বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
আকবর আলি খানের ভাই কবির উদ্দিন খান নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আকবর আলি খান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল। সেখানে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি মারা যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।’
আকবর আলি খান হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন কবির উদ্দিন খান।
আকবর আলি খানের জন্ম ১৯৪৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইতিহাসে; কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে। তার পিএইচডি গবেষণাও অর্থনীতিতে।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পেশাজীবনের প্রধান ধারার পাশাপাশি করেছেন শিক্ষকতাও। অবসর নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। এরপর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
সাবেক অর্থ সচিব আকবর আলি খান ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হন। দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতার মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
অবসরের পর তার আবির্ভাব ঘটে পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্য- বিচিত্র বিষয়ে তার গবেষণামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
আকবর আলি খান একাধারে ছিলেন সরকারি আমলা, অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক বা এসডিও ছিলেন। যুদ্ধকালীন তিনি সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান সরকার তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করে এবং তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি সরকারি চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তীতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সঙ্গে একযোগে পদত্যাগ করেন।
তিনি রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন।
আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাই স্কুলে তার পুরো বিদ্যালয় জীবন পার করেন। তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে আইএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৭-৬৮ সময়কালে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৭০ সালে হবিগঞ্জ মহুকুমার এসডিও হন।
মুক্তিযুদ্ধ ও আকবর আলি খান
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন দেন আকবর আলি খান। পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেন।
মুজিবনগর সরকার তখনও প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারীই লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে আকবর আলি খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেয়ার আদেশ দেন।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌঁছে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেয়ার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান। আগরতলায় যাওয়ার পর সহযোগীদের নিয়ে তিনি একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা এবং একইসঙ্গে উদ্বাস্তু শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল সেই শরণার্থীদের সহায়তা করা।
এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর মে মাসে যোগাযোগ শুরু করেন আকবর আলি খান। জুলাই মাসে তাকে সরকারে যোগ দেয়ার জন্য কলকাতায় যেতে বলা হয় এবং সেখানে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি বা উপসচিব হিসাবে পদস্থ হন। আগস্ট মাসে তাকে উপসচিব হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ অবধি তিনি ওই পদেই চাকরি করেন।
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর দেশে ফিরে আসেন আকবর আলি খান। যোগ দেন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে। তিনি সেখানে ছয় মাস চাকরি করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান থেকে ফেরত ব্যক্তিদের চাকরি পেতে সহায়তা করেন। পরে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিলেও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেয়া হয়।
কমনওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হওয়ার আগে আকবর আলি খান অল্প সময়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বৃত্তির জন্য তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭৯ সালে দেশে ফেরার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারও প্রশাসনের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যোগ দেবার আহ্বান জানানো হয়। ১৯৮৪ সালে তিনি সাভারের বিপিএটিসিতে মেম্বার ডাইরেক্টিং স্টাফ (এমডিএস) হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।
কর্মজীবনের এই পর্যায়ে এসে আকবর আলি খান ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে মিনিস্টার (ইকনোমিক) পদে যোগ দেন। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। তার সময়ে তিনি বিসিসিএল ব্যাংকের পুনর্গঠন এবং বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণের কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়েও কাজ করেন তিনি।
১৯৯৩ সালে সরকারের সচিব হিসাবে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি অর্থ সচিব হন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
২০০১ সালে তিনি বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিকল্প কার্যনির্বাহী পরিচালক পদে যোগদান করেন। বিশ্বব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন।
অবসরের পর আকবর আলি খানের আবির্ভাব ঘটে পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা, সাহিত্য—বিচিত্র বিষয়ে তার গবেষণামূলক বই পাঠকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়।
তার প্রকাশিত মোট গ্রন্থের সংখ্যা ১৭। জনপ্রিয় প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে- ডিসকভারি অব বাংলাদেশ, ফ্রেন্ডলি ফায়ারস, হাম্পটি ডাম্পটি ডিসঅর্ডার অ্যান্ড আদার এসেস, গ্রেশাম'স ল সিন্ড্রম অ্যান্ড বিঅন্ড, দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর আজব অর্থনীতি, অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি, চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন, দুর্ভাবনা ও ভাবনা: রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এবং বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ।
আকবর আলি খানের সর্বশেষ আত্মজীবনী গ্রন্থ 'পুরানো সেই দিনের কথা'।
সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ অডিটোরিয়ামে আবুল মনসুর আহমদের 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর: পাঠ ও পর্যালোচনা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন আকবর আলি খান।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সম্পর্ক জোরদারে ‘সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায়’ নয়াদিল্লি আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
সোমবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনো চিন্তা নেই। আমরা এটাকে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হিসেবে দেখি।’
পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে সংখ্যালঘু ইস্যু, অপতথ্য প্রচার, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে ‘খুবই দৃঢ়’ এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কে কিছু মেঘ জমে ছায়া তৈরি করেছে। এই ‘কালো মেঘ’ মুছে ফেলতে ভারতের সাহায্য চেয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
আলোচনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন, তার প্রসঙ্গও উঠে আসে।
বিগত ১৫ বছরের নির্মম ও দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসনের বর্ণনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের লোকজন উদ্বিগ্ন। কারণ তিনি সেখান (ভারত) থেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।’
বিক্রম মিসরি জানান, তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বাংলাদেশের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও জনতা কীভাবে এক হয়ে হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলের অবসান ঘটিয়েছে তার একটি বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো তরুণদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা। এটি একটি নতুন বাংলাদেশ।’ এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের সংক্ষিপ্ত রূপরেখাও তুলে ধরেন ড. ইউনূস।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর যেসব বিদেশি নেতা আপনাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামনের সারিতে আছেন।
‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের ন্যারেটিভ এবং ভারত সরকারের ধারণা ভিন্ন। আমরা আপনার সাফল্য কামনা করি।’
‘বাংলাদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক রয়েছে এটা ভুল ধারণা’ উল্লেখ করে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কোনো নির্দিষ্ট দলের জন্য নয়, বরং সবার জন্য।’
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনায় ঘনিষ্ঠ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভারতকে তার উদ্যোগে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সবার জন্য একটি সমৃদ্ধ নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে চাই।’
বিক্রম মিসরি জানান, ভারত সার্কের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রেখেছে, যদিও কিছু বাধা রয়েছে।
সংখ্যালঘু ইস্যু সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একটি পরিবার। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভারত গত মাসে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়াবে। আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
আরও পড়ুন:ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য পছন্দ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এই বার্তা পৌঁছে দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে অনুরোধ করেছে ঢাকা। একইসঙ্গে দেশটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নাক না গলাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাকে ফেরানোর উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ আসার বিষয়। আর এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
‘সিদ্ধান্ত যখন হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন ব্যবস্থা নেবে। এটা এফওসিতে কেন, যে কোনো পর্যায়ে হতে পারে। সেটা কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমেও হতে পারে। দিল্লিতে আমাদের যে মিশন আছে তার মাধ্যমেও জানানো যায়।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে যে বক্তব্য দিচ্ছেন সে বিষয়ে আমরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আপনারা গতকাল শুনেছেন তিনি (শেখ হাসিনা) একটি বক্তৃতা দিয়েছেন। এটা এই সরকার পছন্দ করছে না এবং তারা যে কথাটা বলেছেন, তার উপস্থিতি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।’
পররাষ্ট্র সচিব জানান, ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু ইস্যুতে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের সুযোগ নেই জানিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে নাক না গলানোর বার্তা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আজকের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা সবসময় বলেছি, সীমান্ত হত্যা যেন শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হয়। তাদের দিক থেকে তারা বলেছে, সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধ হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এসব অপরাধের সংযোগ আছে।’
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো অপরাধ সমর্থন করি না। একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডকেও সমর্থন করি না। কাজেই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে কথা বলছি, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের যে অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার, সেটার বিষয়ে তারা যেন শ্রদ্ধাশীল থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন মিশনে ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলা ও নানা ধরনের হুমকির বিষয়ে জোরালোভাবে জানানো হয়েছে।’
তিনি জানান, ভারতে চিকিৎসাপ্রার্থীদের ভিসা সহজ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারতের সহায়তা কামনা এবং দেশটিতে আটক বাংলাদেশি জেলে ও অন্যান্য নাগরিককে ফেরত দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের পরাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন। এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে এফওসি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকার হয়ে নেতৃত্ব দেন জসীম উদ্দিন।
অন্যদিকে, দিল্লির পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন বিক্রম মিশ্রি। দুই সচিবের মধ্যে একান্ত আলাপসহ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক চলে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে গত ১৫ বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চাকরি প্রার্থীর চৌদ্দ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে দেখা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের আগে নানাভাবে তাদের তথ্য যাচাই করা হয়েছে। নিয়োগ প্রার্থী কোন দলের, তার বাবা কোন দলের, দাদা কোন দলের এবং আরও পূর্বপুরুষ কোন দলের তা খবর নেয়া হয়েছে। দুই লাখ পুলিশের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্য এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এই ৮০ থেকে ৯০ হাজার পুলিশ সদস্যকে তো বলতে পারি না গো হোম (বাসায় ফিরে যাও)। তবে যারা দুষ্টু, যারা পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
ডিএমপির এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন পুলিশ ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে পড়ে, তখন ঢাকা শহরে ডাকাতি, লুটপাট শুরু হয়। তখন ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি নিয়ে পাহারা দিয়েছেন। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রমার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর সদ্যবিদায়ী ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যরা পুলিশকে সক্রিয় করতে কাজ শুরু করেন।’
ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা ট্রাফিক। এই শহরে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অটোরিকশা যদি বন্ধ না হয় তাহলে ঢাকা শহরের ঘর থেকে বের হলে আর হাঁটার জায়গা থাকবে না। মানুষের মুভমেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তবে ট্রাফিকে শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এর জন্য নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিগত সরকার অটোরিকশার অনুমতি দেয়ার কারণেই বাড়ছে অটোর সংখ্যা। অচিরেই এটি কমানো না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে নগরবাসীকে। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।’
রাজধানীতে ইদানীং ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নগরবাসীর কাছ থেকে ছিনতাইয়ের অনেক অভিযোগ আসছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে যাতে রোধ করা সম্ভব হয়।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি ঢাকাসহ দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ওই সময়ের অপেশাদার আচরণের কারণে বদলি ও দোষী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ভারতীয় একটি মিডিয়া পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে কালী দেবীর মূর্তি বিসর্জনের একটি ভিডিওকে বাংলাদেশে একটি মন্দিরে হামলা হিসেবে প্রচার করেছে।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্ট ওয়াচ’ ভাইরাল ভিডিও পোস্টটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট আরটি ইন্ডিয়ার এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছিল। পোস্টে দাবি করা হয়- এটি বাংলাদেশের একটি কালী মন্দিরে হামলার ঘটনা।
ফ্যাক্ট ওয়াচ নিশ্চিত করেছে যে এটি প্রকৃতপক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি কালী দেবীর বিসর্জনের ভিডিও।
ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা শনাক্ত করতে ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের অধীনস্থ এবং সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড কোয়ালিটেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) পরিচালিত স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্ট ওয়াচ ভিডিওটির বিভিন্ন কী-ফ্রেম ব্যবহার করে অনুসন্ধান চালায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর বিনোদ ঘোষ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়েছিল, যা ফ্যাক্ট ওয়াচ তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রিপোর্টে জানিয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুর গ্রামে শতাব্দী প্রাচীন কালীপূজোতে প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, প্রতি ১২ বছরে গ্রামের পুরোহিতরা প্রথমে ১৩ ফুট লম্বা কালী দেবীর মূর্তির ছোট ছোট আঙুল ভাঙেন। তারপর গ্রামের সাধারণ মানুষেরা মূর্তির বাকি অংশ ভেঙে একে একে বিসর্জন দেন।’
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ‘বিসর্জনের পর একটি নতুন মূর্তি তৈরি করা হয় এবং তা পরবর্তী ১১ বছর ধরে পূজা করা হয়।’
এই উৎস থেকে ফ্যাক্ট ওয়াচ দল আরও কিছু চিত্র এবং ভিডিও খুঁজে পায়, যা এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেখানে দেখা যায় যে বিপুলসংখ্যক মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও উদযাপন করছেন।
পরে দ্য ডেইলি স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টেও একইরকম তথ্য পাওয়া যায়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এই প্রথাটি ৬০০ বছরের পুরনো। প্রথমদিকে গ্রামের কামার সম্প্রদায় (বঙ্গের কর্মকার জাতির সমতুল্য) এই পূজো পালন করত, পরবর্তীতে তারা দায়িত্বটি মণ্ডল পরিবারকে হস্তান্তর করে।
অন্যদিকে গুগল স্ট্রিট ভিউতে কালী দেবীর মন্দিরের দৃশ্য এবং ফেসবুক ভিডিওর সঙ্গে তুলনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মন্দিরটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুলতানপুর গ্রামে অবস্থিত, বাংলাদেশে নয়। এছাড়াও সেখানে কোনো হিন্দু ভক্ত নিহত হওয়ার মতো কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনা উল্লেখ করে মিথ্যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে শেয়ার করা হচ্ছে বলে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠানটি জানায়।
প্রতিবেদনটি শেষ করে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং, সবদিক বিবেচনা করে ফ্যাক্ট ওয়াচ ভাইরাল পোস্টটিকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেছেন, ‘গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দুদেশের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ আছে। দু’দেশের জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায় ভারত। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়।’
ঢাকায় সোমবার দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর বিক্রম মিশ্রি এসব কথা বলেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বৈঠকের আলোচনায় দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়গুলো এসেছে। অত্যন্ত খোলামেলা ও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
‘আমি জোর দিয়ে বলেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক চায়। আমরা সবসময়... অতীতেও দেখেছি এবং আমরা ভবিষ্যতেও এ সম্পর্ককে একটি জনকেন্দ্রিক এবং জনমুখী সম্পর্ক হিসেবে দেখব। আর সে সম্পর্কের কেন্দ্রে থাকবে সব মানুষের কল্যাণ।’
বিক্রম মিশ্রি বলেন, পরস্পরের জন্য সহায়ক এই সহযোগিতা আমাদের উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে অব্যাহত থাকবে না এটা ভাবার কারণ নেই। আমি আজ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য ভারতের আগ্রহের কথা তুলে ধরেছি। একই সময়ে, আমরা কিছু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনার সুযোগ পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত আমাদের উদ্বেগগুলো জানিয়েছি। আমরা সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং কূটনৈতিক সম্পত্তির ওপর হামলার কিছু দুঃখজনক ঘটনা নিয়েও আলোচনা করেছি।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক সহযোগিতা উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে অব্যাহত না থাকার কোনো কারণ নেই এবং এর জন্য আমি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ভারতের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
এর আগে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বাংলাদেশের এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি তার দেশের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব একান্তে বৈঠক করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বিশেষ ফ্লাইটে আজ সকালে ঢাকায় অবতরণ করেন। এরপর বেলা ১১টার দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের গাড়িবহর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রবেশ করে। আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে দুই পররাষ্ট্র সচিব একান্তে বৈঠক করেন।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে এটি বিক্রম মিশ্রির প্রথম বাংলাদেশ সফর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রথম বৈঠকও এটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে উভয় পক্ষ রাজনৈতিক দূরত্ব কমানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সক্রিয়তা বন্ধ, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার ও ভিসার জট খোলার বিষয়ে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিয়ানমারের রাখাইন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আগামীকাল মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী মূলত মুসলিম জাতিগোষ্ঠী চিরতরে নির্মূল করার লক্ষ্যে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। খুনি ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলা থেকে নারী-শিশু-বৃদ্ধ, ছাত্র-শিক্ষক, ইমাম-মুয়াজ্জিন, বুদ্ধিজীবী কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে জামায়াতের আমির অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং ফিলিস্তিনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের সব মানবতাবাদী রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জাতিসংঘের সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার আলোকে আমাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থা এমন হতে হবে, যেখানে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং কেউ আর নিপীড়িত হবে না। আজ আমরা এক নতুন যাত্রায় আছি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষার যাত্রা।
জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ ১৯৫০ সালে ১০ ডিসেম্বরকে ‘মানবাধিকার দিবস’ ঘোষণা করে। সেই থেকে প্রতি বছর এদিন আন্তর্জাতিক ‘মানবাধিকার দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
এ বছরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এখনই’।
তারেক রহমান এই দিনে প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক অধিকার হারানো নির্যাতিত মানুষের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তিনি বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোথাও যেন ভবিষ্যতে আর কেউ মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন- সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি ন্যায়নিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ দীর্ঘ একদলীয় শাসনের কালো অধ্যায় পার করেছে। তখন মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছিল, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ব্যক্তিগত ক্ষমতায়নের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
‘এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছিলেন তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক কিংবা সাধারণ মানুষ যেই হোন না কেন- মিথ্যা মামলা, কারাবাস, শারীরিক নির্যাতন, গুম ও হত্যার শিকার হয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অতীতে বাক, ব্যক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মুদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে যারা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নির্মম নিপীড়নে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং যারা এখনও নির্যাতিত-নিপীড়িত, তাদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানান।
তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত হয়ে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের আপামর জনগণের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারাবন্দি থেকে, মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যে নির্মম পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, তা আমাদের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই অধ্যায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কখনও থেমে থাকা উচিত নয়।
‘এই মুহূর্তে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। মানবাধিকার সুরক্ষিত রেখে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এ যাত্রায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে- জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এটাই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য