বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া শাওনের বাড়িতে এখন শোকের মাতম।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের আশাপাশে শাওনের মরদেহের অপেক্ষায় ছিলেন তার স্বজনরা। আর বাড়িতে আহাজারি করছিলেন তার মা ফরিদা বেগম। কেঁদে কেঁদে বলছিলেন খুব কম সময়ের মধ্যেই তার পরিবারে ঘটে যাওয়া একাধিক মৃত্যুর কথা।
নিহত শাওন প্রধানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের পূর্ব গোপালনগর গ্রামে। মৃত সাহেব আলীর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে শাওন সবার ছোট। ফতুল্লার এনায়েতনগর এলাকায় একটি কারখানায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
ফরিদা বেগমের আহাজারি থেকে জানা যায়, দুই বছর আগেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শাওনের বোন হেনা আক্তার। এর এক মাসের মাথায়ই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বড় ভাই লিটন। আর ছয় বছর আগে মারা গিয়েছিলেন শাওনের বাবা।
একে একে পরিবারের সদস্যদের হারানোর কথা বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন শাওনের মা। বলছিলেন, ‘এডা কী হইল? হায়রে খোদা, আমার পুতেরে জানি কেমনে মারছে। রক্ত দিয়া বিলে বইরা গেছে। এটডা কি হইল আল্লাহ......।’
হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় শাওনের বড় আরেক ভাই মো. ফরহাদের সঙ্গে। তিনি জানান, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন শাওন। পরে বাড়ির পাশের একটা কারখানায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেন।
শাওনের ভগ্নিপতি নুরুল হক বলেন, ‘সকালে বাড়ি থেকে কাজে গেছিল ওই কারখানায়। দুপুরে শুনি তার বুকে গুলি লাগছে। হাসপাতালে আইসা দেখি রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। শাওন কেন শহরে আসল তা জানি না।’
জানা গেছে, ময়নাতদন্ত শেষ হলেও রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শাওনের মরদেহ বুঝে পাননি তার স্বজনরা।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক এস কে ফরহাদ জানান, পুলিশ মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করবে। নিহত শাওনের বুকের বাম পাশে একটি গুলির ছিদ্র পাওয়া গেছে।
সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক সাইদুজ্জামান জানান, সকালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। কারণ বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ বক্সসহ বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। আহত হন ২০ জন পুলিশ সদস্যও।
ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হবে বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক।
বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা ও মহানগর বিএনপি শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেখানে দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন মিছিল নিয়ে আসে। পরে সেখানে অবস্থান করা পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধে গেলে গুলিতে নিহত হন শাওন।
আরও পড়ুন:বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের গুলিতে মোকাররম হোসেন নামের এক জেলে নিহত হয়েছেন।
জলদস্যুরা ট্রলারসহ ১৯ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছেন।
মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া চ্যানেলে বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোকাররম হোসেন (৪৫) কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আজিমুদ্দিন সিকদারপাড়ার বাসিন্দা।
আহত অবস্থায় ফিরে আসা জয়নাল উদ্দিন নামের এক জেলে জানান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার মুহাম্মদ ইসমাঈলের মালিকানাধীন একটি ফিশিং ট্রলার ২১ জন জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার সময় বুধবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে অস্ত্রধারী জলদস্যুরা হামলা চালায় ট্রলারে। এতে মাঝি মোকাররম গুলিবিদ্ধ হন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর জলদস্যুরা আমাকে ও গুলিবিদ্ধ মাঝি মোকাররমকে আরেকটি ট্রলারে তুলে দেয়। পরে অন্যান্য জেলেসহ ট্রলারটি অপহরণ করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।’
ভুক্তভোগী এ জেলে জানান, গুলিবিদ্ধ জেলেকে অন্য ট্রলারের সহযোগিতায় উদ্ধার করে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁশখালী এলাকায় তার মৃত্যু হয়। জেলের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
মহেশখালী থানার ওসি কায়সার হামিদ জানান, বুধবার গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে জলদস্যুদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছেন।
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।
সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো তিনজন হলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আকবর আলী গাজীর ছেলে আরিজুল গাজী (২৮), সাতক্ষীরার তালা উপজেলার শামসুর কবিরের ছেলে আসাদুল ইসলাম ফকির (৫৫) ও তালার সুজনশাহ গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে আবদুস সেলিম (৩৫)।
বিসিক শিল্পনগরী এলাকার অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান কলেজ মসজিদের মোয়াজ্জিন জানান, তিনি ফজরের আজান দেয়ার জন্য মসজিদে প্রবেশ করার সময় বাইরে বিকট শব্দ হয়। আজান শেষে তিনি কলেজের দুই সিকিউরিটিকে নিয়ে বাইরে এসে দেখেন দুর্ঘটনাকবলিত তিনজন লোক রাস্তার ওপর পড়ে আছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ সরকার জানান, ঘটনাস্থলে ট্রাক কোম্পানি আইসারের লোগো পড়ে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে মোটরসাইকেল ও ট্রাকের সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ট্রাকটি দ্রুত পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নিহত তিনজনের দেহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ট্রাকটি চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই কলেজ ছাত্র প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন।
বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কের বটতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ আসার পথে ভানুগাছ বটতলা এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে একটি শিশু সিটকে পড়ে। এ সময় শিশুটিকে রক্ষা করতে অটোরিকশাটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন অটোরিকশাটির যাত্রী সায়েম মিয়া, অমিত সূত্রধর, জান্নাতুল ও শওকত দেব। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর চিকিৎসক সায়েম মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর অবস্থায় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক অমিত সূত্রধরকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সায়েম মিয়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার পূর্ব মাইজদী এলাকার কাশেম মিয়ার ছেলে এবং কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী। অমিত সূত্রধরও কমলগঞ্জ গণমহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী। আহত অপর দু’জনকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর সায়েম মিয়াকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে অমিত সূত্রধর মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আমুর নির্বাচনি এলাকা ঝালকাঠি ও নলছিটিতে অনেককে উল্লাস করতে দেখা যায়। জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন অনেকে।
বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও খোদ জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন রিজভী ঝালকাঠির বিভিন্ন জায়গায় মিষ্টি বিতরণ করিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ঝালকাঠিতে সরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের গড ফাদার ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়াণ তো আমির হোসেন আমু।
কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদের মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়া ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ সময় তাদের ব্যবহৃত দুটি বোট ও ১৩টি নৌকাসহ জালও নিয়ে গেছে তারা।
সোমবার বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অদূরে নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে ওইসব জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘আবারও বাংলাদেশের জলসীমানায় প্রবেশ করে মাছ ধরার ১৫টি নৌকাসহ ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি।
‘এর আগে মিয়ানমারের নৌবাহিনী বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন জেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় একজন জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এসব ঘটনায় টেকনাফে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনটি বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মাছ ধরার ট্রলারসহ ২০ জেলে ও মাঝি-মাল্লাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবহিত হয়েছি। এ ঘটনায় আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাদের ফেরত আনার চেষ্টা চলছে।’
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে নাফ নদ মোহনা হয়ে বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক জায়গায় মাছ ধরতে যাওয়া ১৫টি নৌকা মাছ শিকারে যায়। এ সময় মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সদস্যরা ওইসব নৌকা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে। এতে জেলেদের পরিবারের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ বলেন, ‘আমার এলাকার ১৫টি নৌকা নাফ নদে মাছ ধরতে গেলে তাদের ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। নৌকার মালিক পক্ষ থেকে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’
এর আগে ৯ অক্টোবর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে মাছ ধরার ছয়টি ট্রলারে ৫৮ জন জেলে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় জেলে ও মাঝি-মাল্লাদের অপহরণ করে সে দেশের নৌবাহিনী। সে সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিডবোট থেকে বাংলাদেশি একটি ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে এক জেলে নিহত ও দুই জেলে আহত হন। পরে আটক অন্য জেলেদের ফেরত দেয়া হয়। ওই ঘটনায় সে সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।
এছাড়া ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে ফেরত আনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আরও পড়ুন:নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে এক কিশোরী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
প্রাণ হারানো কিশোরীর বয়স ১৭ বছর।
পরিবারের অভিযোগ, কয়েক মাস ধরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিশোরীর ছবি ও ভিডিও ছড়াচ্ছিলেন তার সাবেক স্বামী হেলাল উদ্দিন সরদার (২৭)।
কিশোরীর বাবা জানান, আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় সোমবার রাতে অভিমান করে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। পরে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দুইটার দিকে মারা যায় সে।
কিশোরীর বাড়ি নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মালশন গ্রামে। অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন সরদারের বাড়ি একই উপজেলার আঁকনা গ্রামে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আঁকনা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী হেলাল উদ্দিন সরদারের সঙ্গে একই এলাকার মালশন গ্রামের ওই কিশোরীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সাত মাসের মাথায় কলহের জেরে গত ৭ জুলাই তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। তারপর থেকেই হেলাল ফেসবুকে একটি আইডি খুলে সেখানে তার সাবেক স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতে থাকেন।
পরিবার ও স্থানীয়রা আরও জানায়, শুধু ফেসবুকই নয়, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন হেলাল। এমনকি সাবেক স্ত্রীর হোয়াটসআ্যপে এসব ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে তাকে উত্যক্ত করেন তিনি। পরে কিশোরী তার ব্যবহৃত ফোনটি ভেঙে ফেলেন।
ঘটনাটি পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে জানাজানি হলে অভিমান করে সোমবার রাত আটটার দিকে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিশোরী। পরে পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়রা নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে রাত দুইটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কিশোরীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই হেলাল নানাভাবে বিরক্ত ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার নামে ফেসবুক আইডি খুলে নানা রকম ছবি ও ভিডিও পোস্ট করত। আমার মেয়েকেও হোয়াটসঅ্যাপে সেসব দিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলত, ‘তোর জীবন শেষ করে দিব।’ এসব জানাজানি হলে আমার মেয়ে সবার অজান্তে ঘরে বিষ খায়।
“হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মেয়েটা মারা যায়। এসব ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। অপমান ও অভিমানে মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে। হেলালসহ যারাই জড়িত থাক, তাদের সবার কঠিন শাস্তি চাই। আমরা থানায় মামলা করব।’
এদিকে ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিন সরদারের পরিবারের লোকজন। গ্রামের বাড়ি আঁকনাতে গিয়েও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত মালয়েশিয়াপ্রবাসী হেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
নওগাঁ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফজলুল হক নয়ন বলেন, ‘(কিশোরীকে) বিষ পান করার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা প্রদান করেছি।
‘পরবর্তীতে রাজশাহী বা বগুড়া নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলাম, তবে এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাণীনগর থানার ওসি তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘মালশন গ্রামের একজন বিষ পান করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
‘যেহেতু নওগাঁ সদর হাসপাতালে মারা গেছেন, যার কারণে সদর থানা পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:৩০ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় হরিপুরের সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ৭ নম্বর গ্যাসকূপ। তারপর চলতি বছর এ কূপে পুনর্খনন করে নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর এবার জাতীয় গ্রিড লাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে সঞ্চালন শুরু হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সোমবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত করা হয় এ কূপের গ্যাস। এর ফলে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৮ মিলিয়ন (৮০ লাখ) ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হচ্ছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জাতীয় গ্রিডে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে আসছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড। এবার আরও ৮ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়ল।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৮৬ সালে এই কূপ খনন করা হয়। ১৯৮৭ সাল থেকে ২ হাজার মিটার গভীরে তেল পাওয়া যায়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেল উৎপন্ন করা হয়। এরপর ২০০৪ সালে ওয়ার্ক ওভার করে ১৯০০ মিটার গভীরে গ্যাস মেলে। গত জুন মাসে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
‘জুলাইয়ে ফের ওয়ার্ক ওভারে গেলে ১২০০ মিটার গভীরে ৯০ থেকে ৯৫ বিলিয়ন কিউসেক ঘনফুট গ্যাসের মজুত পাওয়া যায়। এ গ্যাস আগামী ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত উত্তোলন করা যাবে।’
মন্তব্য