ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের শাল্লার ঝুমন দাসকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর বুধবার দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠনোর আদেশ দেন বিচারক।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘সাইয়েদ মাহবুবুল ইসলামের আদালতে ঝুমন দাস স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচারক পরে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।’
ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার দেয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে তাকে হেফাজতে নেয় শাল্লা থানা পুলিশ। প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তারের পর ঝুমনের ভাই নূপুর দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়ার অভিযোগে পুলিশ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তাকে থানায় নিয়ে যায়। এর আগে দুই দিন ধরে তাকে ফলো করছিল পুলিশ। তার মোবাইল পুলিশ নিয়ে গেছে এবং কিছু পোস্ট রিমুভ দিয়েছে।
‘সন্ধ্যায় ঝুমনের স্ত্রী থানায় গেলে তাকে জানানো হয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঝুমনকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু মধ্যরাতে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’
এর আগে গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক এতে বক্তব্য দেন।
এই সমাবেশের পরদিন ১৬ মার্চ মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের ঝুমন দাস। স্ট্যাটাসে তিনি মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন।
মামুনুলের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা বলে এলাকায় প্রচার চালাতে থাকেন তার অনুসারীরা। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পরদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সকালে কয়েক হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে হামলা চালায় নোয়াগাঁও গ্রামে। তারা ভাঙচুর ও লুটপাট করে ঝুমন দাসের বাড়িসহ হাওরপাড়ের হিন্দু গ্রামটির প্রায় ৯০টি বাড়ি, মন্দির। ঝুমনের স্ত্রী সুইটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়।
এরপর ২২ মার্চ ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম।
শাল্লায় হামলার ঘটনায় শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম, স্থানীয় হাবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ও ঝুমন দাসের মা নিভা রানী তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় প্রায় ৩ হাজার আসামি। পুলিশ নানা সময়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই এখন জামিনে।
শুধু জামিন পাচ্ছিলেন না ঝুমন দাস। বিচারিক আদালতে পাঁচ দফা তার জামিন আবেদন নাকচ করেন বিচারক। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছিল।
এর মধ্যে জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন ঝুমন দাস। কারাবন্দির ছয় মাস পর ২৮ সেপ্টেম্বর শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
আরও পড়ুন:আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। উপজেলা ভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
ইসি সচিব বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দপ্তর, মন্ত্রণালয় সচিব, সিনিয়র সচিব ও দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় বসেছিল কমিশন। সভার মূল বিষয় ছিল, যার যেটা করণীয় সেটা সবাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যেন যত্ন সহকারে করেন।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনী ও জনপ্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা যাতে এই নির্বাচনটা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে আরও সুন্দর ও স্বার্থকভাবে আয়োজন করেন, এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আমরা মূলত যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে থাকি, এই নির্বাচনে তার চেয়ে অধিক পরিমাণে মোতায়েনের প্রচেষ্টা করা হবে। যেহেতু উপজেলা নির্বাচন চার ধাপে সম্পন্ন হবে, জেলা পর্যায়ে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও জনপ্রশাসনের সদস্য রয়েছে, তারা ওখানেই ধাপে ধাপে দায়িত্ব পালন করবে। তারা বলেছে, তাদের জনবলের ঘাটতি হবে না।
জাহাংগীর আলম বলেন, উপজেলাভিত্তিক বিজিবি মোতায়েন করা হবে। উপজেলা ভেদে দুই থেকে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। জনবলের সংখ্যা উপজেলাভিত্তিক বাড়িয়ে দেয়া হবে।
বড় দল আসবে না, এর প্রভাব ভোটে থাকবে কি-না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, তারা যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংসতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেনি। দলীয় প্রতীক ছাড়া অনেক দল অংশ নিয়েছে তাই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। একই দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যেসব দল নির্বাচন বর্জন করেছে তাদেরও কিছু কিছু অনুসারীরা এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাই কমিশন আশা করে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম নেয়া হবে যাতে নির্বাচনে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যেতে পারেন, যাতে নির্বাচনে তাদের মতামত প্রতিফলিত হয়।
অন্য এক প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, আইনিভাবে যার ভোটে অংশ নেয়ার যোগ্যতা রয়েছে তিনি ভোটে অংশ নিতে পারেন। এখানে কোনো আইনি বাধা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় জনপ্রতিনিধি যারা আগে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের নিকট আত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা তো আইন না, একটি দলীয় ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একত্রিত করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা চাই অধিক সংখ্যক প্রার্থী আসবে। জনপ্রশাসন সমন্বিতভাবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবে। যত প্রার্থী আসবে স্থানীয় নির্বাচন তত সুষ্ঠু হবে বলে মনে করি।
কুমিল্লার বুড়িচং সীমান্তে ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হয়েছেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চড়ানল তেঁতুলতলা সীমান্তে সোমবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত বিল্লাল হোসেন (২৮) রাজাপুর ইউনিয়নের লড়িবাগ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ভারত থেকে অবৈধ পথে চিনি ও অন্য পণ্য ওঠা-নামার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সোমবার রাত ৮টার দিকে তেঁতুলতলা সীমান্ত দিয়ে আসা চিনি নামানোর সময় বিএসএফের সদস্যরা গুলি করে তাকে। তার শরীরে ৩০টির মতো ছররা (ছোট গুলি) গুলি লাগে।
পরে বিল্লালকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। গুলিতে তার চোখ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন জানান, গুলিতে আহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে বিজিবি বলতে পারবে।
বিজিবির সংকুচাইল বিওপির কামান্ডার ফারুক কামাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক কেজি স্বর্ণসহ তিন যাত্রীকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার সকালে এনএসআই ও কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করেন।
আটককৃতরা হলেন- কক্সবাজারের মোবারক আলী, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মো. নাজমুল হক ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের আনোয়ার মোহাম্মদ শাহ।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ জানান, ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-১৪৮ ফ্লাইটটি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। আটক তিনজন কাপড় ও কম্বলে করে এক কেজির বেশি ওজনের সোনা নিয়ে আসেন। তাদের সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে এনএসআই ও সিআইআইডির সদস্যরা তাদের আটক করেন।
আটক তিনজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয় বলেও তিনি জানান।
নাটোরের সিংড়ায় নিজ ভাতিজিকে ধর্ষণের পর হত্যার মামলায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম সোমবার দুপুরে এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত শাহাদত একই উপজেলার দেওগাছা উত্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি আনিসুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট ১৬ বছরের এক কিশোরী ও ছোট তার দুই ভাই-বোনকে বাড়িতে রেখে তাদের পরিবারের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী পাকুয়া গ্রামে যায়। কিশোরীর ছোট দুই ভাই-বোন স্কুলে যাওয়ায় পর বাড়িতে কেউ না থাকায় তার আপন চাচা শাহাদত বাড়িতে প্রবেশ করেন। পরে অভিযুক্ত শাহাদত তার ভাতিজিকে ধর্ষণ করেন।
এ সময় কিশোরী সেই ঘটনা সবাইকে জানিয়ে দেয়ার কথা বললে শাহাদত তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
তিনি জানান, নিহতের দুই ভাই-বোন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে তার বোনকে মৃত দেখলে শাহাদত দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে শাহাদতকে ধরে সংঘবদ্ধ পিটুনি দিলে তিনি তার ভাতিজিকে ধর্ষণের পর হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এ ঘটনায় নিহত কিশোরীর মা শাহাদতের নামে সিংড়া থানায় মামলা করেন। রায় ঘোষণার সময় সোমবার অভিযুক্ত শাহাদত আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকালে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করেছেন আফজাল হোসেন নামে এক আনসার সদস্য। তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সোমবার বিকেল ৫টার দিকে বন্দরের মদনগঞ্জে উপজেলা কার্যালয়ের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী আনসার সদস্যরা আফজালকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানে অপারেশন চলাকালীন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান তিনি।
নিহতের সহকর্মী আনসার সদস্য মোহাম্মদ মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (সোমবার) বিকেলে বন্দরের ইউএনও স্যারের ডিউটি চলাকালীন সে নিজের মাথায় শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসি।
‘আমরা জানতে পেরেছি যে সে আত্মহত্যা করেছে। তার বাবার নাম ওয়াহিদুর রহমান। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে।’
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ মিয়া বন্দর থানার ওসির বরাত দিয়ে জানান, নিহত আনসার সদস্য বন্দর ইউএনওর গার্ড ছিলেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে।’
বন্দর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আনসার সদস্য আফজাল হোসেন শটগান দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, আফজাল বন্দর থানার ইউএন এম এ মুহাইমিন আল জিহানের দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সোমবার বিকেলে উপজেলার ভেতরে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তিনি তার অস্ত্র দিয়ে নিজের মাথায় পুলিশ করেন। গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজনসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটে আসেন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ইউএনও এম এ মুহাইমিন আল জিহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আফজালের ডিউটি শুরুর আধ ঘণ্টা পর এ ঘটনা ঘটে। সে তার সার্ভিস শটগান দিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে। ঘটনার সময় আমি আমার বাসভবনে ছিলাম না। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় সে পড়ে আছে।
‘দ্রুততার সঙ্গে তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। শটগানটি ও একটি গুলির খোসা জব্দ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।’
সাত বছর আগে সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর সুবর্ণা নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আটজন যুবক ও কিশোর মিলে পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সুবর্ণাকে হত্যা করে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
ইতোমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চৌহালী উপজেলার দত্তকান্দি গ্রামের ২০ বছর বয়সী মো. সাব্বির হোসেন এবং একই গ্রামের ২১ বছর বয়সী মো. শাকিব খান।
সাব্বির ও সাকিব দুজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোমহর্ষক এ ঘটনার বিবরণ দেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৭ মার্চ সকালে চৌহালী উপজেলার মধ্য শিমুলিয়ার চর থেকে সুবর্ণার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সুবর্ণার বাবা মো. শুকুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন দেন। এরপর মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।
‘২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর পিবিআই এসআই আশিকুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ এপ্রিল ভিকটিমের ফুফাতো ভাই মো. সাব্বির হোসেনকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যে ওই দিনই দত্তকান্দি শোলে বাজার থেকে শাকিব খানকে আটক করা হয়।’
এর আগে এ ঘটনার নায়ক মিলন পাশাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তার কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘তবে গ্রেপ্তার সাব্বির ও শাকিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসে।
‘জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে তারা দুজনসহ আরও ছয়জন দত্তকান্দি হাইস্কুল মাঠে যায়। সেখানে সুবর্ণাকে তার ফুফাতো ভাই সাব্বিরের সঙ্গে খেলতে দেখে। তখনই তারা সুবর্ণাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী মিলন পাশা ও সাকিবসহ বাকি আসামিরা সাব্বিরকে বলে তার মামাতো বোন সুবর্ণাকে মধ্যশিমুলিয়ার চরে নিয়ে যেতে। সন্ধ্যার পর সাব্বির ও শাকিব মিলে সুবর্ণাকে কৌশলে মধ্যশিমুলিয়ার চরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই বাকি আসামিরা অবস্থান করছিল। এরপর সুবর্ণার হাত-পা চেপে ধরে আটজন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সুবর্ণা নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাটি সবাইকে বলে দেয়ার কথা বলে। এ অবস্থায় আসামিরা নিজেদের বিপদের কথা চিন্তা করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সুবর্ণার গলায় তারই ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর শরীরে মাটি ছিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।’
পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওদিকে পরিবারের লোকজন চিন্তা করে, সুবর্ণা ওই স্কুলের পাশে তার ফুফুর বাড়িতেই আছে। এ জন্য শুরুতে তারা খোঁজাখুঁজিও করে নাই। পরদিন তার মরদেহ পাওয়া যায়।
‘পিবিআই তদন্তকালে সুরুতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখে সুবর্ণাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার গোপনাঙ্গে রক্ত দেখে তা আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তার পরণের পোশাকে সিমেনের (বীর্য) নমুনা পাওয়া যায়। এতেই নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সুবর্ণাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার।
চট্টগ্রামে হিটস্ট্রোকে এক যুবক মারা গেছেন। তার নাম শুকুর আলী। পুলিশ বলছে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে মৃত্যুর কারণ।
সোমবার নগরীতে চলাচল করা একটি টেম্পু কর্নেল হাট শ্যামলী বাস কাউন্টারের সামনে পৌঁছলে টেম্পুটি থামিয়ে সেখান থেকে নিস্তেজ অবস্থায় এক যাত্রীকে ধরাধরি করে নামিয়ে আনেন অন্য যাত্রীরা। পরে খবর দেয়া হয় পাহাড়তলী থানা পুলিশকে।
শুকুর আলী লক্ষ্মীপুর জেলার দালাল বাজারের হাজীবাড়ির মৃত মানিক মিস্ত্রির ছেলে। তিনি সীতাকুণ্ডে জলিলের সিডিএ এলাকার বুলু মেম্বারের ভাড়া ঘরে থাকতেন।
কর্নেল হাট শ্যামলী বাস কাউন্টারের বাবুল আহমদ বলেন, ‘ছেলেটি টেম্পুতে মনে হয় সিটি গেটের দিকে কোথাও যাচ্ছিল। গরমে নাকি হাসফাঁস করছিল। আমার কাউন্টারের সামনে এসে ছেলেটা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওরা কাউন্টারের সামনে গাড়ি ব্রেক করে নামিয়ে তাকে শুইয়ে দেয়। সেখানে পরক্ষণেই সে মারা যায়। পরে আমরা পুলিশে খবর দেই।’
পাহাড়তলী থানার ওসি মোহাম্মদ কেপায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্নেল হাট এলাকায় এক যাত্রীর মৃত্যু খবর পেয়ে আমার অফিসার ঘটনাস্থলে যায়। পরে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
‘প্রথমে তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ফেসবুকে বিষয়টি পোস্ট করার পর তার মামা আসেন। তার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। বাড়ি লক্ষ্মীপুরে।’
মন্তব্য