নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন নিহতের ঘটনায় তার ভাই ও পুলিশের মামলায় এলাকাছাড়া দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। কারও কারও বাড়িতে তালা ঝুলতেও দেখা গেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। অনেকে পরিবার নিয়েই অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন। মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় নাম থাকা নেতাদের বেশির ভাগের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, ‘বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। পুলিশের হয়রানিতে আমরা বাড়িঘরে থাকতে পারছি না। আমরা বলতে চাই, হামলা, মামলা ও হয়রানি করে আমাদের থামানো যাবে না।’
মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে গণগ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আমাদের অনেক নেতাকর্মী হয়রানির ভয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। রাতে তাদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। আমাদের দাবি হলো- নেতাকর্মীদের হয়রানি করা বন্ধ হোক।’
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক সাইদুজ্জামান জানান, দুটি মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে শনিবার কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
পূর্বঘোষিত ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে সোমবার নির্ধারণ করে প্ল্যাটফর্মটি।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সংবাদকর্মীদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রোববার এ তথ্য জানান।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে একই তথ্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, রিফাত রশিদসহ আরও কয়েকজন সমন্বয়ক।
এর আগে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল ৬ আগস্ট, মঙ্গলবার। আর সোমবার ছিল ঢাকায় সমাবেশ আর সারা দেশে অবস্থান কর্মসূচি।
গতকাল বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের বার্তা দেন আসিফ মাহমুদ।
বার্তায় বলা হয়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ৬ আগস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ আগস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই (সোমবার) সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আজ অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতাকে খুন করা হয়েছে। চূড়ান্ত জবাব দেয়ার সময় এসে গেছে। বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ঢাকায় এসে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাজপথগুলোতে অবস্থান নিন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘এই ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত স্বাক্ষর রাখার সময় এসে গেছে। ইতিহাসের অংশ হতে ঢাকায় আসুন সকলে।
‘যে যেভাবে পারেন কালকের মধ্যে ঢাকায় চলে আসুন। ছাত্র-জনতা এক নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাব।’
ঠাকুরগাঁও সদরে টাঙ্গন নদীতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হওয়া কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মরদেহটি বুধবার সকাল ৯টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ছাত্রের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাণ হারানো রায়হান ইসলাম (১৬) ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের মুজিবনগর গ্রামের শহিদের ছেলে।
উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রবিউল ইসলাম জানান, সকাল সাতটায় উদ্ধারকাজ শুরু করে রংপুর থেকে আসা ডুবরি দল ও ফায়ার সার্ভিস। প্রায় দুই ঘণ্টা উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেন চার ডুবরি। এরই মধ্যে খবর আসে ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ ভেসে উঠেছে। পরে শাহপাড়ায় নদীর ঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর দুইটার দিকে রায়হানসহ পাঁচ বন্ধু মিলে নদীতে গোসলে নামে। সে নিখোঁজ হওয়ার এক দিন অতিবাহিত হলেও তার পরিবারকে খবর দেয়নি বন্ধুরা। পরে জানতে পেরে পরিবারের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রংপুর বিভাগের ডুবরি দলকে খবর দেয়৷ ডুবরি দল এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে চলমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে শুক্রবার।
জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ফলে প্লাবিত হয় নতুন নতুন এলাকা।
কুড়িগ্রামে এরই মধ্যে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪১ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রামে। এতে বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, দুর্যোগকবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০।
বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অনেক পরিবারে গত পাঁচ দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে যায় তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দেয় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট।
বানভাসিদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলায় গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসিদের। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
প্লাবিত যেসব অঞ্চল
জেলার ৯টি উপজেলাই বন্যা কবলিত। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় ছয়টি উপজেলা আক্রান্ত বেশি। ভারতের আসাম-মেঘালায় রাজ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়।
ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলা হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর,নাগেশ্বরী এবং রৌমারী উপজেলা দিয়ে।
ভারতের পাহাড়ি ঢল আর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে কুড়িগ্রামের ছয়টি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার পাশাপাশি কয়েক হাজার ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশপথে যেসব ইউনিয়ন আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া, কালিগঞ্জ, বল্লভের খাস ও কেদার।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ, যাত্রাপুর ও পাঁচগাছি প্লাবিত হয়েছে । উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, হাতিয়া প্লাবিত হয়।
চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ, অষ্টমিরচর, নয়ারচর, চিলমারী সদর ও রমনা এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা, রৌমারী সদর, বন্দবের, চরশৌলমারী ও যাদুরচর প্লাবিত হয়। এ ছাড়া রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ, রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের মানুষ বেশি আক্রন্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের মিলপাড়া এলাকার আবদুল মতিন বলেন, ‘পানি হু হু করে বাড়ছে। ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। চিন্তাভাবনা করছি উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়ার।’
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অনেক চর ও দ্বীপ চর তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্টে বসবাস করছে চরের মানুষ।
‘এ ছাড়াও কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের দুটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসিদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৮২ টন চাল ও ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৩৯৫ টন চাল, আট লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। এগুলো পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সরকারের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার সকাল থেকে উলিপুর ও সদর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন এবং বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন।
তিনি জানান, জেলার ৯ উপজেলার সবগুলো বন্যা কবলিত। বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন এক হাজার ২৪৬ জন।
ডিসি আরও জানান, শুক্রবার ৯ উপজেলায় দুই হাজার ৮৫০টি পরিবারের মধ্যে ২৮ টন চাল বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া শুকনা খাবার, তেল, ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীও বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে চিনি এনে দেশে বিক্রি চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও তার স্বজন নাজমুল হীরার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নজরে এসেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের বিরুদ্ধে চিনি চোরাচালানে সম্পৃক্ততার অভিযোগটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সম্প্রতি চোরাচালানের চিনিসহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাকটি সুমন ও হীরার ঘনিষ্ঠ একজন আনেন বলে খবর চাউর হয়, মামলার আসামি করা হয় ছাত্রলীগের অন্য এক নেতাকে। ওই নেতার দাবি, চোরাই চিনিবোঝাই ট্রাক ধরিয়ে দিতে তিনি সহযোগিতা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সুমন নিজে বাঁচতে ও তার ভাগ্নে হীরাকে বাঁচাতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
ভারতীয় অবৈধ চিনি বোঝাই ট্রাকটি আটকের পর চোরাকারবারীদের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন যেসব বার্তা আদান-প্রদান করেছেন, তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বার্তা আদান-প্রদানের স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সুমন নিয়মিত খোঁজ রাখছেন কয়টা গাড়ি শহরে প্রবেশ করেছে এবং তাকে কী পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
একটি বার্তায় সুমন লেখেন, ‘কত করে কত দিনের দিছস?’ জবাবে তাকে বলা হয়, ‘ছয় দিনের ১০ করে।’ উত্তরে সুমন লেখেন, ‘তোরে না বলছি প্রতিদিন ১৫ করে দিতে?’ আরেকটি মেসেজে সুমন জানতে চেয়েছেন, ‘সকালে গাড়ি কয়টা এসেছে?’ জবাব আসে, ‘ওইদিকে ঝামেলা। কালকে দুইটা আসবে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনের সঙ্গে একবার ফোনে সংক্ষিপ্ত কথা হয়। চিনির ট্রাক আটকের ঘটনায় সে সময় তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ঘটনায় যদি আমার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। এতে তো কোনো সমস্যা নেই!’
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এই চোরাচালানে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘যারা চোরাই কারবারের জড়িত, তারা মূলত নামধারী ছাত্রলীগ। তারা কোনো পদ-পদবিতে না থাকায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ থাকে না।’
স্ক্রিনশট ভাইরাল হলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে বার বার কল করা হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল হীরার দাবি, মেসেজের স্ক্রিনশটগুলো সুমনের নয়।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এগুলো বানানো যায়। তা ছাড়া মেসেজের কোথাও কি লেখা আছে যে, কীসের গাড়ি? বৈধ চিনির গাড়ি, নাকি অবৈধ চিনির গাড়ি?’
অনেক আগে থেকেই সুমন ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শহরের সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়, টাকার বিনিময়ে উপজেলা কমিটির অনুমোদনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগ এনেছেন ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই।
দৃশ্যমান আয়ের উৎস না থাকলেও ছাত্রলীগের কমিটিতে নাম আসার পর সুমন বেশ বিত্তশালী হয়ে গেছেন। তার নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িতে বিলাস আর খরচের ছাপ স্পষ্ট।
স্থানীয়রা জানান, শহরের একাধিক এলাকায় জমি কিনেছেন মোল্লা সুমন। এর একটি জমির দামই নাকি কোটি টাকার বেশি।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় তিস্তা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজের তিন দিন পর আরেক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উপজেলার বজরা ইউনিয়নের জিগাবাড়ির চর এলাকায় তিস্তা নদীতে শনিবার সকালে শিশুটির মরদেহ ভাসতে দেখে স্বজনরা। পরে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।
প্রাণ হারানো আড়াই বছর বয়সী কুলসুম খাতুন সাতালস্কর গ্রামের কয়জর আলির মেয়ে। গত বুধবার রাতে মায়ের সঙ্গে দাওয়াত খেতে যাওয়ার পথে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয় সে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তিস্তা নদীর কোলায় বালুতে আটকে ছিল শিশুটি। দুই হাত পানির ওপরে ভাসতে দেখে স্বজন ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।’
তিনি জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছে। তারা হলেন পশ্চিম বজরার আনিছুর রহমান (৩০), তার স্ত্রী রুপালি বেগম (২৫), তাদের কন্যা সন্তান আইরিন (৯), ভাগ্নি হীরা মনি (৯), আজিজুর রহমানের ছেলে শামিম হোসেন (৫)।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় পশ্চিম বজরা এলাকার ২৬ জন যাত্রী নিয়ে আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৯ জন নদী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও সাতজন নিখোঁজ হয়। পরে ওই দিন তল্লাশি চালিয়ে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার আরও এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাকিদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আমাদের লোকজনও কাজ করছে।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক মা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তার সাত দিনের নবজাতককে নয় তলায় ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শহরের কমলপুর নিউ টাউন ফুল মিয়া সিটি এলাকায় একটি নয় তলা ভবনের নিচে ঝোপ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার মধ্যরাতে শিশুটি বাসা থেকে নিখোঁজ হয় বলে জানায় পরিবার।
প্রাণ হারানো সাত দিন বয়সী শিশুটির নাম তাসনিদ এহসান। তার বাবা উসমান গনি স্থানীয় সেন্ট্রাল হাসপাতালের মালিক ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক।
ভৈরব থানা ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নিজ হাতেই নবজাতক সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নবজাতকের মা তৃশা আক্তার ৯ তলার বেলকনির জানালা দিয়ে শিশুটিকে ফেলে হত্যা করে।
‘স্ত্রীকে আসামি করে মামলা করেছেন নবজাতকের পিতা চিকিৎসক উসমান গনি। বিল্ডিং থেকে পড়েই নবজাতকটির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটির মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
তিনি জানান, এ ঘটনায় তৃশা আক্তারকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে হত্যার আরও কারণ জানতে পুলিশ কাজ করছে।
শিশুটির নিখোঁজের বিষয়ে স্বজনরা জানিয়েছিলেন, সোমবার রাতে শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন মা। বাবা ছিলেন আরেক রুমে। ঘরে শিলা ও মিম নামে দুইজন গৃহকর্মীও ছিলেন। এ ছাড়াও সুমাইয়া নামের একজন নারী ছিলেন। তিনি শিশুটির মায়ের বান্ধবী। রাত তিনটার দিকে মা বিছানা থেকে উঠে দেখেন বাচ্চাটি নিখোঁজ। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তাৎক্ষণিক ভৈরব থানায় অভিযোগ দেয় শিশুটির পরিবার।
তারা আরও জানান, সকাল সাড়ে আটটার দিকে গৃহকর্মীর মাধ্যমে জানা যায় শিশুটিকে বাড়ির পাশে একটি ঝোপে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় দুই গৃহকর্মী, নবজাতকের মা ও তার বান্ধবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে যায় পুলিশ।
এ দিকে স্থানীয়রা জানান, ডা. উসমান গনির দ্বিতীয় স্ত্রী তৃশা। তাদের পরিবারে দেড় বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। সাত দিন আগে ডা. উসমান গনির মাধ্যমে সিজারিয়ান অপারেশনে নবজাতকের জন্ম হয়। প্রায় সময় তাদের বাসা থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া যেত।
নিহত শিশুর মা ওই দিন জানান, মধ্যরাতে কে বা কারা তার শিশু সন্তানটিকে নিয়ে গেছে তিনি জানেন না। তিনি বাথরুমে গেলে ১৫ মিনিট পর ফিরে সন্তানকে বিছানায় পাননি।
এ বিষয়ে বিল্ডিংয়ের কেয়ার টেকার আফজাল জানান, ‘ভোর ৫টার দিকে ডা. উসমান গনি জানান তাদের সন্তান কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। পরে কাজের মেয়ে জানায় যে বিল্ডিংয়ের অদূরে একটি ঝোপে বাচ্চাটি পড়ে আছে।’
ওই সময় ভৈরব থানা ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যার বিষয়টি রহস্যজনক। শিশুটির মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিল্ডিং থেকে ফেলা হয়েছে কি না বা মেরে ফেলে রাখা হয়েছে কি না তা বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনায় একই পরিবারের চারজন দগ্ধের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মারা যান ১৮ বছর বয়সী নারী ফুতু আক্তার।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাটারা থেকে নারী-শিশুসহ চারজন আমার এখানে এসেছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক নারী। তার শরীরের ৫৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল।’
এর আগে বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আয়ান নামে তিন বছরের এক শিশু। শিশুটির মা রকসি আক্তার ও তার নানা আব্দুল মান্নান দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তবে তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানান চিকিৎসক।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের নিচ তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
দগ্ধ রকসির দেবর আহমেদ মোস্তফা বলেন, ‘আমার ভাবীর ব্রেইন টিউমার হয়েছে। এ জন্য এ মাসের ১ তারিখে আমরা সপরিবারে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশে ওই ভবনের নিচ তলায় একটি বাসায় ভাড়া উঠি। সেখান থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল তাকে।’
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে রান্নাঘরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আমাদের পরিবারের চারজন দগ্ধ হন, পরে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য