন কেন আন্দোলন শুরু করেছিল। তার শাসনামলে দমন-পীড়নের সময় তারা নীরব ছিল কেন- সেই প্রশ্নও রাখেন বিএনপির এই নেতা।
বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও ইসকনের নেতারা কীভাবে ভারত সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করতে পারেন! বাংলাদেশ কি কারও নিয়ন্ত্রণাধীন দেশ, নাকি অন্য কোনো দেশের কর্মকাণ্ডের অধীন?’
খেলাফত আন্দোলনের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদ ও তার সহযোগীদের মোকাবিলায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ইসকন ইস্যুতে ভারত সরকারের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হওয়ার সময়, এমনকি চট্টগ্রামে একজন আইনজীবী নিহত হওয়ার সময়ও ভারত কোনো বিবৃতি দেয়নি।’
ভারতকে উদ্দেশে করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজনকে গ্রেপ্তার করা হলে আপনারা বিবৃতি দেন। কিন্তু যখন কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, তখন কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি। এটা পক্ষপাতদুষ্ট। কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র যেই করুক না কেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য।’
একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে নজরুল ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘তাদের দাবি যৌক্তিক। আপনারা যদি মনে করেন রিকশা চলাচলের অনুমতি দেয়া উচিত নয়, তাহলে শুরুতেই তাদের থামানো উচিত ছিল। এখন হাজার হাজার রিকশা রয়েছে। অনেক লোক জীবিকা অর্জনের জন্য এসবের ওপর নির্ভরশীল। আপনি শুধু শুধু বলতে পারেন না যে তাদের অনুমতি দেয়া হবে না। কে এটা মেনে নেবে?’
নজরুল ইসলাম একইসঙ্গে বলেন, ‘রিকশাচালকদের আন্দোলনের প্রকৃতি পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল না। আমি শ্রমিক আন্দোলন বুঝি। এটি স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। তখন দেখলাম আন্দোলনের নেতারা সবাই ছাত্রলীগের সদস্য। দাবিটি যৌক্তিক ছিল, কিন্তু যেভাবে আন্দোলন পরিচালনা করা হয়েছে তা ষড়যন্ত্র বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’
বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট বা জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টা রুখতে ঐক্য, সচেতনতা ও সতর্কতার আহ্বান জানান বিএনপির এই বর্ষীয়াণ নেতা।
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, শ্রমিক শ্রেণি, নাগরিক সমাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছি। এমন একটি ঐক্য গড়ে তোলার জন্য কাজ করুন যাতে কেউ আমাদের চ্যালেঞ্জ করার সাহস না পায়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য