প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সামনে রেখে আলোচিত ‘সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা- সিইপিএ’ চুক্তির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরেই চুক্তিটি স্বাক্ষরের আশা করছে ভারত। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-ভারত সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিএ) নামের এই পরিকল্পনায় দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর উপায় এবং ধাপে ধাপে বাণিজ্য ব্যবধান কমানোর কথা বলা হয়েছে।
গত মার্চে এ চুক্তির খসড়া ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নয়দিল্লির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মে মাসের শেষে গোহাটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনা করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
নয়াদিল্লির কূটনীতিক সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উপায় খুঁজেছে ভারত। এ জন্য প্রয়োজনে বাংলাদেশের মাটিতে সামরিক-বেসামরিক শিল্পে বিনিয়োগ করে উৎপাদিত পণ্য ও সরঞ্জাম ভারতে আমদানির কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ১ মার্চ থেকে ৪ মার্চ ভারত সফর করে এবং সিইপিএ এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ (জেএসজি) দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ উপস্থাপন করে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত সিইপিএর তিনটি মাত্রা রয়েছে- পণ্য, পরিষেবা ও বিনিয়োগে বাণিজ্য।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সিইপিএর মূল লক্ষ্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ব্যবধান কমানো এবং সংযোগ, নতুন বাজার, সহযোগিতা ও অংশীদারিসহ নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মুক্ত করা।
এ ছাড়া সিইপিএতে বহুমাত্রিক সংযোগের দৃষ্টিকোণ এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকে গভীর করার দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক এবং উৎস করসহ অন্য চ্যালেঞ্জ সমাধান করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক বিবৃতিতে বলা হয়, সিইপিএ পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবে। যার মধ্যে রয়েছে রেল ও বন্দর অবকাঠামো, সীমান্ত হাট, এবং মাল্টি-মোডাল পরিবহনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ, হারমোনাইজেশনের উন্নয়ন ও যৌথ মান নিয়ন্ত্রণ।
এ ছাড়া সিইপিএর অধীনে সবুজ প্রযুক্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, আইটি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে, যা বিনিয়োগের সুযোগকে শক্তিশালী করবে। চুক্তিটিতে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করার জন্য চারটি ক্ষেত্রের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কানেক্টিভিটি এবং ভারত থেকে পেঁয়াজ ও তুলার অনিশ্চিত সরবরাহের পরিপ্রেক্ষিতে একটি নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের চেইন বজায় রাখা। প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের যৌথ উৎপাদন, বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র, ভ্যাকসিন এবং অন্য ওষুধের যৌথ উৎপাদন।
চুক্তির সুবিধা ব্যাখ্যা করে একজন কূটনীতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পটভূমিতে, আমদানি, রপ্তানি এবং সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানসহ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবস্থা নতুন গতি পাবে। কারণ চুক্তিতে যৌথভাবে কাজ করার উপকরণ রয়েছে। এটি বাণিজ্য, সরবরাহ লাইন এবং উৎপাদন নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, সিইপিএ চালু হলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা হবে ৪০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ভারতে তার শেষ সফরের সময় দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সিইপিএ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিইপিএ সংযোগের একটি ক্লাস্টার তৈরি করবে যা এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক রুট (এএইচ১ ও ২), বিবিআইএন, বিসিআইএম এবং বিমসটেক, পেট্রাপোল-বেনাপোল, ফুলবাড়ী-বাংলাবান্ধা এবং ডাউকিতে ভারত ও বাংলাদেশকে সংযুক্ত করে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যকে রূপ দেবে। তামাবিল পয়েন্ট এবং আখাউড়া (বাংলাদেশ) এবং আগরতলা (ভারত) এর মধ্যে একটি নতুন রেল সংযোগ তৈরি করবে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, সিইপিএ একবার সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে, চুক্তিটি সীমান্তের ওপারে ব্যক্তিগত, যাত্রী এবং পণ্যবাহী যানবাহন যাতায়াত সহজ করবে। এটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হবে, যেখানে পণ্যের দাম চার থেকে ৫ শতাংশের বেশি কমতে পারে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে নতুন নতুন ব্যবসার খাত উন্মুক্ত করবে, ট্রানজিট ব্যবসা নতুন রূপ পাবে এবং ভোক্তাদের খরচ কমাবে ও আয় বাড়াবে। কারণ প্রচুর অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হবে।
ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিইপিএ চুক্তি অনুযায়ী যখন প্রোডাকশন হাব এবং সাপ্লাই চেইন বাস্তবায়িত হবে, তখন এটি উভয় দেশের জন্যই একটি নতুন বাজার তৈরি করবে এবং আগামী দিনে বিনিয়োগ একটি নতুন পথ দেখাবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছে এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে টেলিকমিউনিকেশন, ফার্মাসিউটিক্যালস, এফএমসিজি এবং অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে।
ভারত ও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সিইপিএ-এর মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে যে আরও জোরালো দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততা তৈরি করবে। এছাড়াও সিপিইএ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশের রাসায়নিক সার, কাঁচা পাট এবং পাটজাত পণ্য হিমায়িত মাছ এবং তৈরি পোশাকের (আরএমজি) জন্য বাজার তৈরি করবে।
বাংলাদেশের বাণিজ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সিইপিএর লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্য সংক্রান্ত জটিলতা, ট্যারিফ, সরকারি ক্রয়, বিনিয়োগ, সংযুক্তি ও বিনিয়োগের সুরক্ষাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করা। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার বিভিন্ন জটিলতাকে দূর করার জন্যেও এটি একটি বড় আকারের উদ্যোগ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সিইপিএ ঠিকমতো প্রতিষ্ঠিত হলে দুই দেশের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তাদের সুবিধামতো চুক্তি বেছে নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) চালু আছে। ভারত তার স্ট্র্যাটেজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার কারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন:সরকার দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহের ববির সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘প্রেস কাউন্সিলের ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রতিনিধি নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর পদত্যাগ করায় তার পরিবর্তে সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।’
বর্তমান কাউন্সিলের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এ মনোনয়ন কার্যকর থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, সচিব (উপসচিব) মো. আব্দুস সবুর।
এছাড়া ১২ জন সদস্য হচ্ছেন—১. বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ২. ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মিস দৌলত আকতার মালা, ৩. ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, ৪. ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম, ৫. দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ৬. দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক ও সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, ৭. দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ৮. দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. রমিজ উদ্দিন চৌধুরী, ৯. নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়ার) উপদেষ্টা আখতার হোসেন খান, ১০. বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ১১. বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ১২. বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শাহবাজ শরিফের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে পিএম হাউসে উভয়ের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ও তার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং সখ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক ও কায়রোতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে তার অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানান।
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি পত্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এ পত্রে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় সে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ভয়াবহ এ দুর্যোগে নিহতদের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
এ পত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কঠিন এ সময়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণ তাদের অসাধারণ ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করবে। প্রয়োজনে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকালে ঢাকা ও করাচীর মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল দ্রুত পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কৃষি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধর্মতত্ত্ব ও চিকিৎসা বিষয়ে উভয়দেশের শিক্ষার্থী বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, ধর্মবিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি মন্ত্রী সরদার ইউসুফ খান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আতা তারার, ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান, উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও শরীফ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক মুফতি জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশের একটি স্বাধীন তদন্ত সার্ভিস গঠন করা হবে, যাতে কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়াই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়।’ এর পাশাপাশি পুলিশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি কমিশন গঠনের বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘এই দুই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ কাজে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী যুক্ত থাকবেন।’
সভায় স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বারবার জোর দিয়েছেন যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ক্ষমতায়িত করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যেন নিজস্ব তহবিল সংগ্রহ ও স্বচ্ছভাবে পরিচালনা করতে পারে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্য খাত নিয়েও সভায় আলোচনা হয়। শফিকুল আলম জানান, ‘কিছু মেডিকেল কলেজে যোগ্য শিক্ষকের সংকট রয়েছে। তাই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পরামর্শক বা অন্যভাবে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রমের মান উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়েও সভায় আলোকপাত করা হয়। প্রেস সচিব বলেন, ‘নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ভালো আছেন, দূতাবাস তাদের দেখভাল করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে জাতীয় ফুটবল দলকে দেশে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ বৈঠক প্রসঙ্গে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আজকের বৈঠকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাডার কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে চার মাস করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন মাস প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে এবং এক মাস মাঠপর্যায়ে ওরিয়েন্টেশন ও গ্রাম সংযুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের নবম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কর্মকর্তাদের মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে ভর্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৪৭ বছর করা হবে। পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নকালে প্রতি বছর তত্ত্বাবধায়কের অগ্রগতিমূলক প্রত্যয়ন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বেতন বন্ধ রাখা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি যত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে সেগুলোর ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। কী ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণের ধরন-মান ইত্যাদির মানদণ্ড নির্ধারণ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক প্রতিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে র্যাংকিং করতে হবে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন ইউনিট গঠন করতে হবে। তারা সমস্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ওপর পদ্ধতিগতভাবে, স্বাধীনভাবে মূল্যায়ন করবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক দর্শন জানতে হবে। সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না দেখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা যারা বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাদের তথ্য সেখানে থাকবে।’
সভায় সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের নাম পরিবর্তন করে ‘দক্ষতা নবায়ন প্রশিক্ষণ’ করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রশিক্ষণ হালনাগাদকৃত কারিক্যুলামে মাঠপর্যায়ে সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আংশিক বৃত্তিপ্রাপ্ত হলেও প্রেষণ অনুমোদন করা যাবে।
কর্মচারীদের সততা ও নৈতিকতা বিকাশ এবং দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব তৈরিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে সদ্গুণ, নৈতিকতা, আচরণবিজ্ঞান ও আচরণবিধি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে গবেষণা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি করে একটি নির্বাহী কমিটি (ইসিএনটিসি) গঠন করা হয়।
জাতীয় লেখক ফোরাম আয়োজিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে হওয়া এ সাহিত্য আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠেনর সভাপতি ড. দেওয়ান আযাদ রহমান, মহাসচিব কবি-কথাসাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মো. আবদুল মান্নানসহ বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকরা। অনুষ্ঠানটি একটি সাধারণ প্রাণবন্ত আড্ডার মধ্যেই শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি ৩টি পর্বে সাজানো হয়েছে। প্রতি পর্বে চারজন কবিকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এবং কবিতা পাঠ করেছেন। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন কবি-কথা সাহিত্যিক জাহাঙ্গীর হোসাইন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকার প্রদত্ত সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লিমিটেড, রোয়ার ফ্যাশন লিমিটেড, মাহমুদ জিন্স লিমিটেড, স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লিমিটেডকে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ চুক্তির আওতায় উক্ত অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, "এই ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।"
তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সকল টাকা পরিশোধ করতে বলেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ওই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।
বাংলাদেশে সফররত ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. মাহমুদ সিদকি আল-হাব্বাশের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় গতকাল মঙ্গলবার এক বৈঠকে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। আজ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানান।
ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতি ড. আল-হাব্বাশ বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের স্থায়ী সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
ফিলিস্তিনিদের নিরন্তর সমর্থনের জন্য দেশটির প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের ওপরও জোর দেন।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে ড. আল-হাব্বাশ তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন।
মন্তব্য