১১ বছর আগে এক তরুণের জীবনের মর্মান্তিক যে ঘটনা দেশকে আলোড়িত করেছিল, সেই বিষয়টি ফিরে এসেছে আবার।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ র্যাবের গুলিতে ঝালকাঠির তরুণ লিমন হোসেনের পা হারানোর মতোই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। সাইফুল ইসলাম সাইফ নামের এক যুবককে ধরে নিয়ে কাছ থেকে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে কেটে ফেলতে হয়েছে পা।
লিমনের পক্ষে সে সময় সোচ্চার কণ্ঠ তৈরি হয়েছিল, সাইফের পক্ষে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না।
সে সময় র্যাবের বিরুদ্ধে তদন্তও হয়েছিল, শাস্তিও পেয়েছেন দোষীরা। কিন্তু পুলিশের এই ঘটনাটি তদন্তের কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। পরে ঘটনার সোয়া এক বছর পর ভুক্তভোগীর পরিবার মামলার আবেদন করেছে আদালতে। তারা বলছে, ভয়ে এতদিন মামলাও করা হয়নি।
সাইফুল ইসলাম সাইফ ছাত্রদল করতেন। তার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা ছিল ধরে নেয়ার সময়। এখন আছে ২৪টি। তার বিরুদ্ধেও এলাকায় নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেগুলোর প্রমাণ এখনও হয়নি আদালতে। বিচার চলছে।
সাইফের অভিযোগ, তাকে ধরে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা না পেয়ে কাছ থেকে দুইবার গুলি করে পুলিশ। এতে কেটে ফেলতে হয় পা। এরপর তাকে জেলেও পোড়া হয়। ৯ মাস বন্দি থাকার পরও নানা হুমকি দেয়া হয়। বলা হয়, অন্য পা-ও এভাবে যাবে। এ কারণে এতদিন মামলাও করার সাহস পায়নি পরিবার।
তবে সম্প্রতি তার মা মামলা করেছেন। কিন্তু তার অভিযোগের বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিছুই বলতে চাইছেন না। তার দাবি, এটা তদন্তাধীন বিষয়। তাই কথা বলার সুযোগ নেই। অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, সাইফকে ধরে নেয়ার পর একটি সশস্ত্র দল আক্রমণ করেছিল। তখন গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
গুলিতে পা গেছে, সেটির তদন্ত হয়নি। উল্টো তার বিরুদ্ধে হয়েছে ছয়টি মামলা। এসব মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে নিত্য হয়রানি আর ভালো লাগে না সাইফের। বলছেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী ট্যাগ লাগিয়ে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলুক আমাকে।’
কী ঘটেছিল সেদিন
নিউজবাংলাকে সাইফ জানান, ২০২১ সালের ১৬ জুন তাকে ধরে নেয়া হয়। এরপর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা দিতে বলা হয়। টাকা দিতে না পারার পর করা হয় গুলি।
তাকে ধরে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “বায়েজিদ থানার পাশে বাসা হওয়ার সুবাদে পুলিশের সোর্স আকাশের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল। সে আমাকে রাতে ফোন দেয়, বলে ‘সাইফুল কোথায় তুই, মামলার বিষয়ে কথা আছে, দেখা কর আমার সঙ্গে।’
'মামলার বিষয়ে বলায় আমি তাড়াতাড়ি গেলাম। যাওয়ার পর ওসি, এসআই মেহের অসীম, এসআই সাইফুল, এসআই তানভীর, এসআই নুর নবীসহ তারা আমাকে ঘিরে ফেলছে। একপর্যায়ে আমার পেটে পিস্তল ঠেকায় দিছে আর মুখে মাস্ক পরায় দিছে। কারণ সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল।
'ওসি আমাকে বলল, সাইফুল, বাইরে প্রাইভেট কার আছে, চুপচাপ ওঠ। আমি কোনো কথা না বলে প্রাইভেট কারে উঠলাম। এরপর আমার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলছে গামছা দিয়ে, সঙ্গে হ্যান্ডকাপ।'
সাইফ জানান, তাকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা ঘোড়ানো হয়। এর মধ্যে তিনি এক ফাঁকে ‘রওশন গার্ডেন’ নামের একটি রেস্টুরেন্ট দেখতে পান। সেটি চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড়ের আশপাশে।
ছাত্রদল নেতা জানান, সেই রেস্টুরেন্টের পার্কিং পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে নামানো হয়নি তাকে। গাড়ি থেকে নামায়নি। গাড়িতে ঘোরানোর সময় ওসি কামরুজ্জামান অজ্ঞাত কোনো একজনকে ফোন করে বলেন, ‘আমরা সাইফুলকে কট করছি, ওকে আজকে ফিনিশ করব। তোমরা ইউনিফর্ম পরে হোটেল জামানে যাও।’
সাইফ জানান, ফোনে ওসি সেই রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ ডিলিট করার নির্দেশ দেন ‘ওপরের কথা বলে’।
সেটা কে হতে পারেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কাকে বলছে আমি জানি না। আমি শুনছি, কারে বসা অবস্থায়।’
তার ভাষ্য মতে, ফোনে ওসির আলাপন শেষে সাইফকে নিয়ে যাওয়া হয় লিংক রোডে। তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম যে আকাশ একটি থলে (ব্যাগ) নিয়ে আসছে। আমার ধারণা সেখানে আর্মস জাতীয় কিছু ছিল। কারণ একজন আরেকজনকে বলতেছে ৬ হাজার টাকা দাও ওরে, জিনিস নিয়ে আসছে।’
তিনি জানান, থলে নিয়ে আসার পরই তার কাছে টাকা চাওয়া হয়। তিনি বলেন, “ওটা আনার পর আমাকে অসীম (সোর্স) বলতেছে, ‘সাইফুল, টাকা ৫ লাখ দে'। আমি বললাম, '৫ লাখ টাকা দেয়ার হেডাম (সামর্থ্য) আমার নাই'।"
সাইফ জানান, অসীম তার এক বন্ধুর বড় ভাইয়ের বন্ধু, তাই তাকে তুই করে বলতেন।
তিনি বলেন, ‘টাকা যখন নাই, আমি দিতে পারব না বলছি। আর কিছু বলেনি আমাকে।’
একপর্যায়ে ওসি তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হ্যান্ডকাপ খুলে গামছা দিয়ে হাত বাঁধেন। সে সময় একটা গামছা দিয়ে বাঁধা হয় মুখ, আরেকটা দিয়ে হাত। তারপর তাকে প্রধান সড়ক থেকে রাস্তার অপর পাশে নেয়া হয়।
এরপর তারা ‘ডাকাত, ডাকাত, ডাকাত’ বলে কয়েকটি গুলি করা হয়।
তখন রাস্তায় চলাচল করা সব গাড়ি ব্লক করে ফেলা হয়। সাইফকে কাঁচা রাস্তার মধ্যে উপুড় করে ফেলে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘ওসি কামরুজ্জামান এসে শটগান দিয়ে আমার পায়ে শ্যুট করছে। গুলি করার এক মিনিট পর এসআই অসীম এসে আবার গুলি করছে।
‘এক্স-রে রিপোর্ট দেখলে বোঝা যাবে ওটা শটগানের গুলি। পিস্তল দিয়ে গুলি করলে একটা বুলেট ঢুকবে। শটগান দিয়ে সচরাচর গুলি করা হয় বিক্ষোভ মিছিলে বা কোনো ঝামেলা হলে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পায়ে শটগান দিয়ে করছে যেন পা-টা রাখতে না পারি। এরপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফিরে নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে আবিষ্কার করি। পরবর্তী সময়ে সেখানে থেকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে গেল। দেরি হওয়ার কারণে আমার পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’
গুলিতে পা হারানোর পরও ছয় মামলা
২০২১ সালের ১৭ জুন সাইফকে অস্ত্রসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করেছিল পুলিশ। সে সময় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ১৮টি মামলা থাকার কথা জানায় বাহিনীটি।
এসব মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা ছিল। তবে এর মধ্যে চাঁদাবাজি, মাদক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন বা কোনো অস্ত্র মামলা ছিল না। এখনও এসব মামলা নাই, তবে অস্ত্র মামলা আছে।
‘২০২১ সালে গুলি করার পর পুলিশ মামলা দিছে। এটা ছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোনো অস্ত্র মামলা নাই। তবে মারামারির মামলা আছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বা ঝগড়াঝাটিতে আমি একটা মারছি, আমাকে একটা মারছে এ রকম। যেহেতু রাজনীতি করি, অনেক মামলা রাজনৈতিক। এখন ২৪টা মামলা, এর ৬টা দিছে গুলি করার পর বিভিন্ন সময়।’
সাইফ বলেন, ‘গুলি করার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে পা কেটে ফেলার পর ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে আমাকে দুটি মামলায় চালান করা হয়। একটি অস্ত্র মামলা, দেশীয় অস্ত্র এলজি, দুটি কার্তুজ দেয়, তিনটি খালি কার্তুজ। আরেকটি হলো পুলিশের ওপর হামলা।’
‘আর সইতে পারি না, আমাকে ক্রসফায়ারে দিন’
একটা পা না থাকা অবস্থায় চলাফেরায় কষ্টের বিষয়টি তুলে ধরে সাইফ বলেন, ‘ফ্যামিলির লোকজন আমাকে ধরে ধরে হাজিরা দিতে নিয়ে যায়। আবার গাড়িতে করে নিয়ে আসে। আমি যখন ওয়াশরুমে যাই, আমাকে একজনে ধরে নিয়ে যেতে হয়, ধরে বের করতে হয়। এই অবস্থায় আমি যদি জেল খানায় যাই, আমার কী হবে চিন্তা করেন?’
কারাগারে পরিবার নাই যে ধরে ধরে গোসল করাবে, ওয়াশরুমে নিয়ে যাবে, থাকা-খাওয়া, কাপড় ধুয়ে দেবে- বলেন তিনি।
ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘আমাকে এভাবে মিথ্যা মামলা না দিয়ে হয়রানি না করে প্রশাসন ও সরকারের কাছে দাবি জানাই যে, যদি পারেন আমাকে সঠিক বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, আর না হয় এভাবে মিথ্যা মামলা না দিয়ে, হয়রানি না করে জনসমক্ষে নিয়ে আমাকে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলুক।
‘আমি রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে থাকলে, রাষ্ট্রের শত্রু হয়ে থাকলে আমাকে জনসমক্ষে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী ট্যাগ লাগিয়ে ক্রসফায়ার দিয়ে মেরে ফেলেন, আমার কোনো আফসোস নাই। আমার পিতামাথা সম্মতি জানাবে, আমিও সম্মতি জানাব।’
মামলা করতে দেরি কেন
এক বছরেরও বেশি সময় আগের ঘটনা হলেও মামলা করতে সোয়া এক বছর লাগল কেন- এমন প্রশ্নে সাইফ বলেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করতেছে আমি তখন মামলা করিনি কেন। আমাকে গুলি করার পর অস্ত্র পেয়েছে বলে অস্ত্র মামলা দিয়ে চালান করে দেয়। আমি ৯ মাস জেলে ছিলাম। এরপর দুই মাস বাইরে ছিলাম, এরপর আবার আমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ পাঠিয়ে দিল জেলে। আমি সময়ের অভাবে করতে পারিনি।
‘আমি জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর বাসায় যাইনি, বাইরে বাইরে থেকেছি। তখন বায়েজিদ থাানর পুলিশ এসআই রবিউল আমার বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে যে, একটা পা ফেলে দিছি, যদি কোনো পদক্ষেপ নেও আরেকটি পাও ফেলে দিব। মানে মামলা করলে পা আরেকটাও ফেলে দিবে বলছে আরকি।’
কিছুই বলবেন না ওসি
সাইফের তোলা এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান কোনো কিছুর জবাব দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যেহেতু এটি তদন্তাধীন বিষয়, তাই এটা নিয়ে আমি কোনো কথা বলব না। তবে ‘বার্মা সাইফুল’ লিখে গুগলে সার্চ করলে ২০১০ সালের পর অনেক কিছুই পাবেন।”
এই পুলিশ কর্মকর্তার কথামতো গুগলে সার্চ দেয়ার পর অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের একটি সংবাদ পাওয়া গেছে। এতে লেখা হয়, ‘পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মো. সাইফুল ইসলাম প্রকাশ ওরফে বার্মা সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ।
‘বুধবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে বায়োজিদ লিংক রোডের এলাকা থেকে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।
‘নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (ডিবি- দক্ষিণ) শাহ আব্দুর রউফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।’
“তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে সাইফুলকে লিংক রোড এলাকার এশিয়ান ওম্যান ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি এলজি ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়’।”
২৪ জুন দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় সরকারি জমি দখল করে বার্মা কলোনি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে বসবাসকারী বেশির ভাগই মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এ কারণে এটি বার্মা কলোনি হিসেবে পরিচিত। এখানে সাইফুলের গোটা পরিবার বাস করে। দুই ভাইকে নিয়ে সাইফুল এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। লোকজনকে তারা আতঙ্কের মধ্যে রেখেছেন। স্থানীয়রা তাদের ভয়ে কথাও বলতে পারে না। বার্মা কলোনির সরকারি জমি তারা বিভিন্ন সময় মানুষের কাছে বিক্রিও করেছেন। এ ছাড়া সেখানে বসবাসকারীদের মাসে মাসে চাঁদা দিতে হয়। ওই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, সাইফুল ও তার অপর দুই ভাই সবুজ ও সামশু সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করে। কেউ ভবন নির্মাণ করলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। নয়তো তাদের কাছ থেকে চড়া দামে ইট-বালুসহ নির্মাণসামগ্রী নিতে হয়।’
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন বন্দুকযুদ্ধের চিরাচরিত গল্প
সাইফ কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন জানতে চাইলে তার মায়ের করা মামলার দ্বিতীয় আসামি বায়েজিদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অসীম মেহের দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর হয়তো তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গিয়েছিল। তখন ওর লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করে। হামলায় অভিযানে থাকা অফিসারদের কয়েকজনও আহত হয়েছিলেন।’
কারা হামলা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করা গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারা বলতে সাইফুলের লোকজন।’
এই লোকজনগুলোই বা কারা, তদন্ত বা সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নাম বেরিয়ে এসেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুজনকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছিলাম। তারা মোটরসাইকেলযোগে এসেছিল। বাকিদের শনাক্ত করা হয়নি বিধায় বাকিদের নামে চার্জশিটও দেয়া হয়নি। তবে এই মুহূর্তে নামগুলো মনে পড়ছে না আমার।’
তার বিরুদ্ধে মামলায় করা অভিযোগের বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সে সময় তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছিল; একটা অস্ত্র আইনে ও অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায়। দুই মামলায় আমি তদন্ত কর্মকর্তা ছিলাম। যেহেতু ওই দুই মামলার সবকিছু আমি যাচাই-বাছাই করেছি, ওই দৃষ্টিকোণ থেকে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে আমার নাম জড়িয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে।
‘দিন-রাত যেভাবে সত্য, সে যা বলেছে তা এর বিপরীতভাবে মিথ্যা। তার ওই কথার একটা যৌক্তিকতা, কোনো প্রমাণ সে উপস্থাপন করতে পারবে না। এবং যেটা সত্য না, সেটা সে কীভাবে বলবে?’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে (সাইফ) মামলা করেছে আদালতে, পুলিশ কমিশনার মহোদয়কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা তদন্তে স্যাররা দেখবেন।’
‘পুলিশের জবাবদিহি চাই’
পুলিশের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন নাগরিক সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আখতার কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই যেসব ঘটনা ঘটছে, পুলিশ তো নিজেরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সব জানে। তারা যদি অভিযুক্তদের রক্ষা না করে জবাবদিহির আওতায় আনত, তাহলে এসব ঘটনা ঘটত না।’
তিনি বলেন, ‘একজন মানুষের নামে অনেক মামলা দেখে অনেকের মনে হতে পারে তাকে তো গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। কিন্তু এসব তো আদালতে প্রমাণের বিষয়। আর যারা নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, তারা নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে গেলে বাংলাদেশ চলবে কীভাবে? ওরা মূলত আর কোনো যুৎসই গল্প পাচ্ছে না বলেই দীর্ঘদিন এই অস্ত্র উদ্ধার ও গোলাগুলির গল্প দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে।’
মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আমিনুল হক বাবু বলেন, ‘পুলিশ মানুষ যেহেতু তাদেরও ভুল হয়, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে। অভিযোগের পর গুরুত্ব সহকারে এটাকে বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে যে অভিযোগ সত্য কি না। তিনি যেহেতু আদালতে মামলা করেছেন, আমরা ধরে নিতে পারি তিনি আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।
‘যেহেতু এখনও তদন্তাধীন, আমরা সেভাবে মন্তব্য করতে চাই না। যেহেতু অভিযোগ এসেছে, এটা তদন্ত করতে হবে, তদন্তে সত্য-মিথ্যা যাচাই করে ঘটনার বিন্দুমাত্র সত্যতা পেলেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরও পড়ুন:গাইবান্ধায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন আশরাফ আলী নামের এক রিকশাচালক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার সুন্দরগঞ্জ-কুপতলা সড়কের ৭৫ নম্বর রেলগেট নামক এলাকায় এ ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সাদেকুলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
৫০ বছর বয়সী রিকশাচালক আশরাফ আলী সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের সাহার ভিটার গ্রামের মৃত ফয়জার রহমানের ছেলে। অন্যদিকে ছিনতাই ও হত্যায় অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলাম কুপতলা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ গ্রামের বাসিন্দা।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা।
ওসি জানান, প্রতিদিনের মতোই বৃহস্পতিবার রাতে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন আশরাফ আলী। তিনি কুপতলা এলাকার ৭৫ নম্বর রেলগেটে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাদেকুল ইসলাম তার পথ রোধ করে ছুরি ধরে রিকশা এবং চাবি কেড়ে নিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। আশরাফ আলী এতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রথমে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত সাদেকুল আশরাফ আলীর পেটে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি বলেন, ‘এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত সাদেকুল ইসলামকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে রিকশাটিও উদ্ধার করা হয়। পরে আজ (শুক্রবার) দুপুরে সাদেকুলকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে দুপুরেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখায় প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ ৩ কর্মকর্তাকে আটকের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর। এদিন দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের জিআরও এএসআই মাহবুবুর রহমান জানান, বিকেলে সাঁথিয়া থানা থেকে এনে তাদের আদালতে তোলা হয়। এ সময় কেউ তাদের জন্য জামিন আবেদন করেননি। ফলে আদালত তাদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটককৃতরা হলেন- অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবু জাফর এবং ক্যাশিয়ার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট টিম কাশিনাথপুর শাখায় অডিটে আসে। দিনভর অডিট করে তারা ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আর্থিক অনিয়ম পান। এ বিষয়ে সাঁথিয়া থানায় ওই শাখার ম্যানেজার (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী ও সিনিয়র অফিসার আবু জাফরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দিলে পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের তিনজনকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের আটক করে সাঁথিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ গিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আজ (শুক্রবার) দুপুরে জিডির ভিত্তিতে আটককৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে দুদক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
আরও পড়ুন:আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম। বাড়ি তার বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার সুত্রাপুর থানায় কর্মরত।
৩৮ বছর বয়সী এ যুবকের নেশা বিয়ে করা। যেখানেই যান সেখানেই তিনি বিয়ে করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিয়ে করেছেন।
সর্বশেষ তিনি বিয়ে করেন ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি এলাকার। ঢাকায় থাকাকালে সেঁজুতি নামের পবহাটির একটি মেয়ের সঙ্গে সপ্তমবারের মতো সংসার শুরু করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে, তার আগের সব স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় স্ত্রী পারভীন তার গ্রামের বাড়িতে এবং ষষ্ঠ স্ত্রী রয়েছেন যশোরের বেনাপোলে। ২ স্ত্রীর ঘরে ২টি সন্তানও রয়েছে তরিকুলের।
সম্প্রতি সংসার জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এই যুবক। স্বামীকে ফিরে পেতে আড়াই বছরের মেয়েকে নিয়ে ঝিনাইদহের পবহাটিতে আসেন ষষ্ঠ স্ত্রী হোসনে আরা আক্তার সাথী। তরিকুলকে স্বামী দাবি করলে সেখানে বেঁধে যায় রণক্ষেত্র। স্বামীকে নিয়ে সেঁজুতির সঙ্গে শুরু হয় তার কাড়াকাড়ি। কোনো উপায় না পেয়ে পালিয়ে যান আনসার সদস্য তরিকুল ইসলাম।
নিউজবাংলাকে সাথী জানান, বেনাপোল বন্দরে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজেকে এতিম পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ে করেন তরিকুল। ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের বিয়ের পর থেকে একসঙ্গেই ছিলেন দুজন। তবে ২০২২ সালে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান তরিকুল। তার কিছুদিন পর থেকে সাথীর সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ।
তিনি জানান, ঢাকায় বদলি হওয়ার পর থেকে তার ও তাদের সন্তানের কোনো খরচ পাঠাতেন না তরিকুল। এরই মধ্যে সেঁজুতির সঙ্গে তার ইমোতে পরিচয় হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেঁজুতিকে বিয়ে করেন তিনি।
সাথী বলেন, ‘গত ঈদে আমার কাছে গিয়ে ৬ দিন ছিল। সেখানে আমাকে ভুলিয়ে আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আসে। তারপর আবার সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার আড়াই বছরের মেয়েটি বাবার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ঝিনাইদহ আছে- এমন খবর পেয়ে আমরা ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর মধ্যে আবার পালিয়েছে সে (তরিকুল)। আমি তরিকুল ও সেঁজুতির বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে আনসার সদস্য তরিকুলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:শেরপুরে দুর্বৃত্তের হামলায় ভূমি অফিসের দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। ঘটনার পর হামলাকারীরা ‘ভূমিদস্যু’ বলে অভিযোগ করেছেন আহত কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটার দিকে সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের নন্দীবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহত দুই কর্মকর্তা হলেন- সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. শহীদুল ও কামারেরচর ভূমি অফিসের নায়েব শহীদুল ইসলাম।
শেরপুর সদর থানার ওসি এমদাদুল হক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার কামারেরচর থেকে কাজ শেষে মোটরসাইকেলে শহরে ফেরার পথে শেরপুর-জামালপুর সড়কের নন্দীবাজার এলাকায় কয়েকজন ব্যক্তি ওই দুই কর্মকর্তার গতিরোধ করেন। এ সময় সার্ভেয়ার মোটরসাইকেলটি থামানোর সঙ্গে সঙ্গে অতর্কিত পেছন থেকে তাদের দুজনকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে থাকে এবং একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে সার্ভেয়ার শহীদুলের মাথায় আঘাত করে। এ সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এরপর স্থানীয়রা তাদের শেরপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে আহত সার্ভেয়ার শহীদুল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপরজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যান।
আহত সার্ভেয়ার ও নায়েব বলেন, লসমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর এলাকার মো. সেলিম মিয়া ও তার ছেলেসহ আরও কয়েকজন এ হামলা চালান। হামলাকারীরা এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যু। তাদের নামে শেরপুর সি আর আমলী আদালতে জাল দলিল তৈরি করে ভূমি জালিয়াতি করায় সরকার পক্ষের একটি মামলা চলছে। এরই জেরে তারা পরিকল্পিত এ হামলা চালিয়েছেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়ায় একটি নির্জন বাঁশবাগানের ভেতর থেকে এক নারী পোশাকশ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া এলাকার বাঁশবাগান থেকে শুক্রবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো আনজু খাতুন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার ঘাগুয়া ইউনিয়নে।
পুলিশের ভাষ্য, বাঁশবাগানের ভেতর নারী পোশাকশ্রমিকের মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ওই নারীর গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তিনি হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার অপারেটর।
হা-মীম গ্রুপের টিআইএসডব্লিএল-১ কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আনজু খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক গতকাল রাত ৯টা ১৫ মিনিটের পরে কারখানা থেকে বাসায় যায়, কিন্তু আজ সকালে তিনি আর কারখানায় আসেননি।
‘পরে লাইনের সুপারভাইজার আনজুকে কল দিলেও সে রিসিভ করেনি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কেউ তাকে (পোশাকশ্রমিক) হত্যা করে ফেলে রেখে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:পাবনার সাঁথিয়ায় অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখার ভল্ট থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ওই ব্যাংকের প্রধান তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অগ্রণী ব্যাংকের কাশিনাথপুর শাখা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তিনজনকে আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের সাঁথিয়া থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আবু জাফর, ব্যবস্থাপক হারুন বিন সালাম ও ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী, যাদের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন ক্যাশিয়ার সুব্রত চক্রবর্তী।
সাঁথিয়া থানা ও অগ্রণী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী বিভাগীয় ও পাবনা আঞ্চলিক শাখা থেকে পাঁচ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিক অডিটে আসেন অগ্রণী ব্যাংক কাশিনাথপুর শাখায়। অডিট শেষে সেখানে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকার আর্থিক অনিয়ম দেখতে পান তারা। পরে অডিট কর্মকর্তা সাঁথিয়া থানাকে অবহিত করলে পুলিশ অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পাবনা আঞ্চলিক শাখার উপমহাব্যবস্থাপক রেজাউল শরীফ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে বিভাগীয় অফিস থেকে পাঁচ সদস্যের অডিট টিম ব্যাংকে অডিট শুরু করে। ওই টিমের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনজনের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। পরে রাতে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
সাঁথিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরও বলেন, অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য