ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরসূচি অনুযায়ী দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে এ বৈঠক শুরু হয়।
দুই দফায় ১২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত এ বৈঠক হবে। বৈঠকে একান্ত কথা বলবেন দুই সরকারপ্রধান। এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিনিধি পর্যায়েও আলোচনা হবে।
বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা, নিত্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ, আরোপিত বাণিজ্যিক বাধা অপসারণ, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি, বিবিআইএন কার্যকর, নেপাল ও ভুটানের জন্য বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের নিশ্চয়তা চাইতে পারে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিবর্তিত বিশ্বে কূটনীতি, ব্যাবসা-বাণিজ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ভারতের জোর সহায়তা চাইতে পারে বলেও জানিয়েছে সূত্রগুলো।
অন্যদিকে ভারত চাইতে পারে যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশকে চীনের বলয় থেকে রক্ষা করতে। এ জন্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ, যৌথ সমরাস্ত্র তৈরি কারখানা, পণ্য সরবরাহের গাইডলাইন তৈরি ও সমন্বিত বাণিজ্যিক কাঠামো বা সেপা চুক্তির ঘোষণা চাইতে পারে দেশটি।
বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে পানিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান নিয়েও। তার আগেই ভারতকে ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার রাতে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক রাজনীতির ঊর্ধ্বে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানি তেল আমদানি করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
ভারতের সঙ্গে জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সোমবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে যেসব কৌশলগত পণ্য আমদানি করে, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভারত যাতে বাংলাদেশকে অবহিত করে, এ বিষয়টি মূল আলোচনায় থাকবে।
তিনি বলেন, জ্বালানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনেক দেশ সমস্যায় পড়ছে। এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করা হবে। ভারতের যদি উদ্বৃত্ত জ্বালানি থাকে, তা কীভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরবরাহ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে। এটি নিশ্চিত করা গেলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ।
রাশিয়া থেকে জ্বালানি ক্রয় নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা যাবে না, এটা ঠিক না, কিন্তু রাশিয়ার যে কারিগরি বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো এখন যাচাই করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কীভাবে এর মূল্য পরিশোধ করা হবে, তা খতিয়ে দেখার বিষয় রয়েছে।
‘ভারতের কাছে যদি উদ্বৃত্ত জ্বালানি থাকে, আর যদি সহজ শর্তে পাওয়া যায়, তাহলে এ জ্বালানি সংগ্রহের বিষয়টি অবশ্যই বাংলাদেশ বিবেচনা করবে।’
আরেকটি সূত্র বলছে, বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত ডিজেল রপ্তানি করতে চায় ভারত। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভারতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।
এদিকে আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, ভারত) মোটরযান চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জোর দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘ভারতও চাইছে এটি দ্রুত চালু হোক। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়ের মেহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট হাইওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা চাইবে।’
কূটনৈতিক সূত্রে আরও জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারির সময় রেলে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখা নিশ্চিত করেছিল ভারত। এরই ধারাবাহিকতায় ভারত প্রস্তাব দিয়েছে চাল, গম, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে, তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আগাম জানাতে।
বাংলাদেশ নিজের চাহিদার কথা জানালে ভারত আগে থেকে সেটি বিবেচনায় নেবে। ফলে ভারত নিজের চাহিদা মেটানোর পর বাংলাদেশের চাহিদার বিষয়টিও মাথায় রাখবে। এতে করে বাংলাদেশের প্রয়োজনের সময় ভারত ওই পণ্যগুলোর জোগান নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে। দুই দেশের শীর্ষ নেতার আলোচনায় বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এসে পৌঁছান। তার এই সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বাণিজ্যসংক্রান্ত চুক্তি ছাড়াও কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে, তবে চুক্তি ও সমঝোতা সংক্রান্ত নির্ধারিত এজেন্ডা যাই থাক, এর বাইরেও অনেক বিষয় আলোচনা হবে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে দিল্লি সফরের পর গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের অধিবেশনে গিয়ে সেখানে একান্ত বৈঠক করেছিলেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
ওই বৈঠকের পর কেটে গেছে এক বছর। পরে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এলেও দ্বিপক্ষীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে আসেনি।
এবার জাতিসংঘের অধিবেশনে নরেন্দ্র মোদির যোগ দেয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই এই সফর ছাড়া আগামীতে দুই প্রধানমন্ত্রীর দেখা হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় আজকের বৈঠকেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শেষ করতে চান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব মুখোমুখি হয়েছে জ্বালানি সংকটের, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের ওপরও। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরও জ্বালানি সংকটের কারণে লোডশেডিংয়ের মতো সিদ্ধান্তে যেতে হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারকে। তাই এ সংকট মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা চাইতে পারে বাংলাদেশ।
মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আর কতদিন টানবে বাংলাদেশ, এমন প্রশ্ন এখন সারা দেশের মানুষের। বাস্তুহারা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানা সংকটের কারণ হয়েছে।
এদিকে গত এক মাসে অন্তত তিন দফায় মিয়ানমারের মর্টার শেল ও গোলা এসে পড়েছে বাংলাদেশের ভেতর। বিষয়টিতে উদ্বেগ জানিয়ে কড়া প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশ। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আজকের বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে ভারতের জোরালো ভূমিকা আশা করবে বাংলাদেশ।
প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সাম্প্রতিক ভূমিকায় সতর্ক ভারত। গত কয়েক বছরে দেশ দুটি সীমান্তে একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছে। তাই ভারত আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইতে পারে। দেশটি বাংলাদেশে যৌথ সামরিক কারখানা করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় দিল্লি। আজকের দুই নেতার একান্ত বৈঠকে বিষয়টিও আলোচনায় উঠতে পারে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হলে এতদিনের সম্পর্ক আরেকটু নিবিড় হবে। এতে অমীংমাসিত বিষয়গুলো হয়তো সমাধানের দিকে যাবে।
‘দ্বিতীয়ত, নতুন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে। বর্তমানে বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে নতুন কিছু চিন্তাভাবনা আসবে।’
আরও পড়ুন:কদিন ধরেই তীব্র গরম। দেশের কোথাও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে গরম অবশ্য কমছে না। আবহাওয়া আপাতত এমনই থাকবে।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, একই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং চাঁদপুর ও মৌলভীবাজার জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আগামী পাঁচ দিনের পূর্বভাসে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ প্রায় একই রকম থাকতে পারে। আবহাওয়ায় তেমন পরিবতর্তন আসবে না।
দেশে চলমান দাবদাহ শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি শুক্রবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ কথা জানায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ আজ (১৯ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
‘জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিনপটিক অবস্থা নিয়ে বলেছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহের বিষয়ে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট বৈধ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজর ৭৮৬ জন। মাঠ পর্যায় থেকে পাঠনো তথ্য একীভূত করার পর এ তথ্য জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি জানান, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন এক হাজার ৮৯০ জন। এদের মধ্যে বাছাইয়ে ১০৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল, আর বৈধতা পেয়েছে এক হাজার ৭৮৬ প্রার্থীর।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আপিল করা যাবে। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল এবং ১৫০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৮ মে।
অপপ্রচার রোধে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর নিজ দপ্তরে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আরাফাত বলেন, ‘অপপ্রচার রোধে ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা কীভাবে কাজ করে, তাদের অভিজ্ঞতা এবং প্রক্রিয়া-পদ্ধতি বিনিময় জানা-বোঝার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে সহায়তা নেব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যেসব কো-অপারেশন আছে, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিটিভিতে দুই ঘণ্টার একটি চাংক নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ বিশ্লেষণ, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করতে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে ভারতের যে সংবাদ সংস্থাগুলো আছে, বিশেষ করে এএনআইয়ের সঙ্গে কোলাবরেশন করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘যেহেতু বিটিভি ইন্ডিয়াতে দেখানো হয়, সেহেতু দুই ঘণ্টার এ চাংক আমরা ধীরে ধীরে দুই, তিন, চার ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াব। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করতে চাচ্ছি, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে। এর বাইরেও বিভিন্ন দেশের খবর থাকবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব ভারতীয় দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নিয়ে ইনস্টিটিউশন আছে, তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন করা, বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম ও ট্রেনিং করা।’
‘সম্প্রতি মুজিব শিরোনামের যে সিনেমাটি সহ-প্রযোজনা হয়েছে, এমন অন্য কোনো সিনেমায় সহ-প্রযোজনার সুযোগ আছে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে’- যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতের সিনেমা যেহেতু বাংলাদেশের বাজারে চলে সেহেতু বাংলাদেশেরও ভালো মানের সিনেমা ভারতে চালানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দর্শককে জোর করে কিছু দেখানো যায় না। বাজারে কোনো জিনিসের চাহিদা থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাবে-আসবে। সিনেমা যেহেতু প্রোডাক্ট, সেহেতু ভারতের বাজারে দর্শক থাকলে অবশ্যই যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আরও কো-অপারেশনের সুযোগ আছে, সেসব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমি মনে করি- বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশি লাভবান হবে। কারণ ভারতের ফিল্মে, টেলিভিশনে বা অন্যান্য জায়গায় যে অভিজ্ঞতা আছে, তা আমরা যত বেশি নেয়ার চেষ্টা করা যায়। দেশের উন্নয়নের জন্য এসব জরুরি।’
আরও পড়ুন:সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অর্জনে অবদান রাখতে এবং দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করায় অবদান রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবকিছু করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘ডিফেন্স ডিপ্লোমেসি: স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সূত্র: ইউএনবি
সেনাপ্রধান বলেন, ‘মাতৃভূমিকে রক্ষা করা, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা সবকিছুই করছি।’
বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতির বাণী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে আমরা সবকিছু করছি।’
জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রেখে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘কূটনীতি যেকোনো ধরনের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
বেসামরিক শক্তির সহায়তায় সেনাবাহিনী কীভাবে দেশে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড, দেশ-বিদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘যেখানেই সুযোগ আছে, তা প্রত্যক্ষ হোক বা পরোক্ষ, আমরা সুযোগ গ্রহণ করি এবং বাংলাদেশের স্বার্থে সবকিছু করি।’
সামরিক কূটনীতির কথা বলতে গিয়ে জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরও সম্পদ ও বাজেট বরাদ্দ করে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা জানি কীভাবে এটা করতে হয়। কিন্তু আমাদের এটা করার সামর্থ্য থাকা উচিত।’
মিয়ানমার ইস্যু প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং এখানে নিজেদের সমস্যায় ফেলার ঝুঁকি রয়েছে।
‘এক বন্ধুকে খুশি করার জন্য আমরা আরেক বন্ধুর বিরোধিতা করতে পারি না। বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা আমাদের খেয়াল করতে হবে। এসব ঘটনার প্রভাবও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এবং আমরা সঠিক পথেই রয়েছি।’
জেনারেল শফিউদ্দিন বলেন, দূর থেকে চালানো যায় এমন কিছু যানবাহন দেশেই তৈরি হচ্ছে যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বেশ উপকারে আসবে। আগে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হতো। তাই এখন আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।’
সেনাপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল যুদ্ধে লড়াই করাই শেখে না, বরং জাতীয় স্বার্থে কীভাবে যুদ্ধ প্রতিরোধ বা এড়াতে হয় তা-ও জানে। আমরা সঠিক পথেই আছি এবং আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবো না।’
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সামরিক বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। এটি তারা কখনও ভুলে যায় না এবং এ কাজে সবসময় তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
‘উদ্দেশ্য রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু সক্ষমতা রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। আজ আপনি আমার বন্ধু, আগামীকাল বন্ধু না-ও হতে পারেন। কিন্তু জাতীয় স্বার্থ, মাতৃভূমি রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা থাকতে হবে- পররাষ্ট্রনীতির এই আদেশ আমাদের সবার জন্য সমান।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গওসোল আযম সরকার ও মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আবু বকর সিদ্দিক খান।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য