‘শিক্ষার্থীদের দেয়া সালাম না নিয়ে কটূক্তি করেছেন’- সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ হয়েছে কুষ্টিয়ার একটি স্কুলে। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে ওই শিক্ষককে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল।
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই শিক্ষক। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনও বলছে, কোনো গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে অস্থিরতা তৈরি করছে। ফেসবুকেও প্রচার করা হচ্ছে উসকানিমূলক বক্তব্য। এতে আতঙ্কে গৃহবন্দি দিন কাটছে ওই শিক্ষকের।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত বুধবার কয়েক ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
পুলিশ বলছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে। আর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন, এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে পরিচালনা কমিটির বৈঠক হবে। সেখানেই করণীয় ঠিক করা হবে।
দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার শুরু গত সপ্তাহে। সেদিন ওই শিক্ষক এক ছাত্রকে শ্রেণিকক্ষে স্কেল দিয়ে মেরেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
‘সেদিন অষ্টম শ্রেণির ক্লাসে দুই ছাত্রী পাথর ছোড়াছুড়ি করছিল। এ সময় পেছন থেকে এক ছাত্র ম্যাডামকে বারবার ডাকছিল। ম্যাডাম ভেবেছিলেন ওই ছাত্রই পাথর ছুড়ছে। তিনি তাকে শাসন করতে স্কেল দিয়ে মারেন। তবে পরে ছেলেটি আমাকে জানায় সে পাথর ছোড়েনি।
‘পরদিন তার মা-বাবা স্কুলে আসেন। আমরা বিষয়টি মীমাংসা করে দিই। ম্যাডাম তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে নেন। অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে আর কোনো অভিযোগ করেননি।’
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এরপর বুধবার সকালে যথারীতি স্কুল শুরু হয়। ১০টা ২০ মিনিটে অ্যাসেম্বলি শেষের পর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস শুরুর পর হঠাৎ অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, ওই শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন।
‘অষ্টম শ্রেণির ছাত্ররা ক্লাস নাইন-টেনের ছাত্রদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করে বলে পরে শুনেছি। ছাত্ররা এই অভিযোগ শুরুর পরই কিছু বহিরাগত স্কুলে ঢুকে পড়ে। তারা ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করে, শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছেন।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘প্রথমে পাঁচ-সাতজন বহিরাগত আসে স্কুলে। তারা এই ছাত্রদের বড় ভাই বা স্থানীয় হতে পারে। একপর্যায়ে তাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর তারা ৫০ জনের মতো লোক নিয়ে আবার স্কুলে আসে। এরপর ছাত্ররা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।’
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই শিক্ষক কবে বা কীভাবে ধর্ম অবমাননা করেছেন, সে বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের বক্তব্যে প্রচুর অসংগতি ছিল বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
তিনি বলেন, ‘কেউ বলে ম্যাডাম ধর্ম নিয়ে অনেক আগে কটূক্তি করেছে। কেউ বলছে ১৫ দিন আগে, কেউ বলছে রোজার মধ্যে বলেছে। কিন্তু কেউ নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। আমাদের ধারণা, এক শিক্ষার্থীকে স্কেল দিয়ে আঘাতের ঘটনার পর এ বিষয়টি ছড়ানো হয়েছে।
‘আমরা ওই শিক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, কখনও ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি।’
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ইউএনও, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে খবর দিই। এরপর পুলিশ এসে ওই শিক্ষককে নিরাপত্তা দিয়ে স্কুল থেকে নিয়ে যায়।’
বিক্ষোভকারীরা প্রধান শিক্ষকের বাড়িতেও হামলা করে। মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের পাশেই আমার বাড়ি। পুলিশ এসে ছেলেমেয়েদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর তারা আমার বাড়িতেও হামলা করে। ইটপাটকেল ছোড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুল পরিচালনা কমিটির নির্দেশে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৪টায় স্কুল পরিচালনা কমিটির বৈঠকে বাকি সব সিদ্ধান্ত হবে। রোববার স্কুল খুলবে কি না, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হবে কি না, সে ব্যাপারে আলোচনা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেছে। দশম শ্রেণির এক ছাত্র অভিযোগ করে, ‘১৫-২০ দিন আগে আমাদের ক্লাসের সামনে দিয়ে ম্যাডাম আসছিলেন। আমি ম্যাডামকে সালাম দিই। উনি বলেন, সালাম আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দিও।’
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে কোনো অভিযোগ করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে রাহুল বলে, ‘প্রধান শিক্ষককে জানাইনি। এর কয়দিন পর শুনলাম ক্লাস এইটে গিয়েও ম্যাডাম একই কথা বলেছেন। তাই আমরা একসঙ্গে এর প্রতিবাদ করার চিন্তা করি।’
নবম শ্রেণির এক ছাত্রের অভিযোগ, ‘আমি ক্লাসের মধ্যে দুই মাস আগে ম্যাডামকে সালাম দিই। তিনি সালাম নেননি।’
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষককে জানানো হয়েছে বলে দাবি করছে ছাত্ররা। তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এমন কেনো অভিযোগ আমি পাইনি।’
ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন ওই নারী শিক্ষক। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার কারও সঙ্গে বিরোধ নেই। কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করিনি। ক্লাসে পাথর ছোড়াছুড়ির কারণে এক শিক্ষার্থীকে ভুলক্রমে আঘাত করেছিলাম। এতে আমারই ভুল ছিল। তবে তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান হয়েছে। আমি ক্ষমা চেয়েছি। তবে এরপর নতুন করে ইসলামবিরোধী কথা বলার অভিযোগ এনে উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাকে সালাম দিলে আমি সব সময় উত্তর দিই। ধর্ম অবমাননাকর কিছু আমি কখনই বলিনি।’
স্কুল থেকে উদ্ধারের পরের ঘটনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে থানায় আনে। পরে রাতে বাড়ি ফিরি। আমি আতঙ্কে আছি। এ ধরনের ষড়যন্ত্র আবারও হতে পারে।’
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনা একটা ষড়যন্ত্র। এটা ম্যাডামের প্রতি ক্ষোভ থেকে করা হয়েছে। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এগুলো করা হয়ে থাকতে পারে। আমি প্রতিটি ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করেছি। তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি।
‘কোনো অভিভাবককেও কোনো ছাত্র আগে থেকে কোনো অভিযোগ করেনি। কোনো অভিভাবক এসেও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। হঠাৎ করে বুধবার তারা এসব কথা বলেছে।’
তিনি বলেন, ‘স্কুলে জড়ো হওয়া বহিরাগতরা আমার এলাকার। এরা স্কুলে পড়াশোনা করে না। আমার মনে হচ্ছে এরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা আল্লাহু আকবর বলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। দেয়াল টপকে স্কুলে আসে। তাদের এই শিক্ষকের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ থাকতে পারে। তিনি হিন্দু এই জন্যই তার সঙ্গে এটা করা হয়েছে বলে আমি মনে করছি।’
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজিবর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। রিউমার ছড়িয়ে কেউ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে কোনো সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে যৌথবাহিনীর অভিযানে একজনকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝাড়ি বাজারের করতোয়া নদীসংলগ্ন এলাকায় অভিযানটি চালানো হয়।
দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়ামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের সমন্বয়ে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি ট্রাক্টরসহ চালক রাজু ইসলাম ও শান্ত আহমেদকে আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলে এসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
আদালতের রায়ে রাজু ইসলামকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন করায় দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়, অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। তবে রাজু ইসলাম অর্থদণ্ডের অর্থ পরিশোধ করায় ট্রাক্টর দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকবে।
মন্তব্য