দেশে গুম-খুন এবং ভোট কারচুপি নিয়ে সরকারকে বিএনপি যে ক্রমাগত আক্রমণ করে আসছে, তার জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গুমের শুরু বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। সে সময় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হদিস আজও মেলেনি।
আন্তর্জাতিক গুম দিবসে মঙ্গলবার বিএনপির নেতারা যখন নানা কর্মসূচিতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষদের পেছনে সরকারের হাত থাকার অভিযোগ করছিলেন, সে সময় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।
জাতীয় শোক দিবস স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গুম-খুনের কথা বলে। গুম-খুন তো এ দেশে সৃষ্টি করেছে জিয়াউর রহমান। আমাদের মহানগর ছাত্রলীগের মফিজ বাবুকে যে তুলে নিয়ে গেল, কই তার লাশ তো এখনও তার পরিবার পায়নি। ঠিক এভাবে সারা বাংলাদেশে আমাদের অনেক নেতাদেরকে হত্যা করেছে।’
দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করতে গেছি কীসের জন্য? গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা তো ছিল ক্যান্টনমেন্টে বন্দি। মানুষের কাছে তো আর ক্ষমতা ছিল না। গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের শক্তি। মানুষের কাছে ছিল না, ছিল ক্যান্টনমেন্টে আটকা।’
ভোট কারচুপির অভিযোগের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কারচুপি সৃষ্টিই তো করেছে জিয়াউর রহমান। তারপর একের পর এক যারা এসেছে উর্দি পরে ক্ষমতায় বসে দল বানিয়েই উর্দি খুলে রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের গালি দিয়েই তো ক্ষমতায় গেছে। তো দেশের উন্নতিটা করবে কোথায়?’
আওয়ামী লীগ বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে দেশের মানুষের সমর্থন ও ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়েছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত হয়ে সরকারে এসেছি বলেই তো আজকে দেশটাকে আমরা উন্নতি করতে পেরেছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
১৫ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয় পড়েন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় পোডিয়ামে দাঁড়ানো শেখ ফজলুল হক মনির দুই ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশকে পাশে এনে দাঁড় করান।
বলেন, ‘আর সেই হত্যার পর বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আজকে অনেকের অনেক কথা শুনি। আমি এখন সরকারে আছি। মানবাধিকারের কথা শোনায়, মানবাধিকার নিয়ে আমাদেরকে তত্ত্ব, জ্ঞান দেয়। এ রকম তো কতজনের কথা শুনি। আমার কাছে যখন এই কথা বলে, দোষারোপ করে তারা কি একবার ভেবে দেখে আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল, যারা আমরা আপনজন হারিয়েছি। স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমরা কেঁদে বেড়িয়েছি।’
সে সময় বঙ্গবন্ধু পরিবারসংশ্লিষ্ট সবাই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারও প্রতি আমি কোনো দোষারোপও করি না, কিছুই করি না। কিন্তু বাংলাদেশে তো এই ঘটনা ঘটেছে। এটা তো আপনাদের মনে রাখতে হবে।
‘আমরা যারা স্বজন হারিয়েছি, আমরা তো হারিয়েছি। কিন্তু আমি যখন চিন্তা করি আমার দেশ কী হারিয়েছিল, এই বাঙালি জাতি বাঙালি হিসেবে মর্যাদা পাবে, এই বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, একটি জাতি, বাঙালি জাতি—বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন।’
বাঙালি কখনও তাকে হত্যা করতে পারে এটা বঙ্গবন্ধু কখনও বিশ্বাস করতেন না বলেও জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আর এই বিশ্বাসঘাতক যারা, আজকে যখন তাদের দল হয়ে গেছে, তাদের লোক হয়ে গেছে, তারা বড় বড় কথা বলে। আজকে আপনারা দেখছেন, সারা পৃথিবীজুড়ে কিছু লোক আছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা রকম অপকর্ম করে যাচ্ছে। এরা কারা? যারা এই দেশে বিভিন্ন অপরাধ করে দেশ থেকে ভেগেছে, হয় যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার আমরা করেছি তাদেরই ছেলেপেলে, ১৫ আগস্টের খুনি যাদের আমরা বিচার করেছি তাদেরই আপনজন আর কিছু অপরাধী যারা এখান থেকে অপরাধ করে পালিয়ে যেয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করে বেড়াচ্ছে। কাজেই এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যেন মানুষ বিভ্রান্ত না হয়।’
‘কী ছিল বিএনপির আমলের অবস্থা?’
বিএনপির শাসনামালে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বর্তমান সরকারের টানা এক যুগে দেশের বদলে যাওয়ার কথাও বলেন।
তিনি বলেন, ‘যতই আপনি উন্নতি করেন আর যা-ই করেন কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না। কোনো কিছু তারা ভালোভাবে দেখতে পারে না। কী অবস্থা ছিল ঢাকা শহরের বিএনপির আমলে?’
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের এই পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা যুদ্ধাপরাধী বা সেই যুদ্ধাপরাধীদের আওলাদ যারা আছে তারা, ১৫ আগস্টের ঘাতকে যারা পরিকল্পনা করেছে তারা এবং স্বাধীনতাবিরোধী—এদেরই প্রচেষ্টা সব সময় বাংলাদেশকে টেনে নিচে নামান।’
‘বিদ্যুতের সংকট ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে’
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী গত দুই মাসের সংকট নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো একে তো করোনা। এই করোনার সময়ে মহামারি, অতিমারির কারণে যেখানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধের সঙ্গে হলো আমেরিকার স্যাংশন। আমেরিকা স্যাংশন দিয়ে রাশিয়ার কতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছে আমি জানি না, কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, এমনকি আমেরিকার মানুষকেও’
উন্নত দেশগুলো এই সংকটকালে ধুঁকছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড—প্রত্যেকটা দেশ উন্নত দেশ, বিদ্যুতের অভাব। নির্দেশ দেয়া হয়েছে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে। পানির অভাব। ইংল্যান্ডে তো বলে দিয়েছে রোজ গোসল করতে পারবে না, রোজ কাপড় ধুতে পারবে না, অল্প সময়ের জন্য করতে পারবে।
‘জার্মানিতে গরম পানি ব্যবহার করতে পারবে না কেউ। কারণ, বিদ্যুতের অভাব, পানির অভাব। আগামী শীতকালে তাদের কী অবস্থা হবে সেটা নিয় শঙ্কিত তারা সবাই। আমেরিকাতেও একই অবস্থা, তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে। খাবারের দাম বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বের খাদ্যের অভাব। সমগ্র বিশ্বে খাদ্যের অভাব। ইংল্যান্ডের মানুষ যারা তিন বেলা খেত, এক বেলার খাবার বাদ দিতে হয়েছে তাদেরকে। তারা এখন মাত্র দুই বেলা খেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বেজুড়ে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। যুদ্ধের তো এটাই ফলাফল। স্যাংশনের তো এটাই রেজাল্ট। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জ্বালানি সাশ্রয়, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে শুরু করে পানি ব্যবহারে, জ্বালানি তেল ব্যবহারে সবাইকে কিন্তু সাশ্রয়ী হতে হবে। এক ফোঁটা পানি যেন অতিরিক্ত (খরচ) না হয়।
‘আমরা যদি এখন থেকে সাশ্রয়ী না হই, আগামী দিনে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা সৃষ্টি হয়েছে তার ধাক্কায় আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘সারা বিশ্বব্যাপী কিন্তু দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি। কিন্তু আমাদের যেহেতু মাটি আছে, মানুষ আছে, আমাদের মাটি উর্বর, এ জন্য আমি সবাইকে আহ্বান করেছি যার যতটুকু জমি আছে, যে যা পারেন নিজেরা উৎপাদন করেন। যাতে বিশ্বের খাদ্য মন্দাটা আমাদের ওপর এসে না পড়ে।
‘যেটা আমরা আমদানি করতে পারব না, তার বিকল্প দেশে উৎপাদন করে যেন আমরা আমাদের ক্ষুধা নিবৃত করতে পারি, সে জন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
জ্বালানি তেলের দরবৃদ্ধির ব্যাখ্যা
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তেল আমরা বেশি দামে কিনি। কম দামে এখানেই দিই, ভর্তুকি দিই। কিন্তু সেই তেল প্রতিবেশী দেশে চলে যায়। যার জন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়াতে হয়েছে সত্য। তারপরও আমাদের চেষ্টা আছে যে মানুষের কষ্টটা দূর করার।
‘গতকাল আপনারা জানেন, অনেক হিসাব-নিকাশ করে আমরা দেখলাম যে স্মাগলিংটা বন্ধ হয়ে গেছে, আমরা কিছু সাশ্রয় করতে পারছি, আমরা তেলের দাম ইতিমধ্যে ৫ টাকা করে কমিয়ে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য সব সময় মানুষের দিকে তাকানো।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য