× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
The memory of Rani is still not forgotten in Bairagirchala village
google_news print-icon

রানি এলিজাবেথকে ভোলেনি বৈরাগীরচালা গ্রাম

রানি-এলিজাবেথকে-ভোলেনি-বৈরাগীরচালা-গ্রাম
১৯৮৩ সালে শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে এসেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ছবি: সংগৃহীত
৭০ বছর বয়সী সালেহা আক্তার বলেন, ‘গ্রামের কাঁঠাল বাগানে বসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে গল্প করেছিলেন রানি। এ গ্রামের পক্ষ থেকে প্রতীকী হিসেবে রানির হাতে একটি রূপার চাবি তুলে দেয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে যে কোনো সময় রানি বৈরাগীরচালা গ্রামে আসতে পারবেন। তার জন্য গ্রামের সব দরজা সর্বদা খোলা।’

তিন যুগ আগে ১৯৮৩ সালের ১৬ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে পা পড়েছিল সদ্য প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। স্বনির্ভর গ্রামের চিত্র দেখতে এসেছিলেন তিনি। আর এই সফরের সূত্রে রাতারাতি বদলে গিয়েছিল গ্রামটি।

রানি এলিজাবেথের আগমন সামনে রেখেই বৈরাগীরচালা গ্রামে প্রথমবার বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছিল। পাকা করা হয় শ্রীপুর-বৈরাগীরচালা সড়ক আর শ্রীপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মটিও।

বলা যায়, সে সময় বৈরাগীরচালা গ্রামসহ পুরো শ্রীপুরকেই ঢেলে সাজিয়েছিল সরকার।

এ কারণে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রেখেছেন এই গ্রামের মানুষ।

১৯৮৩ সালে তখনকার সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে ব্রিটিশ রানির ওই সফরই ছিল বাংলাদেশে তার প্রথম ও শেষ সফর।

রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর খবরে শোকাহত বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষও। এই গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮৩ সালেই গ্রামটি ছিল স্বনির্ভর। এলাকার মানুষের গোয়ালভর্তি গরু-ছাগল, খামারভর্তি মোরগ-মুরগি, পুকুরভর্তি মাছ, ফসলি জমি, শাক-সবজি সবকিছু ছিল। কোনোকিছুর অভাব ছিল না এ গ্রামে।

'গ্রামের মানুষ বাইরে থেকে কিছু আমদানি করতেন না। মূলত এ দৃশ্য দেখতেই গ্রামটিতে এসেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সে সময় আমার বাবা মিজানুর রহমান খানের বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখে স্বনির্ভর গ্রামের চেহারা দেখেছিলেন রানি।’

রানি এলিজাবেথকে ভোলেনি বৈরাগীরচালা গ্রাম
শ্রীপুর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে নামছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

৭০ বছর বয়সী সালেহা আক্তার বলেন, ‘গ্রামের কাঁঠাল বাগানে বসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে গল্প করেছিলেন রানি। এ গ্রামের পক্ষ থেকে প্রতীকী উপহার হিসেবে রানির হাতে একটি রূপার চাবি তুলে দেয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে যে কোনো সময় রানি বৈরাগীরচালা গ্রামে আসতে পারবেন। তার জন্য গ্রামের সব দরজা সর্বদা খোলা।’

স্থানীয় শিক্ষক মাসুদ ইবনে মোবারক জানান, রানি এলিজাবেথ বৈরাগীরচালা গ্রামে এসে যে পুকুরে মাছ অবমুক্ত করেছিলেন, সেই পুকুরটি এখন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পাড় ভেঙে পড়ছে। গ্রামে তখন প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় বেশ কয়েকটি কলকারখানাও গড়ে উঠেছিল।

গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, ‘রানিকে আমরা দেখেছি। রানির সঙ্গে বসে গল্প করেছি। তার কথা আমরা বুঝিনি। তবে তার সঙ্গের লোকজন আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় রানিকে হাতে ভাজা মুড়ি বানানো ছাড়ও গ্রামীণ শিল্পের নানা ধরনের উপকরণ তৈরির নমুনা দেখানো হয়।’

স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে বৃহস্পতিবার রাতে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের রানি হিসেবে দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক হয়।

আরও পড়ুন:
ঘৃণার আগুনে ফুল ফোটানো ব্রিটিশ রাজবধূ ক্যামিলা
কত সম্পদ রেখে গেলেন রানি?
প্রিমিয়ার লিগের এ সপ্তাহের ম্যাচ স্থগিত
কমল হাসানের শুটিং সেটে এসেছিলেন রানি
ব্রিটিশ মুদ্রা, ডাকটিকিটেও আসছে পরিবর্তন

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Comilla celebrates Boro festival

বোরো উৎসবে মেতেছে কুমিল্লা

বোরো উৎসবে মেতেছে কুমিল্লা কুমিল্লার দেবিদ্বারে ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। ছবি: নিউজবাংলা
দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।

কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে প্রকৃতি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এমন বৈরী আবহাওয়াতে কুমিল্লার কৃষকরা মেতে উঠেছেন রোরো ধান ঘরে তোলার উৎসবে। পাকা ধানের ঘ্রাণে মোহিত হচ্ছে চারপাশ।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬১ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ৮৯, ব্রি ধান ৯২ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ আবাদে কৃষকের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত ১৩ এপ্রিল দেবিদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ। তিনি জানান, বোরো ধান তোলার উৎসবে শুরু হয়েছে। ভালো ফলনে খুশি কৃষকরা।

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ও মিগজাউমের আঘাতে রবি ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মৌসুমের শুরু থেকেই আধুনিক উফশী জাত ও হাইব্রিড জাতের বোরো ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিতকরণ, কালবৈশাখি ঝড়, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবসহ নানা প্রতিকূলতা ছিল।

‘নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর বোরো মৌসুমে ভালো ফলন আশা করা হচ্ছে।’

জেলার দেবিদ্বার এলাকা ঘুরে শুক্রবার দেখা যায়, ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জমিতে ব্রি ধান ৯৬ জাতের একটি জমিতে প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে ৪ দশমিক ১৮ টন।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবারের মতো ব্রি ধান ৯৬ জাতটি চাষ করেছেন কৃষক আবুল কালাম আজাদ। মাত্র ১৩০ দিনের জীবনকালে বাম্পার ফলন পেয়ে বেজায় খুশি তিনি।

দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১২ হাজার ৬৩০ হেক্টর। বোরো ধানে ব্রি ধান ২৮ এর পরিবর্তে একই জীবনকালের, তবে অধিক ফলনের ব্রি ধান ৯৬ চাষের পরামর্শ প্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলমান ছিল।

তিনি জানান, স্বর্ণা ধানের মতো রঙের এ ধানটিতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৮ শতাংশ ও এমাইলোজের পরিমাণ ২৮ শতাংশ হওয়ায় ভাত খেতে সুস্বাদু ও ঝরঝরে।

আরও পড়ুন:
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে: কৃষিমন্ত্রী
মাতৃভূমি রক্ষা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য: সেনাপ্রধান
ফিলিপাইনের আনারস চাষ কুমিল্লায়
ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না: প্রধানমন্ত্রী

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The advice given by the expert to protect the mango pieces in the heat wave

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। ছবি: নিউজবাংলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

চলমান তাপপ্রবাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের গুটি ঝরে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই এ বছর মুকুল এসেছিল কম, গাছে যে কয়টা আমের গুটি টিকে আছে, তাপদাহের প্রভাবে সেগুলোর বৃদ্ধিও ঠিকমত হচ্ছে না বলে দাবি বাগান মালিকদের। এরই মধ্যে রোদের তাপে শুকিয়ে সেগুলো ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

আমের গুটি যাতে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে; প্রয়োজনে গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শও তাদের।

‘আমের রাজধানী’ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার কিছুটা দেরিতেই এসেছিল মুকুল। পরিমাণেও ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশ কম। তারপরও শুরু থেকেই বাড়তি যত্নে বাগানগুলোতে মুকুল থেকে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আম। তবে কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহ ভীষণ শঙ্কায় ফেলেছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। গাছে থাকা আমের গুটির বৃদ্ধি ও টিকে থাকা নিয়ে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ

ছবি: নিউজবাংলা

জেলার মহারাজপুর এলাকার আম বাগান মালিক রাজন ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে আমের গুটির বড় হচ্ছে না, বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আকাশের পানি না হলে হয়? সেচ দিয়াও খুব বেশি কাজ হচ্ছে না, শ্যালো (সেচ পাম্প) যতক্ষণ চলছে ততক্ষন পানি থাকছে। বন্ধ করলেই সব তিলিকে (দ্রুত) শুষে লিছে (নিচ্ছে)।’

আম সংগঠনের নেতারাও বলছেন একই কথা। এ বছরের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চলমান তাপপ্রবাহ তাদের সেই দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে, তার ওপর মার্চ মাসে অসময়ের বৃষ্টিতে একবার মুকুল ঝরে যায়।

‘তখন বৃষ্টির দরকার ছিলো না, তাই বৃষ্টির কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়েছিল, আর এখন বৃষ্টির অভাবে গাছে যে কয়টা আমের গুটি ছিল, তাও ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন চললে ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর আম উৎপাদনের খরচ সব ক্ষেত্রেই বেড়ে গেছে। আবার এখন সেচ দেয়ার জন্য অনেকের খরচ আরও বাড়ছে। সবমিলিয়ে এ বছর খুব বেশি স্বস্তিতে নেই আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’

তবে এখনই আশাহত না হয়ে বাগানের সঠিক পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়া ও তাপপ্রবাহ যতদিন চলবে ততদিন পর্যন্ত বাগানে সেচ দেয়া, তাপমাত্রা আরও বাড়লে সকালে বা বিকেলে গাছে সরাসারি পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।

বাগান মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

আরও পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড ৪২.৬ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা
দাবদাহে পুড়ছে ইউরোপ, মরছে মানুষ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি
ভারতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে পাখিরা
৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চুয়াডাঙ্গায় হাসফাঁস

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Is this April heat unusual?

এপ্রিলের এ গরম কি অস্বাভাবিক

এপ্রিলের এ গরম কি অস্বাভাবিক তীব্র গরমে শরীরকে প্রশান্ত করার চেষ্টা। ফাইল ছবি
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’

দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।

এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।

‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’

দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।

একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।

তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।

‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’

গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’

আরও পড়ুন:
দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ঝরতে পারে ঢাকাসহ চার বিভাগে
বিস্তৃত হতে পারে ঢাকাসহ ৬ বিভাগের দাবদাহ
বইছে তাপপ্রবাহ, নেই বৃষ্টির সম্ভাবনা
মেঘ মেঘ করবে, হতে পারে বৃষ্টিও
ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Kumargaon power station is the reason for repeated fire

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কারণে বার বার অগ্নিকাণ্ড

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কারণে বার বার অগ্নিকাণ্ড সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সোমবার সকালে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতা। ছবি: নিউজবাংলা
কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় এ নিয়ে চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। আগেরবার অগ্নিকাণ্ডেরর পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি আজও। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও দূর হয়নি।

আবার‌ও আগুনে পুড়লো সিলেটের কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত বিদ্যুতের ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র। সোমবার সকালে লাগা এই আগুনে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক গ্রাহককে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ নিয়ে গত চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় কেন বার বার আগুনের ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে এই উপকেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় সিলেট নগরীসহ আশপাশের এলাকায় টানা ৩১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তারও আগে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

প্রথমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ১৯৬৭ সালে স্থাপিত উপকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন না করা এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করা হয়। একইসঙ্গে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ্ মো. দস্তগীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম (ডিসি সোর্স ব্যাটারি, চার্জার ও ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল) এবং বিউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩ কেভি বাস ও ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সম্পূর্ণ পৃথক করা প্রয়োজন।

এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, জরুরিভিত্তিতে গ্রাউন্ডিং সিস্টেম বৃদ্ধিপূর্বক যথাযথ মানে উন্নয়ন/সম্প্রসারণ করা, ভূগর্ভস্থ কন্ট্রোল ক্যাবলিং সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা, ফল্ট লেভেল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভিতে প্যারালালে সংযুক্ত পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলো জরুরিভিত্তিতে পৃথক করা এবং পাওয়ার ট্রান্সফরমার, কারেন্ট ট্রান্সফরমার, পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।

ওই কমিটি আরও সুপারিশ করে- তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দক্ষ কারিগরি জনবল দ্বারা দেশের সব গ্রিড উপকেন্দ্র ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করা, উপকেন্দ্রের সংরক্ষণ কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তদারকি আরও জোরদার করা, উপকেন্দ্রের পরিচালন ও সংরক্ষণ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পিজিসিবি ও বিউবোর আলাদাভাবে জনবল পদায়ন করা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টির ব্যবস্থা করা দরকার।

এছাড়া গ্রিড উপকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো নিয়মিত পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এসব যন্ত্রপাতির জন্য হিস্ট্রি বুক সংরক্ষণ করা, জরুরিভিত্তিতে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের বিকল্প সোর্স তৈরির সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘প্রতিটি গ্রিড বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইবার সিকিউরিটি ও ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। লোকবল স্বল্পতার দোহাই দেয়া হয়। কিন্তু নিজেদের আপগ্রেড করার বিষয়ে কাউকেই ততটা আন্তরিক মনে হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দায়িত্বহীনতা এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ী। সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য জনগণের যে অবর্ণনীয় কষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার দায়ও এরা এড়াতে পারে না।’

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।

সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা প্রসঙ্গে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। জেআইএস নির্মাণের কাজ চলমান। এটি বাজেটের অভাবে কিছুদিন বন্ধ ছিলো। এখন আবার শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নিরাপত্তা অবস্থা আরও জোরদার হবে।’

তিনি বলেন, মূল সমস্যা হলো সমন্বয়হীনতা। এখানে পিজিসিবি ও পিডিবিসহ বেসরকারি আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির যন্ত্রপাতি রয়েছে। সবার মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন। আমরা সবাইকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দিচ্ছি।

‘এটি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে গেছে। নতুন গ্রিড সাবস্টেশন হচ্ছে। কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।’

প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ৯টার দিকে কুমারগাঁও উপকেন্দ্রের ভেতরের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনের নিচে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজের তার ছিঁড়ে স্পার্কিং হয়। ওই সময় নিচে ডাম্পিং করে রাখা পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্টারে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এসে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘এয়ার ফিল্টারগুলো সেখানে রাখা ঠিক হয়নি। সেগুলো দাহ্য হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’

কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পর দুটি ফিডারের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে অন্য ফিডার থেকে কিছু এলাকায় ওই সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করার পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

আরও পড়ুন:
সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড, সরবরাহ বিঘ্নিত

মন্তব্য

বাংলাদেশ
No one remembered the artisans behind the oath
বাংলাদেশের প্রথম সরকার

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি। বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল। রাত মেহেরপুরের বৈদ‍্যনাথতলার আম্রকাননে ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের নেপথ্য কারিগরদের ভাগ্যে আজও জোটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি।

বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল ঘেরাওয়ের কাজে। আগের দিনের অর্ধেক সময় আর রাত জেগে পাহারা দেয়া হলো মেহেরপুরের তৎকালীন বৈদ‍্যনাথতলার আম্রকানন।

শুরুটা শপথের অনুষ্ঠান থেকে হলেও মুক্তিকামী মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে কেটে গেল যুদ্ধের পুরোটা সময়।

সময় গড়িয়েছে, মত-পথ পাল্টেছে। তবে একাত্তরের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি। খোঁজ নেয়নি কেউ।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তো দূরে থাক, স্থানীয়ভাবেও তারা পাননি যথাযথ সম্মান। এই আক্ষেপ নিয়ে কেউ পাড়ি দিয়েছেন পরপারে, কেউবা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণরত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ছবি: নিউজবাংলা

কথাগুলো বঙ্গবন্ধুর ডাকে গঠিত বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম কমিটি নিয়ে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন কয়েক যুবক।

সে সময়ের এমএনএ ছহি উদ্দীন বিশ্বাস এবং এসডিও তৌহিক-এলাহি চৌধুরীর পরামর্শে তারা ঐতিহাসিক শপথের সব আয়োজন করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, বাইবেল পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনসহ বিভিন্ন কাজে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদেরকে আম্রকাননে নিয়ে এসেছিলেন সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা।

প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পর গোটা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারপরও জীবনের পরোয়া না করে সংগ্রাম কমিটির অকুতোভয় সদস্যরা ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। তাদের অনেকে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুই-একজন যারা বেঁচে আছেন তারা মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রের স্বীকৃতিটুকু পেতে চান।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স। ছবি: নিউজবাংলা

সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য বল্লভপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থিওফিল মণ্ডল বলেন, ‘প্রাণের টানে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে ছুটে আসি। পঁচাত্তর-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ১৯৭৬ সালে কেউ মুজিবনগর দিবস পালন করতে আসেনি। আমরা মাত্র ১৯ জন লোক বাগানে গিয়ে মুজিবনগর দিবস পালন করেছিলাম।’

রাষ্ট্রীয় সম্মান-স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ করে এই বীর মুক্তিযাদ্ধা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুনেছিলাম হাতেগোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। পরবর্তীতে দেখি শতাধিক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছে। তারপরও সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা অবহেলিত।’

একই কথা জানালেন মানিকনগর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ দোয়াজ উদ্দীন মাস্টার। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা সব আয়োজন করেছিল। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করার জন্য আমার ছাত্র দারিয়াপুর গ্রামের বাকের আলীকে ডেকে নিয়ে আসি। সে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও সংগ্রাম কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মোমিন চৌধুরী স্বীকৃতি পেয়েছেন।’

সংগ্রাম কমিটির সদস্যসহ যারা সেদিন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের সবার স্বীকৃতি দাবি করেন তিনি।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ছবি: নিউজবাংলা

বাংলা একাডেমী প্রণীত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: মেহেরপুর জেলা’ গ্রন্থের মাধ্যমে মূলত সংগ্রাম কমিটির বিষয়টি সবার নজরে আসে। এই গ্রন্থের লেখক মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশিদ বলেন, ‘অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়ানো এসব মানুষের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়াটা খুবই প্রয়োজন। তারা শুধু শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনই করেননি, কুষ্টিয়া অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে সব রসদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জীবন বাজি রেখে।

বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনও সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন।

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তে ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The youngest hero Prateek Shahiduls family has no permanent residence

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।’

‘রাজাকার-আলবদর থাকে আজ রাজপ্রাসাদে, আমি শহীদুল ইসলাম বীর প্রতীক থাকি একটা কুইড়াঘরে (কুঁড়েঘরে) তার কারণ কী?’

২০০৩ সালে ধারণ করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সূতী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম।

তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোট থেকেই অনেক সাহসী ও বুদ্ধিমান ছিলেন শহীদুল। তাই তো দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির অধীনে।

দেশের সর্বকনিষ্ঠ এ বীর প্রতীকের পরিবারের নেই স্থায়ী কোনো নিবাস। সন্তানদের জন্য নেই চাকরির ব্যবস্থা। তিনি কুলির কাজ ও খাবার হোটেলের কাজ করে কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের পরিবার বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে। প্রথম সন্তান মুক্তা বেগম (৩৫) পেশায় গৃহিণী, স্বামীর বাড়ি রাজশাহীর নাটোরে। দ্বিতীয় সন্তান আক্তার হোসেন (৩২) পেশায় গাড়ি চালক, তৃতীয় সন্তান সোহাগ হোসেন (২৭) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, চতুর্থ সন্তান শিখা আক্তার (২০) ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভারতে ট্রেনিং চলাকালে সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায় সহযোদ্ধারা তাকে লালু আর তার চেয়ে বয়সে বড় শ্যামলকে ভুলু নামে ডাকতে শুরু করেন। দেশে ফিরলে তার বুদ্ধিমত্তায় একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বাঁচেন।

সেই ঘটনাই বর্ণনা করে তার পরিবার, কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশে ছদ্মবেশ ধারণ করেন চতুর শহীদুল ইসলাম। কৌশলে এক রাজাকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে গোপালপুর থানা কম্পাউন্ডের, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাংকারে ঢুকে পরেন। তার কৌশল ও দুঃসাহসিক গ্রেনেড হামলায় একাধিক বাংকার ধ্বংস করলে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়।

শহীদুলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর প্রতীক উপাধি লাভ করেন তিনি। রাইফেলের সমান উচ্চতা হওয়ায় ভারতে প্রশিক্ষণ চলাকালে তাকে স্টেনগান চালনা ও গ্রেনেড ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কাদেরিয়া বাহিনী ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অস্ত্র সমর্পণের সময় সময় ১২ বছরের কিশোর শহীদুলের বীরত্বের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে কোলে তুলে নেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ছবিটি সামরিক ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস
ছবি: সংগৃহীত

শহীদুলের জীবন সংগ্রাম

শৈশবে বাবা-মা আর মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভাই-এক বোনের মৃত্যু হলে দারিদ্র্যতায় উপায়ান্তর না দেখে মুক্তিযুদ্ধের পর দুই ভাইকে রেখে জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছাড়া হন শহীদুল। ঢাকার সোয়ারীঘাটে বালু টানা, ঠেলা গাড়ি চালানো, রাজমিস্ত্রীর হেলপারের কাজ, শেষে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন।

একপর্যায়ে কুলির কাজ শেষে হোটেলে কাজ শুরু করেন। যাযাবর অবস্থায় বিয়েও করেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম নেয়া সেই সংসার স্থায়ী হয়নি।

পরবর্তী সময় কুমিল্লায় হোটেলে কাজ করা অবস্থায় সহকর্মীকে জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেন। দুই সন্তানকে নিয়ে ওই সহকর্মীর সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর চলে যান। ১৯৯৬ সালে সেই সহকর্মীর নিকটাত্মীয় মালা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

এ দম্পতির ছেলে সন্তান সোহাগ হোসেনের জন্মের পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। ঢাকার পোস্তগোলায় নিজের খাবার হোটেল চালু করার কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৯৮ সালে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্তের কথা জানতে পারেন শহীদুল।

কোনো উপায় না পেয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঢাকার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করেন। কাদের তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করান, উপস্থিত সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন তার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা বীর প্রতীক আবদুল্লাহকে নির্দেশ দেন, ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পে শহীদুলের পরিবারের জন্য জায়গা দিতে। সে অনুযায়ী তার পরিবারের ঠাঁই হয় সেখানে।

বীর প্রতীক খেতাব লাভ

চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন শহীদুল ইসলাম। কাগজপত্র সংগ্রহের পর জানতে পারেন তিনি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনিই সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তাকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অপর দুইভাই তাকে খুঁজে পায়।

শহীদুলের চিরবিদায়

অসুস্থতার কারণে শেষ সময়ে কোনো কাজকর্ম করতে পারেননি শহীদুল। শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থে চলেছে চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ। ২০০৯ সালে ২৫ মে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

পরিবারের বক্তব্য

বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামে স্ত্রী মালা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর জীবদ্দশায় ভাতাপ্রাপ্ত ছিলেন না, তাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসা করাতে হয়েছে। উনার মৃত্যুর পর চার সন্তানকে অনেক কষ্টে লালনপালন করি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কাছে গেলে ২০১৪ সালে দুই হাজার টাকা ভাতা চালু হয়।

‘মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে একাধিক রুম বানিয়ে ভাড়ার টাকায় সন্তানদের বড় করি। সন্তানদেরকে শিক্ষিত বানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার দাবি সন্তানদের জন্য উপযুক্ত চাকরি ও আমাদের স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার নিজ এলাকার মানুষের থেকে সে তেমন মূল্যায়ন পায়নি, এই ক্ষোভে তিনি মৃত্যুর আগে কখনও গোপালপুর যাননি, তবে সন্তানদের নিয়ে আমি একাধিকবার গোপালপুর গিয়েছিলাম।’

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের সন্তান সোহাগ হোসেন বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বাসস্থান। আমরা বিশেষ পরিবারের সন্তান হলেও ঢাকার মিরপুরে সরকারি জমিতে বসবাস করতেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, স্থায়ী বাসস্থান ও আমাদের জন্য উপযুক্ত চাকুরির ব্যবস্থা যেন উনি করেন।’

নিয়মিত সরকারি রেশন ও ভাতা পাচ্ছেন বলেও জানান তারা।

জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য

গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্রনাথ সরকার বিমল বলেন, ‘সূতী মীরপাড়ায় গোপালপুরের একমাত্র বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের জন্ম হলেও, এখানে তার বাড়ি-ঘর নেই। তার পরিবার এখানে এসে কিছু চায় নাই, তাই বীর নিবাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি পায়নি। তার পরিবার বীর প্রতীক ভাতা পাচ্ছেন।’

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।

‘উনাকে আবেদন করে রাখতে বলেন। পরের অর্থবছরে আবার যদি বরাদ্দ আসে তবে হয়ত এগুলো পাঠাতে পারব।’

আরও পড়ুন:
কুমিল্লায় ১৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা
বীর নারী মুক্তিযোদ্ধারা পেলেন সম্মাননা
কিশোরী রানীর ভাতের পাতিলে লুকানো পিস্তল-গুলি
ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা মাস’ চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দাবি

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Changa Sylhets tourism sector on the occasion of Eid

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত
সিলেটে আগামী কয়েক দিন পর্যটনে চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।

আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।

জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।

জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।

সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।

সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।

‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।

‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।

জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।

‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।

‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
তীব্র লোডশেডিং, পানির সংকটে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী
সিলেটে গ্রামের চেয়ে বেশি লোডশেডিং শহরে
সিলেট টেস্টে শোচনীয় হার বাংলাদেশের
সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৬
উদ্ভাবনী পদমর্যাদায় ‘ইনফেকশাস-ডিজিজ’ বিষয়ে প্রথম স্থান সিকৃবির

মন্তব্য

p
উপরে