অল্প কয়েক দিনের পরিচিত বিদেশি বন্ধুর উপহার পেতে কাস্টমস ফির নামে টাকা দিলেন তো ফাঁদে পড়লেন। একবার ফাঁদে পড়লে যেন এর শেষ নেই। প্রতি ধাপেই বাড়ে মোটা অঙ্কের টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই অঙ্ক গিয়ে ঠেকে ৩০ লাখের উপরে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হওয়া বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেল কাস্টমস থেকে উঠাতে গিয়ে সম্প্রতি ৩২ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক ব্যক্তি। শত শত মানুষ পড়ছেন পার্সেলের ফাঁদে। বিদেশিদের সঙ্গে দেশীয়রা মিলে এই চক্র গড়ে তুলেছে।
চক্রের সদস্যরা লেনদেন করেন ব্যাংকের মাধ্যমে। যে কারণে ভুক্তভোগীরাও সহজে বিশ্বাস করেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা, লেনদেনসহ সামগ্রিক কাজ দেখভাল করেন বিপ্লব লস্কর নামে এক যুবক। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা বিপ্লব ও তার পরিবার কুলির কাজ করলেও পার্সেল প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এখন তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক।
সোমবার রাতে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পার্সেল চক্রের বাংলাদেশপ্রধান বিপ্লব লস্করসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- বিপ্লবের প্রধান সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন, ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, নাজমুল হক রনি ও মোসা. নুসরাত জাহান।
এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি, ইমানুয়েল, জন; আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ, ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনিকে।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, ২৮টি মোবাইল ফোন, ১ টি কম্পিউটার, ৪৯১ টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, ১ হাজার ৪১৫টি চেকের পাতা, ৩টি ওয়্যারলেস পকেট রাউটার, ১ টি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা, ১১ লাখ ৩৫ হাজার নগদ টাকা, প্রতারণা সম্পর্কিত কথোপকথনের অসংখ্য স্ক্রিনশট ও বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ২৬৩ টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
যেভাবে পাতা হয় ফাঁদ
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, বিদেশি নাগরিকের আইডি থেকে প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে সামাজিক যোগাাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করা হয়। একটা সময় পর্যন্ত কনভারসেশন চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে উপহার পাঠায় বিদেশি নাগরিক। পার্সেল আকারে পাঠানো উপহার বক্সের ছবিও পাঠানো হয়।
এক বা দুদিন পর টার্গেট করার ব্যক্তির কাছে বাংলাদেশি নাম্বার থেকে কল যায়। যা কল সেন্টারের মতো করে পরিচালনা করে প্রতারকরা। বলা হয়, আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছি। পার্সেলটি নেয়ার জন্য ট্যাক্স হিসেবে কিছু টাকা দিতে হবে। ট্যাক্স হিসেবে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দুই-তিন হাজার টাকা দেয়ার কথা বলা হয়। প্রথমে টাকার অঙ্ক কম বলে, যাতে বিশ্বাস করতে সুবিধা হয়। বিশ্বস্ততা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট। একবার টাকা পাঠালেই ফাঁদের মাত্রা বাড়তে থাকে। খুইতে হয় আরও বেশি পরিমাণে টাকা।
ধাপে ধাপে বাড়ে টাকা
ধাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাবি করার টাকার পরিমাণও বাড়তে থাকে। প্রথম ফাঁদে পা দিয়ে টাকা পাঠানোর পর কিছুটা সময় নিয়ে আবার টার্গেট করা ব্যক্তিকে কল দেয়। তখন বলা হয়, পার্সেলটি স্ক্যান করার সময় ভেতরে মূল্যবান জিনিস পাওয়া গেছে। সোনাসহ অন্যান্য মূলবান ডিভাইসের জন্য আলাদা ট্যাক্স দেয়া লাগবে। অনেক মূলবান জিনিসের জন্য ট্যাক্সের হারটাও বাড়ানো হয়, যা লাখের কোটায় যায়।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, পার্সেলের ফাঁদটি মূলত লোভের ফাঁদ। একবার ফাঁদে যিনি পড়েন তিনি মূল্যবান জিনিসের লোভে ধাপে ধাপে টাকা দিতে থাকেন। যখন গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন ততক্ষণে প্রতারকরা টার্গেট করার ব্যক্তির সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
নাম ভাঙানো হয় সাংবাদিক ও পুলিশের
দ্বিতীয় ধাপে টাকা দেয়ার পর তৃতীয় ধাপের জন্য নতুন ফাঁদ ফেলে পার্সেল প্রতারকরা।
ডিবি কর্মকর্তা তারেক বিন রশিদ জানান, তৃতীয় ধাপে টার্গেট করা ব্যক্তিকে বলা হয়, আপনার যে পার্সেলটি এসেছে তাতে অনেক মূল্যবান টাকা থাকায় জিনিস থাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে। সাংবাদিক ও পুলিশ জেনে গেছে। তাদের ম্যানেজ করতে হবে। এজন্য আরও টাকা দিতে হবে।
মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, ‘আগের দুই ধাপে যিনি টাকা দিয়েছেন তিনি লোভের পাশাপাশি দুই দফায় টাকা দেয়ার ফাঁদেও পড়েন। কারণ তিনি ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টাকা দিয়েছেন। আর কিছু টাকা না দিলে পুরোটাই লস হবে এই ভেবে আবারও টাকা দেন। একটা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিতে থাকেন। এক সময় টার্গেট করা ব্যক্তির সন্দেহ হয়। যতক্ষণে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন তার আগেই প্রতারকরা সব যোগাযোগ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান।’
ব্যাংকের লোকজন জড়িত থাকার সন্দেহ
পার্সেল প্রতারণায় প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত। ১১ জনকে গ্রেপ্তারের পর তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানতে পেরেছে, চক্রের বাংলাদেশ প্রধান বিপ্লব লস্করের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এক হাজারের বেশি ব্যাংক আকাউন্ট। যেগুলো নামে-বেনামে খোলা হয়েছে। টার্গেট করা ব্যক্তির কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতেই লেনদেনগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলে করা হতো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে ৪৯১ টি এটিএম কার্ড পেয়েছি। বিপ্লবের নিয়ন্ত্রণে এক হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সাধারণ একজন গ্রাহকের তুলনায় বিপ্লব ও তার সহযোগীরা অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে সুবিধা পেয়ে আসছিল বলে মনে হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি, ব্যাংকের কেউ জড়িত আছে কিনা।’
বিপ্লব লস্কর কুলি থেকে কোটিপতি
ডিবি তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, বিপ্লব লস্কর ও তার পরিবারের সদস্যরা এক সময় গোপালগঞ্জে কুলি হিসেবে কাজ করতেন। ২০০০ সালে বিপ্লব ঢাকা আসেন। একসময় গার্মেন্টেসের কাপড় কিনে বিক্রি করতেন। সেখানেই নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ২০০৭ সাল থেকে পার্সেল প্রতারণা শুরু করেন।
গোয়েন্দারা বিপ্লবের একটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছেন, যা পূর্বাচলের পাশে ইছাপুরে। তার নামে থাকা ডুপ্লেক্স এই বাড়িটি বর্তমান বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি। নিজের নামে করা সম্পদের তুলনায় স্বজন ও অন্যদের নামে বিপ্লব বেশি সম্পদ কিনেছেন। কোথায় কোথায় তার আরও সম্পদ রয়েছে সেগুলোও গোয়েন্দারা খোঁজ করছেন।
আরও পড়ুন:চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের বেধড়ক পিটিয়েছে সংগঠনটির কয়েকজন সদস্য। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
দৈনিক খবরের কাগজের বিনোদন প্রতিবেদক মিঠুন আল মামুন জানান, তার ক্যামেরাম্যানসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈশাখী টিভির সাংবাদিক লিয়ন মীর জানান, শপথ গ্রহণ শেষে চিত্রনায়িকা ময়ূরীর মেয়ের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন এক রিপোর্টার। এসময় অভিনেতা শিবা শানু ওই সাংবাদিককে বেরিয়ে যেতে বলেন। না যেতে চাইলে তাকে ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন তিনি।
কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হয়ে শিবা শানুকে থামাতে চান। এরপর শিল্পী সমিতির আরেক নেতা চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী ‘মার মার’ বলে তেড়ে যান সাংবাদিকদের দিকে। শুরু হয় সাংবাদিক ও শিল্পীদের মধ্যে তুমুল মারামারি। এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। রক্তাক্ত আহত হন কয়েকজন সাংবাদিক। মারামারিতে যোগ দেন আলেকজান্ডার বোসহ কয়েকজন জুনিয়রও।
মিঠুন আল মামুন ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘আমি একজন শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। এ সময় খল অভিনেতা শিবা শানু আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে কেন সাক্ষাৎকার নিচ্ছি। এরপরই তিনি আমার ওপর হামলা চালান।
‘এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক এগিয়ে এলে জয় চৌধুরী অশ্লীল গালি দিয়ে জুনিয়র শিল্পীদের নির্দেশ দেন সাংবাদিকদের ওপর চালানোর। জয় ও শিবা শানুর নেতৃত্বেই আমাদের ওপর হামলা হয়েছে।’
এ ঘটনার পরপরই এফডিসিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএফডিসির খোলা প্রাঙ্গণে এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টায় সভাপতি মিশা সওদাগরের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু মিশাকে শপথ পাঠ করান।
ঝিনাইদহ জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ভোরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন। আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন ও মহেশপুর উপজেলা টিআই হুসাইনসহ আনসার সদস্যরা তাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
সংবাদকর্মীরা জানান, ৮ মে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার অফিসে নির্বাচনকালীন অস্থায়ী সদস্য নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সেই খবর সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক রোকনুজ্জামান মিলন সেখানে গেলে তার সঙ্গে অসদাচরণ করেন জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ। এক পর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ঝিনাইদহে কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা।
ভুক্তভোগী রোকনুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই অফিসের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন এক নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমি এগিয়ে গেলে আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন সোহাগ।
‘আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে অন্য আসনার সদস্যরা আমাকে টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে কিল-ঘুষি মারেন। আমাকে সেখানে এক ঘণ্টা আটকে রাখার পর মোবাইল ফোন ফেরত দেয়া হয়। পরে মোবাইলে সহকর্মীদের ফোন করলে তারা এসে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি ওই কর্মকর্তাসহ ঘটনায় জড়িত অন্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা কমান্ড্যান্ট সোহাগ হোসেন বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে তেমন কিছু ঘটেনি। সে প্রথমে পরিচয় না দেয়ায় তাকে রুমের মধ্যে বসিয়ে রেখেছিলাম। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লার বুড়িচং সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল তেঁতুলতলা সীমান্তে সোমবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বিল্লাল হোসেন (২৮) রাজাপুর ইউনিয়নের লড়িবাগ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি ও অন্য পণ্য ওঠা-নামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে তেঁতুলতলা সীমান্ত দিয়ে আসা চিনি নামানোর সময় বিএসএফের সদস্যরা গুলি করে তাকে। তার শরীরে ৩০টির মতো ছররা (ছোট গুলি) গুলি লাগে।
পরে বিল্লালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। গুলিতে তার চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন জানান, গুলিতে আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি বলতে পারবে।
বিজিবির সংকুচাইল বিওপির কামান্ডার ফারুক কামাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) বিপুল পরিমাণ টাকাসহ দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশ আসার খবর পেয়ে আগেই পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজীব ও কনকসহ কয়েকজন। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তার কাছ থেকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যায় তাদের পাবনা সদর থানা পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।
আটককৃতরা হলেন- দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের বাসিন্দা পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা এবং কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগরের বাসিন্দা ও পাবনা পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা পাউবোতে অনুসন্ধানে যান কয়েকজন সাংবাদিক। সেখানে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার ধাক্কা দেয়ার পর মাসুদ রানা দরজা খোলেন। কক্ষে ঠিকাদার ও স্থানীয় কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা। এরপরই আরেক ঠিকাদার কনক হাজির হন।
সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে কীসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে, তা জানতে চান সাংবাদিকরা, কিন্তু প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তারা। বিষয়টি সন্দেজনক মনে হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগেই দুই ঠিকাদার পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) খবর দেয়।
তাদের সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করে দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার দিকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তানভীর আহমেদ দীপ নামের পাবনা পাউবোর এক ঠিকাদার বলেন, ‘আটক দুইজন হয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারে। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস এখানে এসেছেন। এত দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে, এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধামতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হয়ত ফাঁসিয়েছে।’
আনিছুর রহমান মারুফ নামের আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেয়া হলে বিল আটকে দেয়া হয়।’
পাবনা পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছে। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো- সেসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাবনা সদর থানার ওসি রওশন আলী বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ ফোন করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সত্যতা পেলে দুই প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দুদককে অবহিত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান করবে।’
এ বিষয়ে দুদক, পাবনা শাখার কর্মকর্তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বান্দরবানে যৌথ অভিযানে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তাদের আদালতে তোলা হলে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এএসএম এমরান কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রুমা সদর ইউনিয়নের মুনলাই পাড়ার বাসিন্দা লাল নুন নোয়াম বম, লাল দাভিদ বম, চমলিয়ান বম, লাল পেক লিয়ান বম, ভান মুন নোয়াম বম, লাল মিন বম ও বান্দরবান সদর লাইমি পাড়ার বাসিন্দা ভান বিয়াক লিয়ান বম।
তাদের মধ্যে ভান মুন নোয়াম বম রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২৩ এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অং ছাইং উ পুলু ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন মানিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে ভান মুন নোয়াম বমকে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অং ছাইং উ পুলুয়ের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এর আগে সোমবার রুমা সদর ইউনিয়নের মুনলাইপাড়া থেকে ছয়জন এবং বান্দরবানের মিলনছড়ি পুলিশ চেকপোস্ট থেকে ভান বিয়াক লিয়ান বমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক শাখায় ২ এপ্রিল রাতে ডাকাতি, ম্যানেজারকে অপহরণ, মসজিদে হামলা, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়।
পরদিন দুপুরে বান্দরবানের থানচি উপজেলার সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই ডাকাতির ঘটনায় চারটি মামলা হয়।
নয়টি মামলায় এ পর্যন্ত মোট ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৫৬ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:ফারহান আহমেদ জোভান অভিনীত ‘রূপান্তর’ নাটকের তিনিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলী আদালতে নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালকসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাউসার উল জিহাদ এ মামলাটি করেছেন।
ইউটিউব চ্যানেল একান্ন মিডিয়া থেকে নাটকটি সরিয়ে ফেলার পর এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন নির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকু। তার মতে, দর্শকরা নাটকটির কনসেপ্ট হয়ত বোঝেননি।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কিছুই দেখছি, আসলে বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় দর্শকরা নানান স্ট্যাটাস ও মন্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, ‘পরিচালক রাফাত মজুমদার রিংকু পরিচালিত এ নাটকটিতে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ইস্যুকে প্রমোট করা হয়েছে। এ কারণে গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা জোভানকে অনলাইনে তুলোধুনা করছে নেটিজেনরা।
‘এছাড়া জোভান ও সামিরা খান মাহি দুজনের ফেসবুক পেজ গায়েব করে দেয়া হয়েছে। জোভানের ১৯ লাখের পেজ ও মাহির ২৪ লাখের লাইক-ফলো করা পেজটি আর ফেসবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘রূপান্তর’ নাটকটি ইউটিউবে প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা। অসংখ্য পোস্ট ও লক্ষাধিক প্রতিক্রিয়া আসে নাটকটির বিরুদ্ধে। তীব্র সমালোচনায় পড়ে নাটকটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
জোভান বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, নাটকটি নিয়ে কেন এমন সমালোচনা করা হচ্ছে! নাটকটির ভিউ হয়েছিল নব্বই হাজার। তাহলে বাকি মানুষ তো দেখেনি! আমার মনে হয়, তারা না দেখেই সমালোচনা করছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ঘোরের মধ্যে আছি। বুঝতে পারছি না কী হচ্ছে!’
সমালোচনার মুখে জোভান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দর্শক পছন্দ করেন না এমন কোনো চরিত্রে অভিনয় করবেন না। বলেন, ‘যেহেতু মানুষ পছন্দ করছে না সেহেতু এসব আর করা যাবে না। এরপর থেকে এগুলো আর করব না।’
নেটিজেনদের কিংবা নিজের অনুসারীদের উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা দিয়ে এটা নিয়ে জোভান দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
জোভান ছাড়াও ‘রূপান্তর’ নাটকে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিরা খান মাহি। এতে আরও অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম ও সমাপ্তি মাসুক প্রমূখ।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ না করেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি সাংবাদিকদের আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই আদেশের ফলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইউপি চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করতে হবে না।
কুষ্টিয়া ও সিলেটের দুটি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রশ্নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আনা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
মন্তব্য