জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেট বাংলাদেশ সফরে আসার পর আবার আলোচনায় এসেছে গুম বা জোরপূর্বক অন্তর্ধান প্রসঙ্গ। বাংলাদেশ থেকে ফিরে মিশেল ব্যাচেলেট তার সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে যেসব দেশের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে নেই বাংলাদেশ।
স্বাধীন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যানও বলছে, গত কয়েক বছরে দেশে গুমের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে। তবে এ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশের মতো পরিস্থিতি হয়নি বলে মনে করছেন অধিকার কর্মী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরকার বরাবর বলে আসছে, যেসব ঘটনাকে গুম হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তার অনেক ঘটনাই স্বেচ্ছা অন্তর্ধান, যাদের অনেকে ফিরেও এসেছেন।
দেশের মানবাধিকার বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২০ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০২০ সাল (২৫ আগস্ট) পর্যন্ত ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ৮৯ জনকে। ফেরত এসেছে ৫৭ জন। বাকিদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজেদের সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে আসক। সেই প্রতিবেদন অনুসারে ২০১৬ সালে গুমের শিকার হয়েছিলেন ৯৭ জন, ২০১৭ সালে ৬০ জন, ২০১৮ সালে ৩৪, ২০১৯ সালে ১২, ২০২০ সালে ৬ জন ও ২০২১ সালে ৭ জন। আর ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন ২ জন। এদের মধ্যে ২০১৯ সালে যে ১৩ জন গুমের শিকার হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৪ জন ফিরে এসেছেন, একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং নিখোঁজ আছেন ৮ জন।
২০২০ সালে যে ৬ জন গুমের শিকার হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, দুজন এখনও নিখোঁজ। ২০২১ সালে যে ৭ জন গুমের শিকার হয়েছেন, তাদের ৬ জনকে পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একজন এখনও নিখোঁজ। আর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত যে দুজন গুমের শিকার হয়েছেন, তাদের একজনকে আটক অবস্থা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্যজন।
তবে এ পরিসংখ্যান দেখে গুম কমে গেছে বলার সময় এখনও আসেনি বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মী ও আসকের নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান লিটন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন পরিসংখ্যান যেটা দেখছেন তা প্রকৃত পরিসংখ্যান নাও হতে পারে। কারণ অনেক বিষয় কাজ করে। এখন ক্রমান্বয়ে তথ্যের প্রকাশ কম হচ্ছে। আমরা ফিল্ড লেভেলে কাজ করতে গিয়ে তা দেখছি। কুষ্টিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে দুই দিনের জন্য গুম হয়েছে পাঁচজন। পরে দেখা গেল, র্যাব হাজির করল। দুই দিন আটক রাখা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা করল।
‘এটা (গুম) যে একেবারে কমে গেছে, তা বলার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, গত ডিসেম্বরের ১০ তারিখে স্যাংশন (ভিসা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ) দেয়ার পর আমরা লক্ষ্য করছি সংখ্যাটা কমে এসেছে। এটা দিয়ে এখনই চূড়ান্তভাবে বলার সুযোগ আসেনি যে গুম কমে গেছে বা বন্ধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরের রিপোর্টে আমরা দেখতে পাই, অনেক সময় গুম বেড়েছে, ক্রসফায়ার কমেছে। আবার ক্রসফায়ার বেড়েছে, গুম কমেছে। এ রকম একটা গ্রাফ দেখা যায়। মেজর সিনহা হত্যার পর বেশ কয়েক মাস ক্রসফায়ার বা গুমের ঘটনা এক-দুইটার বেশি হয় নাই। পরবর্তী সময়ে যে মাত্রায় ঘটে, তাই ঘটছে।’
গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে বলে মনে করেন এই মানবাধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘যারা নীতিনির্ধারক, তাদের অজ্ঞাতসারে কিছু হওয়ার সুযোগ নেই। তাদের অজ্ঞাতসারে দিনের পর দিন গুম-খুন চলার কোনো সুযোগ নেই। তার মানে হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এটা কমবে। না হলে কমবে না।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৭৬ জন গুমের বিষয়ে একটি তালিকা দিয়ে তথ্য চেয়েছিলেন। এ ছাড়া আরও কিছু প্রশ্ন দিয়েছিলেন তিনি, যেগুলো নিয়ে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত ১৪ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে গুম ও অন্যান্য পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মিশেল ব্যাচেলেট। বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমাদের ৭৬ জনের মিসিং বা ডিস-অ্যাপিয়ার্ড পারসনের তালিকা দেয়া হয়েছিল। আমরা দেখিয়ে দিয়েছি এ ৭৬ জনের মধ্যে ১০ জন তাদের বাড়িতেই আছেন। দুজন আছেন জেলখানায়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাকে বলেছি, আমাদের দেশে তিনটি কারণে ডিস-অ্যাপিয়ার হয়: প্রথম কারণ হচ্ছে ঘৃণ্য অপরাধ যারা করে, ভিডিওর মাধ্যমে আমরা দেখিয়েছি, পুলিশকে পিটিয়েও তারা হত্যা করেছে। আমরা এটাও দেখিয়েছি, কীভাবে তারা মানুষের সম্পদ ধ্বংস করেছে। যারা এগুলো করেছে, তারা সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। তারা ভারত কিংবা মিয়ানমার কিংবা অন্য কোনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বাকিগুলো সব আমাদের সঙ্গেই আছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু বিচার বিভাগ স্বাধীন, কাজেই বিচার কাজকে এড়ানোর জন্যই তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সেগুলোর নমুনা আমরা তাদের দিয়েছি, আসলে তারা কী ধরনের ক্রাইম করেছে। আর একটি বিষয় আমরা তাদের বলেছি, যারা দেউলিয়া হয়ে যায়, পাওনাদার বেড়ে যায়, ফলে পাওনাদারদের এড়ানোর জন্য গায়েব হয়ে যায়, আত্মগোপনে যায়। আমরা যখন অভিযোগ পাই, তখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের খুঁজে বের করে আনলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। আবার পারিবারিক কারণেও অনেকেই গুম হয়ে যায়।’
বছরের পর বছর অপেক্ষা
২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় ঢাকা মহানগর ৩৮ (বর্তমান ২৫) নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনকে। সেদিন সুমনসহ আরও পাঁচজনকে সেখান থেকে তুলে নেয়া হয়। ৯ বছরেও তাদের সন্ধান মেলেনি।
র্যাব, পুলিশ, মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন কোথাও যেতে বাদ দেননি সুমনের পরিবার। এমন গুমের শিকার পরিবারগুলো একত্রিত হয়েছে ‘মায়ের ডাক’ নামে ব্যানারে। এর সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও আমরা ক্লান্ত না। আশায় আছি, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। আমার মা অসুস্থ, ভাইয়ের অপেক্ষায় দিন গুণছে। ভাইয়ের স্ত্রী সন্তানেরা অপেক্ষায় আছে।’
তিনি বলেন, "সম্প্রতি প্রকাশিত 'আয়নাঘর' নিউজ দেখে আমরা আরো বেশি আশাবাদি হয়েছি। আমরা দাবি জানাচ্ছি, আমাদের স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়া হোক। আমার ভাই বিএনপির রাজনীতি করত, এই কারণেই গুম করা হয়েছে। তার তো আর কোনো অপরাধ ছিল না।"
মিশেল বাচেলেট বাংলাদেশে আসার পর ‘মায়ের ডাকে’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তাদের কথা শুনেছেন। আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, ‘আমরা ব্যাচেলেটকে গুম হওয়া ৬১৯ জনের একটি তালিকা দিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন।’
সংখ্যাগত দিকে গুমের ঘটনা কমলেও স্বস্তিতে থাকার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গুম পরিস্থিতি ইতিবাচক তখনই বলতাম যখন দেখতাম গুম হয়ে যাওযা পরিবারের সদস্যরা তাদের যে লোকটা হারিয়ে গেছে তাকে খুঁজে পেয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত হারিয়ে যাওয়া লোকদের খুঁজে পাওয়া না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো অধিকার কর্মীর স্বস্তিতে থাকার কারণ নেই।’
নূর খান লিটন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই (গুম) ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের যতদিন পর্যন্ত বিচারের আওতায় না আনতে পারবেন ততদিন এইটা কমবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে যতদিন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করবেন, ততদিন এটা কমবে না। তারা যতদিন বলতে থাকবে, সরকার তো আমরাই আনি, ততদিন পর্যন্ত কমার সুযোগ নেই।’
আরও পড়ুন:সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে জানিয়েছেন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামায়। প্রার্থীদের মধ্যে সম্পদে এগিয়ে থাকা বাবুলের নামে জিডিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলাও রয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান স্নাতক পাস। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী এ ব্যবসায়ী নিজের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়।
সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাদের মধ্যে যাছাই-বাছাইকালে ৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আর ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু ও মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন।
এবারের সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে প্রার্থী হননি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
আরিফ প্রার্থী না হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ তিন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী জাতীয় পার্টির প্রার্থী শিল্পপতি মো. নজরুল ইসলাম বাবুল। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তার বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। আর শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। আনোয়ারুজ্জামান বিএ (সম্মান) এবং মাহমুদুল হাসান এলএলবি পাস।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের হলফনামায় সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। এতে তারা ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তাদের আয়, আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, দেনাসহ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন।
হলফনামায় প্রার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্ত তথ্য প্রদানকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এর ফলে প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটাররা একটি স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন, তবে প্রার্থীরা হলফনামায় সঠিক তথ্য দিয়েছেন কি না, সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা উচিত। কারণ সিলেটে অনেক প্রবাসীও প্রার্থী হন। প্রবাসেও তাদের অনেক সম্পদ থাকে। সেসব তথ্যও হলফনামায় আসা উচিত।’
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
হলফনামায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজের পেশা ব্যবসা উল্লেখ করে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা। এ ছাড়া আনোয়ারুজ্জামানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদই আছে ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা। এর বাইরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দুটি টিভি, একটি রেফ্রিজারেটর, দুটি এয়ার কন্ডিশনার (এসি) এবং দুই সেট সোফা, চারটি খাট, একটি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও দুটি আলমারি আছে। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ৪৭ ভরি স্বর্ণালংকার।
আনোয়ারুজ্জামানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিন বিঘা কৃষি জমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তবে তার কোনো দায় বা দেনা নেই। তার নামে কোনো ফৌজদারি মামলাও নেই।
নজরুল ইসলাম বাবুল
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুলও পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি ফিজা অ্যান্ড কোং লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স ফিজা এক্সিমের ব্যবস্থাপনা অংশীদার, পাথর আমদানিকারক ও ‘দৈনিক একাত্তরের কথা’র প্রকাশক। বাবুলের বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা।
বাবুলের ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। পাশাপাশি অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি, একটি টয়োটা প্রাডো, চারটি কার্গো ভ্যান, আটটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি মোটরসাইকেল আছে। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে ২১ লাখ ১২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে।
নজরুলের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১৩৫ দশমিক ৭৮ শতক অকৃষি জমি, একটি ফ্ল্যাট এবং চারটি পাকা ও টিনশেড বাড়ি আছে। এ ছাড়া তার ব্যাংক ঋণ আছে পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকা।
বাবুলের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া অতীতে তার নামে তিনটি মামলা হলেও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।
মাহমুদুল হাসান
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানও পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অতীতে তার নামে একটা মামলা হলেও বেকসুর খালাস পেয়েছেন। কোনো দায় বা দেনা না থাকা মাহমুদুল হাসানের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে।
তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে মাহমুদুলের যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক দোকান ও বাড়ি আছে। এসব সম্পদের ৬ ভাগের ১ অংশ তার।
আরও পড়ুন:গোমতী নদীর চরে ভূমিদস্যুদের অত্যাচারের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। তার মাঝেই পতিত জমিতে আবাদ হয়েছে তিল। চরজুড়ে যেন তিলের উৎসব।
তিলের সাদা ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। কিছু জমির তিল পরিপক্ব হওয়ায় কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। ভালো ফসল পেয়ে খুশি তারা।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া এলাকার গোমতীর চরে দেখা মেলে এমন চিত্র।
উপজেলার পালপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গোমতীর চরে আমার কিছু জমি পতিত পড়ে ছিল। এখানে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বিনা তিল-২ চাষ করেছি। ৩৩ শতক জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। ভালো ফলন পেয়েছি।’
বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘তিলের পুষ্টিগুণ অনেক। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি রান্নায় ও বেকারি সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। বিনা তিল-২ উচ্চ ফলনশীল জাত। এটি ক্ষরাসহিষ্ণু; বাজার মূল্য বেশি।
‘তেলজাতীয় ফসল বৃদ্ধির জন্য আমরা বিনা তিল-২ চাষ করেছি। এটি কুমিল্লার গোমতী নদীর চরের পতিত জমিসহ জেলার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আমরা আশা করি আগামী বছর ৬০০ হেক্টর জমি তিল চাষের আওতায় আনতে পারব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গোমতীর চরে বিনা তিল-২ চাষ হয়েছে। এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ এটির বাজার মূল্য বেশি। কুমিল্লায় ৪টি উপজেলায় আগে দেশি তিল চাষ করতেন কৃষকরা।
‘আমরা গত দুই বছর ধরে তেল ফসল বৃদ্ধির আওতায় সরিষার পাশাপাশি তিল চাষ বৃদ্ধি করেছি। কুমিল্লায় এবার দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে আগামী তিন বছরে এর চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ করা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোহিত কুমার দে বলেন, ‘গোমতীর পতিত চরে বিনা তিল-২-এর ভালো ফলন হয়েছে। এটি কৃষকদের নিকট জনপ্রিয় হচ্ছে। এর দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এক. তিল চাষে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। দুই. চরের পতিত জমি চাষের আওতায় আসছে।
‘আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে বিনা তিল-২-এর সঙ্গে অন্য ফসল চাষে কাজ করছি।’
এদিকে বুধবার ওই এলাকায় তিল চাষ নিয়ে কৃষক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার অতিরিক্ত পরিচালক মোহিত কুমার দে, উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিনা কুমিল্লা উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. আশিকুর রহমান।
দিনাজপুরে ইতোমধ্যে পুরোদমে বাজারে ওঠা শুরু হয়েছে বোরো ধানের। কিন্তু কয়েকদিনের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ধানের বাজারগুলোতে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি ধানের দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
দিনাজপুরের বিভিন্ন ধানের হাট ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর সদর উপজেলার শিকদারহাটে স্বম্পা জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৯৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, আঠাশ জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা, ছত্রিশ জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা ও নব্বই জিড়া জাতের ধান ৭৬ কেজির বস্তা ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অথচ এক সপ্তাহ আগে স্বম্পা ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০টাকা, আঠাশ ২ হাজার ১৫০ থেকে ২ হাজার ২০০টাকা, ছত্রিশ ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা ও নব্বই জিড়া ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দিনাজপুর জেলায় গত ১৫ দিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে করে ধানের ভরা মৌসুমে ঠিকমত মিল চালাতে পারছেন না মালিকেরা। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের মেশিনারিজ জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে অলস সময় পার করছেন মিলে নিয়োজিত শ্রমিক ও লেবাররা। ঠিকমত চাল উৎপাদন করতে না পারায় বাজার থেকে কম ধান কিনছেন মিল মালিকেরা। এর প্রভাব পড়েছে এই জেলার ধানের বাজারে। আর লোডশেডিংয়ের কারণে ধানের বাজারের পাশাপাশি চালের বাজারে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে।
বড়ইল গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বাজারে ধান কেনার পার্টি (ক্রেতা) নাই। ধানের বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। লোডশেডিংয়ের কারণের ক্রেতারা ধান কিনছেন না। তার ওপর আকাশ ঘন ঘন খারাপ থাকছে। এতে ধানগুলো ঠিকমত রোদে শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। ধান লাগানোর পর থেকে যে খরচ হয়েছে, তার টাকাই উঠবে না। খুবই চিন্তায় আছি।’
কর্ণাই গ্রামের কৃষক কালাম হোসেন বলেন, ‘গত সপ্তাহে ধানের দাম বেশি ছিল। কিন্তু আজকে ধানের দাম অনেক কম। বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে কম। তার ওপর বাজারে ধানের ক্রেতা একেবারেই নাই। গতবার বগুড়া কাঠারী আমি বস্তা প্রতি বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকার উপরে। কিন্তু এবার সেই ধান ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
মিল শ্রমিক মহসিন আলী বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যার কারণে মিলের মোটর পুড়ে যাচ্ছে। কাজ ঠিকমত করতে পারছি না। কাচা ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিলের চাল খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের এভাবে সমস্যা থাকলে আমরা তো বেকার হয়ে পড়ব। মিল ঠিকমত না চললে মালিক আমাদেরকে কোথা থেকে বেতন দিবে। সারা দিনে প্রায় ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।’
দিনাজপুর জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হাসের মোহাম্মদ অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে মোটর জাতীয় মেশিনগুলো নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো না কোনো জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। লোডশেডিং ও জিনিসপত্র মেরামতে আমাদের বহু সময় নষ্ট হচ্ছে।
‘দিনাজপুরে পুরোদমে বাজারে ধান উঠলেও আমরা ঠিকমত ধান কিনতে পারছি না। কারণ আমরা ধান থেকে চাল তৈরি করতে পারছি না। এই কারণে বাজারে ধানের দাম কমছে। পাশাপাশি সামনে চালের বাজারে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আরও পড়ুন:নাম তার ‘কাঞ্চি’। ডাকলেই চলে আসে মালিকের কাছে। ক্রস বিট জাতের এ মাদি ছাগলের ওজন ৮৯ কেজির বেশি। তার নাম গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠাতে চান মালিক জর্জ নির্মূলেন্দু মণ্ডল।
নওগাঁ শহরের চকরামপুর এলাকায় রোববার দুপুরে খামারে গিয়ে দেখা মেলে ছাগলটির। এর মালিক উদ্যোক্তা নির্মূলেন্দু শহরের চকরামপুর খ্রিষ্টান মিশনের বাসিন্দা। তিনি ২০১০ সালে রবি আজিয়াটা লিমিটেডে চাকরি করতেন, কিন্তু তিন বছর পর ২০১৩ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি ও ক্রিকেট খেলে দিন কাটাতেন। একদিন শহরে এক ভ্যানচালককে দেখেন, এক হাত না থাকার পরও রডের বোঝা বহন করে চলছেন। ভ্যানচালককে দেখে মনে সাহস সঞ্চার হয় নির্মূলেন্দুর। তিনি চাকরি না করে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
যেভাবে এলো কাঞ্চি
নির্মূলেন্দু জানান, ১০ বছর আগে শহরের পাটালির মোড় এলাকার মোশারফ হোসেন নামের খামারি তার কাছে থাকা সব ছাগল বিক্রি করে দেন। সেখান থেকে এক মাসের বাচ্চাসহ ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগী কিনে বাড়ি নিয়ে আসেন নির্মূলেন্দু। পরামর্শমতো নিয়মিত খাবার, যত্ন ও চিকিৎসা দেয়া শুরু করেন তিনি। এর পর থেকেই খামারে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। সেগুলোরই একটি আজকের কাঞ্চি। তিন বছর বয়সী ছাগীটির দৈর্ঘ্য ৪৮ ইঞ্চি (লেজের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত) এবং উচ্চতা ৩২ ইঞ্চি (মাটি থেকে কোমর পর্যন্ত)।
১৪ মাসে দুবার বাচ্চা
মালিক নির্মূলেন্দু জানান, কাঞ্চি ১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার দুই-তিনটি বাচ্চা হয়। বর্তমানে খামারে সাতটি ছাগী, দুটি বাচ্চা এবং তোতা, বিটল ও ক্রস জাতের তিনটি পাঁঠা আছে। প্রজননের জন্য এসব পাঁঠা ব্যবহার করা হয়। এ খামার থেকে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
খামারের উদ্যোক্তা জানান, প্রতিদিন দুটি বাচ্চা দুধ খাওয়ার পরও প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম দুধ পাওয়া যায়। দুধ দোহন না করে বাচ্চাদের খাওয়ানো হয়। যাদের খুবই প্রয়োজন, তাদের কাছে বিক্রি করেন। সে ক্ষেত্রে দুধের কেজি ১২০ টাকা।
নাম ওঠাতে চান গিনেস বুকে
উদ্যোক্তা জর্জ নির্মূলেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘কাঞ্চি ক্রস জাতের মাদি ছাগল। বর্তমানে বয়স প্রায় তিন বছর। আমার খামারের সবচেয়ে বড় ছাগল এটি। প্রতি বছর দুবার কাঞ্চি থেকে দুটি বাচ্চা পাওয়া যায়।
‘আমার জানা মতে, ওজনের দিক দিয়ে দেশে এ মাদি ছাগলের মতো দ্বিতীয় আর নেই। দেশে এর চাইতে ভালো মানের ছাগল আছে, কিন্তু ক্রস জাতের এই মাদি ছাগলের মতো হয়তো ওজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান বাজারে কাঞ্চির দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা হবে। যদিও বিক্রির কোনো ইচ্ছা নেই। ওজনের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে মাদি ছাগলটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেতে পারে। তাই গিনেস বুকে নাম ওঠাতে আবেদন করার ইচ্ছা আছে। কেউ যদি এতে সহযোগিতা করেন তাহলে হয়তো আবেদন করতে পারব।’
কী ধরনের খাবার দেয়া হয়
কাঞ্চির খাবারের তালিকায় রয়েছে সবুজ লতাপাতা, ঘাস ও দানাদার খাবার। দিনে সময়মতো দুই বেলা (সকাল ১০টা ও বিকেল ৪টা) খাবার দেয়া হয়। গরমের সময় স্যালাইন পানি দেয়া হয়। যারা ছাগলের বাচ্চা কিনতে চান, তারা আগে থেকে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন।
নির্মূলেন্দু বলেন, ‘যত্নের দিক থেকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। জ্বর ছাড়া এখন পর্যন্ত ছাগলগুলোর অন্য কোনো সমস্যা আমি দেখিনি। সবুজ ঘাসের চাহিদা মেটাতে খামারের পাশে নেপিয়ার ঘাস লাগানো হয়েছে।
‘এ ছাড়া দেশি জাতের কয়েক ধরনের ঘাসও আছে। কাঞ্চিসহ সব ছাগলকে প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে থাকি। দানাদার খাবারের দাম বেশি। এ জন্য স্বল্প পরিমাণ দানাদার খাবার দেওয়া হয়।’
যা বললেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লালুগুড়ি, লালি, কালী, লালচি, ইতুয়া, বিনতি, কাঞ্চি নামে তার (নির্মূলেন্দু) খামারে স্বল্প পরিমাণ ছাগল থাকলেও খামারটি উন্নত মানের। ওই খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া কোনো ধরনের সমস্যায় পড়লে আমাদের অফিসের লোকজন গিয়ে চিকিৎসাসেবাসহ পরামর্শ দিয়ে আসে।’
তিনি আরও বলেন, “তিনি (নির্মূলেন্দু) নওগাঁয় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২০১৮ ও ২০২৩ সালে উন্নত জাতের ‘ছাগল’ প্রদর্শন করে জেলায় প্রথম স্থান লাভ করেন।”
আরও পড়ুন:ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলা সাবরেজিস্টার অফিসের দক্ষিণ পাশের সড়কে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে ‘বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ার’ নামে একটি দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। দরজায় কাচ লাগানো পরিপাটি এই কক্ষে ঢুকলে দেখা মিলবে শিবানন্দ শিবু ওরফে শিবু শীল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে।
একসময়ে সেলুনে নাপিতের কাজ করা এই শিবুই এখানকার দন্ত চিকিৎসক। আগে যারা শিবুর কাছে চুল দাড়ি কামিয়েছে তারাসহ শিবুর বন্ধুরাও তাকে ডাক্তার রুপে দেখে হতভম্ব। আর যারা তাকে চেনেন না তারা রোগী হয়ে আসছেন দাঁতের চিকিৎসা করাতে।
‘ডা. শিবানন্দ শিবু’ লিখা ছাপানো কাগজে (প্যাড) রোগীকে ব্যবস্থাপত্রও লেখে দিচ্ছেন তিনি। দিচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিক মেডিসিন আবার দাঁতের সার্জারি করছেন।
শিবুর বাড়ি কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া গ্রামে। ডাক্তার না হয়েও নামের আগে ডা. লিখে চেম্বার খুলে মানুষের সঙ্গে ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর দশেক আগেও বরগুনা জেলার বেতাগী পৌর শহরের একটি সেলুনে নাপিতের কাজ করতেন এই শিবু ।
শিবুর বড় ভাই বাবুল চন্দ্র শীল এবং বাল্যবন্ধু ও সহপাঠী ওবায়দুর রহমান, আব্দুল কাদের এবং এনায়েত হোসেনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তারা নিউজবাংলাকে জানান, বাড়ির পাশে শৌলজালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে তিন বার মেট্রিক পরীক্ষা দেন শিবু। সবশেষ ১৯৯১ সনে পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু ওইবারও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে বরগুনা জেলার বেতাগী বন্দরে একটি সেলুনে সাত বছর নাপিতের কাজ করেন শিবু। সেখানে থাকাকালীন ওই সেলুনের পাশে থাকা ‘আলম ডেন্টাল কেয়ার’ নামে একটি দন্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে অবসর সময় কাটাতো শিবু শীল। আর সেখানের কাজ দেখে দেখে নিজে দন্ত চিকিৎসক হওয়ার সাধ জাগে। দাঁতের চিকিৎসা লাভজনক হওয়ায় তিনি নাপিতের পেশা ছেড়ে নিজ এলাকা ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় এসে চেম্বার খুলে নামের আগে ডাক্তার লাগিয়ে শুরু করেন দাঁতের চিকিৎসা।
সম্প্রতি এক স্কুলশিক্ষিকাকে ভুল চিকিৎসা দেয়ার পর গোটা উপজেলায় সমালোচিত হন শিবানন্দ শিবু।
ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষিকা প্রতিভা রানী বলেন, ‘গত ২৯ এপ্রিল দাঁতে ক্যাপ বসাই। এর কয়েকদিন পরে ক্যাপটি খুলে যায়। চেম্বারে গিয়ে বিষয়টি জানালে ডা. শিবু আমাকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। কিছুক্ষণ পর দাঁতে সার্জারি করে প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কিছু ওষুধ লিখে দেন। ওই ওষুধ খাওয়ার পর আমার সমস্ত শরীরে জ্বালা-পোড়া শুরু হয়, শরীরে ফোসকা ওঠতে থাকে। আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা আমাকে অন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। আর তখনই ধরা পরে আমার শরীরে ভুল ইনজেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরিয়ে কিভাবে তিনি চেম্বার খুলে ডাক্তার লিখে রোগী দেখছেন এ প্রশ্ন করা হলে ‘বিবেকানন্দ ডেন্টাল কেয়ারের’ স্বত্ত্বাধিকারী শিবানন্দ শিবু বলেন, ‘নামের আগে ডাক্তার শব্দটি আমি লিখি নাই, ঔষধ কোম্পানির লোকেরা আমাকে প্যাড তৈরি করে দিয়েছেন ভুলটা তারাই করেছেন।’
শিবু আরও বলেন, ‘সেলুনের কাজ ছেড়ে পল্লি চিকিৎসক (এলএমএএফ) কোর্স এবং ডেন্টাল ডিপ্লোমা কোর্স আমি করেছি। স্কুলশিক্ষক প্রতিভা রানীর মূলত ড্রাগ রিঅ্যাকশন হয়েছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদার বলেন, ‘দাঁতের চিকিৎসা করতে হলে বিডিএস ডিগ্রি অর্জন ছাড়া কেউ ডা. লিখতে পারবেন না। সাধারণ রোগীদের সচেতন হতে হবে। হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না।’
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ঘটনা শুনে আমি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা শিবুর কাগজপত্র দেখব।’
আরও পড়ুন:দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের সংখ্যা ৬৪টি। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মাছের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে ইতোমধ্যে ৩৭ প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এরমধ্যে পাবদা, গুলশা, টেংরা, গুজি আইর, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালী, বালাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা, গজার, রাণী, বাতাসি, পিয়ালি ইত্যাদি অন্যতম।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-২০০৯ সালে চাষের মাধ্যমে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৪০ টন, যা ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২ দশমিক ৬১ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ গত ১২ বছরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। আগে শুধুমাত্র ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করলেও বর্তমানে ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্র ছাড়াও বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে।
আরও জানা যায়, ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বের বিএফআরআইয়ে দেশের প্রথম দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই লাইভ জিন ব্যাংকে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাগনা, দেশী কই, নাপিত কই, গুলশা, খলিশা, লাল খলিশা, মাগুর, বোয়ালি পাবদা, সরপুঁটি, পুঁটি, শিং, মহাশোল, রুই, বুজুরি টেংরা, ভিটা টেংরা, গুলশা, বাটা, রিটা, মলা, পুইয়াগুতুম, পাহাড়ী গুতুম, ঠোটপুইয়া, শালবাইম, টাকি, ফলি, ঢেলা, চেলা, লম্বা চান্দা, রাঙাচান্দা, লালচান্দা, পিয়ালি, বৈরালি, দারকিনা, ইংলা, কেপ চেলা, রাণি, কাকিলা, কাজলী, ভাচা, বাতাসি, আঙ্গুস, কানপোনা, ঘাউরা, ভেদা, কাকিলা, বাসপাতাসহ মোট ৮৫ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে এ ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। দেশব্যাপী এ সংরক্ষণ কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।
বিএফআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা জানান, বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ। দেশে মিঠা পানির ২৬০টি প্রজাতির মাছের মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ সহজলভ্য পুষ্টির অন্যতম উৎস্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এরমধ্যে মলা, ঢেলা, পুঁটি, বাইম, টেংরা, খলিশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কেচকি, চান্দা ইত্যাদি অন্যতম।
এসব মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্তশূন্যতা, গলগণ্ড, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, অতি আহরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে ছোট মাছের প্রাপ্যতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. অনুরাধা ভদ্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশীয় মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। পোনা প্রাপ্তি সহজতর হওয়ায় বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে পাবদা, গুলশা, শিং, টেংরা, মাগুর ও কৈ মাছ ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। ইদানিং বাটা মাছের চাষ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় এদের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এ ছাড়া নদ-নদী, হাওড় ও বিলে দেশীয় মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ মাছের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে গবেষণা কার্যক্রম সাম্প্রতিককালে জোরদার করা হয়েছে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে গবেষণা উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল দেশীয় মাছকে পুনরুদ্ধার করার জন্য স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাছের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক একটি আধুনিক ধারণা। জিন ব্যাংক মূলত কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক উপাদানের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ যখন হুমকির সম্মুখীন হয় তখন জিন ব্যাংকের প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক উৎসে কোনো দেশীয় মাছ হারিয়ে গেলে সেসব মাছকে পুনরুদ্ধারের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক থেকে ব্যবহার করা যাবে।
‘সেক্ষেত্রে লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট মাছকে হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা হবে। মাত্রাতিরিক্ত মাছ আহরণ, পরিবেশগত বির্পযয়, জলাশয় সংকোচনসহ প্রভৃতি নানা কারণে মৎস্য সম্পদ হুমকির সম্মুখীন হলে এই ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক বলেন, ‘দেশের মৎস্য উৎপাদনে দেশীয় ছোট মাছের অবদান ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। দেশীয় মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশীয় মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। ইনস্টিটিউট থেকে বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় মাছ ঢেলা, শাল বাইম, রাণী, কাজলি, পিয়ালি, বাতাসি, কাকিলা ও ভোল মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। আগামী প্রজনন মৌসুমে এক্ষেত্রেও সফলতা আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় সকল দেশীয় মাছকে পর্যায়ক্রমে খাওয়ার পাতে ফিরিয়ে আনাই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য।’
আরও পড়ুন:মাসখানেক পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এখন থেকেই নগরে পশুর হাট নিয়ে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। প্রতি বছর নগরীর তিনটি স্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি চাহিদানুযায়ী কয়েকটি অস্থায়ী পশুরহাটও পরিচালনা করে চসিক। পশুর চাহিদা বৃদ্ধির কারণে গতবারের চেয়ে এবার প্রায় আড়াইগুণ বেশি অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতির জন্য জেলা প্রশাসনে আবেদন জানিয়েছে চসিক। নগর পুলিশের মতামত সাপেক্ষে চসিককে সিদ্ধান্ত জানাবে জেলা প্রশাসন।
গত বছর ১০টি অস্থায়ী হাটের আবেদন করে ৪টির অনুমতি পেয়েছিল চসিক। তবে ইজারার নিয়োগের পরও শেষ পর্যন্ত হাট বসায় তিনটি। পশুর চাহিদা বৃদ্ধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার প্রায় আড়াইগুণ বাড়িয়ে ২৩টি অস্থায়ী হাটের আবেদন করেছে চসিক। ১৪ মে জেলা প্রশাসনে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে চসিক।
এদিকে নগরে স্থায়ী পশুর হাটের সংখ্যা তিনটি। চসিকের চাহিদামতো ২৩টি অস্থায়ী হাটের অনুমোদন পেলে এবার নগরে পশু কেনাবেচা হবে ২৬টি হাটে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর বিষয়ে গত সপ্তাহে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা প্রশাসনে পাঠায় সংস্থাটি।
চিঠিতে বলা হয়, সরকারি পঞ্জিকা অনুযায়ী ঈদুল আজহার সম্ভাব্য সময় অনুযায়ী ২০ শে জুন থেকে ২৯ শে জুন ১০ দিনের জন্য এসব হাট বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গতবার ১০টি অস্থায়ী হাটের আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্ত এবার পশুর চাহিদা বৃদ্ধি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কয়টার অনুমতি দেয় দেখা যাক।’
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এবার চসিকের আওতাধীন ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী গরু বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট), ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন হাট, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের খেঁজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠ, স্টিল মিল বাজার, পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, উত্তর পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় মাঠ, মুসলিমাবাদ টি কে গ্রুপের খালি মাঠ এবং মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের চর চাক্তাই চসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে খালি জায়গায়, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের গলিচিপা পাড়া বারুনী ঘাটা ও গাজী হালদা খালি জায়গা এবং এবই ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, কয়লার ঘর ক্রিয়েটিভ স্কুলের সামনে, বকসু নগর মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, মধ্যম শহীদ নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, পশ্চিম শহীদ নগর কালু কোম্পানির বাড়ির পাশে, কামরাবাদ সামাদপুর মোড় এবং হাজী পাড়া বারেক শাহ মাজার সংলগ্ন মাঠ, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের জান আলী স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের পরিত্যক্ত মাঠ, দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের বাকলিয়া এক্সেস রোডের পাশে খালি মাঠ এবং ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের চৌধুরী হাট এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাটের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
তাছাড়া চসিকের স্থায়ী তিন পশুর হাট হলো সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। সাগরিকা ও পোস্তারপাড়ে ইাজারাদার নিয়োগ করা হলেও এখনও বিবিরহাটে ইজারাদার নিয়োগ করা যায়নি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য