কুমিল্লার কলেজশিক্ষক তাহমিনা আক্তার মুনার মৃত্যু দুর্ঘটনার আগুনে, নাকি আগুন ধরিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে, এ নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
স্বজনদের দাবি, স্বামীর সুনিপুণ পরিকল্পনার শিকার মুনা।
সেই রাতের ঘটনা নিয়ে সুমন যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিবেশীর বক্তব্যে, যিনি আগুন লাগার পর এই নারীকে হাসপাতালে নিতে চেয়েছিলেন।
মুনার স্বজন এবং সুমনের সঙ্গে ওঠাবসা করা বেশ কয়েকজন জানাচ্ছেন, সুমনের বেশ কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে পরিবারটিতে ঝগড়াঝাঁটি হতো।
শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মারা যান মুনা।
তার মৃত্যুর পর স্বামী সালাউদ্দিন সুমন বলেন, ৩১ আগস্ট রাত ১টায় চুলায় আগুন জ্বালাতে গিয়ে কেরোসিনের বোতল গায়ে পড়ে অগ্নিদগ্ধ হন মুনা।
চুলার পাশে কেন কেরোসিন রাখা হয়েছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ঘরে বারবিকিউ করেছেন। তাই কেরোসিন ছিল।’
মুনারা ১১ বোন। মুনা দশম সন্তান। তার বাবা মারা গেছেন। মা গুলশান আরার অভিযোগ, তার মেয়ের সঙ্গে ভয়ংকর কিছু ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সব তথ্য দিয়েছি। আমরা এখন সত্য উন্মোচন হবে সেদিকে তাকিয়ে আছি।’
সালাউদ্দিন সুমনের ভগ্নিপতি শওকত জামান জানান, মুনার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাত ৯টার দিকে পাথুরীয়াপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
প্রেমের বিয়ে, পরে জটিলতা
প্রেম করে ২০১৭ সালে মুনা ও সুমনের বিয়ে। কিন্তু মুনার পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। তাদের সংসারে সাফা নামে আড়াই বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
সুমনের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়। মুনার বাবার বাড়ি কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়াপাড়ায়।
মুনা কুমিল্লা মডেল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। নগরীর রেসকোর্স এলাকার একটি বাড়ির পাঁচতলায় ভাড়া থাকতেন। তার স্বামী সালাউদ্দিন সুমন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন, আবার বলতেন ফ্রিল্যান্সার। তার আয়ের উৎস নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে মাজারে ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতা ছিল।
কুমিল্লা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন জানান, ‘মুনা একজন ভালো শিক্ষক ছিলেন। খুব বেশি কথা বলতেন না। সহকর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল।
বেশ কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সুমনের। গোপনে একাধিক বিয়ের কথাও প্রচার হয়েছিল। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ হতো।
৩১ আগস্ট রাতে কী হয়েছিল
রাত ১টার সময় সালাউদ্দিন সুমন ফোন করেন আরেক সংস্কৃতিকর্মী স্যাম আল মামুনকে। জানান আগুনের কথা।
মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১টায় সুমন ভাইয়ের ফোন পাই। তিনি আমাকে বলন, তার ঘরে আগুন লেগেছে। স্ত্রী দগ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়ে আমরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রেসকোর্স রওনা দিই।
‘পৌঁছানোর আগেই পাশের বাসার আরেকজন নারীকে নিয়ে সুমন ভাই মুনাকে নিয়ে ঝাউতলা মুন হসপিটালে আসে। সেই হসপিটালে পুড়ে যাওয়া রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়।
‘ততক্ষণে আমরা অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেই। তাই একটি অটোরিকশা নিয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে বার্ন ইউনিটে মুনাকে চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করা হয়।’
এরপর আবার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয় বলে জানান মামুন। বলেন, ‘সুমন ভাই ও তার স্ত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরি। সে সময় আমার এক বন্ধুকেও পাঠিয়েছিলাম তাদের সঙ্গে।’
একাধিক সংস্কৃতিকর্মী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, সুমন তাদেরকে ফোন দিয়ে বলেন যেন ফেসবুকে তাকে নিয়ে সবাই পোস্ট দেন। পোস্টে যেন সবাই লিখে এটা শুধুই একটা দুর্ঘটনা। অন্য কিছু নয়। তবে সুমনের এমন অনুরোধে সাড়া দেননি তার সংস্কৃতি অঙ্গনের সহকর্মীরা।
সুমনের তথ্যের সঙ্গে প্রতিবেশীর বক্তব্য বিস্তর ফারাক
সোমবার মুনার সেই ওই বাসায় গিয়ে ঘুরে অনেক তথ্য জানা যায়।
পাশের বাসার ভাড়াটিয়া মনোয়ারা বেগম বলেন, “সেদিন রাত তখন ১টা। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দরজা খুলি। দেখি সুমন ভাইয়ের স্ত্রী মুনা চিৎকার করে বলতেছে, ‘ভাবি, আমার বাচ্চা সাফাকে দেখে রাইখেন।'
“বলে সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন। আমি সাফাকে আমার মেয়ের কাছে দিয়ে আমিও নিচে নেমে আসি। সুমন ভাই পরে নিচে নামেন। আমি চেয়ে দেখলাম মুনার শরীর ভয়ংকরভাবে পুড়ে গেছে।”
সুমন যে নারীকে নিয়ে হাসপাতালে যান বলে মামুন বলেছিলেন, তিনিই মনোয়ারা।
আগুন কীভাবে লাগল, তা নিয়ে সুমন ও তার বক্তব্যে বিস্তর ফারাক। তিনি বলেন, ‘ওই দিন বাসায় কোনো সিলিন্ডার বিস্ফোরণ শুনি নাই। সুমন ভাই যে বলছেন বাসায় বারবিকিউয়ের আয়োজন করেছে, তাও দেখি নাই।’
পরদিন সুমনের মা শামীমা আক্তার ও কাজের মেয়ে এসে তাদের ঘর পরিষ্কার করেন বলেও জানান মনোয়ারা। জানান, তারা যাওয়ার সময় সাফাকে তার কাছ থেকে নিয়ে যান।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার আমিনুর রশীদ বলেন, ‘রোগীর (মুনা) বুক থেকে হাঁটু পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছিল। বলা যায় শরীরের ৬৬ ভাগ পুড়েছে। এত বেশি পুড়ে যাওয়ায় আমরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করি।’
মুনার পরিবারের নানা সন্দেহ
মুনার বড় বোন মাসুমা বেগম বলেন, ‘অনেকগুলো ঘটনা আমাদের কাছে সন্দেহজনক। আমরা সব বলেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।’
কী কী সন্দেহজনক মনে হয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জানাব, পুলিশ তদন্ত শেষ করুক। আমাদের মুনার মেয়ে সাফা এখন তার দাদির কাছে আছে। আমরা সাফাকে নিয়ে শঙ্কিত।'
মুনার বড় বোন মাসুমা খাতুন বলেন, ‘আমার বোন হসপিটালে থাকতে সব বলে গেছে। ওই দিন রাতে সুমন তার ফ্ল্যাটের পানির লাইন অফ করে দেয়। পরে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় মুনার শরীরে।’
তিনি এও জানান, হাসপাতালে সুমন তার মেয়েকে হত্যার ভয় দেখিয়ে তার মৃ্ত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়- এ কথা বলতে বাধ্য করেছে এবং সেই বক্তব্য ভিডিওতে ধারণ করেছে।
মুনা মারা যাওয়ার পর তার লাশ গ্রহণ করতেও সুমন যাননি বলে জানান মাসুমা।
সুমন কেন এই কাজ করেছেন, সে বিষয়ে মুনা কিছু বলে গেছেন কি না- এমন প্রশ্নে মাসুমা বলেন, ‘সুমন বেকার ছিল। ব্যবসার কথা বলে ১০ লাখ টাকা যৌতুক চায়। এই টাকা না পাওয়ায় সে মুনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
‘ঘটনার আগের দিন ৩০ আগস্ট মুনা আমাদের আরেক বোন তারান্নুম ঝিলিকের কাছে ফোনে জানায়, শাশুড়ি শানিমা বেগম তাকে খুব গালাগাল করছে।'
সুমন কোথায়
মুনার মৃত্যুর পর সুমন হাসপাতাল থেকে চলে যান বলে জানান মাসুমা। তিনি বলেন, ‘তার জন্য আমরা মরদেহ নিয়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করি। পরে মরদেহ নিয়ে চলে আসি।’
পরে সুমন মুনার জানাজায় হাজির হলেও দ্রুত চলে যান বলে জানান মাসুমা। বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সুমনের কোনো খবর নেই।’
এসব অভিযোগ নিয়ে সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব ষড়যন্ত্র।’
তাহলে কীভাবে এ ঘটনা ঘটল- এমন প্রশ্ন করার পর ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন রেখে দেন তিনি।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান জানান, ‘মঙ্গলবার আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’
আরও পড়ুন:ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী সিজারিয়ান অপারেশনের সময় মারা যান। এর আগে ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরপর এমন দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেস্টা করছে বলে জানাগেছে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। পরে তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে। আর নিহত আখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে রেফার করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়। কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, “রোগী কীভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি নিজে অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, “রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজারিয়ান সম্পন্ন করি।”
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, “একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “গতকাল রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠাই। পরে জানতে পারি, নিহত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালায়। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। শুনেছি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।”
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যান্ত দুঃখজনক। ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলবো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের) সাবেক সংসদ সদস্য মো: হাফিজ ইব্রাহিমের নামে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে সেলিম নামে এক ব্যক্তির দেওয়া অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড়মানিকায় শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের আয়োজনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া স্বাক্ষাতকারে এ দাবি করেন হাফিজ ইব্রাহিম।
এর আগে দৈনিক ইত্তেফাক, সমকাল, যায়যায়দিন সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকার ডিজিটাল প্লাট ফরমে একটি সংবাদে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তুলে সেলিম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, সংবাদটি ডিজিটাল প্লাট ফরমে প্রকাশ হওয়ার পর আমার নজরে আসে। আমি মনোযোগ দিয়ে তার অভিযোগ শুনি। যে ব্যক্তি আমার নামে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা না। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, তিনি ভোলা-১ সদর আসনের বাসিন্দা ভোলা সদর আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাহজাহানের বাড়ির পাশে তার বাড়ি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেলিম নামে ওই ব্যক্তির সাথে তার আপন ভাতিজি জামাইয়ের দীর্ঘদিন ধরে জমি-জমা নিয়ে বিরোধ রয়েছে তার ভাতিজি জামাই তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে থাকতে পারে এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এমনকি ওই বিষয়ে ভোলা সদর থানায় মামলা রয়েছে।
হাফিজ ইব্রাহিম আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। পতিত সরকারের পলাতক একটি কুচক্রী মহল বিএনপির নামে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে ও দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা এই ঘটনার পেছনে যে আসল সত্য রয়েছে তা উদঘাটন করুন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহী মহানগরীর একটি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-৫।
রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর টিকাপাড়া এলাকার একটি বালুর স্তূপের আনুমানিক ২ ফুট গভীর থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
সোমবার সকালে র্যাব-৫ এর মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
অভিযানে একটি ৭.৬২ মি.মি. বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৫; সিপিএসসি’র একটি আভিযানিক দল জানতে পারে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন লুট হওয়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন ও গুলি দুষ্কৃতকারীরা বোয়ালিয়া থানাধীন টিকাপাড়া এলাকায় লুকিয়ে রেখেছে। পরে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বালুর স্তূপের ভেতর থেকে বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করে র্যাবের গোয়েন্দা দল।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাসস’কে জানান, এটি পুলিশের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। তবে কোন থানার অস্ত্র সেটি নিশ্চিত করা যায়নি। কারণ পিস্তলের গায়ে বাট নম্বর ঘষা-মাজার চিহ্ন স্পষ্ট। উদ্ধারকৃত বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি বোয়ালিয়া থানায় জিডির পর হস্তান্তর করা হয়েছে।
মন্তব্য