দেশে গুম-খুন এবং ভোট কারচুপি নিয়ে সরকারকে বিএনপি যে ক্রমাগত আক্রমণ করে আসছে, তার জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গুমের শুরু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। সে সময় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হদিস আজও মেলেনি।
আন্তর্জাতিক গুম দিবসে মঙ্গলবার বিএনপির নেতারা যখন নানা কর্মসূচিতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষদের পেছনে সরকারের হাত থাকার অভিযোগ করছিলেন, সে সময় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।
জাতীয় শোক দিবস স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গুম-খুনের কথা বলে। গুম-খুন তো এ দেশে সৃষ্টি করেছে জিয়াউর রহমান। আমাদের মহানগর ছাত্রলীগের মফিজ বাবুকে যে তুলে নিয়ে গেল, কই তার লাশ তো এখনও তার পরিবার পায়নি। ঠিক এভাবে সারা বাংলাদেশে আমাদের অনেক নেতাদেরকে হত্যা করেছে।’
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করতে গেছি কীসের জন্য? গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা তো ছিল ক্যান্টনমেন্টে বন্দি। মানুষের কাছে তো আর ক্ষমতা ছিল না। গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের শক্তি। মানুষের কাছে ছিল না, ছিল ক্যান্টনমেন্টে আটকা।’
ভোট কারচুপির অভিযোগের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কারচুপি সৃষ্টিই তো করেছে জিয়াউর রহমান। তারপর একের পর এক যারা এসেছে উর্দি পরে ক্ষমতায় বসে দল বানিয়েই উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের গালি দিয়েই তো ক্ষমতায় গেছে। তো দেশের উন্নতিটা করবে কোথায়?’
আওয়ামী লীগ বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশের মানুষের সমর্থন ও ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি বলেই তো আজকে দেশটাকে আমরা উন্নতি করতে পেরেছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
১৫ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয় পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় পোডিয়ামে দাঁড়ানো শেখ ফজলুল হক মনির দুই ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে পাশে এনে দাঁড় করান।
বলেন, ‘আর সেই হত্যার পর বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজকে অনেকের অনেক কথা শুনি। আমি এখন সরকারে আছি। মানবাধিকারের কথা শোনায়, মানবাধিকার নিয়ে আমাদেরকে তত্ত্ব, জ্ঞান দেয়। এ রকম তো কতজনের কথা শুনি। আমার কাছে যখন এই কথা বলে, দোষারোপ করে তারা কি একবার ভেবে দেখে আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল, যারা আমরা আপনজন হারিয়েছি। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমরা কেঁদে বেড়িয়েছি।’
সে সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারসংশ্লিষ্ট সবাই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও প্রতি আমি কোনো দোষারোপও করি না, কিছুই করি না। কিন্তু বাংলাদেশে তো এই ঘটনা ঘটেছে। এটা তো আপনাদের মনে রাখতে হবে।
‘আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, আমরা তো হারিয়েছি। কিন্তু আমি যখন চিন্তা করি আমার দেশ কী হারিয়েছিল, এই বাঙালি জাতি বাঙালি হিসেবে মর্যাদা পাবে, এই বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, একটি জাতি, বাঙালি জাতি—বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন।’
বাঙালি কখনও তাকে হত্যা করতে পারে এটা বঙ্গবন্ধু কখনও বিশ্বাস করতেন না বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আর এই বিশ্বাসঘাতক যারা, আজকে যখন তাদের দল হয়ে গেছে, তাদের লোক হয়ে গেছে, তারা বড় বড় কথা বলে। আজকে আপনারা দেখছেন, সারা পৃথিবীজুড়ে কিছু লোক আছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা রকম অপকর্ম করে যাচ্ছে। এরা কারা? যারা এই দেশে বিভিন্ন অপরাধ করে দেশ থেকে ভেগেছে, হয় যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার আমরা করেছি তাদেরই ছেলেপেলে, ১৫ আগস্টের খুনি যাদের আমরা বিচার করেছি তাদেরই আপনজন আর কিছু অপরাধী যারা এখান থেকে অপরাধ করে পালিয়ে যেয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করে বেড়াচ্ছে। কাজেই এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন মানুষ বিভ্রান্ত না হয়।’
‘কী ছিল বিএনপির আমলের অবস্থা?’
বিএনপির শাসনামালে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বর্তমান সরকারের টানা এক যুগে দেশের বদলে যাওয়ার কথাও বলেন।
তিনি বলেন, ‘যতই আপনি উন্নতি করেন আর যা-ই করেন কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না। কোনো কিছু তারা ভালোভাবে দেখতে পারে না। কী অবস্থা ছিল ঢাকা শহরের বিএনপির আমলে?’
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের এই পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা যুদ্ধাপরাধী বা সেই যুদ্ধাপরাধীদের আওলাদ যারা আছে তারা, ১৫ আগস্টের ঘাতকে যারা পরিকল্পনা করেছে তারা এবং স্বাধীনতাবিরোধী—এদেরই প্রচেষ্টা সব সময় বাংলাদেশকে টেনে নিচে নামান।’
‘বিদ্যুতের সংকট ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে’
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী গত দুই মাসের সংকট নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো একে তো করোনা। এই করোনার সময়ে মহামারি, অতিমারির কারণে যেখানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধের সঙ্গে হলো আমেরিকার স্যাংশন। আমেরিকা স্যাংশন দিয়ে রাশিয়ার কতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছে আমি জানি না, কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, এমনকি আমেরিকার মানুষকেও’
উন্নত দেশগুলো এই সংকটকালে ধুঁকছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড—প্রত্যেকটা দেশ উন্নত দেশ, বিদ্যুতের অভাব। নির্দেশ দেয়া হয়েছে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। পানির অভাব। ইংল্যান্ডে তো বলে দিয়েছে রোজ গোসল করতে পারবে না, রোজ কাপড় ধুতে পারবে না, অল্প সময়ের জন্য করতে পারবে।
‘জার্মানিতে গরম পানি ব্যবহার করতে পারবে না কেউ। কারণ, বিদ্যুতের অভাব, পানির অভাব। আগামী শীতকালে তাদের কী অবস্থা হবে সেটা নিয় শঙ্কিত তারা সবাই। আমেরিকাতেও একই অবস্থা, তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে। খাবারের দাম বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বের খাদ্যের অভাব। সমগ্র বিশ্বে খাদ্যের অভাব। ইংল্যান্ডের মানুষ যারা তিন বেলা খেত, এক বেলার খাবার বাদ দিতে হয়েছে তাদেরকে। তারা এখন মাত্র দুই বেলা খেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বেজুড়ে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। যুদ্ধের তো এটাই ফলাফল। স্যাংশনের তো এটাই রেজাল্ট। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জ্বালানি সাশ্রয়, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে শুরু করে পানি ব্যবহারে, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সবাইকে কিন্তু সাশ্রয়ী হতে হবে। এক ফোঁটা পানি যেন অতিরিক্ত (খরচ) না হয়।
‘আমরা যদি এখন থেকে সাশ্রয়ী না হই, আগামী দিনে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা সৃষ্টি হয়েছে তার ধাক্কায় আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সারা বিশ্বব্যাপী কিন্তু দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। কিন্তু আমাদের যেহেতু মাটি আছে, মানুষ আছে, আমাদের মাটি উর্বর, এ জন্য আমি সবাইকে আহ্বান করেছি যার যতটুকু জমি আছে, যে যা পারেন নিজেরা উৎপাদন করেন। যাতে বিশ্বের খাদ্য মন্দাটা আমাদের ওপর এসে না পড়ে।
‘যেটা আমরা আমদানি করতে পারব না, তার বিকল্প দেশে উৎপাদন করে যেন আমরা আমাদের ক্ষুধা নিবৃত করতে পারি, সে জন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
জ্বালানি তেলের দরবৃদ্ধির ব্যাখ্যা
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তেল আমরা বেশি দামে কিনি। কম দামে এখানেই দিই, ভর্তুকি দিই। কিন্তু সেই তেল প্রতিবেশী দেশে চলে যায়। যার জন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়াতে হয়েছে সত্য। তারপরও আমাদের চেষ্টা আছে যে মানুষের কষ্টটা দূর করার।
‘গতকাল আপনারা জানেন, অনেক হিসাব-নিকাশ করে আমরা দেখলাম যে স্মাগলিংটা বন্ধ হয়ে গেছে, আমরা কিছু সাশ্রয় করতে পারছি, আমরা তেলের দাম ইতিমধ্যে ৫ টাকা করে কমিয়ে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য সব সময় মানুষের দিকে তাকানো।’
আরও পড়ুন:কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় তিন বহিরাগতকে অস্ত্রাগার পরিদর্শনের সুযোগ ও ফেসবুকে তা সরাসরি সম্প্রচারের ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত ৯ এপ্রিল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়।
অবসরে যাওয়া ওই কর্মকর্তা হলেন মো. শাহেদ ফেরদৌস রানা। তিনি পুলিশের খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে নিয়োজিত ছিলেন।
২০২০ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকা এসপিবিএন–১ এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনের সময় দুজন পুলিশ পরিদর্শক ও তিনজন উপপরিদর্শকের সহায়তায় তিনজন বহিরাগত ব্যক্তিকে অস্ত্রাগার পরিদর্শনের সুযোগ করে দেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় এসপি শাহেদ ফেরদৌস তিনজন বহিরাগত ব্যক্তিকে অস্ত্রাগার পরিদর্শন করানো, অস্ত্রের বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে তা সরাসরি সম্প্রচারের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
এতে বলা হয়, পরে এ ঘটনায় কয়েক দফায় তদন্ত এবং শাহেদ ফেরদৌসের জবাব নেয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিধিমতে সাক্ষ্য, সাক্ষীদের জেরা, উপস্থাপিত ভিডিওসহ সব দলিল পর্যালোচনা সরেজমিনের তদন্ত করার পর তার বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে ওই কর্মকর্তাকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর’ দেয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে বারুনীর মেলায় রাতভর জুয়ার আসর চালানোর অভিযোগে জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যের নামে মামলা করা হয়েছে।
সাদুল্লাপুর থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বুধবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে ওই ইউপি সদস্যের নামে সাদুল্লাপুর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে জুয়া আইনে মামলা করেন।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম আল-আমিন সরকার, যিনি সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
জামালপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুরে গত ১৫ এপ্রিল রাতে বারুনীর মেলা উপলক্ষে জামুডাঙ্গা গ্রামের গোলজারের বাড়ির সামনে জুয়া বসান আল-আমিন।
জুয়ার আসরের একটি ভিডিও এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
জুয়া খেলার সময় প্রত্যক্ষদর্শী একজনের ধারণ করা ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, জুয়ার বোর্ডে বসে আল-আমিন নিজেই গুনে গুনে টাকা নিচ্ছেন।
ইউপি সদস্যের জুয়ার আসর বসানোর ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে নানা সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলে কল করে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আল-আমিন সরকার তার নেতৃত্বে জুয়া বসানোর বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি মেলা উপলক্ষে জুয়ার আসরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি জুয়ার আসরে ছিলাম, কিন্তু জুয়া আমি বসাইনি।’
মামলার বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কল্যাণপুরের বারুনীর মেলায় জুয়া খেলার অভিযোগে সোমবার রাতে অভিযান চালিয়ে সাত জুয়াড়িকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
‘এই জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগে ইউপি সদস্য আল-আমিনের বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা করা হয়েছে, তবে ঘটনার পর থেকে আল-আমিন পলাতক। তাই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জ পৌরসভায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইয়ের হাতাহাতিতে একজন নিহত হয়েছেন।
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো কমল রায় (৬২) মানিকগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বদাশড়া এলাকার প্রয়াত কৃষ্ণ রায়ের ছেলে। এ ঘটনায় ছোট ভাই মিঠু রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
স্বজন ও স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে কমল রায়ের সঙ্গে ছোট ভাই মিঠু রায়ের কথাকাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। হাতাহাতিতে বড় ভাই কমল রায় অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি হাবিল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
‘এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিঠু রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সেলিম ও শফিউল আলম নামে দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গত ইউপি নির্বাচনের সৃষ্ট বিরোধের জের রয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়ায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম ওই এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে। অপরজন শফিউল আলম একই এলাকার আবু সালামের ছেলে।
নিহত সেলিমের পিতা নুর মোহাম্মদ জানান, স্থানীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহেদুল ইসলাম ও সেলিমের মধ্যে গত ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মানিকপুর উত্তরপাড়া বাজার এলাকার নবীন ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ভাড়াটে সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালায় নিহতদের ওপর।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত সেলিমকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরজন শফিউল আলমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে নেয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শফিউল আলমের মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনে সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক।
প্রসঙ্গত, বিগত ইউপি নির্বাচনে বর্তমান মেম্বার জাহেদুল ইসলামের সঙ্গে সেলিম ও শফিউল আলমের বড় ভাই শামসুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের দিন দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার জের ধরে এই জোড়া হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নিহত দুজনই একটি হত্যা মামলার আসামি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লার হোমনায় এক নারীকে তার ছেলে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের লালবাগ এলাকায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাণ হারানো রায়জুলের নেসা (৬৫) হোমনা থানার নিলখী ইউনিয়নের লালবাগ এলাকার প্রয়াত চাঁদ মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় ছেলে আবুল হোসেনকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ।
হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আবুল হোসেন তার মাকে নিয়ে একই ঘরে থাকতেন। মঙ্গলবার রাতে তিনি তার মায়ের সঙ্গে ছিলেন।
তিনি জানান, রায়জুলের নেসার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের সময় ছেলে আবুল হোসেন ঘরে ছিলেন না। পরে সকালে পুলিশ তাকে আটক করে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ওই ছেলে তার মায়ের সঙ্গে একাই থাকত। তাই আমরা তদন্তের স্বার্থে তাকে আটক করেছি। মরদেহ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান।’
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে পা ভেঙে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার পুঁইবিল গ্রামে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি মানিক হোসেনকে গুরুতর অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মারধরের সময় তার মোটরসাইকেল ও মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়। মানিক ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের চক লক্ষীকোল গ্রামের দুগ্ধ ব্যবসায়ী রাজীব আহমেদ এবং কৈডাঙ্গা গ্রামের আবুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে নকল দুধ তৈরির করে বাজারজাত করে আসছেন। এ নিয়ে কিছুদিন আগে মানিক হোসেনসহ কয়েকজন সাংবাদিক নকল দুধ তৈরির ভিডিও ধারণ করেন।
এসব ভিডিও উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে দেখালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মতবিনিময় সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজের বক্তারা এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।
পরে এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিব আহমেদ ও আবুল বাশারের নেতৃত্বে বায়েজিদ, রাজিব ও মাহাতাবসহ ১০ থেকে ১২জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী মঙ্গলবার সকালে পুঁইবিল সড়কে মানিককে একা পেয়ে পিটিয়ে পা ভেঙে দেযন।
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মানিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। অবস্থা মুমূর্ষু হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা মানিককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
আহত প্রতিনিধি মানিক বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের পর থেকে নকল দুধ তৈরির ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে কয়েকদিন হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় আমাকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছে এবং সেই পেটানোর ভিডিও করেছে তারা। আমার মোটরসাইকেল ও মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। আমি আমার পরিবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ইকরামুন নাহার শেলী বলেন, ‘এক্সরেতে দেখা যায় মানিকের পায়ের হার ডিসপ্লেস হয়ে গেছে। এর চিকিৎসা ভাঙ্গুড়ায় সম্ভব নয়। তাই পাবনা পাঠানো হয়েছে।’
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এ বিষয়ে মামলা রুজু হলে আসামিদের আটক করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া নকল দুধ তৈরির বিষয়টি বর্তমানে খুবই আলোচিত। এ বিষয়েও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এক নারীর সঙ্গে বরগুনার তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠুর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আপত্তিকর ভিডিওতে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অস্তিত্ব টের পাওয়ায় ও মেয়াদ সংক্রান্ত ইস্যু থাকায় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’
এদিকে নিউজবাংলার হাতে আসে ফাঁস হওয়া ভিডিওটি। সেখানে মিঠুর সঙ্গে আরও তিনজনকে দেখা যায়।
তারা তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি-উল-কবির, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু, পঁচা কোড়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।
ভিডিও ফাঁসের পর বরগুনার তালতলী থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটির বাদী নিশানবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চুও ছিলেন ওই ভিডিওতে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদীর ( কামরুজ্জামান বাচ্চু) সঙ্গে ওই নারীর আগে থেকেই পরিচয় ছিল। ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তার সঙ্গে লঞ্চে যাত্রার ওই পরিকল্পনা হয়।
ইতোমধ্যে ওই নারীকে পর্নোগ্রাফির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ দিকে তালতলী থানায় করা ওই মামলার আসামি দুইজন। ওই নারী এবং জাহিদুল ইসলাম সবুজ নামে এক ব্যক্তি। ইতোমধ্যে সবুজকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সবুজের স্ত্রী মেহেরুন মিমের দাবি, ধর্ষণের বিচার চাওয়ায় ঈদের দিন বিকেলে তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য